#মন_ফাগুন
#লেখনীতে_তাইয়্যেবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_১৩
নিহান যখন বাড়িতে ঢুকতে যাবে তখন কিছু অপরিচিত লোকের সাথে তার দেখা হয়। যনি ও তারা পরিচয় দিয়েছিলো তারা সিসিটিভি লাগানোর লোক কিন্তু নিহানের কথাটা বিশ্বাস হয় নাই। কারণ তাদের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে সেটা দেখে স্বাভাবিক মনে হলো না সবকিছু। নিহান বলে –
“- যদি তোমরা সিসিটিভি লাগানোর লোক হও তাহলে তোমাদের মাথায় রক্ত হাতের ব্যাথা কি করে লাগলো “।
“- আসলে স্যার আমরা পড়ে গিয়েছিলাম তাই ব্যাথা লেগেছে “।
নিহানের কথাটা অদ্ভুত লাগে সবাই একসাথে কি করে পড়ে যেতে পারে আর সবার একসাথে ব্যাথা কি করে লাগবে। আর বাড়িতে দুইদিন ধরে যা হচ্ছে তাই নিয়ে কাউকে সন্দেহের বাহিরে রাখা যায় না। নিহান সামনে থাকা বডিগার্ড দের ইশারা করে আর বলে –
“- এই সবাইকে ধরে নিয়ে গিয়ে বাহিরের রুমে রাখো যতখন না আমি বলব ততখন ছাড়বে না ওদের। মনে রাখবে যাতে পালিয়ে না যায় “।
“- ওকে স্যার “।
বর্ডিগার্ডরা সেই লোকদের নিয়ে যায় তারা বলতে থাকে তারা কিছু করে নাই কিন্তু নিহান কোনো কথা শুনে না। নিহান তাড়াতাড়ি বাড়ির ভিতরে চলে যায় বাড়ির সবাই কি ঠিক আছে কি না সেটা সিউর করতে হবে৷ অন্যদিকে গুডাদের ধাক্কায় মিহি একটা টেবিলের উপর পড়ে যায় যার কারণে ওর মাথায় আঘাত লাগে। হানিয়া শিকদার সবাইকে ডাক দেয় এরপর সারা আর বাকি লোকেরা এসে মিহিকে রুমে নিয়ে যায়।
নিহান বাড়িতে ঢুকে দেখে ড্রয়িং রুমে কেউ নাই শুধু কিছু কাজের লোক ছাড়া। নিহান বলে –
“- আম্মু সারা ভাবী মিহি কোথায় তোমরা?
সবাই মিহির রুমে রয়েছে তাই নিহানের ডাক কেউ শুনতে পাই না। তবে কাজের লোক আসে আর বলে –
“_ নিহান স্যার সবাই নতুন মেডামের রুমে রয়েছে আসলে বাড়িতে সিসিটিভি লোকের ছদ্মবেশে কিছু গুন্ডা রা আসে। তারা বড় মালিকের উপর হামলা করে পরে নতুন মেডাম তাকে বাঁচাতে যায়। কিন্তু সেই গুন্ডারা নতুন মেডামকে ধাক্কা দিয়ে টেবিলের উপর ফেলে দেয় যার কারণে ওনার মাথা কেটে যায়। অনেক রক্ত বের হয়েছে এখন ডক্টর এসেছে দেখতে তাকে “।
নিহান পুরো কথাটা শুনে নাই শুধু মিহির মাথা থেকে রক্ত বের হয়েছে কথাটা শুনে সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত উপরে উঠতে থাকে। তার মানে নিহানের সন্দেহ ঠিক ছিলো সেই সিসিটিভি লাগানোর লোকজন গুন্ডা ছিলো তার মিহি তাদের এই অবস্থা করেছে। নিহান উপরে উঠে দেখে সবাই তাদের রুমে রয়েছে ডক্টর মিহির কাছে বসে রয়েছে। নিহান বলে –
“- মিহি কি হয়েছে আপনার?
বাড়ির সবাই নিহানকে দেখে মিহি মাথায় তখন বেন্ডেজ করা ডক্টর ঔষধ লিখছে। নিহান মিহির কাছে যায় আর বলে –
“- কি হয়েছে ডক্টর মিহির ওর শরীরের অবস্থা কেমন? কোথাও বেশি ব্যাথা পেয়েছে কিছু কি হয়েছে?
“- আরে নিহান টেনশন করো না মিহি ঠিক আছে আসলে টেবিলে ধাক্কা জোরে লেগেছে তাই মাথায় সামান্য কেটে গিয়েছে। শুধু এই ঔষধ গুলো ভালো করে খেলে সুস্থ হয়ে যাবে “।
নিহান মিহির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে মুখটা একদম মলিন হয়ে গেছে মনে হয় ব্যাথা ভালো পেয়েছে। মিহির যেই মুখে সবসময় দুষ্টামির ছাপ ছিলো সেই মুখটা বড্ড ফেকাসে লাগছে। মনে হচ্ছে এক আকাশ পরিমাণ কালো মেঘের গভীরে এক চিলতে রোদ তলিয়ে গেছে। নিহানের অনেক মায়া হয় মিহিকে দেখে নিহান বলে –
“- কি বলছেন এইটুকু ব্যাথা মানে দেখুন মাথায় কতটুকু কেটে গিয়েছে ডক্টর। আচ্ছা মম কোথায় মম কি ঠিক আছে সারা ভাবী মম কোথায়?
আসলে হানিয়া শিকদার এতোখন মিহির কাছে ছিলো তবে এখন নিজের রুমে গিয়েছে। ওনার শরীর ভালো না এই রক্ত যদি ওনি দেখেন তাহলে হয়তো আরে্ অসুস্থ হয়ে যাবেন। তাই ডক্টর তাকে রেস্ট নিতে বলেছে সারা বলে –
“- নিহান তুমি টেনশন করো না বড় মামি ঠিক আছে এতোখন এখানে ছিলো মামি কিন্তু এখন রেস্ট নিতে ওনার রুমে গিয়েছে। যদি আজকে মিহি না থাকতো তাহলে কি হতো। কি যে হচ্ছে এই বাড়িতে একটার পর একটা বিপদ লেগে আছে “।
সারা একটা হতাশা দিয়ে কথাটা শেষ করে ডক্টর মিহিকে ঘুমের ঔষধ দেয়। মিহির চোখে ঘুম ছিলো তাই সে নিহান বা সারার কথা ভালো করে শুনে নাই। নিহান যে এসেছে সেই বিষয়টি সে ভালো করে বুঝতে পারে না চোখ জুড়ে ঘুমের ছোঁয়া। ডক্টর বলে –
“- নিহান মিহি মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছে তাহলে আমারা বরং ওকে রেস্ট করতে দেয় আর চলো রুমের বাহিরে আসো। তোমার সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে “।
“- ওকে ডক্টর চলেন “।
নিহান আর ডক্টর এবং সারা বাহিরে চলে আসে তবে সারা নিজের রুমে চলে যায় জায়ান অফিস থেকে চলে এসেছে বলে। ডক্টর বলে –
“- নিহান তুমি এই শহরের মন্ত্রী আর তোমার বাড়িতে একের পর এক হামলা হচ্ছে। সেইদিন আগুন নিয়ে ঝামেলা হলো আজকে কেউ বাড়ির ভিতরে ঢুকে তোমার মাকে মারতে চাইলো এইসব নিয়ে তুমি কি কিছু ভেবেছো। আমি তোমাদের পারিবারিক ডক্টর অনেক দিন ধরে তোমাদের পরিবারের সাথে আমার সম্পর্ক রয়েছে তাই জিজ্ঞেস করছি “।
ডক্টরের কথাটা ঠিক ছিলো সেইদিন আগুন লাগার বিষয়টি নিহান কিছুটা সিরিয়াস ভাবে নিয়েছে কিন্তু আজকে ঘটনায় সে অবাক হয়ে যায়। মানে নিহান নেহাল শিকদারের বাড়ির ভিতরে ঢুকে তার মমকে হত্যা করার চেষ্টা কেউ করতে পারে সে কথাটা ভাবে নাই। নিহান বলে –
“- ডক্টর আপনি শুধু এই পরিবারের ডক্টর না আমার বাবার বন্ধু তাই আপনার কথাটা জিজ্ঞেস করার অধিকার রয়েছে। তবে আজকে যা হয়েছে সেটা নিয়ে কিছুতো আমি অবশ্যই করবে। তবে যে এই কাজ করেছে সে জানে না এই নিহান নেহাল শিকদার কতটা খারাপ এখন অবদি আমার রাজনৈতিক রূপটা দেখে নাই। আপনি টেনশন করবেন না ডক্টর এরপর দেখে এই বিষয়ে আমি খেয়াল রাখবো “।
“- হুম অবশ্যই তবে একটা কথা নিহান তুমি শুধু একজন ভালো মন্ত্রী ও নয় ভালো স্বামী ও ছেলে। নিজের বউয়ের জন্য এতোটা কেয়ার কোনো ভালো মনের মানুষ করতে পারে। সত্যি তোমার ওয়াইফ খুব লাকি সে তোমার মতো কাউকে তার জীবনে পেয়েছে “।
নিহান কথাটা শুনে হাসে আর বলে –
“- না ডক্টর মিহি অনেক লাকি না বরং আমি অনেক লাকি মিহির মতো এইরকম একটা ভালো মেয়ে আমার জীবনে এসেছে। মিহি সত্যি খুব ভালো মানুষ না হলে আমার মমকে বাঁচতে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিতো না। মিহিকে ওয়াইফ হিসাবে পেয়ে সত্যি আমি গর্বিত “।
#চলবে
।