#মম_হৃদয়_বিহারিনী
#ঐশী_রানী_রক্তিমা
২০.
(মুক্তমনা ও প্রাপ্তমনস্কদের জন্য)
“খুব বেশি বেসামাল হলে কি দোষ হবে?হলাম না হয় একটু দোষী!এই দোষ তোমার।সাজা পাবে!”
ধ্রুবর বলা কথাটা কর্ণকুহরে পৌঁছে আমায় অবশ করে দিলো।হৃদপিণ্ডের দশা করলো বেহাল।শ্বাস-প্রশ্বাসের অবস্থা ভালো না।নিজেকে শ্বাসকষ্টের রোগীর মতো মনে হচ্ছিল।একে তো ওনার এত কাছে আমি।তার উপর এরুপ কথাবার্তা!আমি সরে আসতে চাইলাম ওনার কবল থেকে।তবে আমাকে এই সুযোগ না দিয়ে আরো খানিকটা ঘনিষ্ঠ হয়ে এলেন।আমি করুন চোখে তাকালাম ওনার দিকে।আবছা আলো-অন্ধকারে ধ্রুবর ঠোঁটের কোণে থাকা দুষ্টমির রেশ চোখে পরলো না।
বৃষ্টিতে ভিজে একাকার আমরা।
আমি নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে করতে বললাম,
“ছা..ড়ুন।খুব বৃষ্টি পরছে।ঘরে চলুন।”
ধ্রুব আলগোছে ছেড়ে দিলেন এবার।আমি ছাড়া পেয়ে ছুটে এলাম সিঁড়ির দিকে।ফের পিছন ফিরে একবার তাকালাম ধ্রবর পানে।হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকে উঠলো।তাতে সেকেন্ডের জন্য দৃশ্যমান হলো ধ্রুবর মুখশ্রী।পরপরই ভীষন তেজে মেঘের গর্জন শোনা গেল।আমি আতংকিত স্বরে বলে উঠলাম,
“পরিবেশ খারাপ হচ্ছে।দ্রুত আসুন।”
ধ্রুব ছাদের মেঝেতে পরে থাকা শার্টটা তুলে কাঁধে ঝুলিয়ে নিলেন।তারপর পা বাড়ালেন সিঁড়ির দিকে।উনি আসছেন দেখে আমি আগে আগেই দ্রুত নেমে এসে ঘরে পৌঁছালাম।ভেজা কাপড় থেকে টপটপিয়ে জল পরে মেঝে ভিজে উঠলো তৎক্ষনাৎ।আমি চোখ মুখ কুঁচকে নিলাম।বক্ষদেশে তখনো বিরাট নিপীড়নের জ্বালা।ধ্রুব যে কি করেন!আমার এতটুকু আত্মা।ওভাবে চেপে ধরলে দম আঁটকে টপকে না যাই।
দরজায় শব্দ হতেই বুঝলাম ধ্রুব এসেছেন।আমি পেছন ফিরে তাকালাম না।কান খাঁড়া করে শুনলাম উনি ধীরে ধীরে এদিকে এগিয়ে আসছেন।হৃৎস্পন্দনের গতি তখন বেড়েছে বহুগুণ।বৃষ্টির জলের শীতলতায় কেঁপে যাচ্ছিলাম আমি।ধ্রুব আমার পেছন এসে দাঁড়াতেই চোখ খিঁচে বুজে নিলাম আমি।ক্ষনকাল বাদে চোখ খুলতেই চোখের সামনে অন্ধকার দেখতে পেলাম।বুঝলাম বিদ্যুৎ চলে গেছে।অন্ধকারে তেমন একটা ভয় না পেলেও নতুন জায়গায় এসে ভীত হয়ে পরলাম আমি।অন্ধকারে হাতড়ে ধ্রুবর খোঁজ চালাতে চালাতে ভীতস্বরে ডেকে উঠলাম,
“ধ্রুব?”
কেন সাড়াশব্দ নেই!লোকটা তো আমার পেছনেই ছিল।আমি ভেজা ঢোক গিলে ফের ডেকে উঠলাম,
“ধ্রুব কোথায় আপনি?ভয় পাচ্ছি আমি।”
তবুও লোকটার খোঁজ নেই।ঘুটঘুটে অন্ধকারে তাকে ঠাউর করাও যাচ্ছে না।যেখানটায় এসে উনি দাঁড়িয়েছিলেন সেখানটায় নেই।আমি বুঝলাম উনি ইচ্ছে করে সাড়া দিচ্ছেন না।মনে মনে খানিক রাগলাম আমি।লোকটা আজকাল আমাকে জ্বালানোর চেষ্টায় মেতেছে।আমি কন্ঠে রাগ ও ভয় মিশিয়ে বলে উঠলাম,
“আমি কিন্তু রাগছি বললাম।ভয় হচ্ছে বললাম তো।ইচ্ছে করে চুপ হয়ে আছেন।”
হঠাৎ দরজায় কড়া পরলো।আমি চমকে তাকালাম।ক্ষনকাল বাদেই দরজা খুলে দিলেন ধ্রুব।বাইরে একজন লোক দাঁড়িয়ে। সম্ভবত বাড়িওয়ালা!
হাতে একটা জ্বলন্ত মোম দিয়ে দাড়িয়ে আছেন লোকটি।সেই মোমের ক্ষুদ্র আলোয় ধ্রুবর অবয়ব স্পষ্ট।ভেজা শার্ট বলিষ্ঠ দেহের সাথে লেপ্টে।সাংঘাতিক লাগছিলো ওনার এই রুপ!আমি ঢোক গিললাম।সেই সাথে বেড়ে গেলো দেহের কাঁপুনি।বৃষ্টিতে ভেজা ঠিক হয়নি।জ্বর-টর আসবে না তো?
লোকটা ধ্রুবর হাতে দুটো মোমবাতি দিয়ে গেলেন।পরিবেশ শান্ত না হওয়া অবধি বিদ্যুৎ আসবে না।নতুন আসায় আমাদের ঘরে মোমবাতি থাকার সম্ভাবনা শূন্য শতাংশ।তাই উনি নিজে থেকে দিয়ে গেলেন।ধ্রুব ওনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে জ্বলন্ত মোমবাতির আগুনেই একটা মোমবাতি জানিয়ে ওনাকে বিদেয় জানালেন।তারপর দরজা এঁটে ফিরে তাকালেন আমার দিকে।মোমবাতির জ্বলন্ত শিখায় দৃশ্যমান হলো ওনার মুখশ্রী।বহ্নি শিখায় সোনালি রঙ ধারণ করা ওনার সুন্দর মুখশ্রী।মুখে বেড়ে ওঠা খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি আর সেভ করা হয়নি।
ওনাকে দেখে আমি কিছু না বলে গাল ফুলিয়ে রইলাম।ধ্রুব এগিয়ে এলেন ধীর গতিতে।মোমবাতিটা নিয়ে এলেন দুজনের মাঝে দৃশ্যমান হলো আমার মুখশ্রী।আমি তাকিয়ে দেখলাম ওনার গভীর চোখের দিকে।অব্যক্ত কোন চাওয়া দৃশ্যমান তাতে।ওই দৃষ্টি চুম্বকের ন্যায় আটকে দিলো আমায়।তীব্র আর্কষণে তাকিয়ে রইলাম আমি।ধ্রুব মোমবাতিটা সাইডে রেখে ওনার মুখশ্রী আমার দিকে এগিয়ে নিয়ে এলেন।লোকটা দীর্ঘ হওয়ার ঝুঁকে এলেন।ওনার নিঃশ্বাস আমার চোখেমুখে পরতেই চোখ খিঁচে বুজে নিলাম আমি।থরথর করে কাঁপতে লাগলো আমার ওষ্ঠদ্বয়।ধ্রুব আকস্মিক এক সাংঘাতিক কাজ করে বসলেন।মুহুর্তেই চোখ বড় বড় করে তাকালাম আমি।ধ্রুব আমার ঠোঁটের ভাজে ওনার ঠোঁট গুঁজে দিয়েছেন!সেকেন্ড দশেক হতেই সরে দাড়ালেন উনি।আমার চোখের বিস্ময় কাটেনি তখনো।বড় বড় আঁখি মেলে তাকিয়ে আছি ধ্রুবর পানে।লম্বাদেহী যুবক সোজা হয়ে আমার দিকে তাকালেন।চোখে চোখ রেখে নম্র স্বরে বললেন,
“অনুমতি না দেওয়ার জন্য দুঃখিত।”
তারপর আমাকে লক্ষ্য করে বললেন,
“তোমার বিস্ময় কাটছে না!ওয়েট।”
ফের একই কান্ড করলেন উনি।আমি ভেজা শাড়ি খামচে ধরলাম।চোখ খিঁচে বুজে নিলাম আমি।থরথর করে কাঁপছি আমি।প্রচন্ড গতিতে চলছে হৃদপিণ্ড।ধ্রুব আমার কোমড় জড়িয়ে ধরলেন আলতো করে।দুজনের ভেজা কাপড়ে মেঝে ভিজে একাকার।
মিনিট পরে ধ্রুব কানের কাছে ফিসফিসয়ে বললেন,
“আবারো দুঃখিত।এইবার অনুমতি নিচ্ছি কেমন?”
সেকেন্ড থেমে বললেন,
“এমন করে কাঁপছো কেন?শরীর ও বেশ ঠান্ডা মনে হচ্ছে!”
ধ্রুব খানিক চিন্তিত স্বরে বলে উঠলেন।আমি তখন ভীষণভাবে ঢুলছি।মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।উনি আমাকে আগলে নিলেন।বললেন,
“ঠান্ডা না লাগার প্রচেষ্টা করি?রেগো না কেমন।একটু ভালোবাসি?বউ?”
আমি ওনার পিঠে আমার হাত রাখলাম। ওনার বুকের কাছটায় মাথা রেখে বুঝলাম।সেখানটার করুন অবস্থা!লোকটাকে আশাহত করা উচিত হবে না।
.
শহরের সকাল আর গ্রামের সকালের মাঝে বিস্তর তফাত।গ্রামের সকালের ন্যায় পাখিদের কিচিরমিচির কানে এসে বাজে না।তার বদলি রিক্সার হর্ণের টুংটাং আওয়াজ এসে বাজে কানে।আমি ঘুম থেকে উঠে স্নানঘরে প্রবেশ করলাম।স্নান করে বেরিয়ে আসতে আসতে মিনিট বিশেক কেটে গেল।পরনে এখন হালকা কমলা রঙের একটা শাড়ি।আটপৌরেই পরেছি এবার।মাথার ভেজা চুলে গামছা পেছানো।দর্পনের সামনে এসে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বিছানায় ঘুমন্ত ধ্রুবর পানে তাকালাম।একটা পাতলা কম্বল মুড়ে পাশ ফিরে বেঘোরে ঘুমাচ্ছেন উনি।আমি উঁকি দিয়ে ওনাকে দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসলাম।সাথে সাথে দুহাত চলে এলো মুখশ্রীতে।মুখশ্রী ঢেকে রেখেছে তারা।গালদুটোর লাল আভা ঢেকে গেল তাদের পেছনে।আমি আয়নার সামনে দাড়িয়ে ধীরে ধীরে তাকালাম।তারপর চুল থেকে গামছা খুলে পাশে রেখে দিলাম।ওমনি টপটপ করে জল পরতে লাগলো লম্বা কেশ থেকে।সিঁদুর সিঁথিতে লেপ্টে নিয়ে চুলে হাত দিলাম আমি।চিরুনি চালিয়ে আবার গামছা পরে নিলাম।দ্রুত বেরিয়ে আসলাম শোয়ার ঘর থেকে।আসার সময় ঘুমন্ত ধ্রুবকে দেখলাম পাশ ফিরে।
রান্না ঘরে এসে চুলোয় আগুন জানিয়ে প্রথমেই চা বানাতে শুরু করলাম।এটা আমার বাড়ির অভ্যেস।শশুর বাড়িতে থাকতে কিছুদিনের জন্য এটা ভুলে ছিলাম।দুকাপ চা বানিয়ে নিয়ে শোয়ার ঘরের দিকে এগোলাম আমি।পড়ার টেবিলের একপাশে চায়ের কাপদুটো রেখে মৃদু আওয়াজে ডেকে উঠলাম ধ্রুবকে।তবে গলার স্বর এত নিচু ছিল যে ওনার কানে পৌঁছায়ইনি নিশ্চিত।এটা অবশ্য আমার ইচ্ছাকৃত।লজ্জা লাগছে বেশ।তবুও গাঢ় একটা শ্বাস ফেলে এবার জোরে ডেকে উঠলাম,
“উঠুন।সকাল হয়ে গেছে।”
খানিক বাদে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলেন উনি।গায়ে শার্ট জড়াতে জড়াতে আমার দিকে তাকালেন।আমি আড়চোখে তাকালাম।চোখাচোখি হতেই দৃষ্টি অন্যত্র আনলাম দ্রুত।ধ্রুবর ঠোঁটে মৃদু হাসির রেশ।
“হাতমুখে ধুয়ে আসুন।আপনার জন্য চা।”
ধ্রুব স্নানঘরে ঢুকতেই আমি দ্রুত আমার চায়ের কাপ শেষ করলাম।তখনই দরজায় কড়া পরলো।আমি ভ্রু কুঁচকে একটা স্নানঘরে দিকে তাকিয়ে ফের তাকালাম দরজার দিকে।তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম দরজার দিকে।দরজা খুলে সামান্য মাথা বের করতেই ডাকপিয়নের পোশাকে থাকা লোকটা একটা চিঠি ধরিয়ে দিলেন হাতে।আমি অবাক হয়ে দরজা বন্ধ করে চিঠিটার দিকে তাকালাম।প্রাপকের স্থানে আমার নাম।নির্বানী ধ্রুব দেবনাথ!আর প্রাপকের জায়গার নামটা দেখতেই মুচকি হাসি ফুটলো আমার ওষ্ঠজুড়ো।সেথায় লেখা রাই দেবী!
কিন্তু আমার কপালে ভাজ পরলো হঠাৎ।এই ঠিকানা রাই জানলো কিভাবে?আমরা আসলাম কদিন হলো।তবে কি ধ্রুব আগে থেকেই বাড়িটা ভাড়ায় নিয়েছিলেন?এই কদিনে গুছিয়ে আমায় নিয়ে আসলেন?
আমি ভাবনায় ডুবে থেকে চিঠিটা বের করলাম।ছোট ছোট অক্ষরে লেখা অনেকগুলো শব্দ।মনে মনে পড়তে লাগলাম আমি।
❝প্রিয় নির্বানী,
আশা করি ভালো আছো।ঈশ্বরের কৃপায় আমিও মন্দ নেই।ধ্রুব কেমন আছে?আশা করছি দুজনেই শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো আছো।ভাগ্যিস ধ্রুব এই ঠিকানাটা দিয়ে গিয়েছিল!নয়ত চিঠি পাঠাতাম কিভাবে।তোমরা চলে যাওয়ার পর কয়েকদিন কেটে গেল।খুব মনে পরেছে তোমাকে।তুমি চলে যাওয়ার পর আমার ঘরে আর কেউ আসে না।দরজায় কড়া নেড়ে মৃদুস্বরে কেউ আসার অনুমতি চায় না।তুমি আমার একমাত্র সখি ছিলে।আভা প্রভা দুজন ভালো বোন হলেও তুমি আলাদা।শুদ্ধ মনের একজন সুন্দর মানুষ।সাথে রূপবতীও।প্রশংসা করলাম একটু।একটু বিস্মিত হয়ো তো।আবার আবেগপ্রবন হয়ে পরো না।একটা সংবাদ দেওয়ার জন্য চিঠি লেখা।তবে সেটা না লিখে এসব লিখতেই ভালো লাগছে।তার আগে বলছি তোমার চোখে যেন একটুও জল না আসে।না মানে না।এটা আমার আদেশ!একজন বড় বোন ও সখির আদেশ।মানার অনুরোধ।গাঢ় একটা শ্বাস নাও।এবার শোন।শশী নামক কীটের নাশ হয়েছে!তোমরা চলে যাওয়ার পরের দিন বিষক্রিয়ায় মারা গেছে সে।তুমি কি আন্দাজ করতে পারছো আমি কত খুশি?তুমি বোধয় বাঁকা চোখে দেখছো আমার দিকে তাই না?কারো মৃত্যুতে কেউ কিভাবে খুশি হতে পারে?যা খুশি ভাবো।তবে তুমি মন খারাপ করো না।ওর ব্যাহিক রুপটায় মনোরম ছিল।ভেতরে থাকা নাগিনীর বিষ তো পেয়েছো নাকি!তবে শুভর শাস্তিটা এখনো রয়ে গেল।সেটাও পূরণ করবে ঈশ্বর।ভেবো না।
আজ এতটুকুই।ভালো থেকো।ঈশ্বর তোমাদের সুখে রাখুক।”
ইতি
রাই❞
রাইয়ের চিঠিটা বসে আমি ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলাম।তবে চোখ শুন্য!রাই মানা করেছিলো তো।নয়ত একটু জল জমতে দিলাম চোখে।আমি চিঠিটা ফের খামে ভরে বিরবিরয়ে বলে উঠলাম,
“ওঁ দিব্যান লোকান স্ব গুচ্ছতু!”
পায়ের আওয়াজ পেয়ে পেছনে তাকালাম।ধ্রুব চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে এগিয়ে আসছেন।আমার চেহারা দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন।বললেন,
“কোন সমস্যা?”
আমি কিছু না বলে খামটা ওনার দিকে বাড়িয়ে দিলাম।উনি আরেকটু ভ্রু কুঁচকে সেটা হাতে নিলেন।কাপের চা শেষ হয়ে এসেছিলো।উনি সেটা পাশে রেখে চিঠি খানা পড়লেন।মুখশ্রী গম্ভীর দেখানো ওনার।পড়া শেষে চিঠিটা ক্ষনকাল হাতে রেখে আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন ফের।
.
জমিদার বাড়ি!ধরিত্রীতে সন্ধ্যে নামায় প্রদীপ,মশাল ও হারিকেনের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে এই মহল।গেট ঠেলে একজন ভদ্রলোক ভেতরে এলেন।যুবকই বলা চলে!গ্রামের স্কুলের নতুন শিক্ষক।ছাত্র-ছাত্রীদের অংক পড়ান।প্রভা ও আভার জন্য তাকে নিয়োগ করা হয়েছে।ভদ্রলোকের নাম পূর্ণ।বসার ঘর থেকে প্রভা-আভার কক্ষের ঠিকানা নিয়ে পূর্ণ সোজা চললো দোতলায়।দোতলায় পৌঁছে পূর্ণবিরাট বর এক ভুল করে বসলো।সর্বশেষ কক্ষের আগের কক্ষটায় প্রবেশ না করে,সর্বশেষ কক্ষে প্রবেশ করলো পূর্ণ।ভুলবশত করলো না অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন।
আচমকা কক্ষে কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে ফট করে পেছন ফিরে তাকায় রাই।ওমনি তার চক্ষু চড়কগাছ!
শার্ট-প্যান্ট পড়ুয়া এক যুবক দাড়িয়ে আছেন অবাক হয়ে।চোখে আবার চশমাও আছে।রাই বসে বসে সুগন্ধি মাখছিলো।হঠাৎ অচেনা লোকের উপস্থিততে তার কপালে ভাঁজ পরলো।খানিক রুষ্টও হলো সে।শক্ত জবানে বলে উঠলো,
“কে আপনি?অনুমতি ব্যতিত আমার কক্ষে প্রবেশ সাহস পান কি করে?”
পূর্ণ শুকনো ঢোক গিললো।জমিদার বাড়ির মেয়ের কড়া তেজ।সে আমতা আমতা করে বললো,
“দুঃখিত।আমি আসলে..”
“আপনি আসলে কি?”
পূর্ণকে পুরো কথা শেষ করতে বা দিয়েই পুনরায় গর্জে উঠলো রাই।ভ্রু কুঁচকে তাকালো রাগ নিয়ে।পূর্ণ এবার তড়িঘড়ি করে বললো,
“আসলে আমি শিক্ষক।প্রভা-আভাকে পড়াতে এসেছি।কিন্তু ভুলক্রমে আপনার কক্ষে এসে পরেছি।দুঃখিত,মহোদয়া!
পূর্ণর মার্জিত ও শুদ্ধ কথা বলার ধরন দেখে শান্ত হলে রাই।বললো,
“এর আগের কক্ষটা ওদের।আপনি যেতে পারেন।”
পূর্ণ আর দাড়ালো একবার কেবল চোখ তুলে তাকালো গোলাপি শাড়ি পরিহিতা শৃঙ্গার রত রাইয়ের পানে।তারপর দ্রুত প্রস্থান করলো।
চলবে…