মহারানী পর্ব-০৪

0
19

#মহারানী
#পর্বঃ৪
#Jhorna_Islam

বিশালের ছোট্ট ভাতিজির মুখের কথা শুনে লজ্জায় কারো দিকে তাকাতে পারছে না জেরিন।
কোনো উপায় না পেয়ে কাশাকাশি শুরু করে দেয়। আর বিশালকে দেখো লোকটার পুরো শরীরে মনে হয় লজ্জার ল টুকু ও নেই। কেমন দ্বিধাহীন ভাবে বসে বসে খাচ্ছে। জেরিনকে কাশতে দেখে বিশাল নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়।
জেরিন বিশালের দিকে তাকিয়ে কটমট করে তাকায়। এতেও বিশালের কিছু যায় আসে না।

যক্ষা রোগীদের মতো না কেশে এক ঢুক পানি পান করে খাওয়ায় মনোযোগ দাও। একটা প্লেট জেরিনের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলে বিশাল।
উপস্থিত সকলেই মুখ টিপে হাসছে। বিশালের মা আর কাকি কাজের অজুহাতে রান্না ঘরে চলে যায়।
বিশালের বাবা আর মেজো কাকা ও খাওয়া হয়ে গেছে বলে চলে যায়।

ছোট্ট ইন্নি সকলের দিকে ড্যাপ ড্যাপ করে তাকিয়ে রইলো সে কি হচ্ছে এখানে কিছুই বুঝলো না। ইন্নির মা একটু রাগী ভাব নিয়ে বলে,,, “মার খাবে ইন্নি তোমাকে না খাওয়ার সময় বেশি কথা বলতে বারণ করেছি?”

মায়ের কথায় ইন্নির খুব অভিমান হয়। খাবার লুকমা মুখের সামনে ধরলেও আর খায় না বারবার মুখ ফিরিয়ে নেয়। সে খাবে না মা বকা দিয়েছে খুব অভিমান হয় তার। ছলছল চোখে তাকিয়ে অনেক কষ্টে চেয়ার থেকে নেমে ছোট্ট ছোট্ট কদমে সেখান থেকে চলে যায়।

“আহ্ ঈশানী আমার মেয়েটাকে শুধু শুধু কেন বকা দিলে?” মেয়েটার বড্ড অভিমান হয়েছে। ” ইন্নির বাবা আহসান বলে।”

তুমি শুধু মেয়ের অভিমান দেখলে আহসান? এদিকে যে তোমার ভাইয়ের বউ কাশতে কাশতে পটল তুলতে যাচ্ছিল সেই খেয়াল আছে?

ব্যাস আর খায় কে? এখান থেকে জেরিনের ইচ্ছে করছে ভেনিশ হয়ে যেতে আর নয়তো উড়ে চলে যেতে। কি লজ্জাজনক পরিস্থিতি। আর এইদিকে দেখো কেমন নির্লজ্জের মতো আরেকজন গিলে যাচ্ছে। অবশ্য এর শরীরেতো মানুষের চামড়া না গন্ডারের চামড়া। সামান্য একটু লজ্জা ও নেই।
জেরিন কে লজ্জা থেকে উদ্ধার করতেই মনে হয় ইশমাম এবার মুখ খুলল। খুব গম্ভীর কন্ঠে বিশালকে ডেকে উঠলো।

“বিশাল,,,?”
বিশাল খেতে খেতেই চাচার ডাকে সাড়া দেয়,, “হু।”

“গতকালের মিটিংটার কি হলো? ভালো ভাবে হ্যান্ডেল করতে পেরেছো তো?”

ইশমামেম কথা শুনে মুহূর্তের মধ্যে বিশালের চেহারার রং পাল্টে গেলো। এমনিতেই সারাক্ষণ মুখটা গম্ভীর করে রাখে আরো গম্ভীর করে ফেলল সাথে রয়েছে রাগের আবাশ। ইশমাম কিছু বুঝতে পারলো না সে ব্রু কুঁচকে বিশালের উত্তরের অপেক্ষায় আছে।

গতকালের মিটিং এর কথা শুনে শুকনো ঢুক গিলে জেরিন। তার একটু ভুলের জন্য কতো কিছু ঘটে গেছে। জীবনে আর ওমন ভুল করবে না বলে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে।

বিশাল এক পলক তাকায় জেরিনের দিকে, জেরিন ও তখন বিশালের দিকেই তাকিয়ে ছিলো ফলে দুইজনেরই চোখাচোখি হয়ে যায়। বিশাল সন্তর্পণে জেরিনের থেকে চোখ সরিয়ে ইশমামের দিকে তাকায়।

“খাওয়ার পরে আমার সাথে দেখা করো ইশ কাকু।”

“সামথিং রং বিশাল?”

“বিশাল মনে মনে বলে,, সামথিং নয় এভরিথিং ইজ রং ইশ কাকু। তারপর গলা খেঁকাড়ি দিয়ে বলে, একটু পরেই জানতে পারবে। ”

জেরিন ওদের কথা চুপচাপ শুনছিল সে যে এখানে খেতে এসেছে সেটাই সে ভুলে গেছে। সে খাওয়া বাদ দিয়ে বিশালের দিকে তাকিয়ে আছে।
ঈশানী জেরিনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে তারপর কাঁধে হালকা চাপড় মে’রে বলে,, “কিরে জেরিন খাচ্ছিস না কেন? আমার দেবরকে দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা দেখেও স্বাদ মিটে না বুঝি তোর? খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে দেখছিস খেয়ে রুমে নিয়ে যা তারপর সামনে বসিয়ে মন প্রাণ উজার করে দেখে নিস কেমন?”

ঈশানীর কথায় ইশমাম গলা খেঁকাড়ি দিয়ে উঠে চলে যায়। যাওয়ার আগে বিশালের দিকে তাকিয়ে ইশারায় বুঝায় রুমে দেখা করতে।

“ছিঃ ছিঃ বড় বউ দিন দিন বুড়ো হচ্ছো আর বোধ বুদ্ধি লোপ পাচ্ছে তোমার? ”
চোখে ও মনে হচ্ছে কম দেখো এরজন্য মুরুব্বি দেখতে পাও না।

এই প্রথম আপনি একটা ঠিক কথা বলছেন ফুপি। এই ঈশানী তৈরি হও তোমাকে আজই ডাক্তার দেখাবো। তুমি কি করে মুরুব্বিদের দেখতে পাও না। আশ্চর্য এই বয়সেই কানা হয়ে বসে আছো? আর আমার ফুপিকে দেখো বয়স তো কম হলো না তাও মন থেকে কতোটা ইয়াং, মুরুব্বি সকলে চলে যাওয়ার পর ও উনি আমাদের সাথে আছেন। আমার ফুপি মন থেকে এখনও আমাদের বয়সেরই আমি তাই না বিশাল?

আহসানের কথায় তার ফুপি খুশি হয়ে যায়। তিনি এখনও ইয়াং মনটা ফুরফুরে হয়ে গেলো। খুশিতে গদগদ করতে করতে চলে যায়। বুঝতে পারে না আহসান তাকে ঠেস মেরে বলেছে। এতোটা তলিয়ে ভাবেও নি উনাকে ইয়াং বলেছে এতেই উনি খুশি।

ফুপি চলে যেতেই সকলে হাসিতে লুটিয়ে পরে। আহসান এমন একটা মানুষ যে কিনা এমন ভাবে খুঁচিয়ে কথা বলে যে সামনের ব্যক্তি কনফিউজড হয়ে যায় সুনাম করলো নাকি দূ’র্ণাম।

সকলের খাওয়া শেষ করে যে যার মতো চলে যায়।
বিশাল জেরিনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,,,, হেল্প লাগবে?

জেরিন প্রথমে বুঝতে পারে না কিসের জন্য হেল্প লাগবে। ব্রু কুঁচকে তাকায় বিশালের দিকে।

বিশাল দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে,,, আরে মাথা মোটা কাঁটা পা নিয়ে উপরে যেতে পারবে? নাকি হেল্প লাগবে?

“ওহ,,, জেরিন আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ এখন নেই তাই পা ফেলে বলে,,আহ্ বিশাল হুট করেই ব্যাথা করছে খুব। আমি একা একা যেতে পারবো না বিশাল ঠোঁট উল্টে বলে। ”

বিশাল ফুস করে নিশ্বাস ছাড়ে। এগিয়ে আসে কিছুটা জেরিনের দিকে। জেরিন মুচকি হেসে হাত বাড়ায় ভাবে বিশাল তাকে কোলে করে রুমে নিয়ে যাবে। কিন্তু জেরিনের ভাবনাকে ভুল প্রমান করে দিয়ে বিশাল রুমিকে জোরে চিল্লিয়ে ডাকতে থাকে।

“রুমি এই রুমি?”

“জ্বি? ” রুমি ভিজা হাত মুছতে মুছতে বলে। বিশালের ডাক শুনে দৌড়ে এসে হাঁপাচ্ছে মেয়েটা।

জেরিনকে রুমে যেতে সাহায্য কর।ধরে ধরে সাবধানে রুমে নিয়ে যা।

বিশালের কথায় জেরিনের মুখটা চুপসে যায়। ভেবেছে বিশাল হয়তো কোলে করে নিয়ে যাবে। কিছুটা অভিমান কাজ করে জেরিনের।

লাগবে না আমি একাই যেতে পারবো বলেই কারো সাহায্য ছাড়াই চলে যায়।

রুমি জেরিনের যাওয়ার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। বিশালও তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে,,, পাগলি একটা।

বিশাল ইশমামের রুমে চলে যায় গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে তার সাথে।

******
“হোয়াটটট!”
রাগে ফুঁসছে ইশমাম পুরো শরীরে যেনো আগুন ধরে গেছে। শরীরের রক্ত টগবগ করে ফুঁটছে। খান বাড়ির বউকে এরকম কথা বলেছে এটা খান বাড়ির অন্য কেউ শুনলেও একই অবস্থা হতো।

আমি কিছু করতে চাই বিশাল।

নো ইশশ কাকু এটা আমার ম্যাটার আমাকেই সামলাতে দাও বিশালের বিষ দিয়ে তিলে তিলে তাকে মারবো। এই বিষের কোনো প্রতিশেধক নেই আছে শুধু মরণ যন্ত্রণা আর তারপর বলেই ঠোঁট বাঁকা করে হাসি দেয় বিশাল।

ইশমাম নিজের রাগ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। নিজের রাগ মুহূর্তের মধ্যে শান্ত করে ফেলার এক অভাবনীয় কৌশল জানা আছে ইশমামের।
সে মুখপানে চেয়ে কি যেনো গভীর ভাবনায় ডুবে যায়।

বিশাল রুম থেকে বের হয়ে যায়। এখন তাকে ফ্রেশ বাতাস লাগাতে হবে শরীরে। ঘটনাটা যতো মনে হচ্ছে রাগের তীব্রতা বাড়ছে তার।

ছাদে গিয়ে রেলিং এর পাশে দাঁড়িয়ে থাকে বিশাল।
এরমধ্যে তার শরীরে কিছু একটার ঢিল লাগে। বিশাল আশ পাশ তাকিয়ে কাউকে দেখতে পায় না। পাশের বিল্ডিং এর ছাদ ও ফাঁকা তবে কারো একটা ছায়া সরে গেলো মুহূর্তের মধ্যে যেটা বিশালের দৃষ্টিতে পরতে ভুল হয়নি। এটা কার কাজ বিশাল জানে৷ বিশাল আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে তারপর তাকে ঢিল দেওয়া কাগজটার দিকে তাকায়। কিছু একটা মনে করে তুলতে যাবে তার আগেই জেরিন এসে তুলে নেয়।

কাগজ খুলে দেখে একটা চিঠি। চিঠিটা পরে জেরিনের চোখ থেকে টপটপ করে পানি ঝড়তে থাকে।

#চলবে?,,