মম হৃদয় বিহারিনী পর্ব-২৪

0
1

#মম_হৃদয়_বিহারিনী
#ঐশী_রানী_রক্তিমা
২৪.
বদ্ধ চোখজোড়া অতিকষ্টে খুলতেই অবাক হয়ে পরলাম আমি।মাথায় কারো মৃদু স্নেহের পরশ।আমি চোখ খুলে তাকে দেখার চেষ্টায়।কিন্তু চোখজোড়া ফের বুঁজে এলো।সেকেন্ড পরে ফের চোখ খুললাম আমি।

প্রদীপের শিখায় আলোকিত কক্ষটায় আজ দুজনের অধিক মানুষের উপস্থিতি।শাশুড়ী মা চেয়ারে বসে আমার দিকে তাকিয়ে।ওনার মুখশ্রীতে সুক্ষ চিন্তার ছাপ।চোখের সামনেই বৈদ্যের উপস্থিতি।আমার চোখজোড়া সকলকে ছাড়িয়ে একজনকে খুঁজছে।কাঙ্ক্ষিত মানুষটার দর্শন না পেয়ে আমি যেই শোয়া থেকে একটু উঠে বসতে যাবো ওমনি রাশভারী আদেশপূর্ণ কন্ঠটা আদেশ করে বসলো,

“শুয়ে থাকো।”

আমি ঘাড় ঘুড়িয়ে একটু পিছনে তাকালাম।শিয়রে বসে মাথায় আলতো স্পর্শকারী রাই ছিলো।তার পেছনে হাতদুটো পেছনে রেখে দাড়িয়ে আছে ধ্রুব।ওনার তীক্ষ্ণ চাহনি লক্ষ্য করে আমি ফের বালিশে মাথা দিলাম।
বৈদ্য আমার নাড়ি পরীক্ষা করলেন।তারপর গম্ভীরমুখে তাকালেন শাশুড়ী মার দিকে।ওনার এভাবে গম্ভীর হয়ে তাকানোর ধরন দেখে শুকনো ঢোক গিললাম আমি।মাথাটা ফের একটু খানি চক্কর দিয়ে উঠলো।পরপরই ফোকলা হাসলেন বৈদ্য মশাই।ওনার সামনের দুটো দাঁত যে গায়েব সেটা লক্ষ্য করলাম আমি।বৈদ্য মশাই এবার ধ্রুব আর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,

“মা ঠাকরুন,মিঠাইয়ের ব্যবস্থা করুন।আপনাদের বাড়ির বউ সন্তান সম্ভবা।”

বৈদ্যের কথা কর্ণগোচর হতেই বড় বড় চোখে তাকালাম আমি।শাশুড়ী মা স্বস্তির শ্বাস ফেলে মৃদু হাসলেন।তারপর ধ্রুবর নিকটে এসে ওনার কপালে চুমু খেয়ে আনন্দের মাত্রা প্রকাশ করলেন।আমি ধ্রুবর প্রতিক্রিয়া দেখতে উৎসুক।কিন্তু আমি বিস্ময়ে ডুবে আছি।সত্যিই আমি মা হতে যাচ্ছি?

“অভিনন্দন নির্বানী।এত সুন্দর একটা সংবাদ দেওয়ার জন্য।আমি তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম যখন শুনলাম তুমি জ্ঞান হারিয়েছো।”

রাইের কথার প্রতিত্তোরে আমি মাথা মত করে হাসলাম।চোখ পিটপিট করতে লাগলাম আমি।হৃদপিণ্ডের সংকোচন-প্রসারণ বেড়ে ব্যাপক লজ্জা অনুভুত হচ্ছে আমার।ধীরে ধীরে উঠে বসলাম আমি।ধ্রুবর নিষেধাজ্ঞা ভেসে আসলো না এবার।রাইয়ের মৃদু হাসির শব্দ তার খুশির মাত্রা প্রকাশ করছে।আমি আড়চোখে ধ্রুবর দিকে তাকানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু পাশেই থাকা রাইয়ের বেশভূষা আমাকে অবাক করলো।আমি একপ্রকার থমকে তাকালাম তার দিকে।পরনের কারুকাজ বিহীন সাদা শাড়ি,এমনকি ব্রাউজটাও তাও।সবসময় কোন না কোন আভূষণে অলংকৃত থাকা রাইয়ের দেহে আজ কেবল ছোট একটা নাকফুল!কানের দুল,হাতের বালা,কপালের ছোট লাল টিপ উধাও দেখে আশ্চর্য হলাম আমি।হাতে নেই কোন আলতার ছোঁয়া!

আমি অবাক হয়ে দেখতে লাগলাম তাকে।রাই বিষয়টা ধরতে পেরেও সেভাবেই হাসিমুখে তাকিয়ে।আমি মনে মনে প্রশ্ন করে উঠলাম,

“যে বৈধব্য সে ত্যাগ করেছে তাকে হঠাৎ গ্রহণ করার কারণ কি?”

সকলের উপস্থিতি মনের কথা শব্দে পরিনত হতে পারলো না।শাশুড়ী মা হঠাৎ এগিয়ে এসে একটা সোনার হার পরিয়ে দিলেন আমাকে।রাইয়ের চিন্তা কিছুক্ষণের জন্য মস্তিষ্ক থেকে সরে গেল।শাশুড়ী মা গালে স্নেহের ছোঁয়া দিতেই স্মিত হাসলাম আমি।

ক্ষনকাল বাদে প্রস্থান করলো সকলে।রাই যাওয়ার আগে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।তবে আমি মলিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে।ওর আবার কি হলো?
সকলে যাওয়ার মুহুর্তে ধ্রুব মায়ের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,

“নির্বানীর জন্য খাবার উপরে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন মা।”

শাশুড়ী মা সম্মতি জানিয়ে চলে গেলে ধ্রুব গিয়ে দুয়ার বদ্ধ করে আসে।আমি জড়োসড়ো হয়ে বসি।আড়চোখে পরনের শুভ্র পাঞ্জাবিটার দিকে তাকাই আমি।

ধ্রুবর পড়াশোনা এখনো শেষ হয়নি।আর না আমার পরীক্ষার রেজাল্ট বেরিয়েছে।এই মুহুর্তে এমন একটা সংবাদে ওনার কি প্রতিক্রিয়া হতে পারে সেটা ভেবেই আমি শঙ্কিত।

ধ্রুব আমার নিকটে এসে সামনা সামনি বসলেন।আমি চোখ তুলে তাকালাম না।কিছুটা লজ্জায় আর বাকি কারণ নিজেরই অজানা।
ধ্রুব আরেকটু নিকটে এসে বসলেন এবার।আমি গাঢ় শ্বাস টানলাম।উনি আমার দুগালে হাত রেখে আলতো করে বললেন,

“আমার দিকে তাকাতে মানা?”

আমি চট করে চোখ তুলে তাকালাম ওনার দিকে।দুপাশে মাথা নেড়ে মৃদুস্বরে বললাম,

“একদমই না।”

নিরবতা বয়ে গেল সেকেন্ড কয়েক।আমি ধ্রুবর একটা হাত আমার গালের কাছে ধরে সেখানে আলতো করে চুমু খেলাম।ঠোঁটজোড়া কেঁপে উঠলো আমার।আমি ভ্রু বাঁকিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে মিহি কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম,

“আপনি খুশি নন?”

ধ্রুব কেমন করে যেন তাকালো।ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে,তাদের ভেতর লুকায়িত কথা পড়ার সাহস কোনদিন করিনি।তবে আজ কাঁপা হৃদয়ে ওনার নক্ষত্র তুল্য চোখের দিকে তাকিয়ে তাতে বর্ণিত ভাষা বোঝার চেষ্টা করলাম।আমার গালে থাকা ধ্রুবর হাতখানা উনি সরিয়ে নিলেন আচমকা।আমি ওনার চোখ দেখে দৃষ্টি সরিয়ে নত মুখ করলাম।
পরপরই আচমকা আমাকে আলিঙ্গন করলেন ধ্রুব।আমার মাথা ঠেকলো বরাবরের ন্যায় ওনার বক্ষে।নিঃশব্দ বাক্য বিনিময় ঘটলো দু’জনের।আমি একটু চোখ তুলে তাকাতেই ধ্রুব বলে উঠলেন,

“হার্টবিট শুনতে পাচ্ছো?”

“হু।”

“তোমার কি মনে হয় নির্বানী?আমি এমন একটা সংবাদ পেয়ে খুশি হবো না?”

আমি ওনার বুকের বা পাশে মুখ গুঁজে রইলাম।কানে প্রবেশ করতে লাগলো ওনার হৃদপিণ্ডের অতিরিক্ত সংকোচন-প্রসারণ।পাঞ্জাবির উপর দিয়েই সেখানটায় আলতো করপ ঠোঁট ছোঁয়ালাম আমি।ধ্রুব আমার হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে বলে উঠলেন,

“এমন অনুভূতির সম্মোখীন কোনদিন হইনি।কোন কথা শুনে এতটা শাস্তি লাগেনি আজ অব্দি।তুমি..তুমি আমায় পূর্ণ করে দিলে বউ।”

আমি সেভাবেই ওনার বুকে মুখ গুঁজে।পুরুষালী পরিচিত ঘ্রাণে নাক ডুবিয়ে।হঠাৎ ধ্রুব হতাশার স্বরে বলে উঠলেন,

“কিন্তু একটা বিষয়ে আফসোস হচ্ছে।”

আমি ওনার বুক থেকে মাথা তুলে তাকালাম ওনার দিকে।ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,

“আফসোস? আমার জন্য?”

“হুহ!”

আমি বিচলিত হলাম।ওনার বুক থেকে মাথা সরিয়ে আনতে চাইলে উনি বরাবরের ন্যায় আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে জড়িয়ে নিলেন আমায়।আমি ওনার চোখের দিকে তাকালাম প্রশ্ন নিয়ে।ধ্রুব আমার চোখে চোখ রেখে একরাশ হতাশা কন্ঠে ঢেলে বলে উঠলেন,

“কয়েকদিন পরে বাচ্চার বাবা হতে যাচ্ছি।অথচ এখনো বউয়ের থেকে একটা শব্দ শোনা হলো না।”

সেকেন্ড থেমে বললেন,

“এখনো মম হৃদয় বিহারিণী ভালোবাসি বললো না।”

আমি ওনার দিকে তাকিয়েই মৃদু হাসলাম।হঠাৎ উনি ওষ্ঠ ছোঁয়ালেন আমার ওষ্ঠে।বরাবরের ন্যায় লজ্জায় মাথা লুকালাম ওনার বুকে।ধ্রুব হাসলেন বোধহয়।কানের নিকট ঠোঁট এনে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন,

“বলো?নাকি ভালো…।”

“বাসি..আপনি জানেন না বুঝি?”

ধ্রুবর অবুঝ স্বর।

“উঁহু।”

“মিথ্যে বলছেন।”

“তোমার মুখ থেকে কাঙ্ক্ষিত শব্দখানা শোনার জন্য।”

ফের কানের নিকট ধ্রুবর ফিসফিসানো আওয়াজ।আমি চোখ খিঁচে বুঝে নেই।বুক কাঁপে দুরুদুরু।ওনার পাঞ্জাবির হাতায় খামচে ধরে বলে উঠি,

“ভালোবাসি আপনাকে ধ্রুব।যতটুকু ভালোবাসা ভালোবাসি শব্দে বর্ণনা করা যায় না তার থেকেও হাজারগুন বেশি ভালোবাসি।”

আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিলেন ধ্রুব।ওনার শ্বাস অনবরত পরতে লাগলো আমার মাথার চুলে।বুকের টিপটিপ শব্দ যেন ঝড় তুলছে ওনার।আমার হৃদপিণ্ডও কি স্বাভাবিক?ওনার এত কাছে আমি,কানে ওনার হৃদপিণ্ডের নিপীড়নের স্পষ্ট আওয়াজ।আমি যেই চোখ বুঝলাম,চোখ খুলে তাকানোর সাহস আর পেলাম না।

ধ্রুব আস্তে আস্তে বলে উঠলেন,

“তোমার স্বীকারোক্তিতে আমার কি হাল দেখেছো নির্বানী?ধন্যবাদ তোমায় আমার কোমল পদ্ম।আমাকে জীবনের শ্রেষ্ঠ অনুভূতির সাথে পরিচয় করানোর জন্য।আমার অনাগত সন্তান তোমার মাঝে সুখে থাকুক।আর তুমি আমার বক্ষমাঝে।”

.

প্রতিটি সকাল একটি নতুন দিবসের সূচনা করে।প্রতিবার সূর্য উদয় হয় নতুন কিছু নিয়ে।কিছু আশা,আকাঙ্ক্ষা নিয়ে।মনুষ্য জাতিও বোধহয় এই কথাটা মান্য করে।রাত্রিকালে বিষাদে যখন মন থাকে আছন্ন,তখন এমনটা অনুভূত হয় কিংবা কামনা করা হয় যে হয়ত কাল সব ভালো হবে!কালকের দিনটা আজকের তুলনায় একটু উত্তম হবে।এই আশায় মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে।একটা নতুন দিন শুরু করার প্রেরণা জাগায়।নিজের মনকে কালকের জন্য প্রস্তুত করতে পারলেই আয়ু দীর্ঘ আর বাকিটা ঈশ্বরের হাতে।দুঃশ্চিন্তায়,হতাশায় ডুবে জীবন ত্যাগ করে নরকগামী হওয়ার চেয়ে উত্তম, ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস রেখে নতুন সকাল শুরু করা।
কিন্তু প্রত্যকের জন্য সকাল সুখকর নয়।কখনো কখনো আমাদের জীবন এমন পরিস্থিতিতে পরে যে রাতের আঁধারকেই শ্রেয় মনে হয়।

সকালের রোদ্দুর খোলা জানালা গলে কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করতেই কক্ষে থাকা সিগারেটের ধোঁয়া দৃশ্যমান হয়ে উঠে।সাথে সাথে দৃশ্যমান হয় পূর্ণের অবয়ব।বাইরে তাকাতেই সূর্যরশ্মি ঝিলিক মেরে ঈষৎ বাদামি আঁখি জোড়া ফুটে উঠে।তাতে বোধয় একটু বিরক্তবোধ করে পূর্ণ।হাতের অর্ধপোড়া সিগারেটটা ছুঁড়ে মারে জানালা গলে।দুর্ভাগ্যবশত সেটা এসে পুকুরঘাট থেকে ফেরা রাইয়ের হাতের কব্জিতে পরে।উপর থেকে পরায় সিগারেটের আগুন কিছুটা তেজস্বী হয়ে পরেছিলো বটে।রাইয়ের পাতলা চামড়া লালচে হয়ে উঠে সেটার অল্প ছোঁয়াতেই।ভ্রু কুঁচকে সুক্ষ্ম আর্তনাদ করে রাই।এত অল্প আওয়াজ পৌঁছায় না তিনতলায় থাকা পূর্ণর কানে।

রাই মাথা তুলে তাকায় তিনতলার প্রথম কক্ষটির দিকে।একটা জানালা খোলা সেটার।নাকের পাটা ফুলে উঠে সুক্ষ্ম রাগে।তখনি শব্দ করে জানালা বন্ধ করে ফেলা হয়।
রাইয়ের রাগটা ক্রমশ বাড়ে যেন।সে দ্রুত হেঁটে বসার ঘর পার করে আসে।

ঘরের বালতিতে থাকা জল দিয়ে চোখে মুখে দিতেই দরজায় কড়া পরে পূর্ণের।ঠোঁট কামড়ে কে আসতে পারে আন্দাজ করে কুঁচকে থাকা পাঞ্জাবিটা বদলে মেরুন রঙের একটা শার্ট গায়ে জড়িয়ে নেয় সে।তারপর চশমাটা পরে দরজা খুলে নিতেই রাগে ঈষৎ লাল হয়ে থাকা রাইয়ের মুখশ্রী ভেসে উঠে তার অক্ষিপটে।পূর্ণ যে তাকে একদমই আশা করেনি সেটা তার মুখশ্রী প্রতিক্রিয়া দেখেই বোঝা গেল।রাই রক্তচক্ষু নিয়ে তাকায় তার দিকে।কর্কশ স্বরে শাসিয়ে বলে উঠে,

“আপনি জানেন না এটা ভদ্রলোকের বাড়ি?”

পূর্ণ হঠাৎ রাইয়ের এরুপ রাগের কারণ বুঝতে পারে না।ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,

“এমন প্রশ্নের কারণ?”

রাইয়ের রাগ বাড়ে।শান্তশিষ্ট সহনশীল মেয়েটা কেন যেন পূর্ণের সম্মুখে আসলেই অগ্নিশর্মা হয়ে যায়।পুরনো অভ্যাস বোধহয়!

“বাহ!চমৎকার অভিনেতা তো আপনি?”

এই কথাটাও বোধগম্য হয় না পূর্ণর।রাইয়ের কথার ধাঁধা তার ভালো লাগলো না।খানিক গম্ভীর কন্ঠে সে এবার বলে উঠলো,

“দেখুন যা বলার স্পষ্ট করে বলুন নয়ত এখান থেকে আসতে পারেন।”

রাই একটু থমকায়।শুকনো একটা ঢোক গিলে পূর্ণর বিরক্তমাখা চাহনি দেখে।অনুভূতির জ্বালে রাগটা একটু কমে এলো।মৃদু আওয়াজে সে বলে উঠলো,

“একজন সম্মানীয় ব্যাক্তি হয়েও দিনরাত সিগারেট ফুঁকেন আর সেটা জানালা দিয়ে বাইরে ছুঁড়ে আঘাত করেন লোকেদের।
আভা-প্রভা আপনার থেকে কি শিখছে কে জানে?”

রাইয়ের কন্ঠ রোধ হয়ে আসে শেষদিকটায়।তার গলার স্বরের এমন পরিবর্তনে পূর্ণ চমকে তাকায়।রাই চোখ সরিয়ে নেয় তার থেকে।পূর্ণর বুক কেঁপে উঠে।রাই আর সেখানে দাড়ায় না।সোজা চলে যায় উল্টোদিকে ঘুরে।সাদা আঁচলের মিষ্টি বাতাস পূর্ণর চোখেমুখে এসে লাগে।
হাতটা বাড়িয়ে সে মৃদুস্বরে ডেকে উঠে,

“রাই!”

রাই শোনলো কি না কে জানে?তবে তেজঃপূর্ণ কিংবা ভঙ্গুরভাবে হেঁটে চলে গেল সে।পূর্ণ তাকিয়ে রইলো সেদিকে।ছন্দ তুলে হেঁটে চলা রমনীর নিঃশব্দ চলন আজ।আর পরনের শুভ্র শাড়ি!পূর্ণ দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।কাঁটা দিয়ে উঠে রাইয়ের এই সাজগোছ।
.
ধ্রুবর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আমি সকলের সাথে বসার ঘরে ভোজনের উপস্থিত হয়েছি।সকলের সাথপ একত্রে ভোজন করার মজায় আলাদা।যদিও দুবার বলার পরেই ধ্রুব মেনে নিয়েছিলেন।কিন্তু স্বয়ং আমাকে ধরে ধরে নিয়ে এসেছিলেন বসার ঘরে।ওনার কান্ডে আমি লজ্জায় শেষ।এখনই এমন করছেন উনি!
বসার ঘরে আসনে বসার পরে খাবার পরিবেশন করা হলো।আমার পাশের আসনটা খালি রইল আজ।আমি ভ্রু কুঁচকে একজন পরিচারিকাকে ডেকে বলে উঠলাম,

“রাইদি কোথায়?তাকে ডেকে নিয়ে আসুন।”

পরিচারিকা জানালো,

“রাইদিদি মনি নিজের ঘরেই খাবেন।খাবার ওনার কক্ষে পাঠানো হয়েছে।ওনি আজকে থেকে রুমেই খাবেন।”

আমি আশ্চর্য হয়ে তাকালাম।ধ্রুবর দিকে তাকাতেই দেখলাম উনিও ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে।আমাকে তাকাতে দেখে উনি বলে উঠলেন,

“খাবার শেষ করে দেখা করো ওর সাথে।”

আমি সম্মতি জানিয়ে খাবারে মনোযোগ দিলাম।মন আদো টিকলো না সেখানে।কালকে রাইয়ের ওমন বেশভূষা।আজকে আলাদাভাবে খাওয়ার সিদ্ধান্ত ভাবিয়ে তুললো আমায়।আমি দ্রুত খাবার শেষ করার প্রয়াস করলাম।খাওয়ার ফাঁকে চোখ পরলো মাস্টার মশাইয়ের দিকে।চুলগুলো আজ অবিন্যস্ত।কেমন আনমনা আর উদাসীনও লাগছে।আমি মনে মনে প্রশ্ন সাজাতে লাগলাম।

খাওয়া শেষে ধ্রুবই আমাকে নিয়ে উপস্থিত হলেন দোতলায়।আমি সেখানেই থামলাম।সাথে থামলেন ধ্রুবও।আমি ওনাকে বলে উঠলাম,

“দিদি হঠাৎ এমন আচরণ কেন করছেন?

” জানা নেই।”

“আমি কথা বলতে চাইছি দিদি সাথে।”

ধ্রুব চোখের ইশারায় ঠিক আছে বুঝিয়ে তিনতলার উদ্দেশ্য সিঁড়িতে পা রাখলেন।আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাইয়ের কক্ষের উদ্দেশ্যে হাটতে লাগলাম।
রাইয়ের কক্ষে পৌঁছে আমি বরাবরে ন্যায় কড়া নাড়লাম।সাথে মৃদু স্বরে বলে উঠলাম,

“আসতে পারি দিদি।”

ক্ষনকাল বাদে উত্তর এলো।শোনা গেল রাইয়ের কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলা কথাখান,

“আমার মাথা ব্যথা করছে রাই।একটু একা থাকতে চাইছি।”

মাথা ব্যথা শুনে যেই দরজার কপাট একটু ধাক্কিয়েছি ওমনি রাই উচ্চস্বরে বলে উঠলো,

“আমাকে একটু একা থাকতে দাও,নির্বানী।দয়া করে!”

চলবে…
ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।