#অপ্রিয়_তুমি
#পর্ব২৩
#আফিয়া_আফরোজ_আহি
কেটে গেছে বেশ কয়টা দিন। এর মাঝে উৎসার টেস্ট পরীক্ষা শেষ হয়েছে। সামনে এইচ এস সি পরীক্ষা। দিন গুলো যেন চোখের পলকে কেটে গেছে। বিগত দিন গুলোতে উৎসা আর মেহরাবের সম্পর্কের অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। উৎসা এখন অনেকটাই মেহরাবকে বোঝার চেষ্টা করে। ভালো না বাসুক, মানুষটাকে বুঝতে তো কোনো ক্ষতি নেই। আর না আছে তার আবদার, ভালোবাসা গুলো মেনে নিতে! এইযে মেহরাব ওকে বাবার বাড়ি যেয়ে থাকতে দেয় না এটা ভেবে এখন আর উৎসার মন খারাপ হয় না। ও উপলব্ধি করে মানুষটা ওকে বড্ড বেশি ভালোবাসে বলে নিজের থেকে দূরে থাকতে দেয় না। মেহরাব পারে না উৎসাকে বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখে। উৎসা মাঝে মাঝে মেহরাবের পা*গলামো গুলোর কথা মনে করে হাসে। মানুষটা ওকে কতই না ভালোবাসে। উৎসার নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হয়। ভাগ্যবতী না হলে এতো ভালোবাসা কোথায় পেত ও? উৎসা এখন অপলব্ধি করে তিয়াসের বলা সেই কথাটা,
“মেহরাবের মতো ভালো তোকে কেউ বাসতে পারবে না”
তিয়াস সেদিন উৎসাকে এই কথাটা বলেছিলো। কথাটা যে সত্যি উৎসা সেটা এখন হাড়ে হাড়ে টের পায়। এইযে অফিস থেকে এসেই লোকটার ওকে চাই। চাই মানে, চাই। তার সাথে কোনো বাহানা চলবে না। উৎসা যেখানেই থাকুক সেখান থেকেই টেনে টুনে নিয়ে আসবে। মাঝে মাঝে লজ্জায় পড়তে হয় বেচারিকে। সারাদিন কাজ শেষ করে বাসায় এসে ওর মুখ না দেখলে নাকি মেহরাবের ক্লান্তি কাটে না। সারাদিনের ক্লান্তি দূর করার জন্যই মানুষটার ওকে চাই। তাও আবার এমনি সেমনি না। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখবে। মেহরাব পারেনা উৎসাকে নিজের বুকে পিষে ফেলে। প্রথম প্রথম উৎসা বিরক্ত হলেও এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছে। মানুষটা যে ওকে ভালোবেসেই এমন করে এটা বুঝে গেছে উৎসা।
সকালে ঘুম থেকে উঠেও সাহেবের ওকে চাই। অফিসে যাবে সে, রেডি করে দিতে হবে উৎসার। কলেজ না থাকায় উৎসার প্যারা নেই। মেহরাবকে অফিসে পাঠিয়ে নিজে পড়তে বসে যায়। দুজনের মাঝে এখন সুন্দর একটা সম্পর্ক হয়েছে। উৎসা জানে এতো সহজেই ও মেহরাব কে ভালোবাসতে পারবে না তবে মানুষটাকে বোঝার চেষ্টা করে। মেহরাব এতেই খুশি।
পড়ন্ত বিকেলে উৎসা আর রিনি বসে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। পড়তে পড়তে বিরক্তি এসে গেছে। এক ঘেঁয়ে লাগছে। সারাদিন এতো পড়া যায়? আর মেহরাব ও হয়েছে বজ্জাত। এখন ওর মাঝে জামাই সত্ত্বা কম, টিচার সত্ত্বা বেশি দেখা যায়। সকালে এক গাদা পড়া দিয়ে যাবে, রাত হলে গুনে গুনে পড়া নিবে। মেহরাবের পড়াশোনা নামক অ*ত্যা*চারে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে উৎসা। হাপিয়ে যাচ্ছে পড়তে পড়তে। মেহরাবের সোজা কথা পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে হবে। নাহলে খবর আছে। এক বিকেল পড়ে বিরক্তি এসে গেছে উৎসার। তাই তো সময় কাটাতে টুস করে চলে এসেছে রিনির কাছে। দুজনের হাতে চায়ের মগ। রিনি চা টা বেশ ভালোই বানায়। উৎসা আগে চা তেমন পছন্দ না করলেও রিনির সুবাদে ভালোই অভ্যাস হয়েছে। দুজন ছাদে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে। এমন সময় নিচ থেকে ভেসে এলো মেহরাবের কণ্ঠ। রিনি উৎসার কাঁধে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলল,
“তাড়াতাড়ি যা, তোর সাহেব এসে গেছে। তার তো আবার বাড়ি ঢুকে বউকে না পেলে হয়না”
উৎসা ফুরফুরে মেজাজে বলল,
“চা টা শেষ করে যাই”
“চা শেষ করতে করতে দেখবি বাড়ি মাথায় তুলবে”
“তুললে তুলুক। তাতে আমার কি?”
রিনির কথাই ফললো। মিনিটের মাঝে শোনা গেল মেহরাবের হাঁক ডাক। লোকটার হাক ডাকে বাড়ির ছাদে বসা কাক ও উড়াল দিয়েছে। উৎসার মেজাজ খারাপ হলো। এই লোকের জন্য কি ও শান্তি একটু চাও খেতে পারবে না! চায়ের কাপ রেখে রিনি কে বলল,
“তুমি থাকো, আমি যাচ্ছি। নাহয় বাড়ি আর বাড়ি থাকবে না, মাছের বাজার বানিয়ে ফেলবে তোমার দেবর”
উৎসার কথা শুনে হাসলো রিনি। দুটোর খুনসুটি ভালোই লাগে ওর কাছে। মাঝে মাঝের মনে হয় ফিল্মের কাহিনী বাস্তবে দেখছে। ওদের কাণ্ড দেখে হাসে রিনি।
উৎসা রুমে ঢুকে দেখলো সোফায় আয়েসি ভঙ্গিতে বসে আছে মেহরাব। কোমরে হাত গুঁজে বলল,
“কি সমস্যা? ষাঁড়ের মতো চেচাচ্ছেন কেন? আপনার জন্য কি আমি একটু ছাদে যেয়েও শান্তি পাবো না? সারাদিন আপনার পিছু পিছু ঘুরবো?”
মেহরাব উঠে এলো। ঝট পট পায়ে কাছে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো উৎসাকে। উৎসা এতে বিন্দু মাত্র অবাক কিংবা বিচলিত হলো না। এটা নিত্য দিনের ঘটনা। ও এখন এসবে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। মেহরাব ক্লান্ত কণ্ঠে বলল,
“জানোই তো তোমার পা*গল বর টা রুমে এসে তোমায় না পেয়ে বাড়ি মাথায় করবে তাহলে যাও কেন? রুমে বসে অপেক্ষা করতে পারো না?”
উৎসা তেতে উঠে বলল,
“ভাইয়া আর বাবাও তো অফিস করে এসে তাদের কখনো এমন করতে দেখেছেন? আপনারই যতো ঢং”
“আমার বাচ্চা বউয়ের সাথে ওদের বুড়ো বউয়ের তুলনা দিচ্ছ কেন? আর আমি হলাম প্রেমিক মানুষ সারাদিন পর বাড়ি এসে বউকে জড়িয়ে না ধরলে আমার হয়না। বউ হলো এনার্জি ড্রিংকস এর মতো, বউকে জড়িয়ে ধরলে সারাদিনের শেষ হওয়া এনার্জি এক নিমিষেই ফিলাপ হয়ে যায়। এখন কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ থাকো তো! আর আমাকে আমার এনার্জি লোড করতে দেও”
উৎসা মাঝে মাঝে মেহরাবের কথায় ব্যাক্কেল বনে যায় এই যেমনটা এখন হলো। ও কি এনার্জি ড্রিংকস? যে মেহরাব ওকে জড়িয়ে ধরে এনার্জি লোড করবে? লোকটা ইদানিং যেন একটু বেশিই আবোল তাবোল বকে। মেহরাব মিনিট দুই একই ভঙ্গিতে জড়িয়ে রাখলো। দুই মিনিটের মাথায় উৎসাকে ছেড়ে ওর কপালে ওষ্ঠ ছোঁয়ালো। প্রশান্তির হাসি হেসে বলল,
“এখন ঠিক আছে ১০০% এনার্জি ডান”
উৎসা আওড়ালো,
“বজ্জাত লোক”
মেহরাব উৎসাকে ছেড়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল। উৎসা গেল ওর খাবারের ব্যবস্থা করতে।
————
উৎসা ভীতু চোখে তাকিয়ে আছে মেহরাবের দিকে। মেহরাব ওকে পড়া জিজ্ঞেস করছে। উৎসা আজকে কিছুই পড়েনি। পড়া গুলো কেমন মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছিলো। ওর কি দোষ? মেহরাব গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“কি হলো চুপ করে আছো কেন? যেটা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দেও”
এই একটা জায়গায় মেহরাব গম্ভীর আচরণ করে। পড়ায় ফাঁকিবাজি করা মেহরাবের বিন্দু মাত্র সহ্য করে না। সে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ছিলো বলে কি উৎসা কেও তেমনটা হতে হবে নাকি? উৎসা মিন মিনে কণ্ঠে বলল,
“পাড়ি না”
“কেন?”
“পড়া হয়নি”
মেহরাব গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“এভাবে করলে কি করে হবে উৎসা? দুমাস পড়ে তোমার পরীক্ষা সেই খেয়াল আছে? নাকি সব ভুলে খেয়েছো?”
“শুধু আজকেই তো পড়িনি। আর এমন হবে না”
“আজকে পড়িনি, কালকে পড়িনি করলে তো পড়া হবে না। পরীক্ষায় কি লিখবে? আন্ডা?”
উৎসার মেজাজ ছুটে গেল। একদিনই তো পড়ে নি তাই বলে এতো কথা শোনাতে হবে? একটু ভালো করেও তো বলা যায় নাকি? উৎসা কর্কশ কণ্ঠে বলল,
“একদিন পড়িনি বলে এতো কথা শোনাচ্ছেন? আর প্রতিদিন যে পড়া কিমপ্লিট করি তখন? খালি বকা বকি করার ধান্দা। ধন্দাবাজ লোক! আপনি থাকুন আপনার বই নিয়ে আমি গেলাম। এরপর একদম আমার কাছে আসবেন না বলে দিলাম”
উৎসা গট গট পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। একটা দিনই তো পড়েনি। তাতে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়েছে? প্রতিদিন যে পড়ে সেটা মেহরাবের চোখেই পড়েও না? আজকে একদিন পড়েনি বলে এতগুলো কথা শুনাতে হবে? উৎসা সোজা চলে এলো ছাদে। এতক্ষনের বিগড়ে যাওয়ার মেজাজ যেন এক নিমিষেই ফুরফুরা হয়ে গেল। ঠান্ডা মৃদু মন্দ দক্ষিনা বাতাস বইছে। আকাশে এক ফালি চাঁদ মেঘেদের আড়াল হতে উঁকি দিচ্ছে। পেঁজো মেঘ গুলো বেশ লাগছে দেখছে। মনে হচ্ছে চাঁদ আর মেঘের লুকোচুরি খেলা হচ্ছে। কি সুন্দর করে ভেসে ভেসে যাচ্ছে মেঘ গুলো। উৎসার ইচ্ছে হলো ও যদি ভেসে বেড়াতে পারতো। তাহলে কতই না ভালো হতো। কিন্তু সেটা তো সম্ভব না। উৎসা রেলিংয়ের সাথে ঝুঁকে দাঁড়ালো চোখ বন্ধ করে প্রকৃতি অনুভবে মত্ত হলো।
চোখ বুজে হঠাত অনুভব করলো এক জোড়া হাত একটু একটু করে ওর কোমর আঁকড়ে ধরছে। হাতের মালিক কে চিনতে উৎসার একটুও সময় লাগলো না। এতদিনে এই স্পর্শ উৎসার মুখস্ত হয়ে গেছে। উৎসা ঝাঁঝালো গলায় বলল,
“এখন এসেছেন কেন? আপনাকে না বলেছি আমার ধারে কাছে ঘেসবেন না? তারপরও কেন এসেছেন? আপনি আপনার বই নিয়েই থাকুন, আমার কাছে কি? ছাড়ুন, ছাড়ুন আমায়”
মেহরাব ছাড়ার বদলে হাতের বাঁধন আরো গাঢ় করলো। আদুরে গলায় বলল,
“রাগ করে না বউ। আমি তো তোমার ভালোর জন্যই বলছিলাম। ওভাবে বকাবকি করার জন্য সরি। থাক একদিন না পড়লে কিছু হবে না। আজ বরং দুজন মিলে চন্দ্র বিলাস করি!”
উৎসার মাথায় দুস্টু বুদ্ধি নাড়া দিলো। মেহরাব কে একটু নাকানি চুবানী খাওয়ানো যাক। উৎসা টেনে টুনে মেহরাবের হাত সরাতে সরাতে বলল,
“না! এখন আমি পড়তে বসবো। একদিন না পড়লে অনেক পড়া মিস হবে। পরীক্ষার খাতায় তখন কি লিখবো? আন্ডা?”
মেহরাব হাসলো উৎসার কাণ্ডে। মেয়েটা যে ওকেই ওর কথার জালে ফাঁসাচচ্ছে এটা মেহরাব বেশ ভালোই বুঝতে পারছে। উৎসার ঘাড়ে থুতনি ঠেকিয়ে বলল,
“একদিন না পড়লে কিছুই হবে না। বাদ দেও”
“আমি বলেছি পড়বো মানে পড়বই। ছাড়ুন আমায়”
মেহরাব উৎসার কানের কাছে মুখ নিলো। ফিসফিসিয়ে কিছু একটা বলল। উৎসা নাক মুখ কুচকে দিলো। মেহরাব বলল,
“নাও চয়েস ইজ ইউরস। কি করবে ভেবে দেখ। রুমে যাবে, নাকি চন্দ্র বিলাস করবে?”
উৎসা নাক সিটকে বলল,
“অ*সভ্য লোক”
মেহরাব শব্দ করে হেসে ফেলল। উৎসার ইচ্ছে করলো লোকটাকে ডিটার্জেন্ট ছাড়া কাঁচতে। লোকটার মুখ ইদানিং বড্ড লাগাম ছাড়া হয়ে গেছে। যখন যা মুখে আসছে বলে দিচ্ছে। তার ফল ভোগ করতে হচ্ছে উৎসাকে। এইযে মাত্র লাজ সরম হীন ছোটো খাটো হু*মকি দিয়ে দিলো। এখন উৎসা চাইলেও নিচে যেতে পারবে না। গেলেই সর্বনাশ।
একে অপরকে শক্ত আলিঙ্গনে জড়িয়ে রেখেছে দুজন। উৎসার মনে আচমকা প্রশ্ন এলো। ফট করে মেহরাবকে জিজ্ঞেস করে বসলো,
“আচ্ছা আপনি আমাকে কবে থেকে ভালোবাসেন?”
“হঠাৎ এই প্রশ্ন?”
“ইচ্ছে হলো তাই জিজ্ঞেস করলাম। কথা না পেঁচিয়ে উত্তর দিন”
মেহরাব কিছু সময় চুপই রইলো। হয়তো ভাবলো কিছু। অতঃপর বলা শুরু করলো,
“নির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ দেখে আমি তোমায় ভালোবাসিনি। প্রথম যেদিন তোমাকে তোমাদের বাড়ির বাগানে ঝাড়ি দিয়েছিলাম সেদিন পিছনে ঘুরে তোমার বাচ্চা, মায়াবী মুখের মায়ায় পড়ে গিয়েছিলাম। তোমার কান্না আমার সহ্য হচ্ছিলো না। গিল্টি ফিল হচ্ছিলো। নিজের নিজেকেই থাপ্রাতে ইচ্ছে করছিলো তিয়াস যখন বলল যে আমিও তোমার ভাই সেটা আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। আনমনেই সেদিন রাগ হয়েছিল তিয়াসের ওপর। আমি কেন তোমার ভাই হতে যাবো? আমার তো বোন আছে। আর তোমার ও ভাই আছে। তাহলে কেন আমাকে তোমার ভাই বানাবে? এরপর ধীরে ধীরে তুমি বড় হতে লাগলে। আমাদের দেখা হলে ভালো করে কথা না হলেও চোখে চোখে ঝগড়াটা দিব্বি হতো। চোখে চোখে নীরব যুদ্ধ করতে করতে কখন যে তোমায় ভালোবেসে ফেললাম নিজেও জানি না। তোমাকে ভালোবাসার জন্য আমার নির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ লাগে না। ধীরে ধীরে তোমার মায়ায় পড়ে গেছি আমি। তবে অনুভব করেছি যেদিন শাওন তোমায় প্রপোজ করেছিল। আমার গাঁ পিত্তি জ্বলে যাচ্ছিলো সেদিন। তোমার পাশে কাউকে সহ্য করতে পারতাম না। কেন পারতাম না আমি নিজেও জানি না। তোমার পাশে অন্য ছেলেকে দেখলে কেন রাগ হতো তখনও এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে অজানা। শুধু জানতাম তোমার পাশে আমি অন্য কাউকে সহ্য করতে পারবো না। অতঃপর ধীরে ধীরে উপলব্ধি করলাম তুমি নামক মায়া আমায় গভীর ভাবে মায়াজালে আটকে ফেলেছে। যেখান থেকে বেরিয়ে আসা আমার পক্ষে সম্ভব না। তাই আর কি? জড়িয়ে গেলাম তোমার সাথে। আড়ালে আবডালে সব সময়ে তোমার খোঁজ রাখতাম। আর তুমি এমন এক গাধী কখনো বোঝোইনি যে কেউ একজন তোমায় দূর থেকে সব সময় নজরে রাখে, তোমার লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে। তোমার আশেপাশে আসা সকল ছেলেদের তাড়িয়ে দেয়। বড় কথা আমি জানতাম তুমি আমায় পছন্দ করতে না। তাই চেয়েও নিজের অনুভূতি বলতে পারছিলাম না তোমায় ভেবেছিলাম পারিবারিক ভাবে তোমায় আমার করবো। কিন্তু তার আগেই তো কতো কিছু ঘটে গেল। অবশেষে তুমি আমার, শুধু মাত্র আমার”
উৎসার মনের মাঝে শীতলতা ছেয়ে গেল। মেহরাব ওকে এতো আগে ভালোবাসে আর ও বুজতেই পারলো না। শাওন কে মারার পর তানজিলারা বলেছিলো যে মেহরাব উৎসাকে পছন্দ করে কিংবা ভালোবাসে। উৎসাই পাত্তা দেয়নি। আসলেই ও একটা গাধী। তাও তেজি কণ্ঠে বলল,
“আপনি আমায় গাধী বললেন?”
“গাধী না তো কি বলবো? শুনেছি মেয়েদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বড্ড প্রখর হয়। কেউ তাদের দিকের তাকালে তারা বুঝতে পারে। আর আমি একটা গাধী, মাথা মোটাকে ভালোবেসেছি যে কিনা কিছুই বোঝে না। উল্টো কিভাবে আমার সাথে ঝগড়া করা যায় সেই ফন্দি আটে”
“প্রথম দেখায় যেই ধমক দিয়েছেন তারপর থেকে তো আপনার নাম পড়েছিল “অপ্রিয়’র”লিস্টে সবার ওপরে। তার পর থেকে দেখা হলেও টুকটাক ঝগড়া লেগে থাকতো। সব চেয়ে বড় কথা আপনি এলাকায় গু*ন্ডামি করে বেড়াতেন যেটা আমার মোটেও পছন্দ ছিলো না। সেই জন্যই তো আপনাকে কখনো সেভাবে দেখা হয়নি আর না আপনাকে নিয়ে কিছু ভেবেছি। তাহলে আমি কি করে বুঝবো আপনি আমাকে পছন্দ করেন?”
মেহরাব দীর্ঘশ্বাস ফেলল। উৎসাকে আরো নিবিড় ভাবে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে মিহি কণ্ঠে সুধালো,
“এখনো কি আমি তোমার “অপ্রিয়’র ”লিস্টে সবার ওপরে আছি?”
উৎসা ভাবুক কণ্ঠে বলল,
“উমম, না এখন আপনার কিছুট উন্নতি হয়েছে। আগে সবার ওপরে ছিলেন এখন লিস্টে সবার নিচে আছেন”
মেহরাব হতাশ গলায় বলল,
“তাও লিস্ট থেকে বাদ দিবে না?”
উৎসা দুদিকে মাথা নাড়লো। যার অর্থ না। মেহরাব বলল,
“তোমার অপ্রিয় লিস্টে আমি থাকলেও,
আমার প্ৰিয়’র লিস্টের তুমি সবার ওপরে ছিলে, আছো এবং থাকবে”
#চলবে?
#অপ্রিয়_তুমি
#পর্ব২৪
#আফিয়া_আফরোজ_আহি
উৎসব মুখর পরিবেশ মির্জা বাড়িতে। সবার মুখে লেগে আছে মিষ্টি হাসি। বাড়িতে নতুন সদস্য’র আগমনী বার্তায় মেতে উঠেছে সবাই। মিজান সাহেব কি রেখে কি করবেন দিশা পাচ্ছেন না। খবর টা শুনেই মিষ্টি আনতে চলে গেছেন। বাড়িতে মিষ্টি থাকা সত্ত্বেও। উৎসা নিজেও খুব খুশি। অবশেষে মির্জা বাড়িতে নতুন সদস্যর আগমন হতে চলেছে। রিনিকে ঘিরে রেখেছে সবাই। মেয়েটার মুখে লাজুক হাসি লেগে আছে। এক কোণে দাঁড়িয়ে মাহিন দাঁত দিয়ে নখ কাটছে। বেচারা এতক্ষনে টেনশনে ছিলো। এখন বাবা হওয়ার সুখবর শুনে কি রিয়েকশন দেওয়া যায় সেটাই ভুলে বসে আছে। উৎসা বসে বসে রিনি কে খোচাতে ব্যাস্ত। বলল,
“আপু পুচকুকে কিন্তু সারাদিন আমিই রাখবো। তোমার কাছে একটুও দিবো না। আমি ওর ছোটো আম্মু, তাই ওআমার কাছে ওকে রাখবো। তুমি জাস্ট খাওয়ানোর সময় ওকে খাইয়ে দিবে। বাকিটা সময় ও আমার কাছেই থাকবে”
“ঠিক আছে রাখিস”
উৎসার আরো কতো শত কল্পনা। পুচকু আসলে এই করবে, সেই করবে। সারাদিন ও রাখবে আরো যতো বাচ্চামো কথা বার্তা। রিনি বসে বসে উৎসার পা*গলামো দেখছে। উৎসার কাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে রিনির না ওর পুচক আসবে। মেয়েটার ভাবনার শেষ নেই। মেয়েটা যখন থেকে শুনেছে ও প্র্যাগনেন্ট সেই থেকেই বক বক করেই চলেছে। এতে রিনির একটুও বিরক্তি আসছে না। ওউল্টো মুগ্ধ চোখে উৎসাকে দেখছে। উৎসার মাঝে আনন্দ, উৎসাহের শেষ নেই।
এইতো বিকেলের ঘটনা,
বিকেলের দিকে উৎসা আর রিনি দুজন মিলে গল্প, গুজব করতে করতে বিকেলের নাস্তা বানাচ্ছিলো। সালেহা বেগম কে ছুটি দিয়ে ওরাই আজ নাস্তা বানানোর দায়িত্ব নিয়েছে। এতদিন উৎসার পরীক্ষা থাকায় বইয়ের মাঝ থেকে মেহরাব ওকে মুখ তুলতে দেয় নি। সারাদিন ধমকে ধামকে পড়তে বসিয়ে রেখেছে। মেহরাব পারে না উৎসা কে পড়াশোনা নামক পুকুরে চুবিয়ে রাখে। পড়া চোর উৎসাকে সারাদিন টেবিলে বসিয়ে রেখেছিলো। পড়তে পড়তে হাপিয়ে গিয়েছে মেয়েটা। উৎসা একদিন মুখ ফস্কে বলেই ফেলেছিলো,
“আপনাকে বিয়ে করার চেয়ে একটা টিচারকে বিয়ে করলে ভালো হতো। সে অনন্ত আপনার মতো অ*ত্যা*চার করে সারাদিন পড়তে বসাতো না। জ*ল্লাদ একটা”
শেষের কথাটা অবশ্য মিন মিন করেই বলেছিলো। নাহয় মেহরাব শুনলে ওর খবর ছিলো। মেহরাবের গম্ভীর কণ্ঠে জবাব,
“বেশি কথা না বলে চুপচাপ পড়ো। নাহলে আজ রাত ২ টোর আগে টেবিল থেকে উঠতে পারবে না”
উৎসস চুপ মেরে গেল। এটা আদোও ওর বর তো! নাকি আস্ত বর্বর? উৎসা কথা না বাড়িয়ে পড়তে বসে যায়।
পরীক্ষা শেষ হতেই হাফ ছেড়ে বেঁচেছে বেচারি। রিনি উৎসা দুজন নাস্তা বানাচ্ছিলো। হুট করে রিনির মাথা ঘুরতে শুরু করে। পাশে থাকা কেবিনেট ধরে নিজের ভারসাম্য বজায় রাখে। উৎসা রিনির অস্বাভাবিক আচরণে সাথে সাথে ওকে ধরে ফেলে।
“আপু কি হয়েছে তোমার? শরীর খারাপ লাগছে?”
“বলিস না কয়দিন যাবত কেমন মাথা ঘুরাচ্ছে। শরীর টাও ভালো লাগছে না”
উৎসা রিনি নিয়ে সোফায় বসায়। ঝট পট এক গ্লাস পানি এনে দেয়। রিনি ঢক ঢক করে পানিটা শেষ করে বলল,
“আমি ঠিক আছি, চল নাস্তা বানানো শেষ করি। ওরা অফিস থেকে ফিরে আসবে”
“তুমি রুমে যাও। আমি করে নিচ্ছি”
“তুই একা পারবি না। আমি হেল্প করি চল”
উৎসা কাট কাট কণ্ঠে জবাব দিলো,
“তোমাকে যেটা বলছি সেটাই করো। রেস্ট নেও তুমি। আমি যাচ্ছি”
উৎসা নাস্তা বানাতে চলে গেল। নাস্তা বানিয়ে টেবিলে রেখে ছুটলো রিনির ঘরে। মেয়েটা দুপুরেও কিছু খায়নি। খায়নি বলতে খেতে পারেনি। যেটুকু খেয়েছে সবটাই বমি করে ফেলেছে। উৎসা রিনির রুমে ঢুকে আশেপাশে রিনিকে পেল না। কানে আওয়াজ এলো ওয়াশরুমের। রিনি মনে হয় ওয়াশরুমে গিয়েছে। উৎসা নাস্তার প্লেট’টা টেবিলের ওপর রেখে বিছানায় বসালো। মিনিট দুয়ের মাথায় বেরিয়ে এলো রিনি। মুখ কেমন ফেকাশে হয়ে গেছে। শরীর যেন চলছেই না। উৎসা বিচলিত হলো। রিনিকে ধরে বিছানায় শুইয়ে দিলো। মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“কি হয়েছে আপু? বেশি খারাপ লাগছে?”
রিনির দুর্বল কণ্ঠ,
“বমি করতে করতে অবস্থা খারাপ”
উৎসা পাশে রাখা নাস্তার প্লেট রিনির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“একটু খেয়ে নাও দেখবে ভালো লাগবে”
রিনি ক্ষীণ কণ্ঠে বলল,
“কিছু খাবো না রে। বমি করতে করতে জান যাচ্ছে আমার। খেলে আবারো বমি আসবে”
উৎসা তাও জোর করে কিছুটা খাইয়ে দিলো। মিনিট দশের মাঝে মেহরাবরা বাড়িতে ঢোকে। মাহিন বউয়ের এই অবস্থা দেখে সাথে সাথে ডক্টর কে কল করে। যদি ও ও চেয়েছিলো হসপিটালে যেতে। চেকাপ করাবে বলে। কিন্তু রিনির অবস্থা খারাপ দেখে বাসায় ডক্টরকে আসতে বলে।
রিনির রুমে ভীড় জমেছে। উৎসা, মেহরাব, সালেহা বেগম, মিজান সাহেব, মাহিন সবাই রুমে অবস্থান করছে। ডক্টর রিনিকে দেখছে। চেকাপ করা হেসে হলে মুচকি হেসে মিজান সাহেব কে বলল,
“মিজান সাহেব মিষ্টি আনুন। আপনাদের বাড়িতে নতুন মেহমান আসছে”
কথাটার মানে উৎসা বুঝতে পারলো না। ওর ছোট্ট মাথা কথাটার অর্থ বুঝতে অপরাগ। মেয়েটা অসুস্থ আর ডক্টর কিনা রসিকতা করছে? বলছে মেহমান আসবে?
“এদিকে আপুর অবস্থা খারাপ আর আপনি মজা করছেন ডক্টর আঙ্কেল? আপনি আগে আপুকে দেখুন। আপুর কি হয়েছে? খেতে পারছে না কেন? সাথে মাথায় ঘুরাচ্ছে। আপনি আগে আপুকে মেডিসিন দিন”
উৎসার কথা শুনে সবাই ওর দিকে তাকালো। হুট্ করে সবাই কে এভাবে নিজের দিকে তাকাতে দেখে উৎসা অস্বস্তিতে পড়লো। ও কি এমন বলল যে সবাই এভাবে ওর দিকে তাকাচ্ছে? ও তো ভুল কিছু বলেনি। রিনি অসুস্থ, ওকে না দেখে ডক্টর মজা করছে সেটাই তো বলেছে। ডক্টর বলল,
“তোমার আপু প্রেগন্যান্ট। তাই জন্যই এই সমস্যা হচ্ছে। এই সময়ে প্রায় মেয়েদেরই বমি হয়, মাথা ঘুড়ায়। এতে চিন্তার কিছু নেই। আর ওষুধের ও প্রয়োজন নেই। প্রথম কয়েক মাস এমন যাবে। তারপর আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। আমি ওকে স্যালাইন দিয়ে যাচ্ছি, স্যালাইন দিলে শরীরের দুর্বলতা অনেকটাই কমবে”
উৎসা এতক্ষনে বুঝলো আসল ঘটনা। বলল,
“ও আচ্ছা। আমি ভেবেছি আপনি মজা করছেন”
সবাই একসাথে হেসে দিলো। উৎসা বেশ লজ্জা পেল। কেন যে মুখ ফস্কে জিজ্ঞেস করতে গিয়েছিল! ইচ্ছে করছে নিজের মাথায় নিজেই বারি দিতে। উৎসব মুখর পরিবেশ তৈরি হলো মির্জা বাড়ি জুড়ে। রিনির বাবার বাড়ি তে জানানো হলে তারা তাদের মেয়েকে দেখতে চলে এলেন। বাড়িতে উৎসব মুখ পরিবেশ। এতো মানুষ! উৎসা, সালেহা বেগম মিলে তাদের আপ্পায়নের ব্যাবস্থা করতে গেল।
মেহরাব সেই কখন থেকে বউকে খুঁজছে। মেয়েটা এখনো রুমে আসার নামই নিচ্ছে না। মেয়েটা কি ভুলে গেছে মেহরাব অফিস থেকে এসে ওকে না দেখলে শান্তি পায় না! নাকি মেহরাব যে এসেছে সেটাও ওর চোখে পড়েনি? মেহরাবের অভিমান হলো। আসুক উৎসা তারপর দেখাবো মজা!
সকল কাজ শেষ করে রাত সাড়ে এগারোট নাগাদ রুমে ঢুকলো উৎসা। রিনির বাড়ির সবাই দশটা নাগাদ গিয়েছে। সবাই যেতেই সব গোছ গাছ করে আসতে আসতে দেরি হয়ে গেছে। দরজা ঠেলে রুমে ঢুকে দেখলো পুরো রুম ফাঁকা। মেহরাব কোথায় গেল? ওর তো রুমে থাকার কথা ছিলো! এসেছে থেকে মানুষটা কে দুই দন্ড দেখেনি। এমনকি খাওয়ার সময়ও মেহরাব বেশ চুপচাপ ছিলো। কোনো কথাই বলেনি। মুখটাও কেমন গম্ভীর ভাব ছিলো। কিছু কি হয়েছে মেহরাবের?
উৎসা এক সেট কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। ঘামে শরীর আঠালো হয়ে আছে। বিশ্রী গন্ধ আসছে। এই মুহূর্তে শাওয়ার না নিলেই নয়। শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে ব্যালকনি তে গেল তোয়ালে মেলে দিতে। ব্যালকনিতে পা রাখতেই নজর পরলো মেহরাবের দিকে। উদাস ভিঙ্গিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ছেলেটা। উৎসা তোয়ালে মেলে দিয়ে মেহরাবের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। জিজ্ঞেস করলো,
“ব্যালকনিতে কি করেছেন?”
মেহরাবের পক্ষ থেকে কোনো জবাবই এলো না। যেখানে মানুষটা ওকে পেলেই টুস করে জড়িয়ে ধরবে, পা*গলামো করবে সেই মানুষটাকে এতটা শান্ত থাকতে দেখে উৎসা অবাক হলো।
“কি হয়েছে আপনার? মন খারাপ? অফিসে কিছু হয়েছে কি?”
মেহরাব তবুও নিশ্চুপ। কোনো রা নেই ওর মুখে। উৎসা বিচলিত হলো। ওর সামনে মেহরাব তো এতটা চুপচাপ থাকার মতো ছেলে না। মেহরাবের শার্টের হাতা টেনে ধরে বলল,
“আরে ভাই কি হয়েছে বলবেন তো! না বললে বুঝবো কি করে?”
মেহরাবের গম্ভীর কণ্ঠ স্বর ভেসে এলো,
“আমি তোমার ভাই না, তাই আমাকে ভাই বলে ডাকবে না”
“একশো বার ডাকবো। মুখটা অমন বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছেন কেন? দেখে মনে হচ্ছে আপনার বউ আপনাকে রেখে অন্য ছেলের সাথে ভেগে গেছে”
মেহরাব এক ঝটকায় উৎসার কোমর আঁকড়ে ধরলো। কাঠিন্য গলার বলল,
“সেই সুযোগ নেই। যতদিন মেহরাব মির্জা বেচে আছে ততদিন কোনো ভাবেই সম্ভব না”
কথাটা বলেই মেহরাব অন্য দিকে মুখ ঘুড়িয়ে নিলো। উৎসা হটাৎ মেহরাবের আক্রমনে হতো চকিয়ে গিয়েছে। নিজেকে সামলে মেহরাবের থুতনিতে হাত রেখে ওর দিকে ফিরালো। বলল,
“কি হয়েছে বলবেন তো! আমি কি ভুল কিছু করেছি?”
মেহরাব থুতনি থেকে উৎসার হাত সরিয়ে দিয়ে বলল,
“এখন আমার কাছে এসেছো কেন? এতক্ষন যেখানে ছিলে সেখানে যাও। তোমার যে একটা জামাই আছে সেটাই তো ভুলেই বসেছো। একজন যে তোমার অপেক্ষায় থাকে সেটা কি ভুলে গেছো? জানো না অফিস থেকে এসে তোমার মুখ না দেখলে তার হয়না?”
উৎসা এতক্ষনে বুঝলো মেহরাবের গাল ফুলিয়ে থাকার কারণ। নিজের হয়ে সাফাই গাইতে বলল,
“দেখেছেনই তো আপুর অবস্থা। তাই আপুকে ছেড়ে আসিনি। আম্মু একা কাজ করবে তাই আম্মুকে হেল্প করছিলাম”
“আমার জন্য তোমার কাছে ৫ মিনিটও নেই? ৫ মিনিটের জন্য এলে কি হতো? তুমি আমায় ভালোই বাসো না বউ”
শেষের কথাতটা বলে গাল ফুলালো মেহরাব। উৎসা মেহরাবের গাল ফুঁলানোর ধরনে হেসে ফেলল। মানুষটা বাচ্চাদের মতো অভিমান করছে। উৎসা কানে ধরে বলল,
“সরি, আর কখনো হবে না”
“সরো তোমার সরি আমার লাগবে না”
“এমন বাচ্চাদের মতো গাল ফুলাচ্ছেন কেন? যদিও গাল ফুলালে আপনাকে হেব্বি কিউট লাগে। ইচ্ছে করে গাল টেনে দেই”
মেহরাব হুট্ করে ঝুঁকলো উৎসার দিকে। কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
“গাল টেনে দিতেই ইচ্ছে করে? আদর করতে ইচ্ছে করে না? বাচ্চাদের কিন্তু আদর করতে হয়”
উৎসা মেহরাবের বুকে কিল বসিয়ে দিলো। বলল,
“অ*সভ্য লোক”
মেহরাব মৃদু কণ্ঠে ‘আহ’ করে উঠলো। উৎসার হাত বুকের সাথে চেপে ধরে বলল,
“একে তো দেখা না দিয়ে বুকে ব্যথা বানিয়েছো এখন কি কিল দিয়ে হৃদ স্পন্দনই বন্ধ করে ফেলতে চাইছো? আমার ওপর তোমার একটু তো দয়া হয়না? নিষ্ঠুর রমণী”
উৎসা কিট কিটিয়ে হেসে উঠলো। মেহরাব মুগ্ধ চোখে চেয়ে রইলো প্রেয়সীর পানে। কতো আয়োজন করেছিল মেয়েটাকে একটু শিক্ষা দিবে বলে। কিন্তু শেষে হলো কি? নিজেই নিজের জালে ফেঁসে গেল। এই মেয়েটার মাঝে এমন কিছু আছে যা মেহরাব কে তার সাথে রাগ করে থাকতে দেয় না। মেহরাব চেয়েও মেয়েটার থেকে দূরত্বে যেতে পারে না, আর না সামান্য দূরত্ব ওর সহ্য হয়। উৎসা হাসি থামিয়ে বলল,
“এবার রাগ কমেছে মিস্টার?”
মেহরাব এক ঝটকায় উৎসাকে কোলে তুলে নিলো। হুট্ করে এমন আক্রমণে নিজেকে সামলাতে গিয়ে উৎসা আঁকড়ে ধরলো মেহরাবের গলা। ব্যালকনি থেকে রুমে প্রবেশ করতে করতে মেহরাব বলল,
“রাগ কমেছে কিনা জানি না। তবে আমায় এতক্ষন অপেক্ষায় রাখার জন্য আপনার শাস্তি মঞ্জুর হয়েছে”
উৎসা আভাস পেল তীব্র ধ্বংসের উন্মাদনার। শুকনো ঢোক গিললো উৎসা। মেহরাবের ঠোঁটের কোণে লেগে আছে ক্রুর হাসি। হাসিটা আরো খানিকটা প্রসারিত করে মেহরাব সুধালো,
“আর ইউ রেডি ফর পানিশমেন্ট, মিসেস মেহরাব?”
উৎসা কিছু বলল না। বলেও যে লাভ হবে না এটা ও জানে। মেহরাব যেটা চাইছে সেটাই হবে। উৎসাকে আলতো করে বিছানায় শুয়ে দিয়ে লাইট নিভিয়ে দিলো। মুহূর্তের পুরো রুম ছড়িয়ে গেল উষ্ণতায়। মেহরাব ওর ভালোবাসা ছড়িয়ে দিচ্ছে উৎসার মাঝে। দুজনে পাড়ি জমালো ভালোবাসার এক অনন্যা শহরে। যেখানে কেবল উৎসা আর মেহরাবের অস্তিত্ব।
————
প্রায় দুমাস পর বাবার বাড়ি এসেছে উৎসা। পড়াশোনা, পরীক্ষা, রিনির অসুস্থতা সব মিলিয়ে এবাড়ি আসাই হয়নি। সকাল বেলা মেহরাব এসে দিয়ে গেছে। বলে গেছে যাওয়ার সময় নিয়ে যাবে। বাড়ি এসে নিজের প্রাণ প্ৰিয় বেস্টু কে ডেকে নিয়েছে উৎসা। পরীক্ষার পর দুজনের তেমন দেখা হয়নি বললেই চলে। দুই একবার ফোনে কথা হয়েছে। দুই বান্ধবী মিলে বেশ ভালোই সময় কাটাচ্ছিলো। এতো গুলো দিন পর দুজন একত্রিত হয়ে গল্পে মজেছে দুজন। আশেপাশের সকল খেয়াল ভুলে বসেছে।
সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছে তিয়াস। অফিস শেষ করে ক্লান্তি নিয়ে বাড়ি এসে বোনের রুমে পেরিয়ে নিজের রুমের দিকে যেতে নিলে থমকে যায় প্ৰিয়তমার খিল খিল করে হাসির শব্দে। তিয়াসের ভ্রু কুঁচকে এলো। মেয়েটা এখানে আসবে কি করে? নাকি ওর মনের ভুল! মেয়েটা ইদানিং বেশ ভালোই জ্বালাচ্ছে। রাতে ঠিক মতো ঘুমাতেও পারছে না তিয়াস। মনে মনে ফন্দি এটে ফেলেছে। খুব শীঘ্রই প্রেয়সীকে খাঁচায় বন্দি করবে। তারপর ওকে জ্বালানোর মজা দেখাবে। পুনরায় একই শব্দ কানে আসলে পর্দা সরিয়ে তাকালো। এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল ওর প্রেমিক হৃদয়। সকল ক্লান্তি এক নিমিষেই উবে গেল। তিয়াস মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো প্রিয়তমার খিল খিল করে হাস্যরত মুখশ্রীতে। মেয়েটাকে কি জানে তার হাসি ঝংকার উত্তাল সমুদ্রের ন্যায় উথাল পাথাল ঢেউয় তৈরি করে তিয়াসের বুকে? উহু জানে না! জানলে নিশ্চই এভাবে হাসতো না। উৎসার নজর পরলো ভাইয়ের ওপর। জিজ্ঞেস করলো,
“কেমন আছো ভাইয়া?”
বোনের কণ্ঠে হুস ফিরলো তিয়াসের। হেসে বলল,
“এইতো ভালো, তুই? তুই আসবি আগে বললি না কেন?”
উৎসা মুখ বাকিয়ে বলল,
“এমন একটা ভাব ধরছো যেন আমি আসবো জানলে কতো কিছু করে উল্টে ফেলতে”
“পে*ত্নী ভালো করে কথা বলতে পারিস না যেহেতু, তাহলে কথা বলিস কেন? চুপ থাকতে পারিস না?”
উৎসার মেজাজ খারাপ হলো। বলল,
“আমার যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে কথা বলবো তোমার কি? আমার রুমের দরজায় এসেছো কেন? নিজের রুমে যাও”
তিয়াস মুখ ঝমটা দিয়ে বলল,
“আমার ইচ্ছে নেই তোর রুমে বসে থাকার। আমি নিজের রুমেই যাচ্ছিলাম। মাঝে পে*ত্নীর শব্দ পেয়ে দেখতে এলাম আমাদের বাড়িতে পে*ত্নী এলো কি করে”
উৎসা চেঁচিয়ে উঠে বলল,
“ভাইয়া!”
তিয়াস ততক্ষনে হাওয়া। উৎসা রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বিছানায় যেয়ে বসলো। এর মাঝেই ডাক পড়লো নিচ থেকে। তনয়া বেগম ডাকছে উৎসাকে। তানজিলা কে বসতে বলে উৎসা নিচে নেমে এলো।
তনয়া বেগম রাতের জন্য রান্না করছেন। মেহরাবের কি কি পছন্দ সেটা জানতে চাইছেন। মেয়ের জামাইকে তার পছন্দ মতো রেঁধে বেড়ে খাওয়াবে। ছেলেটা কতো দিন তাদের বাড়ি আসেনা। উৎসা কোমরে হাত গুঁজে বলল,
“মেয়ের জামাইয়ের জন্য এতো আয়োজন? আমি যে এতো দিন পর বাড়ি আসছি সেই খেয়াল আছে তোমার? নিজের মেয়ের চেয়ে পরের ছেলে বেশি হলো তোমার কাছে? যাও আর আসবই না তোমাদের বাড়ি”
“নাটক না করে যেত জিজ্ঞেস করেছি সেটা বল। ছেলেটাকে রান্না করে খাওয়াবো না তো তোকে খাওয়াবো? এমন ভাবে করছিস যেন তুই খাবি না”
উৎসা রাগে গজ গজ করতে করতে মেহরাবের পছন্দের খাবারের নাম বলে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে এলো। মনে মনে বিড়বিড় করে বলছে,
“উৎসা রে তোর আর এই বাড়িতে কদর নেই। এখন এই বাড়িতে ঐ বজ্জাতটাকে আদর করা হবে। তুই এ বাড়ির পর হয়ে গিয়েছিস”
রাগে নাকের পাটা ফুলে ফেঁপে উঠছে। রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বলল,
“আর আসবই না এ বাড়ি। তখন দেখবো মেয়ে জামাইকে নিয়ে আদিক্ষেতা করো কি করে!”
রেগে মেগে রুমের পর্দা সরাতেই উৎসা থমকে গেল। অপ্রত্যাশিত কিছু দেখে ফেলেছে যেন। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো সামনের দিকে।
#চলবে?