মন ফাগুন পর্ব-০৯

0
44

#মন_ফাগুন
#লেখনীতে_তাইয়্যেবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_০৯ ( লুকানো অনুভূতি তোমার জন্য)

মিহির হাসি দেখে নিহান ওর দিকে তাকিয়ে থাকে এই মেয়েটা এতো বাচ্চা কোনো কিন্তু এখন কি করবে। পায়ের যা অবস্থা তা নিয়ে কলেজে যেতে পারবে না। নিহান বলে –

“- কলেজে যেতে হবে বুঝতে পারছি কিন্তু হাতের আর পায়ের যা অবস্থা তা নিয়ে বাড়ি থেকে বাহির হতে পারবেন না। পুড়া জায়গায় অনেক ব্যাথা করবে কোথাও বের হবেন না আপনি “।

নিহানের কথা মিহি বুঝতে পারছে কিন্তু মিহির কলেজে যেতে হবে না হলে ওর বাবা মেরে ফেলবে। মিহি বলে –

“- হুম আপনার কথা বুঝতে পারছি কিন্তু কলেজে না গিয়ে কি করব যদি ওরা আব্বুকে রেজাল্ট কথা বলে দেয়। তাহলে আব্বু শহরে চলে আসবে তখন আমাকে নিয়ে গ্রামে চলে গিয়ে বিয়ে দিয়ে দিবে তখন কি হবে?

“- মিহি আপনাকে বিয়ে দিয়ে দিবে বেচারা ওই ছেলের কি হবে। কিন্তু এখন কলেজে যদি যান তাহলে কি করে হবে আর আপনার আব্বু যদি বিয়ের কথা জানে তাহলে কি সমস্যা হবে। নিহান নেহাল মল্লিকের সাথে আপনার বিয়ে হয়েছে এইটা জানলে ওনি খুশি হবেন “।

মিহি কথাটা শুনে হাসে কি সুন্দর কথা ওনার সাথে বিয়ে হয়েছে বলে না কি তার আব্বু খুশি হবে। যদি একবার ওর আব্বুর সাথে দেখা হতো তাহলে বুঝতে পারতো ওর বাপ কি জিনিস। মিহি বলে –

“- আপনি যদি আমার বাপের সাথে একবার দেখা করতেন তাহলে বুঝতে পারবেন। আর আব্বু যদি আমাদের বিয়ের কথা জানে তাহলে সারাজীবন আমার আপনার সাথে থাকতে হবে। নিবার্চন পরে ডিভোর্স কি করে দিবেন আপনি আমাকে?

মিহি মুখে ডিভোর্স কথাটা শুনে নিহান ওর দিকে রাগী চোখে তাকায় তবে বিষয়টা খারাপ লাগে ওর। নিহান বলে –

“- আপনার কি সমস্যা সবসময় ডিভোর্স আর নিবার্চনের পরে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেন।এই কথা ছাড়া কি আপনার মাথায় কিছু আসে না “।

“- আপনি আমার জায়গায় থাকলে বুঝতে পারবেন আর আমি আপনার মতো এইরকম একটা মানুষের সাথে জীবনে থাকবো না। তাই নিবার্চনের পর ডিভোর্স দরকার “।

“- মিহি আপনি কি বললেন আমার মতো মানুষ মানে কি বলতে চাইলেন আপনি “।

“- আপনার মতো এইরকম একটা রাগী বদমেজাজি খাটাশ আর বকা দেওয়া লোকের সাথে জীবনে থাকবো না আমি। আর যদি কোনোদিন নিয়া আপনার জীবনে ফিরে আসে তাহলে কি হবে তখন আমাকে চলে যেতে হবে। আপনি তো এখনো নিয়াকে ভালোবাসেন?

নিহানের এইবার রাগ উঠে যায় মেয়েটা সবসময় ওর বকা দেওয়া দেখে তাহলে কালকে থেকে ওর কেয়ার করছে তার কি হবে। আর নিয়াকে ও কখনো ভালোবাসে না আর যে অন্য কারো সাথে পালিয়ে গেছে তার সাথে থাকার কথা নিহান ভাবে না। নিহান বলে –

“- হুম ভুল হয়েছে আপনাকে আমি সবসময় বকা দেয় কেয়ারতো করা জীবনে দেখলেন না ঠিক আছো যা ইচ্ছা তাই করেন কলেজে যান বা না যান আমার সেই নিয়ে যাই আসে না “।

নিহানের রাগী চোখ দেখে মিহির বেশ ভয় করতে থাকে বিয়ের দিন আসল সত্যি জেনে ও নিহান এতো রাগ করে নাই যতটা এখন করেছে। মিহি বলে –

“- না মানে আমি কথাটা এইরকম করে বলি নাই আসলে “।

“- মিহি আপনার আসলে এই মানে এইসব কথা শুনার মতো মুড আমার নাই। আমার পরিষদের কাজ রয়েছে মিটিং করতে হবে এমনি চুরি করে বিয়ে খেতে এসে যা ঝামেলায় ফেলে দিয়েছেন। আর আপনি কলেজে যান না জাহান্নামে সেটা আপনার বিষয় আমার না ”

মিহি কোনো কথা বলে না যদি আর একটা কথা বলে তাহলে হয়তো এখান থেকে সত্যি সোজা জাহান্নামে ফেলে দিবে। মিহি আয়নার সামনে থেকে যখন চলে আসতে যাবে তখন হঠাৎ করে ব্যাথায় পেয়ে যায় হাতে। মিহি বলে –

“- আহ!আহ!ওহ! “।

মিহির মুখে ব্যাথার করার মতো আওয়াজ পেয়ে নিহান তাকায় হাতে মনে হয় লেগে গেছে।এই মেয়েটা কখনো কেয়ারফুল হবে না। নিহান হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে হাতের পুড়া জায়গা দিয়ে রক্ত পড়ছে। নিহান বলে –

“- মিহি কি হয়েছে হাত দিয়ে দেখি রক্ত পড়ছে কোনো একটু কি সাবধানে চলতে পারেন। দেখি কি হয়েছে “।

নিহান মিহির দিকে এগিয়ে আসে তারপর ওর হাত ধরে ওকে বেডে বসিয়ে দেয়। আর গিয়ে মেডিসিন বক্স নিয়ে আসে সেখান থেকে ঔষধ দেয় দিতে থাকে ওর হাতে। নিহান বকা দেয় আর বলে –

“- মিহি আপনাকে নিয়ে যে কি করব আমি একটু খেয়াল করে চলতে পারেন না আপনি। কলেজে যাবেন কি করে এখন এই হাত নিয়ে আর সকালে যে ড্রেসিন করতে হবে সেই বিষয় কি করে ভুলে গেলেন আপনি। আর আমার সকালে ঔষধ লাগিয়ে দেওয়ার কথা মনে পড়ে নাই “।

নিহান মিহিকে বকা দিচ্ছে কিন্তু মিহি শুধু ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে লোকটা কি অদ্ভুত মানুষ তাই না। একটু আগে বলছিলো ওর কেয়ার করবে না কিন্তু ঠিক ওর খেয়াল রাখছে। একদিনে লোকটা ওর কতো আপন হয়ে গেছে একটা মায়া কাজ করে ওর উপর যদি এইরকম অনেক দিন থাকে তাহলে কি নিহানকে ভালোবেসে ফেলবে। মিহি মনে মনে বলে –

“- সরি আপনাকে তখন এইরকম করে কথা বলেছি বলে কিন্তু বুঝতে পারছেন না কোনো। আপনি একদিনে আমার মনে অনেক জায়গা দখল করে নিয়েছেন যদি সারাজীবন আমার সাথে থাকেন তাহলে কতো ভালো হবে? কিন্তু এইটা কি হবে কখনো?

মিহি কলেজের জন্য রেডি হয়ে যায় নিহান ওর জন্য সানভিকে দিয়ে থ্রিপিস আনায়। নিহান আজকে মিটিং করতে যাবে পরিষদে কালকে যা ঘটনা হয়েছে তাতে রাজনৈতিক কোনো দলের হাত থাকতে পারে৷ নিহান বলে –

“- মিহি রেডি হয়ে গেছেন আপনি চলুন “।

“- ঠিক আছে চলুন “।

মিহি রেডি হয়ে যায় সানভি নিচে বসে অপেক্ষা করতে থাকে কিন্তু অনেক সময় ধরে নিহান আর মিহিকে দেখে না। আসলে সানভি ও নিহানের সাথে পরিষদে যাবো বেচারাকে নিহান সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে থ্রিপিস নিয়ে আসতে বলে। তাই ভালো করে ঘুমাতে পারে নাই সানভি সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে থাকে। নূহা নিজের কলেজে যাওয়া জন্য নিচে নামে। হঠাৎ করে সানভির সাথে ধাক্কা লেগে যায়। সানভি বলে –

“- আরে সরি সরি আপনি কি ঠিক আছেন নূহা দেখতে পাই নাই আমি “।

নূহা যদিও নিজেকে সামলে নেয় তবু ও নিচে পড়ে গেছে আসলে ও আসার সময় উড়না ঠিক করছিলো তাই সানভিকে দেখতে পাই নাই। নূহা বলে –

“- না না আমি ঠিক আছি আসলে দোষটা আমার উড়না ঠিক করতে করতে হঠাৎ করে পড়ে গিয়েছি।

সানভি হাত বাড়িয়ে দিয়ে নূহাকে উঠায় তখন নিহান আসে আর বলে –

“- কি হয়েছে সানভি নূহা। নূহা কি হয়েছে তোমার তুমি ঠিক আছো?

“- জি নিহান ভাইয়া ঠিক আছি আসলে একটু পড়ে গিয়েছিলাম তাই সানভি আমাকে সাহায্যে করেছে। আচ্ছা মিহি কোথায়?

“- ওহ আসছে আচ্ছা সানভি চলো যাওয়া যাক “।

সানভি আগে চলে যায় আসলে ও আজকে ড্রাইভ করে নিহান আর মিহিকে নিয়ে যাবে। বাট নিহান অপেক্ষা করতে থাকে মিহি এই পায়ের ব্যাথা নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে পারবে না। নূহা ও সেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে আসলে ও নিয়ার বিষয়ে জানতে চাই কিন্তু নিহানকে এখন এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে কি না তা বুঝতে পারছে না। নূহা বলে –

“- নিহান ভাইয়া তুমি কি নিয়া আপির বিষয়ে কিছু জানতে পেরেছো? মানে রায়ান আর ও কোথায় পালিয়ে গেছে? কেমন আছে?

নিহান নূহার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটার মুখে চিন্তার চাপ ফুটে উঠছে আসলে মা বাবা মারা যাওয়ার পর এক বড় বোন ছিলো ওর কাছে। কিন্তু নিয়া এমন কিছু করবে হয়তো নূহা ভাবতে পারে নাই। নিয়ার সাথে যখন নিহান বিয়ে ঠিক সেটা জেনে নূহা খুশি হয়। তার বোন এই বাড়িতে থাকবে তার সাথে তবে বিয়ের দিন নিয়া যা করলো। নিহান বড় ভাই হিসাবে নূহার মাথায় হাত রাখে আর বলে –

“- নূহা তুমি টেনশন করো না সানভিকে নিয়া আর রায়ানের খোঁজ করার জন্য বলেছি খুব তাড়াতাড়ি জানা যাবে। আর একটা কথা মনে রাখবে নিহান বেঁচে থাকতে নিয়ার কোনো সমস্যা হতে দিবে না। চাচা আর চাচিকে আমি প্রমিজ করেছি তোমাদের আগলে রাখবো ওকে “।

নিহানের কথা শুনে নূহার অনেক ভালো লাগে এই বাড়িতে সবাই ওদের দুইবোনকে ভালোবাসে। কিন্তু নিহান আর জেঠা ওদের বেশি আদর করে। নূহা বলে –

“- ঠিক আছে ভাইয়া সমস্যা নাই”।

মিহি চলে আসে নিহান ওকে নিয়ে নিচে নামে সবাই খাওয়া দাওয়া করে সানভিকে খেতে বলে বাট ওর বলে খিদে লাগে নাই। নিহান আর মিহি এক গাড়িতে উঠে বসে তবে যেহেতু নূহার কলেজ নিহানের পরিষদের পরে তাই ও তাদের সাথে চলে যায়। সানভি আর নূহা সামনের সিটে বসেছে এবং মিহি আর নিহান পিছনে বসেছে।

নূহা সুন্দর করে বসে রয়েছে সানভি ড্রাইভ করার পাশাপাশি ওকে একটু দেখছে। নূহা মেয়েটাকে ওর খারাপ লাগে না শান্ত মিষ্টি একটা মেয়ে ওকে একটু একটু পছন্দ করে সানভি। কিন্তু রায়ান যা করেছে নিয়ার সাথে তাতে নিহানের বন্ধুর উপর থেকে বিশ্বাস উঠে গেছে তাই সানভি এমন কিছু করবে নন যাতে নিহান ওকে ঘৃণা করে। কিন্তু নূহার প্রতির ওর ফিলিংস।

হানিয়া বেগম বসে রয়েছে নিজের রুমে বাড়িতে এখন বেশি মানুষ নাই। সেই ছায়াটা আবার ওনার দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে আর কাউকে ফোন দিয়ে বলে –

“- স্যার তাহলে কখন কাজ শেষ করব “।

“- সবাই এখন বাড়িতে নাই ওরা চলে আসবে সিসিটিভি লাগাতে আর হানিয়া বেগমের উপরে যাওয়ার টিকিট কাটতে। এইবার হানিয়া শিকদারকে কে বাঁচাবে “।

#চলবে