#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে(সিজন ২)
#Part_24(ধামাকাদার পর্ব)
#ইয়াসমিন_খন্দকার
আরিশা কলিং বেলের শব্দ শুনে দরজা খুলে দিতে বাইরে আসে। দরজা খুলতেই দেখতে পায় তার সামনে অগ্নিদৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে আছেন ইভা চৌধুরী ও সাজিদ চৌধুরী। ইভা চৌধুরী ক্ষেপে উঠে বলেন,”এই মেয়েটার জন্য আজ আমাদের এত অপমান সহ্য করতে হলো৷ এই ছেলে ছলে, বলে, কৌশলে আমার ছেলেটাকে নিজের প্রেমের জালে ফাসিয়েছে।”
আরিশা তো এসব কথার কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না। এরইমধ্যে সাজিদ চৌধুরী ইভা চৌধুরীকে বলেন,”তুমি নিজেকে সামলাও ইভা। এতোটা অস্থির হয়ো না। চলো ভেতরে গিয়ে বসে কথা বলি।”
বলেই তিনি ইভা চৌধুরীকে ধরে নিয়ে ভেতরে যান। এদিকে চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ শুনে জামিলা শেখ ছুটে আসেন। তিনি এসেই ইভা চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করেন,”কি হয়েছে আপা? তুমি এমন চিৎকার চেচামেচি করছ কেন?”
ইভা চৌধুরী ক্ষেপে উঠে বলেন,”চিৎকার করব না তো কি করব? এ কেমন মেয়েকে বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিস তুই? জানিস, এই মেয়েটা আমার ছেলের দিকে নজর দিয়েছে। এরজন্য আমার ছেলে পাগল হয়ে গেছে! এখন আমার ছেলে চাইছে একে বিয়ে করতে।”
জামিলা শেখ এমনিতেই আরিশার উপর ক্ষেপে ছিলেন এসব কথা শুনে যেন তার সমস্ত ক্ষোভ উগড়ে দেন। আরিশার সামনে গিয়ে তার হাত শক্ত করে ধরে বলেন,”এই তাহলে তোর আসল রূপ? আমি তো আগেই জানতাম, তুই সুবিধার মেয়ে নয়। প্রথমে আমার ছেলে…”
কিছু বলতে গিয়েও তিনি থেমে যান। বুঝতে পারেন ইভা চৌধুরী ও সাজিদ চৌধুরীর সামনে এসব বলা ঠিক হবে না। তাই তিনি বলে ওঠেন,”তুই এ বাড়িতে থেকে আর কোন অশান্তি সৃষ্টি করিস সেটা আমি মোটেই হতে দেব না। আমি এই মুহুর্তে তোকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে এই বাড়ি থেকে বের করে দেব।”
ইভা চৌধুরীও সম্মতি জানিয়ে বলে,”হ্যাঁ, হ্যাঁ তাই কর। আজ আমার ছেলের দিকে নজর দিয়েছে কাল তোর ছেলের দিকে নজর দেবে। এমন দুশ্চরিত্রা মেয়েকে বাড়িতে রাখার দরকার নেই। এদের উদ্দ্যেশ্যই তো এটা। বড়লোক বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে সেবাড়ির ছেলের মাথা খেয়ে রাজরাণী হওয়া।”
জামিলা শেখ আরিশার হাত ধরে টানতে টানতে বাড়ি থেকে বের করে দিতে যান। আরিশা শুধু নীরবে কাঁদছিল। সে ইভা চৌধুরীর উদ্দ্যেশ্য বলে,”বিশ্বাস করুন, আমি এমন কিছুই করিনি। আমি মোটেই আপনার ছেলেকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করিনি। আমি তো ওনার থেকে দূরত্ব তৈরির চেষ্টা করছিলাম কিন্তু..”
জামিলা শেখ আরিশার কোন কথা না শুনে তাকে দরজার কাছে নিয়ে গিয়ে একটা ধাক্কা দিয়ে বাড়ির বাইরে ফেলে দিতে চান। এমন সময় কেউ একজন এসে আরিশাকে আগলে নেয়। আরিশা হতবাক হয়ে আগন্তুকের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,”আপ্পি! তুমি?!”
আফিফা ও আরিশা এতদিন পর একে অপরকে দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। মূলত আফিফা আজ এখানে আরিশার খোঁজ নেয়ার জন্যই এসেছিল৷ কিন্তু এখানে এসে যে এমন দৃশ্যের মুখোশের হবে সেটা সে কল্পনাও করতে পারে নি। আরিশাকে আগলে নিয়ে আফিফা বলে ওঠে,”তুই একদম চিন্তা করিস না, বোনু। তোর আপ্পি চলে এসেছে। এবার আর কেউ তোর গায়ে একটা হাতও দিতে পারবে না।”
কথাটা বলেই আফিফা রক্তিম চোখে জামিলা শেখের দিকে তাকায়। অতঃপর হুংকার দিয়ে বলে ওঠে,”আপনার সাহস কি করে হলো আমার বোনুর সাথে এমন ব্যবহার করার? কি ভেবেছেন কি আপনি? ওর কেউ নেই জন্য ওর সাথে যা খুশি তাই ব্যবহার করবেন? তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। আমি আরিশার বড় ফোন আফিফা, আমি যতদিন বেচে আছি ততদিন আমার বোনের দিকে কেউ চোখ তুলে তাকাতে পারবে না।”
জামিলা শেখ দাঁত কটমট করে বলেন,”নিজের বোনের প্রতি এত দরদ থাকলে তোমার বোনকে নিয়ে বিদায় হও এখান থেকে। তোমার বোনের জন্য আমাদের পরিবারে একের পর এক সমস্যা তৈরি হচ্ছে।”
আফিফা তেজি কন্ঠে বলে,”বোনুকে তো আমি এখান থেকে নিয়ে যাবোই। তবে আপনারা ভাববেন না, সবকিছু এখানেই শেষ হয়ে যাবে। আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব। আমার বোনুর সাথে আপনি, আপনার ছেলে যা যা অবিচার করেছে সবকিছুর জবাব আপনাদের দিতে হবে। আপনার ছেলে জাঈদ শেখ কোথায়? ঐ কাপুরুষকে আসতে বলুন। ও তো আমার বোনকে এখানে নিয়ে এসেছিল৷ এবার ঐ সবকিছুর জবাব দিয়ে যাক।”
জামিলা শেখ বুঝতে পারেন আরিশা আর আফিফা এখানে বেশিক্ষণ থাকলে তার বোনের সামনে আরিশা ও জাঈদের বিয়ের ব্যাপারটা চলে আসবে। তাই তিনি তাদের দ্রুত বিদায় করার জন্য বলেন,”জলদি বেরোও এখান থেকে। নাহলে আমি সিকিউরিটি গার্ড দেখে তোমাদের বের করে দেব।”
এমন সময় হঠাৎ করে আদৃতা সন্ধ্যাকে সাথে নিয়ে সেখানে চলে আসে। এসেই তারা আরিশা ও আফিফার মুখোমুখি হয়। আফিফা ও আদৃতা একে অপরকে দেখে চরম অবাক হয়। আদৃতা বলে ওঠে,”তুমি এখানে?!”
সন্ধ্যা আদৃতাকে জিজ্ঞেস করে,”ইনি কে? তুই কি এনাকে চিনিস?”
“হ্যাঁ, চিনব না কেন? ইনি তো আমার মহান ভাবি, নির্ঝর ব্রোর ওয়াইফ আফিফা।”
এরপরেই আদৃতার নজর যায় আরিশার দিকে। সে হতবাক স্বরে বলে,”তুমি এখানে কি করছ?”
সন্ধ্যা বলে ওঠে,”তুই আরিশাকে চিনিস?”
“হুম, খুব ভালো করেই চিনি।”
এমন সময় ইভা চৌধুরী এগিয়ে এসে আদৃতাকে বলেন,”এই মেয়েটাই সেই অপয়া যে আমার ছেলেকে বশ করেছে৷ এর জন্যই সায়ন তোমাকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ”
আদৃতা হতবাক স্বরে বলে ওঠে,”এটা কিভাবে সম্ভব? এই মেয়ের তো বিয়ে হয়ে গেছে।”
“সেটা তো আমরাও জানি। কিন্তু এর স্বামী একে ত্যাগ করেছে। তারপর আমার বোন জামিলা দয়া করে ওকে এই বাড়িতে আশ্রয় দিলে ও এখন এই বাড়িতে এসে আমার ছেলেকে পেয়ে ওকে বশ করে নিয়েছে।”
আফিফা ইভা চৌধুরীর কথা শুনে বলে ওঠে,”আপনার বুঝতে কোথাও ভুল হচ্ছে। আরিশাকে জামিলা শেখ এখানে দয়া করে আশ্রয় দেয় নি। বরং…..ওনার ছেলে জাঈদ শেখ আমার বোনটাকে বিয়ার করে এখানে নিয়ে এসেছে।”
আফিফার এই কথাটা যেন একটা ছোটখাটো বিস্ফোরণের মতো প্রভাব বলে। সন্ধ্যা বলে ওঠে,”এসবের মানে কি? আরিশার স্বামী জাঈদ ভাই!”
জামিলা শেখ ঘামতে শুরু করেন। সন্ধ্যা আরিশাকে জিজ্ঞাস করে,”তোমার বড় বোন এসব কি বলছে আরিশা? জাঈদ ভাই তোমার স্বামী? তুমি তো এই ব্যাপারে আমাকে কিছু বলো নি।”
জামিলা শেখ বলে ওঠেন,”মিথ্যা, মিথ্যা এসব কিছু মিথ্যা। এরা দুই বোন মিথ্যা বলছে। তুমি এদের বিশ্বাস করো না সন্ধ্যা।”
এমন সময় জাঈদ শেখ বাইরে থেকে সবেমাত্র ফেরে। দূরে দাঁড়িয়ে সে এতক্ষণ ধরে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করে। জাঈদ এগিয়ে আসতেই জামিলা শেখ বলে ওঠেন,”এই তো জাঈদ এসে গেছে। জাঈদ তুই সব সত্য সবাইকে খুলে বল। দেখ, এই আরিশা আর এর বোন মিলে কি জঘন্য মিথ্যাচার করছে। তুই বলে দে সবাইকে যে এই মেয়েকে তুই বিয়ে করিস নি।”
জাঈদ প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলে,”ওরা কেউ মিথ্যা বলছে না আম্মু, মিথ্যা বলছ তুমি। সত্যি এটাই যে,আমি আরিশাকে বিয়ে করেছি। ও আমার স্ত্রী।”
জাঈদের কথা শুনে সন্ধ্যা একেবারে ভেঙে পড়ে। ইভা চৌধুরী, সাজিদ চৌধুরীও হতবাক হয়ে যান। সন্ধ্যা এগিয়ে এসে জাঈদের কলার ধরে বলে,”তুমি আমাকে এভাবে ঠকালে জাঈদ ভাই? কি দোষ করেছিলাম আমি?”
বলেই সে কাঁদতে থাকে। জামিলা শেখ তাকে সামলাতে আসলে সে বলে,”তুমি আমার থেকে দূরে থাকো খালা। আমি ঘৃণা করি তোমাকে।”
অতঃপর সে আরিশাকে বলে,”তোমাকে আমি নিজের বোনের মতো দেখেছিলাম। তুমি অন্তত আমাকে সমস্ত সত্যটা বলতে পারতে।”
আরিশা নিজের চোখের জল মুছে বলে,”এতদিন আমি অনেক ভুল করেছি। তবে আজ আমি সবাইকে সমস্ত সত্যটা খুলে বলবো যে আমার সাথে ঠিক কি কি হয়েছে।”
to be continue…….
#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে(সিজন ২)
#Part_25
#ইয়াসমিন_খন্দকার
আরিশা নিজের চোখের জল মুছে বলে,”এতদিন আমি অনেক ভুল করেছি। তবে আজ আমি সবাইকে সমস্ত সত্যটা খুলে বলবো যে আমার সাথে ঠিক কি কি হয়েছে।”
আরিশা এই কথাটুকু বলেই একবার জাঈদের দিকে তাকালো। জাঈদের দৃষ্টিতে লুকিয়ে ছিল কৌতুহল। আফিফাও বলে উঠল,”হ্যাঁ, বোনু তুই বল তোর সাথে এরা কি কি অন্যায় করেছে। এদের ভালো মানুষির মুখোশ টেনে ছুড়ে ফেল। আমি তো জানতামই, এই লম্পট জাঈদকে তুই নিজের ইচ্ছায় কখনোই বিয়ে করতে পারিস না৷ তুই সবাইকে আজ সমস্ত সত্যটা বল।”
আরিশা এবার বলা শুরু করে,”তোমার আর নির্ঝর ভাইয়ার বিয়ের দিন মিস্টার জাঈদ শেখ এর লোকজন আমায় তুলে নিয়ে যায়। ওরা আমায় তুমি ভেবে তুলে নিয়ে গেছিল। পরবর্তীতে যখন দেখে এটা আমি তখন হতবাক হয়ে যায়। কারণ ওদের উদ্দ্যেশ্য ছিল তোমায় তুলে নিয়ে গিয়ে তোমার সাথে জাঈদ শেখের বিয়ে দেওয়া। পরে যখন তা হলো না, তখন জাঈদ শেখ প্রতিশোধের নেশায় অন্ধ হয়ে আমার মাথায় বন্দুক ধরল। আমাকে ভয় দেখিয়ে, ব্ল্যাকমেইল করে এই বিয়েটা করতে বাধ্য করল। আর তারপর সবার সামনে মিথ্যা বলতে বাধ্য করল। ও আমায় হুমকি দিয়েছিল যদি আমি ওর কথামতো না চলি তাহলে তোমার আর নির্ঝর ভাইয়ার জীবন ধ্বংস করে দেব। সেজন্যই আমি বাধ্য হয়ে ওর সব কথা মেনে চলি৷ কিন্তু এখানে নিয়ে আসার পরও জাঈদ শেখ আর ওর মা মিলে আমার উপর নারকীয় অত্যাচার চালায়৷ পরে সন্ধ্যা আপুরা এখানে এলে তাদের সামনেও আমাকে মিথ্যা বলতে বাধ্য করে যাতে করে সন্ধ্যা আপুর সাথে জাঈদ শেখের বিয়ে দিতে পারে।”
ইভা চৌধুরী এসব শুনে নিজের বোন জামিলা শেখকে জিজ্ঞেস করেন,”এই মেয়েটা এসব কি বলছদ জামিলা? তুই এভাবে আমদের সাথে প্রতারণা করলি? এভাবে আমার মেয়ের জীব নিয়ে খেললি।”
জামিলা শেখ এসব কথা অস্বীকার করে বলেন,”এই মেয়েটার কথা তুমি বিশ্বাস করো না, আপা৷ এ সমস্ত কিছু মিথ্যা বলছে। আমি তোমাকে আসল সত্যটা জানাচ্ছি।”
সন্ধ্যা এবার রাগী মুখে এগিয়ে এসে বলে,”ব্যস, অনেক হয়েছে। তোমার মুখে আর কোন মিথ্যা গল্প আমরা শুনতে চাই না খালা। মম, ড্যাড তোমরা চলে এসো। আমি আর এক মুহুর্ত এখানে থাকব না।”
“সন্ধ্যা, আমার কথাটা শোন।”
কিন্তু সন্ধ্যা আর দাঁড়ায় না। সন্ধ্যা সপরিবারে চলে যাবার পর আফিফা আরিশার হাত শক্ত করে ধরে বলে,”আমিও আমার বোনকে এই নরক থেকে নিয়ে যাব এখন। ওর এখানে থাকার আর কোন প্রয়োজন নেই।”
এমন সময় জাঈদ শেখ এগিয়ে এসে বলে,”আরিশা আমার স্ত্রী। আমার অনুমতি ছাড়া ওকে নিয়ে যাওয়ার কোন অধিকার তোমার নেই।”
আফিফা জাঈদকে চোখ রাঙানি দিয়ে বলে,”কিসের স্ত্রী? আমার বোনকে তুমি ভয় দেখিয়ে বিয়ে করেছ,এটা কোন বিয়েই নয়। এই বিয়ে আমি মানি না। আমার বোন এখন আমার সাথেই যাবে।”
জাঈদ আরিশাকে আরিশার দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি কি তোমার আপ্পির সাথেই যেতে চাও?”
আরিশা আজ আর কোন ভয় না পেয়ে বলে,”হ্যাঁ, আমি আপ্পির সাথেই যাব। এত দিন আপনি আমায় ভয় দেখিয়ে আটক করে রেখেছিলেন তবে এখন আর না। আমি আর আপনাকে ভয় পাবো না। আপনার কোন অন্যায় আমি মেনে নেবো না।”
জাঈদ এগিয়ে এসে আবেগপ্রবণ স্বরে আরিশাকে বলে,”আমাকে ছেড়ে যেও না আরিশা, আমাকে একটা সুযোগ দাও। আমি সত্যি তোমার সাথে সংসার করতে চাই কারণ আমি…”
জাঈদ নিজের পুরো কথা শেষ করতে পারে না তার আগেই আরিশা তার গালে ঠাস করে থা**প্পড় বসিয়ে দেয়। জাঈদ একদম হতবাক হয়ে যায়। আরিশা ক্রোধিত কন্ঠে বলে,”এটা কি আপনার নতুন কোন নাটক?”
“বিশ্বাস করো, আরিশা। আমি কোন নাটক করছি না। আমি যা বলছি একদম মন থেকে বলছি। হ্যাঁ, মানছি আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি। তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করে,ভয় দেখিয়ে তোমায় বিয়ে করেছি। বিয়ের পরেও তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি, তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমি সেসব কিছুর জন্য মন থেকে অনুতপ্ত। আমাকে শুধু একটা সুযোগ দাও, আমি কথা দিচ্ছি আমি সম্পুর্ণ বদলে যাব।”
জামিলা শেখ বলে ওঠেন,”এসব তুমি কি বলছ জাঈদ? এই মেয়েটার সামনে তুমি অনুরোধ করছ!”
আরিশা নিজেও কিছুটা অবাক হয়ে যায়। জাঈদ এগিয়ে এসে আরিশার হাতটা আলতো করে ধরে বলে,”আফিফার প্রতি আমার যা অনুভূতি ছিল তা শুধুই ছিল আমার জেদ এবং দাম্ভিকতা কিন্তু তোমার প্রতি আমার সত্যিকারের অনুভূতি জন্মেছে। তাই আমি অনুরোধ করছি, আমাকে তুমি ফিরিও না আরিশা।”
আরিশা কিছু বলবে তার আগেই আফিফা বলে,”এর নাটকে তুই একদম ভুলিস না বোনু। এসব কিছুই এর নাটক তোকে এখানে আটকে রেখে আরো কষ্ট দেয়ার জন্য। এর মতো লম্পট ছেলেদের একদম বিশ্বাস করতে নেই। তুই আমার সাথে ফিরে চল।”
জাঈদ আরিশার হাত শক্ত করে ধরে ছিল৷ আরিশা একটা ঝটকা দিয়ে সেই হাত সরিয়ে নিয়ে বলে,”আপনার এই নাটকে আমি ভুলবো না মিস্টার জাঈদ শেখ। আপনাকে আমি হারে হারে চিনে ফেলেছি। আপনি আমার সাথে যা যা অন্যায় করেছে তার জন্য মৃত্যুর আগে অব্দি আমি আপনাকে ক্ষমা করবো না।”
বলেই আরিশা আফিফার হাত ধরে বলে,”আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো আপ্পি। আমি আর এক মুহুর্তও এখানে থাকতে চাই না। এখানে থাকতে গেলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।”
“তুই একদম চিন্তা করিস না। তোকে আমি আর এই নরকে থাকতেও দেবো না। তোকে এখান থেকে বের করার জন্যই তো আমি এসেছি।”
বলেই আফিফা আরিশাকে নিয়ে বের হতে যাবে এমন সময় জাঈদ আবারো তাদের পথ আগলে দাঁড়ায়। আরিশার কাছে আকুতি-মিনুতি করতে থাকে যেন সে না যায়। তবে আরিশা এবার আরো কড়া গলায় বলে,”আমার সামনে থেকে সরে দাড়ান। নাহলে এর ফল ভালো হবে না।”
“আমি তোমায় এখান থেকে কোথাও যেতে দেবো না।”
আফিফা বলে ওঠে,”আমি কিন্তু এবার পুলিশ ডাকতে বাধ্য হবো।”
জামিলা শেখ রেগে বলেন,”আমাদেরকে তুমি পুলিশের ভয় দেখাচ্ছ? সাহস তো কম নয়৷ সিকিউরিটি, কোথায় তোমরা? জাঈদকে আটকে ধরো। এই আপদগুলোকে বিদায় হতে দাও।”
জামিলা শেখ এর আওয়াজ পেয়ে ৪ জন সিকিউরিটি গার্ড এসে জাঈদকে আটকে রাখে। এই সুযোগে আফিফা আরিশাকে নিয়ে যেতে থাকে। জাঈদ শেখ চিৎকার করে বলতে থাকে,”আমাকে ছেড়ে যেও না আরিশা। আমি সত্যি তোমায় ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছি। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না। আমার একটা সুযোগ দাও শুধু, আমি অতীতের সব ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করব, আরিশা প্লিজ..”
কিন্তু আরিশা দাঁড়ায় না। আফিফার হাত ধরে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। তারা একটু সামনে আগাতেই হঠাৎ করে আদৃতা তাদের সামনে এসে বলে,”এসব কিছু তোমাদের দুই বোনের সাজানো নাটক তাই না?”
আফিফা বলে ওঠে,”এসব কি বলছ তুমি আদৃতা?”
“চুপ, আর একদম নাটক করবে না। তোমরা দুই বোন মিলে চক্রান্ত করে আমার আর সায়নের বিয়েটা ভেঙে দিয়েছ। আমি কিছু বুঝি না ভেবেছ, তোমরা আমার ভালো সহ্যই করতে পারো না। আমার বাবা যে এত বড়লোক, আমার লাইফস্টাইল এত ভালো সেটা তোমাদের সহ্য হয় না। তাই তো, প্রথমে তুমি আমার ভাইকে বিয়ে করলে আর এখন নিজের বোনকে আমার ভালোবাসার মানুষের পেছনে লেলিয়ে দিয়েছ।”
আরিশা রেগে বলে,”মুখ সামলে কথা বলো। আমার আপ্পি তোমার ভাইয়ের পেছনে পড়ে নি বরং তোমার ভাই পড়েছিল। আর আমি তোমার ভালোবাসার মানুষকেও কেড়ে নিতে চাই নি।”
আদৃতা বলে,”চোরের মায়ের আবার বড় গলা। একবার শুধু আমায় বাড়িতে ফিরতে দাও, তারপর এর শেষ দেখে ছাড়ব।”
বলেই আদৃতা বাড়ির দিকে রওনা দেয়। আফিফা আরিশাকে ভরসা দিয়ে বলে,”চিন্তা করিস না, বোনু। আমি সব সামলে নেব।”
to be continue…….
#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে(সিজন ২)
#Part_26
#ইয়াসমিন_খন্দকার
আরিশাকে সাথে নিয়ে খান ভিলায় এসে উপস্থিত হয় আফিফা। আরিশা তখনো খান ভিলায় প্রবেশ করার সাহস পায় না। হতাশ স্বরে আফিফাকে বলে,”আমার খুব ভয় করছে আপ্পি৷ না জানি আমায় দেখে সবাই কেমন রিয়্যাক্ট করবে। বিশেষ করে দাদি। উনি তো আমাকে এখন সহ্যই করতে পারেন না।”
আফিফা আরিশাকে ভরসা দিয়ে বলে,”তুই এতো চিন্তা করিস না৷ আমি আছি তো, আমি সব সামলে নেব।”
বলেই আফিফা আরিশাকে নিয়ে এসে বাড়িএ সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেল বাজায়। কিছু সময় পর আনিকা খান এসে দরজা খুলে দেয়৷ তাকে দেখেই আফিফা বলে ওঠে,”আম্মু, তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে। আরিশাকে আমি নিয়ে এসেছি।”
আনিকা খান কিছু বলতে যাবেন তার আগেই ছবি বেগম এসে বলেন,”কোন সাহসে তুই এই মেয়েকে নিয়ে এই বাড়িতে এসেছ আফিফা দিদিভাই? তুমি কি ভুলে গেছ, এই মেয়েটার জন্য আমাদের কতোটা হেনস্থার স্বীকার হতে হয়েছিল?”
আফিফা বলে,”আরিশার সাথে অনেক অন্যায় হয়েছে দাদি। তুমি আগে সব কথা শোনো, তারপর কোন সিদ্ধান্ত নিও।”
এমন সময় আদৃতা সেখানে উপস্থিত হয়ে বলে,”আর তোমরা দুই বোন মিলে আমার সাথে যে অন্যায় করেছ, তার কি হবে?”
আদৃতার চোখে জল৷ তার সাথে তার মা-বাবা আবরাজ খান, নিঝুম ও ভাই নির্ঝরও এসে উপস্থিত হয়। আদৃতা সবার সামনে বলে,”এই আরিশাই সেই মেয়ে যার কারণে সায়ন আমায় প্রত্যাখ্যান করেছে। ওর জন্য আমার বিয়েটা ভেঙে গেছে।”
আফিফা বলে ওঠে,”তুমি আমার বোনুকে এভাবে দোষারোপ করতে পারো না। আমার বোনুর উপর আমার বিশ্বাস আছে, ও কখনোই এমন কাজ করবে না।”
নির্ঝর এবার খানিক রাগী কন্ঠে বলে,”তার মানে তুমি কি বলতে চাইছ? আমার বোন মিথ্যা বলছে?”
“নির্ঝর, তুমি অনন্ত আমায় বোঝার চেষ্টা করো। আরিশার সাথে কি কি হয়েছে সেটা সবার জানা দরকার। আরিশা মোটেই স্বেচ্ছায় ঐ জাঈদকে বিয়ে করে নি। ঐ জাঈদ শেখ বন্দুকের মুখে ভয় দেখিয়ে আরিশাকে বিয়ে করে। আর পরবর্তীতে আরিশা আমার আর তোমার নিরাপত্তা দেয়ার জন্য ওর সব কথা মুখ বুজে সহ্য করেছে। আমাদের জন্যই আজ ও এতো দূর্দশার মধ্যে পড়েছে।”
আনিকা খান বলে ওঠেন,”এসব তুই কি বলছিস আফিফা? আরিশা আমাদের কথা ভেবে এত কষ্ট করেছে?”
আবির খানও ততক্ষণে হুইল চেয়ারে করে সেখানে উপস্থিত হন। তিনি এসেই বলেন,”আমি জানতাম, আমার আরিশা কখনো আমাদের কষ্ট দিতে পারে না। আমি তো তোমাদের আগেই বলেছিলাম। কিন্তু তোমরা কেউ আমার কথা শোনো নি।”
আদৃতা রাগী কন্ঠে বলে ওঠে,”নাটক! নাটক! এ সমস্ত কিছুই এই মেয়েটার নাটক। আমি তো বুঝতে পারছি না, তোমরা এই মেয়েটাকে এখনো সহ্য করছ কেন? না ওর এই বাড়ির কারো সাথে কোন রক্তের সম্পর্ক আছে আর না তো অন্যকিছু। তাহলে কেন? কেন ওকে নিয়ে এত মাতামাতি করতে হবে।”
ছবি বেগমও আদৃতার সুরে সুর মিলিয়ে বলেন,”আমিও আদৃতা দিদিভাইয়ের সাথে একমত। এই মেয়েটাকে আমি বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করি না। এসব কিছুই এর নাটক। ওকে কোনমতেই আমি এই বাড়িতে প্রবেশ করতে দেব না।”
আফিফা দৃঢ় কন্ঠে সকলের বিরোধিতা করে বলে,”আরিশা, এই বাড়িতেই থাকবে। কারণ ও আমার বোন। ওর এই বাড়িতে ঠিক ততোটাই অধিকার আছে যতটা অধিকার আমার কিংবা আদৃতার।”
নির্ঝর এবার এগিয়ে গিয়ে আফিফাকে বলে,”ব্যস, এতদিন ধরে তোমার অনেক অন্যায় আবদার আমি মেনে নিয়েছি। বিয়ের পর থেকেই দেখে আসছি, তুমি আমাদের সম্পর্কের থেকে তোমার বোনকে বেশি মূল্যায়ন করছ, তবে আর না। এবার তোমাকে সাফ সাফ জানিয়ে দিতে হবে তুমি কি চাও!”
আফিফা হতবাক স্বরে বলে,”মানে?! এসব তুমি কি বলছ?”
“তোমার তথাকথিত বোন আরিশার জন্য আমার বোন আদৃতা কষ্ট পেয়েছে, ওর চোখ থেকে জল পড়েছে। এটা আমি মেনে নেবো না। তোমার কাছে এখন দুটো রাস্তা খোলা আছে, হয় তুমি আমায় বেছে নাও আর নয়তো আরিশাকে। এখন তুমি ভেবে দেখো, তুমি কি করবে!”
“নির্ঝর!”
আবরাজ খানও বলে ওঠেন,”এই আরিশার জন্য আমার মেয়ের বিয়ে ভেঙে গেছে। ওর সাথে আমরা কিছুতেই এক ছাদের তলায় থাকব না।”
তবে নিঝুম বলেন,”আমাদের মনে হয়, এভাবে রাগের মাথায় কোন সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক নয়। আফিফার কথাটাও আমাদের শোনা উচিত।”
ছবি বেগম নাখোশ স্বরে বলেন,”তুমি চুপ করো নিঝুম। বরাবরই তুমি একটু বেশিই বোঝো। নিজের মেয়ের থেকে তোমার এই বাইরের মেয়েটার জন্য চিন্তা হচ্ছে?”
আফিফা নির্ঝরের দিকে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। যেই মানুষটাকে সে এতোটা ভালোবাসত আজ সেই কিনা তাকে এমন কথা শোনাচ্ছে! আফিফার দুচোখ অশ্রুতে ভড়ে ওঠে। তবে সেই অশ্রু গড়িয়ে পড়ার আগেই আফিফা সেটা মুছে নিয়ে আরিশার হাত শক্ত করে ধরে বলে,”তোমাদের দুজনের মধ্যে যেকোন এক জনকে বেছে নিতে হবে, তাই তো? বেশ, আমি আমার বোনকেই বেছে নিলাম।”
আরিশা উৎকন্ঠার সাথে বলে ওঠে,”আপ্পি! এসব তুমি কি বলছ?”
“আমি যা বলছি ঠিকই বলছি। আমার যেই বোন আমার জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করেছে তাকে বিপদের দিনে আমি একা ছেড়ে দিতে পারব না। আপনারা কেউ আরিশাকে এই বাড়িতে থাকতে দেবেন না, তাই তো? বেশ আমি আরিশাকে নিয়ে এই বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছি। ওর সাথে আপনাদের কারো রক্তের সম্পর্ক না থাকতে পারে কিন্তু আমি ওকে নিজের বোন বলেই মানি। তাই ওকে রক্ষা করার দায়িত্বও আমি নেবো। ”
ছবি বেগম বলে ওঠেন,”তোমার মাথা কি একদম খারাপ হয়ে গেছে দিদিভাই? এই বাইরের মেয়েটার জন্য তুমি তোমার বাড়ি ছেড়ে দেবে?”
এমন সময় আবির খান হুইল চেয়ারে করে আফিফা ও আরিশার কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে,”আরিশা বাইরের মেয়ে নয় আম্মু, ও আমার মেয়ে। হয়তো আমি ওকে জন্ম দেইনি কিন্তু ওকে আমি নিজের মেয়েই ভাবি। তোমরা যদি ওকে এই বাড়িতে ঠাঁই না দাও, তাহলে আমারও এখান থাকার কোন ইচ্ছা নেই। প্রয়োজনে আমি আমার দুই মেয়েকে নিয়ে এখান থেকে চলে যাব।”
ছবি বেগম হতবাক স্বরে বলেন,”আবির!”
আনিকা খানও সমস্ত দ্বিধা-দ্বন্দ ভুলে আবির খানের পাশে দাঁড়ান।
ছবি বেগম হতাশ স্বরে বলেন,”বৌমা! তুমিও?!”
আনিকা খান বলেন,”এই বাড়িতে বউ হয়ে আসার পর থেকে আমি কখনো আপনার অবাধ্য হইনি আম্মা, আপনি চেয়েছিলেন বলে, আরিশাকে এর আগে যখন জাঈদ নিজের সাথে নিয়ে গিয়েছিল তখন আমি বাধা দেই নি। আরিশাকে আমি আফিফার মতো ভালোবাসা দেই নি, সেটাও ছিল আপনার ইচ্ছাতে। তবে আজ আমি নিজের ইচ্ছামতো কিছু করতে চাই, আমার স্বামী, আমার দুই মেয়ের পাশে থাকতে চাই আমি।”
আবরাজ খান বলে ওঠেন,”এসব হচ্ছেটা কি? তোরা সবাই এভাবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবি কেন? তার থেকে ভালো, আমিই আমার পরিবারকে নিয়ে লন্ডনে চলে যাচ্ছি। তোরা থাক এখানে।”
ছবি বেগম বলে ওঠেন,”না, আবরাজ। তুমি এখানেই থাকবে। তোমার ছোটবেলায় আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি তার পুনরাবৃত্তি আমি হতে দেবো না। ওদের যখন একটা বাইরের মেয়ের প্রতি এতোই টান তাহলে ওদেরকেই যেতে দাও।”
নির্ঝর আফিফার কাছে গিয়ে বলে,”মনে রেখো, এই বাড়ির বাইরে পা রাখা মানেই তোমার সাথে আমার সম্পর্ক সেখানেই শেষ হয়ে যাবে।”
আফিফা মলিন হেসে বলে,”এতো ঠুনকো সম্পর্ক আমি রাখতেও চাই না, যেই সম্পর্কে একে অপরের প্রতি বিশ্বাস, সম্মান নেই।”
বলেই সে আরিশার হাত শক্ত করে ধরে বেরিয়ে যায়। তার সাথে সাথে আবির খান ও আনিকা খানও বেরিয়ে যান। নিঝুম বলে ওঠেন,”এটা ঠিক হলো না। নির্ঝর, আবরাজ, চাচি আপনার চুপ থাকবেন না। ওদেরকে আটকান। এভাবে পরিবারকে ভাঙতে দেবেন না।”
আদৃতা এসব দেখে স্বস্তি পেয়ে বলে,”বেশ হয়েছে। আমার জীবন নষ্ট করতে চাইছিল না, এখন ওদের দুই বোনকেই বাড়িছাড়া হতে হলো।”
to be continue…….