নুন ঝালের সংসার পর্ব-০৫

0
43

#নুন_ঝালের_সংসার

(৫ম পর্ব)

প্রতিটা অফিসে দুই একজন এমন ব্যক্তি থাকে, যাদের কাজ হলো অন্যের পেছনে লাগা। কেউ মন দিয়ে কাজ করলেও এদের সহ্য হয় না, কারো প্রমোশন বা ভালো পোস্টিং হলে তো কথাই নেই, এদের যেন গা জ্বলে যায়। কাজই হচ্ছে অফিসে এসে এর ওর সাথে ফুসুরফাসুর করা।

সুমনের অফিসে এমনি একজন হচ্ছে রাজন। সিনিয়র একজনের সাথে ভালো সম্পর্ক এবং সেই সিনিয়র আবার ক্ষমতাশালীদের সাথে লিংক থাকায় রাজন বার বার পার পেয়ে যায়। অফিসে আসে ইচ্ছে মতো, কাজ কর্ম মন চাইলে করে আর না হয় না করে ধান্দাবাজি করেই সময় পার করে। ওর নামে নানান রকম অভিযোগ। কিন্তু ঐ যে লিংক মেইনটেইন করে, তাতেই সে পার পেয়ে যায়।

রাজন সুমনকে একদম দু চোখে দেখতে পারে না। তার প্রথম কারণ হলো বসের স্নেহভাজন আর সবচেয়ে বড় কারণ এই ছেলেটা কাজ ছাড়া কিছুই বোঝে না। কোন অফিস গসিপের মধ্যে তাকে পাওয়াই যায় না। রাজন লেগে থাকে সুমনের পেছনে, কোন ক্রুটি পেলেই কাজে লাগানোর। কিন্তু যুতসই কোন কারণ পায় না।

আজ কোন এক কারণে রাজন আগেই অফিসে উপস্থিত। ঢুকতেই দেখে শীলা ম্যাডাম সুমনের ডেস্কের কাছে যাচ্ছে। শীলা ম্যাডামকে রাজন হাড়ে হাড়ে চেনে। এই মহিলা নিজের স্বার্থ ছাড়া একটা হাসিও দেয় না! মহিলার উপর মহল পর্যন্ত লিংক থাকায় সামনা সামনি রাজন মধুর কন্ঠে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে।

– উফ ম্যাডাম আপনাকে যা লাগছে না! গলার এই ডায়মন্ডের সেটটা বুঝি নতুন? নিশ্চিত বাইরে থেকে আনা। দেশের গুলো তো সব কাঁচ ম্যাডাম। এমন খাঁটি জিনিস আপনি ছাড়া আর কার কালেকশানে থাকতে পারে!

কিন্তু পেছনে অশ্রাব্য ভাষায় গালি দেয়৷
আজ সুমনের রুমে কেন? এই সব ভাবতে ভাবতে পিছু নেয়। শীলা যখন সুমনের টেবিলে একটু ঝুঁকে কথা বলছিলো, রাজন কায়দা করে এ্যাঙ্গেল থেকে ছবি তোলে। কাজে লাগতে পারে – মনে মনে এটা ভেবে একটা কুৎসিত হাসি দেয়।

আজ সারাদিন রাজনের নজর থাকে সুমন আর শীলার উপরে। নাহ সুমন সারাদিনই নিজের ডেস্কে কাজে মগ্ন। উফ এতো কাজ করে পারে কি করে? ভাবে রাজন। এরপর সুমন যখন ফাইল হাতে শীলা ম্যাডামের চেম্বারের দিকে যায়, রাজন সেদিকে খেয়াল রাখে। দুইজন প্রায় একইসাথে অফিস থেকে বের হলে রাজনের মুখে আবার সেই বিশ্রী হাসিটা ফুটে উঠে।

– বাহ, সুমন তো বেশ সেয়ানা হয়ে উঠেছে। কাজের বিনিময় নিতে হয় তা বুঝতে শিখেছে!

রাজন ওদের পিছু নেয়। একটা খাবারের রেস্তোরাঁয় ওদের ঢুকতে দেখে কিছুটা হতাশ হয় রাজন। এক অফিসে কাজ করা কলিগ একসাথে বসে খাওয়া আপাতদৃষ্টিতে একটা নির্দোষ ব্যাপার। কিন্তু দুষ্টু মানুষের মাথায় কু বুদ্ধির অভাব হয় না। আবার বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে ছবি তোলে। অফিসে রাজনের কিছু নিজস্ব লোক আছে, ওরই মতো ধুরন্ধর। তাদের একজনের কাছে সুমনের বউ এর নাম্বার চায়। এটা ওদের কাছে কোন ব্যাপার না। নাম্বার পাওয়া মাত্র ভিন্ন একটা নাম্বার থেকে ছবিগুলো পাঠিয়ে দেয়।

এবার খোকা, বুঝবে মজা।

রাজন জানে সুমন খুব পরিবার কেন্দ্রীক লোক। যাই হোক না কেন, সে পরিবার ছাড়া কিছু বোঝে না। অফিসের ট্রুরে যেয়ে কতোজন কত কিছু করে। এটলিস্ট হাবিজাবি খায়, সুমন এসবের ধাঁরে কাছেও যায় না। কিন্তু আজ একটা সূত্র পাওয়া গেছে। এই ছবি সুমনের বউ পেলে নিশ্চিত অশান্তি হবে। বউয়েরা এসব সহ্য করতে পারে না। বাসায় অশান্তি মানে অফিসে পারফরম্যান্স লো। সুমনের ঘুঁটি পড়তে সময় লাগবে না!

তাপসী বাচ্চাদের নিয়ে ঠিক বের হওয়ার মুহূর্তে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে দুইটা ছবি আসে। সুমন একটা মেয়ের সাথে রেস্তোরাঁয় খাচ্ছে এবং অপর একটিতে মেয়েটা এমনভাবে মাথা নিচু করে আছে যেটা দেখতে অস্বস্তিকর লাগছে। ছবি দুটো দেখেই তাপসীর মাথা ঝা ঝা করে উঠে। এই মহিলাকে তাপসী জেনে। অফিসের দুই একটা পারিবারিক প্রোগামে দেখেছে। ভীষণ গায়ে পড়া টাইপের মহিলা। তার সাথে উনার কাপড় চোপড় পরার ধরণ বা কথার স্টাইল একদম অন্য রকম। কেন যেন চোখে লাগে। সুমনের তো এই মহিলার সাথে কথা বলাই ঠিক না। সেখানে একসাথে বাইরে খাওয়া, ব্যাপার কি? অথচ ওদের অ্যানিভার্সারির কথা মনেই থাকে না! আগে থেকে জমে থাকা অভিমানে যেন এক বোতল কেরোসিন ঢেলে দেয়। তাপসীর ইচ্ছে করে বাচ্চাদের নিয়ে এখান থেকে এই মুহূর্তেই বের হয়ে যেতে।

(চলবে)