বড়োজা পর্ব-২১

0
199

#বড়োজা
#Nadia_Afrin

২১
বেশ কদিন পর তটিনী কল দেয় আমায়।
রিসিভ করতেই ও বলে,”কেমন আছেন আপা?
কোথায় আপনি?বাবুরা কোথায়?”

“এইতো ঘরেই বসে আছি।ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?
আর বাবুরাও ভালোই আছে।”

জবাবে তটিনী বলে,”আমিও আছি ভালো।
আমি শশুর বাড়িতে এসেছি জানেন?”

আমি অবাক হওয়া স্বরে বলি,”সেকি!
কবে গেলে?
কোনো সমস্যা হবেনা?
রিস্ক নিয়ে যাওয়া কী ঠিক হলো?
‘বড়োজা’ তো তোমাকে পছন্দ করেনা।ক্ষতি চায়।ওরা দু-বোন মিলে যদি তোমার কোনো সমস্যা করে!”

“আমি ইচ্ছাকৃতভাবে আসিনি আপা।আশিক জোর করে নিয়ে এসেছে।তার মায়ের নাকি শরীর খারাপ।ভীষণ অসুস্থ।
তাই আমায় এনেছে।তবে সাতদিনের জন্য এসেছি।
সাতদিন বাদেই চলে যাব।”

“তা ভালো।কবে গিয়েছো?
সাবধানে থাকবে।”

তটিনী সামান্য হেসে বলে,”এসেছি দুদিন।
আপনার সঙ্গে অনেক কথা আছে আপা।আশিক বাড়িতে নেই।ফিরবে অনেক রাতে।এটাই সুযোগ মন খুলে কথা বলার।
জানেন এসে আমি কী কী করেছি?
শুরু থেকে বলি,

সম্পূর্ণ গল্পটি আমার পেইজে দেওয়া আছে।নাদিয়া আফরিন ইংরেজিতে লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন আমার পেইজ।
ফলো দিয়ে সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ুন।
ফলো না করলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
বাড়িতে এসে দেখলাম পরিস্থিতি বেশ খারাপ।
আমার অহংকারী শাশুড়ির করুণ অবস্থা।বেশ মায়ায় লাগলো।
বেচারার সত্যিই শরীর খারাপ।প্রচন্ড জ্বর-ঠান্ডা।
কোমরে ব‍্যাথা।
এমন অসুস্থ শরীর নিয়েই নাকি ওদের দু-বোনের ফাই-ফরমাশ খাটে।
বেচারাও অসহায়!আমার সঙ্গে নিয়ে যেতে চাইলাম।কিন্তু সে যাবেনা।এখানেই নাকি শেষ নিঃশ্বাস ত‍্যাগ করতে চায়।শহরের দম বন্ধ পরিবেশে সে থাকতে চায়না।

যাক গে সেসব।
‘বড়োজা’ আর রিঙ্কি বেশ বেড়েছে আপা।
কী তাদের ঢং!
দেখলে গা জ্বলে যায়।
অসুস্থ মানুষ দিয়ে খাটায়।আমি আবার চোখের সামনে অন‍্যায় দেখলে চুপ থাকতে পারিনা জানেনই তো।
তাই শিক্ষা দিচ্ছি দু-বোনকে।

যেদিন গিয়েছি সেদিন থেকেই ওদের টাইট দেওয়া শুরু করেছি।
গিয়ে দেখি ওরা সোফায় পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে।মা ঘর মুছছে।
আমি গিয়ে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছি।মার ততক্ষণে মোছামুছি শেষ।তখন আর কিছু বলিনি।
আমরা যাওয়ায় বাড়িতে ভারী রান্না হচ্ছিলো।
‘বড়োজা’কে দেখি সুন্দর করে লিষ্ট করে মাকে দিচ্ছে রান্না করতে।
একা একটা অসুস্থ মানুষ এতো রান্না করতে পারে?
তাই আমি গিয়ে বলেছি সবাইকে একসঙ্গে করতে রান্না।
ওমা!
আমার কথা শুনে তারা মুখ কালো করেছে।
তাতে আমার কী?
রিঙ্কিকে টেনে এনেছি রান্না ঘরে।জোর করে হাতে সবজি ধরিয়ে দিয়ে বলেছি কেঁটে দিতে।
ঐ মেয়ে দেখি বোনের দিকে তাকিয়ে থাকে।
ওর বোনকেও দিলাম চাল-ডাল ধুতে।
মাকে চেয়ারে বসিয়ে আমি বাকি সব গুছিয়েছি।তিন জা মিলে রাধতে বসেছি।
মেয়েটা দেখি সবজি টুকু কুটতেও পারেনা।আলুটা অব্দি ছিলতে পারেনা।
একবার দেখিয়ে দিয়েছি তাও পারেনা।
পেয়ে গেলাম সুযোগ।
ঠান্ডা মাথায় বললাম,সামান‍্য সবজি কাঁটাও পারোনা?
কী শিখে এসেছো বাবার ঘর থেকে?এসব কাজ তো বাচ্চারাও পারে।আর তুমি পারোনা?লজ্জা করেনা?
আমার বড়ো তুমি।ভেবেছিলাম তোমার থেকে নতুন নতুন রেসিপি শিখে স্বামীকে করে খাওয়াবো।এখন তো দেখছি তুমি নিজেই ভুয়া কলম।কিচ্ছু পারোনা।
যাক গে,আমি তোমায় শেখাতে পারি।
বেঁচে থাকতে হলে খেতে হবে।খেতে হলে রান্না করতে হবে।সারাজীবন বসে বসে খাওয়া যায়না প্রিয়।
রান্নাবান্না কিছু শিখে নাও।
আমি আবার কাউকে কিছু শেখাতে নিলে প্রফেশনাল ভাবে শেখাই।যেমন আগে পিছের সম্পর্ক ভুলে গিয়ে অনলি টিচার-স্টুডেন্ট হয়ে যাই।
এবার তোমার টিচার হলে আচরণও পাবে স্টুডেন্টের মতো।
একবার বোঝাবো,দুবার দেখাবো।তিনবারে শিখিয়ে দেব।
চারবারের বেলা সোজা হাত উঠিয়ে দেব।
আমার আবার মাথা গরম খুবই।হাত উঠিয়ে ফেলি।তুমি তখন কিছু মনে করবেনা কিন্তু।
এটা হয়েই থাকে।আমায় নিজের ‘ছোটজা’ ভুলে টিচার মনে করবে।সব ঠিক থাকবে তাহলে।
আগে থেকেই সব বলে দিলাম।
এবার ডিসিশন তোমার।

মেয়েটাকে দেখলাম রেগে নেয়ে একাকার হয়ে কিচেন থেকে বেড়িয়ে গেছে সবজি না কেঁটেই।
ছাড় দেব নাকি তাই?
ওর ভাগের সবজিগুলো ‘বড়োজা’কে দিয়ে কাটিয়ে নিলাম।”

আমি বিষ্ময়ের স্বরে বললাম,”সেকি!উনি করতে চাইলো?”

“তা কী আর ইচ্ছে করে করেন?
জোর করে করিয়েছি।বলেছি সবজি না কাটলে রান্না বন্ধ।
শেষ মেষ করতে বাধ‍্য হলো।
রান্না শেষে খাওয়ার পালা যখন।একে একে সবাই এসে বসে।মাকে বসতে বলেনা ওরা।মাও বসেনা।এক কোণে দাড়িয়ে থাকে।
আমি বসতে বললে বড়োজা বলে,উনি পরে খাবেন।একসঙ্গে খাবার খেলে বেড়ে দেবে কে?

চটে গেল আমার মেজাজ।
উঠে বড়োজার গলা জড়িয়ে ধরে আদুরে কন্ঠে বললাম,আজ আপনার হাতে খেতে চাই ভাবি।আমার খুব ইচ্ছে আপনি আমায় বেড়ে খাওয়াবেন। মেহমান আমি,কদিন পরেই চলে যাব।
তাই একটু বেড়ে নেয়ে খাওয়ান।আপনার হাতে মধু আছে।ঐ হাতে খাবার বেড়ে দিলে স্বাদ বেড়ে দ্বিগুণ হবে।
এছাড়াও আপনি সবার বড়ো।আমাদের বড়ো বোনের মতো।
বড়ো বোনেরই তো উচিৎ বেড়াতে আসা ছোট বোনকে নিজ হাতে খাবার পরিবেশন করা।
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেইজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
এছাড়াও আমার লেখা সব গল্প পাবেন আমার পেইজে।
অন‍্য কোনো গ্রুপে বা পেইজে আর গল্পটি পাবেন না।সুতরাং সম্পূর্ণ গল্প পড়তে এবং আপডেট পেতে মূল লেখিকাকে ফলো দিয়ে রাখুন।

বেচারা আর কিছু বলার সুযোগ পায়নি।
সবাই খেতে বসেছি।উনি খাবার বেড়ে দিয়েছে।
দেওয়া শেষে বসতে নিলে এটা-ওটা চেয়ে আটকে দিয়েছি।পুরোটা সময় দাড় করিয়ে রেখে আমরা খেয়েছি।
এবার বুঝুক মজা কেমন।
মাকে দেখেছি মুচকি মুচকি হাসছে।

খাওয়া শেষে ‘বড়োজা’ খেয়েছে।
দু-বোনে সুন্দর করে খেয়ে হাত মুছতে মুছতে মাকে বলে বাসন ধুতে।
আমি তখন রিঙ্কিকে টেনে নিয়ে কিচেনে গিয়ে বাসন গুছিয়ে এনে দিয়েছি।
বলেছি বাসন ধোয়া থেকে তোমার ট্রেনিং শুরু।
আজ বাসন গুলো মেজে তোমার কর্ম জীবনের হাতে খড়ি হবে।
ঐ মেয়ে চেচিয়ে উঠেছে।হাতে মেনিকিউর করা।কিছুতেই এঠো বাসন ধুবেনা।
বড়োজাও বোনের সঙ্গে একমত।
আমিও সুন্দর করে বড়োজাকে টেনে এনে হাতে ঝামা দিয়ে বলেছি,বোন যেহেতু পারবেনা আপনি তো পারবেন।এক বোন না পারলে আরেক বোনকে করতে হবে।এটাই রুলস।
দ্রুত বাসন মেজে ফেলুন।আমি অথিতি মানুষ।বাসন মাজলে কেমন দেখায়?
বাড়িতে থাকেন আপনারা,তাই কাজ ও আপনাদের।এগুলো মাজা না হলে রাতে এই এঠো থালাতেই খেতে হবে।আমি বাবা দুটো ধুয়ে বর নিয়ে খেয়ে নেব।

‘বড়োজা’ চিৎকার করে বলে,আমাদের কাজের লোক পেয়েছো?যে তোমাদের খাওয়া থাল ধুয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করবো।
প্রয়োজনে বাইরে থেকে কিনে এনে খেয়ে নেব তবুও থাল আমি ধুতে পারবোনা।

‘কাজের লোক কেন পাবো আপনাকে?
বাড়ির বড়ো বউ পেয়েছি আপনাকে।বড়ো বউয়ের একটা নির্দিষ্ট দায়িত্ব আছেনা?
সেটাই পালন করছেন।এছাড়াও বাহির থেকে কিনে আনলেও ঢেলে খেতে থাল প্রয়োজন।
বাড়িতে ওঠানো থাল তো দেখলাম একটাও নেই।দামি ডিনার সেট গুলো দু-বোনে নাকি হাপিস করেছেন।
উধাও যেহেতু করেছেন এবার এগুলো ধুয়েই খেতে হবে।অন‍্যথায় কিনে আনুন।ভালো বড়ো দেখে একটা ডিনার সেট কিনে আনুন প্লিজ।আপনারা তো আবার যেমন তেমন থালে খান না।

‘বড়োজার মুখ দেখলাম চুপসে গেছে একদম।
আমি গুনগুন করতে করতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেছি।
মাকে দেখি টেবিলে মাথা দিয়ে বসে আছে।উনাকে নিয়ে এসে কিচেনে উকি দিয়েছে।
সেইরকম কান্ড!
দু-বোন বাসন ধুচ্ছে আর ঝগড়া করছে।ভাগাভাগি করে বাসন মাজছে।
বেশ মজাই লাগলো আমার।

বিকেলে নাস্তা বানাবে।
‘বড়োজার’ মেয়ে এসে মাকে অর্ডার করে নুডলস,পাস্তা করে দিতে।
মাও বোকার মতো কিচেনে গিয়ে রাধতে শুরু করেছে।
আমি মানা করলে বলে,অশান্তি হবে।ওরা নাকি গা*লমন্দ করে মাকে।গায়ে হাত তোলে।

ভাবা যায়?
দাদির গায়ে হাত তোলে নাতনি হয়ে।
আবার নাকি গা*লী ও দেয়।

শিক্ষা ওদের মায়ের পাশাপাশি ওদের ও দিতে হতো।
তাই মাকে সরিয়ে আমি নুডলস করেছি।ঝাল বেশি,নুন কম বাজে ভাবে করেছি।
মাকে দিয়ে পাঠিয়েছি।মা ভয়ে ভয়ে যেতে চায়না।
একটা মানুষ নাতনিদের দেখে এতো ভয় পেতে পারে?
তাহলে ভাবুন এদের ব‍্যবহার!

মাকে সাহস দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।মেয়েটা নুডলস নিয়েছে হাতে।একচামচ খেয়ে ওয়াক করে উঠেছে।চিৎকার শুরু করেছে রাগে।
ওর মা-খালা দৌড়ে এসেছে।
মা কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়েই ছিল।ঐ মেয়ে গা*লী দিয়ে মাকে তাক করে গরম নুডলস ছুড়ে মেরেছে।
আমি সঙ্গে সঙ্গে মাকে পাশ থেকে টান দিয়েছি।পেছনে ছিল ওর মা,মানে ‘বড়োজা’।
গরম নুডলস গিয়ে পড়েছে সোজা ‘বড়োজার’ শরীরে।
‘জ্বলে গেল’ বলে সেকি চিৎকার উনি।
রাগে তেড়ে এসে মেয়েকে দিয়েছে এক থাপ্পড়।
মেয়ে মা*র খেয়ে মাকে ধাক্কা দিয়েছে।কতো বড়ো বেয়াদব!
সবই মায়ের দোষে।
এসব দেখে রিঙ্কি আবার এগিয়ে এসে মেয়েকে ধমক দিয়েছে।ঐ মেয়ে রিঙ্কির চুল ধরেছে।’বড়োজা’ বোনকে ছাড়াতে এসে মেয়েকে আরো দুটো দিল দেখলাম।মেয়ে গর্জে উঠে বই ছুড়ে মেরে রিঙ্কিকে আহত করলো।
একপ্রকার বিরাট কলহ তৈরী হলো।
আমি মাকে নিয়ে আস্তে ধীরে সরে এলাম ঘর থেকে।
মাকে সোজা আমার ঘরে নিয়ে এসে বললাম,এতোদিন অনেক অন‍্যায় সহ‍্য করছেন।এবং আপনি নিজেও তন্নি আপার ওপর অন‍্যায় করেছেন ওদের কথায়।
এবার বুঝছেন কে আপন?কারা ভালো?

সে কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে বলে,নিজের পাপের জন্য তপড়ে মর*ছি আমি।ইচ্ছে হয় গা থেকে অপরাধীর চামড়া খুলে ফেলে দেই।
হিরে রেখে কাঁচের পেছনে দৌড়েছি আমি।তোমাকেও কম অত‍্যাচার করিনি।তুমি প্রতিবাদী ছিলে শুরু থেকেই। তাই নিজের অস্তিত্ব ধরে রাখতে পেরেছিলে।
এবার বুঝেছি সবটা।এক ছেলের সংসার ভেঙেছি।আর চাইনা তোমারটা ভাঙুক।যেদিন থেকে ওদের আসল রুপ চিনেছি সেদিন থেকে আমি শায়েস্তা হয়েছি।
আশিককে আর ফোন দিয়ে তোমার নামে বাজে কথা বলিনা।
এগুলোও বলেছি ওদের পরামর্শে।
এখন আর বলিনা মা।তুমি আমায় মাফ করে দিও।

বেচারাকে দেখে মায়ায় হয় আমার।
আসলেই ভীষণ করুণ অবস্থা।

তটিনীকে থামিয়ে দিয়ে আমি বলি,”আচ্ছা তটিনী তুমি যে এসব করে বেড়াচ্ছো ওরা তোমার ক্ষতি করতে চাচ্ছেনা?
বা বের করে দিতে চাচ্ছেনা?
বাড়ি তো ওদের নামে।তুমি কেমন তা ওরা আগে থেকেই তো জানতো।তাহলে তোমায় ঢুকতে দিল যে?”

“ক্ষতি করতে চেয়েছে অবশ্যই।
আমার বাথরুমে নিজে গিয়ে আমাকে বলে ওর বোন অর্থাৎ ‘বড়োজা’র বাথরুম ইউজ করতে।ঐদিন আবার ‘জা’ বাড়িতে নেই।কোনো কাজে বাইরে গেছে।ঘরে গেছি তার।ফোন দেখি টেবিলে রাখা।আমি বাথরুমে পা দেব সবে তখনই মনে হলো দরজার বাইরে কেউ দাড়িয়ে আছে।
সন্দেহভাজন মনে হয়।তাই ঘর থেকে বেড়িয়ে নিজের ঘরের দিকে যাচ্ছিলাম।পিছে পিছে রিঙ্কিও যায়।বাথরুমে কেন যাচ্ছিনা প্রশ্ন করে বারবার।
আমি এটা-ওটা অযুহাত দেখিয়ে সময় পার করি।মাও দেদিন কার বাড়ি যেন গেছে।আশিক ও বাইরে।
দুপুরের পর ‘বড়োজা’ বাড়ি এসেছে।আমি তারই অপেক্ষায় ছাদে দাড়িয়ে ছিলাম।
উনাকে আসতে দেখেই বের হয়েছি।জা ঘরে ঢুকেছে।পিছে পিছে আমিও ঢুকে বলেছি,আপনার বোন আমায় আপনার বাথরুম ইউজ করতে বলে।এদিকে আমার সমস্যা,কারো বাথরুম একবার পছন্দ হয়ে গেলে ওটাই বারবার ব‍্যবহার করি।আপনার বাথরুম পছন্দ হলেও কিন্তু আমি তাই ই করবো।চাইলেও কিছু বলতে পারবেন না।
আমি আবার ভীষণ জেদি।
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।

‘বড়োজা’ একথা শুনে সে কি রাগ।বোনকে বকা শুরু করেছে রীতিমতো।কোনোমতেই আমায় তার বাথরুম ইউজ করতে দেবেনা।এমনিতেই সে রাগ আমার প্রতি।
ব‍্যবহারে যা বুঝলাম উনি কিছু জানেনা।
রিঙ্কির একার কোনো প্ল‍্যান আছে।

বুদ্ধি করে তাকে বলেছি, ঠিক আছে যাবো না।
আপনার বাথরুমে আমার কাপড় রাখা আছে।এনে দিন দয়া করে।
আমি গেলে আবার আপনার সমস্যা।
সে সত্যি সত্যি হন্তদন্ত পায়ে ছুটেছে বাথরুমের দিকে।
ভেতরে পা দিতেই গগনবিদারী চিৎকার করে ধপাস হয়ে ফ্লোরে পড়ে গেছে।পায়ের আঘাতে বালতি ফেটে গেছে পর্যন্ত।
মাথা টাইলসের উচুর সঙ্গে লেগে অবস্থা খারাপ হতো বিধায় মাথার নিচে পা দিয়েছে।এতে কিন্তু আমারই পা কেঁটে গেছে অনেকটা।তবুও বেচারা জানে তো বাঁচুক!
দরজার নিচের দিকে এক টুকরো লোহা মতো বেড়িয়ে ছিল কোণে।মাথা নিচে পড়লে সোজা সেখানে গিয়ে বিধে যেত।
প্রান পযর্ন্ত চলে যেতে পারতো।তাই পা দিয়েছি।গর্ভবতি আমি।খুব সহজে বসতে পারিনা হুট করে।বসে ধরতে নিলে আমিও ব‍্যাথা পেতাম।”

“কী বলছো কী তটিনী!ওরা এতো ভয়ানক!
জানা ছিল এসব। তবে তোমার সঙ্গেও যে এমন করতে পারে ভাবিনি।
এরপর কী হলো?”

“এরপর আপা রিঙ্কি এসে ওর বোনকে উঠিয়েছে।বেচারা কোমরে ভীষণ ব‍্যাথা পেয়েছিল।
যা বুঝলাম,রিঙ্কি তেল ফেলে রেখেছিল বাথরুমে।
আমার জন্য গর্ত খুঁজে নিজেই সেই গর্তে পরেছে।
‘বড়োজা’ চিৎকার করে বলে,এখানে তেল কে ফেলেছে?
কোন অসভ্য জা*নো*য়া*র এই কাজ করেছে?

আমিও বললাম,আপনার বোন জা*নো*য়ার ফেলেছে তেল।আমায় ফেলে দিয়ে আমার ক্ষতি করতে ও এ’কাজ করেছে।আমার সন্তানের যদি আজ কিছু হতো রিঙ্কির পিঙ্কি বের করে দিতাম।
প্রয়োজনে মা*র্ডা*র করে জেলে যেতাম।
দেখেছেন অন‍্যের ক্ষতি চাইলে নিজেরই সেই ক্ষতি হয়।
এখন থানায় গিয়ে প্রাণঘাতি হত‍্যা চেষ্টার মামলা দিয়ে আসবো।
দু-বোনকে পুলিশ চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাবে।

রিঙ্কি বলে,আমি যে ফেলেছি প্রমাণ কোথায়?

আমি বললাম,প্রমাণ গুছিয়ে নেব।
আমি আছি,মা আছেন,আশিক আছে।আকাশ ভাইকেও প্রয়োজনে ডেকে নেব।
সবাই মিথ্যা সাক্ষী দেব যে তুমি ফেলেছো তেল,আমরা দেখেছি।কিন্তু তোমাদের শায়েস্তা করতে কিছু বলিনি।
ওরা সবাই কিন্তু আমার দলে।তোমরা দু-বোনে বেশি কিছু করতে পারবেনা।

রিঙ্কি দেখি তখন ঘামে।সোজা আমার পায়ে পড়ে ক্ষমা চায়।
‘বড়োজা’ ও স‍্যরি বলে।

‘বড়োজার’ পা ফুলে গেছিলো একদম।ব‍্যাথা পেয়েছে ভীষণ।কোমরের অবস্থাও বে’হাল।
এটা উনার প্রাপ‍্য ছিল।উনার জন্য উনার বোন এতোটা খারাপ হয়েছে।মা নেই ওদের।বড়ো বোনকে দেখে দেখে ছোটজন বড়ো হয়েছে।
বড়ো বোন পারেনি সঠিক শিক্ষা দিতে।নিজে একটা অমানুষ,বোনকেও বানিয়েছে তাই।
এবার কর্মফল তো ভোগ করতেই হবে।মনে করুন এটা ছিল ওদের কর্মফল।

“তাহলে তো ভালোই জব্দ করেছো ওদের।”

“হ‍্যা আপা।তা করেছি।যার যেমন কর্মফল আর কী!
ওরা আমায় বাড়ি থেকে বেরও করতে চেয়েছে।
আশিককে বলেছে আমায় তাড়িয়ে দিয়ে আশিক যেন একা থাকে বাড়িতে।
মূলত আশিকের চাকরি আছে।বেতন ভালো।টাকা এনে ওদের দিতে বলে।আকাশ ভাইয়ের ব‍্যবসার অবস্থা খারাপ।তাই আশিকের টাকার প্রয়োজন ওদের।
আমিও এটা শুনে নিয়েছি লুকিয়ে।
সুন্দর করে দুজন প্রতিবেশিকে ডেকে এনে বলেছি,আমার দুই ‘বড়োজা’ আমায় তাড়ানোর চেষ্টা করছে।আমার স্বামীর কান ভাঙানি দিচ্ছে।তন্নি আপাকে যেভাবে তাড়িয়েছে আমাকেও সেভাবে তাড়ানোর চেষ্টা করছে।সংসার ভাঙার চেষ্টা করছে।

উনারা তো জানেই ওদের স্বভাব সম্পর্কে।
তাই আমার পাশে দাড়িয়েছে তারা।
বড়োজা,মাকে,আশিককে আর রিঙ্কিকে ডেকে বলেছে,আমার যদি কোনো সমস্যা হয় এলাকা বাসী ওদের ছাড়বেনা।
প্রয়োজনে সবকটাকে পিটিয়ে মারবে।
এমনিতেই অনেকের সমস্যা তৈরি করেছে ওরা।
এবার আর ছাড় দেবেনা।
ও বাড়িতে থাকাকালীন আমার কোনো ক্ষতি হলে ওদের নামে এলাকা বাসিই মামলা দেবে।
সবাই আমার সুরক্ষা দিয়েছে।
আমার যতোদিন ইচ্ছা থাকতে বলেছে।

‘বড়োজা’ আর রিঙ্কি আমার সঙ্গে পেড়ে উঠছে না কোনোমতেই।
ওরা একধাপ এগোলে আমি দু-ধাপ।

বাড়িতেও আমায় ঢুকতে দিত না।আমায় দেখেই বলেছিল এখানে কেন এসেছি।
আমিও জবাব দিয়েছিলাম,এটা আমার স্বামীর বাড়ি।আপনার যেমন এখানে অধিকার আছে,আমারও আছে।
আপনি যদি আমায় ঢুকতে না দেন আমিও স্টেপ নেব।
বাড়ি-জমি নিজের নামে নিয়েছেন ঠিকই।কিন্তু হজম করতে পারবেন না।
শাশুড়িমাকে নিয়ে কোর্টে যাবো।বলবো আপনি ভয় দেখিয়ে এ’কাজ করেছেন।জোর করে লিখিয়ে নিয়েছেন।
তাও যদি কাজ না হয় এলাকাবাসী তো আছেই।
আপনাদের উচ্ছেদ করেই ছাড়বে।বিক্রি করতে চাইলেও পারবেন না।সবাই অবশ্যই প্রতিবাদ করবে তখন।
আমায় বোকা ভাববেন না আকাশ ভাই অথবা শাশুড়ির মতো।
অবশ‍্য তারাও এতোটা বোকা ছিল না।আপনাদের অত‍্যাচার ও মানসিক চাপে বেচারাদের মস্তিষ্ক আর সুস্থ নেই।আকাশ ভাই তো ব‍্যবসাটা কোনো মতে টিকিয়ে রাখতে ব‍্যস্ত।
আর মা তো শারীরিক, মানসিক দু-দিক দিয়েই আঘাত প্রাপ্ত।
জানিনা আমি একা এ অবস্থায় কতোটা কী করতে পারবো।সব তো প্রায় হাতের বাইরে চলে গেছে।
কিন্তু চেষ্টা আমি করে যাবো।
অন্তত যে ক’দিন এখানে থাকবো প্রতিবাদ করে যাবো।

আমার এসব কথা শুনে দু-বোনে আর কিছু বলতে পারেনি সেদিন।চুপচাপ আমায় ভেতরে আসতে দিয়েছে।

আমি কিন্তু আমার নিজের একটা প্রটেকশন নিয়ে রেখেছি তবুও আপা।
রাত হলে ঘর থেকে বের হইনা আর।
একটা ইলেকট্রিক চুলো নিয়ে এসেছিলাম আসার সময়।
একান্ত প্রয়োজন হলে,অথবা ক্ষিদে পেলে সেটাতে কিছু রান্না করে খেয়ে নেই।
কিছু বাজার ঘরে এনে রেখে দিয়েছি।
বাড়িতে রান্না হলে চুলো থেকেই খেয়ে নেই আমি।যদি কিছু করে ওরা তাই!
আর ওদের দেওয়া একগ্লাস পানিও খাইনা আমি।নিজে নিয়ে খাই অথবা মা এনে দেয়।ও বাড়ি যাওয়ার পর মা আমার ভীষণ যত্ন করে।ওদের প্রতিটি কাজে মা নিজেই লক্ষ‍্য রাখে।এবং আমায় সতর্ক করে।

এতো সেফটির পরও সেদিন আমার ঘরে ঢুকে চানাচুরের ডিব্বায় কী যেন ছিটিয়ে দিয়েছিল।আমি তখন বাথরুমে ছিলাম।মা দেখেছিল।
পরে এসে আমায় বলেছে।
ওরা আসলে চাচ্ছে আমার ক্ষতি করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবে।
আমি এমনিতেই চলে যাবো।মাকে কথা দিয়েছি সাতটা দিন তার কাছে থাকবো।অন্তত সে পরিপূর্ণ সুস্থ হওয়া অব্দি।সুস্থ হতে হলে পর্যাপ্ত রেস্ট প্রয়োজন।
আমি চলে গেলে উনার ওপর সব কাজের ভার আসবে।রেস্ট তো দূরে থাক,আরো অসুস্থ হবে।
তাই উনার জন্যই মূলত রিস্ক নিয়ে হলেও সাতটা দিন থাকবো আমি।
আপনি তো জানেন আপা,আমি বরাবরই সৃষ্টিকর্তায় ভীষণ বিশ্বাসি।
আমি মনে করি সৃষ্টিকর্তা আমার কপালে যা লিখে রেখেছেন তাই হবে।
যদি তিনি আমায় বিপদ দিয়ে থাকেন তো বন্ধ ঘরের মাঝেও বিপদ হবে।
না দিয়ে থাকলে সারা দুনিয়া আমার শত্রু হলেও কিচ্ছু করতে পারবেনা।তিনি সর্বক্ষেত্রে যেভাবেই হোক আমায় রক্ষা করবেন।
আমি জেনে-বুঝে কখনো কারো ক্ষতি চাইনি বা ভাবিনি।সুতরাং আমার সাথে অবশ্যই সৃষ্টিকর্তার দয়া থাকবে।

ঐদিনের পর ঘরে সিসিটিভি ক‍্যামেরা লাগিয়েছি।শুধু ঘরে নয়,পুরো বাড়িতেই লাগিয়েছি।ফুটেজ আমিও দেখি,আমার মা-বাবার সঙ্গেও কানেক্ট করে রেখেছি।যখন আমি কোথাও যাই তারা নজরে রাখে ঐ বিচ্চু দুটোকে।

“তোমার নিজের সুরক্ষা আগে।চেষ্টা করবে নিজের বিষয়ে আগে ভাবার।
ওরা ভীষণ বাজে।যা খুশি করতে পারে।দেখলে না আমার সঙ্গে কী করলো!”

“আপা আমি শুনেছিলাম সবটাই।তবে এতোটা ভাবিনি।যা শুনেছি ওরা তার চেয়েও বেশি করেছে।ঐ বাড়িটাতে আগে মানুষ থাকতো।এখন দেখে মনে হয়না মানুষ থাকে।
কেমন মরা মরা ভাব!
আমার নিজেরই থাকতে দম বন্ধ হয়ে আসে।
এটুকু আমি করছি শাশুড়ি মায়ের জন্য।বেচারার পাশে কেউ নেই।যারা আছেন তারা থেকেও নেই।
আমি চাচ্ছি শাস্তি দিয়ে হলেও ওরা যেন একটু শিক্ষা পায়।
অন্তত শাশুড়িমাকে নির্যাতন করা বন্ধ করে।
আমি চলে গেলে যদিও অত‍্যাচার আবার শুরু হবে।কিন্তু আমার এই প্রতিবাদ গুলো দেখে উনি নিজেও যেন একটু শক্ত হয়।”

“তোমার চেষ্টা ভালো।ইচ্ছেও সৎ।
কিন্তু সম্ভব হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম।
উনি উনার সব কিছু হারিয়েছে।
তুমি একটা ছোট্ট কাঠের টুকরো।তোমার ধরে উনি আশ্রয় টুকু নিতে পারবে।রাজত্ব করতে পারবেনা।
রাজত্বের জন্য প্রয়োজন একটা শক্ত বটগাছ।উনি তা হারিয়েছে।
অথৈ নদীতে উনি ভাসছে।কোনো কূলকিনারা নেই।পায়ের নিচে মাটি নেই।
উনার তিন ছেলের তিন জনেই এখন নড়বড়ে।প্রত‍্যেকেই ওদের কাছে প্রতারিত হয়ে নিজেদের সর্বস্র বিসর্জন দিয়েছে।
আশিক আছে কোনো মতো।ওর পক্ষে সম্ভব নয় সব কিছু একা সামলানোর।
সেই অব্দি ও এখনো পৌঁছেনি। পৌঁছতে সময় লাগবে।ততদিনে সব ধ্বংস হবে।”

“এই সংসার এখন ধ্বংসস্থুপে পরিণত হয়েছে।এটাকে সম্পূর্ণ রুপে দাড় করানো আমার সাধ‍্য নয় জানি।
আমি চাই থাকার মতো একটা পরিস্থিতি তৈরি করতে।পাপাচারে লিপ্ত এই বাড়ি।
ধুয়ে মুছে সাফ করার উপায় নেই।কারণ মানুষ গুলোর মাঝেই পাপে ভর্তি।
আপা আপনি বুঝতে পেরেছেন কিনা জানিনা,বর্তমান যা পরিস্থিতি তাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এ বাড়ি থাকলে উচ্ছন্নে যাবে একদম।
‘বড়োজার’ মেয়ের কথা শুনলে অবাক হই আমি।ভাষা শুনে মনে হয় কোনো প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলা ঝগড়া করছে।
পরিবেশ এতো দূষিত!
আমি কদিন পর সন্তান কোলে এখানে আসলে আমার বাচ্চাও তাই শিখবে।
যতোই বাহিরে বাহিরে থাকি,নির্দিষ্ট একটা সময় অবশ্যই আমায় এ বাড়িতে আসতে হবে।
কিন্তু এখানে থাকাটা হবে কষ্টসাধ্য।
তাই বদলাতে হবে আপা।কিছুটা হলেও বদলাতে হবে।ভারসাম‍্য রক্ষা করতে হবে বাড়ির।
আমি চেষ্টা করছি আপা।এর পরের কাহিনী গুলো শুনলে তো অবাক হবেন আপনি।
শুনুন তবে,,,,,”

(তটিনীর শাস্তি পর্ব শেষ হলে তন্নির প্রতিষ্ঠিত পর্ব শুরু হবে)