শ্যামাবতী প্রেয়সী পর্ব-১৮

0
27

#শ্যামাবতী_প্রেয়সী
#পর্বঃ ১৮
#জেসমিন_জেমি

এক নতুন ভোর।
পরী পিটপিটে চোখে চাইতেই চোখের সামনে ভাসলো অতি সুদর্শন এক মুখ। পরী গোলগোল চোখ করে মানুষটাকে দেখলো। মানুষটা কি স্বপ্ন? নিজের চোখকে বিশ্বাস করা দায়। পরী নিজ হাতে নিজে চিমটি কাটলো। লোকটা যে আসলেই পরীর সামনে মনে পড়তেই সে মৃদু হাসলো পরপর রাতের কথা মনে পড়তেই পরী চোখ নামিয়ে ফেললো। লজ্জায় ওই ঘুমন্ত মানুষটার মুখ পানে চাইতেও লজ্জা পাচ্ছে সে। এই লোক এতো ঠোঁট কা/টা এতো বেসামাল। পরী ভাবতেও পারে নি। এহতিশাম অনেকক্ষণ ধরে পরীকে পর্যবেক্ষন করছে যখন পরী চোখ খুললো তখন এহতিশাম ইচ্ছে করে ঘুমের ভান ধরেছিলো । মাথা তুলে পরী এহতিশামের দিকে তাকাতেই দেখলো এহতিশাম ওর দিকেই তাকিয়ে আছে পরী থতমত খেয়ে দূরে সরতে নিলেই এহতিশাম দুহাতে জড়িয়ে নিলো। ঘুমঘুমকন্ঠে বললো,
গুড মর্নিং প্রান।

পরী ঠোঁট চেঁপে হাসলো। লজ্জায় চোখ নামিয়ে
ধীরকন্ঠে বললো,
গুড মর্নিং।

চোখের সামনে লজ্জায় রাঙা নত মুখশ্রী দেখে এহতিশাম হাসলো, ভীষন সুন্দর সেই হাসি। ফিসফিসিয়ে বললো,
আপনি কি লজ্জা পাচ্ছেন মিসেস আয়াশ?

পরী চোখ মুখ কুঁচকালো। বজ্জাত লোক বুঝে শুনে ঢং করছে। সে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললো,
লজ্জা? লজ্জা কেনো পাবো?

এহতিশাম হেঁসে উঠলো। বললো,
তাহলে আমার দিকে তাকান। লুক এট মি।

পরী তাকালো না। এহতিশাম এবার শব্দ করে হাসলো। এহতিশামের ঝংকার তোলা হাসিতে পরীর রাগ হলো সে চোখ পাকিয়ে বললো,
সমস্যা কি আপনার?

এহতিশাম ভোলা-ভালা মুখ করে বললো,
কই?

পরী – এভাবে পা/গ/লের মতো হাসছেন কেনো?
ধ্যাত!

পরী উঠে যেতে নিলে এহতিশাম শক্ত করে ধরলো। বললো,
উঠে গেলে আপনার জন্য শাস্তি অপেক্ষা করছে।

পরী গোলগোল চোখ করে তাকালো। অবাক হয়ে বললো,
মানে?

এহতিশাম ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
দেখার তৃষ্ণা মিটুক ছেড়ে দিবো ।

পরী বললো – এ্যাঁ?

এহতিশাম হাসলো পরীর কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। পরী এহতিশামের বুকে থুতনি গুজে চুপটি করে রইলো। এহতিশাম চোখ বুঁজে রইলো। পুরো রুম জুড়ে পিনপিন নিরবতা। নিরবতা ভেঙে পরী বললো,
আমায় ভালোবাসেন?

এহতিশাম চোখ মেলে পরীর দিকে তাকালো তবে জবাব দিলো না। পরী আবারো বললো,
আপনি আমায় ভালোবাসেন এহতিশাম?

এহতিশাম ধীরকন্ঠে বললো,
আপনি ভীষণ বোকা মিসেস আঁয়াশ৷
পৃথিবীর বুকে সবার থেকে নির্বোধ প্রাণিটা বোধহয় আপনি।

পরী চোখ বাঁকিয়ে তাকালো। কি বললো? পরী বোকা? পরী নির্বোধ? পরী তরিৎ গতিতে উঠে বসলো। এহতিশাম ও খাটে হেলান দিয়ে বসলো।
পরী এহতিশাম কিছু বুঝে উঠার আগেই পরী আক্রমণ করে বসলো। এহতিশামের বুকে কিল বসালো। ধীরে মারতে গিয়ে বেশ জোড়েই মে/রে বসে পরী। এহতিশাম সাথে সাথে বুক চেপে ধরলো। মুখে মৃদু আর্তনাদ করলো। পরী হকচকিয়ে উঠলো ব্যস্ত হয়ে বললো,
বেশি লেগেছে? ব্যথা পেয়েছেন। ও আল্লাহ!

এহতিশাম বুক চেপে গা এলিয়ে দিলো করুন চোখে পরীর দিকে তাকালো পরপর মুখ বালিশে চেপে পরে রইলো। পরী এবার ঠোঁট উল্টে দিলো। ভয়ে গলা শুকিয়ে উঠলো। ব্যস্ত গলায় বললো,
আমি, আমি ইচ্ছে করে এতো জোড়ে মারেনি।
শুনছেন? শুনছেন আপনি ? উঠুন উঠুন।

কাপাকাপা গলায় বললো,
কি করি? কি করি আমি?

পরপর এহতিশামের হাত টানলো। এহতিশাম বালিশে মুখ চেঁপে হাসলো। এমনি এমনি কি এই মেয়েটাকে সে বোকা বলে? বোকা মেয়ে। এহতিশামের বোকা বউ। এহতিশামের বোকা প্রেয়সী।

পরী এবার শব্দ করে কাঁদলো। বললো,
কথা বলুন আমার সাথে। কথা বলুন। উঠুন।

এহতিশাম এবার চট করে চোখ মেলে তাকালো। পরি কাদো কাঁদো গলায় বললো,
আমি আমি ইচ্ছে করে মারে নি। ব্যথা পেয়েছেন?

এহতিশাম হেঁসে উঠলো। সে উঠে বসে বললো,
তোমার ওই ছোট্ট হাত এহতিশাম আয়াশকে আঘাত করার শক্তি রাখে?

পরী ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। কি নাটকবাঁজ। পরীর সাথে এতোক্ষন নাটক করছিলো লোকটা? পরী কাঁদো কাঁদো চোখে রেগে উঠলো। এহতিশাম হেঁসে পরীর দিকে হাত বাড়াতেই পরী এহতিশামের হাতে কামড় বসালো। এহতিশাম দাতে দাতে চেপে রইলো। পরী কামড় দিয়েই বিছানা থেকে নেমে গেলো মুখ ভেংচি কেটে বললো,
হাত না রাখলেও দাঁত রাখে হুহ।
আমার সাথে নাটক তাই না?

এহতিশামের ফর্সা হাতে পরীর দাঁতের ছাপ স্পষ্ট। সামনের দুটো দাত একদম বসে গেছে। মুহুর্তেই লাল হয়ে গেছে জায়গাটা । হয়তো আর কিছুক্ষণ ধরে রাখলে র/ক্ত ঝরতো। এহতিশাম একবার নিজের হাত আরেকবার পরীর দিকে চাইলো। পরীর মুখে তখন বিশ্ব জয় করার মতো হাসি। এহতিশাম কপাল কুঁচকে বললো,
১০০ বছর পর রক্তের স্বাদ।
আপনার অনুভুতি কেমন মিস পেত্নী?

পরী অবাক হলো। এহতিশাম বললো,
ইশ এহতিশাম তোর কপালে শেষমেষ শেওড়া গাছের পেত্নী জুটলো যে তার স্বামীর রক্ত মাংস খেতে চায়।

পরী তেড়ে এসে বললো,
দেখুন

এহতিশাম – হ্যাঁ দেখছি তো।
দেখাও আমিও দেখতে চাই। কাম প্লিজ।

পরী পারে না এখন হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে সে রাগে দুঃখে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

——–
রিপ্তীর জ্বর কমেছে। রুমে তাকাতেই দেখলো রুমে কেউ নেই। আনান গেলো কোথায়? যেখানে মন চায় সেখানে যাক তাতে রিপ্তীর কি? রিপ্তীর কিছু আসে যায় না। রিপ্তী ধীরে ধীরে উঠে বসলো। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো। কিচেনে আয়রা বেগম আর মায়মুনা বেগম রান্না করছিলো। রুমি বেগম রিপ্তকে খাওয়াচ্ছে। জুলেখা বেগম কিচেন থেকে সব ডাইনিং এ আনছে। মেয়ের জামাই এসেছে তার জন্য বেশ আয়োজন তাদের। রিপ্তী রিপ্তকে ধরতে নিলেই রুমি বেগম বললো,
দূরে থাকো আমার ছেলেকে ছুবে না তুমি।

রিপ্তী করুন চোখে তাকালো মায়ের দিকে কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললো,
মা।

রুমি বেগম বললো,
আমি তোমার মা নই। তোমার মা নই আমি।

চোখ দুটো টলমল করতে লাগলো রিপ্তীর রুমে বেগম ছেলেকে নিয়ে সরে গেলো। রিপ্তী দীর্ঘশ্বাস ফেললো। রিপ্তী এ বাড়ীতে এসেছে পর্যন্ত রুমি বেগম, মিরাজ শিকদার মেয়ের দিকে মুখ তুলে তাকায় নি। রিপ্তী মায়ের কাছে কতবার গিয়েছে রুমি বারবার সরে গেছেন। মিরাজ শিকদার ও। রিপ্তী ধীরপায়ে কিচেনে গিয়ে দাঁড়ালো। আয়রা বেগম একবার চোখ তুলে পাঁশে তাকালো পরপর আবারো কাজে ব্যস্ত হলো। রিপ্তী কিচেনের একপাঁশে অবহেলায় দাঁড়িয়ে রইলো অথচ দুদিন আগেও রিপ্তী ছিলো এ বাড়ীর আদরের মেয়ে । জীবন আসলে অদ্ভুত কখন কি ঘটে যায়। আয়রা বেগম হাতের কাজ শেষ করে রিপ্তীর দিকে তাকাতেই থমকালো এ কি হাল মেয়ের। এমন বিধ্বস্ত ক্লান্ত। আয়রা বেগম এগিয়ে গিয়ে রিপ্তীর মাথায় হাত রেখে ব্যস্ত গলায় বললো,
এ কেমন অবস্থা করেছিস নিজের? কি হয়েছে? এমন দেখাচ্ছে কেনো?

রিপ্তী স্নেহের হাত মাথায় পেয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো। আয়রা বেগম মেয়েকে বুকে জড়িয়ে বললো,
কিছু হয়নি। বড় মা আছি সব ঠিক হয়ে যাবে।
কাঁদে না মা।

———–

বিকেলে মাহদুল শিকদার বেশ গম্ভীর হয়ে ড্রয়িংরুমে বসে আছে। ড্রয়িংরুমে পিনপিন নিরবতায় ঘেরা। শিকদার বাড়ীর পুরুষরা কেউ তখন বাড়ীতে ছিলো না। আয়রা বেগম এখন পরীকে তেমন কিছু বলে না। তেমন বকা ঝকাও করে না। তবে মাঝে মাঝে বেশ ভালোবাসে আদর করে। হুটহাট এসে কপালে চুমু খান। আয়রা বেগমের হুট করে পরিবর্তনে পরী যেমন অবাক তেমন খুশিও। যত দুশ্চিন্তা শুধু রিপ্তী মেয়েটার জন্য। রিপ্তীর আজ কলেজ ছিলো সে কলেজে গেছে সামনে পর বোর্ড এক্সাম । বাড়ীতে শুধু পরী আর তার আয়রা বেগম । জুলেখা বেগম আর রুমি বেগম সকালে জুলেখা বেগমের বাবার বাসায় গেছে।

ঘড়ীতে ৩টা।
রুমি বেগম রিপ্তকে পরীর কাছে রেখে গেছে। এহতিশাম আর মেহতাব আজ মাহদুল শিকদারের সাথে তাদের কোম্পানিতে গেছে। পরী রিপ্তকে কোলে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে করিডোর ধরে হাঁটছে। রিপ্ত এটা সেটা আলাপ করছে। ঠোট উলটিয়ে কাঁদছে সে মায়ের কাছে যাবে। কিন্তু তার মা এখনো ফিরেনি। পরী ঠোঁট বাঁকালো, বললো,
চুপ মেয়েদের মতো ম্যাঁ ম্যাঁ করিস কেনো?

রিপ্ত ঠোট উল্টিয়ে আরো জোড়ে জোড়ে কাঁদলো । বললো,
আম্মা যাবো।

পরী চোখ মুখ কুঁচকে বললো,
নিবো না তোর আম্মার কাছে কি করবি?

রিপ্ত কোল থেকে নামার চেষ্টা করলো। সে হাঁটতে পারে একা একা যাবে। পরী কোল থেকে নামিয়ে দিলো। রিপ্ত কাঁদতে কাঁদতে ছুটলো । চেঁচিয়ে বললো,
পরিপা পঁচা।

পরী হেঁসে উঠলো। সে তেড়ে গিয়ে বললো,
তবে রে দেখাচ্ছি মজা।

রিপ্ত থেমে গেলো গোল গোল চোখ করে পরীকে দেখে নিয়ে সে ছোট ছোট পা ফেলে আবারো দৌড় লাগালো। পরীও হেসে ওর সাথে ছুটলো। হুট করে আনান ওর সামনে এসে দাঁড়ালো। হুট করে এভাবে আসায় পরী চমকালো তবে নিজেকে সামলে নিয়ে চট করে থেমে গেলো সবমাত্র বাড়ীতে ফিরেছে আনান। পড়নে চেক শার্ট, ব্লু জিন্স। সে পরীর দিকে মাথা ঝুকিয়ে ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে তাকিয়ে আছে। পরী সরে গেলো পাঁশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই আনান ওর হাত টেনে ধরলো। পরী কটমট চোখে আনানের দিকে তাকালো, সে বললো
হাত ছাড়ুন। অসভ্যতামো করবেন না বলে দিলাম।

আনান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে হাসলো। সে পরীর হাত টেনে বললো,
যদি করি?

পরী দাঁতে দাঁত পিষে বললো
– হাত ছাড়ুন। লজ্জা করে আপনার? এতো নির্লজ্জ কেনো আপনি? আপনাকে আমার ঘৃণা হয়।

আনানের কপালে ভাঁজ সে বললো,
নতুন কিছু বলো।

পরী – হাত ছাড়ুন বলছি।

আনান ছাড়লো না সে মাথা ঝুকিয়ে এনে বাঁকা হেঁসে বললো
না ছাড়লে কি করবে?

পরীর রাগ তখন আকাশ ছুই ছুই সে তৎক্ষণাৎ এক দলা থু থু ছুড়ে মারলো। তেজি কন্ঠে বললো,
আপনার মতো সয়তানকে পারলে জুতা পিটা করতাম।

আনান পরীর হাত ছেড়ে দিলো। চোখ দুটো তার লাল হয়ে গেছে। এরা দুটো বোন আনানকে কি পেয়েছে? কি ভাবছে? ভয় নেই? জানের ভয় নেই এদের? নেহাৎই আনান ভালো মানুষ না হলে এদের দুজনের হাল আনান কি করতো ওরা ভাবতেও পারে না। আনান পরীকে জোড়ে ধাক্কা দিতেই পরী ছিটকে পড়লো দূরে। পরী সাথে সাথে আর্তনাদ করে উঠলো। শ্যামরঙা কপালে হাত দিতেই দেখলো কপালে র/ক্ত । আনান হাত ঝাড়া দিয়ে বললো,
ইচ্ছে করে তোদের দুটোকে মেরে মাটি চাপা দিতে। শালা কি দিন আসলো আমার? তোদের মুখে বড় বড় কথা শুনতে হচ্ছে আমাকে। ছিহ।

পরী চোখে তখন অশ্রুকণার ভিড়। রিপ্ত পরি আপাকে না দেখে সে আবার ফিরে এসেছিলো পরীকে পরে থাকতে দেখে রিপ্ত গলা উচিয়ে বললো,
পরিপা।

আনান, পরী দুজনেই সেদিকে তাকালো। আনান ভ্রু কচকালো। এগিয়ে গিয়ে রিপ্তকে কোলে তোলে বললো,
শালা বাবু যে। তা শালা বাবু কেমন আছেন আপনি?

রিপ্ত কি বুঝলো কে জানে সে আনানের কোল থেকে নামার জন্য ধস্তাধস্তি শুরু করলো।বললো,
নামাও পঁচা ছেলে।

আনান ভ্রু কুঁচকালো। রিপ্ত আনানের হাতে কামড় বসাতেই আনান তড়িঘড়ি করে রিপ্তকে নামিয়ে দিলো।

এহতিশাম বাসায় ফিরে যখন পরীর কপালের আঘাত দেখলো। তখন কিছু মুহুর্তের জন্য এহতিশামের পৃথিবী যেনো থমকে গেলো। ফর্সা মুখশ্রী তখন লাল হয়ে উঠলো। রাগে সারা শরীর কাপছিলো এহতিশামের। পরী কিছু বলার আগেই এহতিশাম রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আনান ড্রয়িং রুমে ছিলো এহতিশাম সামনে গিয়ে দাড়াতেই আনান বাকা হাসলো বললো,
কি চাই?

এহতিশাম আনানের কলার চেপে বললো,
বলেছিলাম না দূরে থাকতে?

আনান – কাছে কখন গেলাম?
ঘাড় বাকিয়ে পরীর দিকে তাকিয়ে বললো,
কাছে গিয়েছি তোমার তুমিই বলো?

এহতিশাম সাথে সাথে ঘুষি মারলো আনানের মুখ বরাবর । পরী ছুটে গিয়েও এহতিশামকে থামাতে পারেনি। রিপ্তী কেবলই বাসায় ফিরলো। ড্রয়িংরুমে এমন অবস্থা দেখে ছুটে এলো। পরীর পাঁশে গিয়ে দাঁড়ালো। দুজন মিলেও এহতিশামকে থামাতে পারলো না । আনানের একহাতে সমস্যা থাকায় সে এহতিশামের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেনি। পরী শেষমেশ না পেরে কেঁদে উঠলো। এহতিশামের এমন রুপ সে কখনে দেখেনি। লোকটাকে শান্ত করতে না পেরে পরী হাওমাও করে কেঁদে উঠলো। ঝাপটে পড়লো এহতিশামের বুকে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
শান্ত হোন দয়া করে শান্ত হোন। আমি ভয় পাচ্ছি। আপনাকে ভয় পাচ্ছি।

এহতিশাম কিছুটা শান্ত হলো । তবে চোখে তার এখনো আগুন ঝড়ছে। তার প্রানের দিকে হাত বাড়ানোর সাহস দেখিয়েছিলো যে হাত ওই
হাতটাই সে ভেঙে দিবে। পরী এহতিশামকে ঝাপটে ধরে একটু সরে গেলো। এহতিশাম এক বার আনানকে দেখে পরীকে নিয়ে চলে গেলো। হুট করে এতো কিছু ঘটে গেলো অথচ শিকদার বাড়ীর লোকজন কিছুই জানলো না। কারন কেউ তখনও বাড়ীতে নেই। রিপ্তী সোফায় বসা আনানকে দেখে ঘৃণায় মুখ ফেরালো। এই লোককে সে ঘৃণা করে, ঘৃণা, ঘৃণা, ঘৃণা । বেশ হয়েছে লোকটাকে মে/রে/ছে। তবুও এই নির্লজ্জের শিক্ষা হয় না। এমন নিকৃষ্ট মানুষও আছে? আনানের নাক ফেটে রক্ত ঝরছে, বাম চোখের পাঁশে মুহুর্তেই র/ক্ত জমাট বেঁধেছে। ঠোঁট ফেঁটে র/ক্ত ঝরছে। রিপ্তী দেখেও দেখলো না৷ সে নিজ রুমের দিকে চলে গেলো।

————–
মাহদুল শিকদার বেশ গম্ভীর স্বরে বললেন,
কি চাচ্ছো তুমি?

আনান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে সোফায় বসলো। পায়ের উপর পা তুলে কোনো রুপ ভনিতা ছাড়াই বললো,

শিকদার কোম্পানি।

মেহতাব রাগে ফুঁসে উঠলো,সে কলার চেপে ধরলো আনানের, আনান বাঁকা হাসলো৷ বললো,
নিজেকে সামলা না ভাই বাকি কথাগুলো শোন।

মাহদুল শিকদার মেহতাবকে থামতে বললেন। মাহমুদ শিকদার মেহতাবকে টেনে আনলো৷ আনান শার্টের কলার ঠিক করলো। বললো,
বাবার কাছে হাতজোড় করে আপনারা দুইভাই ক্ষমা চাইবেন।

মাহদুল শিকদার বেশ শান্তস্বরে বললো,
আমাদের ভূল?

আনান দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
আপনারা আমার বাবার থেকে তার কোম্পানি কেড়ে নিয়েছেন। তাকে অপমান করেছেন। তার থেকে তার সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়েছেন। বাড়ী ভর্তি মেহমানের সামনে আমাকে আর আমার বাবাকে অপমান অপদস্ত করেছেন।
আপনি বলছেন আপনাদের ভূল নেই? ভূল নেই আপনাদের?

মেহতাব বললো,
না নেই। আমাদের ভূল নেই ।

আনান শব্দ করে চেয়ারে লাথি মাড়লো। বললো,
খোদার কসম ধ্বং/স করে দিবো। আপনাদের আমি ধ্বং/স করে দিবো।

মাহদুল শিকদার বললো,
কি জানো তুমি? কতটুকু জানো? কতটুকু জানানো হয়েছে তোমায়?

আনান পিষ্ট গলায় বললো,
যতটুকু জানি ততটুকু দিয়েই আপনাদের ধ্বং/স করবো।

মাহদুল শিকদার বললো,
বেশ তো তবে আমার বাড়ীর মেয়েদেরকে এর মাঝে টেনো না এর ফল ভীষন খারাপ হবে।

আনান রেগে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো আর ফিরেনি । রিপ্তী ভীষন খুশি হলো আনান নামক মানুষটা থেকে মুক্তি পেয়ে। তবে ওর খুশি বেশিক্ষন টিকলো না রাতে বাসায় ফিরলো আনান। রিপ্তীর গা জ্বলে উঠলো ওকে দেখে সে রাগে ধপাধপ পা ফেলে ওয়াশরুমে চলে গেলো। কিছুক্ষন পরে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলো আনান বিছানায় বসে সিগারেট ফুঁকছে।ফ্লোরে ৭/৮ টা সিগারেটের শেষাংশ পরে আছে। বর্তমানে দু হাতে দুটো সিগারেট । দেখেই গা গুলিয়ে উঠলো রিপ্তীর সিগারেটের গন্ধে
রিপ্তীর দম আটকে আসে। তার বমি পায়। সেদিন এই লোকটা সিগারেট খেয়ে তাকে চুমু খেয়েছিলে বলে রিপ্তী বমি করেছিলো। পুরো রুমে এখন সিগারেটের গন্ধ। রিপ্তী দুহাতে নাক চেঁপে ধরলো। রাগীকন্ঠে বললো
আপনি একটা জা/নো/য়ার। বের হোন বের হোন আমার রুম থেকে এক্ষুনি বের হোন।

আনান বিছানায় উঠে বসলো। কেমন যেনো লাগছে লোকটাকে। রিপ্তী এগিয়ে এসে বললো,

-আমি আপনার সাথে কথা বলছি। শুনছেন আপনি? এতো নির্লজ্জ কেনো আপনি ? আমাকে আপনার থেকে মুক্তি দিন। মুক্তি দিন আমায়। আমার বাড়ীটাকে মুক্তি দিন আমার পরি আপাকে মুক্তি দিন। আপনার জন্য আমি আমার সব হারিয়েছি আপনি আমার সব কেড়ে নিয়েছেন।

শেষ কথাটা বলতে বলতে কেঁদে উঠলো সে। আনান উঠে এসে রিপ্তীর সামনে দাঁড়ালো। কেমন ঢুলো ঢুলো শরীর। কাছে আসতেই এক বিদগুটে গন্ধ নাকে ভাসলো। কিসের গন্ধ এটা? এটা তো সিগারেটের গন্ধ না। ড্রিংক লোকটা বোধহয় ড্রিংক করেছে। ঘৃণায় রিপ্তীর গা রি রি করে উঠলো। রিপ্তী ভালোভাবে দুহাতে নাক চেঁপে ধরলো। সে গলা চেঁপে বললো,
সরে যান। মা/রা যাবো আমি সরে যান আমার থেকে।

আনান সিগারেটের শেষাংশ মেঝেতে ফেলে হুট করে রিপ্তীর গলায় মাথা রাখলো। ঢলে পড়লো ছোট রিপ্তীর উপর, তার সমস্ত ভার ছেড়ে দিলো ছোট রিপ্তীর দেহের উপর। একহাতে রিপ্তীর পিঠ আঁকড়ে ধরলো। রিপ্তীর হাত দুটো আপনা আপনি নাক থেকে সরে গেলো। সে হালকা ঝাঁকিয়ে বললো,
সড়ুন। সরে যান।

আনান সড়লো না। রিপ্তী ডাকলো আনান শুনলো না। সে কি জ্ঞান হারালো? কথা কেনো বলছেনা? এভাবে রিপ্তীর কাছে এসেই চুপ হয়ে গেলো কেনো? রিপ্তী পুনরায় ডাকলো,
শুনছেন আপনি?

আনান জবাব দিলো না। রিপ্তী হাত দিয়ে আনানের লম্বা শরীরটাকে ধাক্কা দিলে পরে যেতে নিলেই রিপ্তী বহু কষ্টে সামলে নিলো। বিছানায় শুইয়ে দিতেই দেখলো আনানের মুখশ্রী। রিপ্তী খেয়াল করলো ধবধবে ফর্সা না হলেও মোটামুটি ফর্সা ত্বক । এই যে বাম গালের পাঁশে একটু কা/টা দাগ। তবে তেমন একটা দেখা যায় না ভীষন কাছ থেকেই এই কা/টা দাগটা চোখে পড়ে। রিপ্তী দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। একটা সময় ছিলো যখন এই লোকটাকে তার ভালো মনে হতো। হ্যাঁ ওরা তিনবছর যাবৎ কেউ কাউকে দেখেনি তবে রিজভী ভাইয়ার সাথে অনেকবার ফেসবুকের ছবিতে দেখেছে। তখন রিপ্তীর মনে হতো ওরা তো ওদের ভাই ওরা কেনো রিজভীর মতো এ বাড়ীতে আসে না। কেনো আসো না। এখন মনে হচ্ছে ওরা এ বাড়ীতে কখনো না আসলেই ভালো হতো। অন্তত ওর জীবনটা নষ্ট হতো না। পরীর পিছনে পড়তো না৷ কিন্তু রিপ্তী তো আর জানে না আনান আরো অনেক আগে থেকে এ বাড়ীর পিছনে পরে ছিলো । বরং পরীর পেছনে সে পরেছে কিছুদিন হলো। রিপ্তী দীর্ঘশ্বাস ফেললো উঠে আসতে নিলে আনান ওর হাত চেপে ধরে ধীরকন্ঠে বললো,
খুব তারাতারি মুক্তি পাবি। খুব তারাতারি।

রিপ্তী বললো,
কি বললেন? কিছু বলছেন আপনি?

আনান আর কথা বললো না সে বিছানায় পরে রইলো। রিপ্তী মুখে দুবার থাপ্পড় দিলো আনান নড়লো না। এক বিশ্রী গন্ধ পুরো ঘরে ছড়িয়ে গেছে আনানের শরীর থেকে সিগারেটের গন্ধের সাথে ভেসে আসছে ড্রিংকের বিশ্রী গন্ধ রিপ্তী দুহাতে নাক চেপে দৌড়ে ওয়াশরুমে গেলো।

চলবে,,,,