শ্যামাবতী প্রেয়সী পর্ব-১৭

0
28

#শ্যামাবতী_প্রেয়সী
#পর্বঃ ১৭
#জেসমিন_জেমি

লজ্জা করে না আপনার?

আনান ভ্রু কুঁচকালো, বললো,
লজ্জা করবে কেনো?

রিপ্তী তেজি স্বরে বললো,
কেনো মানে? ছোট বোনের হাজবেন্ড হয়ে বউয়ের বড় বোনের দিকে কুনজর দিচ্ছেন?

আনানের কঁপালে এবার ভাজ পড়লো, বললো,
বাজে কথা বলবি না একদম।

রিপ্তী ক্ষিপ্তস্বরে বললো,
বাজে কথা? আমি দেখছি না? আমার কি চোখ নেই?

আনান বাঁকা হাসলো, ঠোটে ঝুলছে তার সয়তানি হাসি, চোখ টিপে বললো,
তুই কি জেলাস ? হিংসা হচ্ছে? হু হু?

রিপ্তী চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো, বললো,

– ছিহ! হিংসা? তাও আপনার জন্য? আপনার মতো এমন একটা নর্দমার কিটের জন্য?

মুখ ফিরিয়ে নিলো রিপ্তী ঘৃণারস্বরে বললো,
ঘৃণা হয় আপনাকে, ঘৃণা, ঘৃণা আনান ভাই।
ছিহ আপনাকে ভাই বলতেও রুচিতে বাঁধে।

আনান আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করতে করতে বললো,
এই শিকদার বাড়ীর মেয়েকে বউ হিসেবে দেখতে আমার রুচিতে বাঁধে।

রিপ্তী তেড়ে এসে আনানের কলার চেপে ধরে বললো,
তাহলে কেনো জোর করে বিয়ে করলেন আমাকে? কেনো পরী আপার পিছনে পরে আছেন? কেনো?

আনানের চোয়ালদ্বয় শক্ত হয়ে উঠলো। এতটুকু বাচ্চা মেয়ে আনানের কলার চেপে ধরে? তাও এই শিকদার বাড়ীর মেয়ে? এতো সাহস? সে একহাতে রিপ্তীর হাত মোচড়ে পিছনে ঘুরিয়ে ফেললো। দাঁতে দাঁত পিষে বললো,
প্রতিশোধ, প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। তোরা আমার বউ হওয়ার যোগ্যতা রাখিস না। তোরা আমার এক রাতের সঙ্গি হওয়ার যোগ্যতাও রাখিস না।

রিপ্তী ঘৃণায় মুখ ফেরায়। হাতের ব্যথায় ছটফট করতে লাগে। এমন শক্ত করে কেউ হাত চেপে ধরে? রিপ্তীর মাথায় ঢুকে না লোকটা কি পা/গ/ল? বলছে বউ হওয়ার যোগ্য না অথচ তাকে জোর করে, পরীর ভয় দেখিয়ে বিয়ে করেছে শুধু মাত্র প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য? কিসের প্রতিশোধ? কিসের এতো রাগ উনার?

রিপ্তী ঠোঁট চেপে বললো,
আনান ভাই লাগছে ছাড়ুন।

আনান ছাড়লো না সে শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে চেঁপে ধরলো রিপ্তীর হাত পুনরায় শক্ত কন্ঠে শাসিয়ে বললো,
লাগার জন্যই ধরেছি এরপর বড় বড় কথা বলতে আসলে কথা বলার জন্য থুবড়াটা থাকবে না। কথাটা মনে রাখিস।

বলেই ছুঁড়ে মাড়লো রিপ্তীকে রিপ্তী গিয়ে পড়লো বেডের কাছটার ফ্লোরে। রিপ্তী ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। আনান রাগে ফুঁসছে তার একটু ঠান্ডা থাকতে হবে। যে পর্যন্ত তার কাজ সম্পর্ণ না হবে সে পর্যন্ত ঝামেলা করা যাবে না। সে বেলকনির দিকে পা বাড়ালো রিপ্তী কান্না গলায় বললো,
বিশ্বাসঘাতক! আপনি কথা দিয়েছেন আপনাকে বিয়ে করলে পরী আপার দিকে চোখ তুলে তাকাবেন না।

আনান বেলকনিতে যেতে দাঁতে দাঁত পিষে বললো,
আর একটা কথা বললে তোর পরী আপার জন্য কি অপেক্ষা করছে আমি নিজেই জানি না।

রিপ্তী উঠে দাঁড়ালো এগিয়ে গিয়ে আবারও আনানের কলার চেঁপে ধরলো। রাগে ওর চোখ মুখ লাল হয়ে উঠেছে। নাকের পাতা ফুলে ফেঁপে উঠছে তেজি গলায় বললো,
মুনাফিকের বাচ্চা আমার পরী আপার দিকে নজর দিলে তোর চোখ উপড়ে ফেলবো আমি।

এবার আনানের রাগ হলো না বরং হাসি পেলো। বাচ্চা একটা মেয়ে এইতো আনানের বুক সমান। কলার চেপে ধরার জন্যও মেয়েটাকে পা উচু করতে হচ্ছে অথচ তার কত রাগ। আনান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার টিশার্টের কলার চেপে ধরা মেয়েটাকে দেখলো। ফর্সা মুখশ্রী রাগের কারনে লাল হয়ে উঠেছে। চোখে ফুটে উঠেছে ক্রোধের লাল আভা, এইতো ফর্সা গাল গড়িয়ে পড়ছে কয়েক ফোটা অশ্রু কণা। মেয়েটা দেখতে বেশ সুন্দর তবে একটু বেশিই বাচ্চা। রাগে রিপ্তীর সারা শরীর কাঁপছে আনান টের পেলো তার শরীর ঘেষে থাকা বাচ্চা দেহখানা তিরতির করে কাঁপছে সেই সাথে কেঁপে কেঁপে উঠছে গোলাপ রাঙা ঠোঁট। আনান বাকা হেঁসে উঠলো দুহাতে চেঁপে ধরলো ছোট দেহখানা। ফট করে ঠোঁট ছোয়ালো রিপ্তীর ঠোঁটে আকষ্মিক ঘটনায় চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো রিপ্তী। মুহুর্তটা থমকে গেলো যেনো। কলার চেপে রাখা শক্ত হাত নরম হয়ে গেলো। আনান রিপ্তীর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো,বললো,
পরীর কথা বাদ, নে এখন তুই কি করবি করে দেখা? নে নে।

হালকা ঝুঁকে মুখ এগিয়ে দিলো আনান। রিপ্তী ছিটকে সরলো দূরে দুহাতে ঠোঁট মুছলো পরপর উড়না দিয়ে মুছলো। ঘষে ঘষে একপ্রকার ছাল ছাড়িয়ে ফেলার মতো অবস্থা করলো। আনান কাবার্ডে হেলান দিয়ে সবটা দেখছে। সে বললো,
লাভ নেই।

রিপ্তী আয়নায় দাঁড়িয়ে লাল হয়ে যাওয়া ঠোঁটে তাকিয়ে তেজিকন্ঠে বললো,
ছিহ,

বলেই বমি করার জন্য ওয়াশরুমের দিকে ছুটলো। আনান চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো। এই মেয়ে কি বুঝাচ্ছে? আনানের চুমুর টেষ্ট এতো বাজে? যে এই পিচ্চির বমি পাচ্ছে? এতো বড় সাহস এই মেয়ের? আনান ওয়াসরুমের দরজায় গিয়ে দাড়াতেই রিপ্তী হুরহুর করে বমি করে দিলো। মুহুর্তেই মেয়েটা ক্লান্ত হয়ে উঠলো। ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা। আনান ভ্রু কুঁচকে থমথমে কন্ঠে বললো,
সত্যিই এতো বাজে?

বমি করে মেয়েটার শরীর যেনো ভার ছেড়ে দিলো৷ চুলগুলো এলেমেলো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে আনান খুঁজে খুঁজে একটা হেয়ার ব্যান্ড এনে এগিয়ে গিয়ে চুল গুলো দুহাতে বেঁধে দিলো। আনান রিপ্তীকে ধরতেই রিপ্তী শরীরের ভর আনানের উপর ছেড়ে দিলো। আনান চোখ মুখ কুঁচকে থমথমে মুখে সামলে নিলো রিপ্তীকে । চোখে মুখে পানির ছিটা দিয়ে ধরে ধরে বিছানায় বসাতেই রিপ্তী বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। আনান বুঝে উঠতো পারলো না, কি হলো? কিভাবে হলো? একটা চুমুই তো দিয়েছিলো। ছোট একটা চুমুতেই এই অবস্থা? শিকদার বাড়ীর মেয়ে গুলো দেখছি একদম নাজুক অবস্থা? সে রিপ্তীর পা দুটো বিছানায় উঠিয়ে দিয়ে সরে গেলো। কি দিনকাল আসলো আনানের? বিয়ে করেছে শিকদার বাড়ীর এক মেয়ের উপর প্রতিশোধ নিতে এদিকে আরেক মেয়ের সেবা করতে হচ্ছে। এসব করার জন্য আনান এ বাড়ীতে এসেছে? কিন্তু হঠাৎ আনানেরই বা হলো কি? এই মেয়ের জন্য এমন লাগছে কেনো? চিন্তা হচ্ছে কেনো? কি আজব! কি করছে সে? সে তো শিকদার বাড়ীর দুটো মেয়ে জীবন তচনচ করে দেওয়ার জন্য এ বাড়ীতে এসেছে। সেবা করার জন্য না। দুদিন পর তার কাজ হয়ে গেলে একেও লাত্থি মে/রে শিকদার বাড়ীতে ফেলে রেখে চলে যাবে। সমাজে দুটো মেয়ের বদনাম রটে যাবে আনানের মনে পৈচাশিক আনন্দ হবে৷ বাবার অপমান আর তার অপমানের বদলা নিবে সে।
আনানের ভাবনা মাঝেই দেখলো মেয়েটা কেঁপে কেঁপে উঠছে। একটু আগে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে যাওয়ার শরীর এখন শীতে কাঁপছে। আনান কপাল কুঁচকে কপালে হাত দিতেই দেখলো জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে রিপ্তীর। বিরক্তিতে চ কারান্ত শব্দ করে উঠলো। রিপ্তী ধীরকন্ঠে বললো,
আম্মাকে ডাকুন।

আনান দ্রুত উঠে কম্বল মুড়ে দিলো। কাল দুপুর থেকে কিছু খায়নি রিপ্তী। বাসায় এসে মাত্রই খেয়ে ছাদে গিয়েছিলো। আনান তাকে আটকে রেখেছিলো ভয় দেখিয়ে জোর বিয়ে করেছে। রাত এখন গভীর এ বাড়ীর কেউ জেগে নেই আনান কি করবে ভেবে পেলো না। কাউকে ডাকবে? কাকে ডাকবে? কে আসবে? সবাই তো রিপ্তীর উপর রেগে আছে। আর সবাই তো ঘুমিয়ে গেছে। রিপ্তী ভীষন আদূরে অসুখ বিসুখে ও ভীষন নাজুক হয়ে পরে। অল্পতেই শরীরের ভর ছেড়ে দেয়। মায়ের আদূরে ছানা অসুখ করলে মায়ের বুকে পরে থাকে সে না হলে পরীর বুকে। রিপ্তী ধীরকন্ঠে ডাকলো,
আম্মা, পরী আপা।

আনান ভ্রু কুচকে ফেললো। এখনো এই মেয়ে পরীর নাম জপছে। কি সাংঘাতিক। আনান রিপ্তীর গালে থাপ্পড় মেড়ে বললো,
কেউ নেই। কেউ না। শুধু আমি আছি। তোর বর আনান।

রিপ্তী চেয়ে দেখলো না। আনান নিচু হয়ে কপালে, গলায় হাত রাখলো। আনানের মাথায় আর কোনো বুদ্ধি কাজ করলো না । সে দ্রুত পায়ে ওয়াশরুমে গিয়ে মগ এ পানি আনলো। পুরো ঘর খুঁজে ছোট কাপড় পেলো না। যেটা দিয়ে সে জলপট্টি দিবে। চোয়ালদ্বয় শক্ত করে বললো,
ফকিরের জাত।
রাগে রিপ্তীর গায়ের উড়না একটানে ছিড়ে ফেললো।

————-

মেহতাব ভাইয়া আপনি?

আমিরার ঘুমঘুম কন্ঠস্বর শুনেই ফোনের এপাঁশ থেকে মেহতাব দীর্ঘশ্বাস ফেললো। রাত এখন গভীর। এতো রাতে মেয়েটাকে কেনো কল করেছে মেহতাব? কেনো? কি বলবে এখন? সে কি বলবে? তোমাকে একটু শোনার ইচ্ছে করছিলো। মেহতাব হুটহাট কি করছে মেহতাব নিজেও জানে না। কই এই মেয়েটার জন্য আগে তো এমন লাগে নি। হুট করে কি হলো? এই যে মেয়েটা মেহতাবকে ভয় পায়। মেহতাবকে এড়িয়ে চলে মেহতাবের রাগ হয়। কেনো লুকিয়ে চলবে? সে কি বাঘ? মেহতাবের ইচ্ছে করে মেয়েটার গালে একটা শক্ত করে বসিয়ে দিয়ে বলতে,
অ্যাই মেয়ে এরপর থেকে সামনাসামনি ঘুরবে শুধু।

কিন্তু আফসোস এটা সে পারবে না। একটা ধমকেই এড়িয়ে চলে, একটা থাপ্পড় এ মেয়েটা মেহতাবের ত্রিসীমানায় আসবে না কখনো।

আমিরা -মেহতাব ভাই?

খাদিজা বেগম ঘুমঘুমকন্ঠে বললো,
কে? কে কল করেছে আমিরা ?

আমিরা বললো,
মেহতাব ভাইয়া।

খদিজা বেগম চিন্তিত গলায় বললে,
এতো রাতে? কি হয়েছে? ও বাড়ীর সবাই ঠিক আছে?

মেহতাব সব শুনলো পরপর থমথমেকন্ঠে বললো,
রং নাম্বার।

আমিরা থতমত খেলো। চোখ থেকে ঘুম উধাও হয়ে গেলো। রং নাম্বার? এটা রং নাম্বার? এতো রাতে কল করে বলা হচ্ছে রং নাম্বার? আমিরা কালই এই নাম্বার নিজের ফোনে সেভ করেছে। সে জানে এটা মেহতাবের নাম্বার। খাদিজা বেগম বললো,
কি বললো?

আমিরা মোবাইল পাঁশে রেখে মাকে জড়িয়ে বললো,
কিছুই তো বললো না।
তুমি ঘুমাও সকালে গিয়ে একবার দেখে আসবো।

খাদিজা বেগম মেয়ের হাত চেঁপে ধরে চোখ বুজলো, বললো,
আচ্ছা দেখে আসিস এখন ঘুমা।

চলবে,,,,