মন ফাগুন পর্ব-১৯

0
48

#মন_ফাগুন
#লেখনীতে_তাইয়্যেবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_১৯ ( মায়ের উপর সন্দেহ) .

নিহান আর মিহি মেঝেতে ভালো করে গন্ধ শুকে দেখে সেখানে সত্যি একটা কেরাসিন ছিলো। নিহানের এখনো বিশ্বাস হয় না কেউ তার বাড়িতো এসে তার মায়ের রুমের মেঝেতে কেরাসিন ডেলে আগুন লাগাতে পারে। নিহান বলে-

“- এই জন্য সেইদিন ঘরে এতো আগুন লেগেছিলো। আপনার সন্দেহ ঠিক মিহি কয়েলের আগুনে পুড়ো ঘরে এতো পরিমাণে আগুন লেগে যেতে পারে না। কিন্তু এই কেরাসিনটা রুমে কে দিলো আর মম সেটা খোঁজ পেলো না কোনো “।

নিহানের কথাটা মিহি বুঝতে পারে সত্যি কেরাসিন কখন রুমে আসলো। মিহি বলে –

“- হুম আপনার কথা ঠিক তবে আমাদের বউভাতের দিন বাড়িতে অনেক মানুষ ছিলো সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে। কেউ মমের রুমে কেরাসিন দিয়েছে। তবে অবাক করা বিষয় হলো কেরাসিনের একটা গন্ধ থাকে যদি কেরাসিন পুড়ো রুমে ছড়িয়ে থাকে তাহলে মম সেটার গন্ধ পাই নাই কেনো “।

“- হয়তো মম এই রুম থেকে যাওয়ার পর কেরাসিন দেওয়া হয়েছে এই রুমে “।

“- সেটা হতে পারে কিন্তু মম বলেছে সে শাড়ি বদলাতে একবার রুমে ঢুকে। যদি একবার ও মম রুমে আসে তাহলে সাথে সাথে তার নাকে গন্ধ যাওয়ার কথার কিন্তু অদ্ভুত ভাবে মম কিছু বুঝতে পারে না। সবকিছু কেমন যেনো অদ্ভুত লাগছে মনে হচ্ছে এই রহস্য অনেক দূর অবদি নিয়ে যাবে “।

মিহি আর নিহান একটু সময় সেই পুড়া রুমে অবস্থান করলেন কিন্তু তেমন কিছু খুঁজে পাই নাই। আর রাত অনেক হয়ে গেছে সকালে নিহানের কাজ রয়েছে তাই তাকে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে হবে। তাই নিহান আর মিহি সেই রুম থেকে বাহির হয়ে নিজেদের রুমে চলে যেতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ করে যাওয়ার সময় কারো সাথে ধাক্কা লাগে মহিলার গায়ে চাদর পড়া অন্ধকারে মুখ দেখা যাচ্ছে না। মিহি তার হাতে থাকা লাইট সেই মহিলার মুখের সামনে ধরে তবে হানিয়া শিকদারকে দেখে নিহান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে –

“- মম তুমি এখানে এতো রাতে কি করছো? আর তোমার শরীরে এইরকম চাদর দিয়ে মুড়ানো কোথা ও যাচ্ছো তুমি? এই অসুস্থ শরীরে কোথায় যাও তুমি রাত তিনটার সময়?

হানিয়া বেগম একটা শুকনো ঢুক গিলে কি বলবে সে ছেলেকে কোথায় গিয়েছিলো সে। সত্যি কথাটা নিহানকে কিছুতেই বলা যাবে না তাহলে অনেক বড়ো সমস্যা হয়ে যাবে। হানিয়া বেগম বলে –

“- আসলে আমি পানি খেতে নিচে এসেছি আসলে সারা রুমে পানি দিতে ভুলে গেছে তাই এতো রাতে নিচে আসতে হলো। আর গায়ে চাদর রয়েছে কারণ এখন অনেক রাত হয়েছে তাই ঠান্ডা লাগছে শরীর অসুস্থ তাই হয়তো “।

মিহি পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে সে হানিয়া বেগমের হাতের দিকে খেয়াল করে ওনার হাতে কোনো পানির বোতল নাই। পানির বোতল ছাড়া এতো রাতে কি করে পানি আনতে যায় বিষয়টা কেমন অদ্ভুত। হানিয়া বেগম মিহির দিকে দেখে তবে এতো রাতে নিহান আর মিহি কি করছে এই অন্ধকারে। হানিয়া শিকদার বলে –

“- নিহান তুমি আর মিহি এতো রাতে কি করছো এখানে অন্ধকারে? প্রায় তিনটা বাজতে চললো এতো রাতে বাহিরে কোনো তোমরা?

মিহি আর নিহান একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে হানিয়া শিকদারকে তারা সত্যি বলতে পারবে না। কারণ এইসব রহস্যর কথা শুনে ওনি হয়তো ভয় পেয়ে যাবেন আর ওনাকে মারার পিছনে এই বাড়ির কেউ রয়েছে সেটা জানলে কষ্ট পেতে পারেন। আর পরিবারের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হবে তাই আসল অপরাধী কে সেটা না জানা অবধি কাউকে কিছু জানানো যাবে না। এইবার মিহি কথার উত্তর দেয় –

“- আসলে মম আমার শরীরটা হঠাৎ করে খারাপ লাগছিলের তাই ঘরে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো সেইজন্য বাহিরে এসেছি। আর রুম থেকে বাহির হওয়ার সময় ওনি খুঁজ পেয়ে যান তাই এসেছে “।

“- ওহ আচ্ছা তোমার শরীরের কি দোষ বলো যা যা হচ্ছে এই বাড়িতে আর আমাকে বাঁচাতে গিয়ে তোমার সমস্যা হচ্ছে। তবে এখন অনেক রাত হয়ে গেছে আর বাহিরে থেকে কাজ নাই যাও রুমে গিয়ে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো দেখবে ঠিক হয়ে যাবে। নিহান যাও মিহিকে নিয়ে রুমে যাও”

হানিয়া শিকদার এই কথা বলে চলে যায় মিহি আর নিহান ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। নিহান বলে –

“- মিহি কোনো যেনো মায়ের বলা কথাটা বিশ্বাস হলো না আমার এতো রাতে পানি খেতে বের হয়েছে। আর চাদর শুধু শীতের জন্য পেঁচিয়ে রয়েছে কথাগুলো যেনো অদ্ভুত। কোনো যেনো মনে হচ্ছে মম কিছুতো লুকিয়ে যাচ্ছে আমাদের কাজ থেকে কিন্তু সেটা কি?

“- হুম ঠিক বলেছেন মমের কথাটা বিশ্বাস আমার ও হয় নাই মম পানি খেতে নিচে গেছে কিন্তু হাতে পানির কোনো বোতল নাই। আর এই মমকে কোনো কেউ মারতে চাই এমন কোনো কথা বা জিনিস রয়েছে মম আমাদের থেকে লুকিয়ে যাচ্ছে। আর সেইজন্য এই আক্রমণ হচ্ছে কিন্তু কি কথা সেটা বুঝতে পারছি না “।

“- আচ্ছা চলুন মিহি অনেক রাত হয়ে গেছে রুমে যেতে হবে আপনার শরীরের অবস্থা ভালো না। ডক্টর বলেছে ভালো করে ঘুমাতে তাই চলুন “।

মিহি আর নিহান নিজেদের রুমে চলে যায় তবে মিহির চোখে ঘুম নাই কোনো যেনো সব রহস্য তার মাথা থেকে যাচ্ছে না। নিহান বিষয়টা খেয়াল করে নিহান মিহির ছোফার কাছে যায় আর ওর মাথায় হাত রেখে বলে –

“- মিহি একটা কাজ করেন আপনি ঘুমিয়ে পড়েন আমি আপনার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরবেন “।

“- আরে না কি করছেন এইসবের কোনো দরকার নাই আপনি যান ঘুমিয়ে পড়েন। আমি ঠিক আছি “।

“- মিহি আমি জানি আপনার ঘুম আসবে না এইসব রহস্য আগুন এইসব কথা মাথায় ঘুরপাক খাবে তাই মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় ঘুমিয়ে পড়েন। আপনার শরীর অসুস্থ ঘুম খুব দরকার “।

নিহানের কথা শুনে মিহি আর কিছু বলে না সে চুপচাপ ছোফায় শুয়ে পড়ে। নিহান সুন্দর করে মিহির মাথা টিপে দেয় মিহির বেশ শান্তি লাগছে সত্যি আজকে ওর ঘুম আসতো না কিন্তু নিহান সেটা কি করে বোঝে গেলো। মিহি মনে মনে বলে –

“- আব্বু আমি জানি না তুমি আমার জন্য কেমন ছেলে খুঁজে বের করবে কিন্তু দয়া করে ওনার মতো কাউকে আমার জন্য ঠিক করো। যাকে দেখে মনে হবে এই মানুষটা আমার যে আমার মনের কথা মুখে বলার আগে বুঝতে পারবে। সত্যি নিহান আপনার মতো হয়তো কেউ কখনো এই মিহির এতো খেয়াল রাখতে পারবে এতো ভালো কেনো আপনি। যে আপনার থেকে দূরে থাকা যায় নাহ “।

নিহান এইসব কথা ভেবে ভেবে ঘুমিয়ে পড়ে নিহান সুন্দর করে মাথা টিপে দেয়। মিহি ঘুমিয়ে পড়েছে দেখে নিহান উঠে দাড়াঁয় এখন শীতকাল তাই বাহিরের ঠান্ডা বাতাসে মিহির শীত করছে। নিহান আলমারি থেকে একটা কম্বল নিয়ে এসে মিহির শরীরের উপর দেয় আর বলে –

“- মিহি হয়তো আপনার সাথে আমার বিয়ে না হলে আমার জীবনে অনেক বুঝদার আর শান্ত মেয়ে আসতো। কিন্তু তার সাথে আমি কখনো এতটা সুখী থাকতে পারব না কি করে যে আপনি আমার এতো কাছে চলে আসলেন সত্যি বুঝতে পারি নাই মিহি। যদি কখনো আপনি আমাকে ছেড়ে চলে যান নিজেকে কি করে সামলে নিবে সেটা সত্যি আমি জানি না “।

মিহি এখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তাই নিহানের কোনো কথা তার কানে যাচ্ছে না নিহান মিহিকে একটু দেখে নিজের বেডে এসে শুয়ে পড়ে। সকাল সাতটা বেজে গেছে বাহির থেকে আসা একমুঠো সোনালি রোদের ঝিলিক জানালার কাচ ভেদ করে মিহির ঘুমন্ত মুখে পড়ে। মিহি চোখ খুলে যায় এখন সে বেশ সকালে ঘুম থেকে উঠে যেহেতু এইটা তার শশুড় বাড়ি তাই।

মিহি ঘুম থেকে উঠে নিজের গায়ে কম্বল দেখতে পেরে বুঝতে পারে এইটা নিহান হয়তো রাতে দিয়েছে। কারণ মিহির মনে আছে সে কম্বল নিয়ে ঘুমায় নাই মিহি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বেডে ঘুমিয়ে থাকা নিহানকে দেখে। নিহানের ঘুমন্ত মুখ দেখে মিহি মায়ায় পড়ে যায় সে উঠে নিহানের কাছে যায় ওর বেডের কাছে বসে। মিহি হাত দিয়ে নিহানের মুখে একটু আলতো করে ছুঁয়ে দেয় আর বলে –

“- এই খাটাশ লোকটা সময়ের সাথে সাথে ভালো হয়ে যাচ্ছে কোনো যেনো মনে হচ্ছে এই লোককে আর ছেড়ে যাওয়া যাবে না। কিন্তু আব্বুকে কি করে সত্যি কথাটা বলবো সেটা বুঝতে পারছি না যা খাটাশ বাপ আমার বিয়ে বিয়ে করে মাথা খারাপ করে ফেলছে। আর অন্যদিকে তার মেয়ে আরেকজনের সাথে সংসার করছে কি যে হবে আমার ভবিষ্যতে কে যানে “।

অন্যদিকে রায়ান আর নিয়া বিয়ে করে ফেলেছে তারা একটা বাড়িতে লুকিয়ে রয়েছে। তবে রায়ানের ব্যবহার দিনদিন কেমন যেনো খারাপ হয়ে যাচ্ছে কালকে সারারাত সে ঘরে ফিরে আসে নাই নিয়া ওর জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকে৷ কিন্তু পুরো রাত পার হয়ে যায় রায়ানের আসার খবর নাই সকালে সে বাড়িতে আসে যখন রুমে ঢুকতে যাবে তখন নিয়া গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে –

“- রায়ান কোথায় ছিলে তুমি সারারাত? তোমাকে একশো বার ফোন করেছি ফোন ধরলে না কোনো আমার? কি হলো বলো সারারাত কোথায় কাটিয়ে এসেছো?

রায়ান নিয়ার কথা শুনে ওর দিকে রাগী চোখে দেখে কিন্তু নিয়া সেটা দেখ ভয় পায় না। রায়ান বলে –

“- আমি কোথায় ছিলাম সেটা কি তোমাকে বলতে হবে? আর ফোনের ব্যাটারি শেষ হয়ে গেছে তাই ধরতে পারি নাই। এখন সরে যাও আমি ঘুমাবো “।

নিয়ার নাকে একটা গন্ধ আসে ভালো করে খেয়াল করে দেখে রায়ানের শরীর থেকে আসছে মনে হচ্ছে মদের গন্ধ। তাহলে কি রায়ান মদ খেয়েছে নিয়া বলে –

“- রায়ান তোমার বিষয়ে জানার অধিকার আমার রয়েছে কারণ আমি তোমার বউ। আর তুমি কি মদ খেয়েছো এইরকম গন্ধ আসছে কোনো তোমার শরীর থেকে আর তোমার শরীরের এই কি অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সারারাত নাচানাচি করেছো। সত্যি করে বলো তুমি কোথায় ছিলো রাতে?

রায়ানের নিয়ার এইসব কথা শুনতে ভালো লাগছে না তাই সে নিয়াকে ধাক্কা দিয়ে রুমের ভিতরে চলে যায়। শুধু একজনের জন্য এই নিয়া নামের ঝামেলাকে সে বিয়ে করেছে না হলে এই মেয়েকে তার সয্য হয় না।নিয়া খেয়াল করে রায়ানের চোখ লাল মানে সত্যি রায়ান মদ খেয়েছে নিয়া মনে মনে বলে –

“- তাহলে কি তোমাকে বিয়ে করে ভুল করেছি রায়ান আমি? পরিবারের মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে নিজের জীবনটা শেষ করে দিয়েছি?

#চলবে