#শ্যামাবতী_প্রেয়সী
#পর্বঃ ১৪
#জেসমিন_জেমি
দেখতে দেখতে কেটে গেছে তিনমাস।
পরী সারাদিন পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছে আজ। পরী কি এক ঝামেলায় জড়িয়েছে এই ভিসা প্রবলেম এবার পরীকে বিরক্ত করে ফেলছে। পরীর ইচ্ছে করছে সব কাগজ ছিঁড়ে ফেলতে যাবে না ওই কানাডা ফানাডা। পরীর প্রয়োজনীয় কাগজগুলোতে কিছু প্রবলেম থাকায় এসব নিয়ে ওকে আর মেহতাবকে দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে। সারাদিন দৌঁড় ঝাপ শেষে সন্ধ্যায় ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরতে হয়। তবে আজ আগেই ফিরেছে এসেই বিছানায় গা এলিয়েছে।
ঘড়ীতে ৬ টা বাজতে চলেছে। পরী হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পুরো বিছানা জুড়ে শুয়ে আছে। শিকদার বাড়ীর তিন কর্তা যার যার কাজে ব্যস্ত।মাহদুল শিকদার, মাহমুদ শিকদারের নিজেদের ব্যবসা আর মিরাজ শিকদার প্রাইমারি শিক্ষক। বিশেষ কোনো কারন ছাড়া উনাদের বাড়ীতে পাওয়া যায় না আজ ও নেই। পরী আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো একটু পর আযান হবে। এমন সময় রুমি বেগম রিপ্তকে কোলে করে হন্তদন্ত হয়ে পরীর রুমে ডুকলো।
রুমি বেগম- পরী তোর সাথে কী রিপ্তীর কথা হয়েছে?
রিপ্ত পরীকে দেখে পরীর কোলে ঝাঁপিয়ে পড়লো। পরী রিপ্তকে কোলে নিয়ে ঘুমঘুম চোখে রুমি বেগমের দিকে চাইলো, বললো,
– উহু কেনো?
রুমি বেগমকে এবার চিন্তিত দেখালো,বললো,
কি করি এখন?
পরী – কি হয়েছে বলবে তো?
রুমি বেগম চিন্তিত গলায় বললো,
একটু পর আযান হবে মেয়েটা সেই সকালে বের হয়েছে। কলেজ তো দুটোর সময় শেষ হওয়ার কথা আজ এখনো বাড়ী ফিরেনি। একটু পর আযান হবে মাগরিবের। কল করছি ফোন বন্ধ।
পরী যেনো আকাশ থেকে পড়লো। রিপ্তী বাসায় নেই? এরজন্যই তো এতোক্ষন ওর রুমে কেউ আসে নি এই মেয়ে বাসায় থাকলে এতোক্ষণে পরীকে জড়িয়ে পরীর পাঁশে রিপ্তীকেও দেখতো। রুমি বেগম মেয়ের চিন্তায় পা/গ/ল প্রায়। মেয়ে বাড়ীতে ফিরেনি মেয়ের চিন্তায় চিন্তায় আমিরাকে কল করবে সেটাও ভূলে গেছে রুমি বেগম। পরী সাথে সাথে কল করলো রিপ্তীর ফোনে ফোন বন্ধ। রুমি বেগম এবার অশান্ত হয়ে উঠলো। অজানা এক ভয় মনে জেঁকে বসলো। রুমি বেগম ভেবেছিলো রিপ্তী বান্ধবীদের সাথে কোথাও ঘুরতে গিয়েছে হয়তো কেননা ওরা বান্ধবীরা মিলে আঁশেপাঁশের বাগান,ক্যাফেটেরিয়াতে ঘুরতে যায় মাঝে মাঝে তবে আছরের আগেই ফিরে আসে কিন্তু আজ যখন দেখলো আসরের পর মাগরিবের সময় হয়ে যাচ্ছে মেয়ে বাড়ীতে ফিরছে না তখন থেকে কল করে যাচ্ছে রুমি বেগম কিন্তু মেয়ের ফোন বন্ধ বলছে৷ পরী ব্যস্ত গলায় বলল,
শান্ত হও ছোট মা। ওরা ফ্রেন্ডসরা মিলে কোথাও ঘুরতে গেছে হয়তো বা।
রুমি বেগম – ঘুরতে গেলে এতেক্ষনে ফিরে আসার কথা পরী। ওরা এতো দেড়ি করে না কখনো।
পরী কি করবে? মনে মনে ওর ও ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। চারপাঁশে মাগরিবের আযান হচ্ছে। অন্ধকার নেমে আসছে। কি করবে, কাকে কল করবে মাথা কাজ করছে না পরীর। রিপ্তকে বিছানায় বসিয়ে তৎক্ষনাৎ কল করলো আমিরাকে দুবার রিং হতেই অপাঁশ থেকে হ্যালো বললো পরীর মামি। পরী বললো,
মামি আমিরা কোথায়?
পরীর মামি অবাক হলো, বললো,
আমিরা তো বাচ্চাদের পড়াচ্ছে। কেনো? কি হয়েছে? তোর গলা এমন শোনাচ্ছে কেনো পরী ?
পরী – আমিরাকে দাও মামি।
পরীর মামি ফোন নিয়ে ছুটলো মেয়ের কাছে, রুমি বেগম পুরো রুম জুড়ে পায়চারি করছে।।
আমিরা – পরি আপা বলো।
পরী – রিপ্তী কোথায়? তুই কোথায়? রিপ্তী এখনো বাড়ীতে ফিরেনি।
আমিরা যেন আকাশ থেকে পড়লো। সে তো আজ কলেজ যায়নি। শরীর খারাপ করায় রিপ্তীকে কালই জানিয়ে দিয়েছিলো সে কলেজে যাবে না। আমিরা বললো,
আমি বাসায় আপা আমি তো কলেজ যায়নি আজ।
পরীর হাত পা কেঁপে উঠলো। দরদর করে ঘামতে লাগলো সারা শরীর। রিপ্তীর খোজ পাওয়া যাচ্ছে না এ কথা মাহদুল শিকদার, মাহমুদ শিকদার মিরাজ শিকদারকে কল করে জানানো হলো। শোনা মাত্রই বাসায় ছুটে আসলো সবাই। এ খবর শুনে আমিরাও পাগলের মতো ছুটে আসলো। একে একে রিপ্তীর সব বান্ধবীদের কল করা হলো কেউ রিপ্তীর খোঁজ দিতে পারলো না। শিকদার মহলে নেমে এলো ঘোর অন্ধকার। রুমি বেগমের আহাজারিতে শিকদার মহল কেঁপে উঠলো। তার ছোট বাচ্চাটাকে পাওয়া যাচ্ছে না। মেহতাব, মিরাজ শিকদার বাইক নিয়ে বের হলো রিপ্তীকে খোঁজতে। দুচোখের পাতা কেউ এক করতে পারলো না সেই রাতে । মাহদুল শিকদার, মাহমুদ শিকদার থানায় গেলো কিন্তু ফিরে আসতে হলো তাদের । সেই রাতেই পুরো এলাকায় ছড়িয়ে গেলো শিকদার বাড়ীর ছোট মেয়েকে পাওয়া যাচ্ছে না।
৪৮ ঘন্টা না হলে মিসিং কেস ফাইল করা হয় না তবুও মেহতাবের বন্ধু আমান পুলিশ অফিসার হওয়ায় মেহতাবকে সাহায্য করলো। সারা রাত খোঁজাখুজি করেও কোথাও রিপ্তীর খোজ পাওয়া গেলো না। পুরো বাড়ীতে এবার ঘোর অমানিশা নেমে এলো। পরী চোখের সামনে ভেসে উঠলো রিপ্তীর হাস্যজ্বল চেহারা। ভীষণ আদূরে টাইপের মেয়ে রিপ্তী। সারাক্ষণ বকবক করা তার স্বভাব ঠিক আলিশার মতো। আলিশা মেয়েটাকে পরীর রিপ্তীর মতো লেগেছে।
এইতো সকালেই মেয়েটা তাকে বললো,
পরিপা তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে আজ।
পরীর ফোন এই নিয়ে ৪০ বার রিং হয়ে কেটে গেছে। এহতিশামের কল, যে এহতিশামের কলের আশায় পরী বসে থাকে আজ সেই এহতিশামের কল একের পর এক বেঁজে কেটে যাচ্ছে। আবার ফোন বাজতেই পরী কাপাকাপা হাতে কল রিসিভ করলো। অপাঁশ থেকে এহতিশাম ধমকে উঠলো। প্রচন্ড রেগে গেছে এহতিশাম। একটা মানুষকে ৪০ বার কল করা কি চাট্টিখানি কথা? রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তার, ধমকে উঠে বললো,
অ্যাই মেয়ে সমস্যা কি তোমার? কতবার কল করেছি? দেখেছো?
রিপ্তীর চিন্তা এহতিশামের ধমকে পরীর কান্নারা এবার গলা চেঁপে ধরলো হু হু করে কেঁদে উঠলো পরী । এহতিশাম থম মেরে গেলো। পরীর কান্নার আওয়াজ বাড়তেই থাকলো। এহতিশাম এবার ব্যস্ত হয়ে উঠলো ফোনের অপাঁশ থেকে শীতলকন্ঠে বলে উঠলো,
কাঁদছো কেনো? কি হয়েছে? কি হয়েছে বলো।
লিসেন ডোন্ট ক্রাই, ডোন্ট ক্রাই প্রাণ ।
বলো আমায় কি হয়েছে?
পরী হেঁচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
রিপ্তী! রিপ্তীকে পাওয়া যাচ্ছে না।
আমার রিপ্তীকে পাওয়া যাচ্ছে না সাদা বিলাই।
বলেই কেঁদে উঠলো পরী এহতিশাম পরীকে শান্ত করতে বললো,
ওয়েট, ওয়েট শান্ত হও তুমি। কিছু হয়নি রিপ্তীকে পাওয়া যাবে। তুমি শান্ত হও, কেঁদো না।
————
পুরো একটা রাত কেটে গেলো রিপ্তীর খোঁজ পাওয়া গেলো না। ভোরের আলো ফুঁটে উঠেছে চারপাঁশে। মেহতাব আর মায়ান পুলিশের জিপে করে ভোরে বাড়ীতে ফিরলো। বাড়ীর সবার মুখের দিকে চাওয়া যাচ্ছে না। রুমি বেগমের মেয়ের চিন্তায় পাগল হয়ে উঠেছে। জুলেখা বেগম আয়রা বেগমেরও একি অবস্থা। আয়রা বেগম রিপ্তীকে ছোট থেকেই অনেক আদর করে বড় করেছেন । মেহতাব বাড়ীতে ফিরতেই রুমি বেগম আয়রা বেগম ছুটে গেলো।
আমার রিপ্তী? আমার রিপ্তী কই? আমার রিপ্তীকে ছাড়া বাসায় কেনো ফিরেছো মেহতাব?
পরী – মেহতাব ভাই আমার রিপ্তী কোথায়? আমার রিপ্তী কোথায়?
মেহতাব শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি বলবে সে সে তো রিপ্তীর কোনো খোঁজ পায়নি। কি বলবে ওদের? ভোরের আলো ফুটতেই পুরো এলাকার লোকজনের মুখে রটে গেলো শিকদার বাড়ীর ছোট মেয়ের কথা। কেউ কেউ আফসোস করছে আবার কেউ কেউ মুখ বাঁকিয়ে বলছে দেখো গিয়ে মেয়ে কারো সাথে ভেগেছে। আজকালকার মেয়ে ছেলেদের ভরসা আছে?
চলবে,,,,,,
।ভুলক্রুটি মার্জনীয়।