বিবাহ বিভ্রাট ডটকম পর্ব-১৪+১৫

0
51

#বিবাহ_বিভ্রাট_ডটকম (পর্ব ১৪+১৫)
নুসরাত জাহান লিজা

রাত্রির ইমরোজকে বিয়ে করতে আপত্তি নেই, এই কথাটা দশদিনের মধ্যেই আনোয়ারাকে জানিয়ে দিলেন মায়া। ইমরোজের প্রতি নিজের সন্তুষ্টির কথাও জানাতে ভোলেননি।

আনোয়ারা বললেন, “আপা, ওদের মতিগতি যেকোনো সময় ঘুরে যেতে পারে। যদি আপনাদের আপত্তি না থাকে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব, বিয়ের আয়োজন শুরু করি? কী বলেন?”

“আমিও তাই ভেবেছি আপা। আমি ওদের বাবার সাথে কথা বলে আপনাকে জানাচ্ছি।”

আনোয়ারা ভীষণ খুশি হয়েছেন রাত্রি রাজি হওয়ায়। তিনি জানেন, তার ছেলে যতই গাইগুই করুক, তার কথা শেষ অব্দি ফেলবে না। গাইগুই তিনি কানেও তুলবেন না। ছেলে বৈরাগ্য পুষে রাখতে চাইলে হিমালয়ে যাক গৌতম বুদ্ধের মতো, তার চোখের সামনে থাকতে পারবে না। তার বয়স হয়ে গেছে, ইদানিং মৃত্যুচিন্তা ঘোরে মাথায়। ছেলে মেয়ের একটা সুখী সংসার তিনি চোখের সামনে দেখে যেতে চান।

ওদিকে মেয়ের মতিগতিও তার ঠিকঠাক লাগছে না। তিনি চেষ্টা করছেন নজর রাখতে। ইমরোজের বিয়ে নিয়ে যেহেতু তাকে মাথা খাটাতে হচ্ছে, তাই ইপ্সিতার বিয়ের কথাবার্তা তেমন এগুচ্ছে না। তিনি ঠিক করলেন, দুই সপ্তাহের বেশি সময় নেবেন না। এরমধ্যে বিয়ে সম্পন্ন করে মেয়ের বিয়ে নিয়ে আবারও তোড়জোড় শুরু করবেন।

বিষয়টা ছেলেকে একটু আয়োজন করে জানাতে হবে। তিনি পোলাও কোরমা রান্না করলেন। সাথে পায়েস। তার হাতের ঘণ দুধের পায়েস ছেলের খুব পছন্দ।

কলেজ থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে খেতে এলো ইমরোজ।

“কী ব্যাপার মা, আজ কোনো স্পেশাল দিন?”

“হ্যাঁ। বোস।”

ইমরোজ মনে করার চেষ্টা করল আজ কারোর জন্মদিন কি-না। না, অবশ্য মা প্রায়ই সময় নিয়ে নানারকম রান্না করেন। তিনি রাঁধতে ভালোবাসেন। তাই আর কোনো প্রশ্ন করল না।

খেতে খেতে ইপ্সিতা বলল করল, “মা, আজ বিকেলে একটু বাইরে যাব।”

ইমরোজ জিজ্ঞেস করল, “কেন? তোর তো কালই এক্সাম শেষ হয়েছে।”

“সেজন্যই, সুবর্ণা, মোনা ওরা সবাই আসবে। অনার্স শেষ হয়ে গেল, সবাই সেটা সেলিব্রেট করতে চায়।”

আর বাঁধা এলো না, ইপ্সিতা আসলে যাবে উৎপলের সাথে দেখা করতে। পরীক্ষা শেষ হওয়ায় বাইরে যেতে মিথ্যে অজুহাত দিতে হলো। পুরোপুরি মিথ্যে না অবশ্য৷ ফ্রেন্ডদের সাথে কিছুক্ষণ থেকে চম্পট দেবে। মিথ্যে বলতে একটু খারাপই লাগল।

খাবার পরে পায়েসের বাটি ওদের দিকে এগিয়ে দিলেন আনোয়ারা।

ইমরোজ সবে এক চামচ পায়েস মুখে তুলেছে, তখনই মা বললেন, “রাত্রি রাজি হয়েছে।”

“কীসে?”

“মঙ্গল গ্রহে যেতে৷ কীসে রাজি হবার কথা? গাধা, বিয়েতে।”

“কীহ্!” ইমরোজের মস্তিষ্কে কথাটা প্রসেস হতে সময় নিল খানিকটা, এরমধ্যে আনোয়ারা সহাস্যে বললেন,

“তোকে বিয়ে করতে ওর আপত্তি নেই।”

প্রবল শকে পায়েস ইমরোজের নাকে উঠে গেছে, কাশি উঠেছে। মা উঠে ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ওকে শান্ত করে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলেন।

“এমনভাবে ভয় পেলি, মনে হয় বিয়ে না, বিচারকের কাছ থেকে ফাঁসির রায় শুনলি? আরে, বিয়ে একটা খুশির জিনিস, আনন্দের জিনিস।”

“এটা ফাঁসির রায়ের চাইতে ভয়ংকর।”

বলতে বলতে নিজেকে ধাতস্থ করে নিল ইমরোজ, “সে রাজি হলেই তো হচ্ছে না। উনার আপত্তি না থাকতে পারে, কিন্তু আমার আপত্তি আছে। আমি রাজি না, দন্ত-ন আকারে না।”

“তুই ভুলে যাচ্ছিস ইমু, আমি স্কুলে মাস্টারি করেছি। আমাকে বানান শেখাতে আসবি না। আমি তোর মা, তোর গ আকারে গা ধ আকারে ধা, গাধা লেভেলের স্টুডেন্ট না। অ আ ক খ, আমার কাছ থেকেই প্রথম শিখেছিস।”

ইমরোজ বিস্ফারিত দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে, সে ওর অনাপত্তি জানিয়েছে, আর মা কিনা বানান নিয়ে পড়ে আছেন! ওর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নিশ্চিত করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন! আর ওই অভব্য মেয়েটারও তো কথার ঠিক নেই৷ এমন ভাব, যে ওকে সহ্যই করতে পারে না, তলে তলে বিয়েতে রাজি হয়ে গেছে।

ইমরোজ এটা ভেবে নিশ্চিন্ত ছিল যে, রাত্রি কিছুতেই রাজি হবে না। এটা ভেবেই নির্ভার ছিল। মেয়েটা দেখছি একেবারে ভরসা যোগ্য নয়! ভুল হয়ে গেছে, একটা ম্যানারলেস মেয়ের উপরে ভরসা করে। সেদিনই কত বড় গলায় ওকে শাসালো, আর এই কয়দিনেই ইমরোজ কী এমন রসগোল্লা হয়ে গেল ওর কাছে, যে তিড়িং-বিড়িং নাচতে নাচতে বিয়েতে মত দিয়ে দিল!

“মা, একটা কথা বলি? আমি ওকে বিয়ে করব না।”

“বিয়েটা করবি, ওকেই করতে হবে। তোর বহুত ধানাইপানাই দেখেছি, আর সহ্য করব না। আমি ওদের কথা দিয়েছি। এখন আর পিছিয়ে আসার জায়গা নেই। একটা প্রেম করতি, বা কাউকে পছন্দ থাকলে তার সাথে বিয়েতে আপত্তি করতাম না। কিন্তু নেই যেহেতু, তাই এটাই শেষ কথা। এফ আই এন এ এল ফাইনাল। বানানের খেলা আমিও খেলতে জানি।”

ইমরোজ প্রিয় পায়েস না খেয়েই উঠে চলে গেল নিজের ঘরে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে কন্টাক্ট লিস্ট থেকে রাত্রির নম্বর বের করে কল করল।

কয়েকবার রিং হবার পরে পঞ্চমবারে ধরল, ধরেই বলল, “এতবার কল দিচ্ছেন কেন? যখন দেখছেন কেউ কল রিসিভ করছে না, তার মানে সে ব্যস্ত আছে। এটুকু ম্যানার জানেন না?”

ইমরোজের মাথায় এমনিতেই ভিসুভিয়াস হয়ে ছিল, রাত্রির কথা যেন তাতে ঘি ঢালল।

“এত মানারিজমের জ্ঞান ঝাড়বেন না তো। নিজে ম্যানার জানেন? নিজে যা জানেন না, সেটা নিয়ে অন্যকে উপদেশ দেওয়াটাও অভদ্রতা।”

“কলটা আপনি করেছেন। তারমানে প্রয়োজনটা আপনার। আমার হাতে সময় কম। নইলে ডিটেইলড এক্সপ্লেনেশন দিতাম। দ্রুত উগড়ান।”

“উগড়ান মানে?”

“মানে যা পেটে আছে, তা উগড়ে ফেলুন। আমার এখন সময় নেই।”

ইমরোজের ইচ্ছে করছিল, একটা হাতুড়ি দিয়ে এই মেয়ের মাথার খুলি ফাটিয়ে দিতে। কিন্তু সে এখন কাঁদায় পড়া হাতি, আর হাতি কাঁদায় পড়লে চামচিকাও লাথি মারে, আর এই মেয়ে সাক্ষাৎ বাঘিনী। পরক্ষণেই নিজের ভাবনাকে শুদ্ধ করল, এমন ভালো বিশেষণ ওই মেয়ের জন্য না। সাপিনী কিংবা সর্প রানী বলা যায়।

“সেদিন তো খুব বড় গলায় বললেন যে আমাকে বিয়ে করবেন না। আমাকে অপমান করলেন, হঠাৎ রাজি হলেন কেন তাহলে?”

“ভেবে দেখলাম, আপনি মানুষটা পারফেক্ট হাজব্যান্ড ম্যাটারিয়াল। গার্লফ্রেন্ড নেই, রান্নাবান্না পারেন, ঘর গোছাতে পারেন। আবার মাম্মাস বয়। তাই ভাবলাম হাতছাড়া করা ঠিক হবে না৷ সবকিছু বিবেচনা করে আপনাকে পছন্দ হয়ে গেল।”

রাত্রির কথার ব্যাঙ্গাত্মক ভঙ্গি ধরতে মহা বুদ্ধিমান হতে হয় না, গা জ্বালানো হাসিটা যেন অদেখা দূরত্বে থেকেও স্পষ্ট দেখতে পেল ইমরোজ।

“রাত্রি, প্লিজ, বিয়েটা ভেঙে দিন।”

“দেখুন, আমার কিন্তু কোনো সমস্যা নেই আপনাকে বিয়ে করতে। সমস্যাটা আপনার। আপনি যদি বিয়ে ভাঙতে পারেন, ভাঙুক। গ্রো আপ ম্যান। নিজের কাজ নিজে করতে শিখুন।”

ইমরোজ উত্তর দিতেই যাচ্ছিল, ওকে থামিয়ে দিয়ে রাত্রি বলল, “অনেক সময় নষ্ট করেছেন। আপনার মতো বাঁধাধরা মাস শেষ হলে স্যালারি আমার পকেটে আসে না, আর বিরক্ত করবেন না।”

বলে মুখের উপরে কলটা কেটে দিল। রাগে, অপমানে ইমরোজের সারা গা জ্বলছে। দুপুরের খাবারটাও হজম হচ্ছে না! কী করবে সে! কী করলে এই আতান্তর থেকে মুক্তি মিলবে! আল্লাহ, রক্ষা করো!

***
রাত্রি জানত ইমরোজ ওর সাথে অবশ্যই যোগাযোগ করবে। তাই আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। তবে এটাও চায়, বিয়ের আগে যত কম কথা বলা যায় তত ভালো। নইলে মেজাজ আরও বেশি বিগড়ে গেলে নিজেই বেঁকে বসতে পারে। তখন প্রতিশোধ নেয়া হবে না!

জাহিদ ওকে রিপোর্ট দেবার পরেই গিয়ে মত জানিয়ে এসেছে মা’কে। রিপোর্ট দেখে হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছে রাত্রি। আচরণগত সমস্যা প্রকট থাকলেও চারিত্রিক কোনো সমস্যা নেই। জাহিদের এক কাজিন নাকি ওই কলেজে পড়ে। সে জানিয়েছে, আলাদা করে মেয়েরা কথা বলতে গেলে প্রয়োজনীয় কথার বাইরে নাকি একটাও কথা বলে না। প্রতিশোধের জন্য হলেও, ক্যারেক্টার সার্টিফিকেটে পাশ মার্ক না পেলে সে রাজি হতো না কিছুতেই।

বিয়েতে কেন রাজি হয়েছে, সেটা বলতে গিয়ে ওর ভীষণ হাসি পাচ্ছিল, হতবুদ্ধি ইমরোজের চেহারাটা কল্পনা করে। হেসেও ফেলেছিল বলতে বলতে।একে জ্বালাতে এত মজা লাগে কেন, এক ধরনের পৈশাচিক আনন্দ হয়। চেহারাটা সামনে বসে দেখতে কেমন লাগবে! চিন্তা করেই হেসে ফেলল রাত্রি।

***
ইপ্সিতা এসে খুশির খবরটা উৎপলকে দিল। ওদের এই ‘মিশন বিবাহ’ প্রায় সফলতার দ্বারপ্রান্তে।

উৎপল সহসা খানিকটা যেন গম্ভীর হয়ে গেল, “আমরা কোনো ভুল করছি না তো?”

ইপ্সিতার মনেও কিঞ্চিৎ দ্বিধা যে নেই তা নয়। তবে নিজের ভাইকে সে চেনে। বাইরে থেকে যতই রাগী হোক, ভেতরে ভেতরে এখনো অদ্ভুত এক সরল শিশু ঘাপটি মেরে আছে। সে অভয় দিল প্রেমিক প্রবরকে,

“ভুল হচ্ছে না। আমার ভাইয়া হার্মফুল নয়। রাত্রি আপু খুব ভালো থাকবে। ওরা কাছাকাছি থাকলে কতক্ষণ আর ঝগড়াঝাটি করবে! একজন আরেকজনকে ঠিকই চিনতে পারবে। চিনতে শুরু করলেই প্রেমে পড়বে। আমার বিশ্বাস ওদের দাম্পত্য ঈর্ষণীয় হবে!”

এই ভরসাতেই তো ওরা এগিয়েছে! সব ভালো হোক।

“আমরা কবে আমাদের কথা বলব উৎপল?”

উৎপলের চোখে ঘোর লাগে, ওদের না হওয়া একটা সংসারের স্বপ্নঘোর।

“ওদের বিয়েটা ভালোই ভালোই হয়ে যাক। এর পরপরই মাকে তোমার কথাটা বলব।”

***
হাবীব সাহেব পত্রিকা হাতে নিচ্ছিলেন, মায়া কড়া গলায় বললেন, “মেয়েটা কি আমার একার? মেয়ের বিয়ে, আর তুমি এখনো পত্রিকায় মুখ ডুবিয়ে বসে আছ? তোমার কোনো দায়দায়িত্ব নেই?”

“বসতে পারলাম কই? তার আগেই তো চেঁচিয়ে উঠলে!”

“উৎপলের বাবা, উনারা চাইছেন, যত দ্রুত সম্ভব বিয়েটা হয়ে যাক। তোমার মেয়ে রাজি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বেঁকে বসতে কতক্ষণ! আমারও তাই মত। তুমি কী বলো?”

“একটু বেশি তাড়াহুড়া হচ্ছে না?”

“তা একটু হচ্ছে। কিন্তু ছেলেটা ভালো, ভদ্র। আদব কায়দা জানে। সেদিন দেখা হয়েছিল, বলেছিই তো। তাছাড়া আনোয়ারা আপা ভীষণ মজার মানুষ, খোলামনের মানুষ। কোনো কুটিলতা নেই। ইপ্সিতাও লক্ষ্মী মেয়ে। আল্লাহ ভরসা বলে শুরু করা যেতে পারে।”

“এটা অবশ্য ঠিক বলেছ। চারপাশে এমন সব গল্প শুনি, সেখানে এমন মানুষ যেই পরিবারে আছে, সেখানে মেয়ে দেয়াই যায়। ঠিক আছে। আমরা একসাথে আরেকবার বসে দিনক্ষণ ঠিক করি। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।”

***
ইমরোজ পরেরদিন বাসায় এসে শুনল মা নাকি এখন অব্দি খাবার মুখে তোলেননি। এমনকি পানিও না। ইপ্সিতার কাছ থেকে কথাটা শুনে সে ছুটে মায়ের ঘরে গেল।

আনোয়ারা শুয়ে আছেন চোখ বন্ধ করে। ছেলের সাড়া পেয়েও তিনি চোখ খুললেন না।

“মা, তুমি খাওনি কেন? তোমার ওষুধও খাওনি। এই শরীরে না খেয়ে আছ কেন?”

“তোদের খাবার রান্না করা আছে। খেয়ে নে।”

“তুমিও চলো মা।”

তিনি চোখ খুলে উঠে বসলেন, কিন্তু নামার কোনো লক্ষণ তার মধ্যে পরিলক্ষিত হলো না।

“কী করব গিয়ে? শরীর ঠিক করে কী লাভ? ছেলে পন করেছে বিয়ে করবে না। আমি আর কয়দিন? আমার কথা ভাবিস তুই? একজন মায়ের সন্তানের জন্য কত চিন্তা হয়, তোর ধারণা আছে? ইপ্সিতার বিয়ে হয়ে যাবে, আমি আর কয়দিন। এরপরে তুই কী করবি বাবু? একা থাকবি? একা থাকা যায় সারাজীবন? একাকিত্বের মানে জানিস? মানুষটা চলে যাবার পরে আমি তোদের দিকে তাকিয়ে বেঁচে ছিলাম। আমার বাঁচার অবলম্বন ছিলি তোরা। তুই কী করে থাকবি ইমু? জীবনটা যত ছোট মনে হয়, ততটা ছোট কী? এত লম্বা সময় একা থাকতে পারে না কেউ। তোর ভালো চাওয়াটা আমার অন্যায়?” বলতে বলতে আনোয়ারার চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। কিছু জল গড়িয়ে পড়ল গাল বেয়ে।

ইমরোজ মাকে সবসময় মেলোড্রামা করতে দেখেছে, হাসতে দেখেছে, কিন্তু আজ সেসবের ছিঁটেফোঁটাও নেই। এই কান্না সত্যিই তার হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত। সন্তানের জন্য অপার স্নেহ আর আশঙ্কার দোলাচল থেকে তিনি ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়েছেন। তার এই ভঙ্গুর দশা তিনি কোনোদিন সন্তানদের দেখাতে চাননি।

ইমরোজ মায়ের পাশে বসে তার কাঁধে মাথা রাখল।

“মা, এভাবে বলো না প্লিজ। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। তুমি আর ইপ্সিতা ছাড়া আমার আর কে আছে বলো। চলো, খেয়ে নাও, প্লিজ মা?”

“আমার গলা দিয়ে খাবার নামবে না। তুই যা, খেয়ে নে।”

ইমরোজ আরও কিছুক্ষণ মায়ের কাঁধে মাথা রেখে নিশ্চুপ বসে রইল। কতক্ষণ পরে জানে না, সে মুখ খুলল,

“মা, তোমার খুশির চাইতে বড় আমার কাছে আর কিচ্ছু নেই। এই বিয়ে করলে যদি তুমি খুশি হও, তাহলে আমার আপত্তি নেই।”

ইমরোজ জানে না, কখন ওর চোখও ঝাপসা হয়ে এসেছে। আনোয়ারা ছেলের মুখটা দুই হাতে ধরলেন, এরপর ডান হাতে ওর চোখ মুছিয়ে দিয়ে বললেন,

“দেখিস, তুই খুব সুখী হবি বাবু। আমার দোয়া সবসময় তোদের সাথে আছে, থাকবে।”

ইমরোজ যেন এখন নিজের মধ্যে নেই, কী হচ্ছে না হচ্ছে, কী বলছে নিজেও জানে না। শুধু জানে ওর মা কাঁদছে, কষ্টের কারণ সে নিজে। সেই কষ্ট ওকে লাঘব করতে হবে।

“এবার চলো মা। খেয়ে নাও।”

“চল।”

মৃদু হেসে ছেলের মাথায় পরম মমতায় হাত রেখে বললেন আনোয়ারা। মনে মনে নিজের সমস্তটা দিয়ে প্রার্থনা করলেন।

দুদিনের মধ্যেই বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। সামনের শুক্রবার বিয়ের দিন ধার্য্য করা হলো।
………..
(ক্রমশ)
বিকেলে দিতে চেয়েছিলাম। পরে ভাবলাম দুই পর্ব একসাথে দেই। ওদের বিয়েতে সবার নিমন্ত্রণ রইল।