#মম_হৃদয়_বিহারিনী
#ঐশী_রানী_রক্তিমা
২১.
দুদিন কেটে গেছে।সময় যেন চলছে বায়ুর গতিতে।গা ছুঁয়ে দিয়েই আর অস্তিত্ব নেই।কেবল বোঝা যায় একটু আগে সে কায়া ছুঁয়েই গেল।বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা কাছে আসছিলো।আর মাস খানেকের মতো সময় মাত্র।আমার হৃদয় তখন এ কথা ভাবতে ভাবতে আতংকে ডুবে যেত।পড়ার টেবিলের একপাশে আমার বই স্থান পেল।ধ্রব একাই আমার বাড়িতে গিয়ে বইগুলো নিয়ে এসেছিলেন।ধ্রুবর আর আমার বিভাগ আলাদা।উনি বিজ্ঞানের ছাত্র আর আমি মানবিকের।আমি ভয়ে ভয়ে প্রস্তুতি নিতে লাগলাম।পড়তে গেলে বুক কেঁপে উঠতো।যদি চান্স না পাই!সবচেয়ে বড় ভয়টা ছিল উনি এত আশা নিয়ে আমাকে শহরে নিয়ে এলেন।আমি যদি ব্যর্থ হই?
আমার মনের ভেতরে সংঘটিত এই চিন্তা ভাবনা যেন ধ্রুব বুঝতে পারতেন।এক সন্ধ্যায় আমি ভয়ে ভয়ে বইয়ে চোখ বুলাচ্ছিলাম। পড়ার টেবিলের দুপাশে বসে আমরা পড়াশোনা করি।মুখোমুখি বসে!ধ্রুব বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়েন।ভদ্র,গম্ভীর স্বভাবের লোকটাকে তখন যে কি সুন্দর লাগে দেখতে।উনি এবার কেবল ৩য় বর্ষে।ভালো করে পড়লেই তবে ভালো চাকরি পাবে।চাকরি?ওনার জন্য তো গ্রামে এতবড় জমিদারী আছে!আমি মাঝে মাঝে পড়াশোনা বাদ দিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে এসব আজগুবি ভাবনায় ডুবে থাকি।ধ্রুব হঠাৎ পড়া থামিয়ে আমার দিকে তাকায়।আমি থতমত খাই।বইয়ে চোখ নিয়ে আসি।পরপরই শোনা যায় ওনার শান্ত কন্ঠ,
“ভালো ভাবে পড়ো।পরে পস্তাবে কিন্তু।”
আমি লজ্জায় চোখ খিঁচে বুজে নিয়ে পুনরায় খুলি।তারপর মাথা নত করে বইয়ের মনোযোগ দেই অনেকক্ষণ।ধ্রুব বোধহয় মুখ টিপে হাসেন!আমি টের পাই।মাঝে মাঝে তো বইয়ে দৃষ্টি রেখেই গম্ভীর স্বরে আদেশ ছুঁড়েন,
“আমাকে এত না পড়ে বই পড়ো।”
লাজুক আমি ধরা খেয়ে উশখুশ করতে করতে বইয়ে মুখ গুজি।
প্রতিদিন রাতে আমার জন্য একগ্লাস দুধ বরাদ্দ করেছেন উনি।তবে আমি এতে একটুও খুশি নই।আমার দুধ খেতে ভালো লাগে না।উনি দুধের গ্লাসটা আমার সামনে এনে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থাকেন।আমি ঠোঁট উল্টে তাকাই।করুন দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে ওনাকে বোঝানোর চেষ্টা করি আমি খেতে চাচ্ছি না।এটা আমার অপছন্দের তালিকায়।ধ্রুবর দৃশ্য আরেকটু তীক্ষ্ণ হয়ে আসে।আমি ঠোঁট উল্টে চোখ মুখ কুঁচকে গ্লাসের দুধ শেষ করি।ওনার ঠোঁটের কোণে সুক্ষ্ম হাসি ফুটে।ঠোঁটের উপরে লেগে থাকা দুধটা বা হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে মুছে দিতে দিতে কপালে ঠোঁট ছোঁয়ান।তারপর গ্লাসটা হাতে নিয়ে বলে উঠেন,
“গুড ওয়াইফ।”
আমি চোখ পাকিয়ে তাকালে উনি আমার দিকে ঝুঁকে আছেন।আমি লজ্জা পেয়ে দুহাতে মুখ লুকাই।খানিক শব্দ করে হেসে উঠেন ধ্রুব।ওনার হাসি আর আমার লজ্জায় ভরে উঠে আমার সংসার।
.
দেখতে দেখতে ভর্তি পরীক্ষা চলে এলো।আজ বাদে কাল পরীক্ষা।আমি পড়ার টেবিলে বসে পড়ছি আর দুঃশ্চিন্তা করছি।সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে।সন্ধ্যার আগেই রাতের রান্না রেঁধে ফেলি আমি।দুজন মানুষের রান্না করতে খুব একটা সময় লাগে না।ধ্রুব একটু বাজারে গিয়েছেন।রাইকে হঠাৎ করে মনে পরছে।মাসখানেক আগে তার চিঠি এসেছিলো।আমি উত্তর পাঠিয়েছিলাম সংক্ষেপে।শাশুড়ী মা,তার আর বাড়ির সকলের খোঁজ নিয়েছিলাম।এরপর আর কোন যোগাযোগ হয়নি।কেমন আছে সকলে?আমার কথা তাদের আদো মনে পরে?
ভাবনার মাঝেই দরজায় কড়া পরলো।আমি চটজলদি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম।শোয়ার ঘর থেকে দ্রুত পা চালিয়ে এসে থামলাম দরজার সামনে।দরজা খুলতেই সেই কাঙ্ক্ষিত মুখখানা।আমি মুচকি হেসে সরে দাড়ালাম দরজা ছেড়ে।ধ্রুব ভেতরে প্রবেশ করলেন।পরনে শুভ্র রঙের শার্ট।কাঁধের দিকটা ঘামে ভিজে লেপ্টে আছে বলিষ্ঠ দেহের সাথে।উজ্জ্বল শ্যামলা বরণটা দৃশ্যমান।কপালের কাছটায় চুলগুলো খানিক ভেজা।আমি ওনার হাত থেকে বাজারের ব্যাগটা নিয়ে রান্নাঘরে রেখে আসলাম।ধ্রুব বসার ঘরের বেতের চেয়ারটায় বসলেন আরাম করে।আমি এগিয়ে আসতেই ওনার ক্লান্ত মুখশ্রী দেখে ফের ছুটলাম রান্নাঘরে।মাটির কলসিতে রাখা ঠান্ডা জল গ্লাসে ভরে এনে ওনার দিকে বাড়িয়ে দিলাম।উনি আমার দিকে তাকিয়ে আগে হাত বাড়ালেন আঁচলের দিকে।শাড়ির আঁচলে মুখখানা মুছতে মুছতে বললেন,
“হুহ!এত কষ্ট করে আসলাম বাইরে থেকে অথচ বউয়ের মুখের ঘাম মুছে দেওয়ার হদিস নেই।”
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম ওনার দিকে।উনি তখন মুখ মুছতে মুছতে নাক ডুবিয়ে আছেন শাড়ির আঁচলে।
“জলটা খান।”
ধ্রুব আঁচল ছেড়ে দিয়ে জলের গ্লাসটা শেষ করলেন।আমি সেটা রান্নাঘরে নিয়ে রেখে আসার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই উনি আমার হাতে খপ করে ধরলেন।আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে পেছন ফিরে তাকাতেই ধ্রুব বললেন,
“বাজারের ব্যাগটাকে গিয়ে দেখ তোমার ফেবারিট মিষ্টি দই আছে।”
তৎক্ষণাৎ আমার চোখ চকচক করে উঠলো।উনি হাত ছেড়ে দিলে আমি রান্না ঘরে এলাম।গিন্নিদের মতো স্বামী বাজার করে আনা মাত্রই ব্যাগে কি আছে সেটা পর্যবেক্ষণ করা হয় না।আমি এই কাজটা করি তার কয়েকঘন্টা পর।বাড়ির কর্তাকে জল-টল খাইয়ে শান্ত করানোর সময়ই উনি এমন চমকপ্রদ খবর দেন আমাকে।আমি তারপর ছুটি ব্যাগে কি কি আছে দেখার জন্য।আজও ওনার দেওয়া খবর শুনে রান্না ঘরে এসে বাজারের ব্যাগটা ঘাটতেই হাসি ফুটলো আমার মুখে।
মিষ্টি দুইয়ের দুটো ছোট মাটির হাঁড়ি।দুটোই যে আমার জন্যে এনেছেন।লোকটা দই খায় না!আমি বহু সাধাসাধির পর একটু খান তবে মুখটা কেমন করে যেন তাকিয়ে হাসেন।আমি মুখ টিপে হাসি।বলি,
“আচ্ছা আর সাধবো না খাওয়ার জন্য।”
রাতের খাওয়াদাওয়া শেষ করে ধ্রুব পড়তে বসেছেন।আমি রান্নাঘর গুছিয়ে শোয়ার ঘরে পা ফেলেছি সবে।আমাকে দেখেই ধ্রুব কাছে ডাকলেন।আমি নিকটে এসে দাঁড়াতেই আমার দিকে গাঢ় দৃষ্টি পরলো ওনার।শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলেন,
“কালকের জন্য টেনশন হচ্ছে?”
“প্রচুর!”
“স্বাভাবিক।”
তারপর ক্ষনকাল থেমে বলে উঠলেন,
“পরীক্ষা খারাপ হলে মন খারাপ হবে?”
আমি চোখ তুলে ওনার চোখে তাকালাম।যদিও ওনার চোখে তাকাতে আমার খুব লজ্জা করে তবুও কয়েক সেকেন্ডের জন্য এই দুঃসাহস করে বসলাম আমি।ধ্রুবকে জিজ্ঞেস করে উঠলাম,
“আপনার মন খারাপ হবে?”
চুপ করে রইলেন উনি।তারপর চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে দাড়ালেন আমার নিকটে।হঠাৎ কোমড়ে ওনার আলতো স্পর্শ!লোকটা আমাকে এমনভাবে ছোঁয় যেন আমি ফুলের পাপড়ি।একটু চাপ পরলেই মিইয়ে যাবো!
ধ্রুব আমার সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে দাড়ালেন।আমি লজ্জায় মাথা মত করে ফেললাম।মাথা এসে ঠেকলো ওনার বক্ষদেশ।ধ্রুব একহাতে আমার থুতনি ধরে মুখশ্রী তুলে ধরতেই চোখাচোখি হলো আমাদের।উনি আমার গালে ওনার ঠোঁটের স্পর্শ একে বললেন,
“আপনার মন খারাপ না হলে আমায় মন খারাপ ছুঁয়েও দেখবে না।”
আমি কিছু না বলে তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে।উনি হঠাৎ বলে উঠলেন,
“একটু লম্বা হয়েছেন বউ!চুমু খেতে সুবিধে হচ্ছে।”
তারপর আমার হঠাৎ কোলে তুলে নিলেন উনি।আমি প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকালাম।শোয়ার ঘরের সাথে লাগোয়া বারান্দায় এসে দাড়ালেন উনি।এখানে কেবল একটা বেতের চেয়ার পাতা।সেখানটায় উনি আমাকে কোলে নিয়েই বসলেন।বারান্দাটা অনেকটায় খোলা।মাথার উপর ছাঁদ নেই।ফুরফুরে হাওয়া আসে।ধ্রুব থাকলে আমি প্রায়শ এখানটায় আসি।রাতের আঁধারে বসে থাকা হয়েছে বহুদিন। বারান্দাটা পুরোপুরি অন্ধকার নয়।ঘরের আলো এসে একটু আলোকিত করে তুলেছে।
ধ্রুবর বুকে আলতো করে মাথা রাখলাম আমি এবার।উনি হঠাৎ খোঁপা করে রাখা চুলটা ছেড়ে দিলেন।দীর্ঘ কেশ এসে ঠেকলে মাটিতে।তবুও আমি সেভাবেই পরে রইলাম ওনার বুকে।চুলে বিলি কাটছেন উনি।হঠাৎ চমকে তাকালেন আমার দিকে।তীক্ষ্ণ নজরে গুরুগম্ভীর স্বরে বলে উঠলেন,
“তুমি কাঁদছো?”
আমি চমকে উঠলাম নিজেও।ওনার বুক থেকে মাথা তুলে তাকাতেই দেখলাম বুকের কাছের ভিজে ওঠা শার্টটায় ওনাকে জানান দিয়েছে এ কথা।আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে অশ্রু লুকানোর চেষ্টায়।প্রচন্ড চিন্তা হচ্ছে আমার।ধ্রুব এবার তাকালেন শান্ত চোখে।আমি ওনার কোল থেকে নেমে আসতে চাইলে এবার শক্ত করে চেপে ধরলেন উনি আমাকে।ওনার শান্ত স্বর শোনা গেল।
“একদম কাঁদবে না নির্বানী!তুমি দিন দিন ছিচকাঁদুনে হয়ে যাচ্ছো।কিন্তু আমি এই আদেশ দেইনি তোমায়!মনে আছে আমি কি বলেছিলাম?”
সূর্য প্রতিদিন পূর্বাকাশে উঠে পশ্চিমাকাশে অস্ত যায় এটা যেমন ধ্রুব সত্য তেমনি, ধ্রুবর এরকম আদুরে কথায় আমার কান্না থামার বদলে বেড়ে যায় এটাও ধ্রুব সত্য।আমি এতক্ষণ চুপচাপ কাঁদলেও এবার একটু শব্দ করে কেঁদে ফেললাম।অস্ফুটস্বরে বলে উঠলাম,
“যদি কাল পরীক্ষা খারাপ হয়!”
প্রতিত্তোরে ধ্রুবর কথা এরুপ।
“এবার কান্না না থামালে কিন্তু ভালোবাসবো!খুব বেশি।”
ততক্ষণে বড় বড় চোখে মেলে তাকালাম আমি ওনার দিকে।কান্নারা এসে আটকালো গলায়।সোজা হয়ে বসলাম আমি।উনি গালে জমে থাকা অশ্রু কণা মুছে দিতে দিতে বললেন,
“গুড ওয়াইফ।”
ফের একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
“সুযোগটা ছিনিয়ে নিলে।”
তারপর আমার পেটে ওনার গাঢ় স্পর্শ।কেঁপে উঠে ওনার বাহুর শার্ট খামচে ধরেছি আমি।ধ্রুব মুচকি হেসে কানের নিকট ঠোঁট এনে ফিসফিসয়ে বলে উঠলেন,
“তবে আমি নিয়ম ভঙ্গ করি?ডোন্ট মাইন্ড।”
.
পরদিন সকাল নটা বাজতেই পুরোপুরি তৈরি হয়ে নিলাম আমি আর ধ্রুব।পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য।আমার পরনে হালকা গোলাপি রঙের শাড়ি কুচি দিয়ে পরা।লম্বা চুলটা আজ বিনুনির রুপ ধারণ করেছে।কানে ছোট্ট ঝুমকো আর হাতে শাখার সাথে দুটো বালা পরেছি।আজকাল একটু আধটু সাজতে খারাপ লাগে না।আমার তৈরি হওয়া শেষে ধ্রুব এসে দাঁড়ান দর্পনের সামনে।জমিদার বাড়ির তুলনায় এ ঘরের জিনিসপত্র বেশ সাধারণ।আয়নাটাও ছোটখাটো।ধ্রুবর পরনেও হালকা গোলাপি রঙের শার্ট তবে রঙটা আমার শাড়ির থেকে হালকা।উনি চুলটা হালকা আঁচড়ে আমাকে নিয়ে বেরোলেন।অনেকদিন পর শহরের রাস্তায় পা রাখা হলো।ধ্রুবর হাত আমার হাতে গুঁজে রাখা।আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে হাঁটছি।আমায় দিশা দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ধ্রুব।
রাস্তায় চলার সময় বেশ কয়েক জড়ো চোখ এসে পরলো আমাদের উপর।তবে আমার মাথার সিঁদুর আর হাতের শাখা পলা জানিয়ে দিল এ সম্পর্ক পবিত্র।আমি ধ্রুবর বাহু ধরে হাঁটতে লাগলাম এবার।পরীক্ষার কেন্দ্রে এসে আমাকে যথাস্থানে বসিয়ে দিয়ে ধ্রুব বলেন,
“একদম ঘাবড়াবে না।ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষা দিও।দেখবে অনেকতটাই তোমার কমন এসেছে।মোটকথা মাথা ঠান্ডা রেখো।আমি বাইরে অপেক্ষা করছি।কোথাও যাচ্ছি না।তুমি পরীক্ষা শেষ করে আসলেই আমাকে দেখতে পাবে।”
আমি এতগুলো কথার প্রতিত্তোরে কেবল মাথা নাড়িয়ে হ্যা বুঝিয়েছি।ধ্রুব চোখের ইশারায় আমাকে আশ্বাস দিয়ে বেরিয়ে পরেন কেন্দ্র থেকে।যথারীতি পরীক্ষা শুরু হয়।পরীক্ষা শেষে আমি বের হয়ে আসতেই ধ্রুবকে নজরে পরে।আমি এগিয়ে যাই ওনার দিকে।ধ্রুব আমার স্বাভাবিক হয়ে আসা মুখশ্রী দেখে ঠাউর করেন পরীক্ষা ভালোই হ’য়েছে।
তারপর আরো বাকিসব পরীক্ষা শেষ হয় একে একে।আমি একটা আশার আলো দেখতে পাই।পরীক্ষা শেষে ধ্রুব প্রস্তুতি নেন বাড়িতে যাওয়ার।সামনেই দুর্গাপূজো!
আর পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের এখনো অনেক দেরি।তাই আমরা চিঠি লিখতে বসি বাড়ির উদ্দেশ্যে।
.
দুপুরের কড়া রোদে ছাঁদে দাড়িয়ে আছে রাই।লম্বা চুলটা ছেড়ে রাখা।সেখান থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় জল গড়াচ্ছে ছাদের মেঝেতে।বোঝায় যাচ্ছে একটু আগেই স্নান ছেড়েছে সে।অদুরেই একটা বালতি রাখা।ছাদে এভাবে দাড়িয়ে থাকার কারণ মুলত ভেজা চুল শুকানো।হঠাৎ পায়ের শব্দে পেছনে তাকায় রাই।আভা-প্রভার মাস্টার মশাই দৃষ্টিগোচর হয়।ভ্রু কুঁচকে তাকায় রাই।লোকটা তাকে দেখে কিছু একটা লুকালো!
পূর্ণর সন্ধ্যাবেলা যাতায়াতে অসুবিধা হয় একথা সুবোধ দেবনাথকে জানানোর পর বাড়িতেই একটা কক্ষে থাকার ব্যবস্থা করে দেন তিনি।পূর্ণ স্থানীয় না।সঠিক ঠিকানা রাইয়ের অজানা।
কালো পাঞ্জাবি পড়ুয়া পূর্ণ দেখতে উজ্জ্বল বর্ণের।মাথায় ঈষৎ কোকড়া চুল।আর চোখে চশমা।বিজ্ঞ বিজ্ঞ একটা রেশ আছে মুখশ্রীতে।কিন্তু তাকে কিছু একটা লুকাতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায় রাই।ততক্ষণে পূর্ণ সেটা দুরে কোথায় ফেলে দিয়েছে।ছাদ থেকে চলে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই রাই বলে উঠে,
“আসলেন কেন?আর চলেই বা যাচ্ছেন কেন?”
পূর্ণ এবার দাঁড়ায়।একবার চোখ বুলায় রাইের দিকে।রাই তার দিকে না তাকিয়েই প্রশ্নটা করেছে।রাইয়ের পরনের খয়েরী শাড়িটার রঙটায় একবার নজর বুলিয়ে পূর্ণ বলে উঠে,
“ছাদে আপনি আমি একা।বিষয়টা বিব্রতকর হবে?”
প্রাতঃকালের ন্যায় শান্ত,স্নিগ্ধ স্বর পূর্ণের।এর আগে রাইয়ের খেয়ালে আসেনি।লোকটার সাথে তার আলাপই কম হয়েছে।এটা নিয়ে বোধহয় তিনবার!
রাই ঘুরে তাকায় একটু।লোকটা তখনো ছাদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে।রাই তীক্ষ্ণ চোখে তাকায় পূর্ণের দিকে।লোকটার হাতে একটা হাতঘড়ি দেখা যায় সবসময়।
রাই গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“কার কাছে বিব্রতকর হবে?
” আপনার।”
রাই দৃষ্টি সরিয়ে বলে,
“কি লুকানেন আমার থেকে?”
পূর্ণ চশমার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে ছিল রাইের দিকে। রাইের শুভ্র মুখশ্রীতে কয়েক ফোঁটা ঘাম সূর্যের আলোয় চিকচিক করছিলো তখন।পূর্ণ দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বলে,
“কই কিছু না তো ভুল দেখেছেন আপনি।”
রাই ভ্রু কুঁচকে চায় এবার।লোকটা মিথ্যে বলছে!
“আসি।বিরক্ত করলাম মহোদয়া।”
পরপরই চটজলদি পূর্ণের প্রস্থান।রাইয়ের চাহনি সরু হয়ে আসে।লোকটা তার সামনে আসলে একটু পালাই পালাই করে কেমন যেন!সে কি বাঘ নাকি ভাল্লুক?
রাই এবার আশেপাশে দৃষ্টি দিয়ে কিছু খোঁজ।তারপর ছাদের দরজার নিচে একটা জিনিস দেখে সেটা হাতে নিয়ে দাড়ায়।সরু চোখে তাকিয়ে রুদ্ধশ্বাস ফেলে বলে,
“সিগারেট!”
চলবে…
ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ।হ্যাপি রিডিং 🌼