#মন_ফাগুন
#লেখনীতে_তাইয়্যেবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_১৪ ( রহস্য সমাধান করবো একসাথে)
নিহান ডক্টরের সাথে কথা বলে যেহেতু মিহি ঘুমিয়ে রয়েছে তাই ওকে বিরক্ত করতে চাই নাই। কিন্তু হানিয়ন শিকদার কেমন আছে সেটা জানা জরুরি যদিও সারা বলেছে হানিয়া শিকদারের তেমন কিছু হয় নাই। তবুও নিহান ওর মমের রুমে যায় দরজায় টোকা দেয় আর বলে –
“- মম রুমে আসতে পারি “।
হানিয়া বেগম শুয়ে ছিলো তবে নিহানের গলার আওয়াজ শুনে উঠে পড়ে আর বলে –
“- হুম নিহান আসো ভিতরে আসো “।
নিহান রুমে ঢুকে যায় তবে হানিয়া বেগমকে সুস্থ দেখে তার মন শান্ত হয়। নিহান ওর মমের কাছে গিয়ে বসে আর বলে –
“- মম এইসব কি হচ্ছে এই বাড়িতে একটার পর একটা দুর্ঘটনা লেগে আছে প্রথমে আগুন লাগলো এখন আবার কারেন্ট দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করা। কিন্তু সব আক্রমণ তোমার উপর কোনো হচ্ছে বুঝতে পারছি না কোনো কেউ তোমাকে মারতে চাইবে। রাজনীতি নিয়ে কোনো সমস্যা হলে আমার উপর আক্রমণ করার কথা কিন্তু তোমার সাথে কার কি শএুতা থাকতে পারে “।
হানিয়া শিকদার নিজের ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি নিহান আজকের ঘটনায় ভয় পেয়ে গেছে। হানিয়া বেগম নিজের ছেলেকে চিনে যতই উপরে উপরে নিজেকে রাগী গম্ভীর শক্তিশালি দেখানোর চেষ্টা করুক না কোনো। আপন মানুষকে হারানোর ভয় নিহান ঠিক পাই। হানিয়া বেগম বলে –
“- নিহান তুমি টেনশন করো না হয়তো কারো সাথে বিজনেস নিয়ে শএুতা রয়েছে তাই এইরকম করছে। আর সত্যি বলতে যতখন মিহি রয়েছে ততখন কেউ আমার কোনো কিছু করতে পারবে না। আচ্ছা মিহি কেমন আছে ওর শরীর ঠিক আছে এখন “।
নিহান একটু হাসে ওর মমের মিহির প্রতি এই খেয়াল রাখার বিষয়টি বেশ ভালো লাগলো। সত্যি মেয়েটা সবার মনে জায়গা দখল করে নিতে পারে নিহান বলে –
“- হুম মিহি ঠিক আছে ডক্টর ঔষধ দিয়েছে সেটা খেয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে “।
“- নিহান তুমি যখন মিহিকে বিয়ে করেছিলে তখন মনে হয়েছে আমার তুমি এই মেয়েকে বিয়ে করে নিজের জীবনে সবচেয়ে বড়ো ভুল করেছো। কিন্তু তুমি আমার এই বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছো সত্যি বলতে মিহির মতো এইরকম একটা ভালো মেয়ে তোমার জন্য দরকার ছিলো। যে নিজের শাশুড়িকে বাঁচাতে নিজের জীবন বাজি রাখতে পারে সে নিজের স্বামীকে বাঁচাতে কি কি করতে পারবে। আমি চাই তুমি আর মিহি সবসময় সুখে থাকো সারাজীবন “।
নিহান মায়ের কথাটা শুনে একটু হাসি দেয় তবে মিহি আর ওর বিয়ের আসল সত্যিটা ওর মায়ের জানা দরকার। কারণ এই পৃথিবীতে ও ওর মায়ের কাছ থেকে কোনো কিছু লুকিয়ে রাখতে পারে না তাই নিহান বলে –
“- মম মিহি খুব ভালো মেয়ে সেটা আমি জানি কিন্তু মিহিকে আমি শুধু একজন ভালো বন্ধুর মতো দেখি। এর চেয়ে বেশি কিছু নাহ আর নিবার্চনের পরে মিহির সাথে আমার ডিভোর্স হয়ে যাবে তাই তুমি বেশি কিছুর আশা করো না।
ডিভোর্সের কথা শুনে হানিয়া বেগম চমকে না গিয়ে এক গাল হাসি দেয় কারণ নিহানকে সে খুব ভালো করে চিনে। হানিয়া বেগম একটু উঠে নিহানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে –
“- নিহান মিহিকে তুমি কখনো ছাড়তে পারবে না মা হয় তোমার আমি। তোমার চোখে মিহির প্রতি যে কেয়ার আমি দেখেছি সেটা কখনো অন্য কারোর জন্য দেখি নাই। নিয়ার সাথে ছোটবেলা থেকে তোমার বিয়ে ঠিক ছিলো কিন্তু নিয়ার কখনো এইরকম করে যত্ন নেও নাই তুমি। শোন অনেক মানুষ থাকে যাদের সাথে আমরা অনেক সময় কাটায় কিন্তু কোনো মায়া কাজ করে না তবে এই পৃথিবীতে একজন মানুষ এইরকম থাকে যার সাথে এক মুহূর্ত থাকলেই তার প্রতি মায়ার আসক্ত হয়ে যায়। মিহি তোমার জীবনে নিয়ার বদলে আসে নাই আসলে মিহিই তোমার জীবন “।
নিহান ওর মায়ের কথাটা শুনে সত্যি কখনো নিয়ার জন্য ওর মনে কোনো ফিলিংস ছিলো নাহ কিন্তু মিহি দুইদিন এসে ওর মনে জায়গা করে নিয়েছে। তবে নিহান নিবার্চনের পরে মিহিকে মুক্ত করে দিবে যদি চলে যায় তাহলে চলে যাবে আর যদি থাকতে চাই তাহলে সারাজীবন নিজের করে রাখবে। নিহান বলে –
“- মম মিহির প্রতি আমার কি ফিলিংস রয়েছে সেটা আমি জানি না কিন্তু আমি মিহির জীবনের বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। যদি মিহি ও আমার সাথে থাকতে চাই তাহলে ভেবে দেখবো কি হয়। কিন্তু আমার মনে হয় মিহি চলে যাবে “।
“- নিহান তুমি এখনো মেয়ে মানুষকে চিনতে পারো নাই মেয়েটা কখনো মুখ ফুটে বলে না তারা কাউকে ভালোবাসে। তার লজ্জা তার হাসি তার তাকিয়ে দেখা এইসব দিয়ে বুঝিয়ে দেয় সামনে থাকা মানুষটা তার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আর আমি জানি নিহান তোমার মতো এইরকম কেয়ারিং আর ভালো মনের মানুষকে যেকোনো কেউ পছন্দ করবে। একটা কথা কি যানো প্রতিটা মেয়ে তার স্বামীর প্রেমে পড়ে “।
নিহান ওর মায়ের সাথে কথা বলে নিজের রুমে চলে আসে এসে দেখে মিহি ঘুমিয়ে রয়েছে। নিহান এসে সবসময়ের মতো মিহির এলেমেলো চুলগুলো সুন্দর করে কানের পিছনে গুঁজে দেয় তারপর বলে –
“- মিহি সত্যি আপনি অনেক ভালো একটা মেয়ে যদি কখনো ভবিষ্যতে আমাদের বিচ্ছেদ হয় তাহলে আপনাকে যে পাবে সে সত্যি অনেক লাকী হবে। আচ্ছা আপনি কি সত্যি চলে যাবেন এই বাড়ি ছেড়ে আমাকে ছেড়ে। কেউ কি আমার চেয়ে বেশি যত্ন দিয়ে আপনাকে আগলে রাখতে পারবে “।
নিহান কথাটা বলে তাকিয়ে থাকে মিহির দিকে প্রতিদিন মিহির ঘুমন্ত মুখ দেখা নিহানের ডেইলি রুটিন হয়ে গেছে। হঠাৎ নিহানের ফোনে কল আসে সানভির ফোনের শব্দ মিহি একটু নড়ে চড়ে উঠে তাই নিহান ফোন নিয়ে রুমের বাহিরে চলে যায় আর রিসিভ করে বলে –
“- হ্যালো সানভি বলো “।
“- নিহান স্যার পুলিশ গিয়েছে কি বাসায় কথা হয়েছে অফিসারের সাথে “।
“- না পুলিশ আসে নাই পুলিশকে আমি মানা করে দিয়েছি আসতে কারণ সামনে নিবার্চন এখন যদি বাড়ির এইসব ঘটনার কথা কারো কানে যায় তাহলে সমস্যা হবে। আচ্ছা তুমি পুলিশ কমিশনারের নাম্বার দেও আমাকে এখন কি করতে হবে সেটা আমি ভালো করে জানি “।
“- ঠিক আছে স্যার আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি “।
সানভি নাম্বার পাঠিয়ে দেয় নিহান পুলিশ কমিশনারকে ফোন দেয়
“- হ্যালো কে বলছেন “।
“- আমি এই শহরেন মন্ত্রী নিহান নেহাল শিকদার বলছি একটু কি কথা বলা যাবে “।
নিহানের নাম শুনে পুলিশ কমিশনার বসা থেকে উঠে পড়ে আর বলে –
“- স্যার আপনি হঠাৎ ফোন করলেন কিছু কি হয়েছে স্যার কি করে সাহায্য করতে পারি আপনাকে আমি “।
নিহান পুলিশ কমিশনারকে সব ঘটনা খুলে বলে আর বলে এইসব ঘটনা যাতে কেউ যানতে না পারে। আর এইসব ঘটনা তদন্ত করার জন্য একটা টিমকে নিয়োগ দিতে। যারা খুব চুপিচুপি কাজটা করবে। পুলিশ কমিশনার বলে –
“- স্যার আপনি টেনশন করবেন না কাল থেকে আমাদের পুলিশের টিম আপনাদের বাড়িতে থাকবে। আর থানা থেকে সিকিউরিটি দেওয়া হবে আপনার কোনো টেনশন করতে হবে না “।
“- হুম কাজটা যোনো তাড়াতাড়ি হয়ে যায় এরপর আর কোনো আক্রমণ যেনো না হয় এই বাড়িতে। এইসব ঘটনার পিছনে কে আছে সেটা জানতে চাই আমি “।
হানিয়া বেগম চোখ বন্ধ করে থাকে তবে তার মনের মধ্যে একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সব আক্রমণ তার উপর কোনো হচ্ছে কারো কি তার উপর শএুতা রয়েছে না কি সেই গোপন জিনিসের জন্য। কিন্তু কেউ এই জিনিসের কথা কি করে জানবে এইটাতো সে ছাড়া কেউ যানে না। তবে এই বিষয়ে যদি কেউ যেনে গিয়ে থাকে তাহলে ওই জিনিসকে সাবধানে রাখতে হবে। যদি কেউ এইটা পেয়ে যায় তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে সব শেষ
#চলবে