#শ্যামাবতী_প্রেয়সী
#পর্বঃ ১৬
#জেসমিন_জেমি
দখিনা বাতাস বইছে চারপাঁশে ঘুটঘুটে অন্ধকার। ছাদের এক কোনায় টিমটিমে আলোয় জ্বলছে এনার্জি বাল্ব৷ রাতের আকাঁশে মেঘ জমেছে। একটু আগেই আঁকাশে ঝলমলে চাঁদ আর তারকারাজির মেলা বসেছিলো অথচ মুহুর্তেই ঝলমলে আঁকাশে ছেয়ে গেছে কালো মেঘের ছায়া। এখন আর আঁকাশ হাতরে চাঁদের দেখা পাওয়া মুশকিল তবে ভীষণ দূরত্বে থাকা ঝাপসা আলোয় জ্বলছে একটা দুটো তারা। পরী খুব মনোযোগ দিয়ে আঁকাশ দেখছে। আঁকাশ ওর ভীষন পছন্দের। পরী মাঝে মাঝেই রাঁতের আঁকাশ দেখে, ঝলমলে আলোয় জ্বলজ্বল করা চাঁদের আলো গায়ে মাখে। পরী ছাদের দোলনায় বসে আছে হাতে নিজের ফোন এ সময়টাতে এহতিশামের কল আসবে। পরী কাঙ্ক্ষিত মানুষটার ফোনকলেরই অপেক্ষায় হলোও তাই মিনিট কয়েক পরে পরীর ফোন টুংটাং আওয়াজে বেজে উঠলো। পরীর ঠোঁটে খেলে গেলো এক অমায়িক হাসি তড়িঘড়ি করে ফোন চোখের সামনে ধরতেই স্ক্রিনে গোটাগোটা অক্ষরে ভেসে উঠলো,
অসভ্য সাদা বিলাই।
নামটা দেখেই পরী ফিক করে হেসে উঠলো। এই তো কিছুদিন আগেই এই নামে সেভ করেছে। পরী সাথে সাথে কল রিসিভ করলো না। সারাদিন পর কল করেছে। লোকটা কি জানে না? পরী লোকটার ফোনকলের অপেক্ষায় থাকে? তাহলে এতো গড়িমসি কেনো করে লোকটা? ধরবে না কল। পরীকে অপেক্ষা করানো তাই না? এখন নিজেও অপেক্ষা করুন হুহ। পরী এসব বিরবির করে বললেও কথা শেষ করে মুখ বাঁকালো। একে একে দুবার রিং হয়ে কেটে গেলো পরী স্ক্রিনে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসলো। মনে মনে ঠিক করলো তিনবারের সময় সে কলটা রিসিভ করবে কিন্তু আফসোস তৃতীয়বার আর কোনো কল এলো না। পরী চোখ মুখ কুঁচকে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে রইলো।ফোনটা একদম দুহাতে তোলে নিলো যাতে আবার কল এলে সাথে সাথে রিসিভ করতে পারে । পরীর আশায় সে গুড়ে বালি তৃতীয় বারের মতো এহতিশাম আর কল করলো না। রাগে দুঃখে পরীর নাক মুখ লাল হয়ে উঠলো। চোখ দুটো টলমল করে উঠলো। ইচ্ছা করছে নিজের মাথা নিজে ফাঁটাতে কেনো সে কলটা রিসিভ করলো না আর ওই স/য়/তান লোকটাই বা কেমন? আবার কল করলো না। পরীর এখন হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাঁদতে ইচ্ছা করছে। পরী করল ও তাই। ব/জ্জা/ত লোকটা কেন কল করলো না। কেনো? কেনো? কেনো?
পর পর নিজমনে আওড়ালো সে করেনি তাতে কি? পরী কল করবে। যেই ভাবা সেই কাজ পরী সাথে সাথে এহতিশামকে কল করলো। তবে এবার যা দেখলো ওর ইচ্ছা করছে সব কিছু ছেড়ে ছুঁড়ে সে বনবাসে চলে যাক। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে পরী না হয় কল রিসিভ করে নি তাই লোকটা আর কল করবে না? কল করবে না তো না করুক তাই বলে অফলাইনে চলে যাবে? বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে বিরবির করে বললো,
আপনার মতো পাষাণ লোক দুটো দেখিনি সাদা বিলাই। ইচ্ছে করছে আপনার সব গুলো চুল ছিড়ে ফেলি। আপনার ফর্সা গালে খামচে দিই। ধ্যাত দ্যাত ধ্যাত।
রাগ কমছে না পরীর কি করলে রাগ কমবে? এহতিশামের ওই সিল্কি চুলগুলো টেনে দিতে পারলে? হয়তো তাই!
পরীর রাগের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে ছাঁদে আসলো আনান। ছাঁদ দরজা থেকে সোজা এসে রেলিঙ ঘেষে দাঁড়িয়েছে পড়নে ব্লু টিশার্ট, আর ব্লাক জিন্স। ফর্সা মুখশ্রীতে বাকা হাসি ঝুলছে। আনান কখন এসে ছাদে দাড়িয়েছে পরী লক্ষ্য করেনি সে তো ফোন নিয়ে ব্যস্ত। আনান এবার এগিয়ে এসে দোলনার কাছে দাঁড়িয়ে ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বললো,
পরী যে একা একা চন্দ্র বিলাস করছো নাকি?
পরী থতমত খেয়ে বসলো। নিস্তব্ধতায় মোড়া ছাঁদে হুট করে কারো কন্ঠস্বরে ভয়ও পেলো। যখন বুঝলো ভেসে আসা কন্ঠের মানুষটা আনান তখন ছিটকে উঠে পড়লো দোলনা থেকে পর পর আনানের দিকে দৃষ্টিপাত করলো। ছাদের আলোয় ভেসে উঠলো আনানের ফর্সা মুখশ্রী যার চোখে মুখে ঝুলছে সয়তানি হাসি। পরী চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো। এমনিতেই রাগে তার শরীর জ্বলছে তার উপর এই আনান। তরতর করে রাগ বাড়লো পরীর। বিরক্তি মোড়া কন্ঠে বললো,
আপনি এখানে কেনো?
আনান আয়েশ করে দোলনায় বসলো। পরী এখনো চোখ মুখ কুঁচকে আনানের দিকে তাকিয়ে আছে। আনান পরীর দিকে তাকিয়ে বললো,
ওই তুমি যা করছিলে তাই,
পরী – মানে?
আনান- চন্দ্রবিলাস, চন্দ্রবিলাস।
তুমি একা একা চন্দ্রবিলাস করছো তাই তোমাকে সঙ্গ দিতে এসেছিলাম।
পরী দাঁতে দাঁত চেপে ধরলো, বললো,
আপনার মতো মানুষের সঙ্গ আমার লাগবে না আনান ভাই।
আনান বাঁকা হাসলো,বললো,
তবে কার লাগবে? কি যেনো নাম এহতিশাম নাকি কি? তার?
পরী মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে রইলো।
আনান – তা তোমার জামাই কি তোমার খবর নেই না? এতোক্ষন দেখি হাত পা ছড়াই কাঁদতে ছিলা।
পরী বললো, তা দিয়ে আপনার কি?
আনান ক্রুটিল হাসলো, দোলনায় পা ঝুলাতে ঝুলাতে বললো,
দেখো গিয়ে কোন মেয়ের সঙ্গে,,,
বিদেশী মানুষ ওর কি আর বউয়ের অভাব? তুমি ওমন দুই নাম্বার মানুষকেই কেনো বিয়ে করলে বলো তো?
পরীর ইচ্ছা করছে এই সয়তানটাকে থাপ্পড় মারতে নিজের চরিত্রের ঠিক নেই আসছে আরেকজনের চরিত্রের ব্যাখ্যা দিতে অসহ্যকর লোক একটা। পরী এই সয়তানটাকে আর ভয় পায় না বরং এখন একে দেখলে পরীর রাগ হয় ভীষন রাগ। রিপ্তী যে কি বুঝে এমন একটা লোককে বিয়ে করলো কে জানে? মেয়েটার আসলে মাথা ঠিক আছে তো? রিপ্তী বাড়ীতে এসেছে পর্যন্ত পরীর সাথে এমনকি কারো সাথে ঠিকঠাক কথা বলছে না। নিজের রুম থেকে বের হচ্ছে না অথচ এই নির্লজ্জকে দেখো সারা বাড়ী টইটই করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পরী দাঁত কিড়মিড় করে শক্তকন্ঠে বললো,
আনান ভাই!
নিজের চরকায় তেল দিবেন প্লিজ।
আর নেক্সট টাইম আমি ছাদে থাকলে ছাঁদে আসবেন না কথাটা মাথায় সেট করে নিবেন।
বলেই পরী পা বাড়ালো ছাদ থেকে চলে যাওয়ার জন্য আনান এবার পরীর বাম হাত শক্ত করে চেপে ধরলো শক্তগলায় বললো,
তোর মতো মেয়ের জন্য ওমন দুই নাম্বার মানুষই ঠিক।
আনানের চোখ মুখ কঠিন হয়ে উঠেছে। আনান এতো শক্ত করে পরীর হাত চেপে ধরেছে যেনো হাড় ভেঙে গুড়িয়ে যাচ্ছে। পরী হাত ছুটানোর জন্য মোচড়াচ্ছে দেখে আনান আরো শক্ত করে পরীর হাত চেপে ধরলো। পরী চেঁচানো গলায় বললো,
হাত ছাড়ুন। হাত ছাড়ুন বলছি।
আনান যেনো কিছু শুনলো না। সে একই ভাবে ধরে রইলো পরীর হাত। এবার পরীর একদম কাছ ঘেষে দাঁড়ালো। ঘৃণায় সারা শরীর রিরি করে উঠলো পরীর। হাতের ব্যাথায় পরীর চোখ টলমল করছে তবুও শক্ত গলায় বললো,
দূরে যান। দূরে যান আমার থেকে, হাত ছাড়ুন আনান ভাই নাহলে আমি বাড়ীর সবাইকে ডাকতে বাধ্য হবো।
আনান বাঁকা হেসে বললো,
ডাক সবাইকে। তারপর কি হবে?
ছোট বোনের জামাইয়ের সাথে ফ/ষ্টি/ন/ষ্টি ,,
পরী দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিলো। শক্তগলায় বললো,
শাট আপ। আপনার লজ্জা করছে না এসব বলতে? কতোটা নির্লজ্জ আপনি। ঘৃণা হচ্ছে আপনাকে।
আনানের চোয়ালদ্বয় শক্ত হয়ে উঠলো। পরী একহাতে আনানকে ধাক্কা মেরে বললো,
ওই বাচ্চা মেয়েটাকে আপনি ফাঁসিয়েছেন। কতটা নিকৃষ্ট মানুষ আপনি।
আনান ভাই।
রিপ্তীর কন্ঠস্বর কানে বাজতেই আনান পরীর হাত ছেড়ে দিলো পরী ছিটকে সরলো দূরে। রিপ্তী দ্রুত পায়ে এসে আনানের সামনে দাড়ালো চোখ মুখ কঠিন হয়ে আছে মেয়েটার । আনান বললো,
তুই এখানে?
রিপ্তী শক্তগলায় বললো,
আপনি এখানে কেনো?
আনান পরীর দিকে তাকিয়ে বাকা হেঁসে বললো,
এইতো চাঁদ দেখছিলাম পরীর সাথে ।
পরীর সারা শরীর এখনো রাগে কাঁপছে ইচ্ছা করছে আনানের গালে ঠা/স করে চড় বসাতে রিপ্তী একবার পরী আরেকবার আনানের দিকে তাকিয়ে আনানকে শক্তগলায় বললো,
আমি, আপনার বউ থাকতে আপার সাথে কেনো চাঁদ দেখবেন?
পরী গোলগোল চোখ করে রিপ্তীকে দেখলো। এই মেয়ের এতো পরিবর্তন? রাতারাতি একটা মানুষ এতো পরিবর্তন হয়? রিপ্তী কি ভূলে গেছে আনান কতটা জঘন্য মানুষ?
রিপ্তী – রুমে চলুন।
আনান – তুই যা আমি আসছি।
রিপ্তী – না এক্ষুনি আসুন।
আনান কঁপাল কুচকালো,রিপ্তী আনানের হাত টেনে গটাগট পায়ে ছাদ থেকে নেমে গেলো। পরী দীর্ঘশ্বাস ফেললো হাতের দিকে তাকাতেই দেখলো হাত লাল হয়ে উঠেছে । রাগে সারা শরীর কেঁপে উঠলো। একটা জঘন্য লোক! জঘন্য, জঘন্য জঘন্য । সে দ্রুত পায়ে ছাদ থেকে নেমে এলো।
—–
রাত ১০ টা বেজে ২০ মিনিট।
একটু আগের মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ভেদ করে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। পরী জানালায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে। এই যে বৃষ্টি, ঝুম বৃষ্টিও পরীর ভীষণ প্রিয়। পৃথিবীর সকল সুন্দর জিনিসগুলো এই অসুন্দর মানবীর ভীষণ প্রিয়। যেমন- ফুল, বৃষ্টি, চাঁদ।
পরী একহাত জানালার গ্রিল ভেদ করে বাহিরের বৃষ্টি ছুঁয়ে দিচ্ছে। একদিকে এহতিশামের উপর রাগ অন্যদিকে আনানের উপর রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে পরীর। এই ঠান্ডা বৃষ্টি কণাগুলো আনানের চেপে ধরা জায়গায় টুপটুপ করে পড়ছে। পরী ব্যথায় চোখ বুজে ফেলছে।
তখন রুমে এসেই নিজের ফোনটা ছুঁড়ে ফেলেছিলো বিছানায়। এখন ফোন রিং হতেই সেদিকে তাকালো পরী। পরীর ইচ্ছে করছে না কল রিসিভ করতে আর এখন এহতিশাম নিশ্চয় কল করেনি। পরী ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো জানালার পাঁশে এই বৃষ্টির ছিট ফোঁটায় পরীর কপালের এলেমেলো চুল গুলো ভিজিয়ে দিচ্ছে। চোখ মুখে ছোট ছোট পানির কণা জমছে সেদিকে পরীর খেয়াল নেই। পরী বৃষ্টির ফোঁটা হাতে জমাতে জমাতে বললো,
-মিস ইউ সাদা বিলাই।
ফোন তখনও বেজে চলেছে পরী চোখ মুখ কুঁচকে ফোন হাতে তুলতেই দেখলো এহতিশামের কল। পরীর চক্ষু চড়কগাছ সে আর দেড়ি করলো না সাথে সাথে কল রিসিভ করতে যাবে তখনি কলটা কেটে গেলো। পরীর ইচ্ছা করলো এই বৃষ্টির পানিতে ডুবে ম/র/তে এবার যদি লোকটা আর কল না করে? নাহ পরী এবার সাথে সাথ কল করতে যাবে তখনি ফোন বেজে উঠলো পরী সময় নিলো না সাথে সাথে কল রিসিভ করে উদ্বিগ্ন গলায় বললো,
-হ্যালো।
এহতিশাম অপাশ থেকে ঠোঁট চেঁপে হাসলো। ফোনের অপাঁশ থেকে ঝুম বৃষ্টির শব্দ ভেসে আসছে। এহতিশামকে চুপ থাকতে দেখে পরী আবার ও বললো,
কথা বলছেন না কেনো?
চুপ করে থাকার জন্য কল করেছেন?
যদি তাই হয় রাখছি আমি।
অপাঁশ থেকে এহতিশাম শীতল গলায় ডাকলো,
পরী
পরী ফোন কানে চেঁপে ধরলো, এই কন্ঠস্বরটা শোনার জন্য পা/গ/ল হয়ে উঠেছিলো পরী। মাঝে মাঝে পরীর মনে হয় সে পা/গ/ল হয়ে যাচ্ছে আর তার পাগলামির একমাত্র কারন এহতিশাম নামক মানুষটা আবার তার
পা/গ/লামির প্রতিষেধক ও এহতিশাম নামক মানুষটা। এ কেমন অনুভুতির জালে জড়িয়েছে পরী? যেটা থেকে পরী চাইলেও বের হতে পারছে না।
পরী ধীরকন্ঠে বললো,
হু?
এহতিশাম প্রতিদিনের মতো আজকেও বললো,
ডু ইয়্যু মিস মি?
তবে পরী প্রতিদিনের মতো ঠোঁট বাঁকিয়ে ‘না’ বললো না, সে ধীরগলায় বললো,
হু।
এহতিশাম এবার একটু শব্দ করেই হাসলো। পরী এহতিশামের হাসির শব্দ শুনে কপাল কুঁচকালো শক্ত গলায় বললো,
ধ্যাত!
এহতিশাম বললো,
বউ মিস করছে এখন আমি কি করতে পারি?
পরী বললো, ঘোড়ার ডিম ।
এহতিশাম অবাক হওয়ার ভান করে বললো,
সে আবার কি? কিভাবে করে?
পরী চোখ পাঁকালো এতোক্ষণ লোকটার সাথে কথা বলার জন্য পা/গল হয়েছিলো এখন লোকটার সাথে কথা বলে নিজের মাথার চুল নিজের ছিড়তে ইচ্ছে করছে। পরী ফোনের এপাঁশে চোখ পাকালো শক্ত গলায় বললো,
রাখছি আমি।
এহতিশাম শব্দ করে হেসে বললো,
শোনো প্রাণ।
পরী ফোন আবারো কানে চেঁপে ধরলো,
প্রাণ? কাকে ডাকলো? পরিকে? পরি এই লোকটার প্রাণ? কবে? কোথায়? কখন থেকে?
অপাঁশ থেকে এহতিশাম বললো,
কলিংবেল বাজছে।
পরী – মানে?
পরী ভেবেছিলো এহতিশাম কিছু বলবে। এমন কিছু যেটা পরী শুনতে চায় কিন্তু লোকটা কি বললো? কলিংবেল বাজছে? ধ্যাত।
এহতিশাম তাড়া দিয়ে বললো,
কলিং বেল বাজছে কেউ এসেছে হয়তো যাও। রাখছি
পরী চ কারান্ত শব্দ করে উঠলো৷ এহতিশাম তাড়া দিয়ে বললো,
যাও।
বলেই এহতিশাম ফোন কাটল। পরীর রাগে ফুসফুস করতে করতে নিচে যেতে লাগলো। অথচ বোকা পরীর মাথায় এটা এলো না যে কলিংবেলের আওয়াজ সে শুনলো না সে কলিং বেলের আওয়াজ ফোনের অপাঁশ থেকে এহতিশাম কিভাবে শুনলো? তার মাঝে বাহিরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে যেখানে পরীই কিছু শুনছেনা সেখানে এহতিশামের শোনা অসম্ভব। পরী দপাদপ পায়ে নিচে নামতেই দেখলো আয়রা বেগম টেবিল থেকে সবকিছু কিচেনে নিয়ে যাচ্ছে। আয়রা বেগম মেয়েকে দেখে থমথমে গলায় বললো,
কি লাগবে?
পরী শুনলো না সে দরজার দিকে যাচ্ছে আয়রা বেগম মেয়েকে ডেকে ধমকে বললো,
কোথায় যাচ্ছিস এই রাতে? বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে দেখসিস না?
পরী বললো,
কখন থেকে কলিং বেল বাজছে শুনছো না? দরজা খুলছো না কেনো?
আয়রা বেগম এবার কপাল কুঁচকে মেয়ের দিকে চাইলো মেয়েকি পা/গল টা/গল হয়ে গেলো নাকি?
কলিংবেল কোথায় বাজছে? সে তো কখন থেকে এখানে কই কলিংবেলের আওয়াজ তো শুনলো না? আয়রা বেগম লম্বা শ্বাস টেনে টেবিল থেকে তরকারির বাটিটা নিয়ে কিচেনের দিকে গেলো। পরী বিরবির করতে করতে দরজা খুলতেই হতভম্ব হয়ে গেলো, থতমত খেয়ে বসলো। গোলগোল চোখ করে সামনে তাকালো। সামনে দাঁড়ানো মানুষটাকে দেখে চোখ দুটো কটোর হতে বের হওয়ার উপক্রম। সামনে থাকা মানুষটা সত্যি কিনা দেখার জন্য দুহাতে চোখ কঁচলালো পরপর চিবুক গিলে বললো,
আপনি?
অপাঁশের লোকটা এবার চোখ টিপলো। দরজার অপাঁশ থেকে ভেসে আসলো চেনা সেই কন্ঠস্বর,
– বউ মিস করছিলো কি আর করার?
পরী বোকা বোকা চাহনিতে বললো,
আপনি স্বপ্ন?
এহতিশাম এবার হেসে উঠলো পরীর অর্ধভেজা কপালে নিজের আঙুল দিয়ে টোকা মারলো। বললো,
হয়তো স্বপ্ন!
পরী তৎক্ষনাৎ বললো,
এ্যাঁ?
এহতিশাম ঠোট চেঁপে ধরলো, বললো,
এ্যাঁ নয় হ্যাঁ।
পরী চোখের পলকহীন তাকিয়ে আছে এহতিশামের দিকে এহতিশাম এগিয়ে এসে পরীর অর্ধভেজা কপালে ঠোঁট ছোয়ালো। ডাকলো,
ম্যাডাম।
পরী নড়েচড়ে উঠলো সম্বিৎ ফিরে পেলো। সে তড়িঘড়ি করে বললো,
হু?
এহতিশাম ঠোঁট টিপে বললো,
এখানেই দাঁড় করিয়ে রাখবেন?
পরী তড়িঘড়ি করে সরে দাঁড়ালো তখনি দরজায় এসে দাড়ালো মেহতাব হাতে এহতিশামের লাগেজ। এইতো সন্ধ্যায় এহতিশামকে নিতেই গিয়েছিলো মেহতাব। মেহতাব পরীকে এমনভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কপাল কুঁচকে বললো,
কি সমস্যা?
পরী দুদিকে মাথা নাড়লো মেহতাব লাগেজ হাতে বাড়ীর ভিতর ঢুকলো। এহতিশাম হাসতে হাসতে পরীর হাত টেনে বাড়ীর ভিতর ঢুকলো।
চলবে,,,,,,