মন ফাগুন পর্ব-০৬

0
34

#মন_ফাগুন
#লেখনীতে_তাইয়্যেবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_০৬ ( যত্ন দিয়ে আগলে রেখো)

বাড়ির সব মানুষ বাহিরে অনুষ্ঠানে ইনজয় করছে তাই হানিয়া বেগম চিৎকার কেউ শুনতে পাই নাই। কিন্তু এইদিকে আগুন অনেক লেগে গেছে কি করে সে বুঝতে পারে না শাড়ি থেকে একটু আগুন শুধু মেঝেতে পড়েছে তাতেই পুরো ঘরে আগুন লেগে গেছে। মিহি আর নিহান ডান্স করতে থাকে সবাই আনন্দ করছে মিউজিক বাজছে।

মিহির ডান্স করার সময় হঠাৎ ওর চোখ পড়ে ছাদের উপরে থাকা ঘর থেকে আলো ভেসে আসছে। মিহি অবাক হয় এতো আলো কি করে রুম থেকে আসতে পারে দেখে মনে হচ্ছে আগুন লেগেছে ওই রুমটাতো ওনার মায়ের রুম। মিহি ডান্স বন্ধ করে দেয়। নিহান বলে –

“- কি হয়েছে মিহি ডান্স বন্ধ করে দিলেন যে “।

“- না মানে আসলে ওই রুম থেকে এতো আলো আসছে কোনো ওই রুমটাতো আপনার মায়ের তাই না “।

মিহির কথা শুনে নিহান উপরে থাকা রুমের দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি রুম থেকে অনেক আলো আসছে। কিন্তু এই আলোটা তো সূর্যের বা লাইটের আলো মনে হচ্ছে না। নিহান বলে –

“- হুম ওই রুমটা মমের কিন্তু এতো আলো কোথা থেকে আসছে?

“- দেখে মনে হচ্ছে আগুন লেগেছে”।

মিহি এই কথা শুনে নিহানের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে নিহানের মুখে আতঙ্কের ছাপ ফুটে উঠে। নিহান মিউজিক বন্ধ করতে বলে দৌড়ে বাড়ির ভিতরে যেতে থাকে মিহি ও ওর সাথে যায়। বাড়ির ভিতরে ঢুকে শুনতে পাই হানিয়া বেগম চিৎকার করছে –

“- নিহান বাঁচা আমাকে “।

নিহান কথাটা শুনে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায় হানিয়া বেগমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। হানিয়া বেগম চিৎকার করছে নিহান দরজা খুলতে যাবে কিন্তু বাহির থেকে তালা মারা। নিহান বলে –

“- কে তালা দিয়েছে মমের রুমে তাড়াতাড়ি তালা খুলতে হবে

জায়ান ও আসে উপরে আরো কাজের লোক আসে জায়ান বলে –

“- নিহান মনে হয় দরজা ভাঙতে হবে “।

“- কিন্তু এইটা কাজের দরজা কি করে ভাঙা যাবে একটা ভারী জিনিস দিয়ে ভাঙ্গতে হবে “।

মিহি ওদের কথা শুনতে পাই যদি দরজা ভাঙতে যায় তাহলে অনেক সময় লেগে যাবে। মিহি নিজের চুলের পিছন থেকে একটা পিন খুলে তালা খুলতে চেষ্টা করে নিহান ও ভারী কিছু নিয়ে আসে। তবে সৌভাগ্য বিষয় হলো মিহির পিন দিয়ে তালা খুলে যায় কিন্তু তালা খোলার পর ভিতরের অবস্থা দেখে নিহান বলে –

“- মম কি হয়েছে তোমার মম “।

হানিয়া বেগমের পুরো শাড়িতে প্রায় আগুন লেগে গেছে তাছাড়া ঘরের চারপাশে আগুন। মিহি বুঝতে পারে এখুনি হানিয়া বেগমকে এই রুম থেকে বাহির করতে হবে না হলে ভয়ংকর বিপদ হতে পারে। কিন্তু ঘরের চারপাশে আগুন তবুও মিহি সাহস নিয়ে ঘরের ভিতরে ঢুকে যায় খুব কষ্ট করে হানিয়া বেগমের কাছে পৌঁছে যায়। ওনার শাড়িতে লাগা আগুন নিভানোর দরকার তাই মিহির পড়নে একটা আঁচল চাদরের মতো ওনার শরীরে দেয়।

মিহি হাত দিয়ে যথা সম্ভব আগুন নিভিয়ে দিতে চেষ্টা করে তবে এখন রুম থেকে বাহির হওয়া দরকার তাই হানিয়া বেগমের দরজার বাহিরে নিয়ে আসে। আগুন পুরো ঘরে ছড়িয়ে গেছে স্টাফরা পানি দিচ্ছে এক বালতি পানি হানিয়া বেগমের শরীরে ছুঁড়ে মারে যার ফলে শাড়ি থেকে আগুন একটু কমে। হানিয়া বেগমকে বাহিরে নিয়ে আসে কিন্তু মিহির শাড়ির আঁচল দরজার সাথে আটকে যায়।

মিহি তাড়াতাড়ি আঁচল সরাতে যায় তখন দরজা থেকে আগুনের তাপে এক টুকরো কাঁচ এসে মিহির হাতে লাগে। আর অদ্ভুত বিষয় কাঁচটা লাগার সাথে সাথে মিহির হাতের কিছু অংশ পুড়ে যায়। মিহি বেশ ব্যাথা পায় কিন্তু এখন রুম থেকে বাহির হওয়া দরকার।

মিহি রুম থেকে বাহির হয়ে যায় স্টাফরা কোনোরকম আগুন নিভানোর চেষ্টা করে। সবাই হানিয়া বেগমকে অন্য রুমে নিয়ে যায় মিহি ও সেখানে যায়। অল্প সময় পরে ডক্টর আসে সারা আর জাকিয়া বেগস হানিয়া শিকদারের মাথার কাছে বসে রয়েছে । ডক্টর চেকআপ করে বলে –

“- দেখুন টেনশনের তেমন কিছু নাই আগুন লাগার ফলে ওনি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন তাই অজ্ঞান হয়ে গেছে। কিন্তু যদি সঠিক সময় আগুন থেকে না নিয়ে আসা হতো তাহলে হয়তো ওনাকে বাঁচানো যেতো না “।

নিহান ডক্টরের কথা শুনে একটু শান্ত হয় হঠাৎ করে কি হয়ে গিয়েছিলো যদি মায়ের কিছু হয়ে যেতো। নিহান বলে –

“- ডক্টর মায়ের শরীর ঠিক আছে কোনো জায়গায় পুড়ে যায় নাই তো। আর কি কি ওষুধ লাগবে বলে যান “।

“- যেহেতু আগুন লেগেছে তাই কিছু অংশ পুড়ে গেছে সেখানে মলম লাগাতে হবে। আর কিছু মেডিসিন লিখে দিচ্ছি ওনাকে খাওয়াতে হবে “।

মিহি দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে কথা শুনতে থাকে কিন্তু ওর মাথায় হঠাৎ করে আগুন কি করে লেগে গেলেন এইসব ঘুরছে। হানিয়া বেগমকে রেস্ট নিতে হবে তাই নূহা আর সারা ওই রুমে থাকে আর সবাই বাহির হয়ে যায়। নিহান,আর সানভিকে একটু অন্যদিকে আসতে বলে।

নিহান,সানভি অন্যরুমে যায় আর বাহিরে যে মেহমান রয়েছে জাকিয়া বেগম তাদের সাথে কথা বলে। নিহান নিজের রুমে এসে বলে –

“- এইটা কি সম্ভব হঠাৎ করে মায়ের রুম আগুন কি করে লেগে গেলো আর বাহির থেকে তালা দিয়েছে কে রুমে “।

সানভি বিষয়টা ভেবে দেখে সত্যি হঠাৎ করে কোনো রুম ছাড়া হানিয়া বেগমের রুমে আগুন কি করে লেগে গেছে। সানভি বলে –

“- হুম ঠিক বলেছেন বস বিষয়টা অদ্ভুত তাহলে কি করব এখন “।

“- একটা কাজ করো সান কালকে থানায় গিয়ে ওসিকে আমার সাথে দেখা করতে বলবে। আর বাড়িতে সিসিটিভি লাগানোর আয়োজন করো এবং ঘটনা তদন্তের জন্য যা করা দরকার তাই করো “।

“- আচ্ছা বস সামনে নিবার্চন তাই কোনো অপজিশন পার্টি এই কাজটা করে নাই তো?

“- অপজিশন পার্টির যদি শএুতা থাকে তাহলে আমার সাথে থাকবে মমের সাথে না। কেউ কোনো মমকে মারতে চাইবে ”

মিহি এতোখন হানিয়া বেগমের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো কিন্তু এখন নিজের রুমে আসে। নিহান মিহিকে দেখে সানভিকে বলে –

“- আচ্ছা সানভি তুমি যাও আর করতে বলেছি তাড়াতাড়ি করো “।

“- ঠিক আছে বস “।

সানভি চলে যায় মিহি রুমে ঢুকে নিহান এতোখন মিহির কথা ভুলে গিয়েছিলো সত্যি যদি মিহি না থাকতো তাহলে আজকে ওর মমকে বাঁচানো যেতো না। নিহান আরেকটা বিষয় খেয়াল করে মিহির হাতের কিছু অংশ পুড়ে গেছে আর পা নিয়ে ভালো করে হাঁটতে পারছে না। নিহান বলে –

“- মিহি এখানে আসেন “।

মিহির মাথায় আগুনের ঘটনা এমন করে ঢুকে গেছে সে নিহানকে খেয়াল করে নাই। নিহানের ডাকে হুঁশ ফিরে ওর মিহি বলে –

“- হুম কিছৃ কি বলছিলেন “।

“- মিহি বেডে বসেন “।

নিহানের কথা অনুসারে মিহি বেডে বসে যায় নিহান টেবিলের ডয়ার থেকে একটা মেডিসিনের বাক্স নিয়ে আসে। নিহান মাটিতে বসে মিহির পায়ে হাত দেয়। হঠাৎ করে নিহানের পায়ে হাত দেওয়া দেখে মিহি চমকে উঠে বলে –

“- আরে কি করছেন পায়ে হাত দেন কোনো “।

“- চুপ করে বসে থাকুন পায়ের নিচের কিছু অংশ পুড়ে গেছে মেডিসিন লাগাতে হবে। যদি একটু নড়াচড়া করেন তাহলে কিন্তু আবার হাত পা বেঁধে রাখবো “।

মিহি কোনো কথা বলে না চুপ করে বসে থাকে নিহান পায়ে আলতো করে মেডিসিন লাগিয়ে দেয়। মিহি মুগ্ধ চোখে নিহানের দিকে দেখে কি সুন্দর লোকটা যত্ন নিচ্ছে ওর এতো আলতো করে মেডিসিন লাগিয়ে দিচ্ছে যাতে একটু ব্যাথা না করে। মিহি বুঝতে পারে নিহান একজন কেয়ারিং মানুষ আর বিয়ের দিন যতটা খাটাশ মনে করেছে ততটা না তবে একটু বাজে লোক। মিহি মনে মনে কথাটা ভেবে হাসতে থাকে।

নিহান মিহির দিকে তাকিয়ে দেখে ও হাসছে ওষুধ লাগিয়ে দেওয়ার জন্য পায়ে ব্যাথা করা দরকার হাসছে কোনো। নিহান বলে –

“- কি হলো হাসছেন কোনো মিহি “।

“- না তেমন কিছু না কিন্তু আপনার মতো এইরকম খাটাশ লোক কারো কেয়ার করতে পারে সেটা যানা ছিলো না। এইরকম কেয়ার যদি নিয়াকে দেখাতেন তাহলে বিয়ের আসরে আপনাকে রেখে পালিয়ে যেতো না “।

“- নিয়াকে যথেষ্ট কেয়ার করেছি আমি কিন্তু ও অন্য একজনকে ভালোবাসতো। না হলে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যেতো “।

“- হুম কত কেয়ার করছেন সেটা বিয়ের দিন বুঝতে পেরেছি বেশি কেয়ারের জন্য চিঠিতে আপনাকে বদমেজাজি আর রাগী বলে পালিয়ে গেছে।হিহিহিহি “।

নিহান মিহির দিকে তাকায় এরপর আবার ওষুধ লাগিয়ে দেয়। নিহান পায়ের ওষুধ লাগিয়ে দিয়ে হাতের পোড়া জায়গায় দেখে একদম পুড়ে গিয়ে চামড়া উঠে গেছে। নিহান বলে –

“- আচ্ছা তখন আগুনের মধ্যে মমকে বাঁচতে আপনি ছুটে গেলেন কোনো ওখানে স্টাফরা ছিলো সবাই মিলে বাঁচিয়ে নিতো। কতোটা হাত পুড়ে গেলো “।

“- শুনুন মিহি বোকা হতে পারে, দুষ্ট হতে পারে কিন্তু অমানুষ নয় কেউ বিপদে পড়লে তাকে সাহায্য করা মানুষ হিসাবে আমার কর্তব্য “।

নিহান মিহির কথাটা শুনে হাসে মেয়েটা বাচ্চা হতে পারে কিন্তু মনটা ভালো। নিহান বলে –

“- এখন যে হাতটা পুড়ে গেলো সারারাত ব্যাথা করবে “।

“- আরে এইসব ব্যাথা কতো পেয়েছি ছোট থেকে গাছ থেকে পড়ে আরো কতো ব্যাথা পেয়েছি “।

“- ছোট থেকে বাদর ছিলেন তাই না “।

“- হুম “।

“- ধন্যবাদ মিহি আপনি না থাকলে হয়তো মমকে বাঁচতে পারতাম না “।

“- দেখলেন কি সুন্দর করে মিহি সুপারম্যানের মতো আগুন থেকে বাঁচিয়ে নিয়েছে আপনার মমকে। আপনারা পুরুষ মানুষ হয়ে ও কিছু করতে পারলেন না “।

“- একদম আমাকে পুরুষ মানুষ বলবেন না “।

মিহি নিহানের কথাটা বুঝতে পারে না ওনাকে পুরুষ মানুষ ডাকতে নিষেধ করলো কোনো। মিহি বলে –

“- আপনাকে পুরুষ মানুষ ডাকতে নিষেধ করলেন কোনো “।

“- না আমাকে পুরুষ ডাকবেন না আমি পুরুষ নয় “।

“- আমিতেন আপনাকে পুরুষ মানুষ জানতাম তাহলে কি ভিতর থেকে অন্য কিছু আপনি “।

“- হোয়াট আমাকে ছেলে বলবেন পুরুষ মানুষ শুনলে বুড়া বুড়া মনে হয়। যতসব অদ্ভুত চিন্তা ভাবনা আপনার মাথায় কোনো থেকে আসে মিহি ইডিযেট “।

#চলবে

এই পর্বটা এতো ভালো হয় নাই সরি