মন ফাগুন পর্ব-৪০+৪১

0
43

#মন_ফাগুন
#লেখনীতে_তাইয়্যেবা_জান্নাত_কেয়া
#পর্ব_৪০

ইয়াসিন সহ বাড়ির সবাই এইদিকে তাকিয়ে রয়েছে কি হচ্ছে তারা সেটা বুঝতে পারছে না। নিহান তাড়াতাড়ি করে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে আর বলে –

“- আসলে মানে মিহি বলতে চাই মানে “।

নিহান কিছু বলতে যাবে এর আগে জামশেদ তালুকদার ওদের সামনে চলে আসে ওনার শরীরে এখন কতটা রাগ রয়েছে সেটা হয়তো ওনি নিজে ও জানে না।জামশেদ তালুকদার এসে মিহিকে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখতে বলে আর বলে –

“- মিহি তুমি একটু আগে ইয়াসিনকে কি বললে সেটা আবার বলো।মিহি কথা বলো নিহান তোমার কে হয়?

মিহি একবার নিহানের দিকে তাকিয়ে দেখে নিহান না করছে যাতে মিহি তাদের রিলেশনের বিষয়ে কিছু না বলে কিন্তু মিহি সেটা শুনে না। মিহি বলে –

‘- নিহান আমার স্বামী হয় ওকে আমি ভালোবাসি। দুইমাস আগে নিহানের সাথে আমার বিয়ে হয় আর এতোদিন আমরা একসাথে সংসার করেছি। আর আমি নিহানের স্ত্রী হয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না নিহানকে আমি অনেক ভালোবাসি আর ওর সাথে সারাজীবন থাকতে চাই.

মিহির কথাটা শুনে জামশেদ তালুকদারের রাগে শরীর জ্বলে যায় আর সেখানে থাকা সব মানুষ মিহিকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলছে। নিহান মিহির দিকে তাকিয়ে থাকে সে হয়তো ভাবতে পারে নাই মিহি এতোটা সাহস দেখাতে পারে। তবে মিহির মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনে নিহানের মনের ভিতরে একটা আলাদা শান্তি ভয়ে যায়। জামশেদ তালুকদার মিহির কথাটা শেষ হওয়ার আগে ওকে থাপ্পড় মারতে চাই কিন্তু এর আগে নিহান ওর হাত ধরে ফেলে।

যখন জামশেদ তালুকদার মিহিকে থাপ্পড় মারতে হাত তুলে তখন মিহি চোখ বন্ধ করে নেয় একটু পর চোখ খুলে দেখে নিহান ওর সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। নিহান বলে –

“- জামশেদ স্যার এখানে যা হয়েছে সেটার জন্য দায়ী আমি মিহির কোনো দোষ নাই তাই মিহিকে নিয়ে কোনো আজেবাজে কথা হবে না। আর স্যার মিহি আপনার মেয়ে তাই ওকে মারার অধিকার আপনার রয়েছে কিন্তু মিহি আমার বউ তাই ওকে সেইফ করার দায়িত্ব আমার “।

“- তোমার মধ্যে যদি এতো দায়িত্ববোধ থাকে তাহলে কি করে পরিবারকে না জানিয়ে একটা মেয়েকে বিয়ে করতে পারলে। আর এখন নিজের বউকে অন্য একজন পুরুষের সাথে বিয়ে দিতে পারলে এইটা তোমার দায়িত্ববোধ। তোমার মতো এইরকম একটা কাপুরুষকে আমার মেয়ের স্বামী হিসাবে আমি মানি না “।

জামশেদ তালুকদারের কথা শুনে নিহানের রাগ হয় কিন্তু তাকে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে তাই নিহান শান্ত হয়ে যায়। নিহান বলে –

“- স্যার প্রথমত আমি কোনো কাপুরুষ নয় আর মিহি আর আমার বিয়েটা যেই পরিস্থিতিতে হয়েছে তখন কাউকে জানাতে পারি নাই। আর মিহির সাথে ইয়াসিনের বিয়েটা এইজন্য হতে দিচ্ছি কিন্তু এখনো বিয়েটা হয় নাই। আমি মনে করেছিলাম বিয়ের দিন সত্যিটা জানাবো কিন্তু এখন সবার সত্যি জানা দরকার। আর স্যার আমি যদি কাপুরুষ হয় তাহলে আপনার পছন্দের ইয়াসিন কেমন সেটা জানা দরকার আপনার স্যার “।

জামশেদ তালুকদার নিহানের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে নিহান কিছু বলতে যাবে তার আগে ইয়াসিন বলে –

“- স্যার আপনি ওর কোনো কথা বিশ্বাস করবেন না নিজের বউকে অন্য কারো গলায় জুলিয়ে দিতে যে চাই তার মতো কাপুরুষের কোনো কথা বিশ্বাসযোগ্য না।আর যদি আপনার সমস্যা না হয় তাহলে আমি চাই নিহানের সাথে মিহির ডিভোর্স হয়ে ওর সাথে আমার বিয়ে হোক। মিহিকে আমি ভালোবাসি ওকে বিয়ে করতে চাই আমি “।

ইয়াসিন কথাটা বলে মিহির হাত ধরে ওর পকেট থেকে একটা আংটি নিয়ে এসে মিহির হাতে যখন পড়াতে যাবে তখন নিহান ওর হাত ধরে ফেলে। নিহান বলে –

“- ইয়াসিন এই ভুলটা কখনো করবে না বুঝতে পারলে মিহি শুধু আমার সো ওর থেকে দূরে থাকো। আর তুমি কতটা ভালো মানুষ সেটার প্রমাণ রয়েছে আমার কাছে এখুনি দিচ্ছি। মনে করেছিলাম তোমার আসল চেহারা সবার প্রমাণ নিয়ে আসবো বিয়ের দিন কিন্তু এখনই মনে হয় সময় এসে গেছে “।

“- নিহান কি বলছো এইসব আমার আসল চেহারা মানে। কি প্রমাণ করবে তুমি?

ইয়াসিনের কথা শুনে নিহান একটা হাসি দেয় এরপর ফোন করে কাউকে আসতে বলে। ইয়াসিন বুঝতে পারে না নিহান কি করতে চলছে তাহলে কি নিহান সত্যি ঘটনা জেনে গেছে। নিহানের ফোন করার সাথে সাথে একটা মহিলা তাদের বাড়িতে ঢুকে ইয়াসিন সেই মহিলাকে দেখে কি বলবে সেটা বুঝতে পারে না। নিহান ইয়াসিনের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে –

“- কি হলো ইয়াসিন তোমার মুখটা এইরকম হয়ে গেছে কোনো? কি মনে করেছিলে তুমি ইয়াসিন তোমার বিষয়ে কিছু জানি না আমি। তুমি একটা চরিএহীন ছেলে যে বিদেশে নিজের বউকে রেখ অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করতে এসেছে “।

জামশেদ তালুকদার সহ বাড়ির সবাই অবাক মিহি নিজে ও জানতো না ইয়াসিন বিবাহিত। নিহান সেই মহিলাকে ইশারা দেয় সব সত্যি বলতে। মহিলা বলে –

“- আমার নাম টিউলিপ। আমি আর ইয়াসিন বিদেশে একসাথে পড়াশোনা করেছি আমরা দুইবছর আগে বিয়ে করি। আমাদের সংসার ভালো চলছিলো কিন্তু একদিন হঠাৎ ইয়াসিন আমাকে রেখ দেশে যাওয়ার কথা বললো।কিন্তু দেশে গিয়ে ইয়াসিন দুইবছরের মধ্যে আমার সাথে আর যোগাযোগ করে নাই ওর কোনো খোঁজ ছিলো না আমার কাছে। দুইদিন আগে নিহান ভাই আমাকে বলে ইয়াসিন না কি অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করছে যেটা শুনে আমি দৌড়ে দেশে আসি “।

ইয়াসিনের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম রয়েছে সেটা সে হাত দিয়ে মুছে আর বলে –

“- এইসব মিথ্যা কথা এই মেয়েকে আমি চিনি না। সব নিহানের সাজানো নাটক সব মিথ্যা “।

“- ওহ তাই না কি ইয়াসিন সব আমার সাজানো নাটক। কিন্তু নিহান যদি কোনো নাটক সাজায় তার প্রমাণ নিহানের কাছে থাকে। টিউলিপ বোন আমার সব প্রমাণ দেখাও এক এক করে সবাইকে “।

টিউলিপ তাদের কাবিননামা সহ বিয়ের ছবি দেখায় সবাইকে ইয়াসিন বুঝতে পারে সে ফেঁসে গেছে। নিহান বলে –

“- ইয়াসিন কি হলো এখন কথা বলো। ও মা এখুনি তোমার মুখ দেখি বন্ধ হয়ে গেছে আরো অনেক প্রমাণ বাকি রয়েছে সেইসব ও ফাঁস হবে সবার জন্য। গেইম মাএ শুরু হয়েছে ইয়াসিন সোনা এতো তাড়াতাড়ি ভয় পাওয়া ঠিক না হুম “।

নিহান কথাটা বলে ডেভিল মার্কা একটা হাসি দেয় এরপর সে পাশে থাকা আরেকজনকে ফোন করে যে ছিলো এই বিয়ের ঘটক। নিহান বলে – ”

“- ইয়াসিন শুধু টিউলিপের সাথে না আরো অনেক মেয়ের সাথে অন্যায় করেছে ও এখনো অবধি অনেক বিয়ে করেছে তাদের সাথে কয়েকমাস সংসার করে তাদের রেখে চলে এসেছে। আর ওর মা বাবা এরা আসলে একজন নাটকের অভিনেতা যাদের ইয়াসিন মা বাবা সাজিয়ে নিয়ে এসেছে। আর মিহির জন্য ইয়াসিনের বিয়ের প্রস্তাব যে ঘটক নিয়ে এসেছিলো তার মুখ থেকে সবটা শুনে নেন “।

ইয়াসিন কথাটা বলে ঘটকের কাছে যায় আর ওকে বলতে বলে –

“- আসলে ইয়াসিন আমাকে অনেক টাকা দিয়েছে সেইজন্য এইসব কাজ করতে রাজি হয়েছি আমি। বিশ্বাস করুন এতে আমার কোনো দোষ নাই শুধু লোভে পড়ে ভুল হয়ে গেছে আমাকে দিয়ে “।

ইয়াসিন কোনো কথা বলতে যাবে তার আগে জামশেদ তালুকদার ওর গালে থাপ্পড় মারে। থাপ্পড়টা এতো জোরে হয় যেনো ইয়াসিনের কানে কোনো শব্দ যাচ্ছে না কয়েক মূহুর্তের জন্য ইয়াসিন কি বলবে বুঝতে পারে না। জামশেদ তালুকদার রাগী স্বরে বলে –

“- তোর এতো বড়ো সাহস কি করে হয় হুম। জামশেদ তালুকদারের মেয়েকে বিয়ে করে কি মনে করছিলি সব সম্পত্তির মালিক হয়ে যাবি। তোর বউ থাকতে আমার মেয়কে বিয়ে করবি তোকে আমি খুন করে ফেলবো। এই শিশু আমার বন্ধুক নিয়ে আয় এইটাকে আজকে মাটিতে পুঁতে ফেলবো “।

নিহান জানতো ইয়াসিনের আসল চোহারা সামনে আসলে তার শশুড় এইরকম কিছু করবে। তবে নিহান পুলিশকে ডেকে নিয়ে আসে আর ইয়াসিনকে এরেস্ট করিয়ে দেয়। ইয়াসিন বলে –

“- সরি জামশেদ স্যার আসলে মিহি আর আমার বিয়ের বিষয়ে আপনাকে আগে জানাতে পারি নাই তখন পরিস্থিতি এইরকম ছিলো। আর সেইদিন যখন আপনাদের বাড়িতে এসেছি তখন চাইলে সত্যিটা জানানো যেতো আপনাকে কিন্তু তখন আপনি এই বিয়ে মেনে নিতেন না। আর ইয়াসিন বিষয়ে আমি আগে থেকে সব জানতাম কিন্তু তখন আমার কাছে কোনো প্রমাণ ছিলো না তাই একটু সময়ের দরকার ছিলো আমার৷ তবে স্যার আমি মিহিকে অনেক ভালোবাসি ওকে ছাড়া বাচঁতে পারব না আমি “।

জামশেদ তালুকদার বলে –

“- নিহান তোমাকে ভীতু মনে করেছিলাম আমি কিন্তু তুমি সাহসী একদম একজন যোগ্য মন্ত্রীর মতো মাথা ঠান্ডা রেখে সবকিছু ঠিক করেছো।আর এই কয়েকদিনে তোমার কথা বার্তা চালচলন দেখে আমি মুগ্ধ তাই আমার কোনো অসুবিধা নাই এই বাড়ির জামাই হিসাবে তোমাকে মেনে নিতে “।

“- ওকে শশুড় মশাই তাহলে এখন থেকে জামাই আদর চাই আমার “।

বাড়ির সবাই ওদের কথায় হেসেঁ উঠে মিহি ও অনেক খুশি তবে তালুকদার বাড়িতে তারা বেশিদিন থাকতে পারলো না। কারণ সামনে নিহানের নিবার্চন আছে তাই নিহানকে শহরে ফিরে যেতে হবে তবে মিহি আর নিহানের আবার বিয়ে হবে নতুন করে। জামশেদ তালুকদার আর মুরাদ শিকদার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিহানের নিবার্চন শেষ হলে আবার ধুমধাম করে মিহি আর নিহানের বিয়ে হবে।

নিহান আর মিহি এখন গাড়িতে বসে রয়েছে সুন্দর রাত আসলে বাড়ি থেকে বের হতে রাত হয়ে গেছে। নিহান গাড়ি ড্রাইভ করছে আর মিহি বাহিরে তাকিয়ে রয়েছে। নিহান হঠাৎ করে বলে –

“- আচ্ছা মিহি আপনি আমাকে ভালোবাসি কথাটা কোনো বললেন না?

“- সবার সামনে সেইদিন যে বললাম আমি নিহানকে ভালোবাসি। সেটা কি শুনতে পান না আপনি “।

“- হুম সবার সামনে বলেছেন কিন্তু আমাকে একা করে বলেন নাই।এখন বলেন?

“- কি বলবো?

“- বলেন নিহান আমি আপনাকে ভালোবাসি বলেন “।

“- ওকে নিহান আমি আপনাকে “।

মিহি মুখের ভালোবাসি কথাটা বলার আগে হঠাৎ করে পিছন থেকে একটা গাড়ি এসে মিহিদের গাড়িকে ধাক্কা দেয়। হঠাৎ করে এমন হওয়ায় নিহান গাড়ি ঠিক রাখতে পারে নাই গাড়িটা উল্টো যায় তখন আবার পিছন থেকে সেই গাড়িটা জোরে মিহিদের গাড়িকে ধাক্কা দেয়। মিহি বলে –

“- নিহান “।

#চলবে

#মন_ফাগুন
#লেখনীতে_তাইয়্যেবা_জান্নাত_কেয়া
#পর্ব_৪১

পিছন থেকে ট্রাকটা এসে যখন আবার ধাক্কা দেয় তখন গাড়িটা উল্টো যায়। মিহি আর নিহান দুইজনে গাড়ির নিচে চাপা পড়ে যায় তারা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তিনদিন কেটে যায় মিহি এখন হাসপাতালে আইসিইউতে এডমিট রয়েছে মিহি আসতে আসতে পিটপিট করে চােখ খুলে। মিহি দেখে তার হাতে ক্যানেলা লাগানো চারপাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখে জায়গাটা নতুন। মিহি যখন কিছু মনে করতে যাবে তখন হঠাৎ করে ওর মাথায় একটু চাপ পড়ে তার কিছু ঘটনা মনে পড়ে।

মিহি যখন মনে পড়ে সেইদিন এক্সিডেন্টের ঘটনা তখন সে আশেপাশে নিহানকে খুঁজতে থাকে আর চিৎকার করতে থাকে –

“- নিহান নিহান কোথায় আপনি নিহান? কোথায় আপনি নিহান “।

মিহির চিৎকারে বাহির থেকে জামশেদ তালুকদার আর সানভি ছুটে আসে মিহি এখনো চিৎকার করছে। জামশেদ তালুকদার বলে –

“- মিহি তোমার জ্ঞান ফিরেছে। তুমি ঠিক আছো মিহি কোনো সমস্যা কি হচ্ছে বলো মিহি “।

মিহি জামশেদ তালুকদার আর সানভিকে দেখে নিহানকে খুঁজতে থাকে কিন্তু কোথাও নিহান নাই। মিহি বলে –

“- আব্বু নিহান কোথায়? ওনাকে কোনো দেখছি না বলো নিহান কোথায়? নিহান নিহান কোথায় আপনি?

নিহানের নাম শুনে জামশেদ তালুকদার আর সানভি একে অপরের দিকে তাকায় এখন তারা কি বলবে মিহিকে। সানভি বলে –

“- মিহি ম্যাম আপনি শান্ত হয়ে যান। আসলে সেইদিন এক্সিডেন্টের পর আপনারা সেখানে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন তখন আশেপাশে লোকেরা আপনাদের একটা হাসপাতালে এডমিট করায়। পরে হাসপাতাল থেকে আমাদের সবাইকে খবর দেয় সেখানে যায় আমরা। হাসপাতাল টা অনেক ছোট ছিলো তাই শহরের ভালো একটা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় আপনাদের “।

“- হুম সেটা না হয় বুঝতে পারলাম কিন্তু আমার নিহান কোথায়? ওনাকে দেখছি না কোনো নিহান কোথায়?

সানভি একটা ঢুক গিলে যানে না মিহিকে সত্যিটা বললে মিহিকে কি করে রিয়েকশন দিবে। তবুও সানভি শান্ত স্বরে বলে –

“- আসলে মিহি ম্যাম এক্সিডেন্টের কারণে নিহানের স্যারের মাথায় অনেক বড়ো আঘাত লাগে যার জন্য ওনি কোমায় চলে গিয়েছেন। কখন সুস্থ হবে সেই বিষয়ে ডাক্তার কিছু বলতে পারছে না হয়তো সুস্থ হতে দুইদিন লাগতে পারে না হলে দুইবছর লাগবে বা সারাজীবন ও লাগতে পারে “।

সানভির কথাটা শুনে মিহি একদম চুপ হয়ে গেছে এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তার সবকিছু।নিহান যদি কখনো ঠিক না হয় তাহলে মিহি নিহানকে ছেড়ে কি করে থাকবে মিহি মরে যাবে নিহানকে ছাড়া।মিহি বলে –

“- সানভি নিহানকে কোন কেবিনে রাখা হয়েছে সেখানে যেতে চাই আমি। নিহানকে দেখতে চাই আমি “।

“- কিন্তু মিহি তুমি এই অবস্থায় কি করে যাবে?

“- আব্বু আমি ঠিক আছি। নিহানের কাছে নিয়ে চলো আমাকে “।

জামশেদ তালুকদার আর সানভি মিলে একটা হুইলচেয়ারে করে মিহিকে নিয়ে যায় নিহানের কেবিনের সামনে। একটা সিটে শুয়িয়ে রাখা হয়েছে নিহানকে হাতে অনেক ক্যানেলা লাগানো। নিহানের মাথায় অনেক বেন্ডেজ করা মিহি গিয়ে নিহানের হাতে হাত রাখে আর বলে –

“- নিহান দেখুন আপনার মিহি এসেছে আপনার কাছে।নিহান আপনি না তখন ভালোবাসি কথাটা শুনে চেয়েছিলেন আমার মুখ থেকে। এখন বলছি আমি নিহান ভালোবাসি আপনাকে নিহান অনেক ভালোবাসি নিহান। আমার কথার উত্তর দেন নিহান বলুন আপনি ও আপনার মিহিকে ভালোবাসেন বলুন “।

মিহি কান্না করতে করতে জিজ্ঞেস করে নিহানকে কিন্তু কোনো উত্তর আসে না। মিহি আবার বলেন –

“- নিহান কথা বলুন আমার সাথে।আপনি যদি মিহির সাথে কথা না বলুন তাহলে মিহি মারা যাবে নিহান। দয়া করে কথা বলুন নিহান কথা বলুন নিহান “।

সানভি মিহিকে তার কেবিনে নিয়ে যায় সেখানে মুরাদ শিকদার সহ আরো অনেকে মিহিকে দেখতে আসে। সবাই এই অবস্থায় দেখে কান্না করে দেয় তখন পুলিশ আসে আর বলে –

“- নিহান স্যারের এইরকম এক্সিডেন্ট কি করে হয়েছে সেটা জানতে হবে আমাদের তদন্ত করতে হবে। সেই জন্য মিহি ম্যাম আপনার সাহায্য দরকার “।

“- হুম অফিসার আমি সাহায্যে করব। অনেক হয়ে গেছে এইসব সয্য করা আগে যখন এই ঘটনা ঘটেছিলো তখন নিহান আমাকে এইসবের মধ্যে ঢুকতে দেয় নাই। কিন্তু এখন সত্যি জানতে হবে আমাকে আসলে এইসব ঘটনার পিছনে কে সেটা জানতে হবে “।

মিহি সবকিছু বলে এক্সিডেন্টের দিন কি কি হয়েছিলো পুলিশ সেইসব লিখে নেয় এরপর তারা চলে যায়। দুইদিন কেটে যায় মিহি এখন সুস্থ কিন্তু নিহান এখনো কোমায় রয়েছে ডক্টর বলেছে নিহানকে হাসপাতালে রাখতে সেখানে তার চিকিৎসা হবে। মিহি গিয়ে নিহানের সাথে প্রতিদিন দেখা করে আসে। মিহি যখন রুমে বসে ছিলো তখন সানভি ভিতরে আসে আর বলে –

“- মিহি ম্যাম আপনি আমাকে ফোন করে কোনো আসতে বললেন? কোনো দরকার ছিলো ম্যাম?

“- হুম সানভি দরকার ছিলো আচ্ছা তোমাকে যে কাজটা করতে বলেছি সেটা কতদূর হয়েছে। নিয়া আর রায়ানের বিষয়ে কি কোনো তথ্য জানা গেছে ওরা কোথায় আছে?

“- ম্যাম ওরা কোথায় আছে সেটা এখনো অবধি জানা যায় নাই ওদের লোকেশন ট্যাক করা যাচ্ছে না। শহর গ্রাম সব জায়গায় খোঁজা হয়ে গেছে বাট কোনো খবর পাই নাই “।

মিহির মাথায় একটা কথা মিহি বলে –

“- একটা কাজ করো সানভি এই শহরের যতো কাজি অফিস আছে সব জায়গায় গিয়ে নিয়া আর রায়ানের বিষয়ে জানার চেষ্টা করো। আর যদি আশেপাশে কোনো জঙ্গল থাকে তাহলে সেখানে গিয়ে খোঁজ করো “।

“- ওকে ম্যাম সমস্যা নাই এখুনি যাচ্ছি “।

মিহি কথা শুনে সানভি এখান থেকে চলে যায়। মিহি পুলিশ অফিসারের কথা বলে একটা বিষয় নিয়ে এরপর রেডি হয়ে গাড়ি করে কোথায় যেনো বেড়িয়ে পড়ে। মিহির গাড়ি থামে একটা বাড়ির সামনে পুলিশের গাড়ি ও সেখানে আসে মিহি আর পুলিশ ভিতরে যায়। মিহি গিয়ে বাড়ির দরজা ধাক্কা দিলে একজন লোক এসে দরজা খুলে দেয় আর বলে –

“- আপনারা কারা কি চাই? আসুন ভিতরে আসুন “।

মিহি মহিলার রিয়েকশন দেখে অবাক হয় তবুও বাড়ির ভিতরে চলে যায় আর বলে –

“- আপনারা লিয়ার বাবা মা তাই না। যে গুলি লেগে মারা গিয়েছে কয়েকদিন আগে “।

লিয়া সেই মেয়েটা যে নিহানের বাড়ির মেডের চাকরি করতো যাকে গুলি করা হয়েছে। নিহান মিহিকে বলেছিলো লিয়া বেঁচে আছে কিন্তু সেইদিন গুলি লাগার কারণে লিয়া মারা যায়। মিহি এখন লিয়ার মা বাবার সামনে বসে তাদের এইসব কথা জিজ্ঞেস করছে। লিয়ার বাবা বলে –

“- হুম আমরা লিয়ার বাবা মা। কয়েকদিন আগে লিয়া মারা গেছে “।

কথাটা বলে ওনারা কান্না করে দেয় পুলিশ তাদের আরো কিছু লিয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে থাকে। মিহি ঘুরে ঘুরে পুরো বাড়ি দেখতে থাকে সেখানে লিয়ার রুমে যায় কিন্তু দরজায় তালা লাগানো একটা লক ব্যবহার করা হয়েছে। মিহি বলে –

“- এই রুমে লক কোনো? পাসওয়ার্ড কি?

“- আমি জানি না লিয়া সবসময় লক ব্যবহার করতো রুমে। আর এইটা এমন লক যেটা শুধু লিয়ার ফিঙ্গার পিনট ছাড়া খুলা সম্ভব না “।

মিহি কথাটা শুনে হাসে এরপর পাশে থাকা একটা রডের জিনিস দিয়ে লকের মধ্যে ভারী দেয় সাথে সাথে লক ভেঙে যায়। মিহি রুমের ভিতরে ঢুকে যায় সেখানে গিয়ে সে কিছু চেক করে বাহিরে বের হয়ে আসে আর পুলিশকে বলে –

“- চলুন স্যার এখান থেকে যাওয়া যাক “।

#চলবে