#মন_ফাগুন
#লেখনীতে_তাইয়েবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_১৫
দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকাল হয়ে যায় মিহি ঘুমিয়ে ছিলো নিহান ওকে বিরক্ত করে নাই। তবে রাতে ছয়টার দিকে ওর চোখ খুলে মাথায় বেশ ব্যাথা অনুভব হচ্ছে উঠতে পারছে না
।মাথায় হাত দিয়ে দেখে বেন্ডেজ করা সেখানে পরে সব ঘটনা মনে পড়ে। মিহি ঘুম থেকে উঠে নিহানকে খুঁজতে থাকে তবে আশেপাশে কাউকে দেখতে পাই নাই। মিহি তাই ওয়াশরুমে যায় ফ্রেশ হতে।
নিহান রুমে আসে তবে বিছানায় মিহিকে না দেখে ভাবে ঘুম থেকে উঠে পড়েছে আর দেখে ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ তাই নিহান বিছানায় বসে। হঠাৎ একজন কাজের লোক এসে দরজায় টোকা দেয় নিহান বলে –
“- কে কি হয়েছে কোনো দরকার “।
“- স্যার মিহি মেডাম ওনার ব্যাগ নিচে রেখে চলে এসেছেন সেটা দিতে এসেছি। এই যে ওনার ব্যাগ “।
নিহান উঠে ব্যাগ নিয়ে সেটা টেবিলের উপর রাখে তবে ব্যাগের চেইন খোলা ছিলো মিহিকে নিহান তাড়াতাড়ি কলেজ থেকে আসতে বলে যার কারণে রেজাল্ট সিট নিয়ে চেইন লাগাতে ভুলে যায়। নিহান কাগজটা বের করে দেখে সেখানে রেজাল্ট সিট রয়েছে নিহান রেজাল্ট দেখে অবাক হয়ে যায়। মিহি ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে নিহানের হাতে ওর রেজাল্ট সিট দেখে খুশিতে বলে –
“- ওহ আপনাকে বলতে ভুলে গেছি আমি পরীক্ষায় পাশ করেছি। আসলে এই মিহির মাথায় অনেক বুদ্ধি রয়েছে তাই সে পাশ করে গেছে সত্যি মিহি ইউ আর এ গ্রেট “।
নিহান রেজাল্ট সিট দেখে আর বলে –
“- আপনার মাথায় বুদ্ধি কতটুকু আছে যানি না বাট মিহি ভাগ্য আছে আপনার। মানে রিয়েলি প্রতিটা সাবজেক্ট ৩৩ পেয়ে পাশ করেছে বাংলায় ৩৩,ইংরেজিতে ৩৩ মানে সব সাবজেক্ট সেইম। মানে মানুষের একটা সাবজেক্ট সমস্যা থাকে কিন্তু বাকি সব গুলোতে ভালো পারে কিন্তু আপনি সব সাবজেক্টে খারাপ “।
“- দেখুন পাশ করেছি সেটাই বড়ো কথা আর ৩৩ পেয়ে পাশ করা অনেক কঠিন বিষয়। যারা ফেল করেছে তাদের কথা ভাবুন তারা আমার থেকেও খারাপ। সবসময় কথা শুনাবেন না “।
“- হুম আপনাকে কথা শুনিয়ে লাভ কি রিয়েলি ৩৩ মানে যেই নিহান নেহাল শিকদারের পরীক্ষার নাম্বার কখনো নব্বই নিচে আসে নাই তার বউ তেত্রিশ পেয়েছে পরীক্ষায়। আপনার বাবা এই রেজাল্ট দেখার পর কি করবে সেটা জানি না কিন্তু আমার যদি মেয়ে থাকতো আর সে যদি পরীক্ষায় এইরকম তেত্রিশ নিয়ে আসতো। তাহলে তাকে পড়াশোনা না করিয়ে বিয়ে দিয়ে দিতাম “।
“- আর এই জন্য আপনার কোনো মেয়ে নাই না হবে ও না আমি যাওয়ার পর আপনি আরেকটা বিয়ে করলে ও আপনার মেয়ে হবে না। যা আনরোমান্টিক মানুষ আপনি নিশ্চয়ই আপনার বউকে বাচ্চা ডাউনলোড করে আনতে হবে “।
মিহির এই কথাটা শুনে নিহান ওর কাছে যায় একদম শরীরের সাথে মিশে যাওয়ার মতো কাছে। মিহি একটা ঢুক গিলে এই লোকটা মাঝে মধ্যে ওর এতো কাছে কোনো চলে আসে। নিহান একটু মিহির সাথে মজা করছে কিন্তু মিহির দম হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। মিহি বলে –
“- কি হলো এতো কাছে আসছেন কোনো দূরে যান “।
নিহান আরো কাছে এসে মিহির গালে হাত দিয়ে ওর মুখটা আর একটু কাছে নিয়ে আসে আর বলে –
“- কোনো আপনি না বললেন আমি আন রোমান্টিক আমাকে দিয়ে কিছু হবে না। তাই নতুন বিয়ে করে বউয়ের সাথে রোমান্স করার জন্য প্রথমে রোমান্স শিখতে হবে তো। আর মিহি আপনি ও তো আমার বউ তাই একটু ট্রাই করছি।
নিহানের কথাটা শুনে মিহি ওকে ধাক্কা দেয় সবসময় লোকটা এইরকম করে ভয় দেখিয়ে দেয়। নিহান হাসতে থাকে তবে নিহানের ফোনে একটা কল আসে নিহান সেটা দেখে রিসিভ করে –
“- স্যার এই গুন্ডারা কোনো কথা বলছে না কি করব এখন? ওরা কিছুই যানে না বলছে?
মিহি সামনে রয়েছে তাই নিহান কোনো কথা বলে না নিহান শুধু বলে –
“- হুম তুমি থাকো আমি আসছি “।
“- আপনি একটু আগে বাহির থেকে আসলেন এখন আবার কোথায় যাবেন? কিছু কি হয়েছে? এই বাড়িতে করা আক্রমণ করেছে সেই বিষয়ে কি কিছু জানতে পেরেছেন?
নিহান মিহির মুখের দিকে দেখে এখন যদি এইসব ঘটনা বলে তাহলে ওর টেনশন বেড়ে যাবে। তাই নিহান হাসি মুখে বলে –
“- আরে তেমন কিছু নাহ আর গুন্ডাদের ধরার জন্য পুলিশ রয়েছে কালকে পুলিশ আসবে। আর এখন সানভি কল করেছে আমাকে ওই গেটের কাছে যেতে কি যেনো গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। আপনি রেস্ট করেন আর কোনো সমস্যা হলে বলবেন “।
নিহান কথাটা বলে চলে যায় মিহি কিছু বুঝতে পারে না যদি সত্যি এমন কিছু না হয় তাহলে নিহানের মুখ ফোন করার সাথে সাথে গম্ভীর হয়ে গেছে কোনো। তবে মিহির মাথায় গুন্ডাদের বলা একটা কথা সবসময় ঘুরতে থাকে এই বাড়ির কেউ হানিয়া শিকদারকে মারতে চাই। কিন্তু সেটা কে? কোনো সেটা মিহির জানতে হবে?
নিহান বাড়ির বাহিরে যায় সেই রুমে যেখানে গুন্ডারা ছিলো নিহান সেখানে কিছু সিকিউরিটি ছিলো। নিহান রুমে ঢুকে দেখে কিছু মানুষ রক্তাক্ত অবস্থা পড়ে রয়েছে। নিহান বলে –
“- তুমি এদের এই অবস্থায় ফেলে রাখছো কোনো ওদের আরো মারো যতখন না সত্যি বলছে ততখন মারবে। কতো বড়ো সাহস মন্ত্রীর বাড়িতে ঢুকে ওর মাকে খুন করতে যায় ”
“- স্যার ওদের অনেক সময় ধরে জিজ্ঞেস করেছি কিন্তু ওরা কিছু বলে নাই ওরা নাকি কিছু জানে না। ওদের কাছে কনটাক্ট এসেছে তাই মারতে চলে এসেছে। স্যার তাহলে কি করব বলেন?
নিহান সুন্দর করে চেয়ারে গিয়ে বসে আর পাশের লোকদের ইশারা দেয় ওরা গুন্ডাদের মাথায় বন্ধুক ধরে। গুন্ডারা ভয় পেয়ে যায় নিহান হাসি দিয়ে বলে –
“- নিহান নেহাল শিকদার অনেক ভালো ভদ্র একজন নেতা কিন্তু সেটা রাজনীতির সময়। বাট নিহান বাস্তবে কেমন সেটন তোর জানা নাই এই নিহানের ভালো মানুষের রূপটা শুধু দেখলি ভিতরের সয়তান দেখলি না “।
“- স্যার সত্যি আমরা কিছু জানি না স্যার দয়া করে মাফ করে দেন স্যার “।
“- তোকে সুন্দর করে জিজ্ঞেস করছি সত্যি বলতে বলে দে আর না হলে কি হবে সেটা তোর অজানা “।
“- স্যার সত্যি আমরা কিছু জানি না “।
নিহান পাশে থাকা লোকটাকে ইশারা দেয় তারপর একটা চিৎকারের আওয়াজ শুনা যায়। নিহান বলে –
“- তোর জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল নিহান নেহাল শিকদারের আপনজনকে আঘাত করা সেইজন্য তোর জীবনটা চলে গেলো। তবে টেনশন করবি না এই সব কাজের পিছনে যে আছে তাকে ও শাস্তি পেতে হবে একটু অপেক্ষা কর “।
#চলবে