বিবাহ বিভ্রাট ডটকম পর্ব-৯+১০

0
40

#বিবাহ_বিভ্রাট_ডটকম (পর্ব ৯+১০)
নুসরাত জাহান লিজা

বিবাহ ডটকমের অফিসের উদ্দেশ্যে ইমরোজ সবসময়ের মতোই ফিট বাবুটি সেজে বেরুচ্ছিল। মা বললেন,

“দাঁড়া, তোকে দেখি একটু?”

ইমরোজ দাঁড়াতেই আগে পরীক্ষা দিতে বা কোনো বিশেষ কাজে যাবার আগে দোয়া পড়ে ফু দিয়ে দিতেন, তেমন করে ফু দিয়ে দিলেন৷

এরপর বললেন, “ভালো ছেলের মতো থাকবি।”

ছোট্ট বাচ্চারা স্কুলে বা খেলতে যাবার আগে মায়েরা যেমন সাবধান করে দেন, “একদম দুষ্টুমি করবি না কিন্তু।” এখনকার মায়ের বলা কথাটা অনেকটা তেমন মনে হলো।

“মানে কী? আমি ছোট খোকা নাকি?”

“না তুই আইবুড়ো খোকা। ওই নিরীহ মেয়েটার সাথে দেখা হলেই যেভাবে ঝগড়া শুরু করিস, তাতে সাবধান করা ছাড়া আর কী করব?”

আহত দৃষ্টিতে মা’কে দেখল ইমরোজ, ওখানে কোন যন্ত্রণা অপেক্ষা করছে ওর জানা নেই। এটা তাই উপেক্ষা করাকেই শ্রেয় মনে হলো।

আজ ওর সিরিয়াল নম্বর ছয়। তবুও প্রায় এক ঘণ্টা পেরিয়ে গেল, সেদিনের সেই পান খাওয়া কথার তুবড়ি ছোটানো বিরক্তিকর লোকটা আজও এখানে উপস্থিত। ওকে দেখেই এগিয়ে এলো,

“আরে ভাইসাব, আপনেও আসছেন। রাত্রি আপা রাজি হইসে তাইলে? এইবার আপনের বিয়ে আর ঠেকায় কে!”

ইমরোজ প্রথমে লোকটার কথা বুঝতে পারল না, কারণ ওর মস্তিষ্ককে মা তখন অন্য দিকে ধাবিত করে দিয়েছেন। তাই ওর মনে হলো ওর সাথে রাত্রির বিয়ের কথাকে ইঙ্গিত করেছে লোকটা।

“আপনাদের আপা রাজি হলেই হবে নাকি? তার রাজত্ব চলছে? বাকিরা তার প্রজা? বিয়েতে দুই পক্ষেরই মতামত প্রয়োজন হয়। আমি ওকে বিয়ে করতে রাজি নই।”

লোকটার দৃষ্টি বিস্ফারিত হলো, চোখ দুটো কোটর ছেড়ে যেন বেরিয়েই আসবে, ক্ষণকালের জন্য ওর কানটা শান্তি পেল। পরক্ষণেই লোকটার প্রায় ত্রাহি চিৎকারে বলল,

“হায় আল্লাহ, আপনের সাথে রাত্রি আপার বিবাহের আলাপ চলতাসে নাকি? আমি কেমনে জানব। মাফ দিয়েন ভাইজান। বুঝতে পারি নাই।”

এবার বাকরুদ্ধ হবার পালা ইমরোজের, এই লোকের এখনকার কথা শুনে ওর মনে পড়ল সেদিনের কথা, লোকটা বলেছিল, রাত্রি যেই ‘কেস’ নেয়, সেই কেস সফল হয়। এখন তাহলে লোকটা সেটার কথাই বলছিল।

এমন লজ্জায় সে কোনোদিন পড়েনি৷ নিজের ভ্যানিশ হবার সুপার পাওয়ার না থাকার কারণে ভীষণ আফসোস হলো। এইজন্যই মা সবসময় বলতেন,

“রাগের মাথায় কোনো কাজ করতে নেই। কাজ করতে হয় মাথা ঠান্ডা করে। কথা বলার ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার মনে রাখবি। রাগের মাথায় বলা বেশিরভাগ কথাই ভুল কথা হয়।”

গুরুজনের উপদেশ এজন্যই মানতে হয়, আজ যদি মায়ের এই উপদেশ মানত, তবে কী আর এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতো! সে কী পাগল হয়ে যাচ্ছে!

“আপনের সাথে হেরে মানাইব ভালো।”

এবার ইমরোজ ঠান্ডা মাথায় কিছু বোঝাতে যাচ্ছিল, কিন্তু এরমধ্যে ওর ডাক পড়লে অগত্যা একজনের মাথায় অসাবধানতায় একটা ভুল কথা ঢুকিয়ে সেটা পরিষ্কার না করেই ওকে ভেতরে চলে যেতে হলো।

ইমরোজ ভেতরে এসে দেখল, রাত্রি একটা কাগজে চোখ বুলাচ্ছে, হয়তো কারো বায়োডাটা হবে। সে গলা খাঁকারি দিতেই মেয়েটা কাগজ থেকে চোখ তুলে ওর দিকে তাকালো।

ইমরোজ সৌজন্য রক্ষার্থে জিজ্ঞেস করল, “কেমন আছেন?”

“আমি সবসময়ই ভালো থাকি৷ আপনি কেমন আছেন?”

“ভালো।”

“আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে না।”

“কেন?”

“মনে হচ্ছে কোনো কারণে আপনি খানিকটা নার্ভাস।”

এই মেয়ে নিশ্চয়ই ওকে বাজিয়ে দেখতে চাচ্ছে, সে কেন সুযোগ দেবে!

“একদমই না। নার্ভাস হতে যাব কেন? কিছুটা ক্লান্ত বলতে পারেন।”

“ওকে।”

এরমধ্যে একজন অল্পবয়সী ছেলে এসে রাত্রির হাতে একটা প্লাস্টিক ফোল্ডার এগিয়ে দিল। রাত্রি ছেলেটাকে বলল, “সুমন, উনাকে তোমার স্পেশাল লেবুর শরবত খাওয়াও এক গাস। আমাকেও দিও।”

“আজ এত আপ্যায়ন কেন?”

“এটা সাধারণ ভদ্রতা। আমাদের প্রতিষ্ঠান অতিথি পরায়ণ। প্রত্যেক ক্লায়েন্টকেই আমরা সুন্দরভাবে ট্রিট করি।”

“তাহলে সেদিন আমি বঞ্চিত হলাম কেন?”

“কারণ সেদিন আপনি ভীষণ বাজে আচরণ করেছিলেন।”

“মোটেও না।”

“অবশ্যই হ্যাঁ। তবে এখন কাজের কথায় আসি।”

“ঠিক আছে। আপনি ইপ্সিতার জন্য কিছু বায়োডাটা দেবেন বলেছেন।”

“হ্যাঁ।” ওর দিকে একটা প্লাস্টিক ফোল্ডার এগিয়ে দিয়ে বলল,

“এখানে আমাদের সিলেক্ট করা শর্টলিস্ট আছে। ছয়টা ছেলের বায়োডাটা, ছবি, ডিটেকটিভ দ্বারা ভ্যারিফায়েড সার্টিফিকেট, ইন্টারভিউয়ের কপি, সবকিছু আছে। সমস্ত ডিটেইলস এগুলো পড়লেই জানতে পারবেন। সব পড়ে আপনারা আপনাদের পছন্দ অনুসারে প্রেফারেন্স লিস্ট সাজিয়ে আমাদের দেবেন। আমরা সেটা ধরে আমাদের কাজ করব।”

এরমধ্যে সুমন শরবত এনে দিয়ে গেল, ইমরোজ শরবতে চুমুক দিয়ে বলল, “আপনি তো বলেন, আপনাদের ইনকাম ভালো। তাহলে একটা বড় অফিসের ব্যবস্থা করেন না কেন?”

“এটাতে সমস্যা কী?”

“ভীষণ গাদাগাদি। সরকারি হাসপাতালে বাইরের ওয়ার্ডে যেমন হয়, তেমন মনে হয়। অথব পাবলিক বাস।”

“মোটেও না। আমাদের যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু জায়গা এখানে আছে।”

“সৌন্দর্যেরও তো একটা ব্যাপার আছে। রিসিপশনের সামনের গাদাগাদি বড্ড হিজিবিজি লাগে।”

“সৌন্দর্যের নামে অযথা অপচয় আমার পছন্দ নয়।”

“সৌন্দর্য হচ্ছে সৌন্দর্য। এটার সাথে অপচয় আসবে কেন?”

“শুনুন, মাকাল ফল চেনেন?”

“কেন?”

“প্রশ্নের উত্তর প্রশ্ন দিয়ে দিচ্ছেন কেন? আগে বলেন চেনেন কিনা?”

“হ্যাঁ। চিনব না কেন?”

“মাকাল ফলের একটা বৈশিষ্ট্য বলেন তো?”

“আমি কি ইন্টারভিউ দিতে এসেছি নাকি? এত প্রশ্নের উত্তর কেন দেব?”

“ও, আপনি জানে না সেটা বললেই হয়।”

ও জানে রাত্রি ওকে খোঁচাচ্ছে, তবুও মাকাল ফল চেনে না, এই অপবাদ সে মানবে না!

“বাইরে থেকে খুব সুন্দর, ভেতরে বিশ্রী।”

ইমরোজের উত্তরে রাত্রি সবগুলো দাঁত বের করে হাসল, সে এই উত্তরটা ইমরোজকে দিয়েই বলাতে চেয়েছিল, সফলতার হাসি এটা।

“এই তো, আপনি দেখছি জানেন। আমাদের প্রতিষ্ঠান মাকাল ফল নয়, দেখতে যেমনই হোক, কাজের। কেউ কেউ আছে, যারা বাইরের সৌন্দর্য নিয়ে খুঁতখুঁতে, কিন্তু ভেতরটা ওই মাকাল ফলের মতোই।”

“আপনি কি ইনডিরেক্টলি আমাকে মাকাল ফল বলতে চাইছেন?”

“আমি তো কাউকে মিন করিনি। এখন আপনার যদি মনে হয় সেটা আপনি, তাহলে আমি আর অমত করি কী করে বলুন?”

ইমরোজের গা জ্বলে গেল, “আপনি আজও আমাকে অপমান করছেন।”

“প্রথমে আপনি পাবলিক বাস আর সরকারি হসপিটাল নিয়ে এসেছেন। যাদের নিজের গাড়ি নেই বা প্রতিদিন প্রতিটা টাকা হিসেব করে চলতে হয়, পাবলিক বাসে চড়ে কিছু টাকা বাঁচিয়ে কেউ হয়তো নিজের কোনো শখ পূরণ করতে চায়, কারো হয়তো প্রয়োজনীয় কাজই হয়। আর জরুরি চিকিৎসা নিতে শখ করে কেউ লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে না। নিতান্ত অপারগ হলেই কেবল ওই সিচুয়েশনে গিয়ে দাঁড়ায় কেউ। তাদের কষ্টটা বোঝেন আপনি?”

এবার ইমরোজ অসহায় বোধ করল, সে কথার কথা বলেছে, এতকিছু তলিয়ে ভাবেনি, কিংবা কাউকে অপমান করার বিন্দুমাত্র ইনটেনশন ওর মধ্যে ছিল না। ভেতরে ভেতরে অনুতপ্ত হলেও শত্রুর দূর্গে বসে নিজের দুর্বলতা স্বীকার করে নেয়া মানে আত্মসমর্পণ করা। সেটাতে ওর ঘোরতর অনীহা।

“আপনি কচি খুকি নন। আমি যে ওই এঙ্গেল থেকে কথাটা বলিনি সেটা খুব ভালো করেই জানেন। তবুও আমাকে খাটো করার জন্য কথাগুলো বললেন। কারণ পায়ে পা বাঁধিয়ে ঝগড়া করা আপনার খুব প্রিয় একটা শখ।”

রাত্রি ঠান্ডা গলায় বলল, “আপনার হাইট কত ছিল আগে? মেপে দেখি এখন কতটুকু খাটো হলো?”

“অসহ্য। কাজ শেষ? আমি যেতে পারি?”

“প্লিজ, স্বচ্ছন্দে।”

“থ্যাংক ইউ।”

“ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম।”

দু’জনের বিদায়ী সম্ভাষণে মিশে রইল একরাশ তাচ্ছিল্য।

এই মেয়ের সমস্যা কী! মাথায় সারাক্ষণ কোন পোকা যে কিলবিল করে কে জানে! মাথাটা স্ক্যান করে দেখা দরকার, বিরল প্রজাতির কোনো পোকা হবে এ ব্যাপারে ইমরোজের বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।

***
আজ মায়াদের সপরিবারে দাওয়াত ছিল। রাত্রি বলেছিল, কাজ শেষ করে চলে যাবে। মায়া ভাবলেন, রাত্রির অফিসের সামনে দিয়েই যেহেতু যাবেন, ওকে তুলে নেবেন।

রাত্রির বাবা হাবিব সাহেবকে বসিয়ে মায়া আর উৎপল নেমে এলো। রাত্রির অফিসে ঢোকার পরে রিসিপশনিস্ট উঠে এসে হাসিমুখে তাদের স্বাগত জানিয়ে বসিয়ে দিলো। বলল,

“ম্যাডাম লাস্ট এপয়েনমেন্ট এটেন্ড করছেন। এক্ষুণি বেরুবেন।”

এরমধ্যে কোত্থেকে একটা লোক চলে এলো,

“আসসালামু আলাইকুম।”

“ওয়ালাইকুম আসসালাম।”

“খালাম্মা, আমি ওই আপার কথা শুইনেই বুঝলাম, আপনি রাত্রি আপার আম্মা। মাশাল্লাহ। আজকে তার হবু জামাইরে দেখলাম৷ মাশাল্লাহ, মানিক জোড় একেবারে।”

মায়া অবাঞ্চিত কথায় এক প্রকার বিরক্তই হলেন, “কী বললেন বুঝলাম না।”

“রাত্রি আপার হবু জামাই, যেমন লম্বায়, তেমন সুন্দর দেখতে।”

উৎপল বলল, “কার কথা বলছেন? তার নাম কী?”

“নাম তো জানি না, তয়, ছবি আছে আমার কাছে। সেলফি তোলার ঢং কইরা তার ছবি তুলছি একটা।”

বলেই সম্মতির অপেক্ষা না করে লোকটা গর্বিত ভঙ্গিতে নিজের মুঠোফোন এগিয়ে দিয়ে বলল, “আমি আইছিলাম, গোয়েন্দার চাকরির জন্যে। আমি এইসবে ভালো। বেশি ভদ্রলোকেরা অন্যের বাড়িতে উঁকিঝুঁকি মারতে শরম পায়, আমার মতো মানুষ দরকার তাগো। এহন বলেন, এত বড় একটা কেস সামাল দিলাম, যোগ্য না আমি?”

ছবিটা দেখামাত্র ইপ্সিতার ভাইকে চিনতে বিন্দুমাত্র সময় লাগেনি উৎপলের। ইমরোজ এখানে কেন এসেছে, এটাও সে জানে। এই লোক কোনো কারণে হয়তো ভুল বুঝেছে। তবে এই ভুলটা সে ভাঙাতে চাইল না। সিদ্ধান্ত নিল আরেকটু উস্কে দিতে।

“ছবি দেখতে হবে না। আপনি যান ভাই। আপনার চাকরির জন্য শুভকামনা।”

লোকটা আরও কিছু বলতে চেয়েছিল, সেই সুযোগ না পাওয়ায় ভারাক্রান্ত মনে ফিরে গেল।

উৎপল বলল, “মা, দেখেছ, তোমার মেয়ে কত এগিয়ে গেছে। এটা সেই ছেলেটাই, যার ব্যাপারে সেদিন বলেছিলাম, রাত্রির জন্য। ও হয়তো কোনো কারণে লজ্জা পাচ্ছে বলতে। আমাদের এগিয়ে যাওয়া উচিত না?”

“তুই শিওর তো?”

“তাহলে এই ছেলে এখানে কেন আসবে? আর ওই লোক কেন ভুলভাল বলবে? কোনোকিছু নিশ্চয়ই আঁচ করতে পেরেছে। নইলে, এটা ভাববে কেন? কত লোকই তো আসে, উনাকে দেখেই লোকটার সন্দেহ হবার তো কোনো কারণ নেই।”

কিছুক্ষণ ভেবে মায়া বললেন, “তোর কথায় যুক্তি আছে। এবার আমাদেরই উদ্যোগ নিতে হবে।”

হাসিমুখে রাত্রি বেরিয়ে আসছে, উৎপল ভাবছে ওর ভবিষ্যতের কথা, এই ষড়যন্ত্রের পেছনে সে কলকাঠি নেড়েছে, এটা জানলে রাত্রি ওকে শূলে চড়াবে নিশ্চিত!

তবে এতকিছুর পরও সে এটা বিশ্বাস করে সে বোনের ভালোই চাইছে। নিজের ভালোর সাথে বোনেরও ভালো হোক।

***
ইপ্সিতার হাতে শোভা নামের মেয়েটার ছবি আর বায়োডাটা তুলে দিল উৎপল। উল্টেপাল্টে দেখে ইপ্সিতা জিজ্ঞেস করল,

“এটা দিয়ে আমি কী করব? এটা কে?”

“এর নাম শোভা।”

“সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি।”

“রাত্রি এই মেয়েটাকে সিলেক্ট করেছে আমার সাথে বিয়ে দেবার জন্য।”

ইপ্সিতা দপ করে জ্বলে উঠল, “মানে কী? তোমার বিয়ে ঠিক করে ফেলছে। আর তুমি নাচতে নাচতে সেই খবর আমাকে দিতে এসেছো? এখন আর আমাকে ভালো লাগছে না? শোভার শোভায় ডুবতে ইচ্ছা করছে? যাও, বিয়ে করে ফেলো তোমার শোভাকে!”

উৎপল কথা বলার চেষ্টা করছিল, কিন্তু পাত্তাই পেল না। এমন সাঁড়াশি কথার আক্রমণে সে ঢাল খুঁজে পাচ্ছিল না। অবশেষে যখন সুযোগ পেল, ততক্ষণে ইপ্সিতা উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করেছে।

উৎপল ওর পেছনে যেতে যেতে বলল, “আরে, আমি কখন বললাম, আমি ওকে বিয়ে করব। এই পাগলী, শোনো না, আরে, একটু আস্তে হাঁটবে তো। আরে, দেখো, আমি বিয়ে করতে চাইলে এগুলো এনে তোমাকে দেখাতাম? বোঝো না কেন?”

এবার ইপ্সিতার গতি খানিকটা শ্লথ হলো, কিন্তু কিছু বলল না।

উৎপল বলল, “এখন আমাদের একসাথে লড়ার সময়, বিভক্তির সময় না। আমাদের মাথা ঠান্ডা করে ভাবতে হবে। মনে আছে, এটা একটা যু দ্ধ! যু দ্ধের ময়দানে এমন কত বিপদ ওঁৎ পেতে আছে। এগুলো তো আমাদের সামলাতে হবে, তাই না?”

ইপ্সিতা এবার পুরোপুরি থেমে গেল, ঘুরে তাকিয়ে উৎপলের দিকে তাকিয়ে বলল,

“স্যরি।”

“এই তো বুঝতে পেরেছ। মিশন বিবাহের নতুন একটা চাল দিয়েছি আমি।”

কৌতূহলী ইপ্সিতা প্রশ্ন করল, “কী চাল?”

“বসো, বলছি।”

সব শুনে উদ্ভাসিত হাসল ইপ্সিতা, উৎপল মুগ্ধ গলায় বলল, “সুন্দর।”

“কী?”

“তোমার হাসি।”

“আর আমি?”

“সেটা নতুন করে বলতে হবে?”

“হ্যাঁ, প্রতিদিন বলবে। যখন বুড়ো হয়ে যাব, চামড়ায় ভাঁজ পড়বে, দাঁত পড়ে যাবে, সব চুল সাদা হয়ে যাবে, তখনও বলবে। শুনতে এত ভালো লাগে! মনে হয়, একজন মানুষ আছে, পুরো পৃথিবীর চোখে যাই হোক, সেই মানুষটার চোখে আমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী।”

কেমন স্বপ্নালু শোনায় ইপ্সিতার গলাটা, চোখে স্বপ্নের আঁকিবুঁকি।

উৎপল মন্ত্রমুগ্ধের মতো বলল, “বলব, সবসময় বলব।”

প্রিয়জনের হাসিমুখ দেখতে কার না ভালো লাগে! স্বপ্নের পথের বাঁধাগুলো যেন কিছুক্ষণের জন্য ওদের মন থেকে হারিয়ে গেল, একরাশ ফুরফুরে বাতাস ওদের সমস্ত মনকে আচ্ছন্ন করে ফেলল!
………. কেমন লাগল জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।