সে আমার অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-০৬

0
47

সে_আমার_অর্ধাঙ্গিনী

পর্ব – ৬
লেখক রিহান অরণ্য

মা হয়ে মেয়ে কে বিধবা করে অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে মেয়ের সুখ দেখতে চাও তোমরা, যদি তাই হয় আমি বিধবার পোশাক পরে বিয়ে করবো, লুবনার মুখে এসব কথা শুনে ওর আম্মু লুবনা কে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, আমার কথা গুলো মনোযোগ সহকারে শুন, সানির কিছুই হয়নি ওরে শুধু আটকিয়ে রাখছে তর বাবা যাতে তর বিয়ে টা হয় আর বিয়ে হয়ে গেলে সানির থেকে ডিভোর্স সাক্ষর করিয়ে ওর মার কাছে ওরে দিয়ে দিবো,
লুবনা তুই একবার চিন্তা কর কোন দিনের কোন ঘটনা নিয়ে এতো দিন পর সে এইখানে এসেছে তরে বউ দাবি করার জন্য, যেই দেখছে তুই ডাঃ সেই তর জন্য এইখানে এসে ঝামেলা করা শুরু করছে, তাই তর বাবা ওরে আটকিয়ে রাখছে,
তখন লুবনা বললো কোথায় আটকিয়ে রাখছে এখন ছেড়ে দিতেন বলেন, ওর মা এসেছে, যদি এখন ওরা সানি কে না পায় তাইলে ওরা পুলিশ নিয়ে আসবে, আর আলমারিতে লক দিলেন কেন খুলেন কি আছে আলমারি তে দেখি, অনেক জোরাজোরি পর লুবনা আলমারি এক সাইড ভেঙ্গে ফেলছে, লুবনার আম্মু বাঁধা দেওয়াতে লুবনা জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে গিয়ে লুবনার আম্মু দেওয়ালে মাথা বাড়ি লেগে অনেক র*ক্ত ঝরতে লাগলো, লুবনা র*ক্ত দেখে চিক্কার শুরু করলো বাসার আসেপাশে যারা আছে তাদের সাহায্য নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেছে,

মাথায় আঘাতে অনেক র*ক্তক্ষরনের কারণে হাসপাতালে নিবার আগেই মা*রা গেছে, লুবনার আব্বু আর ওর ছোট বোন বাসায় এসে দেখে ওরা হাসপাতালে গেছে,
লুবনারা যেহেতু নানার বাড়িতে থাকে , সাথে সাথে সেখানে ওর মামা ফোন দিয়ে পুলিশ নিয়ে এসেছে, লুবনার মামা পুরনো প্রতিশোধ নিবার জন্য লুবনার বাবা কে দায়ি করে লুবনার আম্মুকে নাকি লুবনার বাবা খু*ন করছে, ( মূলত লুবনারা যে বাসায় থাকে ওই বাসায় ১ টা ফ্ল্যাট জন্য লুবনার আম্মু তার ভাগের সম্প্রতি হিসেবে একটা ফ্ল্যাট নিতে বলছে,এসব নিয়ে লুবনার বাবার সাথে লুবনার মামাদের একটা ঝামেলা ছিলো)

কিন্তুু এই ঝামেলা থেকে লুবনার বাবা বেচে গেলে ও লুবনা বাচতে পারে নাই, লুবনা কে পুলিশ নিয়ে গেছে,,

অন্য দিকে আমার আম্মু লুবনা কে ফোনের উপর ফোন দিতে থাকলো কিন্তুু ফোন রিসিভ করেনা, ( লুবনার ফোন ওর বাসায় রেখে হাসপাতালে গেছে তার পর তারে পুলিশ নিয়ে গেছে ফোন আর লুবনার সাথে ছিলো না )

আম্মু যখন লুবনা কে ফোনে পায়না তারা চিন্তা করলো আজকের দিন টা দেখে কাল সকালে পুলিশ নিয়ে তাদের বাসায় যাবে, সব কিছু ওরা রেডি ও করে রাখছে, কিন্তুু রাত ৯ টা ৩০ মিনিট পর আমার ফোন পেয়ে ওরা আর অন্য কোন চিন্তা না করে আমাকে নিয়ে ওরা বাড়ি চলে আসলো,
________________________________
এখন বলি আমি কি ভাবে আসলাম,
_________________________________

আমাকে আটকিয়ে যখন ওরা সবাই চলে গেছিলো, তখন আমাকে দেখার জন্য ওরা মধ্যবয়স্ক এক জন লোক রাখছে,সে প্রতিদিন ৩ বেলা করে আসতো সকাল
দুপুরে আর রাতে, আমার কাছে ঘরি ছিলোনা কিন্তু সময় টা মার্ক করে রাখছি,

আমাকে খাবার দিবার জন্য যে জানালা ছিলো সেটা দরজার পাশেই হাত দিয়ে নাগাল পাওয়া যায় না, আমাকে এক জন চোখের ইশারা দিয়ে যে চাবি টা দিছিলো সেইটা আমি তালা দেখে ১০০% সিওর ছিলাম যে এটা এই দরজার চাবি,
এই ভাবে প্রতিদিন দুপুরের পর থেকে চেষ্টা করতাম কিভাবে খোলা যায়, দুপুরের পর চেষ্টার কারন হলো দুপুরের পরে ওই লোকটা আসে রাতে একটু টাইম বেশি সে জন্য তখন চেষ্টা করতাম, হাত বাড়িয়ে তালা পর্যন্ত নাগাল পাইতাম না একটুর জন্য,, প্রতিদিন এইভাবে চেষ্টা করে ব্যর্থ হইতাম,
এক দিন বিছানার চাদর রশির মতো শক্ত করে তালাটা হাতে একটু কাছে নিয়ে এসেছি, চাবিটা ঢুকিয়ে তালা খুলে ফেলছি, কিন্তুু ছিটকিনি খোলতে পারছিলাম না ওই পর্যন্ত হাত যায় না,আর এটা খুলতে হলে শক্ত কিছু লাগবে, তাই খাট ভেঙে ফেললাম, লম্বা একটা কাঠের টুকরো দিয়ে ছিটকিনি খুলে বাহিরে বের হয়ে আসলাম, আসতে আসতে আসেপাশে কি আছে দেখতে লাগলাম কিন্তুু বাড়িটা এমন ভাবে করা হয়েছে একটাই গেইট তাও তালা লাগালো, এই তালা না খুললে আমি বাহিরে যাইতে পারবো না, এখন আরেক চিন্তায় পরে গেলাম এইখান থেকেই বার হবো কেমনে, বাহিরে তাকিয়ে দেখি সন্ধ্যা হয়ে আসলো, আশেপাশে কোন মানুষ নাই,
রাতে তো ওই লোকে আসবে আমাকে এই অবস্থায় দেখলে সমস্যা হবে, হাতে বেশি সময় নেই যা কারার তারাতাড়ি করতে হবে, গেইট থেকে ২ টা দরজা পার করে আমাকে যেখানে আটকিয়ে রাখছে সেখানে যেতে হয়, সব কিছু মার্ক করতে লাগালাম, মেইন লক টা খুললে ভিতর থেকে তালা দিবার সিস্টেম আছে আবার লক রাকার সিস্টেম ও আছে, লোক টা যদি তালা না মেরে লক করে রাখে তাইলে আমার কপাল ভালো হবে আর না হয় বিপদ আরো বারবে,
এখন আমি কোথাও লুকাবো সেই চিন্তা করছি, দরজার পাশে দাড়াতে পারবো না কারন লোকটা দরজা খোলা রাখবে না, দরজা লাগিয়ে তার পর যাবে,,

সব দিক চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিলাম প্রথম যে রুম সেই রুমে পোরানো কিছু জিনিস আছে সেই আসবাপত্র মধ্যে কোথাও আমাকে লুকাতে হবে ওনি যখন এই রুম লক করে অন্য রুমে চলে যাবে তখন আমি বার হয়ে মেইন গেইট যদি তালা না থাকলে পালিয়ে যাবো,

সন্ধ্যা হয়ে গেছে আমি গোসল করে নতুন জামা কাপড় পরে, টয়লেট লাইট অন করে রাখলাম ( যাতে ওই লোক এসে মনে করে আমি টয়লেটে ) বাহির থেকে তালা দিয়ে খাট ভেঙে যে কাঠ দিয়ে দরজা খুলছি ওই কাঠ সাথে নিলাম যদি মেইন গেইট তালা দিয়ে রাখে তাইলে তো সমস্যা পরবো তাই সাথে রাখলাম, রাত হয়ে গেছে দূর থেকে ট্রেন চলার শব্দ শুনতে পেলাম, কিন্তুু কোন দিকে সেইটা জানি না, দূর থেকে একটু একট লাইট ও জ্বলে দেখা যাচ্ছে, বাহিরে গিয়ে কোথায় যাবো কোন দিকে যাবো সেইটা না জানলে সমস্যায় পরে যাবো আবার, তাই ভালো করে মার্ক কতে থাকি কোন দিকে লাইট বেশি,

মন ছটফট করতে লাগলো, একটা সময় বুঝতে পারলাম লোকটা আসিতেছে, আমি আমার জায়গা মতো দাড়িয়ে গেলাম, লোকটা রুমে ডুকেই দরজা লাগিয়ে আমি যে রুমে ছিলাম ওই রুমের দিকে যাওয়া শুরু করলো সেই ফাকে আমি বার হয়ে মেইন গেটে চলে আসলাম দেখি তালা নাই আমি বার হয়ে সোজা দৌড়ে সামনের দিকে যেতে লাগলাম, কিছুখন যাবার পর কোথাও আর কোন আলো দেখতে পাচ্ছি না,

ভাবছি রাতে বেশি দূরে না গিয়ে কোথাও রাত কাটিয়ে সকালে রাস্তা খুজে বের করে চলে যাবো,

শান্ত হয়ে একটা জায়গায় বসে রইলাম, কিন্তুু ট্রেন চলার শব্দ পাচ্ছি, তার মানে আসে পাশে রাস্তা আছে, আমি ট্রেনের শব্দ শুনে ওই দিকে হাটা শুরু করলাম ১০ মিনিট ও লাগে নাই আমি মেইন রাস্তায় চলে এসেছি, জায়গা টা কোথায় চিনতে পারলাম না,

সাথে কোন টাকা নাই কিছু নাই কেমনে কি করবো, বিকাশ দোকন খুজতে লাগলাম আম্মু কে ফোন দিয়ে টাকা এনে বাড়ি চলে যাবো, অবশেষে একটা দোকান পেলাম , দোকানদার কে বললাম এক মিনিট ফোন করে আপনার দোকানে টাকা আনতে পারবো কি না, ওনার কাছে নাম্বার দিলাম ওনি আম্মু কে ফোন দিয়ে আমাকে ধরিয়ে দিলো ফোনটা, আমি আম্মু কে ফোন দিবার সাথে সাথে আম্ম জিজ্ঞেস করলো আমি কই আছি ঠিকানা দিতাম, আমি বললাম এটা কোথায় আমি জানি না তুমি ৩০০০ টাকা পাঠাও এই নাম্বারে আমি বাড়ি যাবো টাকা নাই, আম্মু বলতে আমরা তর খুজে চিটাগং আছি এখন বাবা তুই ঠিকানা খুঁজে দে আমরা আসবো তরে নিতে,আমি আম্মু কে বললাম এই জায়গায় বেশি থাকা যাবে না,তুমি টাকা দাও আমি পরে ফোন দিবো,

আম্মু টাকা পাঠিয়ে দিলো, টাকা টা নিয়ে দোকানদার কে জিজ্ঞেস করলাম সিলেট যাবো কোন দিয়ে,দোকানদার বললো এখান থেকে যাইতে পারবা না, এখান থেকে তোমাকে সিএনজি করে বাস কাউন্টারে যেতে হবে, একটু সামনে গেলে সিএনজি পাবা, আমি সামনে এগিয়ে সিএনজি ঠিক করলাম ২০০ টাকা দিয়ে, বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে, সিলেট টিকেট কিনে একজনের ফোন দিয়ে আম্মু কে বললাম আমি সিলেট চলে যাচ্ছি আপনরা বাড়ি চলে যান আমি সিলেট থেকে পরে বাড়ি চলে যাবো,
________________________________________

অবশেষে বাড়িতে ফিরলাম, সবাই অনেক কান্নাকাটি করছে,
আমার এলাকা জুড়ে খবর হয়ে গেছে সানির বউ আছে, কিন্তুু সেই বউ সানির সংসার করবে না,এসব এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে গেছে,
বাড়িতে যাবার পর আম্মু বললো লুবনা নাকি সব জানতো তাই সে তাদের ফোন রিসিভ করে নাই, আর ফোন ও দেয় নাই, আম্মু বললো আর কোন দিন ওই দিকে যাবি না, বাড়ির সবাই, ফ্রেন্ডরা ও রিকুয়েষ্ট করলো ওই দিকে যেন আর না যাই,
নতুন ফোন কিনলাম আগের সিমকার্ড টা রিপ্লেস করলাম,
আগের ফোনের সব নাম্বার Gamil সেব করা ছিলো তাই নতুন ফোনে সবার নাম্বার চলে এসেছে, প্রথমে লুবনার আম্মুর নাম্বার টা চেক দিলাম,সেব করা আছে নাকি, নাম্বার পাইলাম
কিন্তু এখন ফোন দিবো না ফোন দিবো বাহিরে গিয়ে আম্মু যাতে টের না পায়,

২ দিন পর নাম্বারে ফোন দিলাম ফোন দরলো লুবনার আব্বু, আমি পরিচয় দিতেই ফোন কেটে বল্ক করে দিলো,
আমি অন্য নাম্বার দিয়ে যতোবার ফোন দিছি ততোবার আমার কন্ঠ শুনেই ফোন কেটে দিয়ে ব্লক করে দিতো,

এখন কোন উপায় না দেখে ছোট বোন কে রিকুয়েষ্ট করে তার নাম্বার দিয়ে ফোন দিতে বলছি, আর শিখিয়ে দিছি কি কি বলবে, কিন্তুু এইবার ও লুবনার আব্বু ফোন দরলো, ( তখনো আমরা কেউ জানতাম না যে লুবনার আম্মু মা*রা গেছে,)

কোন ভাবেই যেহেতু আর কোন খুঁজ পাচ্ছি না তখন মন থেকে আশা ছেড়ে দিলাম, আর আকাশে দিকে তাকিয়ে বলে দিলাম আমার চেষ্টা কম ছিলোনা, আমার জীবন কেরে নিতে চাইছে তার পর ও আমার ৩ কবুলের সন্মান রাখতে চাইছি,কিন্তু পারলাম না, আমাকে ক্ষমাকরে দিও,

এই দিকে আমার মনের অবস্থা দেখে বাড়িতে সবাই সিদ্ধান্ত নিলো আমাকে বিয়ে করাবে, আম্মু আমাকে বললো এইসব চিন্তা বাদ দিয়ে মেয়ে দেখতেছি, পছন্দ হলেই বিয়ে,আমি বললাম আপনি যা ভালো মনে করেন,

এই জায়গায় ওই জায়গায় মেয়ে দেখতে দেখতে ১ মাসের বেশি সময় চলে গেছে, এক জায়গায় মেয়ে পছন্দ হয়েছে,

কিন্তুু মেয়ের ১মাস পর ফাইনাল পরিক্ষা তাই ওরা আন্টি পরিয়ে রাখতে বলছে, পরিক্ষা শেষ হলে বিয়ে,
মেয়ের বাড়ি থেকে ও আমাকে দেখে গেছে,

আন্টি পড়ানো শেষ, পরিক্ষা পর বিয়ের ডেট ফিক্সড হবে,

আমার সাথে যে বন্ধুটা চিটাগং গেছিলো ( রানা ) সে এসে বলতাছে সেষ পর্যন্ত বিয়েটা করে ফেলবি,
একবার লুবনা ভাবির খবরটা নিয়ে দেখতি,, আমি বললাম আর কি খবর নিবো তুই তো সাথে ছিলে ওইদিন লুবনা আম্মুর ফোন ধরে নি আর এতোদিন হলো একবার ও ফোন দেয়নি,ওরা আমাদের মতো মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখবে না রানা,

আমার কথা শুনে রানা বললো, আমি কিছু কথা বলি,
লাস্ট যেদিন ভাবি আমাদের কাছ থেকে যায়,সেই দিন তর আম্মু কে কি বলে গেছে জিজ্ঞেস কর তর আম্মু কে , তাইলে বুঝতে পারবি,আমি শুনছি কি বলছিলো,আমি বলালম কি বলছে লুবনা, তখন রানা বললো ভাবি বলে গেছিলো আমি যদি না আসি, আর আমার কোন খুঁজ না পান তাইলে পরের দিন আপনারা পুলিশ সাহায্য নিয়ে আমাদের বাসায় আসবেন,

সত্যি ভাবি বাসায় যাবার পর কোন খুজ আমরা পাইনি ফোন ধরেনি, আর আমারা ও সিদ্ধান্ত নিছিলাম সকালে পুলিশ নিয়ে ওই বাসায় যাবে, তার আগেই তর ফোন পেয়ে আমারা সবাই
চলে আসলাম, এটা আমাদের ভুল ছিলো ভাবি আমাদের অনেকে সাহায্য করছে, তর জন্য কান্না ও করছে, আর আমরা তার খুঁজ না নিয়ে চলে আসলাম, ভাবি কে জোর করে বিয়ে দিতে চাইছে ছেলে ও নাকি দেশে চলে এসেছে,

এই কথা শুনে এখন আমার মন গেলো অন্য রকম হয়ে,
আমি বাসায় গিয়ে মার ফোন থেকে লুবনার নাম্বার ফোন দিলাম কিন্তুু ফোন বন্ধ, তার মানে লুবনার ওই ছেলের সাথে বিয়ে হয়ে গেছে,

জোর করে বিয়ে দিয়ে দিছে, তা না হলে ফোন বন্ধ থাকতো না,

_____________________________________

সবাই কমেন্ট করে জানাবেন, তাইলে পরবর্তী পর্ব দিবো,