মন ফাগুন পর্ব-২০

0
54

#মন_ফাগুন
#লেখনীতে_তাইয়্যেবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_২০ ( হানিয়ন শিকদারের মৃত্যু)

রায়ান গিয়ে বেডে শুয়ে পড়ে কারণ সে সারারাত ঘুমাতে পারে নাই তাই তার চোখ লাল হয়ে গেছে। নিয়া চোখের জল মুছে রায়ানের পা থেকে জুতা খুলে দেয় তারপর উঠে রায়ানের মাথাটা বালিশে রাখে কিন্তু যখন বিছানা ছেড়ে উঠে পড়বে। তখন হঠাৎ রায়ানের শার্টের দিকে নজর পড়ে তার। রায়ানের শার্টে একটা লিপিস্টকের দাগ ছিলো নিয়া বলে –

“- রায়ান তোমার শার্টের মধ্যে এই দাগ কোথা থেকে এসেছে এইটা লিপস্টিকের দাগ মনে হচ্ছে। সত্যি করে বলো তুমি রায়ান সারারাত কোথায় ছিলে তুমি? কার সাথে ছিলে বলো?

নিয়ার কথাগুলো সত্যি এবার রায়ানের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছে কোনো যে সে এই নিয়াকে বিয়ে করতে গেলো। রায়ান রাগী চোখে তাকিয়ে বলে –

“- আমি সারারাত কোথায় ছিলাম সেটা তোমার জানার বিষয় না। আর যদি কারো সাথে রাত কাটিয়ে আসি তাহলে তোমার কি হুম। ঘরের বউ ঘরের মতো থাকে অতিরিক্ত বিষয় কথা বলতে যেও না ঠিক আছে “।

রায়ানের এই জবাবটা নিয়ার পছন্দ হয় নাই রায়ানের মন মানসিকতা দেখে নিয়া অবাক হয়ে যায়। মানে রায়ান সারারাত অন্য কারো সাথে কাটিয়ে আসবে আর নিযা তার বউ হয়ে এই কথাটা জিজ্ঞেস করতে পারবে না। নিযা বলে –

“- রায়ান তুমি কি বলতে চাও ঘরের বউ হয়েছি বলে কি তোমার বিষয়ে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করতে পারব না। আর তোমার যদি অন্য কারো সাথে রাত কাটানোর মতো ইচ্ছা থাকে তাহলে আমাকে বিয়ে করতে গেলে কোনো। কোনো আমার জীবন নষ্ট করেছো বলো রায়ান?কোনো আমাকে ভালোবাসতে গেলে?

নিয়ার কথা শুনে রায়ান হাসে মানে ও নিয়াকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। রায়ান বলে –

“- নিয়া তুমি কি বললে ভালোবাসেছি তাও আবার তোমাকে। ওহ নিয়া নিজের মনের মধ্যে আর কতো ভুল ধারণা রাখবে বলো। আমি কখনো তোমাকে ভালোবাসি নাই এইটা শুধু একটা ফাঁদ ছিলো তোমার জন্য যাতে তুমি আমাকে বিয়ে করো। তোমার পরিবারের একজন হতে পারি আমি আর ওই নিহান শিকদারের মান সম্মান সব ডুবাতে পারি সেই জন্য শুধু তোমাকে বিয়ে করা “।

রায়ানের কথা শুনে নিয়ার নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না সত্যি রায়ান কখনো তাকে ভালোবাসে নাই সব নাটক ছিলো। নিয়া বলে –

“- তোমার কি শএুতা ছিলো আমার পরিবারের সাথে আর নিহান ভাই তোমাকে সবসময় নিজের ভাইয়ের মতো বিশ্বাস করতো। তুমি কি করে করতে পারলে আমার পরিবারের সাথে এইরকম কি করে? আমি তোমার সাথে আর একমুহূর্ত থাকবো না এখুনি চলে যাবো “।

নিয়া যখন চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় তখন রায়ান ওর হাত ধরে ফেলে আর বলে –

“- আরে নিয়া বেবি তুমি কি মনে করেছো তুমি চলে যেতে চাইবে আর আমি তোমাকে যেতে দিবো কি করে ভাবলে কথাটা। শোন এই বাড়ির চারপাশে একশোর চেয়ে বেশি সিকিউরিটি রয়েছে আর পুরো বাড়ি সিসিটিভি লাগানো হয়েছে। সো পালানোর চেষ্টা না করে চুপচাপ এখানে থাকো আর না হলে এই রায়ান কি করতে পারে সেটা তুমি ভাবতে পারবে নাহ “।

মিহি আর নিহান রাতে অনেক দেরি করে ঘুমায় যার কারণে ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি হয়ে যায়। তবে তারা উঠে ফ্রেশ হয়ে একসাথে নিচে যায় সারা খাবার বেড়ে দিচ্ছে সবাইকে। মিহি নিচে গিয়ে বলে –

“- সারা ভাবী দাও আমি তোমাকে খাবার বেড়ে দিতে সাহায্য করি। আর মা কোথায় ফুপুমণি জায়ান ভাই ওরা খাবে না “।

আসলে হানিয়া বেগম নিচে এসে খাবার খেতে চাই নাই আর ওনার ঘুম এখনো ভাঙ্গে নাই। কালকে অনেক রাত করে ঘুমিযেছে তবে নিহানের ফুপি জাকিয়া বেগম নিচে আসে আর বলে –

“- কি হলো খাবার হয়েছে না কি আরো সময় লাগবে?

“- না মা খাবার হয়ে গেছে আসুন খেতে বসুন “।

জাকিয়া বেগম একবার আড়চোখে মিহিকে দেখে সেও সারাকে সাহায্য করছে খাবার পরিবেশন করতে। সারা মিহিকে বারণ করে তাকে সাহায্যে না করতে কারণ মিহি অসুস্থ কিন্তু মিহি তাও সাহায্যে করে। জাকিয়া বেগম বলে –

“- তাহ নতুন বউ কি যেনো নাম তোমার মিহি তাই না। আজকে তুমি কাজ করছো হঠাৎ করে মনে পড়ে গেলো না কি তুমি এই বাড়ির বউ হুম। বিয়ের পর থেকে একদিন ও রান্নাঘরে যাও নাই তাহ তুমি কি মনে করো তুমি পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকবে আর সবাই তোমাকে রান্না করে খাওয়াবে “।

নিহান তার ফুপির কথা শুনছিলো আসলে খাবার নিয়ে আসতে একটু সময় লাগছিলো তাই নিহান টিভি দেখতে থাকে। সিহি জাকিয়া বেগমের কথা শুনে তেমন একটা মনে করে না সত্যি তার কাজ করা উচিত ছিলো। মিহির বিয়ের যেমন করেই হোক না কোনো এইটা তার শশুড়বাড়ি সেটা মনে রাখা উচিত ছিলো। মিহি বলে –

“- সরি ফুপি আসলে এতোদিন বিয়ে অসুস্থতা আর রেজাল্ট জন্য কাউকে কোনো কাজে সাহায্যে করতে পারি নাই। তবে এখন থেকে সারা ভাবিকে সব কাজে সাহায্যে করব আর এখন কলেজ ও বন্ধ আর সমস্যা হবে না “।

নিহান মিহির দিকে দেখে সে মনে করছিলো মিহি হয়তো ফুপির কথা শুনে মুখের উপর জবাব দিবে। কিন্তু তা হলো না সে সুন্দর করে কথা বললো মনে হয় মেয়েটা এই কয়েকদিনে ঝগড়া করার অভ্যাসটা বাদ দিয়ে দিয়েছে। মিহি বলে –

“- আসুন খাবার খেয়ে নেন “।

নিহান টিভি অফ করে খাবার খেতে টেবিলে বসে যায় সারা রান্না ঘরে যায় আসলে হানিয়ন বেগমকে খাবার দিতে হবে। সারা খাবার থালায় সাজিয়ে পাশে থাকা একটা কর্মচারীকে বলে –

“- যাও এই খাবারটা বড় মামির রুমে দিয়ে আসো। আর সাবধানে যাবে “।

কমর্চারী সেই খাবারটা নিয়ে যায় কিন্তু হঠাৎ করে তার ফোনে কারো কল আসে সেটা ওর মায়ের ছিলো। তাই সে পাশে থাকা একটা টেবিলে খাবার রেখে দূরে গিযে তার মায়ের সাথে কথা বলে। হঠাৎ ছায়ার মতো কেউ একজন সেই খাবারে একটা ঔষধ ডেলে দিয়ে খাবারে মিশিয়ে দিযে চলে যায়। কর্মচারী আবার ফিরে এসে খাবার নিয়ে হানিয়া বেগমের রুমে আসে আর বলে –

“- ম্যাডাম আপনার খাবার “।

“- হুম রাখো আমি ফ্রেশ হয়ে আসি “।

হানিয়া বেগম ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে যায় কর্মচারী নিচে চলে আসে। ছায়ার মতো একটা লোক কাউকে ফোন করে বলে –

“- বস এইবার কাজ হয়েই যাবে আর মিহি নিচে রয়েছে সো হানিয়া শিকদারকে কেউ বাঁচাতে পারবে না ‘।

হানিয়া বেগম ফ্রেশ হয়ে এসে একটু রেডি হয়ে এসে খাবারের থালা তুলে নিয়ে সেখান খেতে থাকে। আর ছায়ার মতো লোকটা দরজার আড়াল থেকে সেটা দেখে হাসতে থাকে আর বলে –

“- হানিয়া শিকদার এইবার তোমাকে মরতে হবেই আর তোমার লুকানো সেই জিনিস আমাদের হবে। সো মরার জন্য তৈরি হয় সময় চলে এসেছে বাই বাই “।

#চলবে