শেহনাজ পর্ব -১৫

0
47

#শেহনাজ _______{১৫}
লেখনীতেঃ #বৃষ্টি_শেখ

কোলাহল পূর্ণ শহর। বাতাসে প্রেমের উথ্থান। বৃষ্টির তোপে ভিজে উঠেছে ধরণী। বাতাসের বেগ প্রবল। বেলকনির গ্রিলে ছিটকে স্বচ্ছ মুক্তোর মতো পানির দানা প্রবেশ করছে ঘরের শুভ্র মেঝেতে। শেহনাজের দুটো চোখ বন্ধ। অনুভব করছে প্রকৃতি। ফিনফিনে পাতলা শাড়ি পরণে। স্কাই ব্লু রঙের শাড়ির ভেতরে থাকা গায়ের গড়ন, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতীয়মান।

এমির ফিরল ভেজা শরীরে। গায়ের শুভ্র শার্ট ভিজে শরীরের ভাঁজ গুলো ফুটে উঠেছে। পেশিবহুল, হৃষ্টপুষ্ট শরীর খানা ভিজে একাকার। ব্যাগটা চৌকির এক পাশে রাখল এমির। শেহনাজ উষ্ণ টাওয়াল এগিয়ে দিল এমিরের সম্মুখে। গা মুছে, জুতো খুলে এমির বিছানায় বসল আরামে। তার আরামে ব্যাঘাত ঘটাল শেহনাজ। বলল,

-” এই ভেজা শরীরে বিছানায় উঠছেন কেন? নামুন। শার্টটা চেঞ্জ করে আসুন”।

এমির মানল। একটানে খুলে ফেলল শার্টটা। অন্য শার্ট গায়ে জড়াতে দিল না শেহনাজ। টাওয়াল দিয়ে মুছে দিল এমিরের গা। চুল গুলো মুছে দিল আগ্রহের সহিত। এমির হাসে। পরখ করে শেহনাজকে। তার পছন্দের রঙ পরিহিত পছন্দের নারী। বেসামাল হলে দায় কার?

-” তোমাকে বউ বউ লাগছে নাজ”।

মিষ্টি হাসে শেহনাজ। নিজের কাজে ব্যস্ত থাকতে থাকতে বলে,
-” আমি তো বউ-ই। আপনি আমার স্বামী”।

-” হু, ব্ল্যাকমেইল করেছিলে আমাকে”।

-” ব্ল্যাকমেইল করেছিলাম বলেই আমার মতো মেয়েকে বউ হিসেবে পেয়েছেন। আপনার যা ব্যবহার তাতে বউ টেকার কথাই না”।

ভ্রু নাচাল এমির। বলল,
-” বিয়ে করার ইচ্ছেও ছিল না আমার। তোমার মতো বনেদি বংশের মেয়েকে তো না-ই”।

শেহনাজের মন খারাপ হলো। বলল,
-” শেহনাজ কি আপনার এলার্জি? সবসময় এমন ব্যবহার করেন কেন”?

এমির শেহনাজের দিকে তাকাল। এই মেয়েটা তার স্ত্রী। তাদের সম্পর্ক বৈধ, হালাল। এক ঘরে, এক বিছানায় একটি মেয়ে ও ছেলে থাকলে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক না হওয়াটা অস্বাভাবিক। এমিরের মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় শেহনাজকে কাছে টানতে, নিয়ন্ত্রণ হারাতে। শেহনাজকে নিজের বাহুডোরে আগলে রাখতে।

এমির কাছে টানে শেহনাজকে। শেহনাজের পিঠ থেকে এমিরের নগ্ন বুকে। কোমড় জড়িয়ে ধরে শেহনাজের। বলে,

-” তুমি সবসময় স্বামী, স্বামী করো তাইনা? স্বামী হওয়ার কিছু বেনিফিটস আছে। ক্যান আই টেক দেম”?

শেহনাজ চমকাল। বুঝল না কিছুই। ফিরে এমিরকে দেখল। এমিরের নজর অন্যরকম। সম্মোহনী চোখ দুটোয় শেহনাজকে কাছে টানার আকাঙ্খা। থতমত খেল শেহনাজ। সরে এলো ততক্ষণাৎ। বলল,

-” বেনিফিটস? যেমন”?

এগিয়ে এলো এমির। শেহনাজকে আটকাল। বলল,

-” ক্যান আই শো ইট ডিরেক্টলি”?

শেহনাজ কৌতুহলি হয়ে তাকাল। এমির আলগোছে শেহনাজের ঘাড়ে হাত বুলাল। চুমু খেল শেহনাজের ডান গালে। শেহনাজ বিস্ময়ে বিমূঢ়। নিঃশ্বাস ফেলে ঘনঘন। বুঝতে পারে এমিরের কথার মানে। আঁচল খানা সরে যায় বুক থেকে। ফর্সা, নগ্ন ঘাড়ে মুখ গুঁজে এমির। দীর্ঘক্ষণ চুম্বন করে। ঠোঁটে ঠোঁট রাখে। আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রাখে। চুম্বনের ধকল বাড়ে ওষ্ঠে। এক অপরের মাঝে খুঁজে পায় অনাবিল সুখ। রাতটা যেন সাক্ষী হয়ে থাকে দুজনের সম্পর্কের। ঘনিষ্ঠতা বাড়ে, অন্তরঙ্গতা বাড়ে। শেহনাজের চোখ গড়িয়ে পরে সুখের অশ্রু।

____
দিন যাচ্ছে, সময় চলে যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে জীবনের বৈচিত্র্য। শেহনাজ প্রায় ভুলতে বসেছে সে রাতের নির্মম, মর্মান্তিক হত্যার দৃশ্য। এমিরের যত্ন, ভালোবাসা তাকে সব কিছু থেকে সরিয়ে এনেছে। এমিরের সাথে শেহনাজের বিয়ের বয়স এখন তিন মাস। সম্পর্ক এখন মধুর, গাড়, মজবুত।

শেহনাজের পড়াশোনা চলছে জোর কদমে। এমির রাতে বাড়ি ফিরে শেহনাজকে পড়ায়। শেহনাজের আর পড়াশোনায় ফাঁকি দেবার জো নেই। নিয়ম করে রোজ পড়তে হচ্ছে তাকে। পরিক্ষায় ভালো নম্বরও পেতে হচ্ছে। ঘরে বাইরে সমান তালে লড়াই শুরু করেছে।

শেহনাজ বসে আছে রিকশায়। এখন শীতকাল। জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি। শেহনাজের গায়ে সোয়েটার। পুরো শরীর ঢাকা। শীতে কনকন করে কাঁপছে তার কায়া। শীতল বাতাসে দেহ শিরশির করে উঠছে। কলেজে যাচ্ছে শেহনাজ। এইচএসসি পরীক্ষার ফর্ম ফিল আপ করতে। মাঝ রাস্তায় এসে রিকশা থেমে গেল। অগত্যা নেমে পরল শেহনাজ। এ রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ।
মাস চারেক আগে ঠিক ছিল। এখন রাস্তা ভেঙেচুরে দেবে গেছে। শেহনাজের বিরক্তি আকাশ ছুঁয়ে গেল। হাসল রিকশাওয়ালা চাচা। বলল,

-” নেতারা সরকার গো থিকা ট্যাকা ঠিকই নেয়। তয় রাস্তা ঠিক করবার পারে না। সব ট্যাকা ভরে পকেটে”।

শেহনাজ রাজনীতি বোঝে না। সরকার, জনগন কিংবা নেতা, চেয়ারম্যান সম্পর্কে ধারণা নেই তার। জনগনের অধিকার, দায়িত্ব-কর্তব্য কিংবা জনগনের পাওনা সম্পর্কে জানে না সে। দুদিন বাদে ইলেকশন। বাড়ি বয়ে নেতা আর নেতাদের চ্যালা গুলো দু বেলা এসে ভোট চেয়ে যায়। সে কি আন্তরিকতা তাদের মাঝে! এমন ভাবে ভোট চেয়ে যায় যেন এরা দেশকে গর্বিত করতে বিন্দুমাত্র কালবিলম্ব করবে না। ভোটে দাঁড়ানো ব্যক্তিবর্গরা জনে জনে মানুষের বাড়ি গিয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করছে, বিভিন্ন ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিচ্ছে। দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করছে। অথচ রাস্তার এই দশায় জনগন পরেছে বিপাকে। প্রধান সড়ক এমন ভাঙা থাকলে চলাচলে অসুবিধা হয়।

শেহনাজ রিকশাওয়ালা চাচাকে প্রশ্ন করল,
-” এবারের ইলেকশনে যে বিজয়ী হবে সে নিশ্চয়ই রাস্তা মেরামত করবে”।

হাসর রিকশাওয়ালা চাচা। বলল,
-” তা তো করবোই। দুই নাম্বার ইট,পাথর দিয়া রাস্তা ঠিক কইরা দিবো। দুই মাস পরে যেই লাউ সেই কদু”।

-” তাহলে ওরা এত এত আশ্বাস দেয় কেন? কেন বলে সবার সব সমস্যা দূর করে দিবে”?

-” এইডারে কয় প্রচার। ভোট পাওয়ার লাইগা এহন অনেক কিছুই কইবো। শহরে রাজ করবো।ভোট পাওয়ার পর আর হ্যাগো পাত্তা পাওয়া যাইবো না।

থেমে বলল,
সবাই জানে কেডা জিতবো ভোটে। ওই নেতা হইল আজরাইল। মাইনষের হক মাইরা খায়। এই শহরের মানুষের কপালে দুর্ভোগ আছে”।

শেহনাজ কিংকর্তব্যবিমূঢ়। রাজনীতিবিদরা কি করছে? ওদের উপর জনগনের এত ক্ষোভ তো এমনি এমনি নয়। তারা সঠিক ভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে না, সম্পদের সুষম বন্টন করছে না, সরকারি টাকায় ধন-সম্পদের পাহাড় গড়ছে। আর জনগন পুড়ে মরছে। অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। দিনশেষে তাদের মৌল মানবিক চাহিদা গুলোও পূরণ হচ্ছে না। ফলে জনগন আর সরকারের মাঝেকার দূরত্ব বাড়ছে। দেশের ক্ষতি হচ্ছে।

শেহনাজের মনটা খারাপ হয়ে গেল। ভাঙা রাস্তা পার হয়ে স্ট্যান্ড থেকে আরেকটি অটো নিল। কলেজে গিয়ে সকল ফর্মালিটিস ফিল আপ করে পুনরায় রাস্তায় এলো। সিদ্ধান্ত নিল দেরী হলে হবে। সে তবুও ওই ভাঙা রাস্তা দিয়ে যাবে না, হেনস্থা হবে না। অন্য রাস্তা ধরল শেহনাজ। ভাড়াটা বেশি দিতে হলো। এ পথ দিয়ে গেলে আধঘন্টা বেশি সময় লাগবে বাড়ি পৌঁছাতে। তবুও এতদুর হাঁটাহাটি করায় মন সায় দিল না শেহনাজের।

এ রাস্তায় জ্যাম নেই। অটো নিজ উদ্যমে চলছে। কিছুটা নিরিবিলি এ রাস্তা। গাছ গাছালিতে পরিপূর্ণ। শেহনাজের বসে থাকা অটোর বা পাশ দিয়ে একটি বড়সড় প্রাইভেট কার চলে গেল। শেহনাজ সেদিকে তাকাতেই দেখল গাড়ির পিছনের ডিকিতে কারো ওড়নার একাংশ বেরিয়ে আছে। শেহনাজের একটু সন্দেহ হলো। তাকিয়ে রইল সে দিকে। তার সন্দেহ গাঢ় করে দিয়ে এক মেয়ের কণ্ঠস্বর ভেসে আসল। কেউ চেঁচিয়ে বলছে ” বাঁচাও আমাদের”। কথাটুকু শোনার পর শেহনাজের শরীর কেঁপে উঠল খানিক। শব্দটি আর শোনা গেল না। সে শব্দ যেন নিস্তেজ হয়ে গেল। শেহনাজ ভাবল সে ভুল শুনছে হয়তো। সন্দেহ দুর করতে অটোওয়ালাকে জিজ্ঞেস করল। অটোওয়ালাও বলল সে শব্দটা শুনেছে। শেহনাজ দ্রুত অটো ওয়ালাকে কারটাকে ফলো করতে বলল। বিনিময়ে টাকা বেশি দিতে চাইল। অটো কিছুটা দুরত্ব রেখে কারটিকে অনুসরণ করতে শুরু করল। শেহনাজের দুরু দুরু বুক কাঁপছে। মেয়েটি বিপদে আছে। তাকে সাহায্য করতে হবে। কিন্তু নিশ্চিত না হয়ে কিভাবে কি করবে সে? পুলিশকে কি কল করবে?

প্রায় ঘন্টা দেড়েক সময় ধরে সামনের কার টি চলল। শেহনাজ জানতো না এরকম এলাকাও এ শহরে আছে। রাস্তাটা শেহনাজের নিকট অচেনা। কখনো এদিকে আসেনি সে। আশেপাশে কোথাও কেউ নেই, জনমানবশূন্য। রাস্তার দু পাশে কেবল সারি সারি গাছ। যেন এক অচেনা জগৎ।
মাইক্রো এসে থামল একটি নির্জন জঙ্গলের সামনের রাস্তায়। এরপর আর রাস্তা নেই মনে হচ্ছে। সাইনবোর্ডে লেখা ” পথ এ পর্যন্তই। সামনে গভীর জঙ্গল”।

গাড়ি থেকে দুইজন মোটাসোটা ছেলে নামল। শেহনাজদের অটো থামল আরো পিছনে সতর্কতার খাতিরে। শেহনাজ নিজেও নামল অটো থেকে। অটো ওয়ালা ভাড়া চাইল। শেহনাজ বলল,
-” আপনি যাবেন না আমার সাথে”?

অটো ওয়ালা বলল,
-” আমি ক্যান যামু? আমার বাড়ি বউ বাচ্চা আছে। আমি এগুলায় নিজেরে জড়াইতে পারুম না”।

ভারী বিরক্ত হলো শেহনাজ। বলল,

-” আমি একা কিভাবে কি করবো? আপনি চলুন আমার সাথে। পুরুষ হয়েছেন এটুকু সাহস নেই”?

-” দেহেন আপা, আপনে আইতে কইছেন আমি ট্যাকার মায়ায় আইছি। এহন আপনে যা করার করেন। আগে আমার ভাড়া দেন, আমি যাই গা”।

শেহনাজ ভাড়া মিটিয়ে দিল। মনে মনে অটো ওয়ালাকে ধুয়ে দিল ও। অচেনা একটা জায়গা, তার উপর সে মেয়ে মানুষ। যদি কোনো ক্ষতি হয়?

শেহনাজ আশপাশে তাকাল। বলল,
-” এখানে কোনো যানবাহন নেই। আমি কিভাবে বাড়ি ফিরবো বলুন? আপনি এক কাজ করুন অন্তত মানবতার খাতিরে আমার নম্বর নিয়ে যান। আমি ফোন করলে এখানে এসে আমাকে নিয়ে যাবেন”।

-” এত দুর আবার আইমু? আপনে এইহানে কি করবেন কন? আসেন নামাই দিয়া আসি। কি না কি হয়”?

শেহনাজ নিজেও কিছুটা ভয়েই আছে। তবুও মনটা ভিষণ খচখচ করছে। ওখানে কি হচ্ছে না জানতে পারলে পরে আফসোস করতে হবে। সে বলল,
-” চিন্তা করবেন না। আমি ঠিক ফিরবো। আপনাকে ফোন করলে আপনি আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাইয়েন। আমি পরিস্থিতি বুঝেই চলে যাবো। আপনি কোনো বিপদে পরবেন না”।

লোকটা রাজি হলো। দোনামনা করল প্রথমে। লোকটার হাতে শেহনাজ চকচকে এক হাজার টাকা দিয়ে দিল। পরে আরো দিবে বলে জানাল।
টাকা পেয়েই চাচা অটো ঘুরিয়ে চলে গেল বিদ্যুত বেগে। মনে বুঝি তার ও ভয়। শেহনাজ নিজেকে সাহস দিল মনে মনে। ভয় গুলোকে অগ্রাহ্য করে এগিয়ে গেল। লুকিয়ে রইল জঙ্গলের গাছপালার আড়ালে।

গাড়ি থেকে একটি মেয়ে নয়, বরং চার পাঁচটি মেয়েকে একে একে বের করা হলো। মেয়েগুলোর হাত পায়ে কাটাছেঁড়া। মুখ, হাত-পা আর চোখ বাঁধা। অজ্ঞান হয়ে আছে সকলে। ওদের রীতিমত টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গাড়ি আর ভিতরে যেতে পারবে না বলে। শেহনাজ ফোনের ক্যামেরা অন করে সব ভিডিও রেকর্ড করল। হাত পা কাপল ওর। মেয়েগুলোর এমন নাজুক পরিস্থিতি শেহনাজকে ভীত করে তুলল। তবুও কোথাও একটা বিশ্বাস, সাহস শেহনাজকে দমে যেতে দিল না। সে আত্মবিশ্বাসী হয়ে সব ঘটনা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল। সবগুলো মেয়েকে বের করার পর একটি নাবালিকা মেয়েকে বের করল ছেলে দুটো। মেয়েটার বয়স তেরো-চৌদ্দ বছর। উজ্জ্বল ফর্সা গায়ের রঙ। নাকের নল দিয়ে রক্ত পরছে। চোখ দুটো আধ বোঁজা। অবস্থা কাহিল। মেয়েটিকে বের করা হলেই ড্রাইভিং সিট থেকে নামল একজন লোক। লোকটির পরণে সাদা পাঞ্জাবী আর ধুতি। মাথায় কোঁকড়া চুল। পায়ে সাধারণ জুতো। অন্তর্ভেদী, তীক্ষ্ম ধারাল চোখ। সুঠাম, পেটানো শরীর। মোটা চাদর পাঞ্জাবির উপরে। লোকটিকে দেখে চমকাল শেহনাজ। চেনা চেনা লাগল। মানসপটে ভেসে উঠল সে রাতের দৃশ্য। এ তো সেই লোকটা। এ লোকটাই তিন মাস আগে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নির্মম ভাবে এক বয়স্ক লোককে খুন করেছিল। লোকটা এখানে এতগুলো মেয়েকে নিয়ে এসেছে কেন?

নাবালিকা মেয়েটিকে সেইদিনের লোকটার সম্মুখে দাঁড় করানো হলো। মেয়েটির রোগা দেহ সমানে দুলছে। শেহনাজ ভয় পেল। মেয়েটিকে কি এবার মেরে ফেলবে ওরা?
একটি ছেলে বলে উঠল,
-” বস, এই মেয়েই তহন আওয়াজ করছিল। দিছি ইনজেকশন। মাতাল হইয়া রইছে এখন। থাপড়াইছি পরে ইচ্ছামতো। কেউ শুনলে কি ঝামেলাই না হইতো”।

বস অভিহিত করা লোকটি হাসল। গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়াল। সিগারেট ধরাল। ধোঁয়া উড়িয়ে বলল,
-” শুনুক। এই শহরের কোনো মাদার’চোতের সাহস নাই আমারে নিয়া বদনাম রটানোর”।

দ্বিতীয় ছেলেটি বলল,
-” তবুও বস, সামনে ইলেকশন। একটু সতর্ক হইয়া কাজ করাই ভালো”।

প্রথম ছেলেটি বলল,
-” এই মেয়েরে শাস্তি দিবেন না বস? কন তো জবান বন্ধ কইরা দেই একেবারে”।

লোকটি ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। তৃপ্তি নিয়ে সিগারেট খেল। ধোঁয়া উড়িয়ে সিগারেট শেষ করল শান্তিতে। সিগারেট শেষ হলেই তা রাস্তায় ফেলে দিল। পায়ের নিচে পিষল বাকি সিগারেটের অংশ টুকু। শয়তানি কণ্ঠে বলল,

-” জবান বন্ধ করলে খদ্দের টাকা কম দিবো। জোরজবরদস্তি করলে খদ্দের মজা পায়। আওয়াজ করলে, চেঁচামেচি করলেই তো আসল মজা পাওয়া যায়। নাইলে মনে হয় মরা মানুষের লগে খেলতাছে”।

উচ্চস্বরে হাসল ওরা। বিশ্রী, জঘন্যতম হাসি। ছেলেটি বলল,
-” আপনি এগুলা ভালোই বুঝেন বস”।

লোকটি বলল,
-” যা এখন এই মেয়েরে নিয়া যা। সবাইরে আটকায় রাখ। জ্ঞান রাখিস না কারোর। পাহাড়াদার বাড়া। ইলেকশন শেষ হইলেই সবাইরে পাঠায় দিমু। আর শোন কালকে নয়টা বাজলে এইখানে থাকবি। বস্তিতে যেতে হবে, মেয়ে আরো আছে”।

ছেলেগুলো চলে গেল মেয়েটাকে নিয়ে। পিছন পিছন ওদের বস ও গেল। শেহনাজ এগিয়ে গেল পিছু পিছু। এই শীতেও ওর শরীর বেয়ে ঘাম ঝরছে। থরথর করে কাঁপছে শরীর। জঙ্গলের মাঝে বিরাট বাড়ি। শ্যাওলা আর ময়লা জমে বাড়ির দেয়াল গুলো নষ্ট, বিবর্ণ হয়ে গেছে। জমিদার বাড়ির মতো বাড়িটি। আকারে বিশাল। শেহনাজ গাছগাছালির আড়ালে থেকে সব দেখল। নড়ল না একদম। ঘন শ্বাস ও ফেলল না। সে জানে, একবার ওরা তাকে ধরে ফেললে একদম গিলে খাবে। লোকগুলো বাড়িতে ঢুকতেই শেহনাজ ওখান থেকে ছুটে বেরিয়ে এলো। অটো ওয়ালাকে কল করল। অটো তখন বেশি দুরে যায়নি। শেহনাজের ফোন পেতেই এলো সে। শেহনাজ উঠে বসল। দ্রুত চলল অটো। কেউ পিছনে তাকাল না। শেহনাজ এই তিক্ত ঘটনার সম্মুখীন হয়ে দোটানায় ভুগল।

_________

ওখান থেকে ফিরতে ফিরতে শেহনাজের অনেকটা সময় লেগে গেল। সে ফিরল দুপুরের পর। শরীরটা তার ভার ভার লাগছে। কোথাও একটা যন্ত্রণা লুকিয়ে আছে ভিতরে। শেহনাজ ফ্রেশ হলো সময় নিয়ে। সজনে ডাটা দিয়ে ডাল রান্না করল। ভাত রাধল। এমিরের প্রিয় খাবার। রান্নাবান্না সেরে গোসল দিল। চা নিয়ে গেল বেলকনিতে। চেয়ারে বসে বাইরের প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত হয়ে উঠল ও। এতদিন পর আবার পেই রাস্তাটিকে দু চোখ ভরে দেখল। সেদিন এই রাস্তায় ওই লোকটা বয়স্ক লোকটিকে নৃশংস ভাবে মেরে ফেলেছিল। সব জেনেও শেহনাজ কিচ্ছু করেনি, জানতে চায়নি এ ভয়ানক মৃত্যুর মূল কারণ। এমিরকে এ ঘটনার কথা জানিয়েছিল শেহনাজ। এমির বিশ্বাস করেনি। এমিরের ভাষ্যমতে বাড়ির কাছের, জানাশোনা রাস্তায় এসে কেউ কাউকে খুন করতে যাবে এমন বোকা পৃথিবীতে নেই। এটা শেহনাজের হ্যালুসিনেশন। শেহনাজের এ কথা শুনে খুব রাগ হয়েছিল। মন খারাপ হয়েছিল। এমির কেন তার কথা বিশ্বাস করল না? কেন পাত্তা দিল না? রাগে দুঃখে শেহনাজ ভিডিওটা আর এমিরকে দেখায়নি। নির্দিষ্ট ফোল্ডারে লক করে রেখেছিল।

শেহনাজ ফোন ঘাটল। সেই পুরোনো ভিডিওটা আবার প্লে করল। আজকের ভিডিও টাও দেখল। সে ঠিক দেখেছে। এই লোকটাই ওই লোক। শেহনাজ কি করবে ভেবে পায় না। মাথা ঘোরাচ্ছে ওর। মেয়েগুলোর এমন করুণ অবস্থা ক্ষতবিক্ষত করছে তাকে। মেয়েগুলোর এখন কি হবে? মারা যাবে ওরা? নাকি ওদেরকে রে’ইপ করবে?

শেহনাজ শাড়ি বদলাল। বিয়ের আগে যেমন পোশাক পরতো ঠিক তেমন পোশাক পরল। লং ফ্রক পরল। স্কার্ফ নিল গলায়। চুলগুলোকে উঁচু করে বাঁধল। পরিস্থিতির তোপে পরে শেহনাজ বাধ্য হলো নিজের বাড়িতে ফিরতে। শেহনাজ বাড়িতে পৌছে অস্বস্তি বোধ করল। এ বাড়ি তার নিজের। এ বাড়ির প্রতিটি ইট-পাথর শেহনাজের আপন। বাড়ির অলিগলিতে শেহনাজের বিচরণ ছিল এক সময়। বাড়ির সদস্য গুলোকে সর্বক্ষণ মাতিয়ে রাখতো সে। অথচ আজ এ বাড়ির কোথাও সে নেই। কেউ তাকে খুঁজছে না, চাইছে না। ফিরে আসা কি উচিত হলো? ভাবে শেহনাজ। উপায় না পেয়ে প্রধান দরজায় আসে। দারোয়ান আঙ্কেল শেহনাজকে দেখে বাঁধা দেয় না। গেট খুলে দেয়। শেহনাজ খানিক অবাক হয়। সে ভেবেছিল এ বাড়িতে ঢুকতে হলে ওকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। অনুমতির ব্যাপারস্যাপারে পরতে হবে।

বাড়ির দরজায় টোকা দিল শেহনাজ। শিমলা বেগম দরজা খুললেন। শেহনাজকে দেখে তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে পরলেন। টেনে বুকে জড়ালেন শেহনাজকে। বললেন,
-” কতদিন পর তোকে দেখলাম শেহনাজ। কেমন আছিস মা”?

শেহনাজের কেন যেন এ মুহূর্তে কান্না পেল না। বরং হাসিই পেল। মায়ের বুকে থেকে উঠে বলল,

-” এখনো ভালোবাসো আমায়”?

-” ভালোবাসবো না? আমার একমাত্র মেয়ে তুই শেহনাজ। কত আদরের মা”।

-” তাহলে যোগাযোগ রাখোনি কেন আম্মু? এ বাড়ি ছেড়েছি চার মাস হতে চলল”।

শিমলা বেগম চোখ মুছলেন। ভিতরটা জ্বলছে তার। সময় নিয়ে বললেন,

-” তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। মা হয়েও একটিবার তোকে আটকানোর চেষ্টা করিনি, ওকে থামানোর চেষ্টা করিনি। অনুতাপে দ্বগ্ধ হয়ে ফোন করার সাহস পাইনি। কোন মুখে যোগাযোগ রাখবো”?

শেহনাজ চমকাল না। বলল,
-” একটা সুসংবাদ দিতে এসেছি। আব্বু কোথায়”?

-” ঘরে। তোকে দেখে হয়তো ওর অভিমান কাটবে”।

শেহনাজ ধীর পায়ে সে ঘরে ঢুকল। ঘর অন্ধকার। বাতি নেভানো। শেহনাজ বুঝল তার আব্বু কোথায় থাকতে পারে। শেহনাজ ছাদে ছুটল। সাইফুল আলম ছাদের গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে। এতদিন পর আব্বুকে দেখে শেহনাজের বুকের ভিতর তোলপাড় শুরু হলো। ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করলো বাবাকে।

সাইফুল আলম রোগা হয়ে গেছেন। চোখের নিচে কালি পরেছে। দেখে মনে হচ্ছে অসুস্থ। শেহনাজ এগিয়ে এসে পিছন থেকে ডাকল,

-” আব্বু”।

সাইফুল আলম ভাবলেন ডাকটি বুঝি তার ভ্রম। মেয়ে তার উপর বেজায় চটে আছে। কস্মিনকালেও আসবে না এ বাড়িতে। যা শুনেছে তা ভুল।

শেহনাজ আবার ডাকল। এবার পিছু ফিরলেন সাইফুল আলম। শেহনাজকে এ বাড়িতে দেখে তিনি ভিষণ চমকালেন। আশ্চর্যিত ও সন্দেহী কণ্ঠে বললেন,

-” শেহনাজ”?

শেহনাজ হাসল। চোখ ঝাপসা হয়ে এলো ওর। বাবার মুখটা আজও গম্ভীর ঠেকল। বলল,

-” কেমন আছো আব্বু”?

-” আছি, তুমি কেমন আছো”?

-” ভালো আছি আব্বু, খুব ভালো”।

সময় গড়াল। দুজনেই নিশ্চুপ। শেহনাজ মুখ খুলল।

-” এমির আর বেকার নেই আব্বু। ব্যাংকে জব পেয়েছে। ভালো স্যালারি। আমাদের সংসার খুব ভালো চলছে আব্বু। তোমার ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয়নি। আমরা সুখে আছি”।

সাইফুল আলম গম্ভীর হলেন,
-” হ্যাঁ জানি সেসব। বাবা মায়ের মুখে চুনকালি লাগিয়ে তুমি যে চলে গিয়েছিলে, সেটা কি ঠিক ছিল শেহনাজ? তোমার থেকে কি আমরা এটা আশা করেছিলাম”?

শেহনাজ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। চোখ ভিজে আসছে ওর। বলল,
-” আব্বু, ছোটবেলা থেকে সবসময় তোমাকে বন্ধু হিসেবে মেনেছি। তোমার সাথ সব কথা, সব ঘটনা শেয়ার করেছি। কখখনো কোনো কিছু তোমার থেকে আড়াল করিনি। ছোট বেলা থেকেই আমি শান্তশিষ্ট ছিলাম। কারো সাথে তেমন মিশতাম না। আম্মু ভয় পেতো আমার এমন শান্তশিষ্ট আচরণ দেখে। ভাবতো আমি সমাজের সবার সাথে মিলেমিশে চলতে পারবো না। তুমি সবসময় আমাকে স্কুলে নিয়ে যেতে, নিয়ে আসতে। কখনো একা ছাড়োনি আমায়। কলেজে ওঠার পর এ অভ্যেস পাল্টেছে। আমি একা কলেজে গিয়েছি। দু তিনজন বন্ধু বানিয়েছি। কিন্তু আমি ছটফটে, বেপরোয়া, অবাধ্য হয়েছি এমিরকে ভালোবেসেই। প্রাণবন্ত হয়েছি ওর দেখা পেয়ে। এমির আমার জীবনে এক অন্যরকম সুখ আব্বু। আমি কখন, কবে এমিরকে ভালোবেসে ফেলেছি আমি নিজেও জানি না। মানুষটার ব্যক্তিত্ব, আচরণ সব কিছুতে আমি বিমোহিত হয়ে পড়েছিলাম। তুমি তো জানো আমি আর পাঁচটা মেয়ের মতো প্লে গার্ল নই। একজনকে ভালোবাসবো, আরেকজনকে বিয়ে করবো এরকম চিন্তাভাবনা আমার মাথায় কখনো সেট হয়নি। আমার প্রথম ভালোবাসা এমির। আর শেষ ভালোবাসা হিসেবে ওকেই চেয়েছি। ওর দারিদ্রতা আমাকে কখনো পিছু ফিরে তাকাতে দেয়নি। এমির খুব ভালো ছেলে আব্বু”।

থামল শেহনাজ। বলল,

-” তুমি আমার ভালো চাও। ভালো চাও বলেই বড়লোক ঘরে আমাকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলে। যাতে আমাকে কখনো কাজ করতে না হয়, কষ্ট পেতে না হয়। রাণীর মতো আমি যেন চলাফেরা করতে পারি, নিজের সব শখ আহ্লাদ পূরণ করতে পারি। তোমার চাওয়া ভুল নয়। তবে একজন নারীর জীবনে সংসারের দায়িত্ব ঠিক কতটা মধুর তা তুমি আম্মুকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবে। আমাকে ভুল বুঝো না। আমি কেবল সুখে থাকতে চেয়েছি। আর আমি জানি এমির সাখাওয়াত ব্যতিত অন্য কারো সাথে আমি সুখী হবো না। এমির আমাকে ভালোবাসতো না আব্বু। আমি জোর করে ওকে আমাকে বিয়ে করতে বাধ্য করেছি। আমার এত এত টাকাপয়সা দেখেও এমির আমাকে চায়নি। আমার ধন সম্পদের লোভ ও কখনো করেনি। এমির খুব সৎ আব্বু। ওর মতো ছেলে আজকাল পাওয়া যায় না”।

সাইফুল আলমের মন আকস্মিক সতেজ হয়ে উঠল। এতদিন পর মেয়েকে দেখে ভালো লাগলো। মেয়ের সুখের কথা জেনে শান্তি অনুভব করল। এমির তবে খারাপ ছেলে নয়, টাকার জন্য শেহনাজকে ব্যবহার করেনি ছেলেটা।

বলল,
-” সুখে আছো জেনে ভালো লাগছে”।

শেহনাজের হুট করে মন খারাপ হলো। জড়িয়ে ধরল বাবাকে। বাবার বুকের মাঝে নিজের সুখ খুঁজে পেল। আচমকা শব্দ করে কেঁদে উঠল। কান্নারত কণ্ঠে বলল,

-” আমাকে ক্ষমা করে দাও আব্বু। আমি অবাধ্য হয়েছি, তোমাদের সম্মান নষ্ট করেছি। আমাকে প্লিজ মাফ করে দাও”।

বরফ গলল। সাইফুল আলম বললেন,
-” অনেক আগেই ক্ষমা করেছি মা। তুমি সুখে আছো এটাই সবচে বড় পাওয়া”।

শেহনাজ থামল। কিছুক্ষণ দোনামনা করে বলল,

-” আমি মা হতে চলেছি আব্বু। এমিরের সন্তান আমার গর্ভে। আমার প্রতি তুমি রাগ পুষে রেখো না। আমার খুব কষ্ট হয়। এসময় এত কষ্ট আমি কি নিতে পারি বলো”?

সাইফুল আলম থমকালেন। বললেন,
-” তুমি মা হতে চলেছো”?

শেহনাজ হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। সাইফুল আলম অস্ফুট স্বরে বলে উঠলেন,

-” আলহামদুলিল্লাহ্। এত বড় হলে কবে তুমি? এমির জানে”?

শেহনাজ এবার লজ্জা পেল। নাক লাল হয়ে উঠল ওর। বলল,

-” এখনো জানাইনি। সর্বপ্রথম তোমাকে জানাতে এসেছি”।

সাইফুল আলমের অভিমান কেটেছে। রাগ নেই। এতদিনের দ্বন্দ সরে গেছে। মেয়ের থেকে এমন সুসংবাদ পেয়ে আনন্দে নেচে উঠল উনার প্রাণ। শিমলা বেগমকে ডেকে উঠলেন উচ্চস্বরে। বললেন,
-” এক্ষুণি আমার মায়ের পছন্দের খাবার রান্না করো। আজ বাপ বেটি মিলে এক সাথে খাওয়াদাওয়া করবো”।

শেহনাজ এমিরকে কল করল। এমির ফোন ধরল না। ব্যস্ত বোধহয়। শেহনাজ এমিরের থেকে কিছুটা দুরে দুরে থাকছে আজকাল। তার মুড সুয়িং হচ্ছে। সেদিনের ঘনিষ্ঠতার পর এখন শেহনাজের মনে হয় এমির তাকে ভালোবেসে কাছে টানেনি। শারীরিক চাহিদার টানে কিংবা মেয়েলি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেখে এমির নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল বলেই মনে হয় শেহনাজের। কারণ এমির কখনো তাকে “ভালোবাসি” শব্দটি বলেনি। শেহনাজের জন্য সে যা করছে সব বুঝি দায়িত্বের খাতিরে?

শেহনাজ এমিরকে টেক্সট করল,

-” আব্বুর বাড়িতে এসেছি। থাকবো দু দিন। রান্না করে এসেছি। খেয়ে নিবেন”।

চলবে?