মন ফাগুন পর্ব-০৪

0
32

#মন_ফাগুন
#লেখনীতে_তাইয়্যেবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_০৪ ( অল্প সময় একসাথে থাকা)

সকাল নয়টা বেজে গেছে যদিও সময়টা অনেক কিন্তু শীতের সকালে সবার ঘুম ভাঙতে দেরি হয়। মিহি ঘুম থেকে উঠে পিটপিট করে চোখ খুলে যখন উঠতে যাবে তখন দেখে তার হাত পা বেঁধে রাখা হয়েছে। মিহি যখন নড়াচড়া করতে থাকে হঠাৎ করে কারো গলার আওয়াজ শুনতে পাই।

“- মিহি কি করছেন পড়ে যাবেন “।

মিহি চোখ তুলে দেখে সামনে নিহান দাঁড়িয়ে রয়েছে। মিহি বলে –

“- আরে দেখুন কে যোনো আমার হাত পা বেঁধে রেখেছে এখন উঠতে পারছি না আমি। সাহায্য করুন আমার “।

নিহান এগিয়ে যায় মিহির কাছে ও অনেক আগে ঘুম থেকে উঠে পড়েছে কিন্তু মিহি ঘুমিয়ে ছিলো বলে বিরক্ত করে নাই। নিহান গিয়ে হাতের বাঁধন খুলে দেয় আর বলে –

“- কালকে রাতে আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি ঘুমের মধ্যে হাঁটাহাটি বা কথা বলি কি না। আসলে এইসব অভ্যাস আপনার মধ্যে রয়েছে তাই না। রাতে এমন অদ্ভুত কাণ্ড করছিলেন তাই বাধ্য হয়ে হাত পা বেঁধে রাখতে হয়েছে “।

“- ওহ আসলে আমার ছোটবেলা থেকে ঘুমের মধ্যে হাঁটাহাটি বা কথা বলার অভ্যাস রয়েছে। সেইজন্য মেসে সবাই একরুমে থাকতো আর আমি অন্য রুমে। কালকে মনে করেছি আপনাকে বলবো আমার অভ্যাসের কথা কিন্তু পরে মনে করলাম পরে যদি আপনি আবার মনে করেন আমার মাথা খারাপ তাই বলি নাই “।

“- তো আপনার কি মনে হয় মিহি এইসব অদ্ভুত কথা জেনে আপনার মাথা খারাপ সেটা বুঝেছি। যেদিন আপনার সাথে প্রথম দেখা হয়েছে সেইদিন বুঝতে পারি আপনার মাথায় সমস্যা।

“- কি বললেন আপনি “।

“- যা শুনেছেন তাই বলেছি এখন যান ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসেন বাহিরে মেহমান রয়েছে। নতুন বউকে সবাই দেখবে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আসেন। নূহা আর সারা ভাবীকে আপনাকে সাজিয়ে দেওয়ার জন্য পাঠিয়ে দিবো “।

মিহি মুখ গোমড়া করে থাকে কিন্তু মেহমানের সামনে তাকে যেতে এই কথাটা মাথায় আসতে সব ভুলে যায়। আচ্ছা সবার যদি মিহিকে পছন্দ না হয় সে দেখতে এতো সুন্দর না তাহলে কি হবে। নিহান মিহির দিকে দেখে মেয়েটা মনে হয় ভয় পেয়েছে। নিহান বলে –

“- শুনুন মিহি কোনো মানুষকে তার রূপ দেখে বিচার করা ঠিক না প্রতেক মানুষ সুন্দর হয় সো ভয় পেতে হবে না। আর আমি যানি এই বিয়েটা যেই পরিস্থিতিতে হয়েছে তার জন্য আপনি রেডি নন। কিন্তু যেহেতু বিয়ে হয়ে গেছে আপনি এই শিকদার পরিবারের বউ সো এই পরিবারের মান সম্মান রাখা আপনার দায়িত্ব। তাই এমন কিছু করবে না যাতে সবার সামনে ছোট হতে হয় এইটা নিহান শিকদারের অর্ডার না অনুরোধ “।

মিহি একটু ভয় করছিলো কিন্তু নিহানের কথা শুনে ভালো লাগছে কি সুন্দর করে বুঝিয়ে বললো কথাটা। লোকটা সবসময় এইরকম করে কথা বলতে পারে না শুধু বকা দেয় কোনো। মিহি বলে –

“- আপনি এতো সুন্দর করে কথা বলতে পারে তা আগে যানা ছিলো না “।

“- আমি কি আপনার সাথে খারাপ করে কথা বলি “।

“- না আপনি সবসময় এতো মিষ্টি করে কথা বলেন। কোথাও আপনার কথা শুনে ডায়বেটিস না হয়ে যায় “।

“- মিহি এখন যান ওয়াশরুমে ফ্রেশ হন। নূহা আর সারা ভাবী আসবে “।

মিহি মুখের একটা ফানি রিয়েকশন দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় নিহান একটু হাসে জীবনে এইরকম অদ্ভুত মেয়ে দেখে নাই। নিহান রুম থেকে বের হয়ে নূহার রুমে যায় সেখানে সারা ছিলো। নিহান বলে –

“- নূহা আর ভাবী তোমরা গিয়ে একটু মিহিকে রেডি হতে সাহায্য করো। বাহিরে অনেক মানুষ রয়েছে নতুন বউ দেখবে ওনি একা একা রেডি হতে পারবে না “।

সারা বলে –

“- আরে বাহ নিহান বিয়ের প্রথম রাত যেতে না যেতেই বউয়ের প্রতি ভালোবাসা ফুটে উঠছে কাহিনী কি “।

“- কাহিনী কিছু না যাও তুমি মিহিকে সাহায্যে করো গিয়ে “।

নিহান চলে আসে বাহির থেকে একটু রোদের ঝিলিক আসছে শীতের দিনে রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকার মজায় আলাদা। নিহান ছাদে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তবে ছাদে হানিয়া বেগম ও ছিলো। নিহান বলে –

“- মম তুমি ছাদে “।

“- একটু রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে এসেছি। নিহান তোমার সাথে একটা জরুরি বিষয়ে কথা ছিলো “।

“- হুম মম বলো কি কথা “।

“- দেখো নিহান বিয়ের মধ্যে একটা ঝামেলা হয়েছে সেটা বুঝতে পারছি কিন্তু তোমার বিয়ে নিয়ার সাথে ঠিক হয়েছিলো। তাই সেই নিয়মে আজকে বউভাত করার কথা ছিলো সব লোক দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া রান্না লোক, লাইট বসানোর লোক সবাই এসে নিজেদের কাজ করছে। আত্মীয় স্বজন সবাই যানে আজকে বউভাত “।

নিহান তার মায়ের কথাটা শুনে সত্যি আজকে বউভাত কথাটা মাথায় ছিলো না তার। কিন্তু সবাই যানে আজকে অনুষ্ঠান নিচে দেখে লাইটের লোক সহ অনেকে এসেছে। নিহান বুঝতে পারে না সে কি করবে তাই মমকে জিজ্ঞেস করে –

“- তাহলে কি করব এখন যা পরিস্থিতি বউভাত করার মতো মন মানসিকতা নাই তাহলে কি সবাইকে না করে দিবো। না আজকে অনুষ্ঠান করব মম “।

“- দেখো নিহান বিয়েটা যেই পরিস্থিতিতে হোক না কোনো বিয়েটা হয়েছে আর সবাই এখনো যানে তোমার বউ নিয়া। কিন্তু আসলে যে অন্য কেউ তোমার বউ সেটা জানানোর জন্য হলেও আজকে বউভাত করা উচিত।এখন তোমার যা মনে হয় তাই করো “।

“- হুম ঠিক বলেছো মম নিবার্চন আসছে সো সাংবাদিক সহ সবাইকে বিষয়টা যানানো দরকার। তাহলে বউভাতের অনুষ্ঠান আজকে হবে “।

“- ওকে তাহলে আমি নিচে যায় “।

“- মম মিহি মেয়েটা হয়তো বাচ্চা বা বোকা কিন্তু টেনশন করো না মিহি এমন কিছু করবে না যাতে আমাদের পরিবারের অসম্মান হয়। তোমার ছেলে রাজনীতি করে মানুষ কিছুটা হলে ও চিনতে পেরেছে “।

“- আমি ও সেটা চাই নিহান তুমি সুখী হও “।

হানিয়া বেগম নিচে চলে যায় নিহান রোদে দাঁড়িয়ে বাহিরে অনুষ্ঠানের জন্য আয়োজন দেখে। সানভিকে ফোন দিয়ে আসার জন্য জানিয়ে দেয় তাছাড়া ওর পার্টির মেম্বারদের সাথে মিটিং কালকে হবে সেটা বলে।

মিহি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলে সারা আর নূহা ওকে রেডি করিয়ে দেয়। একটা সুন্দর লাল টুকটুকে শাড়ি পড়িয়ে দেয় গায়ে বেশ ভালো গয়না মিহিকে একদম গিন্নি লাছে। মিহি নিজেকে আয়নায় দেখে তার মায়ের কথা মনে পড়ে যায় তার মা এইরকম করে সাজে। মিহি নিজের মাকে মিস করছে কিন্তু এখন তার মায়ের সাথে দেখা করতে পারবে না। নূহা বলে –

“- সারা ভাবী দেখো মিহিকে কি সুন্দর লাগছে একদম বউয়ের মতো যেকোনো নায়িকে হার মানিয়ে দিবে “।

“- হুম সুন্দর লাগতে হবে দেখতে হবে না বউটা কার আমাদের নিহানরে বউ।আর নিহানের পছন্দ কি কখনো খারাপ হতে পারে “।

মিহি ওদের কথাটা শুনে হাসে তবে নিহানের বউ কথাটা শুনতে বেশ ভালো লাগছে ওর। বাড়ির ড্রয়িং রুমে অনেক মহিলা বসে রয়েছে হানিয়া বেগম তাদের সাথে কথা বলছে। কিন্তু মহিলারা নিজেদের মধ্যে কথা বলে নিহান হঠাৎ করে অন্য মেয়েকে বিয়ে করে। মেয়ে দেখতে কেমন যেনো হবে নিয়াতো সুন্দর ছিলো কিন্তু এই মেয়ে কি সেইরকম হবে। সবার কথার মধ্যে সারা আর নূহা মিহিকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামে।

বাড়ির সবাই সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসা বউকে দেখতে লাল শাড়িতে কি সুন্দর লাগছে। নিয়ার থেকে চেহারায় কম না বরং বেশি সুন্দরী হবে হানিয়া বেগম মিহিকে দেখে। বিয়ের দিন মেয়েটাকে ভালো করে দেখতে পারে নাই কিন্তু সত্যি চেহারা বেশ ভালো মেয়েটার। সবাই বলে –

“- বাহ নিহানের বউ দেখি বেশ সুন্দরী। নিয়া থেকে রূপে গুণ আরো বেশি সুন্দর হবে শিকদার বাড়ির ছেলের পছন্দ আছে বলতে হবে “।

সবাই মিহিকে তার বিষয়ে জিজ্ঞেস করছে মিহি খুব শান্ত শিষ্ট হয়ে উত্তর দিচ্ছে কারণ নিহান বলেছে এমন কোনো কাজ না করতে যাতে বাড়ির কারো অসম্মান হয়। নিহান সিঁড়ি উপর থেকে দাঁড়িয়ে মিহিকে দেখে হাসছে আর বলে –

“- সবাই মনে করছে এই মেয়েটা কি শান্ত কিন্তু কেউ কি যানে আসলে এই মিহি কতটা দুষ্ট। একটা বদের হাড্ডি “।

সবার কথায় ভালো উত্তর দিলো মিহি বাড়ির বউ হিসাবে মিহিকে বেশ ভালো পছন্দ করেছে সবাই। প্রায় দুই ঘণ্টা সময় মানুষ এসে মিহিকে দেখে ফাইনালি মিহি নিজের ঘরে আসে। নিহান বেডে বসে বসে কাজ দেখছিলো মিহি রুমে আসে –

“- ওহ এই শাড়ি আর ভারী ভারী গয়না পড়ে মানুষ থাকে কি করে ইয়ার আমিতো শেষ “।

নিহান মিহির দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটাকে বেশ ভালো দেখতে লাগছে সুন্দর লাল টুকটুকে বউ। মিহি আয়নার সামনে এসে গায়ের গয়না খুলতে থাকে আর বলে –

“- আচ্ছা আপনাদের বাড়ির সবাই এইরকম গয়না পড়ে কি করে থাকে?

“- শিকদার বাড়ির বউ হতে গেলে এইসব পড়ে থাকতে হবে।

“- আচ্ছা আমি এতো সুন্দর করে সাজলাম বাহিরে সবাই কি সুন্দর প্রশংসা করলো আপনি করলেন না কোনো। নিয়া যদি এইরকম সুন্দর করে সাজতো তাহলে ওর প্রশংসা করতেন ”

“- আপনি কি নিয়া “।

“- বউতো “।

মিহির কথাটা শুনে নিহান ওর দিকে তাকিয়ে দেখে মিহি কি বলে ফেলেছে সেটা বুঝতে পারে। মিহি কোনো বললো ও নিহানের বউ ওতো এই বিয়েটা মানে না । নিহান বলে –

“- মিহি আপনি মানেন আপনি নিহান নেহাল শিকদারের বউ

“- না আমি মানি না আপনার মতো খাটাশ একটা লোকের বউ হবো আমি কখনো না “।

“- ওহ রিয়েলি আর আমিও আপনার মতো এইরকম একটা বদের হাড্ডিকে নিজের বউ হিসাবে মানি না “।

হানিয়া বেগম নিচে সবার সাথে কথা বললেন তারপর সবাই চলে গেলে উপরে উঠে নিজের রুমে চলে গেলেন। নিহান বেশি কথা না বলে বাহিরে চলে যায় মিহি নিজের রুমে বসে থাকে তখন তার মা ফোন করে। মিহি বলে –

“- হ্যালো আম্মু বলো “।

“- কি করে মিহি কোথায় তুই “।

মিহি কোথায় কতটা শুনে একটু ভয় পায় যদি ওর মা মেসে চলে আসে তখন কি হবে। মিহি বলে –

“- কোথায় থাকবো আম্মু মেসে রয়েছি আর কোথায় “।

“- না মানে কালকে থেকে তোকে ফোন করছি রিসিভ করলি না তোর বাবা তোর কথা জিজ্ঞেস করছে। সব ঠিক আছে মিহি “।

“- আব্বু হঠাৎ করে আমার কথা জিজ্ঞেস করেছে কোনো “।

“- আসলে মানে কালকে না তোর রেজাল্ট দেওয়ার কথা তাই সেটা যানতে “।

“- ওহ তাই এইজন্য বলি আমার খাটাশ বাপ রেজাল্ট ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে আমার কথা জিজ্ঞেস করবে না। একটা কথা বলো আম্মু সত্যি কি আমি তোমাদের মেয়ে না কি ডাস্টবিন থেকে তুলে নিয়ে এসেছিলে “।

“- কি কথা এইসব মিহি। তোমার আব্বু শুধু তোমার পড়াশোনার বিষয়ে জানতে চাই “।

“- পড়াশোনা বিষয়ে জানতে চাই আর আমি কি করে বেঁচে আছি সেটা জানতে চাই না “।

নিহান বাহিরে গিয়ে দেখে অনুষ্ঠানের জন্য কেমন সাজানো হচ্ছে কিন্তু ওর মনে পড়ে মিহিকে বলা হয় নাই অনুষ্ঠানের কথা। তাই নিজের রুমে ঢুকে দেখে মিহি কার সাথে যেনো কথা বলছে নিহান বলে –

“- মিহি শুনুন “।

নিহানের গলার আওয়াজ শুনে মিহি পিছনে ফিরে তাকায় ফোনে ওর আম্মুর কথা মনে পড়ে। মিহি দৌড়ে গিয়ে নিহানের মুখ ধরে ফেলে হাত দিয়ে। মিহির মা ছেলের কণ্ঠ শুনে জিজ্ঞেস করে –

“- মিহি কে তোকে ডাকলো কোনো ছেলে মনে হলো “।

“- আসলে আম্মু আমাদের পিটি টির্চার ডেকেছে তুমিতো যানো আমাদের কলেজে কতো কড়া নিয়ম মেনে চলে। এখনো ছোটদের মতো পিটি করায় তাই ডেকেছে “।

#চলবে