মন ফাগুন পর্ব-০৩

0
33

#মন_ফাগুন
#লেখনীতে_তাইয়্যেবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_০৩

রায়ান ফোন কেটে রুমের ভিতরে আসে নিয়া ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হয়।নিয়া বলে –

“- তুমি কোথায় গিয়েছিলে রায়ান “।

“- আসলে একটা জরুরি ফোন কল ছিলো সেটা রিসিভ করতে যেতে হয়েছে “।

“- ফ্যামিলির কেউ কি ফোন করেছে বিয়ে বাড়িতে এখন সবাই কি করছে। নিহান ভাই নিশ্চয়ই আমাদের খুঁজে বের করে ফেলবে তখন আমাদের আলাদা করে দিবে। চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি “।

রায়ান গিয়ে নিয়াকে জড়িয়ে ধরে আর বলে –

“- টেনশন করো না নিহান আমাদের খুঁজে বের করতে পারবে না আমরা অনেক দূরে রয়েছি। এখানে কাছে একটা কাজি অফিস রয়েছে সেখানে গিয়ে বিয়ে করে নিবো আমরা। আমরা দুইজন সবসময় একসাথে থাকবো “।

নিয়া আরো ভালো করে রায়ানকে জড়িয়ে ধরে সেটা দেখে রায়ান একটা হাসি দেয় কারণ নিয়া যানে না ওর সাথে কি হতে চলছে। শুধু একবার বিয়ে হয়ে গেলে রায়ান শিকদার বাড়িতে ঢুকতে পারবে তারপর কি হবে সেটা শুধু সময়ের অপেক্ষা। মিহি মাথায় একশো চিন্তা নিয়ে গাড়িতে বসে রয়েছে নিহান ফোনে ভিডিও দেখছে।

দুই ঘণ্টা পর গাড়ি নিহানের বাড়িতে পৌঁছে যায় ড্রাইভার দুইজনকে নামতে বলে। হানিয়া বেগম আগে থেকে বাড়িতে চলে আসে যদিও বিয়েটা ওনি এখনো মেনে নিতে পারেন নাই। তবুও নতুন বউকে বরণ করে ঘরে তুলতে হবে তাই নিহান গাড়ি থেকে নামতে যাবে তখন হানিয়া বেগম আসে আর বলে –

“- নিহান নতুন বউ নিয়ে প্রথম বাড়িতে ঢুকছো বরণ করতে হবে “।

মিহি কি করবে সেটা বুঝতে পারে না তবে যা হচ্ছে হতে দেওয়া ছাড়া আর কি করার। তাই হানিয়া বেগম মিহিকে একটু শরবত আর মিষ্টি দেয় মিহি সেটা খেয়ে নেয় এরপর বাড়িতে ঢুকে। বিশাল বাড়ি কি সুন্দর ড্রয়িং রুম বড়ো সিঁড়ি আর বাহিরে কতো গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে যদিও মিহির বাড়ি বড়ো তবে এতো বড়ো না। মিহি শুধু বাড়ি দেখতে থাকে হানিয়া বেগম বরণ করে নিজের রুমে চলে যায় সব দায়িত্ব জায়ানের বউ সারাকে দিয়ে। নিহানের একটা কাজ আছে তাই সে সারা ভাবী আর নূহাকে বলে –

“- ভাবী তুমি মিহিকে রুমে নিয়ে যাও। আর নূহা তোর কিছু জামাকাপড় ওনাকে পড়ার জন্য দিবি আমার একটু কাজ আছে “।

নিহান একটু বাড়ির বাহিরে চলে যায় সানভি সেখানে রয়েছে। নূহা আর সারা মিহিকে রুমে নিয়ে যায় যেহেতু বিয়ে হয়েছে তাই ওকে নিহানের ঘরে থাকতে হবে। মিহি রুমে যায় বেশ পরিপাটি রুমটা সুন্দর করে সাজানো আর অনেক বড়ো। সারা বলে –

“- মিহি তুমি অনেক সময় ধরে ভারী শাড়ি পড়ে রয়েছো তাই ফ্রেশ হওয়া দরকার। আসলে বিয়েটা নিয়ার সাথে হওয়ার কথা ছিলো তাই নিয়ার মাপের কিছু শাড়ি কর্ভাডে রাখা আছে। আশা করি তুমি সেটা পড়তে পারবে “।

নূহা গিয়ে শাড়ি বের করে দেয় মিহি সেখান থেকে একটা কালো শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুম চলে যায়। সারা বাসর ঘরের জন্য সব তৈরি করতে যায় এতোখন মিহি চুপচাপ ছিলো কিন্তু আর চুপ থাকতে পারছে না। মিহি মনে মনে বলে –

“- আরে মিহি তোর সাথে এইসব কি হচ্ছে হঠাৎ করে বিয়ে শশুড়বাড়ি আবার বাসর। মিহিরে মিহি তুই শেষ “।

মিহি সব কথা বাদ দিয়ে শাড়ি হাতে নিয়ে পড়তে যাবে কিন্তু সে শাড়ি পড়তে যানে না তাই ওয়াশরুমের ফাঁক দিয়ে দেখে বাহিরে নূহা দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাই বের হয়ে নূহাকে বলে একটু শাড়ি পড়িয়ে দিতে নূহা তাকে শাড়ি পড়িয়ে দেয়। মিহিকে কালো শাড়িতে বেশ মিষ্টি লাগছে সারা দুধ নিয়ে রুমে আসে আর বলে –

“- আরে বাহ শাড়ি পড়ে দেখি তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে আমার ভাসুর তো চোখ সরাতে পারবে না “।

মিহি একটা হাসি দেয় ওই খাটাশ লোক আবার মিহিকে দেখবে কতো সপ্ন ছিলো তার জামাই সিনেমার নায়কের মতো হবে পুরো শাকিব খান। কিন্তু কি কপাল শাকিব খানকে না দিয়ে মিশা সাওদাগর ছিলো কপালে তার। নিহান বাড়ির বাহিরে গিয়ে সানভির সাথে দেখা করে আর বলে –

“- কি অবস্থা সাংবাদিক সহ সবাইকে সামলাতে পারলে “।

“- স্যার সবাইকে মেনেজ করা হয়েছে কিন্তু পার্টির মেম্বারের সাথে কথা বলা হয় নাই। আর সাংবাদিকরা বলছে হঠাৎ করে বউ কি করে বলদে যেতে পারে সো একটা ঝামেলা হচ্ছে “।

“- হুম বুঝতে পারছি খুব জরুরি সবাইকে এই বিষয়ে জানাতে হবে সামনে নিবার্চন কোনো রকম সমালোচনা এখন চাই না। নিয়া আর রায়ানের কোনো খোঁজ পাওয়া গেছে ওরা কোথায় “।

“- না স্যার রায়ানের বিষয়ে কোনো ঘটনা জানা যায় নাই।তবো টেনশন করবেন না খুব তাড়াতাড়ি খুঁজে বের করব “।

“- হুম “।

সানভির সাথে কথা বলা শেষ করে নিজের রুমে চলে আসে মিহি এতোখন সারা আর নূহার সাথে কথা বলছিলো। নিহানকে রুমের ভিতরে আসতে দেখে সারা আর নূহা উঠে যায়। সারা বলে –

“- নিহান তাহলে তোমরা থাকো আমি যায় আমার কাজ রয়েছে “।

সবাই চলে যায় নিহান ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে চলে যায় মিহি সেইদিকে তাকিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে। পাশের টেবিলে একটা দুধের গ্লাস দেখে সেটা খেয়ে ফেলে সারা ভাবী অর্ধেক দুধ নিহাকে দিতে বলেছিলেন কিন্তু মিহি পুরো খেয়ে ফেলে। নিহান ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বলে –

“- কি হলো এইরকম পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছেন কোনো গ্লাস হাতে “।

“- আসলে সারা ভাবী বলেছিলো অর্ধেক দুধ আপনাকে দিতে কিন্তু আমি ভুল করে পুরোটা খেয়ে ফেলেছি “।

“- থাক আপনি খান আর এইসব রাতে দুধ খাওয়ার মতো বোকা বোকা অভ্যাস আমার নাই “।

“- আচ্ছা ঠিক আছে “।

নিহান নিজের টাওয়াল বেলকনিতে রেখে আসে তবে একটা জিনিস খেয়াল করে মিহি কালো রঙের শাড়ি পড়ে রয়েছে। নিহান বলে –

“- আপনি কালো রঙের শাড়ি কোনো পড়েছেন শোক দিবস পালন করছেন কি?

“- আপনার সাথে বিয়ে হয়েছে এর চেয়ে বড়ো শোক আর কি হতে পারে “।

“- তাহলে সাদা রঙের শাড়ি পড়েন “।

“- তাহলে আপনার মৃত্যুর তারিখ বলেন কারণ বিধবা হওয়া ছাড়া সাদা রঙের শাড়ি কেউ পড়ে না “।

নিহান শুধু মিহির দিকে তাকিয়ে থাকে ইচ্ছা করছে কিন্তু নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। মিহি দুধটা খেয়ে হেঁটে দরজার দিকে যেতে থাকে তাই নিহান জিজ্ঞেস করে –

“- কি হলো কোথায় যাচ্ছেন আপনি “।

“- কোনো ঘুমাতে যাচ্ছি আচ্ছা আপনাদের গেস্ট রুম কোথায় আসলে খুব ঘুম পেয়েছে “।

“- ঘুম পেয়েছে তো ঘুমান কিন্তু আপনি গেস্ট রুমে যাবেন কোনো এখানে ঘুমান। আমরা স্বামী স্ত্রী সো একরুমে ঘুমাতে হবে না হলে পরিবারের সবাই খারাপ মনে করবে “।

“- কি বলছেন আমরা এক রুমে ঘুমাবো মানে দেখুন আমি কারো সাথে ঘুমাতে পারি না “।

“- দেখুন আমি বুঝতে পারছি আপনি হয়তো মনে করছেন এক রুমে থাকলে আমি আপনার সাথে উল্টো পাল্টা কাজ করবো। কিন্তু টেনশন করবেন না এইরকম কোনো কিছু হবে না সো ঘুমিয়ে পড়ুন “।

মিহি পড়েছে একটা ঝামেলায় এই লোকটাতো যানে না তার কি সমস্যা রয়েছে। সত্যি যদি অন্য ঘরে ঘুমাতে যায় তাহলে বাড়ির লোক কি মনে করবে কিন্তু সে এক রুমে কারে্ সাথে ঘুমাতে পারবে না। নিহান বলে –

“- মিহি আপনি ছোফায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন নরমালি আমি কারো সাথে বেড শেয়ার করি না “।

নিহান কি বললো ছোফায় ঘুমিয়ে পড়বে মানে বাংলা সিনেমায় সবসময় নায়ক নায়িকার বিয়ে হলে মেনে না নিলে নায়িকা বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ে। আর নায়ক মেঝেতে তাহলে মিহি কোনো ছোফায় ঘুমাবে। মিহি বলে –

“- বাংলা সিনেমায় সবসময় নায়িকা বেডে ঘুমায় আর নায়ক মাটিতে ঘুমায় সো আপনি ছোফায় ঘুমান আর আমি বেডে ঘুমাবো “।

“- আপনি কি চুপচাপ ঘুমাবেন নাকি আবার ধরি নিয়ে এে হাত পা বেঁধে দিবো। কালকে সকালে ঘুম থেকে উঠে পরিষদে যেতে হবে এমনি বিয়ে নিয়ে যা ঝামেলা হলো সেটার জন্য সমাধান করতে হবে “।

“- হুম সমাধান করবেন আর আপনার বউ পালিয়ে গেছে রাগ আমার উপর দেখাচ্ছেন কোনো। ভাগ্য ভালো আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি না হলে সারাজীবন দেবদাস হয়ে থাকতে হতো “।

“- ওহ রিয়েলি এতো উপকার কে করতে বলেছিলো আপনাকে চুরি করে খাবার খেতে এসে ধরা পড়েছেন। আপনার ভাগ্য ভালো যে পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দেয় নাই চুন্নি মেয়ে “।

“- দেখুন একদম চোর বলবেন না আমাকে আমি চোর নই “।

“- আপনি চোর না ডাকাত এখন চুপচাপ ঘুমান সত্যি কালকে আমার কাজ আছে “।

নিহানের রাগী চোখ দেখে মিহি চুপচাপ ছোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ে তবে ছোফাটা বেশ বড়ো আছে। কিন্তু মিহির সমস্যা কথা কি নিহানকে বলে দিবে। মিহি বলে –

“- আচ্ছা শুনুন “।

‘- কি হয়েছে আবার “।

“- আপনার কি ঘুমের মধ্যে কথা বলা বা হাঁটাহাটির অভ্যাস রয়েছে “।

“- এইসব অদ্ভুত অভ্যাস আমার নাই “।

“- ঘুমের মধ্যে কান্না করার অভ্যাস রয়েছে “।

“- মিহি আপনি কি ঘুমাবেন না কি আমি সত্যি দড়ি নিয়ে আসবো “।

“- ঠিক আছে ঘুমিয়ে পড়ছি “।

মিহি কি করবে তাই চুপচাপ শুয়ে পড়ে। শরীরটা বেশ টার্য়াড লাগছে নিহানের সারাদিন যা হলো এরপর একটা ঘুম দরকার। নিহান চোখ বন্ধ করে কখন ঘুমিয়ে পড়ে বুঝতে পারে না হঠাৎ করে কারো কান্না করার শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে যায়। এতো রাতে কে কান্না করতে পারে ঘুম থেকে উঠে পাশে থাকা লাইট অন করে দেখে মিহি কান্না করছে। নিহান বলে –

“- মিহি কি হয়েছে আপনি কান্না করছেন কোনো “।

“- এ্যাঁ এ্যাঁ “।

মিহি কান্না বন্ধ করে না বরং আরো জোরে জোরে কান্না করতে থাকে নিহান এবার বেড থেকে উঠে যায়। মিহির ছোফার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে –

“- কি হয়েছে কান্না করছেন কোনো “।

মিহি চোখ বন্ধ করে ঘুমোর ঘোরে কান্না করতে থাকে আর বলে –

“- আমার মাংস নিয়ে নিলো আমার গরুর মাংস খাবো আমি

নিহান বুঝতে পারে না কি হচ্ছে এতো রাতে গরুর মাংস কোথা থেকে আসবে। মিহি এবার উঠে দাঁড়ায় সে চোখ বন্ধ করে কান্না করতে থাকে আর ছোটাছুটি করতে থাকে। নিহান এখন বুঝতে পারে আসলে ঘুমের মধ্যে কথা বলার অভ্যাস রয়েছে মিহির। নিহান বলে –

“- না এই মেয়ের জন্য সারারাত ঘুমাতে পারব না। কারণ এই মেয়ে আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না “।

নিহান দরজা খুলে একটা দড়ি নিয়ে আসে মিহিকে ছোফায় শুয়িয়ে দিয়ে হাত পা বেঁধে দেয়। আর মুখ বন্ধ করার জন্য কাপড় দিয়ে দেয় অবশ্য যাতে শ্বাস নিতে পারে সেই বিষয় খেয়াল রাখে। মিহি শান্ত হয়ে যায় যা শক্ত করে বেঁধেছে নড়াচড়া করার উপায় নাই। নিহান বলে –

“- এই চোর মেয়ে একদিনের নিহান নেহাল শিকদারের জীবন তেজপাতা করে দিয়েছে। যদি এর সাথে সারাজীবন থাকতে হয় তাহলে পাবনা চলে যেতে হয় “।

#চলবে