আমীরা পর্ব-০৩

0
42

#আমীরা
#পর্ব-৩
#শারমিন আঁচল নিপা

আর আমি যেন বোধ শক্তি হারিয়ে ফেলছি। অদ্ভুতরকম অশান্তি লাগছে আমার। আমি নির্ঝরকে বিষয়টি বললে সে পাত্তা দিবে না। তাই তাকে বলার প্রয়োজন বোধ করলাম না।

এর মধ্যেই সবাই একটা হোটেলে বসলাম খেতে। সাবিরা আমার হাতটা চেপে ধরে তার পাশে বসালো। আমার দিকে তাকিয়ে মোলায়েম গলায় বলল

“ভাবী আপনি কি কিছু নিয়ে ডিপ্রেসড? আপনাকে কেন জানি না ঠিক লাগছে না। চোখে মুখে আতঙ্কের একটা ছাপ ফুটে আছে। কিছু নিয়ে কী ভয় পাচ্ছেন? অথবা কোনো বিষয় নিয়ে কী চিন্তিত? এমন কিছু হলে নির্দ্বিধায় বলতে পারেন আমি যতটা পারি আপনাকে সহজ সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করব।”

আমি হালকা একটা দম নিয়ে সত্যিটায় বললাম। এজন্য সত্যিটা বললাম যাতে করে সাবিরার চোখ মুখটার রিয়েকশন বুঝতে পারি। তাই নরম গলায় তাকে উত্তর দিলাম।

“আমি ট্রিপটাতে যেতে স্বাচ্ছদ্যবোধ করছি না। বারবার মনে হচ্ছে নেগেটিভ কিছু আমাকে ঘিরে ধরছে। মনে হচ্ছে ঐখানে যাওয়া আমার ঠিক হবে না। আর তোমাদের কালচারে গিয়ে আমি মানাতে পারব কি’না এটা নিয়েও আমি চিন্তিত। আমরা তোমাকে যেভাবে চিনি সেখানে তোমরা তেমন নও। তাই ভেতরটায় খচখচ করছে৷”

সাবিরা আমার কথা শুনে খুব একটা রিয়েকশন দিল না। হালকা হেসে জবাব দিল

” নতুন পরিবেশে যাওয়ার আগে অনেক কিছুই মনে হয় ভাবী। গেলে দেখবেন একদম ঠিক হয়ে গেছে। আমাদের আপ্যায়ন আপনাদের মু্গ্ধ করবে। আমরাও যখন চাকুরীর সুবাদে ঢাকায় আসি এমনি ভয় আর নেগেটিভিটি কাজ করেছে। এখন দেখুন না আপনাদের মতো মানুষদের সাথে কত সুন্দরভাবে হেসে খেলে জীবন পার করছি। ভাবী এটা নিয়ে একদম চিন্তা করবেন না। ”

আমি সাবিরার কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারও বললাম

“কিন্তু আমার মধ্যে কিছু অদ্ভুত পরিবর্তন আসতেছে। মনে হচ্ছে কেউ আমার আশেপাশে আছে। আমার শরীরটাও ভীষণ ভার ভার লাগছে।”

সাবিরা এবার কপাল কুচকে আমার চোখের দিকে তাকাল। বেশ কিছুক্ষণ আমাকে দেখল। আমার হাতটা ভালো করে দেখল। মনে হচ্ছে সে আমার শরীরে কিছু একটা খুঁজছে৷ আমি কিছুটা অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম

“কী করছো তুমি?”

সাবিরা হালকা গলায় জবাব দিল

“আমি তোমার শরীরে বিশেষ কোনো চিন্হ আছে কি’না খুঁজতেছিলাম। আমার মনে হচ্ছে তোমাকে কেউ জাদুটোনা করেছে। সাধারণত জাদুটোনা করলে এমনটা হয়। এটা যে ট্রিপে আসতেছো তাই এমন হচ্ছে তা’না। তুমি ট্রিপে না এসে বাসায় একা থাকলেও এমন হত। আর মন দুর্বল হলে জাদুর প্রভাব বেশিক্ষণ থাকে। তাই বলব মনটাকে শক্ত করে সুধারণা করতে থাকো। কিছু হবে না। তোমাদের সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতে থাকো।”

সাবিরা মেয়েটা সম্বোধনের বেলায় ভীষণ কাঁচা। কখনও তুমি কখনও আপনি বলে। তবে সাবিরার কথা শুনে আমার মনটা আরও বেশি খারাপ হতে লাগল। মনে হতে লাগল আমার সাথে এমন কিছু খারাপ হতে যাচ্ছে যেটা আমি কল্পনাও করতে পারছি না। আমাদের কথোপকথনের মাঝে নির্ঝর বেশ জোর গলায় সাবিরাকে বলে উঠল

” ভাবী কখন থেকে আপনারা দুজন আমাদের সামনে ফিসফিস করে কথা বলছেন। এটা কিন্তু ঠিক না ভাবী। হয় জোরে কথা বলুন নাহয় ফিসফিস করে কথা বলা যাবে না। আর কী খাবেন বলেন। অর্ডার দিই।”

সাবিরা হাসি মুখে উত্তর দিল

“থাক আর কথা বলব না। তবে মেয়েদের সব কথায় কান দিতে নেই ভাইয়া। কী আর খাওয়া যায়। রুটি, আর ডিম ভাজা আমার জন্য৷ আর ভাবী যা খায় ”

নির্ঝর এবার আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল

“কী খাবে?”

আমি লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে উত্তর দিলাম

“রুটি আর বুটের ডাল। যদিও কিছু খেতে ইচ্ছা করছে না।”

নির্ঝর নিজের জন্য রুটি আর হালুয়া অর্ডার দিল। তুশবা আর ড্রাইভার রুটি আর ডিম ভাজা নিল। আমাদের খাওয়ার পর্ব এখানে শেষ করে আবারও রওনা হলো গাড়িটা। গাড়িটা বেশ সময় নিয়ে চলছে।।তুশবা জানাল তাদের এলাকায় পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। শহর থেকে বেশ ভেতরে গ্রামটা।

স্বাভাবিক ভাবেই গাড়ি চলছে। এর মধ্যে আমার অস্বস্তি কিছুটা দূর হয়েছে। আমার বেশ রিলাক্স লাগছে এখন। সাবিরা আমার হাতের আঙ্গুলের মাথাগুলো এমনভাবে ম্যাসাজ করে দিচ্ছিল যার দরুণ আমার নেতিকবাচক অস্থিরতাটা অনেকখানিই হ্রাস পেয়ে যায়। গাড়ি বিরতিহীন চলে বান্দরবন শহরে পৌঁছায় বিকেল ৪ টায়। আমাদের এখানে দুপুরে খাওয়ার পালা। দুপুরে খেয়ে আমরা আবার রওনা দিব ৫ টা ৩০ এর দিকে। তুশবাদের গ্রামে পৌঁছাতে সন্ধ্যা সাতটা বেজে যাবে।

সবাই যথারীতি গাড়ি থেকে নামলাম। গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথে এক পাগল এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলল

“তোর কপালে অনেক বিপদ। সাবধানে থাকিস। শয়তান তোকে গিলে খাবে।”

পাগলের কান্ড দেখে নির্ঝর পাগলকে কিছুটা ধমক দিয়ে সামনে থেকে দূর করল। তবে আমার মনে অশান্তির বীজটা আবার বুনে দিয়ে গেল এ পাগল টা। বারবার মনে হচ্ছে হয়তো আমার কোনো বিপদ আছে সামনে। কিন্তু আবার মনে হয় আমাদের ধর্মে এসব ভবিষ্যৎ বাণী বলতে কোনো অধ্যায় নেই। ভবিষ্যৎ বাণী করার ক্ষমতা এ পাগলের নেই। এই ভেবেই মনকে স্বাত্ত্বণা দিয়ে খাবার হোটেলে গিয়ে বসলাম। যে যার মতো অর্ডার দিল। পর্যটক এরিয়া হওয়ায় বিভিন্ন রকমের খাবার এখানে পাওয়া যাচ্ছে। তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবারের সাথে সাথে আমাদের বাঙালি খাবারও। নির্ঝর অনেক কিছু অর্ডার করলেও আমি কেবল ভর্তা ভাত অর্ডার করেছিলাম। কারণ আমার মাথা ব্যথাটা আবার শুরু হতে লাগল। মনে হচ্ছিল একটু ঝাল খেলে ব্যথাটা কমবে।

খাবার পর্ব শেষ হলো। বিল পরিশোধ করে আমরা গাড়িতে বসতে বসতে ৫ টা ৪৫ বেজে গেল। গাড়িটা আবার চলছে। এবার আমার মাথায় মনে হচ্ছে….

চলবে।