অপ্রিয় তুমি পর্ব-২৫

0
80

#অপ্রিয়_তুমি
#পর্ব২৫
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

শান্ত পরিবেশ, থমকে আছে সব কিছু। উৎসার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে তানজিলা। ওর থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে তিয়াস। একটু আগে তনয়া বেগমের সাথে রাগ করে রাগে গজ গজ করতে করতে রুমে আসতেই উৎসার চক্ষু চড়ক গাছে। তানজিলা কাবার্ডের সাথে চিপকে দাঁড়িয়ে আছে। কাবার্ডের দুই পাশে দুই হাত হাত রেখে তিয়াস তানজিলা কে আটকে রেখেছে। তানজিলার চোখে মুখে ভীতি। ভীতু কণ্ঠে বলল,
“কি করছেন তিয়াস ভাই? উৎসা এখনি এসে পড়বে”

তিয়াস তানজিলার ঠোঁটের ওপর আঙ্গুল রেখে ওকে চুপ করিয়ে দিয়ে বলল,
“হুসস, চুপ থাকো। বনু এখন আসবে না। আম্মু ওকে ডেকেছে”

“তাও যদি চলে আসে?”

“তুমি দয়া করে একটু চুপ করো। চুপ করে আমায় একটু দেখতে দেও তো! কতদিন দেখি না তোমায়। এভাবে খিল খিল করে হেসে যে আমার বুকে আগুন জ্বালিয়ে দিলে এখন সেই আগুনে পানিও তোমায় ঢালতে হবে। এখন দুই মিনিট চুপ করে দাড়াও তো, দুচোখ ভরে তোমায় দেখি”

তিয়াসের জারিজুড়ির কাছে তানজিলার মতামত টিকলো না। তিয়াস নাছোড় বান্দা। হটাৎ তানজিলার চোখ পড়লো দরজার দিকে। সাথে সাথে চক্ষু ছানা বড়া হয়ে গেল। অস্ফুস্ট স্বরে বলল,
“উৎসা!”

তিয়াস দুস্টুমির ছলে বলল,
“তুমি কি ভেবেছো উৎসার নাম করে ছাড়া পেয়ে যাবে? তাহলে আপনার ধারণা ভুলে ম্যাডাম। এতো সহজে ছাড়ছি না আমি আপনাকে। অনেক দিন পর বাগে পেয়েছি আপনাকে”

উৎসা ডেকে উঠলো,
“ভাইয়া”

তিয়াস চমকে উঠে ফটাফট তাকালো। ভুত দেখার মতো চমকে উঠে এক লাফেফ ছিটকে তানজিলার থেকে দূরে সরে গেল। উৎসা দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। তিয়াস তানজিলাকে বলল,
“আমি যা দেখছি তুমিও কি তাই দেখতে পাচ্ছ?”

তানজিলা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,
“আজ্ঞে”

উৎসার সামনে দুজন অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। উৎসা একবার দুজনে দিকে তাকালো। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলল,
“তোমরা দুজন একসাথে কি করছিলে?”

তানজিলা কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল,
“কিছু না। তিয়াস ভাই তোকে খুঁজতে এসেছিলো”

উৎসা বুকে হাত বেঁধে দাঁড়ালো। তানজিলাকে ভেঙিয়ে বলল,
“আমায় খুঁজতে এসেছে তোকে দেখার জন্য ছটফট করেছিলো তাই না? মিথ্যা বলার জায়গা পাস না? কানের নিচে একটা দিবো দেখবি এক সপ্তাহ কানে শুনতে পাবি না”

তানজিলা কোনো জবাব দিলো না। উৎসা পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,
“কতদিনের সম্পর্ক তোমাদের? কতো দিন ধরে চলছে তোমাদের প্রেমলীলা?”

তানজিলা মিনিমিনে কণ্ঠে বলল,
“দোস্ত তুই যেমনটা ভাবছিস তেমনটা না”

উৎসা ওর দিকে এক প্রকার তেড়ে গেল। বলল,
“তাহলে কেমনটা? নাটক করিস আমার সাথে? আমি কিছু বুঝি না ভেবেছিস? ভালোয় ভালোয় যেটা জিজ্ঞেস করছি সেটা বল নাহয় থা*প্পড় মেরে তোর ৩২ টা দাঁত আমি ফেলে দিবো বেয়াদব”

তানজিলা কিছু বলার আগে তিয়াস জবাব দিলো,
“৪ বছর”

তিয়াসের জবাব শুনে উৎসা ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো। ওর বেস্ট ফ্রেন্ড আর ভাই ওর দৃষ্টির অগোচরে এতো দিন প্রেম করে গেল আর ও কিনা জানতেই পারলো না! দুজন ওর সাথে এমনটা করতে পারলো? ওকে জানালে ওকি বাঁধা দিতো? উৎসা হতাশ কণ্ঠে বলল,
“তোমরা দুজন এতদিন যাবত সম্পর্কে আছো আর আমায় বললেও না? কি সুন্দর দুজন আমার সামনে ঢং করে গেলে? আমাকে একবার জানানোর প্রয়োজন বোধ করলে না? আমি তোমার কাছে পর হয়ে গেছি তাই না? তাই জন্যই আমায় কিছু জানাও নি। আমি কে যে আমায় জানাবে?”

তিয়াস বলল,
“আমি জানাতে চেয়েছিলাম ও….”

উৎসা তিয়াস কে চুপ করিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,
“তুমি চুপ করো। একটা কথাও বলবে না তুমি আমার সাথে”

তানজিলার সামনে গিয়ে বলল,
“ভাইয়া বা বড় ভাই দেখে ছোটো বোনকে কিছু বলতে পারেনি। তু্ই কি করেছিস? এই তোর আমার বন্ধুত্ব? এই তুই আমাকে ভালোবাসিস? আমি তোর থেকে কখনো কিছু লুকিয়েছি? কিছুই লুকাই নি তাই না! তাহলে তু্ই এতবড়ো একটা কথা আমার থেকে কিভাবে লুকিয়ে গেলি? নাকি আমায় তু্ই কখনো বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবিসই নি? আমার একটুর জন্য ফ্রেন্ড ভাবলে আমায় একটা বার বলার প্রয়োজন বোধ করতি”

তানজিলা সহসা কোনো জবাব দিতে পারলো না। উৎসার মেজাজ খারাপ হলো। আশেপাশে কিছু খুঁজতে নিলো। খুঁজে পেয়ে যেতেই ডায়াল করলো মেহরাবের নাম্বারে। ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি কোথায়?”

“কোথায় আবার অফিসে? হঠাৎ এই সময় কল দিলে যে? বরের প্রতি ভালোবাসা দেখাচ্ছ কারণ কি বউ?”

“কিছুই না। আপনি এখন আসতে পারবেন?”

মেহরাব সন্দীহান কণ্ঠে সুধালো,
“কিছু কি হয়েছে উৎসা? তুমি ঠিক আছো তো?”

“হ্যাঁ! আমি ঠিক আছি। আপনি বলুন আপনি আসবেন নাকি আমি একা একাই ও বাড়ি চলে যাবো?”

“কি হয়েছে ঘটনা খুলে বলো তো? এমনি এমনি এই অসময়ে যাওয়ার বায়না তো তুমি করবে না। হয়েছে কি সেটা আমায় খুলে বলো। তুমি না কতো আশা নিয়ে বাবার বাড়ি গেলে এখন হুট্ করে কি হলো? এতো ক্ষেপে আছো কেন?”

উৎসা মেজাজ দেখিয়ে বলল,
“বললাম তো কিছু হয়নি। আপনি আসতে পারলে আসেন নাহয় আমি একা একাই চলে যাবো। আর এক মুহূর্তের জন্যও আমি এখানে থাকবো না”

“আরে বাবা খেপছো কেন? আসছি আমি”

উৎসা ফোন কেটে ব্যাগ গুছাতে শুরু করলো। যদি ও তেমন কিছুই আনেনি। টুকটাক নিত্য প্রয়োজনীয় যা এনেছে তা হ্যান্ড ব্যাগে রাখছিলো। তিয়াস মুখ খুলল এতক্ষনে।
“রাগ করছিস কেন বনু? আর এই সময়ে কোথায় যাবি? যাওয়ার দরকার নেই। আজকে থেকে যা”

উৎসা তেতে উঠে বলল,
“জাহান্নামে যাবো যাবে? রাগ করবো না তো কি তোমায় আদর করবো? আমি তোমার একটা মাত্র বোন তুমি আমার থেকে সম্পর্কের কথা লুকিয়ে গেলে। আমাকে জানালে আমি কি তোমাদের বাঁধা দিতাম নাকি অমত করতাম? তোমরা আমায় বিশ্বাস ভরসা কোনোটাই করো না। এখানে থেকে আমি কি করব? এখানে আমর কেউ নেই। সবাই পর হয়ে গেছে। এই জন্যই বলে মেয়ে বিয়ের দিলে পর হয়ে যায় এখন সেটা টের পাচ্ছি। আমার কেউ নেই এই বাড়িতে। আমি আর আসবো না এখানে”

উৎসা কণ্ঠ কাঁপছে। কান্না কান্না ভাব। মেয়েটা বড্ড কষ্ট পেয়েছে। নিজের সব চেয়ে কাছের দুজন মানুষ ওকে বিশ্বাস করেনি। ওকে জানায় নি সেই কষ্ট ওকে পীড়া দিচ্ছে। তানজিলা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। ওর বলার মতো কিছুই নেই। সত্যিই তো মেয়েটা ওকে সব কিছু শেয়ার করেছে ওর কাছ থেকে কিছুই লুকায়নি। সেখানে ও ওকে কিছুই জানায়নি। উৎসার অভিমান কষ্ট পাওয়া টা স্বাভাবিক। কিন্তু ওই বা কি করবে? তিয়াসকে প্রথম থেকে ওর ভালো লাগতো। কিন্তু কখনো বলেনি। একদিন যখন হুট্ করে কোনোদিন আয়োজন ছাড়াই তিয়াস ওকে পছন্দ কর জানালো সেদিন তানজিলা একবারও ভাবেনি। রাজি হয়ে গেছে। তারপর দুজনের মাঝে অল্প স্বল্প কথা হতো। তিয়াস অবশ্য উৎসাকে জানাতে চেয়েছিলো কিন্তু তানজিলাই চায়নি। ভেবেছিল উৎসা ওকে ভুলে বুঝবে। আস্তে ধীরে জানাবে। সেভাবে সময় হয়ে না ওঠায় আর জানায়নি। এভাবেই কেটে গেছে দিনগুলো। তানজিলা ভুলেও ভাবেনি এভাবে উৎসার কাছে ধরা পড়ে যাবে।
—————

মিনিট দশের মাঝে মেহরাব এলো। এসে উৎসাদের বাড়ির সামনে গাড়ি পার্ক করে সোজা ওপরে উৎসার রুমে চলে এলো। বউ তার এমনি ক্ষেপে আছে। আগে মেয়েটাকে শান্ত করতে হবে। মেহরাব উৎসার রুমে ঢুকে দেখলো। তিনজন রুমের তিন জায়গায় অবস্থান করছে। উৎসা বিছানায় বসে আছে। তিয়াস কাবার্ড এর সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর তানজিলা মুখটা কাচু মাচু করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মেহরাব তিনজনের এভাবে তিন জায়গায় বসে থাকার কারণ খুঁজে পেল না। উৎসার কাছে যেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“কি হয়েছে এখন বলো? হুট্ করে বাড়ি যেতে চাইছো কেন?”

উৎসা কোনো জবাব দিলো না। মেহরাব বাকি দুজনের দিকে তাকালো। তিয়াস ওকে কিছু ইশারা করছে। মেহরাব বুঝলো বন্ধুর ইশারা। উৎসা উঠে দাঁড়ালো। ব্যাগ হাতে নিয়ে বলল,
“চলুন”

“চলুন মানে? আমি তো আরো ভাবছি আজকের দিনটা এখানে থেকে যাবো। চলো আজকের দিন তুমি আমি এখানেই থেকে যাই”

উৎসা একবার মেহরাবের দিকে তাকালো। মেহরাব উৎসার চাহনি দেখে কিছুটা ভয় পেল।
“আপনি থাকুন। আমি যাচ্ছি”

উৎসা গট গট পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। উৎসা চলে যেতেই তিয়াস হুড়মুড়িয়ে এলো মেহরাবের কাছে।
“দোস্ত আমায় বাঁচা”

মেহরাব ওর দিকে চোখ ছোটো ছোটো করে বলল,
“কাহিনী কি ঘটিয়েছিস সেটা বল? তোর বোন যা রেগে আছে একা চলে যেতেও পারে। তাই তাড়াতাড়ি বল”

তিয়াস ঝট পট কাহিনী খুলে বলল। ওর কথা শুনে মেহরাব ঠেস দিয়ে বলল,
“একদম মহৎ কাজ করেছেন শা*লা থুক্কু সমন্ধি সাহেব। জানিস মেয়েটা অভিমানি আগে বলিস নি কেন? এখন রাগ সামলা। আমার একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে কয়েকদিন বউ বাপের বাড়ি আসতে চাইবে না। আমি বিন্দাস থাকবো”

তিয়াস করুণ চোখে চেয়ে বলল,
“ভাই এরকম করিস না। তুই তো ওর রাগ ভালো করেই জানিস। এরপর আমার সাথে কথা বলবে কিনা কে জানে?”

“তোরা যেটা করেছিস সেটা একদম ভালো করিস নি। তানজিলা তুমি অন্তত ওকে জানাতে পারতে”

তানজিলা মিন মিন করে বলল,
“ভেবেছিলাম ওকে জানাবো, কিন্তু সময় সুযোগ সেভাবে হচ্ছিলো না তাই জানাতে পারিনি। আপনি কিছু একটা করেন ভাইয়া”

মেহরাব রুম থেকে বের হতে হতে বলল,
“আমি দেখছি কি করা যায়”

মেহরাব বের হয়ে এলো। নিচে এসে তনয়া বেগম কে দেখলো। আশেপাশে উৎসা নেই। তনয়া বেগম কেই জিজ্ঞেস করলো,
“আম্মুর আপনার পা*গলী মেয়েটাকে দেখেছেন? মেয়েটা গেল কই?”

“এইতো মাত্র বেরিয়ে গেল। এতো করে থাকতে বললাম বলল আমরা নাকি ওর পর হয়ে গেছি। ওকে কিছুই জানাই না। তাই আর আমাদের বাড়ি আসবে না”

“একটু রেগে আছে তো তাই উল্টোপাল্টা বলে ফেলেছে। আপনি চিন্তা করবেন না। আমি ওকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিয়ে আসবোনি। এখন আসি”

“কিছু তো খেলেও না। মাত্রই তো আসলে বাবা”

মেহরাব হেসে বলল,
“সমস্যা নেই। অন্য একদিন আসবো”

মেহরাব বেরিয়ে এলো। গাড়ির কাছে এসে দেখলো ম্যাডাম গাড়িতে বসে আছে। মেহরাব আর কথা বাড়ালো না। এখন উৎসাকে সময় দেওয়া প্রয়োজন। এখন জোর করে কিছু বোঝাতে গেলে হিতে বিপরীতে হবে। পড়ে দেখা যাবে রেগে মেগে ওর সাথেও কথা বলবে না। মেহরাব কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

গাড়ি যখন একটা পার্কের পাশে এসে থামলো তখন উৎসা অবাক হলো। মেহরাব নেমে উৎসার হাত ধরে এগিয়ে গেল। উৎসা জিজ্ঞেস করে বসলো,
“আমরা হঠাৎ পার্কে এলাম কেন?”

মেহরাব ওর হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
“বউ আমার মন খারাপ করে থাকবে আর আমি সেটা বসে বসে দেখবো? কখনোই না। পার্কে ঘোরাঘুরি করলে দেখবে মন ভালো হয়ে যাবে”

উৎসা আর কথা বাড়ালো না। ওর রাগ যতোটা না হয়েছে তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছে ও। তাই কথা না বাড়িয়ে দুজন সময় টা উপভোগ করতে লাগলো। সময়ের ব্যাবধানে উৎসার মন খারাপ কিছুটা কমলো। কিছুক্ষণ ঘোরা ঘুরি করে দুজন চলে এলো।
————

রাতের আকাশে এক ফালি চাঁদ উঠেছে। উৎসা মেহরাবের ব্যালকনিতে বসে চাঁদ দেখছে। মেহরাব এখনো রুমে আসেনি। মিজান সাহেব ওকে ডেকেছে। হঠাৎ কোমরে পুরুষালি হাতের ছোঁয়া অনুভব করলো। তবে উৎসা একটুও বিচলিত হলো না। চুপচাপ শান্ত রইলো। কোনো প্রকার রিয়েক্ট করলো না। মেহরাব অবাক হলো। মেয়েটা তো এতো চুপচাপ থাকার মেয়ে না। মেহরাব ক্ষীণ কণ্ঠে জবাব দিলো,
“এখনো মন খারাপ ম্যাডাম?”

উৎসা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এই দীর্ঘশ্বাসের সাথেই যেন সকল অভিমান অভিযোগ উগরে ফেলল। অভিমান মিশ্রিত কণ্ঠে বলা শুরু করলো,
“আমার সব চেয়ে কাছের দুজন মানুষ আমার কাছ থেকে কথা লুকিয়ে গেছে। আমায় কিছু জানায়নি। আমার না বড্ড কষ্ট হচ্ছে। ওরা কেন আমায় কিছু জানালো না? আমি কি ওদের বাঁধা দিতাম? না তো! আপনি জানেন ওরা যদি আগে আমায় জানাতো আমি কতোটা খুশি হতাম? কিন্তু ওরা আমায় জানালো না, একবার জানানোর প্রয়োজন বোধ করলো না। আমায় পর করে দিলো। আমার যতোটা না ওদের ওপর রাগ হচ্ছে তার চেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে”

মেহরাব উৎসার মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো। সান্তনা দিয়ে বলল,
“আরে ওরা বুঝতে পারেনি তুমি এতটা কষ্ট পাবে। তুমি তো জানো তিয়াস তোমাকে কতোটা ভালোবাসে। এখন এসব নিয়ে মন খারাপ করে না বউ। ওরা তোমায় কষ্ট দিয়েছে তুমিও ওদের সাথে কিছুদিন কথা বলো না তাহলেই তো হলো। সমান সমান হয়ে যাবে। ওরাও বুঝুক আমার বউকে কষ্ট দিয়ে ওরা ভালো করেনি”

উৎসা একবার মেহরাবের দিকে তাকালো। মেহরাব ভয়ে আছে। মেয়েটা না আবার ওর ওপর রেগে যায়! তবে মেহরাবের ধরণা ভুল প্রমাণিত হলো। উৎসা লাফিয়ে উঠে মেহরাবের গলা জড়িয়ে ধরলো। উচ্ছিস কণ্ঠে বলল,
“এই না হলে আমার বর। আপনি একদম আমার মনের কথা বলেছেন। এখন আমিও ওদের সাথে কথা বলবো না। ওরাও বুঝুক। আপনি কি সুন্দর একটা বুদ্ধি দিলেন। এই জন্যই তো আমি আপনাকে এতো ভালোবাসি। লাভ ইউ”

উৎসা কি বলল সেটা ওর খেয়াল নেই। খুশির দাপটে বলে ফেলেছে। তবে কথাটা মেহরাব লক্ষ্য করলো। উৎসার কোমরে থাকা হাতের বাঁধন গাঢ় করে ঝুঁকলো ওর দিকে। ফিসফিস করে বলল,
“মাত্র কি বললে?”

উৎসা থত মত খেয়ে গেল। তোতলানো স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
“কি বলেছি?”

“তুমি আমায় ভালোবাসো?”

উৎসা সহসা কোনো জবাবও দিতে পারলো না। চুপ মেরে গেল। মেহরাব উৎসার চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করলো,
“আর ইউ শিওর মিসেস মেহরাব?”

উৎসা তোতলানো স্বরে বলল,
“মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেছে”

“যাও এবারের মতো ছেড়ে দিলাম”

মেহরাব উৎসার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
“যতো যাই হোক কখনো মন খারাপ করে থাকবে না। তোমাকে মন খারাপে মানায় না মেয়ে। তোমাকে হাসি মুখেই মানায়। তোমাকে মানায় ঝগড়ায়, তেজি কণ্ঠে মানায়। তুমি কি জানো তোমার মন খারাপ কাউকে বড্ড বাজে ভাবে আঘাত করে? তোমার মুখ ভার হলে তার পুরো দুনিয়া আঁধার হয়ে আসে। তার বুকে অসহ্য যন্ত্রনা হয়। মনে হয় কেউ তার বুকে পাথর চাপিয়ে দিয়েছে। তাই তার ভালোর জন্য হলেও তোমার হাসি মুখটা দরকার”

উৎসা মন দিয়ে শুনলো মেহরাবের কথা গুলো। মানুষটা যে নিজের কথা বলছে এটা বুঝতে উৎসার একটুও সময় লাগলো না। মেহরাব পুনরায় বলল,
“তাহলে আর কখনো মুখ ভার করে থাকবে না”

উৎসা মাথা নেড়ে সায় জানালো। মেহরাব আলতো করে এগিয়ে গিয়ে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলো উৎসার কপালে। মিনিটের ব্যাবধানে উৎসার সকল অভিমান সরে গিয়ে মুখে ভর করলো লাজুকতা। মেহরাব মুগ্ধ চোখে তাকালো প্রেয়সীর লাজুক বদনে। মেয়েটার খুশিতেই তো ওর খুশি।

#চলবে?