আমীরা পর্ব-০১

0
26

#আমীরা
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ১

আমার বিয়ের ৪ মাস পর আমি গিয়েছিলাম আমার হাসবেন্ডের কলিগের বাসায় ঘুরতে। উনার বাসাটা বান্দরবনের একটা অদ্ভুত জায়গায় ছিল। বান্দরবনের অনেক গ্রামের নাম শুনলেও আতীর নামে কোনো গ্রামের নাম শুনিনি। গোগলে অনেক সার্চ দিয়েও এমন নামের গ্রামের সন্ধান পেলাম না। তারা আদিবাসী তাদের বিশ্বাস, সংস্কৃতি একদম আলাদা। তাই আমি সেখানে যেতে একদম রাজি হচ্ছিলাম না। তবে কলিগের ওয়াইফ সাবিরা ভাবীর জোরাজোরিতে রাজি হই কিছুটা। কেন জানি না আমার একদম মন টানছিল না। কিন্তু আমার হাসবেন্ড নির্ঝরের বক্তব্য প্রকৃতি দেখতে হলে কাছ থেকে দেখতে হয়৷ তবুও কেন জানি না আমার মন খচ খচ করছিল। সেটা বুঝতে না দিয়ে আমি যেতে রাজি হলাম সবার কথায়।

সেখানে যাওয়ার দিনক্ষণ ঠিক হলো। আমি আর আমার স্বামী দুজনেই অফিস থেকে ছুটি নিলাম। অপরদিকে সাবিরা ভাবীর হাসবেন্ড তুশবা ভাইও ছুটি নিলেন। আমরা রওনা দিয়েছিলাম ১৯ তারিখে এবং রোজ বৃহস্পতিবার রাত তিনটেয়। তাই যথাক্রমে বৃহস্পতিবার অফিস থেকে এসে আমি এবং আমার স্বামী কাপড় গুছাচ্ছিলাম। সবকিছু গুছিয়ে নেওয়ার সময় জায়নামাজটাও আমি গুছিয়ে নেওয়ার জন্য আলমিরা থেকে বের করলাম। সাধারণত একটা পাতলা জায়নামাজ আমরা কোথাও গেলে বহন করে নিয়ে যাই। কিন্তু সেদিন জায়নামাজ যতবারেই ব্যাগে নিতে গেছি ততবারেই মনে হচ্ছিল আমার হাতে কেউ শক দিচ্ছে। ততবারেই জায়নামাজটা হাত থেকে পড়ে যাচ্ছিল। কেন জানি না তখনও মনটায় ইতিবাচক কোনো সাড়া পাচ্ছিলাম না। আমি নির্ঝরের কাছে দৌড়ে গিয়ে বললাম

“আমার মন সায় দিচ্ছে না যেতে। তুমি কী কোনোভাবে ট্রিপটা ক্যানসেল করবে? যেখানে যাব সে জায়গা সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না। আর যাদের সাথে যাব তারা অন্য জাতের। তাদের সংস্কৃতি আলাদা। পাহাড়ে অনেক সাপও থাকে। তাদের মতো করে আমরা সে জায়গায় সার্ভাইভ করতে পারব না। আমার যেতে একদম ইচ্ছে করছে না।”

নির্ঝর বেশ রাগ গলায় আমাকে উত্তর দিল

“সবসময় তুমি সবকিছুর নেগেটিভ দিক বের করো। ওদের আমরা কথা দিয়েছি যাব। আর আমি তো জানি তুশবা কেমন। ও একদম আমাদের মতো। আমার এবং তার সাথে সম্পর্ক ভালো। তার আন্তরিকতা আমি কীভাবে উপেক্ষা করি। সে তো বলেছেই আমাদের সমস্যা হবে না। নেগেটিভ না ভেবে সবকিছু গুছাও।”

নির্ঝরের কথা শুনে আমি আর কথা বাড়ালাম না। সবকিছু গুছিয়ে নিলাম। তুশবা আর সাবিরা ভাবী মিলেই গাড়ি করেছে। কারণ আমরা তার এলাকা চিনি না। আর বাসে যাওয়ার অভ্যাস আমার নেই। তাই তারা গাড়ি ঠিক করে আমাদের বাসার সামনে আসলো রাত আড়াইটায়। তখনও আমার মন খচখচ করছিল। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে কিছুটা হেসে তাদের কাছে গেলাম। আমি আর নির্ঝর এবং সাবিরা ভাবী পেছনে বসলাম আর ড্রাইভার আর তুশবা বসলো সামনে। যার গাড়ি ভাড়া করেছে সেও তাদের জাতের। তাদের মধ্যে কী কথোপকথন হচ্ছে আমি বা নির্ঝর কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।

গাড়িতে উঠার ১০ মিনিট পর গাড়িটা ছাড়ল। গাড়িতে উঠেই আমার মাথা ঝিম ঝিম করতে লাগল। অসম্ভব মাথা ব্যথা শুরু হলো আমার। মাথার ব্যথায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলাম আমি। কখন যে আমি ঘুমিয়ে তলিয়ে গিয়েছি জানি না। তবে ঘুম থেকে উঠে এক অদ্ভুত বিষয় আমি আবিষ্কার করলাম।

চলবে।