#মন_ফাগুন
#লেখনীতে_তাইয়্যেবা_জান্নাত_কেয়া
#পর্ব_৪২
মিহি বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে পুলিশ অফিসার সাথে সাথে বাহির হয়ে আসে মিহি একটা হাসি দেয়। পুলিশ অফিসার জিজ্ঞেস করে –
“- ম্যাম আপনি হাসছেন কোনো? আর আমরা বাহিরে চলে কোনো এসেছি চলুন ভিতরে যায় ওই লিয়ার মা বাবাকে আমার সুবিধার মনে হলো না। নিজের মেয়ের মৃত্যুতে ওদের কান্না করা কেমন যানি লোভ দেখানো মনে হলো “।
মিহি হাসে আর বলে –
“- স্যার ওদের খারাপ তখন লাগবে যখন ওরা লিয়ার আসল মা বাবা হবে। লিয়া একজন এতিম ওর কোনো মা বাবা নাই সব নাটক সাজানো হচ্ছে। আপনি একটা জিনিস খেয়াল করলেন স্যার যখন আমরা বাসার ভিতরে ঢুকেছিলাম তখন লিয়ার মা বাবা আমাদের দেখে চমকে যায় নাই। বরং এমন রিয়েকশন দিয়েছে যাতে সে জানতো আমরা আসবো আর ওনার কান্না দেখে মনে হলো পুরো অভিনয় “।
“- যদি ওরা লিয়ার আসল মা বাবা না হবে তাহলে ওদের গ্রেফতার করা উচিত ছিলো ছেড়ে কোনো দিলেন। চলুন বাড়ির ভিতরে গিয়ে ওদের গ্রেফতার করে নিয়ে আসি ম্যাম.
“- না স্যার সেটা করার দরকার নাই পাখি নিজে থেকে ধরা দিবে জালে এখন যদি ওদের গ্রেফতার করি তাহলে ওদের কেউ খুন করে ফেলবে যেমন লিয়াকে খুন করেছে। তাই এইরকম কিছু করতে হবে যাতে শুধু ওরা না আসল অপরাধী সহ আমাদের কাছে ধরা দেয় “।
মিহি কথাটা বলে কিছু পুলিশকে সিভিল ড্রেসে বাড়ির উপর নজর রাখতে বলে। অন্যদিকে সানভি আর লোকদের নিয়ে প্রায় অনেক কাজী অফিস ঘুরেছে কিন্তু কোনো খোঁজ পায় নাই। শহর থেকে দূরে একটা কাজী অফিসে গিয়ে রায়ান আর নিয়ার বিয়ের রেজিস্ট্রার দেখতে পায় সে। সানভি সাথে সাথে মিহিকে ফোন করে বলে –
“- ম্যাম রায়ান আর নিয়ার বিয়ের রেজিস্ট্রার পাওয়া গেছে আর আপনি যেমন বলেছিনেন এখানে পাশে একটা জঙ্গল আছে সেখানে লোক নিয়ে যাচ্ছি আমি। আপনি কি আসবেন মিহি ম্যাম?
“- সানভি তুমি আগেই লোক নিয়ে সেখানে যে ও না তাহলে রায়ান সর্তক হয়ে যেতে পারে। আমি পুলিশ নিয়ে সেখানে আসছি তুমি লোকেশন পাঠিয়ে দেও “।
সানভি মিহিকে লোকেশন পাঠিয়ে দেয় সে মিহির আসার অপেক্ষা করতে থাকে যখন মিহি আসে তারা সবাই মিলে জঙ্গলে যায়। সেখানে একটা বাড়ি ছিলো আশেপাশে অনেক গার্ড মিহি পুলিশকে ইশারা দেয়। পুলিশ গিয়ে পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলে। মিহি আর সানভি বাড়ির ভিতরে ঢুকে যায় বাড়িটা বেশ বড়ো ভিতরে ঢুকে অন্ধকার ছিলো। হঠাৎ করে পুরো বাড়িতে লাইট জবলে উঠে মিহি তাকিয়ে দেখে সামনে নিহানকে কেউ হুইলচেয়ারে বসিয়ে রেখেছে।
মিহি নিহানকে দেখে অবাক হয়ে যায় নিহান এখানে কি করছে ওকে কি করে এখানে নিয়ে আসা হলো। মিহি যখন নিহানের কাছে যেতে লাগবে তখন কিছু গার্ড এসে মিহিকে ধরে ফেলে। পিছন থেকে রায়ান বাহির হয় আর বলে –
“- হ্যালো মিহি কেমন আছো তুমি? বিয়ের দিন যখন তোমাকে দেখেছিলাম বেশ বোকা মেয়ে মনে হয়েছিলো কিন্তু এখন দেখি তুমি অনেক চালাক।তবে আমার সাথে চালাকি করে তুমি জিততে পারবে না মিহি সো সেড “।
“- রায়ান তুমি নিহানকে কোনো কিডন্যাপ করেছো ছাড়াে নিহানকে। নিহানের যদি কিছু হয় তাহলে তোমাকে খুন করে ফেলবো “।
রায়ান কথাটা শুনে হাসে আর বলে –
“- তুমি আমাকে খুন করার আগে আমি তোমাকে খুন করে ফেলবো মিহি। তুমি কি মনে করছিলে এতো সহজে আমার বিষয়ে সব জেনে যাবে তুমি এতো সহজ। আর এই নিহানকে কখনো ছাড়বো না আমি ওকে এক্সিডেন্ট করিয়ে পঙ্গু বানিয়ে ফেলেছি আমি কে বাঁচাবে তোমাকে?
“- তুমি এইসব কোনো করছে রায়ান কি শএুতা রয়েছে নিহানের সাথে তোমার। নিহান তোমার বন্ধু ছিলো তাই না তাহলে এইসব কোনো করছে কি করেছে নিহান তোমার সাথে। আর নিয়া কোথায়?
বন্ধু কথাটা শুনে রায়ান উচ্চ স্বরে হেসেঁ দেয় আর বলে –
“- নিহান কখনো আমার ভালো বন্ধু ছিলো না ওর জন্য সবসময় আমাকে কথা শুনতে হতো। ছোটবেলা থেকে নিহান সবকিছুতে বেষ্ট ছিলো পড়াশোনা খোলাধুলা সবকিছুতে। কিন্তু আমি এতো ভালো ছিলাম না তাই ওর জন্য বাবা সবসময় আমাকে কথা শুনাতো “।
“- কিন্তু এতে নিহানের কোনো দোষ ছিলো না নিহান যদি সবকিছুতে পারফেক্ট হওয়ার যোগ্যতা থাকে তাহলে এখানে ওর দোষ কি? তুমি এইজন্য নিহানের সাথে এইরকম বিশ্বাসঘাতকরা করতে পারলে?
“- হুম ঠিক বলেছো মিহি এতে নিহানের কোনো দোষ নাই তাই ছোটবেলা নিহানের সাথে কোনো অন্যায় করি নাই আমি। কিন্তু ওই শিকদার পরিবার সবকিছু কেড়ে নিয়েছে আমার কাছ থেকে ওরা আমার বাবাকে কেঁড়ে নিয়েছে “।
মিহি কথাটা বুঝতে পারলো না মিহি বলে –
“- শিকদার পরিবার কি করেছে তোমার সাথে রায়ান?
“- যখন তুমি জানতে আগ্রহ দেখাচ্ছো তাহলে বলি। আমার বাবা হুমায়ুন আহমেদ আর নিহানের চাচা মানে নিয়ার বাবা মুসারফ শিকদার দুইজনে ভালো বন্ধু ছিলো। তারা ডক্টর ছিলো কিন্তু তারা ডক্টর হওয়ার পাশাপাশি একসাথে রিসার্চ করতো। ওনারা গবেষণা করে একটা ঔষধ তৈরি করেছিলো যেটা দিয়ে অনেক উপকার হতো এই দেশের মানুষের। কিন্তু মুসারফ শিকদার সেটা শুধু নিজের তৈরি বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলো তাই সে আমার বাবাকে মেরে ফেলে আর ওই ঔষধ ফর্মুলা হানিয়া শিকদারের কাছে রেখে দেয় “।
রায়ানের কথাটা মিহির কেমন বিশ্বাস হলো না তবে সে বলে –
“- দেখো মা এমন কোনো কাজ করবে না যেটা অন্যায়। আমার মনে হয় কিছু একটা ভুল হয়েছে এখানে “।
“- কোনো ভুল হয় নাই ওই পরিবারের জন্য আমার বাবা মারা গেছে। ওরা খুন করে ফেলেছে আমার বাবাকে তাই এখন ওদের পরিবারকে মরতে হবে। নিয়ার বাবা যা করেছে সেটার শাস্তি ওকে পেতে হবে আর নিহান ওকে ওইদিন খুন করেতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারি নাই আজ ওকে মেরে ফেলবো আমি “।
“- দেখো রায়ান এমন কিছু করবে না তুমি রায়ান “।
রায়ান মিহির কথা শুনে না ও গিয়ে নিহানের দিকে বন্ধুক দিয়ে গুলি চালিয়ে দিতে যাবে ঠিক তখন নিহান ওর হাত ধরে ফেলে। নিহান হুইলচেয়ার থেকে উঠে রায়ানের হাত থেকে বন্ধক নিয়ে নেয় আর বলে –
“- হ্যালো রায়ান কেমন লাগছে আমার সারপ্রাইজ। কি মনে করছিলে রায়ান সারপ্রাইজ শুধু তুমি একা দিতে পারো আমি পারি না।
“- নিহান তুমি না পঙ্গু ছিলো তাহলে কি করে?
“- আমি কখনো পঙ্গু ছিলাম না এইটা শুধু একটা নাটক ছিলো যেটা তুমি দেখেছো। সেইদিন এক্সিডেন্ট আমার মাথায় আঘাত পায় তবে আমি ঠিক হয়ে যায় কিন্তু এতোদিন নাটক করে ছিলাম শুধু তোমাকে ধরার জন্য “।
#চলবে