মন ফাগুন পর্ব-২৩

0
40

#মন_ফাগুন
#লেখনীতে_তাইয়্যেবা_বিনতে_কেয়া
#part_23 (খুনি কে?)

নিহানের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মিহির চোখে ঘুম চলে এসেছে তাই সেও বিছানায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। প্রায় দুই ঘণ্টা হয়ে যায় দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে গেছে নিহানের চোখ খুলে দেখে মিহি ঘুমিয়ে রয়েছে। নিহানের বেশ খিদে পেয়েছে যেহেতু দুপুরে খাবার খাওয়া হয় নাই তার। নিহান মিহিকে ডাকতে যাবে কিন্তু মিহি ঘুমিয়ে রয়েছে দেখে ডাকে নাই।

নিহান মিহির কোলের উপর থেকে মাথা উঠিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে হাত মুখে একটু পানি দিয়ে নেয়। মিহির কোলে কোনো ভারী বস্তুর ওজন হঠাৎ করে কমে যাওয়ায় মিহির ঘুম ভেঙে যায়। নিহানকে ওয়াশরুম থেকে বের হতে দেখে বলে –

“- আরে আপনি ঘুম থেকে উঠে পড়েছেন? আসলে আপনার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারি নাই। আপনি আমাকে ডাক দিবেন না কত বেলা হয়ে গেছে খাবার খান নাই। নিশ্চয়ই খুব খিদে পেয়েছে আপনি বসুন আমি খাবার নিয়ে আসছি “।

মিহির কথা শুনে নিহান হাসে সত্যি বিয়ের প্রথম দিনের সেই বাচ্চা মিহি আর এই কেয়ারিং মিহির মধ্যে কতো পার্থক্য। মেয়েটা কতো সংসারী হয়ে উঠেছে সেটা দেখে নিহানের ভালো লাগে। নিহান বলে –

“- আসলে মিহি আপনি ঘুমিয়ে ছিলেন তাই বিরক্ত করতে চাই না। আর খাবার গরম করে খেয়ে নিতে পারব আমি সমস্যা হবে না আপনি বরং একটু ঘুমিয়ে নেন “।

“- আপনি খাবার গরম করে খাবেন আর আমি ঘুমিয়ে থাকবো৷ আপনি বসুন নিহান আমি আসছি “।

মিহি খাবার আনতে নিচে যায় নিহান কোনো কথা না বলে চুপচাপ বসে থাকে৷ মিহি খাবার নিয়ে আসে তবে সে নিহানের সামনে বসে চামচ দিয়ে খাবার নিহানের মুখে তুলে দেয় আর বলে –

“- আমি যখন অসুস্থ বা বিপদে থাকি তখন আপনি সবসময় আমাকে খাবার তুলে খায়িয়ে দেন।তাই আজকে আমি নিজের হাতে খাবার খায়িয়ে দিবো আপনাকে “।

নিহান কোনো কথা বলে না শুধু চুপচাপ মিহির হাতে খাবার খেয়ে নেয় এরপর সারাকে ফোন করে হানিয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করে। হানিয়া বেগম এখন ঠিক আছে ডক্টর ওনাকে কেবিনে সিফট করছে যদিও এখনো জ্ঞান ফিরে নাই। নিহান ঠিক করছে রাতে যাবে হাসপাতালে কারণ রাতে পুলিশ আসবে আর মিহির মাথায় কি চলছে সেটা ওনার জানা দরকার। নিহান নিজের নিবার্চনের বিষয়ে ফোনে তার কমিটির লোকের সাথে কথা বলে।

সামনে নিবার্চন তার কিন্তু এইসব ঝামেলা লেগে আছে যার জন্য সে এই নিবার্চনে কি হতে পারে তা নিয়ে ভয়ে রয়েছে। রাত হয়ে যায় মিহি নিচে বসে বসে টিভি দেখছে কাজের লোকেরা কাজ করছে কিন্তু মিহির মাথায় কি চলছে সেটা কেউ বুঝতে পারে না।রাতে সানভি পুলিশ নিয়ে আসে পুলিশকে দেখে মিহি টিভি অফ করে দেয়। নিহান নিচে নেমে আসে আর বলে –

“- হ্যালো আমি নিহান নেহাল শিকদার আমার বাড়ির ঝামেলার জন্য আপনাকে ডাকা হয়েছে। আসলে দুপুরে আমি বাসায় ছিলাম না আমার মম হাসপাতালে এডমিট ছিলো। তাই মিহি মানে আমার ওয়াইফ আপনাদের রাতে আসতে বলেছে আশা করি আসতে কোনো সমস্যা হয় নাই ”

পুলিশের ওসি জুনাইদ সব ঘটনা যানে পুলিশ কমিশনার তাকে সব বলে দিয়েছে। জুনাইদ বলে –

“- স্যার আপনার পরিবারে দুইদিন ধরে যা হচ্ছে সেই বিষয় আমি জানি। আর এই বিষয়ে তদন্ত করতে স্যার আমাদের পাঠিয়েছে টেনশন করবেন না সব সমস্যার সমাধান হবে। আর আমাদের কিছু পুলিশ আপনাদের বাসার সামনে থাকবে সেফটির জন্য “।

মিহি এতোখন জুনাইদ আর নিহানের কথা শুনেছিলো কিন্তু কোনো কথা বলে নাই কারণ যা করার সে করে ফেলেছে। মিহি বলে –

“- অফিসার বাড়ির বাহিরে সিকিউরিটি দিলে কি হবে যদি খুনি বাড়ির ভিতরে থাকে। আর আসলে কে এই খুনি সেটা মনে হয় আমি জেনে গেছি এখন শুধু প্রমাণ করার পালা “।

মিহির কথা শুনে পুলিশ সহ সবাই অবাক হয়ে যায় সানভি আর নিহান ও। নিহান মনে করছিলো হয়তো মিহি খুনির বিষয়ে কিছু জানতে পেরেছে কিন্তু আসল খুনিকে সে ধরে ফেলেছে এইটক ভাবতে পারে নাই। সেখানে অনেক কাজের লোক ছিলো যারা প্রায় অবাা মিহি একটু হেঁসে বলে –

‘- আরে তোমরা সবাই এতো অবাক হচ্ছো কোনো শএু আমাদের ঘরের মধ্যে ছিলো তাই তাকে খুজেঁ বের করতে খুব একটা কষ্ট করতে হয় নাই। আসলে শএু নিজেকে খুব চালাক মনে করতো তাই ভুল করে ফেলেছে কথায় আছে যে যতো চালাক হোক না কোনো কোনো না কোনো ভুল জীবনে অবশ্যই করবে “।

নিহান পুরো বিষয়টা বুঝতে পারছে না আসলে কি মিহি সত্যি খুঁজে বের করতে পেরেছে না কি পুরোটা নাটক। নিহান বলে –

“- মিহি তাহলে বলুন কে খুনি? কে মাকে বিষ দিয়ে মারতে চেয়েছে? তাকে সামনে আনুন নিজের হাতে শাস্তি দিবো আর কি প্রমাণ রয়েছে যে সে খুনি “।

মিহি বাড়ির গার্ডকে ডাক দেয় গার্ড হাতে একটা কম্পিউটার নিয়ে আসে মিহি ওকে ইশারা দেয় সেই ভিডিও দেখাতে। গার্ড ভিডিও ওপেন করে যেইদিন আগুন লেগেছিলো তার ঘটনা মিহি বলে –

“- এই ভিডিওটা সেইদিনের যেদিন আমাদের বউভাত ছিলো আর মায়ের ঘরে আগুন লেগে যায়। এই ভিডিও তে একটা লোক আছে যে মায়ের শাড়িতে আগুন লাগায় যার ফলে মা বাধ্য হয়ে শাড়ি পাল্টাতে যায় এবং সেই সুযোগ তার ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। আর এই কাজটা বাড়ির একজন কাজের লোক করেছে কারণ তার হাতের কাপড় দেখে বোঝা যাচ্ছে এইটা কাজের লোকের কাপড় ”

নিহান ভিডিও দেখে রাগে ফেটে পড়ে মানে তাদের বাড়ির একটা সামান্য কাজের লোক তার মাকে মারতে চাই। কিন্তু কোনো তার মাকে মারতে চাই কেউ আর এই ভিডিও দেখে বুঝতে পারা যাচ্ছে না কে খুনি কারণ মুখ দেখা যাচ্ছে না। নিহান বলে –

“- মিহি এই ভিডিও দেখে কিছু বোঝা যাচ্ছে না কারণ বাড়ির সব কাজের লোক মেয়ে। তাহলে মায়ের খাবারে বিষ মিশিয়েছে তা কি করে বুঝতে পারব “।

“- সেটাই তো খুনির সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো সে একটা তথ্য আমাদের দিয়ে। এই ভিডিওতে খুনির হাতে ছয়টা আঙুল ছিলো আর এই বাড়ির কাজের লোকদের মধ্যে একজনের শুধু হাতে ছয়টা আঙ্গুল সেটা হলো লিয়া “।

মিহির হাতের ইশারা চলে যায় লিয়া নামের কাজের লোকের কাছে যে এখন সবার শেষে দাঁড়িয়ে আছে। লিয়ার এই সিসিটিভির কথা মাথায় ছিলো না দুইবছর ধরে এই বাড়িতে আছে কখনো এই সিসিটিভি দিকে খেয়াল করে নাই তাই সে ধরা পড়ে গেছে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি সামলাতে হবে লিয়া বলে –

“- এইসব কি বলছেন মিহি ম্যাডাম আমি হানিয়া মেমকে বিষ দেয় নাই। আর সেইদিন আমি হানিয়া মেডামের শাড়িতে আগুন লাগায় নাই বাহ ওনার ঘরে কেরাসিন দেয় নাই “।

মিহি কথাটা শুনে হাসে আর বলে –

“- এক মিনিট তুমি কি করে জানলে মায়ের রুমে কেরাসিন ছিলো হুম। কারণ এই বাড়ির সবাই জানে কয়েল দিয়ে মায়ের রুমে আগুন লেগেছে তাহলে কেরাসিন কথা কি করে তুমি জানলে। আর এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে খুনির হাতে ছয়টা আঙ্গুল রয়েছে আর তোমার হাতে ও রয়েছে। তুমি আসল খুনি “।

লিয়া কোনো কথা বলতে পারে না মানে সে যে ফেঁসে গেছে সেটা লিয়া বুঝতে পারছে। লিয়া যখন পালাতে যাবে তখন মিহি ওকে ধরে ফেলে মিহি বলে –

“- সত্যি করে বলো কোনো মায়ের খাবারে বিষ মিশিয়েছো? কে তুমি কি শএুতা তোমার এই পরিবারের সাথে বলো? বলো মমকে কোনো মারতে চাও?

জুনাইদের ইশারায় লিয়াকে আরো কিছু পুলিশ ধরে ফেলে নিহান ও ওকে ধমকে জিজ্ঞেস করতে থাকে মিহি যখন ওকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করতে থাকে হঠাৎ করে একটা গুলি এসে সোজা লিয়ার মাথায় লাগে। বিষয়টা এতো তাড়াতাড়ি হয় মিহি সহ ঘরের সবাই অবাক হয়ে যায় লিয়ার কপাল দিয়ে গুলি ছুটে বের হয়ে যায়। সে তখুনি মাটিতে পড়ে যায় মিহি বলে –

“- লিয়া “।

একজন চেয়ারে বসে আর হাসতে হাসতে বলে –

“- ওহ মিহি আর নিহান নিজেদের খুব চালাক মনে করো তাই না আসলে তোমরা খুব বোকা। মনে করেছিলে লিয়াকে ধরে ফেললে আমার অবদি পৌঁছাতে পারবে কিন্তু ভুলে গেলে এতো সহজে খেলা শেষ হয় নাই। গেমতো মাএ শুরু হলো আগে আগে দেখো কেয়া হোতাহে “।

#চলবে