মন ফাগুন পর্ব-২১+২২

0
46

#মন_ফাগুন
#লেখনীতে_তাইয়্যেবা_বিনতে_কেয়া
#পর্ব_২১ ( মৃত্যুর কবলে হানিয়া) .

হানিয়া শিকদার খাবার খেয়ে নেয় নিচে খাবার টেবিলে নিহান খেতে বসে মিহি তাকে খাবার বেড়ে দেয়। মিহি খাবার বেড়ে দিচ্ছে দেখে সারা বলে –

“- মিহি তুমি নিহান ভাইকে খাবার দাও আমি বরং উপরে গিয়ে দেখে আসি বড় মামির খুব লাগবে কি না। তুমি থাকো মিহি নিচে “।

মিহি কথায় মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় সারা উপরে যেতে থাকে সিঁড়ি বেয়ে। হানিয়া বেগমের খাওয়া প্রায় শেষ তবে ওনার শরীর যেনো কেমন লাগছে অদ্ভুত অনূভুতি হচ্ছে তার শরীর ঘামছে আর খাওয়া দাওয়া করার মতো শক্তি ওনার শরীরে নাই। কোনো এমন হঠাৎ করে শরীর খারাপ হচ্ছে এইর কোনো কারণ বুঝতে পারছে না হানিয়া বেগম। সারা দরজার কাছে গিয়ে বলে –

“- বড় মামি তোমার কি কিছু লাগছে? তরকারি ভাত বা অন্য কিছু?

সারা কথাটা বলে রুমে ঢুকে যায় কিন্তু হানিয়া শিকদারকে দেখে সে একটা চিৎকার করে। কারণ হানিয়া বেগম বেডে অজ্ঞান হয়ে গেছে আর ওনার মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে যেটা দেখে সারা বড় মামি বলে চিৎকার করে ওনার কাছে যায়। সারা বলে –

“- বড় মামি কি হয়েছে তোমার? কথা বলো বড় মামি আর এই রক্ত কি করে আসছে তোমার মুখ থেকে? নিহান মিহি কোথায় তোমরা তাড়াতাড়ি আসো নিহান”।

নিহানের খাওয়া শেষ হয়ে যায় তাই সে হাত ধুয়ে ফেলে কবে হঠাৎ করে উপর থেকে সারার চিৎকার শুনে অবাক হয়ে যায়। নিহান বলে –

“- কি হয়েছে সারা ভাবী এইরকম করে ডাকছে কোনো আমাদের নাম ধরে। উপরে কি হয়েছে মা ঠিক আছে তো “।

“- হুম সত্যি তো সারা ভাবী এইরকম করে ডাকছে কোনো চলুন উপরে যায়। কি হয়েছে দেখতে হবে তাড়াতাড়ি চলুন “।

নিহান মিহি আর জাকিয়া বেগম তাড়াতাড়ি করে উপরে উঠে যায় কি হয়েছে সেটা দেখতে। কিন্তু হানিয়া বেগমের রুমে ঢুকে নিহানের পা অবশ হয়ে যায় নিজের মাকে এইরকম করে দেখে। মিহি নিজে ও বুঝতে পারে না সে কি করবে নিহান দৌড়ে গিয়ে বিছানায় বসে তার মায়ের মাথাটা কোলে নিয়ে বলে –

“- মম কি হয়েছে তোমার মম কথা বলো? মুখে রক্ত কোনো তোমার মম? সারা ভাবী মমের কি হয়েছে ?

“- সেটা বুঝতে পারছি না নিহান বড় মামির কোনো কিছু লাগবে কি না সেটা দেখতে উপরে আসি। কিন্তু এসে দেখি মামি এইরকম করে বিছানায় পড়ে রয়েছে আর মুখে রক্ত পড়ে তোমাদের ডাক দিলাম। মনে হচ্ছে মামি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে মামিকে “।

নিহান নিজের মায়ের এমন অবস্থা দেখে নিজেকে শান্ত রাখতে পারছে না কিন্তু মিহি বুঝতে পারে এখন যা পরিস্থিতি রয়েছে তাকে সব করতে হবে। ততক্ষণ নূহা এসে পড়ে রুমে সবার কান্না করার শব্দ শুনে রুম থেকে দৌড়ে চলে আসে। মিহি নূহার থেকে নাম্বার নিয়ে নিহানদের ফ্যামিলি ডক্টরকে কল করে –

“- হ্যালো ডক্টর আমি মিহি বলছি নিহানের ওয়াইফ আসলে মায়ের শরীরের অবস্থা খুব খারাপ। কি হয়েছে জানি না তবে মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে আর অজ্ঞান হয়ে গেছে “।

ডক্টর কথাটা শুনে অবাক হয়ে যায় এইসব কি করে হয়ে গেলো তবে সে বলে –

“- এইসব কি বলছো মিহি কি করে হয়েছে ওনার সাথে এইরকম আচ্ছা ওনাকে মনে হয় হাসপাতালে নিতে হবে। আমি তাড়াতাড়ি এম্বুলেন্স পাঠিয়ে দিচ্ছি তুমি আর নিহান ওনাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার আয়োজন করো “।

মিহি একবার হানিয়া বেগমের দিকে দেখে এরপর ওনার কাছে যায় সে এখনো ফোন কাটে নাই। মিহি গিয়ে হানিয়া বেগমের শরীর টার্চ করে দেখে আসতে আসতে শরীর ঠান্ডা হয়ে আসলে হাত পা কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছে একদম নীল। মিহি একটা ঢুক গিলে এরপর বলে –

“- ডক্টর মায়ের অবস্থা খুব একটা ভালো না যা দেখছি তাতে মনে হচ্ছে ওনাকে কেউ বিষ দিয়েছে। তাই হাত-পা নীল হয়ে যাচ্ছে হাসপাতালে যেতে যেতে পুরো শরীরে বিষ ছড়িয়ে যেতে পারে। তখন কিন্তু মাকে বাঁচানো যাবে না “।

মিহির কথা শুনে ডক্টর নিজে ও ভয় পেয়ে যায় কারণ মিহি যা বলছে তাতে হানিয়া বেগমের জন্য প্রতেকটা মূহুর্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন যদি দেরি হয় তাহলে সমস্যা অনেক হবে শুধু সমস্যা না হয়তো হানিয়া বেগমকে আর বাঁচানো যাবে না। ডক্টর বলে –

“- মিহি তুমি আগে হানিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে আসো মনে হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে। আর শোন নিহানকে বলো নিজেকে শান্ত রাখতে আমি হাসপাতালে নার্সদের বলছি রেডি থাকতে তাড়াতাড়ি করো মিহি আমাদের হাতে সময় নাই “।

মিহি নূহাকে ইশারা দিয়ে বলে ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে আর কতগুলো লোক নিয়ে আসতে। খুব তাড়াতাড়ি কিছু লোক আসে আর হানিয়া বেগমকে তুলে গাড়িতে নিয়ে যায় নিহান কি করবে সে বুঝতে পারে না। মিহি নিহানের হাত ধরে বলে –

“- নিহান শান্ত হয়ে যান মায়ের এইরকম অবস্থায় কোনো ছেলে শান্ত থাকতে পারে না কিন্তু আপনাকে থাকতে হবে। মাকে এখন হাসপাতালে না নিয়ে গেলে বাচাঁনো যাবে না তাই নিহান শান্ত হয়ে যান নিজেকে সামলান। মাকে নিয়ে হাসপাতালে যান সেখানে ডক্টর রয়েছে ওনাকে সুস্থ করবে ”

মিহির কথা শুনে নিহানের মনে একটু জোড় পায় বুঝতে পারে তাকে এখন ভেঙ্গে পড়লে চলবে না নিজেকে শক্ত রাখতে হবে। তবে কোনো জানি মিহির কথা শুনে মনে হচ্ছে নিহানকে একা যেতে বলছে ও যাবে না নিহান বলে –

“- মিহি আপনি এইরকম করে কোনো বলছেন আপনি কি হাসপাতালে যাবেন না? চলুন হাসপাতালে এখানে কি করবেন আপনি?

মিহি এই কথা শুনে নিজের মুখ গম্ভীর করে ফেলে সে সত্যি এখন হাসপাতালে যাবে না কারণ তার অন্য কাজ রয়েছে। মিহি বলে –

“- না নিহান আমি হাসপাতালে যাবো না বাসায় থাকবো এখানে কিছু কাজ আছে আমার। শুধু এইটুকু জেনে রাখবেন এই মিহি সবসময় আপনার পাশে থাকবে আমি একটু পর চলে আসবো। তবে মায়ের এইরকম অবস্থা কি করে হলো সেটা জানা আমার জন্য জরুরি “।

নিহান বুঝতে পারে মিহি হয়তো কিছু রহস্য সমাধান করবে তাই ওকে কিছু বলে না। হানিয়া বেগমকে নিয়ে নিহান আর বাড়ির সবাই মিলে হাসপাতালে চলে যায়। মিহি হানিয়া বেগমের রুমে রয়েছে সে সব মনে করতে থাকে সারা ভাবীর কথা অনুসারে হানিয়া আগে সুস্থ ছিলো। তাহলে হঠাৎ করে অসুস্থ কি করে হয়ে যেতে পারে ।

মিহি কথাটা ভেবে নিচে নেমে আসে সেখানে থাকা একটা কাজের লোককে ডাক দিয়ে বলে –

“- আচ্ছা সকালে মায়ের রুমে খাবার নিয়ে কে গিয়েছিলো? কোথায় সে?

“- ম্যাম ওই যে ও খাবার নিয়ে গেছে “।

মিহি সেই কাজের মেয়ের কাছে যায় মনে হচ্ছে সে একটু ভয় পেয়ে রয়েছে। মিহি তাকে বলে-

“- তাহলে তুমি সেই কাজের মেয়ে যাকে সারা ভাবী মায়ের খাবার দিয়ে উপরে পাঠিয়ে ছিলো। মা খাবার খাওয়ার আগে একদম সুস্থ ছিলো তাহলে খাবার খেয়ে এইরকম অসুস্থ হয়ে গেলো কোনো? খাবারে কি মিশিয়ে দিয়েছো তুমি? মায়ের খাবারে বিষ আসলো কোথা থেকে?

“- ম্যাম কি বলছেন সারা মেডাম আমাকে খাবার দিয়েছে সেটা নিয়ে আমি বড় মেডামকে দিয়েছি। এর চেয়ে বেশি কিছু জানি না আমি সত্যি বলছি ম্যাডাম “।

মিহি অনেক ভাবে সেই কাজের মহিলার থেকে কথা জিজ্ঞেস করে কিন্তু সে এক কথায় বলে যে সে সত্যি কিছু জানে না। মিহি বুঝতে পারে মনে হয় সে সত্যি কথা বলেছে মিহি বলে –

“- আচ্ছা তুমি যখন খাবার নিয়ে যাচ্ছিলে তখন কি কেউ তোমার থেকে খাবার কেড়ে নিয়েছে? বা কাউকে তোমার আশেপাশে ঘুরুঘুর করতে দেখেছো? কোথা ও কি খাবার রেখে চলে এসেছেন?

“- ম্যাডাম কোথাও খাবার রেখে চলে যায়নি কিন্তু আমি যখন খাবার দিতে যায়। তখন আমার মায়ের কল আসে তাই খাবার টেবিলে রেখে কথা বলি পড়ে এসে আবার খাবার নিয়ে যায় এর চেয়ে বেশি কিছু জানি না “।

“- হুম বুঝতে পারছি এইবার কি করতে হবে সেটা আমি খুব ভালো করে জানি। অপরাধী যেই হোক না কোনো ধরাতো সে মিহির হাতে পরবেই “।

অন্যদিকে নিহান নূহা সারা সবাই মিলে হানিয়া শিকদারকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ডক্টর তাকে তাড়াতাড়ি কেবিনে নিয়ে যায় নিহান বলে –

“- ডক্টর মায়ের অবস্থা কেমন মা কি সুস্থ হয়ে যাবে। বলন না ডক্টর “।

“- দেখো নিহান তোমার মায়ের অবস্থা ভালো না যা দেখা যাচ্ছে ওনাকে বাঁচানো সম্ভব না। আমি হতাশ করতে চাই না কিন্তু মনে হচ্ছে হানিয়া শিকদারের মৃত্যু হতে পারে “।

#চলবে

#মন_ফাগুন
#লেখনীতে_তাইয়্যেবা_বিনতে_কেয়া
#part_22 ( আসল খুনি সামনে আসবে)

নিহান কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না কিন্তু তাকে নিজেকে শক্ত রাখতে হবে মাকে বাঁচাতে হবে। তবে ডক্টর যা বললো তাতে কি তার মা বেঁচে থাকবে এইরকম হাজার রকমের অজান ভয় তার মনের মধ্যে রয়েছে। নিহান পকেট থেকে তার ফোন বের করে সকালে কাজের জন্য রেডি হয়ে ছিলো সেই জন্য ফোন পকেটে আছে। নিহান সানভিকে ফোন করে আর বলে –

“- সানভি মমের খাবারে কেউ বিষ দিয়েছে এখন মমের অবস্থা খুব খারাপ। তুমি একটা কাজ করো আজকে আমার সকল মিটিং বন্ধ করে দাও আর থানা থেকে পুলিশ নিয়ে বাড়িতে যাও। বাড়িতে মিহি রয়েছে আর আমি মমের অবস্থা একটু ভালো হলে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে যাবো “।

সানভি নিহানের কথা মতো কাজ করে আর নিহান আগে থেকে পুলিশ কমিশনারের সাথে কথা বলে রেখেছে। পুলিশ কমিশনার বলেছে তার একটা বাহিনী যাবে নিহানের বাড়িতে। অন্যদিকে মিহি বাড়ির দারোয়ানের কাছে যায় আর বলে –

“- আচ্ছা এই বাড়িতে কি হচ্ছে কে কে কোথায় কি করছে এইসব কি দেখা যাবে না? এই বাড়িতে কি একটা ও সিসিটিভি নাই “।

দারোয়ান আসলে মিহিকে দেখে একটু ভয় পায় তবে এই বাড়িতে তেমন একটা সিসিটিভি লাগানো নাই। কখনো কোনো সমস্যা হয় নাই তাই দরকার পড়ে নাই তবে বাড়ির বসার রুমে একটা ক্যামেরা রয়েছে। আসলে ওখানে অনেক ধরণের মানুষ আসে তাই নিরাপত্তার জন্য লাগানো হয়েছে। দারোয়ান বলে –

“- আসলে ছোট মেডাম বাড়িতে তেমন একটা ক্যামেরা নাই তবে নিবার্চনের সময় বাড়িতে অনেক লোক আসতো পরিচিত অপরিচিত। তাই নিহান স্যার বাড়ির বসার রুমে একটা সিসিটিভি দেয় যেটার সংযোগ এখনো রয়েছে এই কম্পিউটারে। তবে নিবার্চন শেষ হয়ে যাওয়ার পর এখন সেটা চলে কি না বলতে পারব না। অনেকদিন চেক করা হয় না “।

মিহি একটু রাগী চোখে দেখে দারোয়ানের দিকে মানে বাড়িতে এতো বড়ো ঝামেলা হয়ে গেছে আর ওনি সংযোগ আছে না কি যানেন না। মিহি গিয়ে কম্পিউটার চেক করে আজকে সকালের খাবারের ভিডিও দেখে যদিও সেখানে সব ঠিক ছিলো। বসার ঘরের তেমন কিছু হয় নাই তবুও মিহি তাদের বিয়ের পর থেকে এক এক করে ভিডিও দেখছে। তবে হঠাৎ করে কিছু একটা তার নজরে পড়লো মিহি সাথে সাথে ঝুম করে দেখে। মিহি বলে –

“- এইটা তো সেইদিনের ভিডিও যেইদিন আমাদের বউভাতের অনুষ্ঠান শুরু হয় আর ওইদিন মায়ের উপর প্রথম আক্রমণ হয়। মায়ের রুমে কয়েলের সাহায্য আগুন লাগে কিন্তু এইটা কি “।

মিহি ভিডিও জুম করে দেখে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে হানিয়া শিকদার বসে রয়েছে টেবিলে। তিনি যখন ফোনে কারো সাথে কথা বলছিলেন তখন তার শাড়িতে একটা জগ থেকে জুস পড়ে যায়। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো এখানে কোনো জুসের জিনিস ছিলো না বিষয়টা মিহির নজরে আসে। মিহি খুব ভালো করে খেয়াল করে দেখে কেউ একজন তার হাত দিয়ে জুস ফেলে দিয়েছে হানিয়া শিকদারের শাড়িতে।

হানিয়া শিকদার ফোনে কথা বলছিলেন তাই হয়তো বিষয়টা খেয়াল করে নাই। মিহি কারো মুখ দেখতে পাই নাই তবে তার হাতটা খেয়াল করে এইরকম ড্রেস বাড়ির কাজের লোকরা পড়ে বিষয় করে মহিলারা। তার মানে বাড়ির কাজের লোকের মধ্যে কেউ একজন এই কাজটা করেছে। মিহি বলে –

“- এই ধরণের কাপড় বাড়ির সব কাজের লোক পড়ে কি করে বুঝতে পারব এইটা কে? ওহ গড মিহি তোকে এই কেস সমাধান করতে হবেই?

মিহি আরেকটা জিনিস খেয়াল করে সেই খুনির জামার হাতায় বেশ একটু ডিজাইন করো। সাধারণ যারা এই বাড়িতে কাজ করে সবাই নরমাল কাপড় পড়ে তার মানে যে খুনি সে হয়তো একটু আধুনিক ভাবে চলতে পছন্দ করে। আর ওর হাতের মধ্যে দাগ কম মানে সে নিশ্চয়ই পার্লারে যায়। মিহি বলে –

“- সকল প্রমাণ দেখে যা মনে হলো খুনি একজন মহিলা আর সে বেশ আধুনিক ভাবে চলাচল করে। দামি কাপড় আর পার্লার ডিজাইন এইসব পছন্দ করে।সো মিস খুনি অনেক চালাকি করে ফেলেছেন এখন ধরা খাওয়ার পালা। বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান এইবার ঘুঘু তোমার বহিব পরাণ “।

হাসপাতালে সবাই অপেক্ষা করছে হানিয়া বেগম কেবিনে ডক্টর ও বের হচ্ছে না। নিহান বসে রয়েছে তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম রয়েছে এখানে মিহি ও নাই যে তাকে শান্তনা দিবে। তবে একটু সময় পর একজন ডক্টর বের হয়ে আসে নিহান সেটা দেখে ছুটে যায়। নিহান বলে –

“- ডক্টর মায়ের অবস্থা কেমন? কি হয়েছে মমের? শরীর থেকে কি বিষ বের করতে পারছেন বলুন ডক্টর কি অবস্থা এখন? আমার মম কি বাঁচবে?

“- কাম ডাউন মন্ত্রী নিহান শিকদার আপনার মম এখন ঠিক আছে আসলে বিষটা অনেক বিষাক্ত ছিলো। কিন্তু ভাগ্য ভালো ওনাকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। আমরা শরীর থেকে বিষ বের করতে পেরেছি যদি বিষ রক্তে মিশে যেতো তাহলে হয়তো ওনাকে বাঁচানো যেতো না। উপর ওয়ালার মেহেরবানীতে ওনি সুস্থ আছেন তবে ওনাকে অবযারবেশনে রাখা হয়েছে “।

হানিয়া শিকদারের সুস্থতার কথা শুনে নিহানের অনেক খুশি হয়। মনে হচ্ছে মাথা আর মন দুইটার উপর থেকে একটা বোঝা সরে গেছে। নূহা যেই কলেজে পড়ে ডক্টরি নিয়ে সেই কলেজের হাসপাতালে হানিয়া শিকদারকে এডমিট করা হয়েছে। নূহা বলে –

“- নিহান ভাইয়া বড় বাবাকে কি খবর দিবো “।

“- হুম দাও ফোন করে বলে দিও মায়ের হাসপাতালে এডমিট থাকার কথাটা। আর যদি ওনার কাজ হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে বাড়িতে ফিরে আসতে বলবে। কারণ মায়ের পাশে থাকার জন্য ওনাকে দরকার “।

নিহান এই কথাটা বলে আর কোনো কথা বলে নাই তবে বিকাল হয়ে যায় হানিয়া শিকদার ঠিক আছে সারা,নূহা,জাকিয়া আর জায়ান রয়েছে সারা গিয়ে নিহানকে বলে –

“- নিহান বড় মামিতো এখন মোটামোটি সুস্থ আছে তুমি একটা কাজ করো বাড়িতে যাও। আর তুমি না বললে পুলিশ আসবে বাড়িতে তাদের সাথে তো তোমাকে কথা বলতে হবে।হাসপাতালে আমরা তো আছি যদি কোনো দরকার হয় তাহলে আমি ফোন করব তোমাকে “।

নিহান কথাটা বুঝতে পারে সত্যি এখন তার বাড়ি যাওয়া উচিত মিহি একা বাড়িতে রয়েছে। আর হাসপাতালে সবার খাওয়া দাওয়া করতে হবে সেইজন্য বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসতে হবে। নিহান বলে –

“- হুম ঠিক আছে ভাবী তাহলে তোমরা থাকো আমি আসছি

নিহান বাড়ি ফিরে যায় মিহি এখন রান্নাঘরে রয়েছে আসলে আজকে বাড়িতে সারা নাই তাই রান্না তাকে ই করতে হবে। মিহি রান্না করতে পারে তার মধ্যে বাচ্চামি রয়েছে তার মানে এইটা নয় সে কিছুই পারে না। ছোটবেলা থেকে রান্না করা তার বেশ পছন্দ ছিলো তাই শিখে রেখেছে। নিহান বাড়িতে এসে মিহিকে রান্না ঘরে দেখে বলে –

“- মিহি আপনি রান্না ঘরে কি করছেন? বাড়ির কাজের লোক রয়েছে তারা রান্না করুক। এমনি আপনি অসুস্থ তার মধ্যে রান্না করলে আরো অসুস্থ হয়ে যাবেন “।

নিহান আগে ফোন করে বলে দিয়েছে হানিয়া শিকদার ঠিক আছে তাই মিহি তার কথা আর জিজ্ঞেস করে নাই। মিহি বলে –

“- আমার কিছু হবে না আর আপনি কি মনে করেন মিহি কি রান্না করতে পারে না। শুনুন মিহি পড়াশোনা ছাড়া অন্য সব কাজ ভালো করে করতে পারে। আপনি যান এখন গোসল করে আসেন পরে খাবার দেয় “।

“- ওহ সরি ভুল হয়ে গেছে আমিতো জানতাম না এই দুষ্ট মিহি রান্না ও করতে পারে। আচ্ছা পুলিশ আসে নাই এখনো সানভি কে বলেছি পুলিশ নিয়ে বাড়িতে আসতে তাহলে “।

“- পুলিশকে আমি আসতে বরণ করে দিয়েছি ওরা রাতে আসবে। পুলিশ কমিশনার এই কেস সমাধান করার জন্য একজন গোয়েন্দাকে পাঠাবে সে রাতে আসবে। আর রাতে একটা মেজিক রয়েছে সেটা দেখবেন “।

নিহান বুঝতে পারে মিহি কিছু জানতে পেরেছে সেটা রাতে বলবে তাই আর বেশি কিছু জিজ্ঞেস করে নাই। নিহান নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয় পরে ওয়াশরুম থেকে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ে। মিহি রুমে এসে দেখে নিহান বিছানায় শুয়ে রয়েছে। মিহি বলে –

“- নিহান আপনি বিছানায় শুয়ে পড়লেন কোনো খাবার খাবেন না। বিকাল হয়ে গেছে খাবার খেয়ে পরে ঘুমিয়ে পড়বেন “।

নিহান মিহির হাত ধরে নিয়ে তার কাছে নিয়ে বসায় এরপর মিহির কোলের উপর নিজের মাথা রাখে। আর হাত দিয়ে ইশারা দেয় যাতে মেসেজ করে দেয় মিহি তাই করে। নিহানের চুলগুলো খুব সুন্দর তাই মেসেজ করতে ভালো লাগছে। নিহান বলে –

“- মিহি একটু আমার কাছে থাকেন বিশ্বাস করেন এখন আমার জীবনে আপনাকে অনেক দরকার। একটু শান্তি চাই আমার মিহি “।

“- হুম আছি তো আমি আপনার কাছে নিহান সবসময় থাকবে সব বিপদে। খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন”।

“- এখন খিদে নাই পড়ে খাবো “।

মিহি আর নিহানকে বেশি কথা জিজ্ঞেস করে নাই নিহান আজকে অনেক টার্য়াড আসলে একটা পুরুষ মানুষ যতোই শক্ত হোক না কোনো। আপনজন হারানো ভয় তাকে কাভু করে ফেলে। মিহি অনুভব করে নিহানের নিশ্বাস গাঢ হয়ে গেছে বুঝতে পারে নিহান ঘুমিয়ে পড়েছে। তবে আজকে রাতে একটা দারুণ সারপ্রাইজ আছে অপেক্ষা করুন “।

#চলবে