সে আমার অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-০৯

0
49

সে_আমার_অর্ধাঙ্গিনী
পর্ব -৯
লেখক রিহান অরণ্য

আমার ডিভোর্স লেটার আসার খবরে
বেসামাল হয়ে বাইক চালানোর কারণে এক্সিডেন্টে হয়ে অচেতন অবস্থায় ছিলাম, প্রথমে আমাকে আমাদের জেলা হাসপাতালে নিবার পর ইমারজেন্সি আমাকে ঢাকা হাসপাতালে পাঠানো হয়, তখন ও আমি অচেতন অবস্থায় ছিলাম, ভোর রাতের দিকে আমাকে ঢাকা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়, সাথে আমার বোন ছিলো আরো অনেকেই ছিলো, আন্মু টাকার ব্যবস্থা করে সকালে আসবে,

এম্বুলেন্স বসে আমার বোন আমার এক্সিডেন্টে খবর টা তার ফেসবুক আইডি থেকে আমাকে টেগ করে পোস্ট করছে,
সকাল বেলা অনেকই জিজ্ঞেস করছে কই আছি কি অবস্থা আমার, সবার কমেন্টে রিপলে দিছে যে আমাকে ঢাকা নিয়ে গেছে, যারা ঢাকা ছিলো তারা ও জানতে চাইলো ঢাকা কোন হসপিটাল, সবাই কে রিপলে দিলো এভারকেয়ার ইমার্জেন্সি বিভাগে।

লুবনা সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন আমার ফেসবুক লগিং করছে তখন সে দেখতে পাইছে পোস্ট টা, সব কমেন্ট গুলা চেক করছে্ ওই দিন লুবনার অফ ডে ছিলো, তা ছাড়া এতোদিন আমার মেসেজ টা দেখেও কেন রিপলে করে নাই, কারন সে চায়নি আমার সংসার অশান্তি হোক, আর মেইন হলো লুবনা সাভার ক্যান্টনমেন্ট একটা সৈনিক সাথে বিয়ের কথা চলছে,ছেলের বাড়ি সিলেটে, আজকে ছেলের ভাই আর ভাবি আসার কথা লুবনা কে দেখার জন্য,

কিন্তু সকালে যখন আমার খবরটা দেখছে, তখন থেকে সে পাগলের মতো ছটফট করতে লাগলো, সে খুজতে লাগলো ওই হাসপাতালে তার পরিচিত কোন ডাঃ আছে কি না,
অবশেষে ২ জন কে পাইলো একজনের ডিউটি রাতে আরেক জন এখন ডিউটিতে আছে, যে ডিউটি তে আছে তার সাথে যোগাযোগ করলো, যার সাথে যোগাযোগ করলো সে আমাকে খুঁজে বের করে লুবনা কে আপডেট দিলো যে অবস্থা ভালো না,, এই কথা শুনে লুবনা বললো মিমি তুমি খেয়াল রাখো আমি আসতেছি, ( মিমি হলো ডাক্তারের নাম লুবনার পরিচিত) সাভার থেকে লুবনার আসতে একটু সময় লেগে গেছে রাস্তায় অনেক জেম,, ২/৩ টার দিকে মনে হয় সে এসেছে, ডাঃ ইউনিফর্ম পরে,

প্রথমে আমার কাছে গেলো আমি তখন ও অচেতন, বাহিরে আমার বোন মামা আরো অনেক আছে, তারা লুবনা কে চিনে না, লুবনা ডাঃ সেজেই আমার বোনের সাথে কথা বলছে, আমার আম্মুর কথা জিজ্ঞেস করছে আমার বোন বললো আন্মৃু রাস্তায় আছে, লুবনার মনে ভয় আম্মু যদি ওরে চিনে ফেলে, তাই লুবনা মাক্স পরে হাসপাতালের ডাক্তারদের সাথে ছিলো, লুবনা মনে মনে আমার বউকে খুজতে লাগলো,
তারে দেখছে না,সে ভাবছে হয়তো আমার আম্মুর সাথে আসবে, এই দিকে অপারেশনের জন্য সাক্ষর দরকার, মা নেই তাই বোন সাক্ষর দিছে, আর আমার বউ জায়গায় লুবনা সাক্ষর করছে, কিছুক্ষণ পর আম্মু এসেছে, আম্মুর সামনে লুবনা মার্ক্স পরে গেছে কিন্তুু চিনতে পারেনি কারণ লুবনা এখানে আসবে এই ধারণা আম্মুর মনে আসবেই না,

সন্ধ্যা হয়ে আসলো লুবনার বোন বাসায় একা, আবার ওই ছেলে ফোনের পর ফোন দিয়ে যাচ্ছে লুবনা কে, কারণ আজকে তার ভাই আর ভাবি লুবনা কে দেখতে আসার কথা,

আমাকে কেবিনে সিফ্ট করার পর লুবনা বাসায় চলে যাবে কারণ তার বোন বাসায় একা, কিন্তু সে আবার সকালে আসবে, তাই মিমি ওরে যাইতে না করে, ওর বাসায় থাকতে বলে, মিমির আবার জামাই আছে, ওর জামাই হাসপাতালে মিমি কে যখন নিতে এসেছিলো তখন লুবনা কে রাতে এতদূর যেতে না করছে, লুবনা তার বোন কে ফোন দিয়ে বলছে রুমের দরজা লাগিয়ে রাখতে কেউ আসলে যেন না খুলে,সব কিছু শিখিয়ে দিছে, এর আগে ও লুবনার বোন একা একা ছিলো লুবনা যখন চিটাগং কোর্টে হাজিরা দিতে গেছে,

মিমির রিকুয়েষ্ট লুবনা তার বাসায় থেকে গেছে, আর মিমির ও আগ্রহ আমি ওর কি এমন হই যার জন্য লুবনা এতদূর থেকে এখানে চলে এসেছে, রাতে লুবনা মিমির বাসায় যাবার পর সে মিমি কে সব কিছু শেয়ার করে, মিমি লুবনার কথা শুনে বললো তুমি এতো ধৈর্য কেমনে ধরে ছিলা আমি হলে পারতাম না, আর তোমার উচিত বর্তমানে যারে বিয়ে করবা তারে সব কিছু শেয়ার করা, আর লুবনা তুমি না বললা পেশেন্টের বউ আছে তাইলে ওর বউ কে তো দেখি নি, ওর বউ নাম লিখে তুমি সাক্ষর করছো, লুবনা বললো তখন এতো সময় ছিলো না কারো জন্য অপেক্ষা করা তাই সাক্ষর করছি, আর আমি তো তার বউ তাই না,মিমি বললো হ তবে সেইটা এইবার প্রকাশ আনো, লুবনা বললো না, তার বউ আছে আমি চাইনা অন্য কারো সংসার নষ্ট করতে, তবে কাল কে ওর বউ কেন আসলো না জিজ্ঞেস করবো,, এসব নিয়ে মিমি আর লুবনা কথা বলতাছে এই দিকে মিমির জামাই বার বার মিমি কে ডাকছে কইগো,, বার বার ডাকবার পর মিমি এইবার উত্তর দিলো, বেডা মানুষ বউয়ের বান্ধবী আর বউ কে এক সাথে দেখলে ওদের পাওয়ার আরো বেড়ে যায়, লুবনা তুমি শুয়ে থাকো আমি একটু আসি,এইবার লুবনা বললো একটুর জন্য না সারা রাতের জন্য যাও সকালে গোসল করে তার পর নাস্তা বানিয়ে আমাকে ডাক দিয়ো আমি একা একটু ঘুমাই, এই কথা শুনে মিমি হাসি দিয়ে বললো Good Night 🥰,

সকালে মিমি আর লুবনা ২ জনে হাসপাতালে গেছে, লুবনা মাক্স পরেই ছিলো কারন আম্মু চিনে ফেলবে তাই, আমাকে একটা ফেমিলি কেবিন সিফ্ট করছিলো, হাসপাতালে এতো মানুষ কই থাকবে তাই হোটেলের ২ রুম ভাড়া করছে, আমার বোন রাতে ঘুমাইছে আর আম্মু রাতে জেগে ছিলো এখন আম্মু ঘুমাতে গেছে, আমার পাশে আমার বোন আর বাহিরে মামা, আর কিছু আত্মীয় স্বজনরা,

লুবনা হাসপাতালে ডুকেই আমার কাছে আসলো তখন আমি ঘুমাচ্ছিলাম, আমার বোন পাশে ছিলো, তখন লুবনা জিগ্যেস করলো কিভাবে এক্সিডেন্টে হয়েছে, আমার বোন বললো বাইকে তার পর কেমনে কি যানি না, লুবনা জিজ্ঞেস করলো তোমার আন্মু কই বোন বললো মা ঘুমাতে গেছে দুপুরের পর আসবে, লুবনা এই সুযোগে সব কিছু খুজ নিতে শুরু করলো,
প্রথমে জানতে চাইলো তোমার ভাইয়ার বউ আসেনি হাসপাতালে, আমার বোন বললো মেডাম ভাইয়ার বউ নাই, লুবনা মনে মনে বললো বউ নাই মানে কি সানি তো৷ বিয়ে করছে তাইলে বউ কই গেলো, এখন আরো কৌতূহল জেগেছে লুবনার কি হয়ে জানার জন্য, লুবনা বললো তোমার ভাই কি বিয়ে করেনি,আমার বোন বললো বিয়ে করছে কিন্তুু ওই মহিলার অন্য জায়গায় পিরিত ছিলো তাই ভাইয়া কে রেখে চলে গেছে, এখন লুবনা অবাক হয়ে গেছে, কি বলবে কোন ভাষা খুজে পাচ্ছে না,

মনে মনে ভাবতে লাগলো আমি ওর পোস্ট দেখে যদি ওরে ফোন দিতান তাইলে আমার লাইফে অন্য কেউ আসতে পারতো না, কি করবো এখন, ওই ছেলেকে কেমনে না করবো, এসব নিয়ে লুবনা চিন্তায় পরে গেলো, মামা যখন আমার ছোট বোনকে ডাক দিলো তখন সে বাহিরে গিয়ে মামার সাথে কথা বলে যখন কেবিনে ডুকলো কেবিনে কেউ না থাকায় লুবনা আমার চুলে হাত দিয়ে কান্না করছে আমি কিছুই টের পেলাম না, আমার বোনে এই দৃশ্য দেখে জিজ্ঞেস করলো মেডাম কি হয়েছে আপনি কান্না করেন কেন,লুবনা জবাব দিলো কই কান্না করছি, চোখে পানি দিছি তাই হয়তো এমন টা ভাবছো,

লুবনা কে বাসায় যেতে হবে ওই ছেলে বার বার ফোন দিচ্ছে আর লুবনার বোন ও বাসায় একা,৷ তাই মিমি কে ডেকে বনলো মিমি আমাকে যেতে হবে ওই দিকে ছেলেটা সমস্যা করছে, আর পাইভেটে জব তুমি তো জানোই কেমন, আর সানির আম্মু আমাকে দেখলে সমস্যা হবে, আমি চলে যাই তুমি ফোন দিয়ো আমাকে যদি কোন সমস্যা হয়, মিমি বললো। ঠিক আছে যাও কোন সমস্যা হলে ফোন দিবো,

লুবনা চলে গেছে, বাসায় যাবার পর নাকি ছেলেটি ওর সাথে দেখা করছে, কেন সে এমন করলো কই ছিলো রাতে এসব নিয়ে রাগারাগি করছে, লুবনা ছেলেটা কে বললো। আমাকে কিছু দিন সময় দিন তার পর বিয়ের চিন্তা ভাবনা,
এই কথা শুনে ছেলেটি লুবনার উপরে রেগে গেছে, সে বার বার জানতে চাইলো কার কাছে গেছিলো লুবনা,এখন বলতে না হলে সমস্যা হবে নানান কথা, লুবনা এক পর্যায়ে সব বলে দিছে, তখন ওই ছেলেটি নাকি লুবনা কে বাজেভাবে কথা বলছে, এখন ওই ছেলের একটাই কথা লুবনা যেন আমাকে ডিভোর্স দেয়,তার পর ও ওই ছেলে লুবনা কে বিয়ে করবে,

লুবনা তাতে সম্মতি দেয় না ওর একটাই কথা যে এখন বিয়ে করবে না, ওই ছেলে হু*মকি দিয়ে গেছে সে নাকি দেখে নিবে, লুবনা বাসায় গিয়ে রাতে মিমি কে ফোন দিলো কিখবর জানার জন্য, মিমি বললো। সানি ভাইয়া চোখ খুলছে কিন্তুু কথা বলে নি,২ দিন সময় লাগবে, তখন লুবনা বললো মিমি তুমি একটু হেল্প করো না, সানি যতোদিন থাকবে ততোদিন আমার জন্য থাকার ব্যবস্থা করে দাও, আমি আমার বোন কে আমার ফুফর কাছে রেখে আসবো, আর হাসপাতাল থেকে ৭ দিনের ছুটি নিছি, মিমি বললো ঠিক আছে আসো তুমি, পরের দিন রাতে লুবনা হাসপাতালে এসেছে, মিমির বাসায় না গিয়ে সরাসরি হাসপাতালে এসেছে আমার কাছে, তখন আম্মু ছিলো না, আমাকে নাকি এক নজর দেখে মিমির বাসায় চলে গেছে,
পরের দিন সকালে আবার আসলো তখন আমি সবার কথা শুনতে পাচ্ছি কিন্তু জবাব দিতে পারছি না চোখ বন্ধ করে আছি, আম্মু বাড়ি যাবে এক দিন পর আসবে, সবাই কে বলে গেছে ডাক্তার কে ও ডেকে বলে গেছে, তখন ওইখানে লুবনা ও ছিলে, কিন্তুু লুবনা কোন কথা বলেনি মিমি আর নার্স ওরা কথা বলছে যে আন্টি আপনি যেতে পারেন কোন সমস্যা হবে না,,

আম্মু চলে যাবার পর লুবনা আমার কাছে এসেছে অনেক বার আমি চোখ খুলি নাই কোন কথা ও সে বলে নাই, কিছুক্ষণ পর অনুভব করলাম আমার কপালে কে যেন কিস করলো, আমি মনে করছি আমার বোন,কারণ আমার বোন আমাকে অনেক ভালোবাসে, তাই আমি চোখ না খুলে ওরে ছুঁয়ে দিবার চেষ্টা করছি তখন লুবনা আমার হাত ধরে ফেলছে,
আমার হাত ধরে সে দাড়িয়ে আছে, একটু পর আমার বোন কেবিনে ডুকলো লুবনা তখন হাত ছেড়ে দিছে, যখন হাত ছেড়ে দিছে আমার কেমন জানি একটু খারাপ লাগছিলে তাই আবার হাত বাড়িয়ে ধরার চেষ্টা করলাম তখন আমার বোন হাত ধরলো, আমি বুঝতে পারলাম এটা অন্য হাত তাই হাতটা ছেড়ে দিছি, বোন আবার ও হাত ধরছে আমি আবার ও হাত সরিয়ে দিছি,লুবনা তখন বুজতে পারলো ওর হাত ধরার চেষ্টা করছি,তখন লুবনা তার হাতটা আমার হাতে রাখতেই ওর হাত টা চেপে ধরে রাখছি,আমি মনে করছি এটা আমার বোনের হাত, কারন এতো যত্ন করে কেউ ধরবেনা আমার হাত,
এই দৃশ্য আমার বোন দেখে লুবনার দিতে তাকিয়ে আছে, তখন লুবনা আঙ্গুল ইশারা দিয়ে বললো চোপ, আমার বোনকে কাছে ডেকে বললো ওনি অসুস্থ তাই যানেনা কার হাত ধরছে, একটু ঘুমিয়ে গেলে হাত সরিয়ে নিবো,আমার বোন বললো আচ্ছা মেডাম,,

আমার বোন লুবনার চালচলন টা অন্য রকম মনে করে সন্দেহ শুরু করে দিছে, সে পরিক্ষা করার জন্য বাহিরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে ৩০সেগেন্ট পর আবার দরজা খুলে ফেলছে তখন দেখে লুবনার মুখ আমার কপালে,
এখন আমার বোন বললো মেডাম আপনি হাত ছেড়ে দিন,আমার ভাই অসুস্থ, ওরে আপনি আপনার জন্য ব্যবহার করবেন না, এই কথা গুলো আমি শুনতে পাচ্ছি কিন্তু কেন বলছে বুঝতে পারি নাই,

আমার বোনের এই কথা শুনে লুবনার কষ্ট লাগছে, তাই বাহিরে বসে আছে, তখন আমার বোনের আরো সন্দেহ হলো
আমার বোন গিয়ে ডাঃ ডেকে আনলো ২ জন ডাক্তার আসলো সাথে মিমি ও এসেছে, তখন আমার বোন মিমির কাছে কথা গুলা শেয়ার করছে, আমার বোন মিমি কে জিজ্ঞেস করলো ওই আপুটা কি সত্যি আপনাদের ডাঃ মিমি বললো হা কেন কি হয়েছে, তখন আমার বোন বললো ওই লু্*চ?ছি ডাঃ কে
না করে দিবেন আমার ভাইকে চুমু খেতে,তখন মিমি হেসে দিয়ে বললো এই দিকে আসো এসব বলে না, তখন আমার বোন বললো না মেডাম সত্যি ওনি আমার ভাই হাত ধরে রাখে,চুমু খায়, ওনার কি জামাই নাই, মিমি বুঝতে পারলো
এই পিচ্চি মেয়েকে সব টা না বললে লুবনার ইজ্জত শেষ করে ফেলবে,,

তাই আমার বোন কে এক সাইডে নিয়ে গেছে মিমি, এখন সব সত্যি টা বলে দিবে,,

_____________________________________________

দয়া করে সবাই কমেন্ট করবেন,সবার কমেন্ট রিপলে করা হবে,,