#আমীরা
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব – ২
তুশবা আর সাবিরা র/ক্ত বমি করছে। প্রথমে ঘুম থেকে উঠে গাড়িটা শূন্য দেখে আমার ভেতরটা কেঁপে উঠে৷ এরপর গাড়ির বাইরে থেকে একটা শব্দ কানে ভেসে আসলো। সেখানে গিয়ে খেয়াল করলাম তুশবা আর সাবিরার নাক মুখ দিয়ে ব্লা/ড যাচ্ছে। নির্ঝর আর গাড়ির ড্রাইভার সেখানে অনুপস্থিত। মোবাইলের স্ক্রিন অন করে খেয়াল করলাম ৪ টা ৫৩ বাজে। গরমের রাত তো। রাতটা বেশ বড়ো। রাস্তা ফাঁকা থাকায় আমরা হয়তো দ্রূত ঢাকা থেকে বের হয়ে এসেছি। কারণ এ জায়গাটা একদম চেনা লাগছে না। কিছুটা আবছা জঙ্গলের মতো। ঘুটঘুটে অন্ধকারেই থাকত। কেবল গাড়ির হেড লাইটের জন্য অন্ধকারটা বুঝা যাচ্ছে কম। মোবাইলে এক বিন্দু নেটওয়ার্ক নেই যে নির্ঝরকে কল দিব। তুশবা আর সাবিরার অবস্থা দেখে আমার ভীষণ হাত,পা কাঁপছে। আমি কিছু বলার বোধ শক্তি পাচ্ছি না।
কিছুক্ষণ স্তব্ধতার মধ্যেই কাটল। তারপর লক্ষ্য করলাম নির্ঝর আর ড্রাইভার কোথায় থেকে যেন ছুটে আসতেছে। হাতে কিছু লতাপাতা নিয়ে। আমি নির্ঝরকে দেখে কিছুটা শক্তি পেলাম। আমি কিছুটা দ্রূত গলায় বললাম
“নির্ঝর তুমি কোথায় গিয়েছিলে? আর হাতে এসব কী? তুশবা ভাইয়া আর সাবিরা ভাবি রক্ত বমি করছে।”
নির্ঝর হাঁপাতে হাঁপাতে বলল
“ওদের কী যেন হয়েছে। তুশবা বললো এই জঙ্গল থেকে এ লতাপাতাগুলো এনে ওদের যদি রস করে খাওয়ায় তাহলে ওদের এ বমি কমে যাবে। তাই আমি আর গাড়ির ড্রাইভার মিলে এ লতাপাতা গুলো আনতে গিয়েছিলাম। একা গেলে চিনব না তো তাই ড্রাইভারকে সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম। তুমি ঘুমাচ্ছিলে তাই তোমাকে ডাকিনি। এখন রস করে খাওয়াব।”
নির্ঝরের এমন আজব আজব কথায় আমি অনেকটা অবাক হলাম। নির্ঝর এমন উদ্ভট কথা কেন বলছে! ডাক্তারের কাছে না গিয়ে এসব করছে কেন? আমি নির্ঝরকে কিছু বলার আগেই সে এবং ড্রাইভার মিলে লতাপাতা গুলো হাত দিয়েই চিপে চিপে রস বের করে তুশবা আর সাবিরাকে খাওয়ালো। সাথে সাথেই তাদের র/ক্ত বমি বন্ধ হয়ে গেল। আমার বিস্ময়ের গতি বাড়তে থাকল। এ সময় এত তাড়াতাড়ি আমি ঢাকা থেকে কীভাবে এখানে আসলাম? ঘন্টা দেড়েকে গাড়ি এত নিস্তব পাহাড়ী জায়গায় বা কেন পড়লো? এলোমেলো ভাবনা আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।
নির্ঝর আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলল
“নিশিতা গাড়িতে উঠো। তুমি, তুশবা আর ভাবী পেছনে বসো আমি সামনে বসছি। আর ভাবী আর ভাইয়ার দিকে একটু খেয়াল রেখো।”
আমার ভীষণ ভয় লাগতে শুরু করলো। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে প্রথমে আমি তারপর সাবিরা এরপর তুশবা উঠল। আর নির্ঝর সামনে বসলো। রাতের চাঁদটা লাল হয়ে আছে। মনে হচ্ছে এখনই অস্ত যাবে। চাঁদটার দিকে তাকিয়ে আছি আমি। গাড়িটা চলতে শুরু করল। বারবার কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ কানে আসতে লাগল আমার। এ শব্দটা কখনও ক্ষীণ হচ্ছে কখনও প্রখর। আমি নির্ঝরকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম
“কুকুরের ডাক শুনছো তুমি? কোথায় যেন মনে হচ্ছে কুকুর ডাকছে। শব্দটা গাড়ি চলার সময় যে শুরু হয়েছে এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। কোনো কুকুর কী গাড়ির পিছু নিয়েছে কি’না বুঝতেছি না।”
নির্ঝর হালকা গলায় বলল
“নিশিতা তুমি কেমন জানি অদ্ভুত কথা বলো। তোমার কী কিছু নিয়ে হ্যালুসিনেশন হচ্ছে? আমার তো মনে হয় তাই হচ্ছে তোমার। আমি তো কোথাও কুকুরের ডাক শুনছি না। এগুলো তোমার মনের মতিভ্রম।”
আমি কেবল হুম বলে কথার সমাপ্তি ঘটালাম। সরু রাস্তা দিয়ে গাড়িটা এগিয়ে যাচ্ছে। ক্রমশও আলো ফুটার পরিবর্তে অন্ধকার হচ্ছে চারপাশ। পাশ থেকে কেমন যেন শব্দ আসছে। মনে হলো তুশবা আর সাবিরার কিছু একটা হয়েছে। আমি বাইরে থেকে চোখ সরিয়ে তাদের দিকে তাকালাম। দুজনেই নীচের দিকে তাকিয়ে হাঁপাচ্ছে। আমি সাবিরার কাঁধে ধরে হালকা গলায় জিজ্ঞেস করলাম
“তোমার কী কষ্ট হচ্ছে?”
সাবিরা আমার দিকে তাকাল। তার চোখ দুটো রক্ত বর্ণ হয়ে আছে। আমি কিছুটা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম
“তোমার কি বেশি খারাপ লাগছে? চোখে কিছু হয়েছে?”
সাবিরা আমার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত একটা হাসি দিল। তার দাঁত দিয়ে র/ক্ত ঝড়তেছে। সে সাথে চোখ দিয়েও র/ক্ত ঝড়তেছে। ভয়ংকর হয়ে উঠছে তার চেহারা। আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে লাগল। একটা চিৎকার দিতে চেয়েও দিতে পারছিলাম না। অনেক কষ্ট করে জোরে একটা চিৎকার দিলাম। চোখটা বন্ধ করে পরক্ষণে খুলেই নিজে চমকে উঠলাম। নির্ঝর আমার চোখে মুখে পানি দিচ্ছে। চারপাশটা বেশ আলোকিত। আমি অবাক হয়ে নির্ঝরের দিকে তাকালাম। পাশেই তুশবা আর সাবিরা ভাবী বসা। তারা উত্তেজিত গলায় জিজ্ঞেস করল
“ঠিক আছেন ভাবী? আপনার হঠাৎ করে জ্ঞান চলে গিয়েছিল। আমরা ভেবেছিলাম ঘুমিয়ে গেছেন। সকাল হলো ঢাকাও পার হলাম। নাস্তা খেতে নামতে গিয়ে আপনাকে ডাকলাম সাড়া দিচ্ছিলেন না৷ ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এখন কী একটু ভালো লাগছে?”
সাবিরার কথা শুনে আমি কিছুটা অবাক হলাম। চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম ব্যস্ত রাস্তা। সবকিছু ঠিকঠাক। আমি হয়তো অতিরিক্ত চিন্তায় এসব স্বপ্নে দেখেছি। এমন কেন লাগছে জানি না। চুপ হয়ে এসব ভাবতেই লাগলাম। নির্ঝর আমাকে আস্তে গলায় জিজ্ঞেস করল
“তুমি ঠিক আছো তো? শরীর কেমন লাগছে?”
আমি ভাবনার অতল গহ্বর থেকে বের হয়ে এসে উত্তর দিলাম
“হ্যা ঠিক আছি।”
এরপর স্বাভাবিক হয়েই তাদের সাথে নামলাম নাস্তা করতে। নামার পরপরই অদ্ভুত একটা অনুভুতি আমাকে ঘিরে ধরল। সে সাথে অলৌকিক কিছু যেন আমাকে ডাকতে লাগল। আর….
শারমিন নিপা