মহারানী পর্ব-০৩

0
11

#মহারানী
#পর্বঃ৩
#Jhorna_Islam

“ডোন্ট ডেয়ার টু টাচ মি জেরিন।”

বিশাল?( কান্নারত কন্ঠে ডাক দেয় জেরিন)

“হোয়াট বিশাল?” হুু? বলো বলো।

জেরিন চুপচাপ বিশালের দিকে তাকিয়ে থাকে।
কি হলো বলছো না কেন কিছু? তোমার অপরাধের তো শেষ নেই। একেইতো এমন হালকা পাতলা শরীর তারমধ্য এতো এতো অপরাধ। সবকিছুর শাস্তি দিলেতো জেরিন খান কে খুঁজেই পাওয়া যাবে না।

“অ-অপরাধ ম-মানে? আমি আবার কি করলাম?”

একের পর এক অপরাধ করে চলেছো তুমি। একেইতো কাঁটা পা নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছো তার উপর এই বেশে হাহ্ এন্ড দা লাস্ট ওয়ান আমার ঘামে ভিজে থাকা শরীরে তুমি হাত দিচ্ছো। এমনিতেই তো এলার্জির প্রবলেমের জন্য অবস্থা বেহাল নিজের যত্নটাও করতে পারো না। এতো কেয়ারলেস কেনো তুমি? হোয়াই? লাস্টের প্রশ্নটা একটু রাগী স্বরে করে বিশাল।

বিশালের সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে জেরিন তারপর চোখ পিটপিট করে কিছু সময় তাকিয়ে রয়। বিশাল ও তার দিকেই তাকিয়ে আছে।

বিশালকে অবাক করে দিয়ে জেরিন বিশালকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে। বিশাল ছাড়ানোর চেষ্টা করেও পারে না অবশ্য অতো জোর দেয়নি জোর দিলে হয়তো পারতো।

“জেরিন তুমি দিন দিন বড্ড অবাধ্য হয়ে যাচ্ছো।ছাড়ো বলছি আমাকে। ”

“উহু।”

“জেরিন।”

ছাড়বো না। তোমাকে ধরলে যদি আমার অসুখ হয় তাহলে আমি সেই অসুখে আক্রান্ত থাকতে চাই জীবন ভর। আমি মোটেও সুস্থতা চাই না মহারাজ।

বিশাল জেরিনের কথায় ঠোঁট টিপে হাসে। জেরিনকে নিজেও ভালো মতো জড়িয়ে ধরে বলে,,,সেই অসুখ যে খুব ভয়ানক মহারানী ,, কষ্ট দিতে দিতে নিঃশেষ করে দিবে। ভালো ভাবে বাঁচতেও দিবে না আর না মরতে।

“উফফ বিশাল তোমার এসব কঠিন কঠিন কথা আমি বুঝি না। আমার মাথায়ই ধরে না।”

“কি করে ঢুকবে শুনি? মাথায়তো গোবরের বাস ভালো কিছু ঐ মোটা মাথায় কখনো ঢুকেছে নাকি?”

ওদের কথার মাঝখানেই দরজায় কেউ নক করে। জেরিন সরে যেতে চায় পারে না। বিশাল শক্ত করে ধরে রেখেছে তাকে।
জেরিনকে ঐভাবে ধরে রেখেই বিশাল গম্ভীর কন্ঠে বলে,, “কামিং।”

বিশালের অনুমতি পেয়ে বিশালদের বাড়ির হেল্পিং হ্যান্ড রুমি রুমে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে না পেয়ে বুঝতে পারে বারান্দায় আছে। বারান্দার দরজার কাছে গিয়ে সেকেন্ডের মধ্যে মাথা নিচু করে ফেলে রুমি। এখানে এসে মস্ত বড় ভুল করেছে বুঝতে পারে। দাঁত দিয়ে জিহ্বাতে কামড় দিয়ে বলে,, ইশশশ রুমি তুইও না,কেন এইহানে আসতে গেলি? রুম থেইক্কা বললেইতো হইতো।
তারপর তারাতাড়ি মাথা নিচু করে বলে,, সাহেব আমনেগো খাইতে ডাকতাছে নিচে। কথাটা বলে আর এক মুহূর্ত ও দেরি করে বলে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। যাওয়ার আগে দরজা আবার লাগিয়ে দিয়ে যায়।

রুমি যাওয়ার কয়েক মিনিট পর বিশাল জেরিন কে ছেড়ে দেয়।
জেরিন মনে মনে বলে,,নির্লজ্জ পুরুষ মানুষ সেইতো ছাড়লই মেয়েটা আসার আগে ছাড়লে কি এমন হতো? এখন মেয়েটার চোখের দিকে তাকাতেও জেরিনের লজ্জা করবে।এই লোক এতো পাগল কেন? জেরিনকে লজ্জায় না ফেললে এর বুঝি পেটের ভাত হজম হয় না।

“ভাবনা রেখে তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে যান মহারানী। ”
বিশালের কথায় জেরিন ভাবনা থেকে বের হয়ে আসে। নিজেকে সামলে হাঁটা দিতে যাবে এরমধ্যে নিজেকে শূন্যে আবিষ্কার করে।

“বিশাল কি করছো?”

“দেখতে পাচ্ছেো না?”

“ছাড়ো ফ্রেশ হয়ে নিচে যেতে হবে নয়তো আবার মা রাগ করবে। ”

আমারও শাওয়ার নেওয়া লাগবে তাই চলো দুইজন একসাথেই যাই।শাওয়ার ও নেওয়া হলো সাথে শাওয়ার উইথ রোমান্স ও হয়ে গেলো কি বলো? চোখ টিপ মেরে ঠোঁট বাঁকিয়ে বিশাল বলে।

****
খাবার টেবিলে খান বাড়ির সকলেই আজ একে একে উপস্থিত হচ্ছে। আজকের ব্রেকফাস্ট সকলেই একটু লেইট করে করছে কারণ গতকাল সকলের উপর দিয়ে অনেক ধকল গিয়েছে। এজন্য সকলেই ঘুম থেকে দেড়ি করে উঠেছে। এরমধ্যে খান বাড়ির অতি নিকটের আত্নীয়রা এখনও রয়ে গেছে।

খান বাড়িতে সদস্য সংখ্যা মোট নয়জন। ইলিয়াস খান বিশালের বাবা আর হেলেনা খান মা। বিশালের বাবা মায়ের ঘরে সে একাই তার আর কোনো ভাই বোন নেই। বিশালের বাবার আরো দুই ভাই আছে। বিশালের বাবা সবার বড়।মেজো জন ইমতিয়াজ খান তার এক ছেলে এক মেয়ে আর ছোট জন ইশমাম জিনি এখনও সিংগেল কমিটির সদস্য। এখনও বিয়ে শাদী করার নাম নেই এদিকে ভাতিজারা বিয়ে শাদী করে ফেলেছে। বিয়ে করবে বলেও মনে হয় না বিয়ের কথা বললে পালিশ বেড়ায়। পরিবারের সকলে বিয়ের কথা বলতে বলতে হাঁপিয়ে গেছে। ক্লান্ত হয়ে এখন তারাই আর বিয়ের কথা বলে না। যে করতে চায় না তাকে কি জোর করে করানো যায়? ইশমামের বাবা মা থাকলে হয়তো তারা জোর করে হলেও করাতে পারতো ভাই, ভাবিরা,ভাতিজা, ভাতিজিরা পারেনি। অবশ্য মেয়ে হলে না হয় জোর করে ধরে বেঁধে বিয়ে দেওয়া যেতো কিন্তু একজন সুস্থ, স্বাস্থ্যবান ছেলেকেতো সম্ভব না। সকলেই তার বিয়ের ব্যাপারে আশা ছেড়ে দিয়েছে। ইশমামের যে অনেক বয়স তাও না বিশালের থেকে হাতে গোণা পাঁচ ছয় বছরের বড় হয়তো।

খান পরিবারে বিশাল খান আর ইশমাম খানের গলায় গলায় সম্পর্ক। কাছের কেউ ছাড়া তাদের দেখলে কেউ বলতেই পারবে না তারা চাচা ভাতিজা হয়। লোকে দেখলে ভাববে ওরা বুঝি বন্ধু। অবশ্য বেস্ট ফ্রেন্ড থেকে কমও না।

আত্নীয় স্বজনরা অনেক আগেই সকালের খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার গেস্ট রুমে রেস্ট নিচ্ছে। এখন খান পরিবারের সদস্যরা ব্রেকফাস্ট করবে।
ওদের সাথে বিশালের এক চাচাতো ফুপু ও আছে। গ্রাম থেকে এসেছে কয়েকদিন এখানে থাকবে বলে জানিয়েছে। অবশ্য উনার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ইশমামকে বিয়ে করানোর। বাড়ি থেকে এই পণই করে এসেছে যে করেই হোক এই ভবঘুরে ছেলেকে বিয়ে করিয়ে সংসারি বানিয়েই ছাড়বেন তিনি।

একে একে সকলেই উপস্থিত হয়েছে খাবার টেবিলে। জেরিন আর বিশাল দুইজনই সিড়ি দিয়ে নামছে একসাথে। বিশাল শার্টের হাতা গোটাচ্ছে আর আড় চোখে বারবার তাকাচ্ছে জেরিনের দিকে। বিশাল না করেছিল নিচে নামতে রুমিকে দিয়ে উপরে খাবার পাঠিয়ে দিবে কিন্তু সে একা একা খাবে না। নিচে নামতে বিশাল হেল্প ও করতে চেয়েছিল কিন্তু সে নাকি নিজেই পারবে। বিশালকে বলেছে এখন আর তার ব্যাথা করে না ভালো হয়ে গেছে। এমনকি বিশাল ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে ছিলো বলে স্বাভাবিক ভাবে হেঁটে ও দেখিয়েছে।

বিশাল বুঝতে পারছে ব্যাথা কমলেও হালকা ব্যাথা এখনও আছে কিন্তু কি করার মেয়ে টা নিজের কথায় অনর। বিশাল চাইলেই জোর করতে পারতো কিন্ত ইচ্ছে করেই মাঝে মাঝে জেরিনকে পশ্রয় দেয়।

খাবার টেবিলে আসতেই বিশাল সকলের আগে ইশমামের দিকে তাকিয়ে বলে গুড মর্ণিং । ইশমাম ও খেতে খেতে বলে মর্নিং। বিশাল গিয়ে তার ছোট কাকার সাথেই বসে।জেরিন ও একটা চেয়ার টান দিয়ে বসে পরে। এরমধ্যে রুমির দিকে চোখ যেতেই দেখতে পায় তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। জেরিনের খুব রাগ হয় লোকটার জন্য কি অবস্থা হলো,,চোখ ঘুরিয়ে বিশালের দিকে তাকানোর আগেই শুনতে পায়,,,,

“তোমরা এই শীতের মধ্যে এত্তো সকালে কেনো গোসল করেছো? আমার আগে ফাস্ট হয়ে গেছো।”

হুট করে এহেন কথা শুনে সকলের দৃষ্টি এখন বিশাল আর জেরিনের দিকে। জেরিনের লজ্জায় ইচ্ছে করছে মেঝে ফাঁক হয়ে যাক আর সে ঢুকে যাক। কোনো উপায় না পেয়ে জেরিন ইচ্ছে করে কাশি শুরু করে দেয়।

#চলবে?