#অপ্রিয়_তুমি
#পর্ব১৭
#আফিয়া_আফরোজ_আহি
মেহরাব কতক্ষন যাবত বউয়ের পিছু পিছু ঘুরছে কিন্তু উৎসা ওকে পাত্তাই দিচ্ছে না। এমন ভাব করছে যেন মেহরাব নামক কেউ এখানে নেই। মেহরাবের এক মিনিটের জন্য মনে হলো ও বোধ হয় ভ্যানিস হয়ে গেছে। অদৃশ্য হয়ে যাওয়ায় ওর বউ ওকে দেখতে পাচ্ছে না। সত্যিই কি তাই? তাহলে তো একটা কিছু করতেই হয়। মেহরাব কি করবে ভেবে পেল না। হুট্ করে চুমু বসিয়ে দিলো উৎসার গালে। উৎসা সোফায় বসে রিনির সাথে কথা বলছিলো। মেহরাবের কাণ্ডে রিনি শব্দ করে হেসে ফেলল। উৎসা রক্তিম চোখে তাকালো মেহরাবের পানে। বেচারা মেহরাব উৎসার চোখ রাঙানো দেখে ফিচলে হাসলো। দাঁত কেলিয়ে বলল,
“আমি ভেবেছি আমি বোধ হয়ে অদৃশ্য হয়ে গেছি তাই আরকি চেক করছিলাম। তোমরা গল্প করো। আমি গেলাম”
উৎসার ভাব ভঙ্গি একটু পরিবর্তন হলো না। একই ভঙ্গিতে চেয়ে রইলো। মেহরাব ওর চাহনির মানে বুঝে মানে মানে কেটে পড়লো। এমনিতেই বউ ক্ষেপে আছে এখন বাড়াবাড়ি করলে আস্ত চিবিয়ে খাবে। মেহরাব প্রস্থান করার সাথে সাথে রিনির টিজ করা শুরু হয়ে গেল।
“আপু চুপ করবে তুমি? নাহয় তোমার সাথেও কথা বলবো না”
রিনি হেসে দিলো। হাসতে হাসতে বলল,
“তু্ই কি আমায় ভোলা ভালা, তোমার প্রেমে দিওয়ানা মেহরাব মির্জা পেয়েছো জানু? আমি তোর ওই হুমকি ধামকিতে ভয় পাই না। কথা না বলেল মা*ইর দিয়ে কথা বলাবো”
উৎসা হাসলো রিনির কথায়। এইতো কয়েকদিনের পরিচয় তাদের। কিন্তু রিনি মাঝে মাঝে এতটা অধিকার বোধ নিয়ে কথা বলে মনে হয় উৎসার আপন বোন ওকে শাসন করছে।
“আবার দুজন ঝগড়া করেছিস?”
রিনি কথাটা শেষ করতে পারলো না তার আগেই উৎসা তেতে উঠলো। তেতে উঠে বলল,
“তোমার কি আমাকে ঝগড়ুটে মনে হয়? আমি খালি ঝগড়া করি? আর তোমার দেবর দুধে ধোয়া তুলসী পাতা?”
“আরে তু্ই ভুল বুঝছিস আমায়। আমি সেটা মিন করিনি। কি হয়েছে বল”
উৎসা ক্রুব্ধ হয়ে বলল,
“তোমার দেবর আমায় পে*ত্নী বলেছে। আমি কি পে*ত্নী? আমায় কোন এঙ্গেল দিয়ে পে*ত্নী লাগে শুনি? তুমিই বলো আমায় দেখতে কি সত্যি পে*ত্নীর মতো লাগে?”
শেষের প্রশ্ন গুলো ছিলো এক রাশ অভিমান মেশানো। রিনির মনে হলো এই বুঝি উৎসা কেঁদে দিবে। হলোও তাই ঠোঁট উল্টে কান্না কান্না ভাব। রিনি উৎসাকে কাছে টেনে নিলো। আদর করে বলল,
“মন খারাপ করিস না বনু। মেহরাব হয়তো মজা করে বলেছে জানিস তো ওর স্বভাব”
উৎসা নাক টেনে বলল,
“এই জন্যই ভেবেছি তোমার দেবরকে এক সপ্তাহ শাস্তি দিবো। এক সপ্তাহ ওনার সাথে কথা বলবো না। ভালো করেছিনা বলো?”
“এক সপ্তাহ একটু বেশি হয়ে গেল না?”
“হলে হবে। আমি ওনাকে শাস্তি না দিয়ে হার মানবো না”
উৎসা তার সিদ্ধান্তে অটল। কোনো মতে ও মেহরাবকে ছাড় দিবে না। চুল পরিমান ছাড়ও না।
————
তিয়াস বেচারা এতিমের মতো তানজিলার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা নিষ্ঠুর মানবীর ন্যায় ওকে পাত্তাই দিচ্ছে না। কেমন নির্দয়ের মতো বান্ধবীর সাথে খোশ গল্প করছে। ওকে পাত্তাই দিচ্ছে না। এদিকে যে কেউ একজন তার দিকে চাতকের ন্যায় চেয়ে আছে সে খেয়াল কি তার আছে? উহু, একটুও নেই। খেয়াল থাকলে নিশ্চই একবার হলেও এদিকে তাকাতো। আশেপাশে সন্ধানী দৃষ্টিতে তার প্রেমিক পুরুষকে খুঁজে বেড়াতো। কিন্তু সে এগুলোর কিছুই করছে না। করবেই বা কেন? তার বজ্জাত বোনটার বজ্জাত মার্কা সাগরেত তো সে। বোনটা তার বন্ধু কে জ্বালিয়ে মা*রছে আর বোনের বান্ধবী তাকে জ্বালিয়ে মা*রছে। খুব শীঘ্রই মেয়েটাকে খাঁচায় বন্দি করতে হবে এভাবে ছেড়ে রাখা যাবে না। তিয়াস মনে মনে ফন্দি এটে বসলো। বন্ধু তার বিয়ে করে সংসার করছে তাহলে ওই বা পিছিয়ে থাকবে কেন?
————
মেহরাব পড়েছে মহা ফাঁসাদে। কেন যে বন্ধু নামক শত্রুটার সাথে তালে তাল মিলাতে গিয়েছিলো? এখন সেই স্বাদ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। মানুষ এই জন্যই বলে,
“শা*লা মানেই জ্বালা”
সেই জ্বালাই এখন মেহরাবকে জ্বালিয়ে মা*রছে। যন্ত্রনায় মেহরাবের ইচ্ছে করছে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কান্না করতে। কিন্তু বেচারা সেটা পারছে না। উৎসা বসে আছে তানজিলা আর রিনির সাথে। একটু বাদেই ওরা চলে যাবে। তবে উৎসা মনে মনে ফন্দি এটে বসে আছে যে কোনো বাহানায় ও এখানে থেকে যাবে। যাবে না ও বাড়ি। ওকে পে*ত্নী বলা? বিড়বিড় করে বলল,
“মেহরাব মির্জা আমি যদি আপনাকে পে*ত্নী বলার মজা হাড়ে হাড়ে না বুঝাতে পারি তাহলে আমার নামও উৎসা না”
অবশেষে যাওয়ার সময় হয়েই এলো। উৎসা মিজান সাহেবের কাছে বায়না ধরলো। আদুরে গলায় বলল,
“বাবা আমি কিছু দিন এ বাড়িতে থাকি”
মিজান সাহেব একবার ছেলের দিকে তাকালেন। মেহরাব ইশারায় না বোঝাচ্ছে। উৎসা ঠোঁট উল্টে বলল,
“প্লিজ বাবা, থাকি না”
মিজান সাহেব উৎসার কথা ফেলতে পারলেন না। উৎসার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“ঠিক আছে তবে তাড়াতাড়ি ফিরে আসিস মা। তোকে ছাড়া যে আমার বাড়িটা ফাঁকা ফাঁকা লাগবে”
উৎসা মিষ্টি হেসে বলল,
“হ্যাঁ, তাড়াতাড়িই চলে আসবো”
কি আর করার মেহরাবকে একাই ফিরে আসতে হলো। রুমে ঢুকতেই বিষণ্ণতা জেঁকে বসলো। রুমটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। মেহরাব আশেপাশে তাকালো। নাহ সব কিছু তার নিজের জায়গায়ই আছে তবে যেটা নেই সেটা হলো এই রুমের মালকিন। যার অস্তিত্ব পুরো রুম জুড়ে বিরাজ করে। বাড়ি ফিরে পিচ্চি মেয়েটাকে চোখের সামনে না দেখলে মেহরাবের হৃদয় যেন এক ফোঁটাও শান্ত থাকে না। উন্মাদ হয়ে যায় মেহরাব। মেহরাব ভালো করেই বুঝে গেছে এখন উৎসার কাছে গেলে মেয়েটার রাগ কমবে উল্টো বাড়বে। তাই না যাওয়াই ভালো। মেহরাবের চোখের সামনে ভেসে উঠলো এইতো কয়েকদিন আগের ঘটনা। ও অসুস্থ থাকা অবস্থায় উৎসার আকুলতা। মেহরাব ঠোঁট এলিয়ে হাসলো। রুমে টিকতে না পেরে বাইকের চাবি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। অনেক দিন হলো বাইক নিয়ে বের হওয়া হয় না। আজ বন্ধুদের সাথে ইচ্ছে মতো আড্ডা দিবে। যেই ভাবা সেই কাজ।
অপর দিকে উৎসা! সে তো নিজের মতো দিব্যি রয়েছে। তানজিলার সাথে আড্ডা দিয়ে চলেছে। দুজন বান্ধবী হেসে কুটি কুটি হচ্ছে। পারছে না একে অপরের গাঁয়ে ঢোলে পড়তে। হাসি যেন দুজনের মুখে ধরছেই না।
—————
দিনের আলো ফুরিয়ে রাতের আঁধারে গ্রাস করেছে পৃথিবীকে। উৎসা উদাস মনে ব্যালকনিতে বসে আছে। ওর মনটাও বেশি ভালো না। ভেবেছিলো মেহরাবকে শাস্তি দিয়ে খিল খিল করে হাসবে কিন্তু এখন ভালো লাগছে না। মেহরাবের ভাবনা ওকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরছে। উৎসা মাথা থেকে সেসব ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো আর কই? বজ্জাত লোকটা ওর মাথা খারাপ করে দিচ্ছে। উৎসা কোনো উপায় না পেয়ে তানজিলাকে কল লাগলো। তানজিলা সন্ধ্যা নাগাদ চলে গেছে। কিছুক্ষন দুই বান্ধবী কথা বলল। প্ৰিয় বান্ধবীর সাথে কথা বলে উৎসার মন ফুরফুরে হয়ে গেল। এর মাঝে নিচ থেকে তিয়াস ডাক দিলো। সে সময় মেহরাবরা চল যাওয়ার পর পরই বেরিয়েছে ও। নাহয় উৎসা ওর সাথে খুনসুটি করেই এতক্ষন কাটিয়ে দিতো। উৎসা ভাইয়ের ডাক শুনে ঝটপট নিচে নামলো। তিয়াসের হাতে উৎসার অতি প্ৰিয় ফুচকা। আগে এ বাড়িতে থাকতে তিয়াস প্রায় সই সন্ধ্যা বেলা ওর প্ৰিয় খাবার গুলো নিয়ে আসতো। আজ অনেক দিন বাদে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে উৎসা আবেগ প্রবন হয়ে গেল। বোনকে আবেগ প্রবন হতে দেখে তিয়াস কথা ঘুরালো। খোঁচা দিয়ে বলল,
“কান্না কাটি করলে কিন্তু দিবো না। কোনো কাঁদুনে মেয়ের জন্য আমি আমার কষ্টের টাকা খরচ করিনি। তাই মোটেও কান্না করবি না”
উৎসা সেটা মানতে পারলো না। না চাইতেও অক্ষিকোল ঘেঁষে এক ফোঁটা অশ্রু বিন্দু গড়িয়ে পড়লো। তিয়াস সেটা দেখে গলা বাড়িয়ে তনয়া বেগম কে ডাকতে ডাকতে বলল,
“আম্মু একটা প্লেট নিয়ে এসো তো। একজনের জন্য ফুচকা এনেছিলাম সে কান্না করায় ব্যাস্ত। তাই আমার ফুচকা আমিই খাবো”
তনয়া বেগম প্লেট নিয়ে এলো। তিয়াস চেয়ার টেনে বসে প্যাকেট থেকে ফুচকা গুলো একে একে বের করলো। উৎসাকে দেখিয়ে দেখিয়ে একটা ফুচকায় টক পুরে দিচ্ছে। মুখে দিতে নিবে এমন সময় উৎসা চট করে এসে ফুচকাটা নিজের মুখে পুরে নিলো। অতঃপর বিশ্ব জয়ী হাসি দিলো। ভেংচি কেটে বলল,
“শখ কতো! আসছে আমার প্ৰিয় ফুচকা খেতে”
পাশের চেয়ার টেনে বসে পড়লে। আয়েস করে বসে বলল,
“আমার ফুচকা খেতে চাওয়ার অপরাধে তোমায় শাস্তি দেওয়া হলো”
তিয়াস ভ্রু কুঁচকে বলল,
“আমার আনা ফুচকা আমি খাবো এতে আবার আমিই শাস্তি? বাহ্ দারুন তো”
“হ্যাঁ। এখন শাস্তি পালন করো”
“তা শাস্তি টা কি পে*ত্নীদের মহারানী?”
উৎসা চোখ গরম করে তাকালো। তিয়াস ওর চাহনি পাত্তাও দিলো না।
“তোমার শাস্তি হলো সব গুলো ফুচকাই তুমি আমায় খাইয়ে দিবে”
তিয়াস আর বাক্য ব্যায় করলো না। কারণ ও ভালো করেই জানে উৎসা যেহেতু একবার বলেছে তো বলেছেই। এর নড়চড় হবে না। অনেক দিন পর বোনের আবদার পালন করতে পেরে তিয়াসের মনটা আনন্দে নেচে উঠলো। কিন্তু মুখে সেটা প্রকাশ করলো না। এক রাশ বিরক্তি ঝুলিয়ে রাখলো। এমন ভাব যেন উৎসাকে খাইয়ে দিতে ওর কতই না বিরক্ত লাগছে। কিন্তু মনে মনে খুশি হয়েছে। বোনটা তার বড্ড আদরের, অনেক ভালোবাসার। কিন্তু কখনই প্রকাশ করা হয়নি। ফুচকা খেতে গিয়ে উৎসার ঝাল লাগলো। ঝালে জিভ জ্বলে যাচ্ছে। তিয়াস ছুটে গিয়ে ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম এনে দিলো। বোন আসবে শুনে আগেই এনে রেখেছিলো। বাকিটা সময়ে দুই ভাই বোনের খুনসুটিতেই কেটে গেল। এই সময়ের মাঝে উৎসার একটা বারের জন্য মেহরাবের কথা মনে পড়লো না। দিব্যি ভুলে গেল মানুষটাকে।
————
রাত একটা বেজে দুই মিনিট। গভীর ঘুমে মগ্ন সবাই। বিছানায়র পাশের টেবিলে অবহেলায় পড়ে থাকা ফোনটা বার বার জানান দিচ্ছে কেউ একজন গভীর ভাবে উৎসা নামক রমণীকে স্মরণ করছে। উৎসাকে তার ডাকে সারা দিতেই হবে। সারা না পাওয়া অবধি অপাশের মানুষটা থেমে যাওয়ার পাত্র নয়। উৎসা তখন গভীর ঘুমে বিভোর। রাতের খাবার খেয়ে এসেই শুয়ে পরেছে। সারাদিন এদিক ওদিক ছুটোছুটি করায় ক্লান্তি জেঁকে ধরেছে। ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছে তাড়াতাড়িই। অপর পাশের মানুষটা দিশেহারা হয়ে গেছে। এক পর্যায়ে উৎসার ঘুম ছুটে গেল। পিট পিট করে চেয়ে হাতড়ে ফোনটা খুজলো। পেয়ে গেলে কোনোদিকে না তাকিয়ে কল রিসিভ করে কানে ধরলো। কানে ধরতেই অপর পাশ থেকে পুরুষালি অধৈর্য কণ্ঠ ভেসে এলো,
“ব্যালকনিতে এসো”
উৎসার ঘুম এক লহমায় ছুটে গেল। চট করে তাকালো ফোনের স্ক্রিনে। জ্বল জ্বল করছে “My Loving Husband”নামটা। ঘড়ির দিকে তাকালো একবার। একটা বেজে দশ মিনিট। উৎসা তড়িঘড়ি ব্যালকনিতে গেল। চোখ পড়লো উৎসাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় ফুলের তোড়া হাতে দাঁড়িয়ে থাকা মেহরাবের দিকে। পাশেই গোটা গোটা অক্ষরে “Sorry”লেখা। উৎসা এতক্ষনে মেহরাবের এখানে আসার কারণ খুঁজে পেল। ফোনটা খট করে কেটে ছুটলো নিচে। গেট খুলে এক দৌড়ে মেহরাবের কাছে এসে থামলো। মেহরাব চট করে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। মাথা নিচু করে বলল,
“সরি মিসেস মেহরাব। আপনাকে পে*ত্নী বলা আমার অনেক বড় অপরাধ হয়েছে। এই অধমকে এবারের মতো ক্ষমা করে দিন”
উৎসা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। মেহরাব পুনরায় বলল,
“আপনি তো মেহরাব মির্জার মন মহলের একমাত্র উত্তরাধিকারী। তার মহারানী। আর সেই রাজ্যের সামান্য প্রজা আমি। এবারের মতো ক্ষমা করে দিন এই প্রজাকে”
উৎসা মেহরাবের কাণ্ডে কি রিয়েকশন দিবে সেটাই ভুলে গেল। এক মুহূর্তের জন্যই মনে হলো প্রেমিকের সাথে ঝগড়া হওয়ায় প্রেমিক পুরুষটি তার প্রেয়সীর মান ভাঙাতে এসেছে মাঝ রাত। উন্মাদ প্রেমিক প্রেয়সীর বিহনে দগ্ধ হয়ে প্রণয়ের দহনে টিকতে না পেরে ছুটে এসেছে। কিন্তু এমন কিছুই না। সামনে হাঁটু মুড়ে বসে থাকা যুবকটি তার স্বামী। তাও আবার অনাকাক্ষিত মানুষ। তবুও তার আচরণে বোঝার উপায় নেই। মেহরাবের পা*গলামো দেখলে যে কেউ চোখ বুজে বলে দিবে উন্মাদ প্রেমিক প্রেমিকার মান ভাঙাতে এসেছে। উৎসা নিজেকে ধাতস্ত করে বলল,
“মাফ করতে পারি তবে এক শর্তে”
“কি সেই শর্ত তাড়াতাড়ি বলুন”
“এরপর কখনো আমায় রাগাতে পারবেন না”
“এটা তো মানতে পারবো না মহারানী”
উৎসা ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো,
“কেন?”
“আপনাকে না রাগালে আমার যে শান্তি লাগে না। আপনি যখন রেগে মেগে রক্তিম মুখে তাকান বিশ্বাস করেন আপনার সেই দৃষ্টিতে আমি আমার ধ্বংস দেখতে পাই”
উৎসা বিপরীতে জবাব দেওয়ার কিছুই পেল না। মেহরাব আবার বলল,
“উঠবো? এভাবে বসে থাকতে পা ব্যথা করছে যে”
উৎসা ভেংচি কেটে বলল,
“নায়ক নায়ক ভাব ধরতে গেলে এমনই হয়। উঠুন”
মেহরাব উঠে ফুলের গোছা উৎসার দিকে বাড়িয়ে দিলো। উৎসা খুশি হয়ে ফুলগুলো নিলো। অতঃপর ফুলের সুঘ্রান নিতে নিতে বলল,
“এতো সুন্দর ভুল উপহার দেওয়ার জন্য আপনাকে মাফ করাই যায়”
মেহরাবের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। উৎসার থেকে ইতিবাচক উত্তর পেয়ে কিছুটা এগিয়ে আসলো। গায়ে গাঁ ঘেঁষে দাঁড়ালো। কিছুটা ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল,
“এভাবে সামনে এসো না বউ, নিজেকে কন্ট্রোল করা টাফ হয়ে যায়। ইউ আর লুকিং সো হট”
মেহরাবের এরূপ মন্তব্যে উৎসা একবার নিজের দিকে তাকালো। পরনে তিয়াসের টি-শার্ট আর টাউজার। গাঁয়ে ওড়নার বালাই নেই। উৎসার ইচ্ছে করলো লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে। তাড়াহুড়োয় ওড়না আনার কথা বেমালুম ভুলে বসেছে। উৎসা জোরেই বলল,
“অসভ্য, লুইচ্চা বেডা”
মেহরাব ঠোঁট কামড়ে হাসলো। উৎসা এক ছুটে বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেল।
————
পড়ন্ত বিকেলে সূর্য হেলে পড়ছে পশ্চিম দিকে। উৎসা তানজিলা দুজন এলাকায় হাঁটতে বের হয়েছে। কতগুলো দিন হয়ে গেল পরিচিত অলি গলিতে ঘুরে বেড়ানো হয় না। আগে প্রায় দিনই উৎসা আর তানজিলা হাঁটতে বের হতো। পুরো এলাকায় চক্কর দিয়ে আসতো। উৎসা বক করে চলেছে তানজিলা মন দিয়ে শুনছে। হুট্ করেই দুজনের সামনে এক পুরুষ অবয়ব দেখা দিলো। উৎসা হাঁটতে গিয়ে থেমে গেল। ওপরে তাকিয়ে কিছুক্ষনের জন্য থমকে গেল। সামনের মানুষটা কে এক মুহূর্তের জন্য আশা করেনি। মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে এলো,
“আপনি!”
#চলবে?
#অপ্রিয়_তুমি
#পর্ব১৮
#আফিয়া_আফরোজ_আহি
“মেহরাব একটা সাইকো উৎসা। ও সাধারণ মানুষদের মতো না। ওর মাঝে সাইকো আচরণ আছে। ও কাউকে খু*ন করতেও দ্বিধা বোধ করে না। ও একটা খু*নি। আমার কথা বিশ্বাস করে তুমি”
উৎসা অবাকিত নয়নে চেয়ে আছে সামনে দাঁড়ানো রিয়াদের পানে। রিয়াদের কথার মানে ও বুঝতেই পারছে না। কি বলছে ও এসব? লোকটার মাথা ঠিক আছে তো! নাকি ঘোরের মাঝে উল্টোপাল্টা বকে যাচ্ছে? রিয়াদের কথা বার্তা সবই উৎসার মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।
উৎসা তানজিলা দুই বান্ধবী বেরিয়েছে একটু ঘুরাঘুরি করতে। আগে প্রায় দিনই দুই বান্ধবী পুরো এলাকায় একটা চক্কর কাটতো। সামান্য ঘোরাঘুরি সাথে গল্প করায় দুজনের মন মেজাজ ফুরফুরে হয়ে যেত। অনেক দিন বাদে বাবার বাড়ি এসে উৎসা সেই সুযোগটা মিস করতে চায় নি। সেই জন্য দুপুরের খাবার খেয়ে ঝট পট ফোন লাগিয়েছে তানজিলা কে। ফোন করে ডেকে নিয়েছে প্রাণ প্ৰিয় বান্ধবীকে। তানজিলাও বেস্ট ফ্রেন্ডের এক ডাকে চলে এসেছে। দুজন হাটছিলো আর কথা বলছিলো। উৎসা কলেজ থেকে তানজিলার সাথে বাড়ি চলে এসেছে। মেহরাবকে আগেই বলে রেখেছে ওদের বাড়ি যাবে। রাতে অফিস শেষে মেহরাব এসে ওকে নিয়ে যাবে। বউ পা*গল লোক বউকে একদিনও কাছ ছাড়া করতে চায় না। পারে না উৎসা কে পকেটে করে নিজের সাথে ঘোরে। মেহরাবের এমন পা*গলামো দেখে রিনি টিকটকিরি মেরে একদিন বলেই ফেলেছিলো,
“দেবর সাহেব বউকে লকেটে পুরে সাথে নিয়ে ঘোরো তাহলেই তোমার বউ পালাই পালাই করতে পারবে না”
মেহরাব বুকে হাত দিয়ে উত্তর করলো,
“খোঁচা দিয়েন না ভাবি। কলিজায় লাগে। পারলে তো কবেই বউকে লকেট পুরে গলায় ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। কিন্তু সেটা তো সম্ভব না”
বেচারার কথা শুনে মনে হচ্ছিলো ওর কতই না কষ্ট! উৎসা দুই ভাবি দেবর এর কথা শুনে লজ্জায় লাল নীল হচ্ছিলো। যেমন ভাবি তেমন তার দেবর। দুটোই উৎসাকে লজ্জা দিতেই এক্সপার্ট।
————
উৎসা সেদিনের কাহিনী মনে করে একাই হাসছিলো। পাশ থেকে তানজিলার ধাক্কায় স্মৃতি চারণ থেকে বেরিয়ে এলো। দুই বান্ধবী মগ্ন হলো গল্প করায়। কথা বলতে বলতে কখন যে সামনে একজন এসে দাঁড়িয়েছে সে খেয়াল নেই দুজনের এক জনেরও। সামনে কারো অস্তিত্ব টের পেতেই উৎসা দাঁড়িয়ে পড়লো। তানজিলার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনে দাঁড়ানো মানুষটার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। এই মানুষটাকে এই মুহূর্তে উৎসা একটুও আশা করেনি। তানজিলা ভ্রু কুঁচকে ফেলল। কে এই লোক? ওদের রাস্তাই বা আটকেছে কেন? সামনের মানুষটা হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো,
“কেমন আছো উৎসা?”
উৎসা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বলল,
“ভালো আছি”
রিয়াদ প্রতিউত্তর করলো,
“আমায় জিজ্ঞেস করবে না? জানতে চাইবে না আমি কেমন আছি?”
“এখানে জিজ্ঞেস করার কি আছে? ভালো থাকার জন্যই তো সেদিন আমায় বিয়ে করতে আসেননি। আমার বাবার অপমান করেছিলেন। ভালো থাকার জন্যই তো এতো কিছু। তাহলে নিশ্চই ভালোই আছেন”
“আমি সেদিন ইচ্ছে করে বিয়ে করতে আসিনি এমনটা না”
উৎসার মেজাজ খারাপ হলো। তেতে উঠে বলল,
“তাহলে কি সেদিন কেউ আপনাকে ধরে বেঁধে রেখেছিলো? আপনাকে তো বিয়ের জন্য কেউ জোর করেনি। আর না আপনি বাচ্চা। আপনাকে জোর করবে আর আপনি রাজি হয়ে যাবেন। আপনার আমাকে পছন্দ না, আমাকে বিয়ে করতে সমস্যা সেটা সেদিন সবার সামনে বললেই পারতেন। তাহলে বিয়ের দিন আমার বাবার মান সম্মান আত্মীয়-স্বজনদের সামনে খোয়া যেত না”
“আমায় কিডন্যাপ করা হয়েছিল সেদিন”
উৎসা প্রতি উত্তর করতে গিয়েও থেমে গেল। কি বললো রিয়াদ? জিজ্ঞেস করলো,
“কি বললেন?”
“আমায় কিডন্যাপ করা হয়েছিল যেন আমি তোমায় বিয়ে করতে যেতে না পারি”
উৎসা ঝাঁঝালো গলায় বলল,
“এখন সিনেমার কাহিনী শুরু করেছেন আপনি? আপনার কি মনে হয়? আমি আপনার এসব কথা বিশ্বাস করবো?”
“বিশ্বাস করো আমি যা বলছি সেটাই সত্যি। তুমি জানো কে আমায় কিডন্যাপ করিয়েছিলো?”
উৎসা বিরক্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“কে?”
এরপর রিয়াদ যা বলল শুনে উৎসা হতোভম্ব হয়ে গেল। উৎসার মনে হলো বজ্রপাত হলো ওর কানের পাশটায়।
“তোমার হাজবেন্ড মেহরাব”
উৎসা চমকে উঠলো। ওর পাশে থাকা তানজিলা উৎসার অবস্থা বুঝতে পারলো। উৎসাকে এক হাতে আগলে ধরে জিজ্ঞেস করলো,
“কি বলছেন এসব? আপনার মাথা ঠিক আছে? মেহরাব ভাইয়া কেন আপনাকে কিডন্যাপ করতে যাবে? আর আপনাকে কিডন্যাপ করে ভাইয়ারই বা লাভ কি?”
রিয়াদ উৎসার অবস্থা দেখে বলল,
“আমরা পাশের পার্কটায় বসি? উৎসার মনে হয় কষ্ট হচ্ছে। শত হোক ওর হাজবেন্ড তো! খারাপ তো লাগবেই”
উৎসা, তানজিলা, রিয়াদ পাশের পার্কটায় বসলো। উৎসা বলল,
“আপনি যেগুলো বলছেন ভেবে চিন্তে বলছেন তো? আপনার কথা যদি একটাও ভুল হয় আমি আপনাকে জেলে দিবো বলে দিলাম”
রিয়াদ উৎসাকে আস্বস্ত করে বলল,
“আমি যেগুলো বলছি সব সত্যি বলছি”
তানজিলা উৎসুক হয়ে বলল,
“ঘটনা খুলে বলুন তো”
রিয়াদ বলা শুরু করলো,
“উৎসার সাথে আমার আকদের ডেট ঠিক হওয়ার দিন রাতে আমার কাছে একটা হু*মকি বার্তা এলো। বার্তাটা এমন, আমি যেন উৎসাকে বিয়ে করতে অমত পোষণ করি। আর যদি সেটা না করি তাহলে আমার নাকি ভালো হবে না। আমি সেটা পাত্তা দেই নি। ভেবেছি হয়তো আমার বন্ধুদের মাঝে কেউ মজা করছে। কারণ ওদের আমি বলেছিলাম বাবা তার বন্ধুর মেয়ের সাথে আমার আকদ ঠিক করেছে। সেই জন্য মাথা ঘামাই নি। তার দুদিন পর আবার সেই নাম্বার থেকে ম্যাসেজ,
“মিস্টার রিয়াদ ভালোয় ভালোয় বলছি বিয়েটা ভেঙ্গে দিন। নাহলে খারাপ হবে বলে দিলাম। আপনার বাবা মা সন্তান হারা হলে আমার কিছু করার নেই। পরে বলতে পারবেন না আমি আপনাকে সতর্ক করিনি”
সত্যি বলতে ম্যাসেজটা পেয়ে আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। ভয় লাগছিলো। আমি সাথে সাথে ঐ নাম্বারে কল দেই। নাম্বার ততক্ষনে বন্ধ করে ফেলেছে। আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। মাথা কাজ করছিলো না আমার। কাউকে বলতেও পারছিলাম না। তবুও নিজেকে শান্ত রেখে আকদের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। বিয়ের দিন সকালে জরুরি একটা কাজে আমায় বাহিরে যেতে হয়। ফিরে আসার সময় মাঝ রাস্তা থেকে কতগুলো ছেলে আমায় তুলে নিয়ে যায়। নাকে ক্লোরোফর্ম যুক্ত রুমাল চেপে অজ্ঞান করে ফেলে আমায়। জ্ঞান ফিরে নিজেকে পেলাম চেয়ালে বাঁধা অবস্থায়। কেউ আমার মুখে পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফিরিয়েছিলো। আমার সামনে হাতে হকি স্টিক নিয়ে বসে ছিলো মেহরাব। জায়গাটা কোনো পুরোনো বাড়ি ছিলো। মেহরাব আমার কাছে এগিয়ে এসে বলল,
“তোকে বিয়েটা ভেঙ্গে দিতে বলেছিলাম শুনিস নি কেন? কথা কানে যায় না?”
“আপনি কে? আমায় এখানে বেঁধে রেখেছেন কেন? একটু পর আমার আকদ”
“আমি তোর জম। আর আকদের কথা ভুলে যা। উৎসা শুধু আমার, ওর দিকে এতদিন যেই ছেলে গুলো চোখ তুলে তাকিয়েছে তাদের অবস্থা খারাপ করে দিয়েছি। আর তু্ই নাচতে নাচতে বিয়ে করতে যাবি? তোর সাহস তো কম না? উৎসা আমার, শুধু মাত্র আমার। আমি ছাড়া অন্য কেউ ওকে বিয়ে করতে এলে আমি তাকে জীবিত কবর দিয়ে দিবো”
মেহরাবের হুমকি শুনে ভয়ে পেয়ে গিয়েছিলাম আমি। মেহরাব আবার বলতে শুরু করলো,
“তোকে সাবধান করেছিলাম কানে লাগে নি তো? এবার তাহলে ম*র”
কথাটা বলে মেহরাব ওর হাতে থাকা হকি স্টিক দিয়ে মা*রতে শুরু করে আমায়। মা*রতে মা*রতে থেমে গিয়ে বলল,
“তোর খুব শখ না উৎসাকে বিয়ের করার? সেইম সময়ে, সেইম জায়গায় উৎসার বিয়ের আমার সাথে বিয়ে হবে। তোকে সেটা লাইভ দেখাবো। ভালো হবে না বল?”
মেহরাব কতক্ষন মেরে হকি স্টিক টা ফেলে চলে যায়। ওর চেলা পেলারা আমায় চোখে চোখে রেখেছিলো। ঠিকই কিছুক্ষন বাদে ভিডিও কল দিয়ে তোমাদের বিয়ে দেখায়। সেদিন শুধু তোমার বাবার না আমার বাবার ও মান সম্মানহানী হয়েছে। অপমানিত শুধু তোমার পরিবার হয়নি, আমার পরিবার ও হয়েছে।
মেহরাব চেয়েছিলো আমায় ধীরে ধীরে মেরে ফেলবে। টানা দুই দিন আমায় সেখানে আটকে রাখে। তিন দিনের মাথায় আমি সেখান থেকে অনেক কষ্টে পালিয়ে আসি। আমার কথা বিশ্বাস করো উৎসা। আমি একটাও মিথ্যা কথা বলছি না। মেহরাব স্বাভাবিক মানুষ না। ওর মধ্যে সাইকো সত্ত্বা আছে। মেহরাব রেগে গেলে কাউকে খু*ন করতে পিছ পা হয় না। ও একটা খু*নি। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি ও ইমন নামের একটা ছেলেকে মা*রতে মা*রতে আধ ম*রা বানিয়ে ফেলেছিলো। ছেলেটা হসপিটালে থেকে দুই দিনের মাথায় মা*রা যায়”
রিয়াদ এক দমে কথা বলে থামলো। উৎসা ‘থ’ মেরে বসে আছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে কাঠের পুতুল হয়ে গেছে।
ইমন নামটা শুনতেই উৎসার মাথায় পুরোনো স্মৃতি নাড়া দিলো। উৎসা তখন ক্লাস টেইনে পড়ে মেবি। ইমন নামের ছেলেটা ওদের পাশের এলাকায় থাকতো। বয়স বিশ বাইশ হবে। বখাটে ছেলে ছিলো। মাঝে মাঝে স্কুলের সামনে দল বল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো। আবার মাঝে মাঝে উৎসাদের গলির মোড়ে। ছেলেটার চাহনি ছিলো বড্ড জঘন্য। তেমনই কথা বার্তার ধরণ। গলির মোড়ে, স্কুলের সামনে দিয়ে যাওয়া আসা করা মেয়েদের বাজে বাজে কথা বলতো, উত্ত্যক্ত করতো। কোনো মেয়েই ওদের জ্বালায় রাস্তায় চলাচল করতে পারতো না। একদিন উৎসা আর তানজিলা গলির মোড় দিয়ে আসার সময় ইমন আর ওর দল বলদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। ওদের দেখে উৎসা ভয়ে সিটিয়ে গেল। অন্য পাশ দিয়ে চলে আসতে নিলে ইমন সহ ওর চেলা পেলারা ওদের ও বাজে বাজে কথা বলে। কথা গুলো শুনে কিশোরী উৎসা ভয়ে রীতিমতো হেঁচকি তুলে কান্না করে ফেলেছিলো। তার সাথে বাজে দৃষ্টি তো আছেই। কান্না করতে করতে এগিয়ে এলেই বাড়ির সামনে পড়লো তিয়াস, মেহরাব আর ওদের দলবল। ওরা কি নিয়ে যেন কথা বলছিলো। তিয়াস কথা বলার মাঝে বোনকে কান্না করতে করতে এগিয়ে আসতে দেখে এগিয়ে যায় বোনের কাছে। উৎসা ভাইকে সামনে পেয়ে কোনোদিকে না তাকিয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরে। কান্না করতে করতে বেচারির নাজেহাল অবস্থা। তিয়াস বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো। স্বাভাবিক করার জন্য এটা সেটা বলছিলো। তবুও উৎসার কান্না থামার নাম নেই। তিয়াস এতবার জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে? কেউ কিছু বলেছে কিনা উৎসা একটাও উত্তর করেনি। মেহরাব এগিয়ে এসে তানজিলা কে জিজ্ঞেস করতেই ও গড় গড় করে সব বলে দিয়েছিলো। কথা গুলো শুনে মেহরাব মুষ্ঠি বদ্ধ করে নিলো, মুখ কাঠিন্য ভাব ধারণ করেছে। চোখ দিয়ে মনে হয় আগুন বের হয়ে আসবে। মেহরাব ইশারায় তিয়াসকে কিছু বলল। তিয়াস ওর ইশারা বুঝে বোনের চোখ মুছিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলল,
“তু্ই বাড়ি যা বনু। বাকিটা আমি সামলে নিলো। আর কান্না করে না। তু্ই আমার ভালো বনু না?”
তানজিলাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“তানজিলা তুমি ওকে নিয়ে যাও”
উৎসা যাওয়ার আগে কি মনে করে একবার মেহরাবরের দিকে তাকিয়েছিলো। মেহরাবের মুখে কাঠিন্যতা থাকলেও চোখ ছিলো একদম শান্ত। এ যেন ঝড় আসার আগের পূর্বাভাস। মেহরাবের চাহনি উৎসার অন্তর আত্মা পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিয়েছিলো। উৎসা মেহরাবের সেই চাহনি কোনোদিনও ভুলতে পারবে না। সেদিনের পর ইমন আর ওর দলকে আর কোথাও দেখা যায়নি। হুট্ করে একদিনের মাঝে সবাই কেমন উধাও হয়ে গিয়েছিলো। উৎসা অবাক হয়েছিলো সেই ঘটনায়। ভেবেছে তিয়াস হয়তো কিছু বলেছে ওদের।
উৎসা ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো। ফট করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“আমি ওবাড়ি যাচ্ছি। তু্ই আম্মুকে বলে দিস”
গড় গড় করে কথা গুলো বলেই সামনের দিকে হাঁটা দিলো। তানজিলা ওর পিছে পিছন গেল।
“দেখ উৎসা মাথা ঠান্ডা কর। ওই লোকটার সব কথা বিশ্বাস করছিস কেন?”
উৎসার কাট কাট জবাব,
“ইমনদের ঘটনা তো তু্ই জানিস তারপরও কিভাবে বলছিস? সেদিন দেখেছিলি রনি কে উনি কিভাবে মে*রেছিলো? উনি সত্যিই একটা সাইকো”
তানজিলা বার বার ওকে বুঝিয়ে চলেছে। উৎসা সেসব কানেও নিচ্ছে না।
“দেখ উৎসা মাথা ঠান্ডা করে ভাব। দরকার পড়লে ভাইয়ার সাথে ঠান্ডা মাথায় কথা বল। তাও কারো কথা কানে নিস্ না। কারো কথা শুনে সুন্দর সম্পর্কটা শেষ করিস না। এখন তু্ই বাড়ি চল। ভাইয়া রাতে এসে তোকে নিয়ে যাবে”
“মেজাজ খারাপ করিস না তানজিলা। তোকে যেটা বলেছি সেটা কর”
উৎসা পার্ক থেকে বেরিয়ে সোজা মেহরাবদের বাড়ীর দিকে রওনা হলো। ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হতাশার নিঃশ্বাস ফেলল তানজিলা। এখন কি হবে আল্লাহই ভালো জানে। উৎসাকে ও ভালো করেই জানে। রেগে গেলে উৎসা ঠান্ডা মাথায় কথা বলার মেয়েই না। কি করবে, কি হবে তানজিলার জানা নেই!
পার্কের বেঞ্চে আয়েস করে বসলো রিয়াদ। ঠোঁটের কোণে ক্রুর হাসি। হাসি আরো কিছুটা চওড়া করে বলে উঠলো,
“মেহরাব তু্ই আমার কাছ থেকে আমার শিকার কেড়ে নিয়েছিস। তু্ই কি ভেবেছিস আমি তোকে শান্তিতে থাকতে দিবো? উহু, আমি এর বদলা নিয়েই ছাড়বো। আগুন ধরিয়ে দিয়েছি এখন এই আগুন দ্বিগুন হয়ে তোর ওপর পড়বে। তু্ই ধ্বংস হবি খুবই শীঘ্রই। তোকে আমি শান্তিতে সংসার করতে দিবো না”
#চলবে?