#মন_ফাগুন
#লেখনীতে_তাইয়্যেবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_০৫ ( ধামাকা পর্ব).
মিহি মায়ের সাথে কথা বলে শেষ করে নিহান ওর মুখ থেকে মিহির হাত সরিয়ে দেয়। নিহান বলে –
“- এইটা কি করলেন এইরকম করে মুখ চেপে ধরলেন কোনো “।
মিহি ফোন কেটে নিহানের দিকে তাকায় মিহি বলে –
“- আম্মু ফোন করছিলো তখন আপনি আমার নাম ধরে ডাকছিলেন। আম্মু যদি জিজ্ঞেস করে ছেলেটা কে তাহলে কি বলবো শুনি “।
“- কোনো বলবেন আপনার বিয়ে হয়ে গেছে সো ছেলেটা আর কেউ না আপনার হাজবেন “।
“- ওহ তাই না আপনি চিনেন আমার বাপকে আস্তা একটা খাটাশ লোক যদি যানতে পারে তাকে না বলে বিয়ে করেছি সোজা আয়না ঘরে নিয়ে বন্ধি করবে। আর আমার দুই ভাই ওরা আপনাকে মেরে নদীতে ভাসিয়ে দিবে শুধু একবার আমার বাপের সাথে দেখা করেন পরে বুঝতে পারবেন “।
“- ওহ তাই তাহলে আপনার বাবা আমাকে চিনে না এই নিহান নেহাল শিকদারকে এতো সহজে খুন করা যায় না। আর যে কথা বলতে এসেছি আসলে বিয়েটা নিয়ার সাথে হওয়ার কথা ছিলো আমার তাই সেই হিসাবে আজকে আমাদের বউভাত ছিলো। কিন্তু যা ঝামেলা হয়েছে তা হয়ে গেছে তবে সব মেহমান যানে আজকে অনুষ্ঠান তাই ডেট পিছিয়ে রাখা সম্ভব না। সো আজকে আমাদের বউভাত হবে “।
নিহানের কথাটা মিহির কান অবদি পৌঁছে যায় কিন্তু মিহি বুঝতে পারে না বউভাত করবে কোনো। নিহান বলেছে যতদিন না নিবার্চন শেষ হবে ততদিন ওর বউ হয়ে থাকবে তাহলে যদি সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় মিহি ওর ওয়াইফ তাহলে ভবিষ্যতে সমস্যা হবে –
“- দেখুন আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি কিন্তু আপনি বলেছিলেন এই বিয়েটা শুধু নিবার্চন পর্যন্ত টিকে থাকবে। তাহলে যদি সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন যে আমি মিহি তালুকদার আপনার বউ। তাহলে নিবার্চন শেষ হলে আপনি আমাকে ছেড়ে দিবেন কি করে। আপনি পুরুষ মানুষ তাই হয়তো একবার বিয়ে করলে ভবিষ্যতে সমস্যা হবে না কিন্তু আমি একজন নারী সো আশা করি কথাটা আপনি বুঝতে পেরেছেন “।
নিহান মিহির দিকে তাকিয়ে দেখে মিহির কথাটা ভুল না কিন্তু সত্যি কি নিবার্চন পরে মিহি চলে যাবে। নিহান বলে –
“- তাহলে আপনি বলুন এখন আমি কি করব সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হয়ে গেছে মিহি। সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হয়ে গেছে মিহি এখন কাকে কাকে না করব “।
“- হুম আপনার কথাটা ঠিক কিন্তু নিবার্চন পরে যদি ডিভোর্স হয় আমাদের তাহলে কি হবে “।
“- নিবার্চনের এখনো অনেক দেরি রয়েছে আর এই অনুষ্ঠান পরিবারের সম্মান জন্য দরকার। নিবার্চন পরে ভবিষ্যতে কি হবে সেটা পরে দেখা যাবে হয়তো ভালো কিছু হতে পারে “।
“- হুম ঠিক আছে কিন্তু একটা কথা মনে রাখবেন আপনার মতো এইরকম খাটাশ লোকের সাথে সারাজীবন সংসার কখনো করব না আমি “।
“- ওহ রিয়েলি মিহি আর আমি ও আপনার মতো এইরকম চুন্নি মেয়ের সাথে সংসার করব না “।
“- দেখুন একদম চুন্নি ডাকবেন না আমাকে। খুব ভালো মেয়ে আমি “।
“- আচ্ছা ভালো মেয়ে এখন স্টাফকে বলছি আপনার জন্য খাবার পাঠাতে সেটা খেয়ে নিবেন। আর অনুষ্ঠানের জন্য সাজাতে মেকআপের লোক আসবে তাড়াতাড়ি রেডি হতে হবে “।
“- সারাদিন শুধু অর্ডার দিতে পারে লোকটা সকালে কি সুন্দর করে সাজলাম একটু প্রশংসা করলো না। নিবার্চন শুধু শেষ হতে দেন এরপর এক মূহুর্ত আপনার সাথে সংসার করব না বলে দিলাম “।
মিহির কথা শুনে নিহান ওর কাছে আসে হঠাৎ করে এতো কাছে আসা দেখে মিহি ভয় পেয়ে যায়। মিহি বলে –
“- কি হয়েছে এতো কাছে আসছেন কোনো কিছু কি বলবেন
নিহান মিহির মুখের দিকে তাকিয়ে হাসে মেয়েটা ভয় পেয়েছে মনে হয়। মিহির কানের কাছে এসে নিহান বলে-
“- একটা অনুরোধ করি রাখবেন মিহি “।
মিহি কি বলবে বুঝতে পারছে না জীবনে কোনো ছেলে এতো কাছে আসে নাই ওর কারণ জীবন কোনোদিন প্রেম করে নাই। নিহানের কানের কাছে কথাটা বলার সময় ওর গরম নিশ্বাস মিহির শরীরে লাগছে। মিহি একটা শুকনো ঢুক গিলে বলো –
“- হুম বলুন “।
“- আসলে রাতে অনুষ্ঠানে অনেক লোক থাকবে তাই সেখান থেকে কোনো কিছু চুরি করবেন। টেনশন করবেন না আপনার জন্য দুই টুকরা মাংস তুলে রাখবো চুন্নি মিহি “।
মিহি কথাটা শুনে নিহানকে ধাক্কা দিলেন সাহস। মিহি বলে –
“- আপনি আবার আমাকে চুন্নি বললেন আমি কি সবকিছু চুরি করে খায় “।
“- না মানে চোরের উপর বিশ্বাস করা যায় না চোরের কোনো ধর্ম নাই “।
“- মনে হয় সানভি কল করছে আমি আসি। আর হে অনুষ্ঠান থেকে আবার মানুষের মানিব্যাগ চুরি করবেন না কিন্তু চুন্নি মিহি “।
নিহান কথাটা বলে হাসতে হাসতে চলে যায় মিহির ইচ্ছা করছে এই লোকটা সব চুল তুলে ফেলতে ওকে কোন সাহসে চুন্নি বললো। মিহি বলে –
“- আমি চুন্নি হলে আপনি একটা খাটাশ লোক। বাজে লোক একটা বিয়ের পরের দিন আপনার বউ মরে যাবে “।
বউ মরে যাবে কথাটা শুনে মিহির মনে পড়ে নিহানের বউতো ও নিজেই যদি সত্যি বিয়ের পরের দিন মারা যায়। না না মিহি এতো তাড়াতাড়ি মরতে চাই না এখনো ওর নাতি নাতিদের মুখ দেখা বাকি রয়েছে। মিহি বল –
“- না না এই অভিশাপ ফিরিয়ে নিলাম খাটাশ লোক একটা ”
নিহান ঘর থেকে বেরিয়ে আসে আর নিচে থাকা স্টাফকে বলে মিহিকে খাবার দিতে। বিকাল হয়ে যায় হানিয়া বেগম নিজের রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলো ঘুম ভেঙে উঠে যায়। আজকে বউভাতের অনুষ্ঠান তাই অনো মানুষ আসতে পারে সবাইকে ওয়েলকাম করতে হবে। হানিয়া বেগম আলমারি থেকে শাড়ি বের করে ওয়াশরুমে চলে যায়।
হানিয়া বেগম যখন ওয়াশরুমে যায় তখন একটা ছায়া ওনার রুমে ঢুকে কি যেনো ছিটিয়ে দেয়। আর আলমারি থেকে একটা শাড়ি বের করে ওর উপর কি যেনো ছিটিয়ে দেয়। হানিয়া বেগম ওয়াশরুমে যেই শাড়ি নিয়ে গেছে ওনি তাই পরে রেডি হয়ে যান আর ঘর থেকে বাহির হন।
একজন মানুষ একটা অপরিচিত মানুষকে ফোন দিয়ে বলে
“- হ্যালো বস আপনি যেমন করতে বললেন তেমন করেছি কিন্তু হানিয়া শিকদার অন্য শাড়ি পড়ে ঘর থেকে বের হয়েছে
“- তোমাকে যেটুকু করতে বলেছি সেটা করো আর শাড়ি হানিয়া শিকদার সেটাই পড়বে যেটা আমি চাই। এই বাড়িতে আরো অনেক লোক রয়েছে এই কাজ করার জন্য তুমি শুধু সঠিক সময় কাজটা করে দিও “।
“- ওকে বস কাজ হয়ে যাবে “।
মিহির অবস্থা এখন খারাপ মেক-আপ করার জন্য পার্লার থেকে অনেক লোক এসেছে কতোখন ধরে মুখে কি সব লাগিয়ে যাচ্ছে। মিহি বলে –
“- আচ্ছা আপনাদের এইসব ময়দা মাথা কখন শেষ হবে “।
“- কি বলেন মেডাম এইসব ময়দা না এগুলেন ফ্রেস পাওডার, লিপস্টিক “।
“-আচ্ছা আর শুনতে হবে না কিন্তু এইটা বলেন এইসব কবে শেষ হবে”।
“- আর পাঁচ মিনিট মেডাম “।
মিহি মনে মনে ভাবছে পাঁচ মিনিট কথাটা দুই ঘণ্টা ধরে বলছে মেয়েরা এইসব ময়দা কোনো যে দেয় মুখে। বিয়ে করলে শুধু ঝামেলায় হয় জীবনে কি সুন্দর মুখটা আমার এই ময়দার বস্তার নিচে চাপা পরে যাবে। মিহি তোর সাথে যে আর কি কি হবে কোনো যে চুরি করে খাবার খেতে গিয়েছিল সেইদিন ।
বিকালে নিহান অনুষ্ঠানে সবাইকে ওয়েলকাম করছে অনেক মেহমা এসেছে আবার পার্টির থেকে লোক এসেছে। মন্ত্রীর বাড়ির বিয়ে বলে কথা মানুতো হবে নিহান সবার সাথে কথা বলছে। মিহির সাজ শেষ নূহা আর সারা ভাবী আর জাকিয়া বেগম ওকে নিয়ে আসে। নিহান তাকিয়ে দেখে মিহির দিকে কি সুন্দর লাগছে মেয়েটা একটা সিন্ধ রুপে মুগ্ধ করার মতো রূপ।
মিহি স্টেজে এসে বসে নিহান ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় মিহি হাত ধরে স্টেজে উঠে বসে। সেখানে অনেক মানুষ রয়েছে সবাই পিক তুলছে সবাইকে সালাম দিচ্ছে। অন্যদিকে হানিয়া বেগম বাড়ির ভিতরে মহিলাদের সাথে কথা বলছে আশেপাশে মহিলারা অনুষ্ঠানে না গিয়ে এখানে বসে কথা বলছে। হানিয়া বেগম বলে –
“- আচ্ছা অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে সবাই খাবার খেতে যান “।
মেহমানরা সবাই খাবার খেতে চলে যায় হানিয়া বেগম টেবিলে বসে রয়েছে আশেপাশে তেমন কেউ নাহ। ওনি ফোনে নিহানের বাবার সাথে কথা বলছিলেন হঠাৎ করে একটা অপরিচিত লোক ছায়ার মতো এসে একটা জুস মাটিতে ঢেলে দেয়। হানিয়া বেগম কথা বলা শেষ করে তখন সারা আসে –
“- আরে বড়ো মামি তোমার শাড়িতে জুস কি করে পড়লো “।
হানিয়া বেগম শাড়ির আঁচল তুলে দেখে সত্যি জুস লেগে গেছে বাহিরে এতো মানুষ এই শাড়ি পড়ে থাকবে কি করে। হানিয়া বেগম বলে –
“- আরে এইটা কি করে হলো সত্যি জুস পড়ে গেলো কি করে টেবিলে কোনো জুস ছিলো না। তাহলে শাড়িতে জুস এলে্ কোথা থেকে “।
“- মনে হয় বড়ো মামি মেহসানরা কেউ ভুল করে ফেলে দিয়েছে এখন কি করার। তুমি ঘরে গিয়ে নতুন শাড়ি পড়ে আসো বাহিরে অনেক মানুষ। এই শাড়ি পড়ে যেতে পারবে না “।
হানিয়া বেগম নিজের রুমে চলে যায় ওনি সেখানে গিয়ে সেই আগের রাখা শাড়িটা পড়ে আজকে অনুষ্ঠানে সবাই গোলাপি রঙের শাড়ি পড়েছে। হানিয়া বেগম ওয়াশরুমে চলে যায় কিন্তু বাহির থেকে কে যেনো দরজা বন্ধ করে দেয়। অন্যদিকে মিহি সবার সাথে কথা বলতে বলতে টার্য়াড হয়ে যায়। মেহমানরা খাবার খাওয়া শেষ করে অনেক কাপল ডান্স করছে মিহি বলে –
“- ওহ সবাই কি সুন্দর ডান্স করছে আর আমি এখানে বসে বসে মানুষের সাথে কথা বলছি। আর পিক তুলছি “।
নিহান কথাটা শুনে হাসে আর বলে –
“- আপনি কি ডান্স করতে পারেন “।
“- হুম পারি “।
“- তাহলে চলুন ডান্স করা যায় “।
“- রিয়েলি “।
মিহি আর নিহান সবার মধ্যে চলে যায় মেহমানরা সবাই হাততালি দেয় নিহান মিহির দিকে তাকিয়ে বলে –
“- সো মিসেস মিহি শিকদার আপনি কাপল ডান্স করার জন্য রাজি আছেন “।
“- অবশ্যই স্যার “।
বাহিরে একটা সুন্দর গান বাজতে থাকে
“- আমি এমন একটা তুমি চাই এমন একটা তুমি ”
“যে তুমিতে আমি ছাড়া অন্য কেউ নাই “।
নিহান দেখে মিহি খুব ভালো ডান্স করছে নিহান বলে –
“- বাহ আপনি এতো ভালো ডান্স করতে পারেন আগে যানা ছিলো না “।
“- আসলে কলেজে যখন অনুষ্ঠান হতো তখন আমার বন্ধুরা ডান্স করতে পারতো না। তাই সবাইকে নাচ শিখিয়ে দিতাম বিনিময়ে সবাই আমাকে ট্রিট দিতো “।
“- আপনি খাবারের জন্য সবকিছু করতে পারে তাই না মিহি
“- হুম সব করতে পারি “।
হানিয়া বেগম ওয়াশরুম থেকে শাড়ি পড়ে বাহির হলেন আয়নায় একটু চুলগুলো ঠিক করে নিলেন। আয়নার পাশে একটা কয়েল রাখা রয়েছে ভুল করে কয়েলে হঠাৎ করে হানিয়া বেগমের শাড়ি আচঁল পড়ে যায় যদি ওনি তাড়াতাড়ি সেখান থেকে সরে আসে। বাহিরে যেতে হবে কিন্তু যখন দরজার কাছে গিয়ে দেখেন দরজা বন্ধ করা। ওনি বুঝতে পারে না তাই ডাক দেন
“- বাহিরে কে দরজা কে বন্ধ করলো দরজা খোল।
দরজা খোলার জন্য ডাক দিচ্ছে অন্যদিকে কয়েলের একটু ছোঁয়ায় ওনার শাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। কারণ শাড়িতে এমন কিছু ছিলো যাতে একটু আগুনের ছোয়াঁতে লেগে যেতে পারে। হানিয়া বেগম পিছনে ফিরে আগুন দেখে বলে –
“- কে আছো বাঁচাও আগুন। আগুন নিহান কোথায় তুমি। আগুন বাঁচাও আমাকে “।
বাড়ির বাড়ির বাহিরে থাকা একটা লোক ফোন করে বলছে
“- স্যার কাজ হয়ে গেছে “।
“- বেরি গুড এখন শুধু নিহান শিকদারের একটা ভুল করলে ওর মা সারাজীবনের জন্য পৃথিবীতে থেকে চলে যাবে। এইটা ওর জন্য বিয়েতে আমার থেকে দেওয়া ছোট উপহার “।
#চলবে