অশ্রুজলে বোনা বিয়ে ২ পর্ব-২৭+২৮+২৯

0
68

#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে(সিজন ২)
#Part_27
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আরিশাকে সাথে নিয়ে নিজের এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর বাড়িতে উঠেছে আফিফা। আবির খান ও আনিকা খানও তাদের সাথে আছেন। আফিফা তার বান্ধবী ঈশিতাকে বলল,”তুই কোন চিন্তা করিস না। আমি দেখছি যদি আজকের মধ্যে কোন বাসা ভাড়ার ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে দ্রুতই এখান থেকে চলে যাব।”

ঈশিতা খানিক রাগী কন্ঠে বলে,”এভাবে বলছিস কেন? আমি না তোর বন্ধু, তুই যত দিন ইচ্ছা এখানে থাক আমার পরিবারের কারো কোন সমস্যা নেই। বন্ধুই তো বন্ধুর বিপদে পাশে থাকবে।”

ঈশিতার কথায় আফিফা কিছুটা স্বস্তি খুঁজে পায়। ঈশিতা রুম থেকে বের হতেই আরিশা আফিফাকে বলে,”আমার জন্য শুধু শুধু তোমরা বাড়ি ছেড়ে চলে এলে। এসব কিছুর কোন দরকার ছিল না। আমি নিজের কোন একটা ব্যবস্থা করে নিতাম। আর আমার জন্যই তো নির্ঝর ভাইয়ের সাথে তোমার দ্বন্দের সৃষ্টি হলো। এসব কিছুর জন্য আমি ভীষণ অপরাধবোধে ভুগছি আপ্পি৷ এসব মোটেই ঠিক হয়নি। নিজেকে আমার অপরাধী মনে হচ্ছে।”

আফিফা কড়া কন্ঠে বলে,”তুই একদম নিজেকে অপরাধী ভাববি না। তুই আমার বোন। হতে পারে আমাদের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক নেই কিন্তু তার থেকেও বেশি কিছু আছে। আর এখানে ব্যাপারটা শুধু তোর না। এখানে ন্যায়-অন্যায়ের একটা ব্যাপার আছে। নির্ঝর সহ বাকি ওরা সবাই অন্যায় করতে চাইছিল তোর সাথে। যেটাকে আমরা কিছুতেই সমর্থন করতে পারি না। এই লড়াইটা শুধু তোর জন্য না ন্যায়ের জন্যেও। আর নির্ঝর….ও তো আমার কথাটা শোনারই প্রয়োজন মনে করে নি। আর এমনিতেও ও যদি নিজের এই মনোভাব বজায় রাখে তাহলে আজ নাহয় কাল ওর সাথে আমার দ্বন্দ লাগতোই। তাই ভালো হয়েছে এখনই একটা দফারফা হয়ে গেছে।”

আবির খানও আফিফার সমর্থন করে বলেন,”একদম ঠিক বলেছিস তুই আফিফা। অন্যায়ের সাথে কোন আপোষ চলবে না। এর আগেও আম্মু আরিশার সাথে অনেক অন্যায় করেছে। তখন আমি কিছু করতে পারিনি। এবারও যদি চুপ থাকতাম তাহলে আমি নিজের কাছেই ছোট হয়ে যেতাম।”

আনিকা খান আরিশার কাছে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,”তোমাকে আমি জন্ম দেইনি কিন্তু বিশ্বাস করো কখনো তোমাকে আফিফার থেকে অন্য নজরে দেখিনি। শুধুমাত্র আম্মার জন্য তোমাকে সেরকম ভালোবাসা দেখাতে পারিনি। তবে আজ আমি নিজের জীবনের একটা শ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

সবার থেকে এমন সান্ত্বনা পেয়ে আরিশা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে যায়। তার মনের বোঝা অনেকটাই হালকা হয়।

————————————-
জাঈদ আরিশার কথা ভেবে বসে বসে চিন্তা করছিল। তার কিছু বন্ধুদের সে আরিশার খোঁজ নিতে পাঠিয়ে দিয়েছে। আরিশার অবস্থা না জানা পর্যন্ত সে কিছুতেই স্বস্তি পাবেনা। কিছু সময় অস্থির ভাবে পার করে জাঈদ। এরপরেই তার ফোনে একটা কল আসে। জাঈদ দ্রুত ফোনটা রিসিভ করতেই তার এক বন্ধু বলে ওঠে,”জাঈদ! ভাবির খোঁজ পেয়েছি।”

“কোথায় আছে ও?”

“ওনাকে ওনার বড় বোন বাসা থেকে বের করে নিয়ে গেছেন। সাথে ওনার মা-বাবাও গেছেন। এখন ওনারা সিলেটের দক্ষিণ দিকের শহরতলীতে অবস্থান করছেন ওনার বড় বোনের এক বান্ধবীর বাসায়।”

“তুই জলদি আমাকে ঠিকানাটা পাঠিয়ে দে। আমার ওর সাথে কথা বলা অতীব জরুরি।”

অতঃপর সে ঠিকানাটা বলে দেয়।

জাঈদ ফোনটা রেখে দিয়ে বলে,”তোমাকে আমার কাছে ফিরতেই হবে আরিশা। আমি এতদিনে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি। আমার অতীতের ভুল গুলো হয়তো শোধরাতে পারব না কিন্তু তোমায় নিয়ে নতুন করে সুন্দর একটা শুরু করতে পারব।”

বলেই জাঈদ তৈরি হয়ে বের হয়। জাঈদকে নিচে নামতে দেখে জামিলা শেখ বলেন,”কোথায় যাচ্ছ তুমি?”

“আমার বউকে ফিরিয়ে আনতে।”

“কি? ঐ মেয়েকে তুমি আবার এই বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে চাও? তোমার মাথাটা খারাপ হলো নাকি? কত অপেক্ষার পর ঐ আপদ বিদায় হলো। ওকে আমি কিছুতেই আর এই বাড়িতে ফিরতে দেবো না। তার থেকে তুমি আমার সাথে চলো, সন্ধ্যা আর আপা দুলাভাইকে বুঝিয়ে তাদের ফিরিয়ে আনি। ঐ মেয়েটাকে তুমি ডিভোর্স দিয়ে দাও। আমি সন্ধ্যাকেই এই বাড়ির বউ করে আনব।”

জাঈদ রেগে বলে,”তোমার যদি সন্ধ্যাকে এই বাড়ির বউ করে আনার এতই ইচ্ছা হয় তাহলে একটা কাজ করো। বাবাকে বলে আরেকটা বাচ্চা নেও, যদি তোমার আরেকটা ছেলে হয় তাহলে সন্ধ্যার সাথে তার বিয়ে দিয়ে তাকে বউ করে এই বাড়িতে আনো। কিন্তু আমি তোমাকে একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছি, আমি আরিশাকে বিয়ে করেছি এবং আমৃত্যু ওকেই আমার স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছি৷ অন্য কাউকে আমি বিয়ে করবো না।”

বলেই জাঈদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। জাঈদ যেতেই জামিলা শেখ রাগে গজগজ করতে করতে বলেন,”এই আরিশার জন্য আমার সাজানো পরিকল্পনা ভেস্তে গেল। এর শেষ আমি দেখে ছাড়ব। ঐ আরিশাকে আমি কিছুতেই এই বাড়িতে ফিরতে দেবো না৷ তার জন্য আমায় যা করতে হয় করব, যত নিচে নামতে হয় নামব। প্রয়োজনে ঐ আরিশাকে এই পৃথিবী থেকেই সরিয়ে দেব!”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ছবি বেগম গম্ভীর মুখে সোফায় বসে আছেন। আবরাজ তার পাশেই বসে। নিঝুম সবার জন্য চা বানিয়ে আনলো। এদিকে আফিফারা বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকেই নির্ঝর নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে আসে। আদৃতা এককোণে দাঁড়িয়ে এসব দেখে বিড়বিড় করে বলে,”যত্তসব ড্রামা! সবার নাটক দেখে মনে হচ্ছে বাড়িতে কারো ফিউনারেল চলছে।”

নিঝুম ছবি বেগমের দিকে চা বাড়িয়ে দিতেই তিনি বলেন,”আমার এখন কিছু খেতে ইচ্ছা করছে না নিঝুম।”

নিঝুম হতাশ স্বরে বলে,”এখন শোক পালন করে কি হবে চাচি? আপনার উচিৎ ছিল ওদেরকে যেতে না দেওয়া। আমি তো বলেছিলাম ওদের আটকাতে কিন্তু আপনি আমার কথা শুনলেন না।”

ছবি বেগম বলেন,”আমি ওদের ব্যবহারে ভীষণ ব্যথিত। আমি ভাবতেও পারিনি, আমার ছেলে আবির, যাকে আমি ছোট থেকে এত কষ্ট করে বড় করেছি সে আমাকে এভাবে ছেড়ে যাবে। এতোটা নির্দয় ও কিভাবে হলো?”

নিঝুম বলে,”নির্দয় আপনিও কম হন নি৷ বরং আমার মনে হয় আপনার দোষই এখানে বেশি।”

আবরাজ রাগী কন্ঠে বলে,”নিঝুম! তুমি কি বলছ এসব? ওনাকে তুমি এভাবে বলতে পারো না।”

আদৃতা বলে,”এটা আর নতুন কি। মম তো সবসময় আমার বিরোধিতা করেই সুখ পায়৷ যেন আমি তার নিজের মেয়েই না।”

নিঝুম আরো কিছু বলতে যাবে এমন সময় কলিং বেল বেজে ওঠে। আবরাজ উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”আমি দেখছি, কে এসেছে।”

ছবি বেগম খুশি মনে বলেন,”আবিররা নিশ্চয়ই ফিরে এসেছে। আমি জানি, ওরা এই বাড়ি ছেড়ে বেশিক্ষণ থাকতে পারবে না সে যতোই রাগ বা অভিমান থাকুক।”

আবরাজ গিয়ে দরজা খুলতেই একজন অপরিচিত ব্যক্তিকে দেখে অবাক হয়। বলে ওঠে,”আপনি কে?”

আগন্তুক ব্যক্তি বলে ওঠে,”এটা কি আবরাজ খান ও নিঝুম খানের বাড়ি?”

“জ্বি, আমি আবরাজ খান। কিন্তু আপনি কে?”

“আমি ব্লু হসপিটাল থেকে আসছি।”

“ব্লু হসপিটাল?”

“আপনাদের সাথে অনেক জরুরি কথা আছে। ভেতরে আসতে পারি?”

“জ্বি, আসুন।”

তিনি ভেতরে আসেন। নিঝুম ও ছবি বেগম আগন্তুক ব্যক্তিকে দেখে অবাক হয়। নিঝুম বলে,”ইনি কে?”

আবরাজ বলে,”ইনি ব্লু হসপিটাল থেকে এসেছে।”

“ব্লু হসপিটাল! এই হসপিটালেই তো আমি আদৃতার জন্ম দিয়েছিলাম এক ঝড়ের রাতে। আজো আমার সেই রাতের কথা মনে পড়ে।”

লোকটি বলে ওঠে,”একটা ঐতিহাসিক ভুলের সংশোধন করতে আজ এখানে আসা।”

আবরাজ বলে,”কি ভুলের কথা বলছেন আপনি?”

“আজ থেকে ২০ বছর আগে, যেদিন আপনারা সন্তানের জন্ম দেন সেদিন হাসপাতালে দুটো বাচ্চার অদল বদল হয়। পরবর্তীতে বিষয়টা জানাজানি হলেও হাসপাতালের সম্মানের কথা ভেবে ব্যাপারটা চেপে রাখা হয়! আর সেখানেই একজন দরিদ্র ব্যক্তির সন্তানের সাথে আপনাদের সন্তানের অদল-বদল হয়!”

কথাটা শোনামাত্রই সবাই বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকে। আদৃতা চিতকার করে বলে ওঠে,”এটা হতে পারে না!”

to be continue…….

#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে(সিজন ২)
#Part_28
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আদৃতা নিঝুম ও আবরাজের আসল মেয়ে নয়েই কথা টা শোনামাত্রই সবাই বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকে। আদৃতা চিতকার করে বলে ওঠে,”এটা হতে পারে না!”

নিঝুম হঠাৎ করেই ভীষণ অসুস্থ বোধ করে সোফায় বসে পড়ে৷ আবরাজ এগিয়ে এসে ব্লু হসপিটাল থেকে আগত লোকটির গলার কলার চেপে ধরে বলে,”এসব কি বলছেন আপনি? ছোটবেলা থেকে আমরা যাকে নিজের মেয়ে মনে করে লালন-পালন করলাম, সে আমাদের আসল মেয়ে নয়?”

লোকটি মাথা নিচু করে বলল,”আমি আপনাদের মানসিক অবস্থাটা বুঝতে পারছি কিন্তু এটাই সত্য। আপনাদের মনে আছে, যেদিন আপনাদের সন্তান হয়েছিল সেদিন রাতে প্রচণ্ড ঝড় হচ্ছিল?”

লোকটির কথা শুনে নিঝুম অতীতের পাতায় হারিয়ে যায়। আজ থেকে ঠিক ২০ বছর আগের ঘটনা৷ নিঝুম ও আবরাজ লন্ডনে থাকলেও তারা চেয়েছিল তাদের দ্বিতীয় সন্তানও বাংলাদেশের মাটিতেই জন্ম নিক। এজন্য নিঝুমের যখন গর্ভবস্থার ৬ মাস চলছিল তখনই সে হাসপাতাল থেকে মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে লন্ডন থেকে সিলেটে চলে আসে৷ এখানেই ছবি বেগম তার দেখভাল করেছিলেন। অতঃপর নিঝুমের ডেলিভারি ডেট এগিয়ে এলে আবরাজও লন্ডন থেকে সিলেটে আসে। সব কিছু ঠিকঠাকই ছিল কিন্তু হঠাৎ করে এক ঝড়বৃষ্টির রাত্রিতে নিঝুমের প্রসব বেদনা ওঠে। সেই সময় নিঝুমকে নিয়ে আবরাজ দারুণ সমস্যায় পড়ে। আবির-আনিকাও সেই সময় বাইরে ছিল। বাসায় ছিল শুধু আবরাজ, নিঝুম আর ছবি বেগম। ছবি বেগম এই অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নেন, বাড়িতেই নিঝুমের নরমাল ডেলিভারি করানোর। কিন্তু আবরাজ বুঝতে পারে নিঝুমের অবস্থা স্বাভাবিক নয়। তাই সেই দিন সেই ঝড়বৃষ্টি মাথায় নিয়েই নিঝুমকে নিয়ে যায়। তারপর নিকটেই ব্লু হসপিটাল নামক একটা হাসপাতালে যায়।

সেদিন হাসপাতালে চিকিৎসক সংখ্যা খুব কম ছিল। অপরদিকে রোগী ছিল অনেক। সেই অবস্থাতেই নিঝুমের ডেলিভারি হয় এবং দীর্ঘ ১ দিন পর তার সন্তানকে তার কাছে দেয়া হয়। এটা নিয়ে আবরাজ ও নিঝুমের সেসময় কিছুটা খটকা লেগেছিল। কারণ সাধারণত বাচ্চাকে মায়ের কাছে দিতে এত দেরি করার কথা না। কিন্তু হাসপাতাল কতৃপক্ষ বলেছিল, বাচ্চাটার জন্মকালীন কিছু সমস্যা থাকায় তাকে আলাদা করে বিশেষ পর্যবেক্ষণ কক্ষে রাখা হয়েছিল। এজ্ন্য আর তারা বিষয়টা নিয়ে বেশি মাথা ঘামায়নি।

তবে আজ অতীতের এই কথাগুলোই তাদের ভাবাচ্ছে। ব্লু হসপিটাল থেকে আগত লোকটা বলে,”আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, আপনাদের বাচ্চাকে একদিন পর আপনাদের কোলে তুলে দেয়া হয়েছিল?”

নিঝুম বলে ওঠে,”হ্যাঁ।”

“এর কিছু নিদিষ্ট কারণ ছিল৷ আপনাদের বলা হয়েছিল, বাচ্চাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কক্ষে রাখা হয়েছিল। তবে আসল সত্য ভিন্ন ছিল। সেদিন আমাদেরও হাসপাতালে মোট ৩ টি নবজাতক সন্তানের জন্ম হয়েছিল একই সাথে। তবে আমাদের হাসপাতালে গোপনে কিছু বাচ্চা পাচারের চক্র গড়ে উঠেছিল এবং আমাদের হাসপাতালের কিছু কর্মকর্তাই সেই চক্রের সাথে যুক্ত ছিল। সেই চক্র মিলেই এই অঘটন ঘটিয়েছিল। সদ্যজাত তিনটি মেয়ের মধ্যে মধ্যে একটি শিশুকে চক্রের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল, আর বাকি দুইটি শিশুকেও তারা পাচার করতে চেয়েছিল কিন্তু সেই সময় কয়েকজন ডাক্তার তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলে। পরবর্তীতে হাসপাতালের সম্মান বজায় রাখতে বিষয়টা গোপন রাখা হয়েছিল। তবে সেদিন যেই দুটি বাচ্চাকে ওরা পাচার করতে ধরেছিল তাদের ডাক্তাররা রক্ষা করতে পারলেও দুজনের মধ্যে কে কার সন্তান সেটা নিশ্চিত করার সুযোগ ছিল না। তাই তড়িঘড়ি করে ব্যাপারটা নিশ্চিত করার জন্য আমরা ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেই। আমিও সেই চিকিৎসকদের মধ্যে একজন ছিলাম। মূলত উপরমহলের চাপেই আমরা বিষয়টা এভাবে সামাল দিতে বাধ্য হই৷ তবে এই ঘটনার কিছু দিন পরই আমরা কিছু ফাইল দেখে নিশ্চিত হই যে, আপনাদের দুজনের বাচ্চা অদল বদল হয়েছে। এরপর হাসপাতালের উদ্ধতন কর্মকর্তাদের আমরা বিষয়টা জানালে তারা আবারো আমাদের চুপ থাকতে বলে। কারণ এসব জানাজানি হলে হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল হবে এমনকি সাথে সাথে আমাদের ক্যারিয়ারও ধ্বংস হবে। তাই ভয়ে আমরা ব্যাপারটা লুকিয়ে যাই। তবে এই ব্যাপারটা নিয়ে একটা অপরাধবোধ সব সময় কাজ করে আমাদের মধ্যে। আজ আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি। আমি একজন ব্ল্যাড ক্যান্সারের রোগী। আর বেশিদিন আল্লাহ আমার হায়াত রাখেন নি। তাই আজ মৃত্যুর আগে আপনাদের সত্যটা জানাতে এলাম। নাহলে যে মৃত্যুর পর এই পাপের বোঝা আমায় বয়ে নিয়ে বেড়াতে হতো।”

নিঝুম কান্নায় ফেটে পড়ে। আবরাজ এসে তাকে সামলায়। নিঝুম বলে,”আমার মেয়ে এখন কোথায় আছে?”

“আপনার সন্তান এখন কোথায়, কেমন আছে—আমি সেটা জানি না। তবে তার পালিত বাবা-মার ঠিকানা একটা ডকুমেন্টে ছিল। সেই ঠিকানাতে আমি গিয়েছিলাম এবং সেখানে গিয়ে দেখি তারা এখন আর সেখানে থাকে না।”

আবরাজের হাতের মুঠো শক্ত হয়ে গেল। তার কণ্ঠ রাগে কাঁপছিল, “তাহলে এতদিন ধরে আমরা যাকে আমাদের মেয়ে ভেবেছি, সে আমাদের মেয়ে নয়। আমাদের আসল মেয়ে অন্য কেউ!”

আদৃতার পুরো শরীর অসাড় লাগছে। সে অস্পষ্ট গলায় বলল, “আমার বাবা-মা তাহলে অন্য কেউ?”

নিঝুম ধপ করে সোফায় বসে পড়ে, মাথা দুই হাতে চেপে ধরে। তার চোখের সামনে ২০ বছর আগের ঝড়বৃষ্টির সেই রাত ভেসে উঠল। যদি তার সন্তান সত্যিই হারিয়ে গিয়ে থাকে, তবে সে কোথায়? কেমন আছে? এই মেয়েটি যদি তার না হয়, তবে আসল মা-বাবা কে?

হাসপাতাল থেকে আসা লোকটি ধীরে ধীরে বলল, “আমরা জানি, এর জানি আমি ভীষণভাবে দুঃখিত, কিন্তু এখন কিছুই বদলানো যাবে না। আমি চেয়েছিলাম অনেক আগেই আপনাদের সত্যটা বলতে কিন্তু কি করবো বলুন? আমার পুরো ক্যারিয়ার, আমার বউ বাচ্চার মুখের খাবার জড়িয়ে ছিল এর সাথে। যদি সত্যটা বলতাম তাহলে যে নিজে বিপদে পড়তাম। আর আজ এই সত্যটা গোপন রাখার জন্যই এত গুলো জীবন এলোমেলো হয়ে গেল। আমার সত্যিই ভীষণ খারাপ লাগছে।”

আবরাজ তার কলার চেপে ধরে হুঙ্কার দিয়ে উঠল,”কেনো? আমার আসল মেয়েকে কোথায় নিয়ে গেছে? আপনি কিছুতেই বলতে পারেন না যে কিছু করার নেই! আপনি তো চাইলেই সব সত্যটা আরো আগে বলতে পারতেন নাকি? কেন বললেন না? এতদিন ধরে একটা মেয়েকে বড় করার পর আমরা জানতে পাচ্ছি সে আমাদের আসল মেয়ে নয়! এখানে কেমন অনুভূতি হতে পারে তা কি আপনি উপলব্ধি করতে পারছেন? আপনার সাথে যদি এমন হতো তো কি কর‍তেন?”

লোকটি ভয়ে কেঁপে উঠল। আর সাথে লজ্জায় মাথা হেট করে বলল,”আমি জানি, যা হয়েছে তা শোধরানোর কোন উপায় নেই। কিন্তু আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, নিজের পাপ শোধরানোর চেষ্টা করবো৷ আমি জানি না, আর কতদিন বাঁচব, আল্লাহ আর কতটুকু হায়াত বাকি রেখেছেন কিন্তু বাকি দিনগুলো আমি আপনার মেয়েকে খুঁজতে আপনাদের সাহায্য করব। তাকে আপনাদের কোলে তুলে দিয়েই আমি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবো।”

~~~~~~~~~~~
সিলেটের থেকে অনেক দূরে সুনামগঞ্জের ছোট্ট একটি গ্রাম শিমুলপুর। এই গ্রামেই বাস করে এক দরিদ্র পরিবার৷ সেই দরিদ্র পরিবারেরই হাসিখুশি মেয়ে সালমা। মা-বাবার তিন সন্তানের মধ্যে সবার বড় সে।

সালমা আজো অন্য সব দিনের মতো বসে পড়েছে অবসর সময়ে তার মা-বাবার সাথে গল্প কর‍তে। সালমার বাবা তাকে বলে,”কপাল কইরা এমন একখান মাইয়া পাইছি। হামার মাইয়া হইয়াও তার কি রূপ! গ্রামের লোক তো খালি কয়, এইডা কি সত্যি হামার মাইয়া নাকি কোথাও থাকি কুড়াইয়া পাছি।”

সালমার মা বলেন,”তা কইবে না? আমাদের বাকি পোয়াগুলাকে দেখ আর সালমারে দেখ। আকাশ-পাতাল তফাৎ। সালমা তো যেন মেয়ে নয় আসমানের পরী। আল্লাহর কত বড় রহমত থাকলে এত সুন্দর এক নূরানী চেহারার মেয়েকে আমাদের ঘরে পাঠাইল। অথচ তোমার মনে আছে, যেদিন সালমা জন্ম নিল, সেদিন কি ঝড়বৃষ্টিটাই না হলো?”

“তা আবার মনে থাকইবে না? আমার আইজো মনে আছে।”

to be continue…….

#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে(সিজন ২)
#Part_29(Bonus)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আরিশা দীর্ঘ সময় যাবৎ নিশ্চুপ ছিল। আফিফা সকাল সকাল মেডিকেল কলেজের উদ্দ্যেশ্যে বেরিয়ে গেছে। তার নাকি আজ ভীষণ জরুরি কাজ আছে। আনিকা খানও হাসপাতালে চলে গেছেন। আরিশাকে একা চুপচাপ বসে থাকতে দেখে ঈশিতা আরিশাকে বলে,”আরিশা, তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে,এভাবে বসে থাকতে থাকতে তুমি ভীষণ বোর হয়ে যাচ্ছ। আচ্ছা, চলো আমরা বাইরে কোথাও একটা থেকে ঘুরে আসি।”

আরিশা প্রথমে আপত্তি প্রকাশ করে বলে,”না, আপু। আমি ঠিক আছি। আপনাকে আমায় নিয়ে এত বিচলিত হতে হবে না।”

ঈশিতা বলে,”আরে এত অস্বস্তি বোধ করতে হবে না। তুমি আফিফার বোন মানে, তুমি আমারও বোন। চল বাইরে থেকে ঘুরে আসি।”

এবার আর আরিশা তেমন আপত্তি জানাতে পারল না। অগত্যা ঈশিতা আরিশাকে সাথে নিয়ে তাদের এলাকা ঘুরে দেখাতে লাগল। আরিশারও এবার কিছুটা ভালো লাগছিল৷ হঠাৎ করে ঈশিতার একটা জরুরি কল আসায় সে আরিশাকে বলে,”বোন, তুমি একটু এখানে থাকো। আমার একটা জরুরি কল এসেছে তো কথা বলে আসি।”

আরিশা মাথা নাড়িয়ে বলল,”আচ্ছা,যান।”

ঈশিতা একটু দূরে গেল৷ আরিশা সেই সময় একাই দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ করেই তার সামনে একটি বাইক এসে দাঁড়ালো। আরিশা ভ্রু কুঁচকে তাকালো বাইকে বসা থাকা হেলমেট পড়া ব্যক্তিটির দিকে। কিছু সময় পর লোকটা হেলমেট নামাতেই আরিশা হতবাক স্বরে বলল,”আপনি!”

জাঈদ করুণ চোখে আরিশার দিকে তাকিয়ে ছিল৷ আরিশা রাগী কন্ঠে বলে,”আপনি কেন এসেছেন এখানে? কি চাই আপনার? আমি একটু শান্তিতে থাকি, ভালো থাকি সেটা কি আপনার সহ্য হয়না? আবার এখানে চলে এসেছেন আমার শান্তি নষ্ট করার জন্য?”

জাঈদ অসহায় কন্ঠে বলল,”আমি তোমার ভালো থাকা কিংবা শান্তিতে থাকা নষ্ট করতে আসিনি বরং তোমার ভালো থাকার সাথী হতে এসেছি।”

আরিশা তীব্রে ক্ষোভে ফেটে পড়ে বলল,”আপনার এসব নাটক বন্ধ করুন আর দূর হয়ে যান আমার সামনে থেকে৷ আপনাকে দেখলেও আমার ঘৃণা আসে।”

জাঈদ এবার আরিশার হাতটা আলতো করে ধরে বলে,”বিশ্বাস করো আরিশা, তুমি আমাদের বাড়ি থেকে চলে আসার পর আমি একটা মিনিটও শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল৷ এখন আমি উপলব্ধি করতে পারছি, তোমায় ঠিক কতটা ভালোবেসে ফেলেছি। তাই তো সব কিছু ছেড়ে ছুটে এসেছি তোমার কাছে। দয়া করে আমায় ফিরিয়ে দিও না।”

“আপনার এসব নাটক দেখে আমি কিছুতেই গলব না। আমি এখনো ভুলিনি ঐ বাড়িতে প্রতিটা দিন আপনি আমায় কিভাবে কষ্ট দিয়েছিলাম৷ আমার আপ্পি তো আপনার বিরুদ্ধে কেইসও করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি বেশি ঝামেলা চাই নি জন্য কোন আইনি পদক্ষেপ নেই নি। কিন্তু আপনি যদি এভাবেই আমায় বিরক্ত করতে থাকেন তাহলে আমি আপনাকে আইনের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হবো!”

“আরিশা!”

এমন সময় ঈশিতা চলে আসে। আরিশাকে একটা ছেলের সাথে কথা বলতে দেখে সে বলে,”এই ছেলেটা কে আরিশা? তুমি কি চেনো ওনাকে?”

আরিশা জাঈদের থেকে মুখ ফিরিয়ে বলে,”উনি আমার জীবনের একটা অভিশাপ। যা আমি দূর করতে চাই।”

বলেই সে উল্টোদিকে হাটা শুরু করে। ঈশিতা ভ্রু কুচকে জাঈদের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে অতঃপর সেও আরিশার পেছন পেছন যেতে থাকে৷ এদিকে জাঈদ একটা মলিন হাসি দিয়ে বলে,”আমি হয়তো তোমার জীবনে অভিশাপ হয়ে এসেছিলাম আরিশা কিন্তু আমি চাই আমাদের শেষটা আশীর্বাদে রূপান্তরিত হোক। এজন্য আমায় যতদিন লড়াই কর‍তে হয় আমি করবো কিন্তু তোমার মন আমি জয় করবোই! তোমাকে আমার জীবনে আমি ফেরাবোই। নিজের সমস্ত ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করেই তোমায় নিজের জীবনে জড়াবো আমি। কথা দিলাম।”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আদৃতা যেন আজ বড়সড় একটা ধাক্কা খেয়েছে। তার বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করছে না যে, সে আবরাজ ও নিঝুমের মেয়ে নয়। তাই তো এবার সে ভীষণ ক্ষেপে গিয়ে বলে,”এই লোকটার কথা তোমরা কেউ বিশ্বাস করো না,আমার মনে হচ্ছে এই লোকটা একটা ফ্রড। এনাকে তোমরা পুলিশে দাও। তাহলেই আসল সত্য সামনে আসবে।”

আবরাজ খান বলেন,”আমার সেটা মনে হচ্ছে না।”

নিঝুম খানও বলেন,”হ্যাঁ, ওনার চোখমুখ দেখে আমারও মনে হচ্ছে না উনি মিথ্যা বলছেন।”

নির্ঝরও ততক্ষণে সেখানে চলে এসেছে এবং সমস্ত কিছু শুনেছে।। সে বলে,”আমাদের ওনার কথাকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। আদৃতা তোকে আমি ছোট থেকেই নিজের বোন ভেবেছি, মম-ড্যাড তোকে মেয়ে ভেবেছে এই স্থানটা সবসময় থাকবে। কিন্তু যদি সত্যি, আমার আসল বোন অন্য কেউ এবং সে যদি অন্য কোথাও কষ্টে থাকে তাহলে তাকেও সেখান থেকে উদ্ধার করে আনা আমাদের কর্তব্য।”

আবরাজ নির্ঝরকে সমর্থন করে বলে,”ও একদম ঠিক বলছে।”

আদৃতা এবার অনেক আশা নিয়ে ছবি বেগমের কাছে যায়। বলে,”গ্রানি, তুমি অন্তত কিছু বলো।”

কিন্তু আদৃতার সব আশায় পানি ঢেলে ছবি বেগম বলেন,”আমার আসল নাতনী যদি অন্য কেউ হয় তাহলে তাকে এই বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হোক।”

আদৃতা বিস্ফোরিত কন্ঠে বলে,”তুমিও!”

এবার ব্লু হসপিটালের লোকটার ফোনে হঠাৎ একটা কল আসে। তিনি ফোনটা রিসিভ করে কিছুক্ষণ কথা বলেন। অতঃপর ফোনটা রেখে ভীষণ খুশি মনে সবার উদ্দ্যেশ্যে বলেন,”আপনাদের জন্য একটা ভালো খবর আছে। আমি আমার দুই ছেলেকে আপনাদের মেয়েকে যারা নিজেদের মেয়ে বলে মানুষ করছে তাদের তৎকালীন ঠিকানায় সবার সাথে কথা বলতে পাঠিয়েছিলাম। যদিও আমি একবার সেখানে গিয়ে কোন প্রমাণ না পেয়ে ফিরে এসেছিলাম। কিন্তু ওরা ওখানকার একজন বয়স্ক ব্যক্তির সাথে কথা বলেছেন যিনি সেই সময় ওনাদের প্রতিবেশী ছিলেন। তিনি বলেছেন, ওনারা আগে সিলেটে একটা ইটভাটায় কাজ করত। কিন্তু ইটভাটাটা বন্ধ হবার পর তারা নিজেদের গ্রাম সুনামগঞ্জের শিমুলপুরে। ওরা হয়তোবা এখনো সেখানেই আছে। ওখানে গিয়ে খোঁজ করলেই হয়তো ওনাদের পাওয়া যাবে। লোকটার মানে বাচ্চাটার বাবা নাম ছিল আব্দুল রহমান।”

নিঝুম অস্থির কন্ঠে বলে,”আমি এখনই ঐ গ্রামে যেতে চাই। আমার আসল মেয়েকে আমি ফেরত পেতে চাই।”

আদৃতা বলে ওঠে,”আমিই তোমার আসল মেয়ে। আর কেউ নয়।”

ছবি বেগম রাগী কন্ঠে বলেন,”এই মেয়ে চুপ করো তো। তোমাকে এতদিন নিজের নাতনি জেনে অনেক খাতির করেছি। কিন্তু এখন যখন জানলাম, তুমি আমার নাতনি নও তখন আর তোমার এত তেজ দেখতে পারবো না। আমার আসল নাতনীকে আমি ফেরত চাই। আবরাজ, নিঝুম, নির্ঝর চলো তোমরা সবাই ঐ শিমুলপুর গ্রামে। আমিও যাব তোমাদেরও সাথে।”

আদৃতা চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। নির্ঝর তাকে সামলাতে গেলে ছবি বেগম বলেন,”ওর এসব নাটক দেখে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। তোমরা এখন তাড়াতাড়ি চলো তো। আমি আর সময় নষ্ট করতে চাই না। এমনিতেই এই মেয়ের জন্য আমার সাজানো সংসার ভেঙে গেছে।”

অতঃপর সকলে মিলে রওনা দেয় শিমুলপুরের উদ্দ্যেশ্যে।

~~~~~~~~~~~~~~
সালমা নিজের গ্রামের এক প্রতিবেশীর বাসায় ছিল। তার এক বান্ধবীকে আজ পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। তাই তার বান্ধবীকে সাজানোর জন্য সালমা আজ এখানে এসেছিল। সালমা যখন তার বান্ধবীকে সাজাচ্ছিল। তখন তার বান্ধবী কুলসুম বলে,”তুই সব দিক দিয়া কত সেরা! তোকে দেখইলে মনেই হয় না তুই আমাগো গ্রামের পুরি!”

“ধুর কি যে কস তুই। আমি তো এই গ্রামেরই মেয়ে।”

এমন সময় হঠাৎ করে সালমার ছোট বোন ফাতেমা ছুটে এসে বলে,”আপা, জলদি বাড়িত চলো। সিলেট শহর থাইকা কিছু লোগ আসছে। আব্বা তোমারে জলদি বাড়িতে যাইতে কইসে।”

সালমা ভ্রু কুচকে বলে,”এই সময় আবার কেডা আসল! আচ্ছা, কুলসুম তুই থাগ। আমি দেইখা আসি।”

বলেই সালমা দেয় একটা দৌড়। কিছু সময়ের মধ্যে সে বাড়ির সামনে গিয়ে দেখে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। সালমা কিছুটা কৌতুহল নিয়েই বাড়িতে ঢুকে দেখে তার বাবা দাঁড়িয়ে আছেন আর কিছু লোক চেয়ারে বসে আছেন। সালমাকে দেখেই আব্দুল রহমান বলে ওঠেন,”ঐ যে আইসা গেছে, আপনাদের পুরি, সালমা আক্তার “বৃষ্টি”।”

কথাটা শোনামাত্রই নিঝুম দৌড়ে গিয়ে সালমাকে জড়িয়ে ধরে কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলে,”আমার মেয়ে বৃষ্টি..”

to be continue…….