অপ্রিয় তুমি পর্ব-০৩

0
73

#অপ্রিয়_তুমি
#পর্ব৩
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

উৎসাকে শক্ত আলিঙ্গনে জড়িয়ে রেখেছে মেহরাব। উৎসা প্রাণ পণ চেষ্টা করছে মেহরাবের বাঁধন থেকে নিজেকে ছাড়াতে কিন্তু পারলে তো! একটা ছেলের শক্তির কাছে একটা মেয়ে কিছুই না। তার ওপর সে যদি হয় জিম করে বডি বানানো পুরুষ তাহলে তো কোনো কথাই নেই। লুচু বেডা দড়ির মতো পেঁচিয়ে রেখেছে ওর কোমর। উৎসা রেগে রুমে এসে সোজা গিয়ে মেহরাবের গলা চেপে ধরতে যাবে তার আগে মেহরাব পিছু ফিরে শক্ত করে ওর কোমর জড়িয়ে ধরেছে। উৎসা চমকে উঠেছে। বেলাজ বেডা বুঝলো কি করে ও এসেছে? উনি তো ওদিকে ঘুরে ছিল। উৎসা রাগে ফোঁস ফোঁস করছে। মেহরাব ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাসি বজায় রেখে বলল,
“কি বউ সকাল সকাল চুমু চাই বললেই পারো। সামান্য একটা চুমুর জন্য তুমি তোমার একমাত্র বরের গলা টিপতে আসবে এটা তো ঠিক না জান”

উৎসা কটমট দৃষ্টি নিঃক্ষেপ করলো মেহরাবের পানে। হাত দিয়ে মেহরাবের গলা টিপে ধরে বলল,
“বেশি জান জান করলে একেবারে জানই নিয়ে নিবো। বেলাজ লোক! রান্না ঘরে ছিলাম অমন ষাঁড়ের মতো ডাকার কি আছে? এমন ভাব করছেন যেন আমাদের প্রেমের বিয়ে। আমাকে ছাড়া আপনার এক মিনিটও চলেই না। আমাকে চোখে হারান”

“তোমাকে আমি অবশ্যই চোখে হারাই। তুমি আমার একটা মাত্র বউ বলে কথা তোমাকে চোখে হারাবো না তো কাকে চোখে হারাবো? প্রেমের বিয়ে না হোক প্রেম হতে কতক্ষন?”

বলে মেহরাব চোখ টিপ দিলো। উৎসা মুখ ঝামটা দিলো। মুখ বাকিয়ে বলল,
“প্রেম! তাও আবার কিনা আপনার সাথে? তাও আমার? কখনো শুনেছেন সাপ আর বেজির মাঝে প্রেম হতে? আপনার সাথেও আমার প্রেম সম্ভব না”

“সম্ভব! সম্ভব। সবই সম্ভব মেয়ে। শুধু সময়ের খেলা”

“দেখা যাবে। এখন কি জন্য ষাঁড়ের মতো চিল্লিয়ে ডেকেছেন সেটা বলেন। নাহয় আমি গেলাম”

উৎসা চলে যেতে নিলে মেহরাব ওর হাত ধরে আটকে দিলো।
“এতো পালাই পালাই করো কেন বউ? আমি কি বাঘ না ভাল্লুক? তোমাকে কি খেয়ে ফেলবো নাকি? বেশি পালাই পালাই করলে একদম বেঁধে রেখে দিবো। তখন এদিক ওদিক কোনো দিকেই যেতে পারবে না”

উৎসা ভেংচি কাটলো। বজ্জাত লোক কিছু বলবেও না আবার ছাড়বেও না। মেহরাব শার্ট এনে উৎসার হাতে ধরিয়ে দিলো। উৎসা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
“তাকিয়ে না থেকে শার্টটা পড়িয়ে দেও”

“কেন আপনার হাতে কি হয়েছে?”

“বউ থাকতে নিজের কাজ নিজে করবো এটা হতেই পারে না। বিয়ে করেছি কি করতে? যদি এখনো আমায় নিজের কাজ নিজেই করতে হয়”

উৎসার মেজাজ খারাপ হলো। বেটা কিছু থেকে কিছু হলেই একটা ডায়লগ শুনাবে, “বিয়ে করেছি কি করতে?”। ওনাকে কে বলেছে বিয়ে করতে?
“আমি কি আপনাকে বলেছি বিয়ে করতে? বিয়ে করে এখন সেকেন্ডের আগায় মাথায় খোটা দিচ্ছেন”

“আমি অতো কিছু জানি না। তাড়াতাড়ি শার্টtটা পড়িয়ে দেও আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে”

“আমি পারবো না”

“কি বললে?”

“বলেছি আমি শার্ট পড়িয়ে দিতে পারবো না”

“ওকে। তাহলে যাও দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে এসো”

উৎসা ঘাবরে গেল। মেহরাব একপা একপা করে ওর দিকে এগিয়ে আসছে। শুকনো ঢোক গিলে সুধালো,
“দরজা আটকাবো কেন?”

পিছাতে পিছাতে উৎসার পিঠ এসে ঠেকলো আলমারির সাথে। পিছনে যাওয়ার জায়গায় নেই। উৎসা কি করবে ভেবে পেল না। সামনে মেহারব পিছনে আলমারি। পাশ কেটে যেতে নিবে এমন সময় মেহরাব ওর দুপাশে হাত রেখে আটকে দিলো। খানিকটা ঝুঁকে এলো। মেহরাবের গরম নিঃশ্বাস উৎসার মুখের ওপর পড়ছে। দুজনের মাঝে এক ইঞ্চি সম পরিমান দুরুত্ব। উৎসা বেচারি ভয়ে চোখ বুজে নিলো। মেহরাব ফিসফিস করে নেশালো কণ্ঠে বলল,
“কাল রাতের অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করতে দরজার যে লাগাতেই হবে জান। আর এমনিও তুমি তো ভালো ভাবে কথা শোনার মতো না”

উৎসা তড়িৎ গতিতে বলল,
“আমি আপনাকে শার্ট পড়িয়ে দিচ্ছি। আমি কি দিবো না বলেছি? আপনি প্লিজ দূরে যান”

মেহরাব উচ্চশব্দে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে বলল,
“এই না হলে মেহরাব মির্জার বউ”

উৎসা বিড়বিড় করে বলল,
“মেহরাব মির্জার বউ না ছাই। একবার খালি ভাই নামক জ*ল্লা*দ টাকে হাতের কাছে পাই তারপর ওকে আমি খু*ন করবো। শয়তান টা ইচ্ছে করে ওর দ*জ্জা*ল বন্ধুর গলায় ঝুকিয়েছে আমায়? মানুষের শাশুড়ি দ*জ্জা*ল হয় আর এদিকে তো আমার আস্ত জামাই টাই দ*জ্জা*ল”

উৎসা মনে মনে মেহরাবকে বকছে আর শার্টের বোতাম লাগাচ্ছে। মেহরাব ওর কাহিনী দেখে মিটমিট করে হাসছে। এমন তেড়া বউকে কি করে সোজা করতে হয় মেহরাব মির্জা ভালো করেই জানে। বউ তার প্রেমে না পরে যাবে কই? প্রয়োজন পড়লে ধরে বেঁধে প্রেমে পড়াবে। শার্ট পড়ানো শেষে মেহরাব আয়নায় নিজেকে দেখছে সেই সুযোগে উৎসা এক ছুটে বেরিয়ে এলো। সোজা নিচে এসে দম নিলো। এক ছুটে আসায় হাপাচ্ছে বেচারি। পাশে এসে দাঁড়ালো রিনি। কাঁধে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে বলল,
“এতক্ষনে ছাড়লো দেবর জি? হেব্বি প্রেম দেখি দুজনের। কতো দিনের প্রেম তোমাদের?”

“প্রেম না ছাই। এমন গু*ন্ডা মার্কা লোকের সাথে আবার প্রেম। তুমিও না ভাবি!”

“এই আমার দেবরের নামে মোটেও উল্টোপাল্টা কিছু বলবে না। দেবর আমার হেব্বি রোমান্টিক। রোমান্টিক না হলে কি সকাল সকাল বউয়ের তলবে বাড়ি মাথায় তোলে”

উৎসা বিড়বিড় করে বলল,
“রোমান্টিক না এক নাম্বারের লুচু বেডা”

“কি বললে?”

“কিছু না। চলো যেয়ে দেখি আন্টি একা একা কি করছে”

কথা ঘুরিয়ে রিনিকে নিয়ে রান্নার ঘরের দিকে পা বাড়ালো উৎসা। এখানে থাকা মোটেও সুবিধার না। দেখা যাবে কখন আবার এসে উদয় হবে তখন ওকেই ঝামেলায় পড়তে হবে।
————

দুপুরের খাওয়ার সময় হয়ে গেছে। সবাই টেবিলে এসে বসেছে। মেহরাবের এখনো দেখা নেই। সেই যে বেরিয়েছে কোথায় গেছে? কি করছে কেউ জানে না। কাউকে কিছু বলেও যায়নি। মিজান সাহেব রুষ্ট হলেন ছেলের ওপর। ছেলে তার এক নাম্বারে বাউন্ডুলে স্বভাবের। সারাদিনে বাহিরে বাহিরেই থাকে। তার দেখা পাওয়া যায়না বললেই চলে। এইযে এখন কোথায় আছে কেউ জানে না। টুস করে বিয়ে করে বউ এনেছে সে খেয়াল কি তার আছে? একটা মেয়ে যে তার অপেক্ষায় বসে আছে সে খেয়াল থাকলে এখনো বাহিরে থাকতো না। সালেহা বেগম কে সুধালানে,
“তোমার গুণধর পুত্র কোথায়?”

“আমি জানবো কিভাবে? আমায় বলে গেছে কি?”

“ছেলেকে বলবে বাউন্ডুলে স্বভাব ছাড়তে। এখন বিয়ে করেছে বউ এসেছে এখন এসব চলবে না”

সালেহা বেগমের কাটকাট জবাব,
“আপনার ছেলে আপনি বলেন। আপনাদের বাপ্ ছেলের দ্বন্দে আমি নেই”

মিজান সাহেব কথা বাড়ালেন না। উৎসা খেতে চাইলো না। বলল মেহরাব আসলে খাবে। সালেহা বেগম রিনি দুজন মিলে জোর করে খাওয়ালো। বলল,
“মেহরাব আসার ঠিক ঠিকানা নেই। তুমি খেয়ে নেও”

উৎসা রুমে বসে আছে। দুপুরে গড়িয়ে বিকেল হয়ে এসেছে। এখনো মেহরাবের আসার নাম নেই। মানুষটা কি খেয়েছে? গতকাল আসার সময় নিজের ফোন খানাও আনেনি। বাবার খোঁজ নিবে সেটাও পারছে না। উৎসার মন খারাপ হলো। মুখ বেজার করে বসে রইলো। এমন সময় ঘূর্ণিঝড়ের ন্যায় রুমে প্রবেশ করলো মেহরাব। ঝটপট হাতের ঘড়ি খুলে ড্রেসিং টেবিলের ওপর রেখে কাপড় নিয়ে শাওয়ার নিতে ওয়াশরুমে ছুটলো। ওয়াশরুমে যাওয়ার আগে বলে গেল,
“খাবার বাড়ো আমি আসছি”

উৎসা নিচে নেমে খাবার গরম করে প্লেটে বাড়লো। এর মাঝেই মেহরাব নিচে নেমে এলো। সোজা এসে খেতে বসে পড়লো। খাবার ধরণ দেখে মনে হচ্ছে বেচারার অনেক খিদে পেয়েছে। খাবার খেতে খেতে বলল,
“রেডি হয়ে নেও”

উৎসা কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করলো,
“কেন? কোথাও যাবো আমরা?”

“হ্যাঁ। তোমাদের বাড়ি যাবো। বাবা তোমাকে দেখতে চাচ্ছেন”

উৎসার মন আনন্দে নেচে উঠলো। উৎসাহিত কণ্ঠে সুধালো,
“সত্যিই?”

“হ্যাঁ”

উৎসার ইচ্ছে করলো খুশির ঠেকলায় মেহরাবকে একটা ধন্যবাদ দিতে। পর মুহূর্তে ডিসিশন চেঞ্জ। এমন বজ্জাত বেটাকে ও কখনো ধন্যবাদ দিবে না। উৎসা খুশি মনে রেডি হতে চলে গেল।

উৎসা মিনিট পাঁচের মাঝে রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো। উচ্ছাসিত কণ্ঠে বলে উঠলো,
“চলুন”

মেহরাব খাচ্ছিলো। আচমকা কথায় খেতে খেতে বিষম খেলো। কাশতে কাশতে বেঁচেরার অবস্থা কাহিল। উৎসা ঝট পট পানি এগিয়ে দিলো। পিঠে হাট বুলিয়ে দিতে নিলো। চিন্তিত স্বরে বলল,
“আস্তে ধীরে খাবেন তো! খাওয়ার সময় মন কোথায় থাকে?”

“আমি আস্তে ধীরেই খাচ্ছিলাম। তুমিই তাড়াহুড়ো করছো”

“আমি! আমি কখন তাড়াহুড়ো করলাম?”

“বলেছি রেডি হতে। ট্রেন ছুটে যাচ্ছে না তো। এতো তাড়াহুড়ো কিসের?”

“আপনি বুঝবেন না”

মেহরাব বিড়বিড় করে বলল,
“আসলেই আমি বুঝে কি করবো? এমনিও বেডি মানুষ মানেই জিলাপির প্যাচ”

উৎসা ওকে বিড়বিড় করতে দেখে বলল,
“কিছু বললেন?”

“নাহ, কিছু না। তুমি রুমে যাও আমি খেয়ে আসছি। একটু রেস্ট নিয়ে অতঃপর বের হবো”

উৎসা বসে বসে ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। একবার ঘড়ির তো আরেকবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে। মেহরাব কখন আসবে? ও ওর বাবার কাছে যাবে। মেহরাব রুমে প্রবেশ করলো। উৎসাকে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মাথায় দুস্টু বুদ্ধি নাড়া দিলো। মনে মনে ভাবলো উৎসাকে একটু ক্ষেপানো যাক। বিছানায় বসতে বসতে বলল,
“আজকে না গিয়ে কাল যাই? শরীর টা ভালো লাগছে না”

উৎসার মন এক নিমিষেই খারাপ হয়ে গেল। এতক্ষন হাসি মাখা মুখ খানায় আঁধার নেমে এলো। কোনো কথা না বলে ব্যালকনি তে চলে গেল। মেহরাব অবাক হলো। ও ভেবেছিলো উৎসা হয়তো এসে অবদার করবে কানের সামনে ঘ্যান ঘ্যান করবে।কিন্তু হলো তার উল্টো। মেহরাব এগিয়ে গেল ব্যালকনিতে। দেখলো উৎসা এক মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। হাস্যজ্জ্বল মুখখানা শুকিয়ে গেছে। ধীর পায়ে এগিয়ে যেয়ে পিছন থেকে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে নিলো।
“যাবে না? এখানে এসে দাঁড়িয়ে আছো যে?”

“আপনি তো বলেন আপনার শরীর খারাপ করছে। আপনি যেয়ে রেস্ট নেন”

মেহরাব উৎসার মাথায় চুমু এঁকে দিয়ে বলল,
“বোকা মেয়ে আমি মজা করছিলাম। চলো”

উৎসা ধুম করে কিল বসিয়ে দিলো মেহরাবের বুকে। মেহরাব ব্যাথা পেলেও শব্দ করলে না।
“বদ লোক ইচ্ছে করে আমায় শুধু ক্ষেপায়। আজকে বাবার বাড়ি গেলে আমি আর আসবোই না। ওখানেই থেকে যাবো”

মেহরাব কণ্ঠ অন্যরকম করে বলল,
“ও কথা মোটেও ভেবো না বউ। যেমন বগল দাবা করে নিয়ে যাবো তেমনই নিয়ে আসবো। আসতে না চাইলে জোর করে নিয়ে আসবো। বউ ছাড়া থাকার ছেলে মেহরাব মির্জা না। তাই সে কথা মাথায়ও এনো না”

#চলবে?