#মম_হৃদয়_বিহারিনী
#ঐশী_রানী_রক্তিমা
১৫.
আবছা আলোকিত কক্ষটায় ধ্রুবর পায়ের আওয়াজ ব্যতিত আর কোন শব্দ নেই।এ কক্ষের মালকিনের সাথে হওয়া বড়সড় এক প্রতারণার শোক যেন পুরো কক্ষটা বহন করছে।বিছানায় গুটিশুটি মেরে বসে আছি আমি।দৃষ্টি সামনে স্থির।অথচ আমি মগ্ন অন্য ভাবনায়।ধ্রুব আমার দিকে তাকিয়ে হাঁটছে কক্ষজুড়ে।তাকে ভেতরে ভেতরে অস্থির হতে দেখা যাচ্ছে।আর আমি?আমার মনের কি অবস্থা?বর্ণনা করার মতো শব্দ আদো আবিষ্কার হয়েছে?আজ আমি এতটা অপমানিত হয়েছি যা বলার মতো না।একটা মেয়ের সতীত্বের উপর প্রশ্ন উঠা অবশ্যই গুরুতর একটা কালো দাগ তার উপর লেপ্টে দেওয়া।ধ্রুব পায়চারী থামিয়ে এবার গম্ভীর হয়ে এগিয়ে এলেন আমার দিকে।বিছানায় বসে আমার হাতদুটো ওনার হাতে নিলেন।আচমকা আমার শুকনো ভেজা চোখ পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো অশ্রুতে।ধ্রুবর মুখপানে তাকাতে তাকাতে তারা পতিত হলো গালে।আজকে আমার সাথে যা হলো এরপর আমি কিভাবে মুখ দেখাবো?
কথাটা ভাবতে ভাবতে শব্দ তুলে কেঁদে উঠলাম আমি।মুহুর্তেই আমার অবস্থান হলো ধ্রুবর বক্ষ মাঝে।ভাগ্যিস আজ উনি সময় মতো এসেছেন!ওনার বুকে স্থান পেতেই আমার কান্নার বেগ বেড়ে গেল।
“নির্বানী?শান্ত হও।আমি আছি তো।”
ধ্রুবর এই কথা আমার হৃদয়কে যেন আরো অশান্ত করে দিলো।আমি ওনাকে আঁকড়ে ধরলাম প্রবলভাবে।অস্ফুটস্বরে বলে উঠলাম,
“আপনি আমাকে ছেড়ে কোথায় যাবেন না।আর যদি যান তবে যেখানে যাবেন আমাকেও সাথে নিয়ে যাবেন।”
আমি বোধয় এতটা পাগলামি কখনো করিনি।আমার কথার বিপরীতে আমার পিঠে ওনার আলতো স্পর্শ বিদ্যমান রইলো।কিছু সময় পেরোতেই আমার কান্নার বেগ কমে এলো।আমি তখনো ওনার বুকে ছোট বাচ্চার মতো গুটিসুটি মেরে আছি।আমার শক্ত আলিঙ্গনে বোধহয় উনি মনে মনে হাসলেন।
“এবার কি আমি জানতে পারি আসলে কি ঘটেছিলো।”
আমি ওনাকে ছেড়ে দিয়ে একটু সরে আসতে চাইলাম এবার।কিন্তু তা হলো না।ওনার হাতের দৃঢ় বাঁধন পরলো এবার আমার উদরে।উনি আমার চুলে আলতো করে ঠোঁট ছুইয়ে বললেন,
“এভাবেই বলো।যখন তোমার ইচ্ছে হবে।আমি আছি,কোথাও যাচ্ছি না।ওকে?”
আমি ক্ষণকাল চুপ করে রইলাম।সময় নিয়ে আস্তে আস্তে বলে উঠলাম,
“রাতের খাবার খেয়ে আমি ঘরে আসলাম।হঠাৎ আমার শাড়িতে আগুন লাগলো।জানি না কি করে!যেই আমি আগুন থেকে বাঁচার জন্য শাড়িটা…”
এতটুকু বলে থেমে গেলাম আমি।বাকিটা বলতে খানিক ইতস্তত করছিলাম আমি।ধ্রুব কোন তাড়া দিলেন না।চুপচাপ আমার কাঁধে ওনার থুতনি ঠেকালেন আস্তে করে।আমি একটা শুকনো ঢোক গিলে বলে উঠলাম,
“যেই আমি আগুন থেকে বাঁচার জন্য শাড়িটা খুললাম।ওমনি হঠাৎ খাটের নিচ থেকে লোকটা বেরিয়ে এলো।বিশ্বাস করুন আমি জানতাম না যে লোকটা এ ঘরে ছিলো।নয়ত আমি মরে গেলেও…।তারপর হঠাৎ দরজায় প্রচুর ধাক্কাধাক্কি আরম্ভ হলো।আমি ভয় পেয়ে গেলাম।দরজা ভেঙে বাড়ির সকলে যখন লোকটাকে এ ঘরে দেখলো,সকলে ভুল বুঝলো আমায়।কেউ আমার কথা বিশ্বাসই করলো না।তারপর ওনারা আমাকে যা নয় তাই বলে গেলো!কিন্তু বিশ্বাস করুন লোকটার আমাকে ছুঁয়ে দেওয়ার সুযোগও পায়নি।আমি পবিত্র..”
“আমি তোমায় বিশ্বাস করেছি।কিন্তু তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তুমি আমার কথা বিশ্বাস করছো না তাইনা?”
আমি চুপ করে রইলাম।ধ্রুব কিছু বললেন না।চুপচাপ কাটলো কিছু মুহুর্ত।হঠাৎ উনি মুখ খুললেন,
“এখন কি পুড়ে যাওয়া শাড়িটায় পরে আছো?”
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বোঝালাম।তারপর ওনার থেকে একটু সরে এসে বললাম,
“আপনি থাকুন।আমি এটা পাল্টে আসছি।”
কথাখান বলে আলমারি থেকে ঘিয়ে রঙের একটা শাড়ি নিয়ে আমি স্নান ঘরে ঢুকে গেলাম।শাড়িটা পাল্টে সকালের বাসি পানি দিয়ে চোখ মুখ ধুয়ে কোন রকম বেরিয়ে আসলাম।শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখটা মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসতেই দেখলাম ধ্রুব বিছানাটা গুছিয়ে দিচ্ছেন।নুপুরের আওয়াজ পেয়ে ঘুরে তাকালো সে।শান্ত স্বরে আদেশ মিশিয়ে বলে উঠলেন,
“অনেক কান্নাকাটি করেছো।এবার ঘুমাও।নয়ত শরীর খারাপ করবে।”
আমি বাধ্য মেয়ের মতো শুয়ে পরলাম বিছানায়।ধ্রুব বললেন,
“আমি একটু নিচ থেকে আসছি।হাত পা ধোয়া হয়নি।তুমি ঘুমানোর চেষ্টা করো।”
আমি ঘাড় কাত করে হ্যা বোঝাতেই ধ্রুব কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলেন।কি মনে করে আবার ফেরত এসে বলে গেলেন,
“দরজায় খিল এঁটে দাও তো।”
আমি ওনার কথা মতো দরজায় খিল এঁটে দিলাম।
.
ধ্রুব মহল থেকে বেরিয়ে উঠোনে আসলো।চারিদিকে তখন প্রায় অন্ধকার।বাড়ির কেউ আর বাইরে নেই।ধ্রুব গম্ভীর চোখেমুখে এসে উপস্থিত হলো অচেনা সেই লোকটির সামনে।দুটো পালোয়ান তাকে এখনো অনবরত মেরেই চলেছে।ধ্রুবকে দেখে তাদের হাতের জোর বাড়লো বৈকি!কিন্তু ধ্রুব তাদের হাতের ইশারায় থামতে বললো।সঙ্গে সঙ্গে থেমে গেল পালোয়ান দুজনের হাত।ধ্রুবর এই আদেশে বড়ই কৃতার্থ হলো যেন তারা।কেননা অনবরত মার দেওয়ায় তাদেরও হাত ব্যথা করছিলো।যদিও বাড়ির সকলে চলে যাওয়ার পর অনেকক্ষণ বিরতি নিয়েছে দুজনে।ধ্রুব ইশারা করতেই দোয়ী লোকটির মুখে গুঁজে রাখা কাপড়ের টুকরো ফেলে দেওয়া হলো।সাথে সাথে নাক মুখ দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে শুরু করলো লোকটি।ধ্রুব সরু চোখে তাকালো লোকটির দিকে।লোকটির সারা শরীর ইতিমধ্যেই রক্তে ভরে গেছে।জায়গায় জায়গায় চাবুকের আঘাতে চামড়া ছিলে রক্ত বের হয়ে নাজেহাল অবস্থা।ধ্রুব দুহাত পেছনে রেখে দাঁড়ালো এবার।গম্ভীর রাগী কন্ঠে বলে উঠলো,
“তুমি যে পাপ করেছো তার জন্য এই শাস্তিও কম লাগছে আমার।তবুও আমি তোমাকে একটা সুযোগ দিচ্ছি।”
ধ্রুবর কথায় লোকটি প্রায় বুঁজে আসা চোখ খুলে তাকালো।ধ্রুবর পানে তাকালো অনুভূতিহীন দৃষ্টিতে।ধ্রুব লোকটাকে দেখে বাঁকা হাসলো একটু।এতটা মার পরার পরেও লোকটা অজ্ঞান হয়নি!পালোয়ান বটে!
ধ্রুব এবার লোকটার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
“শুধু তার নামটা বলো।কে বা কারা তোমায় আমার ঘরে পাঠিয়েছে!”
লোকটা মুখ খুলতে চেয়েও যেন পারলো না।চোখ বুঁজে ফেললো।ধ্রুব ইশারা করতেই পালোয়ান দুজনের হাতের চাবুক পরলো লোকটার গায়ে।কিন্তু এতেও লোকটার কোন হেলদোল নেই।ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে এসে নাড়ি পরীক্ষা করলো ধ্রুব।তারপর পালোয়ান দুজনকে আদেশের স্বরে বললো,
“একে নিয়ে যাও।আর বন্দি করে রাখো।খবরদার আমি ব্যতিত যেন কেউ ওর কাছে না যায়।জ্ঞান ফিরলে আমায় খবর দিবে।”
ধ্রুব এবার প্রস্থান করে সেখান থেকে।বসার ঘর থেকে একটু এগিয়ে নিচতলায় তার মায়ের ঘর।ঘরটা পেরিয়ে যাওয়ার সময় ধ্রুব খেয়াল করে কক্ষটায় এখনো মৃদু আলো জ্বলছে।ধ্রুব দরজায় কড়া নাড়বে কি না ভাবে।তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিঁড়িতে পা রাখে।রাত গভীর হচ্ছে।মনে মনে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানায় সে।ভাগ্যিস আজই চলে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো।
শহরে পৌঁছে ধ্রুব জানতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু দরকারে জরুরি তলব করা হ’য়েছে।কিন্তু ক্লাস শুরু হতে এখনো সপ্তাহখানেক বাকি।তাই সে ভাবে যেহেতু হাতে সময় আছেনই,বাড়ি থেকে ঘুরে আসা যাক।তাইতো আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শেষ করেই সে বিকালের ট্রেনে বাড়িতে রওনা হয়েছিল।তাই ফিরতে রাত হয়েছে।বাড়িতেও কিছু জানালো হয়নি।কিন্তু বাড়িতে পৌঁছে যে এভাবে চমকিত হবে তা কল্পনার বাইরে ছিল।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ধ্রুব তিনতলার শেষ কক্ষ অর্থাৎ নিজের কক্ষটার সামনে এসে পৌঁছায়।দরজায় কড়া নেড়ে ডেকে উঠে,
“নির্বানী?ঘুমিয়ে পরেছো?দরজা খোল।”
তার কিছুক্ষণ পরেই দরজা খুলে দেই আমি।উনি ভেতরে প্রবেশ করে দরজায় খিল দিতে দিতে জিজ্ঞেস করেন,
“ঘুমাওনি?”
একটা গোপন দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমি বলে উঠি,
“নাহ।ঘুম আসছে না।”
কথাখান বলে আমি ফের বিছানায় এসে শুয়ে পরি।ধ্রুব টেবিলের সামনে এসে হাত থেকে ঘড়িটা খুলে রেখে দেয়।আজকে উনি যে হাতে ঘড়ি পরেছিলেন খেয়ালই করা হয়নি।আমি শুয়ে শুয়ে ওনাকে দেখতে লাগলাম।চোখমুখ বেশ গম্ভীর লাগছে হঠাৎ করেই।পরনের সাদা শার্টে সুদর্শনও লাগছে বটে।চোখা নাকটা হারিকেনের সোনালি আলোয় সোনালী ঠেকছে।আমি তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে পরলাম জানা নেই।
ভোর বেলা পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটলো আমার।নড়েচড়ে ফের শুয়ে গিয়ে টের পেলাম,আমার দেহের সাথে কিছু একটা আষ্টেপৃষ্ঠে আছে।মুহুর্তেই চোখের সমস্ত ঘুম উধাও!চট করে চোখ মেলে তাকালাম আমি।অনুভব করলাম পেটে কারো গাঢ় স্পর্শ।ধীরে ধীরে পেটের দিকে তাকাতেই চেনা বলিষ্ঠ হাতখানা ভেসে উঠলো চোখের পাতায়।মুহুর্তেই সমস্ত লজ্জা এসে ভর করলো আমার মনে।হাসফাস করে উঠলাম আমি।আমার অতিরিক্ত নড়াচড়ায় ওনার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটলো।এবার উনি আমার ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিলেন।জমে গেলাম আমি।মুহুর্তেই আমার নড়াচড়া থেমে গেল।স্তব্ধ হয়ে গেলাম আমি।কালকে আমার মানসিক প্রতিকূল অবস্থায় ওনি আমার খুব কাছে আসলেও আমার কিছু মনে হয়নি।কিন্তু এখন!এই ঘনিষ্ঠতা কাঁটা দিয়ে উঠছে আমার সর্বাঙ্গে।আমি নিরবে সরে আসার চেষ্টা করলাম।এবার পেটের কাছে ওনার হাতের বাঁধন আরে দৃঢ় হলো।উনি তখনো ঘুমে মগ্ন।আমার মাথা ঝিমঝিম করতে লাগলো।হঠাৎ উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে ওপাশ ফিরে ঘুমালেন।আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।আরেকটু হলেই তো দম আঁটকে যেত আমার!
আমি ছাড়া পেয়ে বিছানা ছেড়ে স্নানঘরে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে এলাম।ধ্রুব তখনো ঘুমে!আমি ওনার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে চুলে চিরুনি চালাতে লাগলাম।ওনার ঘুমন্ত চেহারাটা সবচেয়ে আর্কষণীয়।শক্তপোক্ত,গম্ভীর হয়ে থাকা মুখশ্রী কেমন স্নিগ্ধ,নিষ্পাপ হয়ে উঠে!
আমার কোমড় সমান কোকড়া চুল আঁচড়াতেই আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো।একে তো চুলে তেল দেওয়া হচ্ছে ভালো মতো!তারউপর আমার দ্বারা চুলের যত্ন হয় না।আমি বেশ সময় নিয়ে চুল আঁচড়ালাম।হাতের শাঁখা-পলা শব্দ তুলে উঠলো।বিশৃঙ্খল এক ছন্দ!এতে বোহয় ধ্রুবের ঘুমের ব্যাপক ব্যঘাত ঘটলো।ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালেন উনি।আমার খেয়াল সরে এসেছিল ওনার থেকে।তাই হঠাৎ করে ওনার বলা কথাটায় চমকে উঠলাম আমি,
“এত সুন্দর চুলের এই হাল কি করে করলে?”
দুঃখী দুঃখী মুখ করে তাকালাম আমি।মিহি কন্ঠে আস্তে আস্তে বললাম,
“আমার দ্বারা এতবড় চুলের যত্ন হয় না।”
উনি শুনলেন কি না বুঝলাম না।বিছানা ছেড়ে উঠে স্নানঘরে গেলেন উনি।উনি হাতমুখ ধুয়ে বের হতে হতে আমি চুলে খোঁপা করে নিয়েছি।সিঁথিতে যখন সিঁদুর পরছি তখন উনি এসে দাঁড়ালেন আমার পেছনে।শুভ্র শার্ট পরিহিত যুবকটি ভেসে উঠলো দর্পনে।আমি দৃষ্টি নামিয়ে নিলাম।হঠাৎ দরজায় কড়া পরলো।সকাল সকাল এ ঘরের দরজায় কড়া পরতেই থাকে।ধ্রুব একটা ক্ষুদ্র শ্বাস ফেলে দরজার দিকে এগোয়।দরজা খুলে দিতেই মেয়েলি একটা কন্ঠস্বর কানে এসে ঠেকে,
“কালকে রাতে নাকি এ বাড়িতে কি হয়েছে?”
কন্ঠস্বরটা আমার চেনা।মুহূর্তেই আমার চোখেমুখের লাজুক ভাব উবে গিয়ে এবার গম্ভীর হয়ে উঠলাম আমি।ধ্রুব তখন সেভাবেই দরজার সামনে দাড়িয়ে।শশীর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে সে বলে উঠলো,
“সেটা তুমি কি করে জানলে?”
ইতস্তত করে উঠলো শশী।শাড়ির আঁচল হাতে পেচিয়ে এদিক ওদিক তাকালো।ধ্রুবের চোখের দৃষ্টি সরু হয়ে এলো হঠাৎ।তখনি শশী চট করে বলে উঠলো,
“এখানে আসার পর মাসি মা বললেন।”
ধ্রুবর কুঁচকে থাকা ভ্রু যুগল স্বাভাবিক হলো এবার।সে দরজা থেকে সরে আসলো।কিন্তু শশী তখনও দরজার বাইরে দাড়িয়ে।মৃদুস্বরে সে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
“আমি কি নির্বানীর সাথে দেখা করতে পারি?বেচারির জন্য খুব খারাপ লাগছে আমার!”
কন্ঠে মিথ্যে দুঃখ মিশিয়ে কথাটা বললো শশী।ধ্রুব বলে উঠলো,
“আসো।”
আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে সবটায় দেখছিলাম।এই মেয়েটা এত নির্লজ্জ?কেন জানি না আমার মন বলছে কাল যা হলো তার পেছনে একশভাগ শশীর হাত আছে!
বৌভাতের দিন আমাকে তার হুমকি দেওয়া,আর ছাদেও আমাকে বলা কথাগুলো আমার সন্দেহের তীর শশীর দিকেই নিক্ষেপ করলো।কিন্তু এই সত্যতা আমি কিভাবে যাচাই করব?
আমার ভাবনায় মাঝেই শশী এসে আমার সামনে দাড়ালো।পরনে লাল খয়েরী শাড়ি,বাহুতে প্রতিদিনকার ন্যায় সোনার বাজু আর মুখে বিস্তর হাসি।আমি থমথমে মুখশ্রীতে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে।চোখ ভর্তি গাঢ় কাজল,ঠোঁটেও কৃত্রিম প্রসাধনীর ছোঁয়া!লম্বা চুলগুলো ছেড়ে রাখা।শশীর এই অতিরিক্ত সাজের যে কি কারণ সেটা বুঝতেই রাগ হতে লাগলো আমার।মনে মনে হাসিও পেলো!বোকা মেয়ে!
মন থেকে যে পুরুষ ভালোবাসে,সে তো আত্মার সৌন্দর্যে মুগ্ধ।তার কাছে বাহ্যিক সৌন্দর্য ফিকে পরে যায়।বিশেষত পরনারীর!
“ইশ..তোমার জন্য আমি খুব দুঃখ পেয়েছি নির্বানী।না জানি বদ্ধ ঘরে লোকটা তোমায় একা পেয়ে কি না কি করেছে!”
শশীর ইঙ্গিতপূর্ণ কথায় চোখ বড় বড় হয়ে গেল আমার।শাঁকচুন্নি কোথাকার!মুহুর্তেই ক্ষেপে গেলাম আমি আমার মনে জমে থাকা সমস্ত রাগ আগ্নেয়গিরির ন্যায় বিস্ফোরিত হলো।আঙুল তুলে শাসিয়ে উঠলাম আমি।
“খবরদার!আমার ব্যপারে একটা অপশব্দও বলবেন না আপনি।আপনি যে এখানে আমার দুঃখে দুঃখী হতে আসেননি সেটা বেশ ভালো করেই জানি আমি।মজা নিতে এসেছেন তাইতো?বিদূষক ডেকে দেই?মন ভরে মজা নিন।তবুও আমার ব্যাপারে কোন আজেবাজে কথা বলবেন না।”
শেষোক্ত কথাটা অনেকটাই চেঁচিয়ে বললাম আমি।ধ্রুব অদূরেই দাঁড়িয়ে আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আমার এমন আচরণের কারণ ঠিক ওনার বোধগম্য হচ্ছে না।আমি ওনার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে এবার শশীর দিকে তাকালাম।তার চোখ টলমল করছে জলে!আশ্চর্য ব্যাপার।সেই টলমল করা অশ্রুপূর্ণ চোখেই সে ধ্রুবর পানে তাকালো।ভিজে গেল তার শুষ্ক কপোল!আমি তখন রাগে ফুঁসছি।সে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে এটাই বোঝাতে চাইছে যে আমি তার সাথে বড়ই খারাপ আচরণ করেছি।
কিন্তু ধ্রুব বুকে হাত গুঁজে জিজ্ঞাসু স্বরে এবার শশীকে বলে উঠে,
“এ ঘরে সে সময় বোধহয় তুমি ছিলে না,রাইট?এমনকি কেউ ছিল না।এ ঘরে কি হয়েছে না হয়েছে সেটা তো তোমার জানার কথা নয়।তাহলে এমন মন্তব্য তুমি কিভাবে করো আমার স্ত্রীর ব্যাপারে?”
কথাটা একটু শক্তই শোনালো।শশী আশাহত হলো।ধ্রুব ফের বললো,
“ওর ব্যাপারে কি বলার আগে বেশ কয়েক বার ভেবে নিবে।কেননা আমি জানি কার কথা সত্য আর কারটা মিথ্যে।তুমি এবার আসতে পারো।”
ধ্রুবর কথা শুনে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো শশী।আমি চোখে চোখে হেসে উঠলাম।তারপর তাকালাম সরু চোখে।শশীর চোখে ভয় ছিল।প্রচন্ড!ধ্রুব নামক সুপুরুষের কোথাও তার অস্তিত্ব নেই!এই কথাটা মেনে নেওয়ার ভয়।
চলবে…
ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ।