#মহারানী
#সূচনা_পর্ব
#Jhorna-Islam
আই ওয়ান্ট দিস লেডি ফর ওয়ান নাইট। বাই হোক ওর বাই ক্রোক। মি. বিশাল আই ওয়ান্ট হার। আই উইল পে ইউ হোয়াট এমাউন্ট ইউ ওয়ান্ট।
মি. এলেক্সের কথায় বিশালের হাতে চলতে থাকা কলম থেমে যায়। চোখের চশমাটা হাত দিয়ে আরেকটু ঠেলে ল্যাপটপের স্কিনে তাকায়।
মুহুর্তের মধ্যে খান বাড়িতে কি হয়ে গেলো কেউ বুঝতে পারলো না। বিনা মেঘে ব’জ্রপাত হওয়ার মতো অবস্থা।
ল্যাপটপ টা ভেঙে কয়েক টুকরো হয়ে মেঝেতে পরে আছে সাথে ড্রেসিং টেবিলের আয়না। তার পাশেই এক তরুণী দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরে চোখ মুখ কুঁচকে বসে পরেছে। পরনের শাড়ি ঠিক করতে থাকা শাড়ির আঁচলটা মেঝেতে লুটিয়ে পরেছে।ভয়ে তার হাত পা কাঁপা-কাঁপি করছে। গলা শুকিয়ে কাঠ ঢুক গিলতেও রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। আরেকটুর জন্য মেঝেতে পরে থাকা ল্যাপটপটা শরীরে এসে লাগেনি। ইচ্ছে করে যে জেরিনের শরীরে ছুঁড়া হয়েছে সেটা তার বুঝতে বাকি নেই। ভাগ্যিস আয়নায় দেখে সরে গেছে নয়তো আজ এই ল্যাপটপ আর ড্রেসিং টেবিলের আয়নার মতো রক্তাক্ত হয়ে তাকে মেঝেতে পরে থাকতে হতো।
কিছুটা সময় নিয়ে জেরিন নিজেকে ঠিক করে। আস্তে আস্তে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। মেঝেতে পরে থাকা আঁচলটা কাঁপা কাঁপা হাতে নিজের শরীরে জড়িয়ে নেয়। এরমধ্যে অনেকগুলো পায়ের শব্দ পাওয়া যায়, বাড়ির সকলে কি হয়েছে তা দেখার জন্য দৌড়ে আসছে তা আর বুঝতে বাকি নেই তার।
জেরিন এখনও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। তার অপরাধ কি জানা নেই।
জেরিন চোখ তুলে বিশালের দিকে তাকিয়ে দেখে চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে আছে। বিশালের নিশ্বাসের শব্দ যেনো জেরিনের অন্তরকে বুঝিয়ে দিচ্ছে সে বড় এক অন্যায় করেছে যেটার শাস্তি পেতে হবে তাকে।কঠিন আর ভয়াবহ শাস্তি অপেক্ষা করছে তার জন্য।
জেরিন মনে মনে দোয়া করতে থাকে বাড়ির লোকগুলো যেনো তারাতাড়ি চলে আসে। তারা যদি এসে জেরিনকে এই অবস্থা থেকে কিছুটা হলেও উদ্ধার করতে পারে। তাদের পায়ের জোরালো শব্দ পেয়ে জেরিন এক পা এক পা করে নিজেও দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু জেরিনকে অবাক করে দিয়ে বিশাল ঝড়ের গতিতে এগিয়ে আসে। বিশালকে এগিয়ে আসতে দেখে জেরিন আবারও আল্লাহগো বলে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
দরজা লাগানোর শব্দ পেয়ে জেরিন চোখ খুলে। বিশাল দরজা লাগিয়ে দিয়েছে।
দরজার অপর পাশ থেকে দরজাতে ধাক্কানোর শব্দ শোনা যাচ্ছে।
“বিশাল কি হয়েছে? এতো জোরে কিসের শব্দ হলো? বিশাল ঠিক আছিস তোরা? বিশাল দরজা খুল।”
জেরিন কিছু বলবে সেই শক্তি নেই। আর বিশাল কে তার ভালো করে চিনা আছে এখন কিছু বললে হয়তো জেরিনের মুখই সারা জীবনের জন্য বন্ধ করে দিবে।
বিশাল নিজের কোট,টাই এক এক করে খুলতে থাকে। এতক্ষন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একটা মিটিং করছিলো যার জন্য দরজা দিয়ে নিয়েছে যেনো কেউ না আসতে পারে। জেরিনকেও না করেছিলো বিশাল কে ডিস্টার্ব করতে সে গুরুত্বপূর্ণ একটা মিটিং করবে।
আজ বিশালদের বাড়িতে তার ভাতিজির জন্মদিনের একটা পার্টি রাখা হয়েছে। অনেক অতিথি সেখানে উপস্থিত হয়েছে। জেরিন খুব শখ করে শাড়ি পরেছে।অবশ্য শাড়ি পড়ার জন্য অনেক কাঠখড় পুঁড়িয়ে বিশাল নামক মানবের থেকে পার্মিশন নিতে হয়েছে।
হাঁটতে গিয়ে হুট করেই শাড়ির আঁচলে পা লেগে কিছুটা শাড়ি খুলে যায় জেরিনের। এতো বড় বাড়ি হওয়া সত্যেও জেরিন একটু স্পেস পাচ্ছিলো না শাড়ি ঠিক করার কারণ সব জায়গায়ই এখন অতিথিরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে যে যার মতো গল্প করছে।
জেরিন এতো কিছুর ভিড়ে এটাও ভুলে যায় বিশাল এখন মিটিং করবে।
তারাতাড়ি করে রুমে ঢুকে পরে জেরিন। তার ডাক পরেছে অনেক আগেই তাই একটু বেশি তারাহুরো করছে। তারাহুরো করে বড় ভুল করেছে খাটের দিকে না তাকিয়ে। একটু খেয়াল করে যদি আয়নার দিকে তাকিয়েই যদি দেখতো তাহলে দেখতে পেতো এক জোরা লোভাতুর চোখ তার দিকে কা’মুকের দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে ছিলো।
বিশাল ও কাজ নিয়ে এতোটাই ডুবে গিয়েছিল জেরিন রুমে এসেছে সে দেখতেই পায়নি। বিশাল মিটিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে ফাইলে লিখছিল এই সুযোগে এমন বিদঘুটে একটা ঘটনা ঘটে যায়।
“ব-বি-বিশাল?”
অনেক সাহস জুগিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জেরিন বিশালকে ডাক দেয়।
বিশাল জেরিনের ডাকে কোনো সাড়া দেয় না। সে তার ড্রেস খুলতে ব্যস্ত।
“গিভ মাই পান্জাবি। ” গম্ভীর কন্ঠে বলে বিশাল।
জেরিন দৌড়ে বের করে রাখা পান্জাবিটা এগিয়ে দেয় বিশালের দিকে। দৌড়ে যাওয়ার সময় মেঝেতে পরে থাকা কাঁচের টুকরো গিয়ে বিঁধে যায় জেরিনের পায়। মুহূর্তের মধ্যে গলগলিয়ে টাটকা রক্তগুলো পরে মেঝে রক্তাক্ত হয়ে যেতে থাকে।এতো ব্যাথা পেয়েও জেরিন একটা টু শব্দ ও করে না। কারণ বিশাল কে শান্ত করা দরকার নয়তো খুব বড় ঝড় আসবে যেই ঝড়ে সব তছনছ করে দিয়ে যাবে।
বিশাল জেরিনের দিকে একবার ও তাকায়নি চুপচাপ অন্য দিকে তাকিয়ে নিজের কাজ করছে সে।
বিশাল তৈরি হয়ে বের হওয়ার জন্য পা বাড়ায়। কিছুটা দূর এগিয়ে ও কিছু মনে পরার ভঙ্গিমায় থেমে যায়। জেরিন কিছু বুঝে উঠার আগেই তার শরীর থেকে এক টান দিয়ে শাড়িটা খুলে নেয় বিশাল। জেরিন নিজেকে সামলাতে না পেরে বিছানায় পরে যায়।
জেরিন বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বিশাল বেরিয়ে যায় শাড়িটা নিজের হাতে পেঁচাতে পেঁচাতে। যাওয়ার আগে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিয়ে যায়। ততক্ষণে বাড়ির সকলেই সেখান থেকে চলে গেছে কারো কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে। বিশালের ভাই সকলকে নিয়ে চলে গেছে কারণ বিশাল তার ফোনে টেক্সট করেছিলো এক ফাঁকে।
জেরিন উঠে ঠিক করে নেয় শাড়ি আর পরবে না।এই শাড়ি দিয়ে আজ তার কু’ফা লেগেছে। এখন একটা গাউন পরে নিচে যাবে ঠিক করে নেয়।
কেঁটে যাওয়া পা নিয়ে খুঁ’ড়াতে খুুঁ’ড়াতে আলমারির কাছে যায় ড্রেস বের করার জন্য কিন্তু একি আলমারি খুলছে না। চাবি খুঁজে রুমের প্রতিটি স্থানে কোথাও চাবি নেই। অবশেষে জেরিনের মাথায় ঢুকে এটাই তার শাস্তি আলমারিতে তালা দিয়ে চলে গেছে বিশাল। জেরিনের পরনের শাড়িটাও নিয়ে গেছে সাথে করে। শুধু শাড়ি না সাথে জেরিনের মোবাইল ও নিয়ে গেছে। কাউকে এখন কল দিয়ে বলতে ও পারবে না একটা ড্রেস নিয়ে আসার জন্য। আর না রুম থেকে এই অবস্থায় বের হতে পারবে কারণ চার দিকেই গেস্টদের আনাগোনা। জেরিন একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। খুব করে হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার কিন্তু পারছে না। নিজেকে খুব অসহায় লাগছে।
পায়ের কাটা জায়গাটা ব্যাথায় টনটন করছে কিন্তু ঔষধ লাগাতে ইচ্ছে করছে না। ঔষধ সে লাগাবেও না। কেয়ারলেসের জন্য এটা তার নিজেকে দেওয়া নিজের শাস্তি।
জেরিন বিছানায় শুয়ে পরে তার আর আজ বাইরে যাওয়া হবে না। বিছানায় শুয়ে একসময় জেরিন ঘুমের দেশে পাড়ি জমায়।
****
“ইউ ওয়ান্ট দিস গার্ল?”
“ইয়াহ।”
“ওকে দেন কাম ইন বাংলাদেশ। ”
“সিরিয়াসলি? ”
“ইউ ডোন্ট বিলিভ মি?”
মি.এলেক্স কিছুটা সময় নিয়ে ভেবে বলে,,,, ওকে দেন আই উইল কাম বাংলাডেশ ভেরি সোন।
“ওকে।”
নিজের ফোন পকেটে ঢুকিয়ে রহস্যময় হাসি হাসে বিশাল। এ হাসির মানে হয়তো সে নিজেই জানে। এরমধ্যে বিশালের ডাক আসে। বিশাল হাসি মুখে সকলের সঙ্গে কথা বলতে থাকে। কয়েকজন বিশালের ওয়াইফ জেরিনের কথা জিজ্ঞেস করলে বিশাল জানায় সে একটু অসুস্থ তাই রেস্ট নিচ্ছে।কিন্তু কারো আর জানা নেই তাকে অসুস্থ করে দেওয়া লোকটার নাম বিশাল খান।
#চলবে,,,?