#মম_হৃদয়_বিহারিণী
#ঐশী_রানী_রক্তিমা
২৩.
“আমি সেখানে থাকতে এখন তুমি আমার খোঁজ নিতে আসতে?কতদিন একজন খোঁজ নিতে আসে না আমার!দরজায় কড়া নেড়ে শুধায় না,আসার অনুমতি আছে কি না।এইগুলোর জন্য আমার হৃদয় যে পিপাসিত হয়ে ছিলো।”
রাইয়ের কথা শুনে আমি আবেগে আপ্লূত হয়ে পরলাম।মেয়েটা মন কেড়ে নিতে দক্ষ!হঠাৎ দরজায় কারো কড়া নাড়ার আওয়াজ।একজন চাকরের নম্র স্বর ভেসে আসলো,
“দিদি মনি মাস্টার মশাই তোমার সাথে কথা বলতে চায়।”
রাইয়ের ভ্রু কুঁচকে এলো হঠাৎ।মুখশ্রীতে আসলো বদল।আমি জিজ্ঞেস করলাম,
“কে মাস্টার মশাই?”
“আভা-প্রভার গৃহশিক্ষক।অংক পরায় ওদের।একমাস যাবত এ বাড়িতেই আছেন।”
আমি অতি আস্তে ওহ উচ্চারণ করলাম।বাইরে চাকর তখন সেভাবেই দাঁড়িয়ে।ভেড়ানো দরজার একপাশের পর্দায় তার ছায়া দেখা যাচ্ছে।পিছনে আরেকটাও ভেসে উঠেছে।আমার কৌতুহল জাগলো।রাই অসাড় হয়ে দাড়িয়ে।কোন উত্তর দিচ্ছে না।এবার দরজার পর্দা সরিয়ে আমি বাইরে তাকালাম।মশালের আলোয় অপরিচিত একটা মুখশ্রী চোখে ভাসলো।চেহারায় আসলেই শিক্ষক শিক্ষক একটা ভাব আছে।চোখের মোটা ফ্রেমের চশমাটা সেই ভাব ধরে আছে।সেই সাথে বোধহয় বয়সটাও একটু বাড়তি দেখাচ্ছে।রাইয়ের স্থানে আমাকে দেখে লোকটা অবাক হয়।আমি ঘোমটা লম্বা করে টেনে নিয়ে গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করি,
“কি জন্যে প্রয়োজন তাকে?”
লোকটা আমাকে চেনে না।আমিও শুধু তার ততটুকুই পরিচয় জানি যতটা রাই এখন বললো।লোকটা নম্র স্বরে বললো,
“দুঃখিত!আমি ওনার সাথে কথা বলার জন্য ইচ্ছুক এবং সেটা প্রয়োজন।আপনাকে আমি চিনছি না।”
পাশ থেকে চাকর বলে উঠে,
“জমিদার গিন্নি উনি।ধ্রুব বাবুর বউ।”
লোকটা সম্মান নিয়ে তাকালো।যদিও যথেষ্ট সম্মান তার দৃষ্টিতে আগে থেকেই ছিলো।আমি পর্দা টেনে রাইয়ের নিকটে আসলাম।রাইয়ের কোন প্রতিক্রিয়া নেই।লোকটার কথা শোনার পর থেকে মুখের হাসিটুকু বিলীন।আমি ধরেই নিলাম রাইয়ের বোধহয় পছন্দ নয় লোকটাকে।তবুও বলে উঠলাম,
“লোকটা কথা বলতে চায়।বোধহয় কোন দরকার।”
রাই দীর্ঘশ্বাস নিলো গোপনে।তারপর এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো পর্দা টেনে।দীর্ঘ কেশের বিনুনি নৃত্য থামালো সে স্থির হয়ে দাঁড়ালে।আমি কক্ষ থেকে তাদের বাক্যালাপ শুনতে লাগলাম।
“কি দরকার?”
পূর্ণ পাঞ্জাবির পকেট থেকে দুটো নোট বের করলো।তারপর সেটা রাইয়ের দিকে বাইরে দিয়ে বললো,
“আমার সম্মানির টাকায় এই দুটো নোট বেশি ছিল।এটা সুবোধ বাবুকে ফেরত দিয়ে দেবেন।”
পূর্ণর কথায় ভ্রু যুগল ভীষণভাবে বেঁকে গেল রাইয়ের।একবার পূর্ণের দিকে তো আরেকবার তার দিকে বাড়িয়ে রাখা নোটদুটোর দিকে তাকালো সে।পূর্ণ অস্বস্তিতে পরলো ভীষন!
রাই বলে উঠলো,
” এটা আপনার নিকটই রেখে দিন।জমিদার বাড়ির কেউ কিছু দেওয়ার পর ফেরত নেয় না।”
“কিন্তু আমি আমার সম্মানির বেশি নিতে পারবো না মহোদয়া।”
“পাপ লাগবে?”
রাইয়ের তীক্ষ্ণ প্রশ্ন।পূর্ণ মৃদু হেসে উঠলো।দু চারটে দাঁত তাতে উন্মুক্ত হতে দেখা গেল ঠোঁটের ভাজ থেকে।রাই যেন থমকানো।লোকটাকে এভাবে হাসতে দেখেনি আগে সে।স্নিগ্ধ একটা ভাব গড়াচ্ছে সেই হাসি থেকে।
“এমনিতেই এ বাড়িতে আমার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে আপনার মামা আমার বড় উপকার করেছেন।সম্মানিও মাত্রায় বেশি দেওয়া হয়।তাই এই বাড়তি টাকাটা আমি নিতে পারছি না।দুঃখিত।আপনি এটা ওনাকে ফেরত দিতে না পারলে নিজের কাছে রেখে দিবেন।”
কথাটা বলে পূর্ণ হঠাৎ রাইয়ের হাতের মুঠোয় পুরে দিলো টাকাটা। রাই চমকে উঠলো যেন!ডাগর আঁখি পল্লব তুলে চমকিত নজরে তাকালো পূর্ণর দিকে।ঠোঁট যুগল বিস্ময়ে একে-অপরের স্পর্শ থেকে আলগা হয়ে এলো একটু।পূর্ণ এই কাজ করেই প্রস্থান করলো।চাকর চলে গিয়েছিলো রাই উপস্থিত হওয়ার পরপরই।
রাই হাতের মুঠোয় থাকা টাকার দিকে তাকালো।পূর্ণ তাকে ছুঁয়ে দিলো?রাই সবিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো পূর্ণর প্রস্থানের দিকে।তার এত আশ্চর্য হওয়ার কারণ কি শুধুই এই সামান্য ছোঁয়া? মশালের আলোয় দৃশ্যমান তার মৃগনয়ন এই কথাই কি বললো?নাকি চোখের অগোচরে,মনের ভেতরে চাপা পরা কিছু লুকালো?
রাই হাতের মুঠোয় থাকা টাকার ভাঁজ খুললো কি মনে করে।দুটো শুকনো বকুল সেখানে।রাই চোখের পলক ফেলে তাকায় বকুলদুটো হাতের তলায় নিয়ে ঘ্রাণ নেয়।নাসিকা বেয়ে তরতর করে মস্তিষ্ক আঘাত হানে সুগন্ধ।রাইয়ের মন দ্বিতীয়বারের ন্যায় চমকে উঠে।হৃৎস্পন্দনের গতি বাড়ে অকস্মাৎ।রুদ্ধশ্বাস ফেলে একটা নাম উচ্চারিত হয় তার কন্ঠ থেকে পূর্ণ!
.
গ্রামে আমার সকালটা শুরু হয় অন্যরকমভাবে।পাখিদের কিচিরমিচির শব্দের ধ্বনি,ভোর বেলা মোরগের ডাক শুনেই ঘুম থেকে জেগে উঠে গ্রামের মানুষরা।তেমনিভাবে আজও আমার ঘুম ভাঙলো প্রকৃতির সাথে।ঘুম থেকে উঠেই বিছানার কাছের বিশাল জানালাটা খুলে দিতেই ফুরফুরে বাতাস আর সকালের দ্যুতি প্রবেশ করে কক্ষে।জানালা থেকে সরে দাড়ালে রৌদ্দুর এসে সোজা চুমু খায় ধ্রুবর চোখেমুখে।উনি চোখ কুঁচকে অন্যপাশ ফিরে ফের ঘুমান।আমার ওষ্ঠকোণে তখন থাকে দুষ্টমির রেশ।ওনার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আমি জানালা গলে বাইরে তাকায়।ঝলমলে সকালের দুরের ওই স্রোতস্বিনী হাতছানি দিয়ে ডেকে উঠে আমাকে।আমি দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে বাতাসের বিশুদ্ধতা শুষে নেওয়ার প্রচেষ্টা করি।মৃদু বাতাসে আমার খোলা কেশ নেচে উঠে।মেঝে ছুঁয়ে থাকা শাড়ির আঁচলও হালকা উঠে সেই পবনে।
তারপর হাতমুখ ধুয়ে আমি একেবারে বের হই স্নানঘর থেকে।এ বাড়িতে আমাদের পাঁচদিন কাটলো।দুর্গাপূজার চারদিন শেষে আজ বিজয়া দশমী।আমি স্নান ছেড়ে লাল পেড়ে সাদা শাড়ি পরিধান করে বেরিয়েছি।চুলে পেছানো গামছা খুলে ফেলতেই সেখান থেকে টুপটুপ করে ফোঁটায় ফোঁটায় জল পরতে লাগলো মেঝেতে।
আমি সেসবে মনোযোগ না দিয়ে ধ্রুবকে ধাক্কা দিয়ে ডেকে তুলি।তারপর সোজা পাঠিয়ে দেই স্নানঘরে।ততক্ষণে আমি আরেকবার এসে দাঁড়াই জানালার সামনে।সূর্যের তেজ এবার সামান্য বেড়েছে।জানালা গলে আসা রোদ্দুরেই ভেজা চুল শুকানোর প্রচেষ্টা আমার।একটা বসার টুল নিয়ে বসে টই জানালার কাছটায়।ধ্রুব বেরিয়ে আসেন স্নান ছেড়ে।দরজা খোলার আওয়াজে আমি সেদিকে তাকাই।দৃষ্টি থমকায় আমার।লোকটার পরনে শুধু শুভ্র ধুতি।কায়ার উপরিভাগ উন্মুক্ত।উজ্জ্বল শ্যামলা বরণে জল বিন্দু।উনি কখনো এমন কার্য করেন না।সবসময় সম্পূর্ণ বস্ত্র পরিধান করে তবেই স্নানঘরে থেকে বের হোন।আমি ওনার বলিষ্ঠ দেহের দিকে তাকিয়ে রইলাম।উনি মাথার ভেজা চুলে গামছা চালাতে চালাতে ডেকে উঠলেন আমায়।
“নির্বানী?আমার সাদা রঙের পাঞ্জাবিটা কোথায় রেখেছো?খুঁজে পেলাম না।”
বলতে বলতে আমার দিকে দৃষ্টি দিলেন ধ্রুব।আমি চটজলদি দৃষ্টি সরিয়ে তাকালাম।ধ্রুব সরু চোখে তাকালো।আমি বসা থেকে উঠে আলমারি থেকে ওনার পাঞ্জাবি খুঁজে দিলাম।নত দৃষ্টিতে বলে উঠলাম,
“চোখের সামনেই ছিলো!নিন পরে নিন।”
“তুমি এত অস্থির হচ্ছো কেন?”
ধ্রুবর কন্ঠে দুষ্টমির রেশ।আমি শুধু ওনাকে চোখ পাকিয়ে পুনরায় আগের স্থানে এসে বসলাম।আড়চোখে তাকালাম একবার ওনার দিকে।উনি রয়েসয়ে গায়ে পাঞ্জাবিটা পরছেন।তারপর পাঞ্জাবির হাতা গুটাতে গুটাতে আমার দিকে তাকালেন উনি।খেয়াল করলাম ওনার হাত থেমেছে। গাঢ় দৃষ্টি বর্ষিত হচ্ছে আমার উপর।আমি শুকনো ঢোক গিলে পায়ের দিকে দৃষ্টি নিলাম।হঠাৎ অক্ষিপটে ভেসে উঠলো ধ্রুবরর পায়ের প্রতিচ্ছবি।আমি দৃষ্টি নত করেই রইলাম।নিঃশব্দ খেলা করলো কক্ষজুড়ে।হঠাৎ থুতনিতে ওনার হাতের স্পর্শ।আমার মুখটা উঁচু করতেই ওনার দিকে তাকালাম আমি।ধ্রুবর হাতে আমার সিঁদুরের কৌটো।আমি আশ্চর্য হলাম!স্নানের পর আজ সিঁদুর পরতে ভুলে গেছি একদম।আমি কিছু বলার জন্য ওষ্ঠদ্বয় একে অপরের থেকে আলগা করতেই সিঁথিতে সিঁদুর লেপ্টে দিলেন ধ্রুব।চোখ বুঁজে নিলাম আমি।বিবাহের দিনের ন্যায় খানিকটা সিঁদুর এসে পরলো আমার নাকের মাথায়।সেটা অনুভব করতেই আমার মন যেন প্রশান্তিতে ভরে গেল।লোকমুখে শোনা কথা আমার জীবনে কিভাবে সত্য হয়ে গেছে!যেখানে তা ছিল অসম্ভব।অবশ্য স্বামী ধ্রুব বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।
কপালে সিঁদুর পরিয়ে এবার আমাকে উদ্দেশ্য করে ধ্রুব বলে উঠলেন,
“নতুন বউদের মতো লজ্জা পাচ্ছো!যদিও আমি পুরনো নই।”
ওনার কথায় আমার লজ্জার মাত্রা বেড়ে গেলো আরো।সময় নিয়ে ধীরে ধীরে ওনার দিকে তাকালাম আমি।লোকটার দৃষ্টি আমাতেই নিবদ্ধ।সেই চোখের দৃষ্টিকে কিভাবে বর্ণনা করবো আমি?গভীর চোখে সায়র সম প্রনয়।অতলে ডুব দিলেই মরণ!
আমি দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম।ধ্রুব সেভাবেই তাকিয়ে রইলেন।আমি মৃদুস্বরে বলে উঠলাম,
“আমাকে জ্বালাতে আপনার খুব ভালো লাগে তাই না?”
“উঁহু!তোমায় ভালোবাসতে আমার বেশ ভালো লাগে।”
আমি চোখ তুলে তাকালাম ওনার দিকে।তারপর বসা থেকে উঠে যেই সামনে এগোবো ওমনি হাতে টান পরলো।তারপরই আমার স্থান হলো ধ্রুবর বুকে।আমি চোখ তুলে ইশারায় কি বলে জিজ্ঞেস করতেই ধ্রুব বলে উঠেন,
“চুলে আজ আমি বেনি করে দিই?’
.
দিবসের একটা সুন্দর মুহুর্ত হলো গোধুলি বেলা।রাত-দিনের সন্ধিক্ষণের এই মুহুর্তে পরিবেশ থাকে শান্ত,শীতল ও মনোরম।পশ্চিমাকাশের লাল আভা আকাশে সৌন্দর্য বাড়িয়ে দ্বিগুন করে দেয়।এই সময়টা পূর্ণের প্রিয়।সে এই সময়ে ছাদে সময় কাটায় কিছুক্ষণ।বছরে একবার অনুষ্ঠিত এই শারদীয় পুজোর বিসর্জন সকলের হৃদয়ে দাগ কেটে রয়ে যায়।চারদিনের আনন্দের পর হঠাৎ সবকিছু নিশ্চুপ হয়ে গেলে হৃদয় মানতে পারে না।এমনকি প্রকৃতিও বদলে যায়।
খানিক বিষন্ন মন নিয়ে ছাদে উপস্থিত হতেই পূর্ণ থমকে দাঁড়ায়।ছাদে সে ব্যতিত অন্য কারোর উপস্থিতি থাকে না বললেই চলে।কিন্তু আজ!সাদা আটপৌরে শাড়ি পরিহিতা এক রমনী পেছন ফিরে দাড়িয়ে আছে কোথাও তাকিয়ে।পূর্ণর হাঁটার গতি মন্থর হয়।তবে ঠোঁটের কোণে থাকা সিগারেটটা আজ লুকায় না।
ধবধবে সাদা শাড়ি পরে ছাদে দাড়ানো রমনীটি যে রাই সেটা বুঝতে একটু অসুবিধে হলো পূর্ণের।কিন্তু চিনতে ব্যর্থ হয়নি।পূর্ণ ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে যায় রমনীর পানে।
পাশে কারোর উপস্থিতি অনুভব করেও যেন রাইয়ের কোন হুঁশ নেই।সে একদৃষ্টে কোথায় তাকিয়ে।পূর্ণ ঠোঁটের কোণে সিগারেট খুঁজে তার পাশাপাশি দুরত্ব রেখে দাড়ায়।হঠাৎ রাইয়ের শক্ত কন্ঠ কানে আসে তার।
” সত্যকে অস্বীকার করতে মানা করেছি তার মানে এই না যে আমার সম্মুখে ধুমপান করার অনুমতি দিয়েছি।”
পূর্ণ এবার জ্বলন্ত সিগারেটটা পায়ে মাড়ায়।রাইয়ের দৃষ্টি দুরেই কোথাও এখনো।
“আপনি মানা করলেই বা আমি কেন শুনবো?”
কন্ঠ নম্র কিন্তু গম্ভীর একটা ভাব বিরাজমান।রাই এবার তাকায় পূর্ণের পানে।দৃষ্টিতে চমক!
পরপরই দৃষ্টি সরিয়ে নেয় সে।পূর্ণ বলে উঠে,
“আপনি কি আমার কথায় রাগলেন?”
“আপনার কথায় রাগ করবো কেন আমি?কে আপনি?”
দুজনের দৃষ্টি বিনিময় হয়।মনের উত্তর যেন দৃষ্টিতে মিশে কিন্তু রাই তা অস্বীকার করে।পূর্ণ কেমন করে যেন বলে উঠে,
“কেউ নই?”
রাই তাকায় না।পরনের শুভ্র শাড়ির আঁচল উড়ে বাধাহীন।মাথার কেশ আপন ইচ্ছেতে উম্মুক্ত হয় হঠাৎ।তবে তাদের বন্ধনে আবদ্ধ করার ইচ্ছে যেন নেই রাইয়ের।
তবে পূর্ণ কৌতুহলী প্রশ্ন করে বসে,
“কুমারী হয়েও এমন বিধবার ন্যায় সাজ দেখে অবাক হচ্ছি।”
রাই তার দিকে না তাকিয়েই বাঁকা হাসে।তারপর পূর্ণের দিকে তাকায়।চোখের চশমার অভ্যন্তরে থাকা নেত্রের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
“বিধবাদের পরনে এরুপ বস্ত্রই থাকে মাস্টার মশাই।খুব কম জানেন দেখি।”
পূর্ণ চমকায়।বিস্ময়ে ভরে উঠে তার চারপাশ।এটা কি বললো রাই?বিধবা?রাই বিধবা?তবে রাই কেন এমন সাজসজ্জা করতো?রঙিন বসন ব্যতিত তো তাকে দেখা যেতো না!বিধবারা এমন সাজে?সমাজ স্বীকৃতি দিলো কবে?
আপন মনেই নিজেকে প্রশ্ন করে উঠে পূর্ণ।রাই তখন তাকে দেখছে গাঢ় চোখে।পূর্ণর চমকে উঠা মুখ,বিস্ময়ের পূর্ণ আঁখি দেখে আরেকদফা মলিন হাসে রাই।পূর্ণ প্রশ্ন করে উঠে,
“মিথ্যে বলছেন?”
“সত্য হলেই বা আপনার কি?চমকাচ্ছেন কেন?
” আমার সব ভ্রম মনে হচ্ছে!”
“এতদিন যা ছিল তা ভ্রম।এটাই আসল সত্য।যা আমি ত্যাগ করেছিলাম তা আমাকে ধারণ করালেন আপনি।আপনার আকাঙ্ক্ষা!”
পূর্ণ কেমন করে যেন চায়।অথচ রাইয়ের মুখ হাস্যজ্জ্বল।পূর্ণ এতদিন মেয়েটার হাস্য মুখ দেখার জন্য উদগ্রীব ছিলো।কিন্তু আজ এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে যে মেয়েটা বিষন্ন সুন্দর।হাসি তার চরম শত্রু!
পূর্ণর কিরুপ অনুভূতি হচ্ছে রাইকে হাসতে দেখে।রাই এবার মুখ খুলে,
“বিধবাদের থেকে দুরে থাকবেন।নয়ত কালিমা লিপ্ত হবেন।বুঝেছেন পূর্ণ চ্যাটার্জী?”
পূর্ণ চোখ তুলে তাকায় রাইয়ের চোখে।নক্ষত্রের ন্যায় সুন্দর নেই আঁখির ভাষা কেন এত জটিল ঠেকছে?সে এগিয়ে গিয়ে কিছু বলবে তখনই ছাঁদে অন্যকারো প্রবেশ।
রাই পূর্ণ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সেদিকে চায়।একজন পরিচারিকা হাঁপাচ্ছেন।রাই ভ্রু কুঁচকে তার দিকে এগিয়ে যায়।চাপা পরে রয় পূর্ণর মনে আসা বাক্য।
“কি হয়েছে?এভাবে দৌড়ে আসলে তুমি?”
“বউমনি হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেছে।ধ্রুব বাবু বৈদ্য আনতে গেলেন।আপনাকে বউমনির কাছে যেতে অনুরোধ করেছেন।এক্ষুনি!”
চলবে….