#মন_ফাগুন
#লেখনীতে_তাইয়্যেবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_০৭ ( সপ্নের দেখা রাজকুমার)
নিহান মিহির দিকে তাকিয়ে দেখে এই মেয়েটার মাথায় সবসময় শুধু উল্টো পাল্টা চিন্তা ভাবনা ঘুরতে থাকে। এতটুকু ব্যাথা পেয়েছে সেই বিষয়ে ওনার কোনো খেয়াল নাই। মিহির হাতের ব্যাথাটা নিহানকে খুব টেনশনে ফেলে দিয়েছে কারণ হাতের অনেকটা অংশ পুড়ে গেছে। নিহান বলে –
“- আচ্ছা মিহি আপনার হাতে এতো ব্যাথা কি করে লাগলো পায়ের ব্যাথা ঠিক আছে কিন্তু হাতের যখমটা বেশ গভীর “।
মিহি তার হাতের দিকে খেয়াল করে সত্যি তার হাতের যখমটা অনেক বেশি গভীর অনেক অংশ জুড়ে পুড়ে গেছে। মিহি তখন দরজার সাথে ধাক্কা লেগে যাওয়ার কথাটা মনে পড়ে শুধু এক টুকরা কাঁচ পড়েছে বলে এতো যখম হবে। মিহির কাছো বিষয়টা অদ্ভুত লাগে মিহি বলে –
“- হুম ঠিক বলেছে হাতের যখমটা বেশ গভীর তখন আগুন লাগার সময় ধাক্কা লেগে এক টুকরা কাঁচ হাতে পড়ে গিয়েছিলো। তাই হয়তো এইটুকু এতো যখম হয়েছে “।
“- মনে হয় চারদিকে আগুন লেগে যাওয়ার কারণে দরজার কাঁচ গরম হয়ে যায় তাই হাতে পড়ে সাথে সাথে গলে গেছে। আচ্ছা আমি ঔষধ লাগিয়ে দিয়েছি এখন একটু শুয়ে রেস্ট নেন “।
মিহি বিছানায় শুয়ে পড়লো নিহান দরজা একটু বন্ধ রেখে হানিয়া বেগমের রুমে যায়। নিহান ঘরে গিয়ে দেখে হানিয়া বেগম ঘুমিয়ে রয়েছে আসলে ডক্টরে ব্যাথার জন্য যে ঘুমের ঔষধ দিয়েছে তাতে ঘুমিয়ে পড়ার কথা। সারা আর নূহা হানিয়া বেগমের মাথার কাছে বসে রয়েছে নিহানকে দেখে সারা উঠে আসে –
“- নিহান কোনো জিনিস লাগবে তোমার “।
“- না সারা ভাবী কিছু লাগবে না মমকে একটু দেখতে এসেছি তুমি এখানে থাকো। আচ্ছা মম কি কিছু খেয়েছে?
“- না বড় মামিতো এখনো ঘুম থেকে উঠে নাই ডক্টর যা ঔষধ দিয়েছে মনে হয় না আজকে উঠবে। আমার মনে হয় আজকে রাতটা ঘুমিয়ে থাকুক সকালে ঘুম থেকে উঠলে খাওয়ানো যাবে “।
“- হুম সেটাই বরং ঠিক কাজ হবে মমকে আর বিরক্ত করে লাভ নাই। তুমি বা নূহা কেউ একজন মমের সাথে থাকবে যা হয়ে গেলো আজকে। আর আমি বাহিরে সিকোউরিটি আরো টাইট করে দিবো রুমের বাহিরে লোক থাকবে। আর রাতে যদি কোনো প্রয়োজন বা সমস্যা হয় আমাকে সাথে সাথে কল করবে “।
“- আচ্ছা ঠিক আছে “।
মিহি একটু রেস্ট নেয় তবে শরীরটা বেশ টার্য়াড লাগছে তার এই হাতের ব্যাথাটা মোটামোটি বেড়েছে পুড়া জায়গায় ব্যাথা করবে। মিহির এখন ঘুমানো দরকার কিন্তু সে বেডে শুয়ে রয়েছে যদি এখন এখানে ঘুমিয়ে পড়ে তাহলে নিহান হয়তো ওকে উঠিয়ে দিবে। তাই মিহি গিয়ে ছোফায় শুয়ে পড়ে নিহান ডক্টরকে আবার কল করে তার কাছ থেকে কিছু ঔষধের কথা জানে। পরে ঔষধ সব কাজের লোক নিয়ে আসে নিহান খাবার আর ঔষধ নিয়ে ঘরে ঢুকে। মিহিকে ছোফায় শুয়ে থাকতে দেখে বলে –
“- কি হলো মিহি আপনি ছোফায় গিয়ে শুয়ে আছেন কোনো বেডে আসেন “।
“- না আসলে আপনিতো বেড কারো সাথে শেয়ার করতে পছন্দ করেন না তাই।
নিহান ওর কথা শুনে হাসে মেয়েটা শুধু ওর বাহিরের রূপ দেখে। নিহান বলে –
“- হুম সেটা ঠিক আমি কারো সাথে বেড শেয়ার করতে পছন্দ করি না কিন্তু আপনি আজকে অসুস্থ মিহি। সো বেডে রেস্ট নিতে পারেন “।
মিহি নিহানের দিকে তাকিয়ে দেখে এই লোকটা যতটা খারাপ মনে করছিলো ততটা খারাপ নয়। মিহির অসুস্থার সময় যতটা খেয়াল রাখছে তাতে বোঝা যায় লোকটা ভালো মনের মানুষ। মিহি একটু হাসে তবে নিহানের হাতে খাবার আর ঔষধ দেখতে পেয়ে বলে –
“- এই খাবার আর ঔষধ কার জন্য “।
মিহির কথায় নিহানের খাবার আর ঔষধের কথা মনে পড়ে সত্যি ভুলে গিয়েছিলো। নিহান খাবারটা নিয়ে যায় মিহির কাছে সেখানে টেবিলে রাখে আর বলে –
“- এইসব খাবার আপনার জন্য খাবার খেয়ে ঔষধ খেতে হবে “।
“- কিন্তু আপনি তখন তো ঔষধ হাতে লাগিয়ে দিয়েছেন তাহলে আবার ঔষধ কোনো। আর আমার খিদে লাগে নাই এখন খেতে ইচ্ছে করছে না “।
“- খিদা না লাগলে ও খেতে হবে আর এখানে কিছু ঔষধ রয়েছে আপনার হাতের পুড়ার ব্যাথার জন্য। যেহেতু পুড়ে গিয়েছে তাই ব্যাথা করবে রাতে আর আপনি ঘুমের মধ্যে হাঁটাহাটি করেন। এই হাত আর পা নিয়ে যদি হাঁটাহাটি করেন তাহলে সমস্যা হবে তাই ডক্টর বলেছে এই ঔষধ খেতে যাতে এইসব অদ্ভুত জিনিস না করেন “।
“- ঘুমের মধ্যে হাঁটার কি ঔষধ আছে?
“- না সেটা নাই এই ঘুমের ঔষধ খেলে আপনি পুরো ঘুমিয়ে পড়বেন একদম অজ্ঞানের মতো সো তখন হাঁটাহাটি করবেন না। আর হাতের ব্যাথার জন্য পেইন কিলার অনেক দরকার তাই এইটা জরুরি।
মিহি নিহানের কথা মেনে নেয় যদি জেদ করে তাহলে আবার বকা দিতে পারে মিহি এখন বকা খেতে চাই না। কি সুন্দর মিহির যত্ন করছে নিহান খাবার নিয়ে চামচ দিয়ে মাখিয়ে মিহির মুখে তুলে দেয় –
“- খাবারটা খেয়ে নেন “।
“- হুম কিন্তু একটা কথা যানেন আপনার পালিয়ে যাওয়া বউয়ের জন্য খারাপ লাগছে। মানে নিয়া যতটা চিঠিতে আপনাকে খারাপ বলেছিলো আপনি কিন্তু ততটা খারাপ না ভালো আছেন “।
“- না এতে করে নিয়ার দোষ নাই আসলে ছোটবেলা চাচা ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে গিয়েছিলো। সবাই যানতো বড়ো হয়ে নিয়ার সাথে আমার বিয়ে হবে তবে নিয়ার প্রতি আমার তেমন কোনো ফিলিংস ছিলো না। ওর সাথে কথা ও ভালো করে কখনো বলি নাই আর রাজনীতি নিয়ে বিজি ছিলাম তাই নিয়া আমার রাগী রূপ দেখেছে “।
“- ওহ যদি আপনি নিয়ার সাথে কথা বলতেন ওর সাথে সময় কাটাতেন তাহলে হয়তো নিয়া আপনার বন্ধুর সাথে পালিয়ে যেতো না। আর আপনার ও আমার মতো মেয়েকে বিয়ে করতে হতো না “।
“- হুম ঠিক বলেছেন যদি নিয়ার সাথে বিয়ে হতো তাহলে এই মিহি চুন্নি আর বদের হাড্ডির সাথে পরিচয় হতো না “।
“- আমি চুন্নি না “।
নিহান হেসে মিহিকে খায়িয়ে দেয় মিহি শুধু নিহানকে দেখতে থাকে। নিয়ার সাথে যদি সত্যি বিয়ে হয়ে যেতো নিহানের তাহলে হয়তো এইরকম একটা মানুষের সাথে মিহির পরিচয় হতো না। মিহির আম্মু সবসময় বলতো মিহির জন্য একটা রাজকুমার আসবে ওকে অনেক যত্ন ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে। আর সেই রাজকুমারের প্রতিটা গুণ নিহানের মধ্যে রয়েছে যদিও নিবার্চন অবদি নিহান ওর সাথে থাকবে।
অন্যদিকে আজকে নিয়া আর রায়ান বিয়ে করেছে ওদের আজকে বাসর রাত তবে এইদিকে কি হচ্ছে সেই বিষয়ে নিয়া যানে না কিছু। নিয়া এখন একটা ফুল দিয়ে সজ্জিত রুমে বসে রয়েছে রায়ান রুমে প্রবেশ করে। নিয়া বলে –
“- রায়ান আমার বিশ্বাস হচ্ছে না সত্যি আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে। এখন শুধু তুমি আমার “।
“- হুম নিয়া তুমি ও শুধু আমার “।
রায়ান কথাটা বলে নিয়াকে জড়িয়ে ধরে তবে নিয়া যানে না ওর সাথে কি হতে চলছে। রায়ানের জন্য ও শুধু একটা দানের গুটি যার সাহায্য ও শিকদার বাড়িতে ঢুকতে পারবে।
শিকদার বাড়িতে হানিয়া বেগমের রুমটা পুড়ে গেছে এখন ওনাকে নতুন রুমে রাখা হয়েছে। একটা ছায়া হানিয়া বেগমের নতুন রুম দেখছে সেখানে অনেক সিকিউরিটি রয়েছে। ছায়াটা সেটা দেখে কারো কাছে ফোন করে –
“- স্যার হানিয়া শিকদার এইবারে বেচেঁ গেলো এখন কি করব। শুধু মিহি নামের মেয়েটার জন্য সব নষ্ট হয়ে গেছে আর এখন পুরো বাড়িতে সিসিটিভি থাকবে কাজ আরো কঠিন হয়ে যাবে “।
“- হুম সেটা আমি জানি তবে হানিয়া শিকদারকে মরতে তো হবে মনে করেছিলাম আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলবো। কিন্তু দুরভাগ্য বেঁচে গেলো তাই এখন আরো কষ্ট পেয়ে মরতে হবে খেলাতো মাএ শুরু হলো পিকচার তো এখনো অনেক বাকি “.
নিহান মিহিকে খায়িয়ে দেয় এরপর ঔষধ খায়িয়ে দেয়। নিহান ওকে বেডে শুয়ে পড়তে বলে কিন্তু মিহি ছোফায় শুয়ে পড়ে। নিহান বলে –
“- আচ্ছা মিহি আপনি তখন তালা যে পিন দিয়ে খুলতে হয় সেটা কি করে যানেন “।
“- আরে ওইটা জানা কোনো বিষয় হলো আমি যখন রাত করে মেসে ঢুকতাম তখন সেখানের গার্ড দরকায় তালা দিয়ে রাখতো। সেখান থেকে পিন দিয়ে তালা খুলতে শিখে গিয়েছি এখন তালা খোলা আমার পা হাতের খেলা “।
“- ওহ মানে সব জায়গায় এই চুরি বিদ্যা প্রয়োগ করতেন শুধু শুধু কি আপনাকে চুন্নি বলি।
#চলবে