আমীরা পর্ব-০৭

0
40

#আমীরা
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ৭

আমি একটা বদ্ধ জায়গায় শুয়ে আছি৷ সামনে তান্ত্রিকের মতো কেউ বসে আছে। একদম চুপ হয়ে মনে হচ্ছে ধ্যান করছে৷ আমি ভীষণ ভয় পেয়ে আবারও চোখ বন্ধ করে ফেললাম। চোখটা বন্ধ করে আবারও চোখ খুললাম। মনে হচ্ছে আমি যে জায়গায় আছি এটা কোনো উপসনার জায়গা হবে। চারপাশে মূর্তি। আমি শুয়া থেকে উঠতে পারছিলাম না। নিজেকে সামলে যখন উঠতে নিব ঠিক তখনই সাবিরা আমাকে ধরে বলল

“এখন উঠার চেষ্টা করো না। একটু পর উঠো। নাহয় নির্ঝর আবার ভর করবে।”

সাবিরার কথা শুনে আমি কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম৷ নিশ্চয় নির্ঝরকে এ মেয়ে বশ করতে চাচ্ছে। তাই আমাকে উঠতে দিচ্ছে না৷ আমি জোরে চিৎকার করে বললাম

“নিজেকে কী মনে করো তুমি? আমার নির্ঝরকে তুমি কেড়ে নিবে আমার কাছ থেকে? এটা কখনও করতে দিব না। ঐদিন তোমাদের সব কথা শুনেছি আমি৷”

সাবিরা আমার কপালে হাত বুলিয়ে বলল

“যা শুনেছো সব ভুল শুনেছো। তুমি প্লিজ উঠো না।”

কিন্তু আমি সাবিরার কথা শুনলাম না। দ্রূত উঠে দাঁড়ালাম। উঠতেই আচমকা একটা থাপ্পর খেলাম। পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখলাম নির্ঝর। আমি ওর এ পরিবর্তন দেখে একদম হতভম্ব হয়ে গেলাম। কিছু বলতে যাব। এমন সময় সাবিরা আমাকে পুনরায় শুইয়ে দিয়ে বলল

“ভাবী নির্ঝরের মাঝে একটা বাজে জিন আছে। যেটা তার মাধ্যমে আপনার সাথে মিলিত হতে চায়। আপনারা জিনে বিশ্বাস করেন তাই জিন শব্দটা ব্যবহার করলাম। আমাদের ভাষ্য মতে নির্ঝরের মধ্যে তাগল নামে একটা বিভৎস জা/নোয়ার বাস করছে। যে নির্ঝরের মাধ্যমে আপনার সাথে মিলিত হয়ে বংশ বিস্তার করতে চাচ্ছে। আর ঐদিন আমি নির্ঝরকে যা বলেছিলাম সেটা হলো আপনার সাথে প্রাতারণার ফল ভালো হবে না। আপনাকে সে জিন নির্ঝরের মাধ্যমে বিভিন্ন ঔষধ আর ইনজেকশন পুশ করে মিলিত হওয়ার জন্য শরীরটাকে তৈরী করছিল। তাই আমি নির্ঝরকে বলেছিলাম আপনার এ বিষয়টায় যদি সে সিরিয়াস হয় আমি সেটা হতে দিব না। যতবার সে সিরিয়াস হবে ততবার আমি ঝামেলা করব৷ আপনার খারাপ পরিণতি আমি সহ্য করতে পারব না। বেশি ঝামেলা করলে আমি এমন হাল করব যাতে করে সে মনে করে আপনাকে বিয়ে করাটা তার জীবনের ভুল। আর সবচেয়ে বড়ো কথা হচ্ছে নির্ঝর নিজেই তার শরীরের এ জিনকে বাস করতে দিয়েছিল অসীম ক্ষমতার লোভে। কিন্তু পরবর্তীতে সে এটা থেকে মুক্তি চায়লেও পারছিল না। জিনটা তার কন্ট্রোলের বাইরে চলে যায়৷ এটা থেকে মুক্তি পেতে সে যখন জিনকে জিজ্ঞেস করে কী চায় তখন সে জিন উত্তরে বলে আপনাকে যেন আমাদের গ্রামে আনা হয় এবং আপনার শরীরকে বিভিন্ন ঔষধ ও ইনজেকশনের মাধ্যমে তার সাথে মিলিত হওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়৷ একবার মিলিত হয়ে সে চলে যাবে। আর আপনার গর্ভে তখন একটি মেয়ে সন্তান আসবে যার নাম হবে আমীরা। আমীরা মূলত একটা ভয়ংকর নারী হবে। যে নিজের শক্তি হাসিলের জন্য একের পর এক হিংস্র কাজ করবে। এদিকে নির্ঝর নিজের বোধই হারিয়ে ফেলেছে। অন্য একটা সত্ত্বা নিজের শরীরে বহন করে সে অনেক বেশি ব্যথা সহ্য করছে। যেটা সে সহ্য করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। তাই বাধ্য হয়ে সে এটাতে রাজি হয়ে যায়। গতকাল আমি আপনার সকল ঔষধ এজন্যই ফেলে দিয়েছিলাম যাতে করে আপনার সমস্যা নাহয়। কারণ সে ঔষধে সে তাগল এমন কিছু মিশ্রিত করে রেখেছিল যেটা তার মতো জিনের বাচ্চা ধারণের জন্য আপনার শরীর যেন প্রস্তুত হয় তাই। গতরাতে আপনাকে নির্ঝর নিজের আয়ত্ত্বে করে মিলিত হয়৷ এখন যদি সবকিছুর গোড়া থেকে বিনষ্ট না করি তাহলে আপনার গর্ভে একটা ভয়ানক জা/নোয়ার আসবে।”

সাবিরার কথা শুনে আমি এবার আরও চমকে গেলাম। নিজেকে সামলে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করলাম সে স্বাভাবিক না। তাহলে এতক্ষণ আমার সাথে যা ঘটেছিল সেটা সব সত্যিই। অলৌকিক ঘটনা গুলো তাহলে মিথ্যা ছিল না। নির্ঝর আরও উত্তেজিত হয়ে আমাকে মারতে এসে নিজেই লুটিয়ে পড়ল মাটিতে। আমার এবার ভয়টা আরও বাড়তে লাগল। শরীর টা কাঁপতে লাগল। তুশবা দাঁড়িয়ে কী যেন পড়ছে। পড়ে নির্ঝরকে ফুঁ দিল। ফুঁ দেওয়া শেষ হলে সে বলে উঠল

“এটা আপনাদেরেই কুরআনের আয়াত। আমরা আপনাদের কুরআন নিয়ে অনেক আলোচনা করি। কারণ আমাদের এখানের সবাই কালাজাদুতে আসক্ত ছিল। কালা জাদু বিনষ্ট করতে আমাদের কুরআনের আয়াত শেখানো হত। এখন অবশ্য আমাদের এলাকায় কালাজাদুর রিতীটা উঠে গেছে। তবে কালা জাদু শিক্ষা এবং বিনষ্ট করার পদ্ধতি আমরা জানি৷ ভাবী আপনি এবার উঠে সাবিরার সাথে যান। আমি নির্ঝরকে নিয়ে আসতেছি।”

কী থেকে কী হচ্ছে। আর আমি কী করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। সাবিরা আর তুশবাকে বিশ্বাস করা ছাড়া আমার উপায় নেই। আমি সাবিরার সাথে চলে আসলাম। ঐটা একটা গুহা ছিল যেখানে তান্ত্রিক থাকত৷ মূলত ওদের তান্ত্রিক এসব ব্যাপারে খুব পটু। তাই আামকে সেখানে নেওয়া হয়েছিল। আমি ঘরে ফিরে শুধু চিন্তায় করতে লাগলাম। আমার জীবনে এসব কী হচ্ছে? কেন হচ্ছে? আমি আসার ঘন্টা দেড়েক পড় নির্ঝর আর তুশবা আসলো। নির্ঝর এবার বেশ স্বাভাবিক। তাকে দেখে মনে হচ্ছে এতক্ষণ যা ঘটেছে সে ভুলে গেছে। কারণ তার দেওয়া থাপ্পরে গালটা ফুলে গিয়েছিল। সে সেই ফুলা গাল দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল

“তোমার গালে চড়ের দাগ কী করে হলো। কে চড় দিয়েছে?”

আমি আমতা আমতা করে বললাম

“চড় না আঁচড়ে পড়েছিলাম সেটার দাগ।”

“ওহ আচ্ছা তাই বলো।”

উদাসীন হয়ে আর কথা বাড়াল না। সারাটা দিন নির্ঝর একদম স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে ভয়ংকর এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হলাম।

চলবে।