#নুন_ঝালের_সংসার
(৩য় পর্ব)
সুমনের অফিসে তিনটা গ্রুপ। একটা হলো ওদের বসের। সুমন বসের স্নেহভাজন। বসের ইমিডিয়েট পরে যে সিনিয়র উনার একটা গ্রুপ আছে। উনি আবার কোন একজন ক্ষমতাশালী ব্যক্তির আত্মীয়। আর আছে কর্মচারীদের একটা গ্রুপ। সুমনের কাছে মনে হয় সবচেয়ে কর্মচারীদের এই গ্রুপটাই বেশি শক্তিশালী। এদের মধ্যে একতা আছে, সুসম্পর্ক আছে।
আর কাউকে যদি একাই একটা গ্রুপ বলা হয়, সে হলো শীলা ম্যাডাম। উনি আবার ম্যাডাম বলা পছন্দ করেন না। বলেন – কল মি শীলা প্লিজ!
শীলা ম্যাডাম যে কেন চাকরি করে এটাই আজ অবধি সুমন বুঝতে পারে না। উনার স্বামী অর্থশালী এবং প্রভাবশালী। সেই সূত্রেই শীলা ম্যাডাম এই সেক্টরে ভালো পদে ঢুকেছে। কিন্তু উনার আসলে তেমন কোন যোগ্যতাই নেই, শুধু ব্যাপক সাজসজ্জা এবং স্টাইল করে কথা বলা ছাড়া।
সুমন সকালে উঠেই ফ্রেশ হয়ে অফিসে চলে এসেছে। নাস্তা আজ অফিসেই করবে। তাপসী বাচ্চাদের নিয়ে তখনো ঘুমে। তাপসীদের রুমের দিকে তাকিয়ে সুমন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ‘নাহ আজ তাড়াতাড়ি এসে সবাইকে নিয়ে বাইরে যেতেই হবে। গিফটটাও অফিস থেকে মনে করে আনতে হবে!’ – মনে মনে ভাবে সুমন।
নাস্তা শেষ না করতেই শীলা ম্যাডাম সুমনের ডেস্কে আসে। আজ এতো সকালে এই মহিলা কেন এসেছে সুমন বুঝতে পারে না। স্লিভলেস ব্লাউজ, পিঠেরও অনেক অংশ খোলা। ফিরফিরে জর্জেটের শাড়ি, বাম হাতে দামী ব্রান্ডের ঘড়ি, ডান হাতে কয়েকটা চিকন স্বর্ণের চুড়ি। গলায় স্বর্ণের চেইনের সাথে রুবি কিংবা দামী কোন রত্নের ছোট্ট লকেট। পনিটেইল করে চুল বাঁধা। গলা, পিঠ আর হাতের মসৃণ অংশ বের হয়ে আছে। সুমনের কাছে আসতেই দামী ফরাসি ব্রান্ডের পারফিউমে পরিবেশকেই আবেশিত করে ফেললো। শীলা ম্যাডামের দিকে বেশিক্ষণ তাকানো যায় না। সুমন চোখ নামিয়ে ফেলে।
– সুমন তুমি বাইরের নাস্তা করছো কেন? বাসায় কি হয়েছে? and your wife, what is she doing at home? she is a homemaker, It’s her duty to serve you proper food.
– ম্যাডাম, আমার বাচ্চারা তো ছোট। তার উপরে একদম পিঠাপিঠি এজন্য ও আসলে সব সামলে পারে না। এটা কোন ব্যাপার না। আপনি কোন কাজে এসেছেন ম্যাডাম?
শীলা আসলে নিজের স্বার্থেই এখানে এসেছে। ও তো এমনিতেই শো পিসের মতো অফিসে ঘুরে বেড়ায়। কোন কাজ কর্ম করে না। কিন্তু বসের সাথে কোন একটা বিষয়ে একটু কথা কাটাকাটি হওয়ায় এখন কাজ ধরিয়ে দিয়েছে। বস একটু ত্যাড়া, যদিও শীলার প্রভাবশালী স্বামী থাকায় খুব একটা ঘাঁটে না। কিন্তু অন্য সবাই যেমন শীলার সৌন্দর্য আর ওর স্টাইলে ফিদা, এই লোকটা তেমন না। কেন যেন শীলাকে পছন্দই করে না। শীলা চেষ্টা করেছিলো এই ব্যাটাকে সরিয়ে দিতে। কিন্তু এই ব্যাটাকে আবার অথোরিটি খুব পছন্দ করে। এখন বাধ্য হয়ে মানিয়ে নিতে হচ্ছে। এই কাজ কর্ম তো শীলা তেমন পারে না, আগ্রহও নাই। কাজটা সুমনকে দিয়েই করিয়ে নিতে হবে। ছেলেটা একটু সরল আছে। একটু হাসি কিংবা লাঞ্চ অফার করলেই মনে হয় হয়ে যাবে।
– আরে কাজ কর্ম পরে। I’m really concern about you dear and don’t call me madam pls. Call me Shila, we are colleague but we can be friend, right?
এই কথা বলে সুমনের ডেস্কের উপর একটা হাত রেখে তার উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে কিছুটা মুখ নিচু করে মিষ্টি করে হাসি দিলো।
সুমন বেচারা পড়লো সংকটে। এই মুহূর্তে শীলাকে এখান থেকে সরাতে হবে। না হলে গল্প ছড়াতে সময় নেবে না। এমনিতেই ওদের এক সিনিয়রের সাথে জড়িয়ে শীলার নামে নানান গল্প আছে। সুমন এসবে কান দেয় না। শীলা কি করলো না করলো তাতে তার কিছু আসে যায় না। আর অফিসে মেয়েরা কারো দিকে তাকিয়ে হাসলেও অনেকে নানা রকম কথা ছড়ায়।
– কি হেল্প করবো সেটাই বলেন
মরিয়া হয়ে সুমন জিজ্ঞাসা করে। কোন দরকার ছাড়া শীলা এখানে আসা লোক না, এটাও সুমন বোঝে। সে অতোটাও বোকা না।
– শোন তুমি আজ আমার সাথে লাঞ্চ করবে, এটাই হলো আগের কথা পরের কথা পরে। আর পরের কথা হলো এই ফাইলের ব্যাপারে আমাকে হেল্প করবে।
– ম্যাডাম ফাইলের কাজ করে দেবো। লাঞ্চ খাওয়াতে হবে না।
– কেন? আমার সাথে লাঞ্চে আপত্তি কিসের? am I a bad girl? Or I’m not pretty!
সুমন বুঝলো ফেঁসে গেছে। এই মহিলার মারাত্মক ইগো। না করলে ভীষণ মাইন্ড করবে। এজন্য দ্রুত কথা ঘুরালো।
– না ম্যাডাম। কি যে বলেন। এ তো সৌভাগ্য। অবশ্যই যাবো। এখন আগে ফাইলটা দেখি, কি অবস্থা!
খুশি হয়ে শীলা একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। সুমন যেন এতোক্ষণ দম আঁটকে রেখেছিলো। একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।
– ভয়ংকর মহিলা। আরেকটু হলে চাকরিই হারাতাম!
ফাইল বের করে কাজ শুরু করলো। সুমন ভুলে গেলো তার আজ দ্রুত বাসায় ফেরার কথা, বাচ্চাদের নিয়ে বাইরে যেতে হবে, তাপসীকে সারপ্রাইজ গিফট দিতে হবে!
(চলবে)