অপ্রিয় তুমি পর্ব-২৬+২৭

0
87

#অপ্রিয়_তুমি
#পর্ব২৬
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। বয়ে চলে নিজ গতিতে। সময়ের স্রোতে কেটে গেছে সপ্তাহ খানেক সময়। এই সপ্তাহ খানেকের মাঝে উৎসার সাথে তিয়াস কিংবা তানজিলা কারোই কথা হয়নি। ওরা অবশ্য বেশ কয়েক বার কল দিয়েছে কিন্তু উৎসা ইচ্ছে করেই কল রিসিভ করেনি। ওরাও বুঝুক কাছের মানুষের থেকে ইগনোর পাওয়ার কষ্ট। এই কয়েক দিনে উৎসা আর মেহরাবের সম্পর্কের বেশ উন্নতি হয়েছে। উৎসা এখন একটু এদিক থেকে সেদিক হলেই মেহরাব কে চোখে হারাচ্ছে। এর নির্দিষ্ট কারণ ওর জানা নেই। তবে কেবল জানে মানুষটা ওর আশেপাশে না থাকলে কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। হাঁসফাঁস অনুভূতি হয়। সব আছে তাও কি যেন নেই নেই ভাব। দিনের বেশির ভাগ সময়ই উৎসার রিনির সাথে থেকেই কেটে যায়। মেয়েটা আগের চেয়ে বেশি অসুস্থ হয়ে গিয়েছে। খেতে পারেনা ঠিক মতো, ঘুম ও হয়না। আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তন হয়েছে তাই উৎসা যতটা পারে ওকে সময় দেয়। উৎসার সান্নিধ্যে রিনির ও কিছটা ভালো লাগা কাজ করে।

উৎসা বসে আছে নিজের রুমের ব্যালকনিতে। মেহরাব বাড়ি নেই। সকাল সকাল অফিসে গিয়েছে। ফিরবে রাতে। রিনি অসুস্থ থাকায় ঘুমাচ্ছে। তাই উৎসা একা একাই ব্যালকনিতে বসে আছে। মাথায় ঘুরছে জীবনের সমীকরণ। হুট্ করে জীবনটা কিভাবে পাল্টে গেল। অযাচিত, অপ্রিয় মানুষটা উৎসার জীবনে প্রবেশ করলো। আর এখন সময়ের ব্যাবধানে মানুষটার রাজত্ব চলছে উৎসার জীবন জুড়ে। তাকে ছাড়া ইদানিং উৎসার চলেই না। আর একটা সময় কিনা এই মানুষটাকে উৎসা দু চোখে সহ্য করতে পারতো না। দেখা হলেই দুজন সাপ আর বেজির মতো চোখে চোখে ঝগড়া করতো। সেসব মন করে উৎসা একা একাই হেসে উঠলো। উৎসা যখন অতীত বিচরণ করতে ব্যাস্ত এমন সময় পাশে থাকা ফোন বেজে উঠলো। উৎসা ভাবনায় ব্যাঘাত। ঘটায় চোখ মুখ কুঁচকে ফেলল। কি সুন্দর অতীত বিচরণ করছিলো! ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো তানজিলা কল করেছে। বিগত দিনে মেয়েটা অনেক বার কল করেছে তবে উৎসা ধরেনি। ইচ্ছে করেই ধরেনি। ধরবে না, ধরবে না করেও রিসিভ করে বসলো। রিসিভ করে চুপই রইলো। কোনো কথা বলল না। উৎসার সারা শব্দ না পেয়ে ওপাশ থেকে তানজিলাই বলে উঠলো,
“কিরে কেমন আছিস?”

উৎসা সহসা জবাব দিলো না। রয়ে সয়ে মুখটা গম্ভীর করে বলল,
“আমি কেমন আছি সেটা দিয়ে তোর কি দরকার? তু্ই আমাকে ফ্রেন্ড ভাবিস নাকি যে আমার জন্য তোর টেনশন হবে?”

তানজিলা মুখটা কাচু মাচু করে বলল,
“সরি ইয়ার! সত্যি আমি চেয়েছিলাম তোকে জানাতে কিন্তু সাহস হয়ে ওঠে নি। তু্ই যদি আমায় ভুল বুঝিস সেই ভেবে বলতে পারিনি। ভুল হয়ে গেছে। এবারের মতো মাফ করে দে”

“সাহস হয়নি? নাটক করার জায়গা পাশ না? লুকিয়ে লুকিয়ে আমার ভাইয়ের সাথে প্রেম করে যেতে পেরেছো আর আমাকে বলার সাহস হয়নি? ঢং কম কর, নাহয় কানের নিচে দুটো দিবো দেখবি ভবিষ্যতে জামাইয়ের মুখে কথা শোনার আগেই বয়রা হয়ে যাবি। তোর সাথে আমার কথা নেই ফোন কাট”

তানজিলা কল কাটলো না। দুজন ফোনের দুপাশে চুপ। কেউ কোনো কথা বলছে না। তানজিলা এবার কিছুটা ইমোশনাল হলো। কাঁদো কাঁদো ভাব করে বলল,
“তুই কি সত্যি আর আমার সাথে কথা বলবি না”

উৎসা কোনোদিন জবাব দিলো না। চুপ করেই রইলো। তানজিলা এবার বলল,
“তুই আমাকে যা শাস্তি দিবি দে তাও চুপ করে থাকিস না প্লিজ। তু্ই তো জানিস, তুই ছাড়া আমার কেউ নেই। তু্ই আমাকে যা করতে বলবি আমি তাই করবো তাও আমার সাথে কথা বল, প্লিজ”

ফট করে উৎসা জবাব দিল,
“যা বলবো তাই করবি?”

তানজিলা উৎসার হুট্ করে জবাব দেওয়ায় হতোচকিয়ে গেল। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
“হ্যাঁ”

উৎসার মাথায় দুস্টু বুদ্ধি নাড়া দিয়ে উঠলো। ও এতক্ষন এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো। ওকে না জানিয়ে প্রেম করা তাই না? দুজন কে যদি চোখের জলে, নাকের জলে না করেছে তাহলে ওর নাম উৎসা না। মুখটা গম্ভীর করে বলল,
“তু্ই ভাইয়ার সাথে ব্রেকাপ করে ফেল”

তানজিলা চুপ করে গেল। উৎসা আগে থেকেই জানতো এমন কিছুই হবে।
“কিরে কিছু বলছিস না কেন? একটু আগে তো বড় বড় কথা বলছিলি আমি যা বলবো তাই করবি এখন সব হাওয়া হয়ে গেল?”

তানজিলা মুখ খুলল। মিন মিনে কণ্ঠে বলল,
“এটা ছাড়া অন্য কিছু বলা যায় না?”

উৎসার দৃঢ় কণ্ঠ,
“উহু, পারলে বল। নাহয় আমাদের ফ্রেন্ডশীপ এখানেই শেষ”

তানজিলা কিছু বলছে না। উৎসা মনে মনে হেসে কুটি কুটি হয়ে যাচ্ছে। বেচারিকে বেশ ভালোই জব্দ করতে পেরেছে। তানজিলা কোনো জবাব দিচ্ছে না। উৎসা গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“আমি জানি তু্ই পারবি না। ঠিক আছে রাখছি, ভালো থাকিস”

তানজিলা হুড়মুড় করে জবাব দিলো,
“কল কাটিস না প্লিজ”

“পারবি কিনা সেটা বল”

তানজিলা বুকে পাথর চেপে বলল,
“পারবো। আমার জীবনে আগে তু্ই এসেছিস, তার অনেক পর তিয়াস ভাই। তু্ই যা বলবি তাই হবে। আমি তোর ভাইয়ের সাথে ব্রেকাপ করে ফেলবো”

“শুধু ব্রেকাপ করলে হবে না, তু্ই ভাইয়ার সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগ করতে পারবি না”

তানজিলা বুকে পাথর চাপা দিয়ে বলল,
“ঠিক আছে”

দুজন বেশ অনেকটা সময় কথা বলল। একজন কে শায়েস্তা করতে পেরে উৎসার মন এখন অনেকটাই ফুরফুরা হয়ে গেছে। এখন আরেকজন কে শায়েস্তা করার পালা। উৎসা মনে মনে ফন্দি এটে ফেলল। মনে মনে বলল,
“তোমাদের দুটোকে যদি নাকের জলে চোখের জল না করেছি তাহলে আমার নাম ও উৎসা না, হুহ!”

মুহূর্তেই হেসে কুটি কুটি হয়ে গেল উৎসা ফোন করলো মেহরাব কে। প্ল্যান টা কাউকে না বলতে শান্তি পাবে না। কেন না বর মশাই কেই বলা যাক! যেই ভাবা সেই কাজ। দুই বার রিং হতেই ওপাশ থেকে মেহরাব রিসিভ করলো। উৎসা ধমকে উঠে বলল,
“আরে মশাই ফোন তুলতে এতক্ষন লাগে? কতক্ষন হয়েছে ফোন দিয়েছি, রিসিভ করার নামই নেই”

মেহরাব বিস্মিত হয়ে গেল। মেয়েটা ফোন দিলোই তো মাত্র! কতক্ষন হলো কিভাবে? বিস্ময় ভাব কাটিয়ে বলল,
“দেরি কোথায় করলাম? দুবার রিং হওয়ার মাথায়ই তো রিসিভ করলাম”

“দুই বার আপনার কাছে কিছু মনে হচ্ছে না! দুই দুইবার”

“হুম, তো?”

“যাই হোক বাদ দিন তো! এখন ঝগড়া করার মুড নেই। মূল কথায় আসি। শুনুন আমি একটা জবরদস্ত প্ল্যান করেছি। আপনাকে কিন্তু আমার সাথে থাকতে হবে”

“কি প্ল্যান করলে সেটা তো আগে বলো। থাকব না থাকবো সেটা পরের বিষয়”

“কোনো বাহানা চলবে না। আপনাকে আমার সাথে থাকতেই হবে”

“ঠিক আছে, থাকবো। এখন বলবে তো কি প্ল্যান করলে?”

উৎসা মেহরাব কে একে একে সব কিছু খুলে বলল। মেহরাবের মাথায় হাত। মেয়েটা এই ফন্দি এটে বসে আছে? তিয়াস আর তানজিলার কি অবস্থা হবে কে জানে? বেচারা বন্ধুর জন্য মেহরাবের মন কেঁদে উঠলো। উৎসা কথা শেষ করে বলল,
“আপনি কিন্তু ভাইয়াকে কিছু বলতে পারবেন না”

“ঠিক আছে বলবো না। কিন্তু?”

“কিন্তু? কিন্তু কি?”

“এগুলো কি করা ঠিক হবে? দুজন কষ্ট পাবে তো”

উৎসা তেতে উঠে বলল,
“ওরা যে আপনার বউকে কষ্ট দিলো তার বেলায় কিছু না? বন্ধুর জন্য এখন দরদ উতলে পড়ছে?”

“আরে তুমি উল্টো বুঝছো। আমি সেটা বোঝাই নি। শাস্তি দিবে ভালো কথা তাই বলে এতটা?”

“অবশ্যই? এতো টুকু তো দরকার। এরপর আমায় না জানিয়ে কিছু করতে গেলেও যেন দশ বার ভাবে সেই ব্যাবস্থা করব। ভালো হবে না বলুন?”

মেহরাব মুখে মেকি হাসি ফুটিয়ে তুলে বলল,
“হ্যাঁ! ভালো মানে ভালো? বেশ ভালো হবে। দেখতে হবে না বউটা কার?”

প্রশংসা পেয়ে নিজেকে বাহ্ বাহ্ দিতে ভুললো না। খুশিতে যেন আটখানা হয়ে উঠলো উৎসা। অপর দিকে মেহরাব ভাবছে তিয়াসের কথা। বেচারার কি হবে কে জানে?
————

মাঝে কেটে গেল দুটো দিন। উৎসা বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে। গুন গুন করে গান গাইছে। আর মনের সুখে দোলনায় বসে দোল খাচ্ছে। উৎসার কোমর সম উন্মুক্ত কেশ গুচ্ছ হাওয়ার তালে তালে দুলছে। ওড়নার কোণ উড়ে বেড়াচ্ছে হাওয়ার স্রোতে। উৎসা মনের সুখে দোল খাচ্ছে সেটা যেন কারো সহ্য হলো না। পাশে রাখা ফোন খানা নিজস্ব উদ্যোমে বেজে উঠলো। উৎসা ফোন হাতে নিয়ে দেখলো তানজিলার ফোন। এই সময় মেয়েটার ফোন দেখে উৎসা অবাক হলো। তবে সেই ভাব প্রকাশ না করে রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে তানজিলা হন্ত দন্ত হয় বলল,
“এতক্ষনে লাগে ফোন রিসিভ করতে? কই থাকিস? ঘোড়ার ঘাস কাটছিলি নাকি?”

উৎসা ফুরফুরে মেজাজে বলল,
“তু্ই যদি ঘোড়া হস তাহলে কাটতেই পাড়ি। আমার কোনো সমস্যা নেই”

তানজিলা কন্ঠে সিরিয়াস ভাব এনে বলল,
“দেখ দোস্ত আমি কিন্তু মজার মুডে নেই। তু্ই জানিস কি হয়েছে?”

“কি হয়েছে?”

“আব্বু তার বন্ধুর ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে। আগামী কাল নাকি তারা আমায় দেখতে আসবে। আমায় পছন্দ হলে কালই আংটি পড়িয়ে যাবে”

“এটা তো ভালো খবর। আগে বলবি না? আমার একমাত্র বান্ধবীর বিয়ে বলে কথা আমার কতো দায়িত্ব। কতো কেনা কাঁটা করতে হবে”

“উৎসা আমি ফাইজলামি করছি না। আই এম সিরিয়াস”

উৎসা অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
“তোর কি মনে হচ্ছে আমি মজা করছি? একদই না”

তানজিলা এবার কণ্ঠ নরম করে বলল,
“আমি এই বিয়ে করতে পারবো না”

“কেন পারবি না? এমন তো না যে তোর বয়ফ্রেন্ড আছে তু্ই তাকে ছাড়া বাঁচবি না। তাহলে সমস্যা কোথায়?”

“তু্ই জেনেও এমন করছিস কেন ইয়ার?”

“জানি, তো! আগে তোর একটা প্রেম ছিলো, এখন আর নেই। বান্ধবীর জন্য তু্ই তোর প্রেম কুরবানী দিয়ে ব্রেকাপ করে ফেলেছিস। তোর নাম তো ইতিহাসের পাতায় লেখা দরকার। এমন বন্ধবী কয়েকজন পায় বল?”

তানজিলা কিছু বলল না। উৎসা উৎসাহিত কণ্ঠে বলল,
“এখন ফোন রাখ আমার অনেক কাজ আছে। সামনে বান্ধবীর বিয়ে বলে কথা। কতো কাজ আমার”

তানজিলা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উৎসা কল কেটে দিলো। ওদিকে হতোভম্ব হয়ে বসে রইলো তানজিলা। মেয়েটাকে ফোন দিলো কি করতে আর হলো কি? এখন ও কি করবে? প্রাণ প্ৰিয় বান্ধবী কে কথা দিয়েছে তাই এখন তিয়াসকে ও কিছু জানাতে পারবে না। সেদিনের পর থেকে তিয়াসের সাথে তানজিলার যোগাযোগ হয়নি। তানজিলার মাথা ধরে আসছে। তাহলে কি সত্যিক বাবার বন্ধুর ছেলের সাথে বিয়েটা হয়ে যাবে? তিয়াস ভাই তার হবে না?
————
উৎসাদের ড্রয়িং রুমে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে মেহরাব। ওর সামনে মুখটা কাচু মাচু করে বসে আছে তিয়াস। উৎসা নিজের রুমে গেছে। তিয়াসের টেনশন হচ্ছে। টেনশনের তোপে বেচারা ঘামছে। মেহরাব ওকে খোঁচা দিয়ে বলল,
“কিরে এমন ফুরফুরা আবহাওয়ায় তোর মুখটা এমন শুকিয়ে আছে কেন? কোথায় তোর জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছি, তুই মাঞ্জা মারা সাজ দিবি তা না করে মেয়েদের মতো কান্না কাটি করছিস”

“নিকুচি করেছি মেয়ে দেখতে যাওয়ার। তুই না আমার ভালো বন্ধু? দোস্ত তু্ই কিছু একটা কর। কোনো মতে তু্ই বাবাকে ম্যানেজ কর। তু্ই তো জানিস আমি তানজিলা কে কতোটা ভালোবাসি। ওকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না। সেদিনের পর থেকে মেয়েটা আমার সাথে কথাও বলছে না। তু্ই একটু বাবাকে বোঝা প্লিজ”

মেহরাব হাই তোলার ভঙ্গি করে বলল,
“আমি পারবো না। আমি যদি কিছু বলতে যাই তাহলে তোর বোন আমার খবর করে ছাড়বে। তার চেয়ে ভালো বাবা যাকে পছন্দ করেছে তাকে বিয়ে করে ফেল, বিয়ের আগে মানুষের দু চারটা প্রেম থাকে ওটা কোনো ব্যাপার না”

তিয়াস তেতে উঠে বলল,
“নিজেফ বেলায় ষোলো আনা, আমার বেলায় চার আনা? তু্ই বন্ধু নামের কলঙ্ক হা*রা*মি”

মেহরাব তিয়াসের কথা গায়েও মাখলো না। এর মাঝেই বেরিয়ে এলো উৎসা, উজ্জ্বল সাহেব, তনয়া বেগম। উজ্জ্বল তাড়া দিয়ে বলল,
“তাহলে যাওয়া যাক”

তিয়াস মিনিমিনে গলায় বলল,
“বাবা বলছিলাম কি আরেকবার ভেবে দেখা যায় না?”

উজ্জ্বল সাহেব ছেলের দিকে তাকালো। তিয়াসের কথার মানে তিনি বুঝতে পারেন নি।
“মানে?”

পাশ থেকে উৎসা ফট করে বলে ফেলল,
“বাবা আসলে ভাইয়া চাচ্ছে মেয়ে পছন্দ হলে একে বারে আংটি পড়িয়ে আসবে। ভালো হবে না বলো?”

উজ্জ্বল সাহেব হেসে উঠলো। বলল,
“এই ব্যাপার? সমস্যা নেই তাদের সাথে আমার কথা বলা আছে। মেয়ে আমাদের পছন্দ হলে আজই আংটি পড়িয়ে আসবো। তোকে এই নিয়ে ভাবতে হবে না”

তিয়াস চোখ গরম করে তাকালো উৎসার দিকে। উৎসা সেদিকে পাত্তাও দিলো না। মুখ ভেংচি কেটে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। সবাই বেরিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। তিয়াস পড়েছে মাইনকার চিপায়। না বাবাকে কিছু বলতে পারছে আর না এসব মেনে নিতে পারছে। গতকাল রাতে হুট্ করে খাওয়ার টেবিলে উজ্জ্বল সাহেব জানায় তার এক বন্ধুর মেয়েকে দেখতে যাওয়ার কথা। তিয়াস বিষয়টা হাল্কা ভাবেই নিয়েছে। অপর দিকে বাবাকে যে তানজিলার কথা বলবে সেই সুযোগ ও পায়নি। মেয়েটা ওর ফোন ধরছে না, আর না কোনো টেক্সট এর রিপ্লাই দিচ্ছে। তিয়াস কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। তাহলে কি আজকে বাবার বন্ধুর মেয়ের সাথেই তিয়াসের আংটি বদল হয়ে যাবে? তানজিলা নামক রমণী কে আর নিজের করে পাওয়া হবে না তিয়াসের? তিয়াসের ভাবনার মাঝে গাড়ি এসে থামলো একটা বাড়ির সামনে।

#চলবে?

#অপ্রিয়_তুমি
#পর্ব২৭
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

নিস্তব্ধতা, গুমোট, থমথমে পরিবেশ। কারো মুখে কোনো রা নেই। সবাই উদগ্রীব হয়ে তাকিয়ে আছে সামনে বসা দুজন মানব মানবীর পানে। দুজনের মুখেই লেগে আছে বিস্ময় ভাব। দুজনের কেউ যেন বর্তমান পরিস্থিতি বুঝে উঠতে পারছে না। আর না এমন পরিস্থিতি আশা করেছে। দুজন হতোভম্ব হয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। ওদের অবস্থা দেখে সবাই মিটিমিটি হাসছে। উৎসা শেষ মেষ হাসি আটকাতে না পেরে ফিক করে হেসেই দিলো। ওর হাসির শব্দে ঘরময় সবাই হেসে শব্দ করে হেসে দিলো। হাসির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠলো তানজিলাদের ড্রয়িং রুম। দুজনের হতোভম্ব ভাব সবার হাসির শব্দে ভাঙলো। লজ্জায় মুড়িয়ে গেল মানবী বদন। লজ্জা পেলেও ঠোঁটের কোণে ভর করলো খুশির ঝলক। দুজনের কেউ যে উক্ত ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলো না সেটা দুজনের মুখের ভাব ভিঙ্গিমা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তবে ওদের দুজন কে চমকে দিতে পেরে সবার ঠোঁটের কোণে হাসি ঠাই পেয়েছে। সবার মাঝে উৎসার আনন্দ যেন একটু বেশিই। এই সব কীর্তি কলাপ যে ওরই সাজানো। ভাইকে আর বান্ধবী কে নাকের জলে চোখের জলে করার পরিকল্পনা অবশেষে সফল হয়েছে। বেচারা তিয়াস পারে না কান্না করে দেয়।

এইতো একটু আগের ঘটনা। উৎসারা এসে পৌঁছেছে তানজিলাদের বাড়ির সামনে। তিয়াস মেজাজ খারাপ করে গাড়ি থেকে নেমে এলো। ওর বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই ভিতরে যাওয়ার। ইচ্ছে করছে এক ছুটে পালিয়ে যেতে। ওর মন মেজাজ সম্পূর্ণ রুপে এক রমণীতে মত্ত হয়ে আছে। বেচারা পারছে না এক দৌড়ে প্ৰিয়তমার কাছে ছুটে যেতে। গাড়িতে বসে ও মেয়েটার নাম্বারে বার কয়েক ডায়াল করেছে। তবে ফলাফল আগের ন্যায় যেই সেই। মেয়েটা ওর নাম্বার ব্লক লিস্টে ফেলেছে। তিয়াস নিজের কোনো দোষ ত্রুটি খুঁজে পেল না। হুট্ করে এভাবে যোগাযোগ বন্ধ করার কারণ কি? কিছু হলে তো বলবে? তা না করে হুট্ করে ব্লক করে দেওয়া কোন ধরণের আচরণ? একে তো বাবার পছন্দ করা মেয়ের সাথে এক প্রকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে অপর দিকে প্ৰিয়তমার আচমকা বদল সব মিলিয়ে মেজাজ খারাপ সাথে টেনশনে থাকায় তিয়াস ভালো করে কিছুই লক্ষ্য করেনি। এটা যে তানজিলাদের বাড়ি সেটাও খেয়াল করেনি বেচারা। যদিও তিয়াস এর আগে তানজিলদের বাড়ি তেমন ভাবে আসেনি। গলির মোড়ে এসে দুবার তানজিলাকে দিয়ে গেছে। আজ টেনশনে থাকায় আশেপাশে কিছুই লক্ষ্য করেনি। এদিক দিয়ে উৎসার ভালোই হয়েছে। ও তো ভেবেছিল এই বুঝি তিয়াস বুঝে ফেলল। কিন্তু শেষ মেষ যে ওর প্ল্যান সফল হবে ভাবেনি।

তানজিলাদের বাড়ির সামনে এসে নামলে, তানজিলার বাবা এসে সবাইকে সাদরে ভিতরে নিয়ে আসেন। ড্রয়িং রুমে আলাহী আয়োজন করা হয়েছে। আগেই বলা আছে আজ ছেলে মেয়ের আংটি বদল করা হবে। সেই মতেই আয়োজন করা হয়েছে। সবাই যার যার মতো বসেছে। উৎসা তাদের মাঝ থেকে উঠে তানজিলার রুমের দিকে হাঁটা দিলো। মেয়েটাকে আরেকটু জ্বালিয়ে আসা যাক! যেই ভাবা সেই কাজ। তানজিলার রুমের সামনে এসে কোনো প্রকার নক না করে দরজা খুলে ফেলল।

বিছানার এক কোণে বসে ফুঁপিয়ে কান্না করছে তানজিলা। মেয়েটা বরাবরই একটু চুপচাপ শান্ত স্বভাবের। উৎসার বেশ খারাপ লাগলো। প্রাণ প্ৰিয় বান্ধবীর কান্না সহ্য হলো না। যতোই শাস্তি দিবে ভাবুক বেস্ট ফ্রেন্ড হয় তো! উৎসা মনে মনে নিজেকে দুটো গালি দিতে ভুলল না। এটা একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেল বোধ হয়। উৎসা নিজেই নিজেকে বোঝলো,
“উৎসা ভালো কিছু করার জন্য একটু আধটু কান্না করলে কিছু হয়না”

এগিয়ে গেল তানজিলার দিকে। মেয়েটা যেভাবে কান্না করে যাচ্ছে এভাবে কান্না করলে তো সব সাজ ধুয়ে মুছে উঠে যাবে। তানজিলার পরনে মিষ্টি কালারের শাড়ি। শাড়িতে মেয়েটাকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। উৎসা মনে মনে ফন্দি এটে ফেলল।তানজিলর কান্না থামানোর সাথে ওকে একটু ক্ষেপানোর। যেই ভাবনা সেই কাজ। তানজিলা যখন কান্নায় ব্যাস্ত তখন উৎসা ওর পাশে বসলো। ঢং করে বলল,
“বান্ধবী তু্ই এখানে যার জন্য কান্না করছিস সে তো দিব্যি তোকে ভুলে বাবার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেছে। আর তু্ই কতো বোকা দেখ, এখনো তার বিরহে কান্না করছিস”

পাশ থেকে পরিচিত কণ্ঠ পেয়ে পাশ ফিরে তাকালো তানজিলা। সময় নিয়ে উৎসার বলা কথা গুলোর মানে বোঝার চেষ্টা করলো। মানে বুঝতে পেরে ওর কান্না থেমে গেল। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকালো। উৎসা তানজিলা কে আশ্বাস দিয়ে বলল,
“আমি যেটা বলছি সেটাই সত্যি। ভাইয়া আব্বুর পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেছে। আর তু্ই কিনা তার জন্য চোখের পানি ফেলছিস? তোর জন্য আমার কষ্ট হচ্ছে জানু”

তানজিলা উঠে দাঁড়ালো। কোমরে হাত গুঁজে জিজ্ঞেস করলো,
“তু্ই ঠিক বলছিস তো?”

“হ্যাঁ”

“ওনার এতো বড় সাহস? আমি দুদিন কি কথা বলিনি তাই উনি অন্য মেয়ে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেছে? তোর ভাইকে বলে দিস তার আগে আমি বাবার পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করবো। আর তোর ভাইকে দেখিয়ে দিবো”

তানজিলার অবস্থা দেখে উৎসা মনে মনে হেসেই লুটোপুটি খাচ্ছে। যেই ডোজ দিয়েছে তানজিলা এখন বেশ কিছুক্ষন রেগে মেগে ফায়ার হয়ে থাকবে। হুট্ করে তানজিলা জিজ্ঞেস করে বসলো,
“কিন্তু তু্ই এখানে কি করছিস? তোকে তো আমি আসতে বলিনি? আর না তুই জানিস আজ আমাকে দেখতে আসবে”

উৎসা থতমত খেয়ে গেল। তবে তানজিলা কে তা বুঝতে দিলো না। মুখের ভাব ভঙ্গি স্বাভাবিক রেখে বলল,
“তু্ই বলিসনি তো কি হয়েছে? আন্টি আমাকে আসতে বলেছে। তোর তো কোনো বোন নেই। আমি যেন তোর সাথে থাকি তাই আসতে বলেছে। আর আমি তোর একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড না? আমি যদি না আসি তাহলে হবে কি করে?”

এর মাঝে নিচ থেকে ডাক পড়লো তানজিলাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। উৎসা তানজিলার মাথায় কাপড় দিয়ে এনে বসালো সবার মাঝে। তানজিলা একবার ও মাথা তুলে তাকালো না। ও ব্যাস্ত তিয়াস কে বকতে। লোকটার এতো সাহস? ও ব্লক করার দুদিনের মাথায় অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হয় গেল? ও না হয় বন্ধবীর জন্য ব্লক করেছে তাকে, কিন্তু সে তো চাইলেই পারতো এসে দেখা করতে বা কোনো না কোনো ভাবে যোগাযোগ করতে। কিন্তু করেনি! উল্টো বাবার পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেছে। ইতর লোক একটা!তানজিলার ইচ্ছে করলো লোকটার মাথা ফাটিয়ে দিতে। এই মুহূর্তে লোকটাকে সামনে পেলে সেটাই করতো।

তানজিলা যখন মনে মনে তিয়াসকে বকতে ব্যাস্ত সেই সময় তনয়া বেগম বলে উঠলেন,
“ভাই সাহেব আপনার মেয়েকে আমাদের পছন্দ হয়েছে। যদিও তানজিলা মাকে আমার আগে থেকে বেশ পছন্দ ছিলো। তাই যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি আপনার মেয়েকে আমার বাড়ির মেয়ে করে নিয়ে যেতে চাই। এতে আপনার কি মতামত?”

অতি পরিচিত কণ্ঠ পেয়ে তানজিলা মাথা তুলে তাকালো। তিয়াস মাথা নিচু করে বসে ছিলো। দেখবে না বাবার পছন্দ করা মেয়েকে। কিন্তু মায়ের মুখে প্ৰিয়তমার নাম শুনে ফট করে তাকালো। ও কি কানে ভুল শুনলো? নাকি সত্যি? দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে যেন হতবাক হয়ে গেল। ওদের এভাবে তাকাতে দেখে বাকিরা বেশ মজা পেল। সবাই হেসে ফেলল দুজনের কাণ্ডে।

সবার হাসির শব্দে তানজিলা তিয়াস দুজনের হতোভম্ভ ভাব কেটে গেল। সবার মাঝ থেকে উজ্জ্বল সাহেব গলা খাকারি দিয়ে বলে উঠলেন,
“তাহলে ভাইজান আংটি বদল টা হয়ে যাক? কি বলেন আপনি?”

তোফাজ্জল সাহেব বললেন,
“ছেলে মেয়ে রাজি থাকলে আমার কোনো সমস্যা নাই”

মাঝ থেকে উৎসা বলে উঠলো,
“আব্বু আমার মনে হচ্ছে ওরা দুজনের কেউ রাজি না। আংটি বদল টা থাক। আমরা ভাইয়ার জন্য অন্য মেয়ে দেখবো”

তিয়াস ফট করে তাকালো বোনের দিকে। এই সব যে তার বোনের কাণ্ড এতক্ষনে ওর বুঝতে একটুও কষ্ট হয়নি। বোন তার এক নাম্বারের বিচ্ছু হয়েছে। উৎসার পাশে বসা মেহরাব বলল,
“বেচারা বেচারিকে অনেক তো জ্বালিয়েছো এখন আর না। পরে দেখা যাবে দুজন কেঁদে দিবে”

মেহরাবের কথায় আরেক দফা হাসির রোল পড়লো। লজ্জায় পড়লো তানজিলা। একটু আগেও কেঁদে কেটে এসেছে মেয়েটা। মেহরাব তাহলে সেটা লক্ষ্য করেছে। দুই পরিবারের মতামত নিয়ে দুজনের আংটি বদল অবশেষ হয়েই গেল।

আংটি পড়ানো হলে তানজিলা, তিয়াস, উৎসা, মেহরাব চলে এলো ছাদে। নিচে বড়রা বিয়ের ফাইনাল কথা বার্তা বলছে। ছাদে পা রাখতেই তানজিলা দুম করে কিল বসিয়ে দিলো উৎসার পিঠে। বেচারি উৎসা হটাৎ এমন আক্রমণের কারণ খুঁজে পেল না। তানজিলা বেশ জোরেই দিয়েছে কিল। উৎসা পিঠ ডলতে ডলতে বলল,
“পে*ত্নী এতো জোরে কেউ মারে? পিঠটা জ্বলে গেল”

“জ্বলার জন্যই দিয়েছি। আদর করে দেই নি যে তোর ভালো লাগবে? তোকে তো আমার আরো কয়েক ঘা দিতে ইচ্ছে করছে। হারামি তু্ই জানিস আমি কি অবস্থায় ছিলাম? কতো কষ্ট হচ্ছিলো আমার?”

উৎসা মাঝে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“তোমার কষ্ট, কষ্ট? আর আমার টা ছেলে খেলা? দুজন যখন আমায় না জানিয়ে প্রেম করেছো সেই বেলায়? আমার বুঝি কষ্ট লাগেনি?”

“লেগেছে, তাই জন্য তো সরি বলেছি”

“সরি বললেই কি সব কিছুর সমাধান হয়ে যায় নাকি? তোরা আমায় কষ্ট দিয়েছিস, কাঁদিয়েছিস এই জন্য আমিও তোদের একটু খেল দেখালাম। ব্যাস! সমান, সমান”

“তাই বলে এভাবে?”

“অবশ্যই”

পিছন থেকে তিয়াস আসে টোকা দিলো উৎসার মাথায়। উৎসা তেতে উঠলো। সবাই পেয়েছে কি? একটু আগে বান্ধবী মারলো আর এখন ভাই? ক্ষেপে গিয়ে বলল,
“এই তোমরা দুজন আমাকে কি সরকারি জিনিস পেয়েছো? যে পারছো মে’রে যাচ্ছ! এমন করলে কিন্তু আমি যেভাবে বাবাকে রাজি করিয়ে তোমাদের বিয়ে ঠিক করেছি ঠিক সেভাবেই বিয়ে ভেঙ্গে দিবো বলে দিলাম”

তিয়াস ভয় পাওয়ার ভান করে বলল,
“আপা আপনার কথা শুনে তো আমি এখনই কান্না করে দিবো ভাবছি”

উৎসা ভাব নিয়ে বলল,
“কান্না তো করেই দিচ্ছিলে। আমি দেখিনি ভেবেছো? গাড়িতে বসে পারোনা কেঁদেই দেও”

তিয়াস উৎসার কথা পাত্তা দিল না। বুকে হাত গুঁজে দাঁড়ালো। ওর পাশে মেহরাব। বুকে হাত গুঁজে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“এই বদ বুদ্ধিটা কার?”

উৎসা পাশে দাঁড়ানো মেহরাবের দিকে তাকালো। তিয়াস ওর দৃষ্টি অনুযায়ী মেহরাবের দিকে তাকালো। দুই ভাই বোনের দৃষ্টি নিজের ওপর টের পেতেই মেহরাব নড়ে চড়ে দাঁড়ালো। মুখ টা গম্ভীর করে বলল,
“এই বুদ্ধি কিন্তু আমার না। আমি কেবল তোর বোনকে বলেছি, ওরা তোমায় কষ্ট দিয়েছে তুমি ও ওদের কষ্ট দেও তাহলে সমান সমান। বাকি যা করার সব তোর বিচ্ছু বোন করেছে। আমি কিছু জানি না”

উৎসা দাঁত কেলিয়ে হাসলো। তিয়াস ক্ষুদ্ধ হয়ে বলল,
“তু্ই বন্ধু না শত্রু? তোর চেয়ে শত্রু ভালো ছিলো। কোথায় বন্ধুকে সাহায্য করবি তা না করে বউয়ের সাথে তালে তালে দিয়ে বন্ধুকে কাঁদালি? এই তোর বন্ধুত্ব?”

“তোরা আমার বউকে না জানিয়ে কষ্ট দিয়েছিস সেই বেলায়? তোদের জন্য আমার বউ কষ্ট পেয়েছে। তাই তোদের এতটুকু কষ্ট দেওয়া দরকার ছিলো?”

তিয়াস হাত তালি দিয়ে বলল,
“বাহ্! বন্ধু বাহ্! এখন বন্ধুর চেয়ে বউ বেশি হয়ে গেল?”

“অবশ্যই! আগে বউ, তারপর বাকি দুনিয়া”

তিয়াস বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। এই ছিলো তার বন্ধুর মনে? এই বন্ধুর জন্য কতো কি না করছে। সেই বন্ধু কিনা বউ পেয়ে তাকে ভুলে গেল। তিয়াসের এখন গলা ফাটিয়ে গাইতে ইচ্ছে করলো,
“সম্পর্ক বদলে গেল একটি পলকে,
কে আপন, কে যে পর হলো রে!”

মেহরাব সেসবে পাত্তা দিলো না। ও নিজের মুডে আছে। তিয়াস মেহরাবের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তানজিলার দিকে তাকালো। মেয়েটার সাথে ওর হিসাব এখনো বাকি আছে। কেন মেয়েটা ওকে না জানিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো? এখন ওকে জবাব দিতে হবে। তানজিলার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“হটাৎ আমায় ব্লক করার কারণ কি ম্যাডাম? জানো আমি কি অবস্থায় ছিলাম? কতবার কল করেছি হিসেবে আছে?”

তানজিলা আড়চোখে উৎসার দিকে তাকালো। উৎসা ওর চাহনি পাত্তা না দিয়ে মেহরাবের কাছে গিয়ে ওর বাহু আঁকড়ে ধরে বলল,
“চলুন তো আমরা ওদিকে যাই। ওরা ওদের মতো কথা বলুক”

তানজিলা বেশ বুঝতে পারলো বান্ধবী তার তাকে ফাঁসিয়ে কেটে পড়ছে। এখন তিয়াস ওকেই পাকড়াও করবে। হলোও তাই।

উৎসা মেহরাব ছাদের অপর পাশে চলে এলো। এদিকটায় বেশ কয়েকটা ফুল গাছ আছে। উৎসা ঘুরে ঘুরে ফুল গাছ গুলো দেখছে। মেহরাব মুগ্ধ চোখে প্রেয়সীকে দেখছে। মেয়েটা পারেও দুস্টুমি করতে। তিয়াস আর তানজিলা কেন বেশ ভালো জব্দ করেছে। উৎসা ফুল গাছ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বক বক শুরু করলো। মেহরাব এক মনে মেয়েটার বক বক শুনছে। মেয়েটা চুপচাপ থাকলে ওর কেন যেন ভালো লাগে না। দুরন্ত পনায় মেয়েটাকে বেশি মানায়। কথা বলার মাঝে উৎসা থমকে দাঁড়ালো। একবার দৃষ্টি ফেলল তানজিলা তিয়াসের দিকে। দুজন হেসে হেসে কথা বলছে। তানজিলার মুখের ওপর এক গোছা চুল এসে পড়েছে। তিয়াস হাত বাড়িয়ে সেটা ঠিক করে দিলো। উৎসা মুগ্ধ চোখে দুজনকে দেখলো। মুখ ফস্কে বলে ফেলল,
“ভালোবাসা সুন্দর, ভীষণ সুন্দর”

#চলবে?