প্রিয়তে তুমি প্রাণ পর্ব-০৮

0
2

#প্রিয়তে_তুমি_প্রাণ💜
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৮

সাদা রঙের গাড়িটা মেইন রাস্তা ছেড়ে সরু একটা রাস্তায় ঢুকে পড়ল। এতোক্ষণ বাজতে থাকা হিন্দি গানটা প্রান্তিক বন্ধ করে দিলো।তীর্যক সূর্যের আলো এসে পড়ছে প্রিয়তার মুখের উপর। প্রান্তিক সামনের আয়নাতে বার বার ফিরে তাকাচ্ছে বউয়ের দিকে। সকাল থেকে বউয়ের মুড অফ। মন বেশি খারাপ ভেবে তাকে নিয়ে বেরিয়েছে শ্বশুর বাড়ি যাবার উদ্দেশ্যে। ভেবেছিল বউয়ের মন ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু না, যে কে সেই। বউ এখনো চুপসে আছে। বাপের বাড়ি যাওয়ার বিন্দুমাত্র আনন্দ তাঁর গায়ে লাগছে না। কিন্তু কেন?

প্রান্তিক তার মন ভালো করতে বলে উঠলো,
– আচ্ছা শুনো! আমার শ্বশুর বাড়িতে তুমি বরং দুদিন বেশি থেকে এসো। কেমন?

প্রিয়তা মুখ ফিরে তাকাল। সে কেমন ঘোরের মধ্যে আছে। গতকাল ভার্সিটি থেকে আসার পর থেকেই এই হাল তাঁর। সেই দিন যেই মেয়েটা তাঁর বিয়ের খবরে আফসোস করেছিলো, প্রিয়তা তাঁকে খুঁজে পেয়েছে। তার নাম সুমনা। প্রিয়তা তাঁকে চিনে। দুজন একই ডিপার্টমেন্টের। কিন্তু নিজের স্বামীর ব্যাপারে আগ বাড়িয়ে কিছু জিজ্ঞেস করেনি সে। তবুও জানল। মেয়েটাই বলল।

– তোমার বর তো একটা ক্যারেক্টার‘লেস! তাঁর সাথে সংসার করো কিভাবে প্রিয়তা?

প্রিয়তা থমকে গেল তাঁর কথাবার্তা শুনে। বিরক্ত মিশ্রিত কণ্ঠে বলল, – কি বললে তুমি?
– হ্যাঁ তো! কতোবার দেখেছি রাস্তায় একটা মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে। রাস্তাঘাটেই তাকে চু‘মু খেয়ে বসতো। লজ্জা শরমের লেশ টুকু নেই তার মাঝে। তাকে তুমি বিয়ে করলে? কিভাবে? খোঁজ খবর নাও নি।

কথার ভাঁজে কথা বাড়ায় নি প্রিয়তার। সুমনার পাশেই আরেক বান্ধবী দাঁড়িয়ে ছিল। কিটকিট করে হাসছিলো সে। কথাগুলো শুনে সে যেন খুব মজা পেয়েছে। রসিকতা করেই বলল,
– সাবধান প্রিয়তা! ঘরে তোমার তিন বোন আছে কিন্তু! বর কে দেখে রেখো বাপু!

ব্যস! এরপর থেকেই প্রিয়তা কেমন নিশ্চুপ হয়ে গেল। মানুষের জীবনে কি প্রেম আসে না? সে করেনি বলে কি আর কেউ করবে না? সুমনার নিজেরও একটা ছেলের সাথে গভীর প্রেম আছে। ভার্সিটির সকলে জানে সে কথা। প্রেম জীবনে আসে রঙিন পাখা মেলে, আবার চলেও যায় তেমনি করে। পার্থক্য হচ্ছে, ফেরার সময় প্রেম উন্মাদ থাকা দুই মানব মানবী কে নিঃস্ব করে দেয়। ব্যাপারটা তেমন হলেও মানা যায় কি?

না যায় না! কারন তার জীবনের প্রথম প্রেম তার বর মশাই। যদিও প্রেম টা এখনো জমেনি। তবুও তো তিনিই আছেন। সেও চেয়েছিলো কারো জীবনের প্রথম প্রেম হোক! মন মানছে না। বর কে জিজ্ঞেস করবে ভেবেও করল না। তিনি উত্তর দিবেন না বরং হেয়ালী করবেন। তবে তার বরকে ক্যারেক্টার‘লেস বলার অধিকার সুমনার নেই। আফসোস হচ্ছে প্রতিবাদ করতে পারল না বলে। কোন ভাবনায় ডুবে ছিল সে?

পাশের মেয়েটার বিদ্রুপ শুনে? তাঁর বোনদের কথা কি! না না, বেশি ভাবছে সে। তবে ভাবনাটুকু ফেলে দেবার নয়। কিন্তু কেউ এতো নোং‘রা ইঙ্গিত কিভাবে করতে পারে? শুধুই রসিকতা করার জন্য! আদৌও!

প্রান্তিক হাত ছুঁয়ে দিতেই চমকে ফিরে তাকাল। প্রান্তিকের হাত ভর্তি জিনিসপত্র। গাড়ি থামাল কখন? হুঁশ ছিল না একদম। প্রান্তিক সেগুলো গাড়ির পিছনে রেখে দিল। প্রিয়তা বলে উঠলো,

– এগুলো কেন?
– বাহ রে, প্রথমবার শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি খালি হাতে যাবো নাকি? আচ্ছা দেখো তো, আর কি নেবো? আমার শালিকাদের জন্য কি নিবো বলো তো?
ছ্যাঁ‘ত করে উঠলো প্রিয়তার বুকটা। যা সে ভাবতে চাইছে না। প্রতিনিয়ত সেইটাই তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। মুখ অন্ধকার করে জবাব দিল,
– কিছু নিতে হবে না। আপনি আসুন!
– কিছুই নিবো না!
– বললাম তো না!

বউ রে‘গে যাচ্ছে ভেবে প্রান্তিক কথা বাড়াল না। সকাল থেকেই এভাবে আছে। এতো কিছু করছে তবুও মন কেন ঠিক হচ্ছে বুঝতে পারছে না। প্রান্তিক আরো কিছুক্ষন পর গাড়িতে এসে বসল। তাঁর হাতে কয়েকটা গোলাপ। প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে নিল। ফুলগুলো তো তাকে দিল না। তবে এগুলো কাদের জন্য? সে বারণ করার পরেও নিয়ে এলো। প্রিয়তা বুঝতেও পারছে না, নোং‘রা নোং‘রা চিন্তা গুলো কিভাবে তাকে আচ্ছন্ন করে রাখছিল। একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো,

– আমাকে দিয়েই আপনি চলে আসবেন!

প্রশ্ন ছিলো না। বলছিলো। প্রান্তিক প্রশ্ন ভেবেই জবাব দিল, – হ্যাঁ, চলে আসব। তুমি দুদিন থেকো। আমি এরপর গিয়ে তোমায় নিয়ে আসব।

প্রিয়তার মুখটা ছোট হয়ে গেল। চোখে অশ্রু জমছে। মুখ ফিরিয়ে বাইরে নিল সে। প্রান্তিক বলল,
– এই তো আর দশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাব আমরা।
ওপাশ থেকে জবাব এলো না। প্রান্তিক নিজেই বলতে লাগলো,
– তোমাদের কতো সুখ তাই না বলো!
– কেমন?
– এই যে, তোমরা চার বোন! ছোট থেকে একসাথে বড় হলে, কতো আনন্দ কতো স্মৃতি। আর আমায় দেখো! আমি তো ছোট থেকেই একলা!

প্রান্তিক কখনো তিক্ত স্বরে কথা বলে না তবুও শেষের বাক্যটুকু বড় তিতকুটে শোনাল প্রিয়তার কাছে। মনে হচ্ছে অনেক বেদনা লুকিয়ে আছে সেখানে। প্রিয়তা তার শ্বশুর শাশুড়ির মুখ দেখেননি। তাদের কোনো ছবি নেই বাড়িতে। বিয়ের পর বাবা বলেছিল, তাঁর শ্বশুর শাশুড়ি কেউ বেঁচে নেই। পরিবার বলতে কেবল দাদাজান আর তাঁর বর। এইতো ছোট্ট সংসার।

কিভাবে মা‘রা গেছে এটাও সে জানে না। দাদাজান কে একবার জিজ্ঞেস করায় তিনি কেমন নিস্তব্ধ হয়ে গেলেন। দ্বিতীয় বার প্রিয়তা সাহস করেনি আর। কিন্তু আজ যেন আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,
– আপনার মা বাবা মা‘রা গেল কিভাবে?

প্রান্তিক আচমকা হেসে উঠলো। হাসার মতো কথা তো সে বলেনি। প্রিয়তা মনোযোগ দিয়ে দেখছে প্রান্তিককে। প্রান্তিক বলল,

– মা মা‘রা গেছে এটা তোমায় কে বলল? তবে তিনি তো আর আমার মা নন! তাই ধরাই যায় মা‘রা গেছে!

প্রিয়তা কৌতূহলী হয়ে শুধায়,
– তাহলে?
– আমার মা ছিলেন বিদেশিনী! দাদাজান বাবা কে পড়তে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। বাবা পড়াশোনা শেষ না করেই মা কি নিয়ে চলে এলেন। দাদাজানের ঘোর অমত থাকা সত্ত্বেও তাদের বিয়ে হলো। এরপর আমি হলাম। হঠাৎ আমার মায়ের মনে হলো, এখানে তিনি আর থাকতে পারছেন না। বাবার প্রতি তার ভালোবাসা শেষ হয়ে গেছে। নতুন কাউকে ভালোবাসেন তিনি। তাই বাবাকে ছেড়ে তার সাথে বিদেশ চলে যান। সেই দুঃখ বাবা নিতে না পেরে তিনিও চলে যান আমায় ছেড়ে!

এতোটুকু বলেই থামল প্রান্তিক। তাঁর চোখমুখ ইতোমধ্যে শক্ত হতে শুরু করেছে। প্রিয়তা মিনমিনিয়ে বলল, এরপর!
প্রান্তিক তাঁর দিকে ফিরে হেসে বলল, এরপর! এরপর বাবা নিখোঁজ ছিল কিছুদিন। একদিন তাঁর লা‘শ পাওয়া এক নদীর কাছ থেকে। পুরো গাড়ি সহ তার লাশ ভেসে উঠল। পুলিশ জানাল অতিরিক্ত মদ্যপা‘নের কারনে এই মৃত্যু হলো। কিন্তু দাদাজানের দৃঢ় বিশ্বাস! তাঁর ছেলেকে কেউ মে‘রে ফেলেছে।

– আর আপনার?

– আমার! আমার কোনো যায় আসে না। যারা আমায় নিয়ে ভাবেনি আমি কেন ভাববো তাদের নিয়ে? আমার তখন সাত বছর বয়স ছিলো। আমার সামনেই মা অন্য একজনের হাত ধরে বেরিয়ে গেলেন। কই? তিনি তো আমায় আদর করলেন না! চুমুও খেলেন না! তাহলে আমি কেন কষ্ট পাবো?

প্রান্তিকের গলা ধরে আসছিলো। সে থেমে গেল। গাড়িও থামল। প্রিয়তার সকল মনোযোগ তখন প্রান্তিকের উপর। গাড়ি থামায় সে যেন চমকেই উঠল।
– কি হলো?
– কি আবার? চলে এসেছি আমরা।
– ওহ! খেয়াল করিনি।
– দুঃখের কথা শোনানোর মানুষ পাওয়া গেলেও দুঃখের সময় কাউকে পাওয়া যায় না বুঝলে প্রিয়তা!

বরের মুখে নিজের নামটা শুনে থমকে গেল প্রিয়তা। একনজরে বরের মুখের পানে চেয়ে রইল সে। তাঁর বর নামক মানুষটি হাসছে। কি সুন্দর তার হাসি!

——–

প্রান্তিক শ্বশুর বাড়ির আপ্যায়ন নিতে নিতে ক্লান্ত। জীবনের প্রথম বুঝি এতো আতিথেয়তা পেলো সে। এরপর তার তিনজন শালিকা। তাঁর গোলাপ কেউ
গুঁজে রেখেছে মাথায়, কেউ বা কানে গুঁজে। প্রিয়তার এসবে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করল না। খাওয়া দাওয়া শেষে প্রান্তিক শুয়ে আছে প্রিয়তার ঘরে। দখিনা দিকের ঘরটায় পর্দা ভেদ করে বাতাস আসছিল। প্রান্তিকের চোখে তন্দ্রা লেগে আসছিলো।

কিন্তু হলো না। প্রিয়তা ভাবল তিনি বুঝি ঘুমাচ্ছেন। তাই নিরবে চায়ের কাপ রেখে দিল। ফিরে তাকিয়ে দেখল তার বর বিছানার উপর বসে আছে। ইশারায় তাকে কাছে ডাকছে। প্রিয়তা চায়ের কাপ নিয়ে ওদিকে গেল!

কাছে এসে বসতেই প্রিয়তার হাতদুটো আঁকড়ে ধরল সে। দুহাতে গোলাপের মালা পরিয়ে দিল। প্রিয়তা হতবাক। তিনি এসব কখন আনলেন। প্রান্তিক তার থিতুনিতে হাত রেখে বলল, – তুমি কি ভাবলে, আমি আমার বউয়ের কথা ভুলে যাবো। এটা হয় আদৌও!

প্রেম কতো শান্তির, কতো ভালোবাসার টের পেলো সে। তার মনের দখিনা দুয়ারে যেন ভালোবাসার বাতাস বয়ে যাচ্ছে। মনে মনে এতো প্রশান্তি, সারাদিনের মন খারাপের কথা ভুলেই গেলো সে। তাকে আদরে রাখার জন্য এতোটুকু ভালোবাসাই যেন সব!

প্রান্তিক চৌধুরী এবার উঠে দাঁড়াল। মনে হচ্ছে কোথায় যাচ্ছেন।
– কোথাও যাচ্ছেন?
– হ্যাঁ, চলে যাচ্ছি। বিকেল থাকতে থাকতে বেরিয়ে পড়ি। শোনো বউ, আমায় ফোন করবে বুঝলে, আমি এসে তোমায় নিয়ে যাবো!

বলতে বলতে গায়ের শার্ট ঠিক করল সে। এক ফাঁকে চায়ের কাপে চুমুক ও দিল। চা তাঁর বিশেষ পছন্দ না। বউ এনেছে বিধায় না করতে পারল না। প্রিয়তা আচমকা তাঁর শার্ট খামচে ধরল। অপরাধীর মতো বলে উঠলো,
– থেকে যান না!

এটা শোনার জন্যই যেন হাই হুতাশ করে মরে‘ছিলো প্রান্তিক। কাঙ্ক্ষিত কথাটুকু শুনে হেসে উঠলো সে। ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো, ভেবে বলছো তো! তাহলে কিন্তু একঘরে থাকতে হবে। আমায় আটকাতে পারব না তবে! বাসর কিন্তু আমি শ্বশুর বাড়িতেই সারব!

লজ্জায় লাল নীল হয়ে গেল প্রিয়তা। অষ্টাদশী মেয়ের মতো ছুটে বেরিয়ে গেল সে। পুরো কাজটাই তাঁর স্বভাব বিরোধী। প্রান্তিক তাকে ডাকতে গিয়েও পারল না। এখন শালিকা তিনজনের অধীনে হয়ে পড়ল ঘরটা। আমরিশা দুই হাত কোমরে গুজে বলল,
– ভাইয়া! এ কাজ কিন্তু একদম ঠিক না। আপনি কিছু আনলেন না আমাদের জন্য!

– কেন? দই মিষ্টি কাদের জন্য?

পূরবী বলে উঠলো, – না ভাইয়া। এতে চিড়ে ভিজবে না। আমরা আপনার একমাত্র শালী। একেই তো পাওনা ছিলাম। এতোদিনে সুদে তা বেড়ে গেছে।

প্রান্তিক তাঁর গাল টেনে বললো, – বাহ! দারুণ অঙ্ক কসতে পারো তো। প্রিয় সাবজেক্ট কি?
– অঙ্ক!
– ভেরি গুড। চলো কাল তোমাদের নিয়ে বেরুবো। যা পছন্দ নিয়ে নিও!
আফরিন বলে উঠলো – ফাঁকি দিবেন না তো আবার!
– একদম না। তোমাদের ভাইয়া কথার খেলাপ করে না। কিন্তু তার আগে আমার একটা কাজ করে দাও তো!
সকলে একসাথে বলল, কি কাজ?
প্রান্তিক মুচকি হেসে উঠলো!

——–

বসার ঘরে প্রিয়তা সেই কখন থেকে দেখছে, তার বর আর বাবা বসে ভালোই গল্প জুড়েছে। প্রায় ঘন্টা দুয়েক হলো তারা কথা বলছে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের আলাপ। প্রিয়তা খেয়াল করল, তার বরের মাঝে অহংকার নেই। এই যে তাঁরা এতো বড়লোক, হিসেব করলে দেখা যায় প্রিয়তা তাদের চেয়েও গরীব। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষজন। তার বাবা কোনো এককালে তাদের অফিসেই চাকরি করতো। কিন্তু সেসব নিয়ে প্রান্তিকের কোনো মাথাব্যথা নেই। সে অকপটে তার বাবা কে বাবা আর মা কে মা বলছে। এমনকি মা কে এটাও বলেছে, কোনো ধরনের সমস্যা হলে তাকেই যেন জানায়। তিনিও তাদের বড় ছেলে। এতেই মা খুশিতে ফুলে গেছেন। ভাবছেন এই ছেলেটা কতোই আদরে না রেখেছে তার মেয়েকে। প্রিয়তা তো সুখেই আছে। কিন্তু অজানা ভয় যে তাঁর পিছু ছাড়ছে না!

বোন তিনটে কে দেখছে না অনেকক্ষন। দুলাভাই আর শালিকারা কিসব গুজুর গুজুর করছিলো। এরপর গেলো কোথায়?

——-

প্রিয়তার চোখের আড়ালে এতো বড় কান্ড ঘটে। সে টের পেলো না। তার পুরো ঘরে ফুলে ফুলে সাজানো। ফুলের গন্ধে সারা ঘর মো মো করছে। বিছানার উপর ফুলের পাপড়ি ছিটানো। বোনেরা তিনজন দরজার আড়াল থেকে হাসছে। প্রিয়তা বুঝতে শালিকারা আর দুলাভাই মিলে কি ফন্দি আঁটছিলো এতোক্ষণ। আমরিশা ঘরে ঢুকল মোমবাতি। ভীষণ সুন্দর দেখতে সেই মোমবাতি। প্রিয়তার হাতে দিয়ে তিনজন হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল।

তাঁদের পুরো বাসায় কেবল তার ঘরেই বেলকনি আছে। এই ঘরটাও একটু বড়। আগে সে আর আমরিশা ঘুমাতো এখানে। কতো জলদিই এসব ছেড়ে চলে গেছে সে। এখন এসব কিছুই তাঁর আপন নয়।

প্রিয়তা মোমবাতি টেবিলের উপর রেখে দরজা বন্ধ করে দিল। বেলকনি থেকে তার বরের উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে। উত্তেজনায় তাঁর বুকের মধ্যে উথাল‘পাথাল শুরু হয়ে গেছে।বিয়ের এতোদিন বাদে সে আর তিনি আজ একসাথে। বেলকনি ছেড়ে প্রান্তিক চৌধুরী বেরিয়ে এসে দরজার সাথে ঠেসে দাঁড়াল। তাকে দেখতেই প্রিয়তা দিন দুনিয়া সব ভুলে গেল। অস্বস্তি, অস্থিরতা সব কাটিয়ে বরকে দেখার নে‘শায় মগ্ন হয়ে উঠল।

বাতাস বইছে জোরে জোরে। প্রান্তিকের দুই হাত প্যান্টের পকেটে। শার্ট টা এখন আর ইন করা নেই। পাতলা শার্ট ও এখন বাতাসে উড়ছে। শার্টের উপরের বোতাম দুটো খোলা। উড়ছে তার পাতলা চুলগুলো। চোখে মুখে দুষ্টু হাসি। সে এক পা আগাতেই সব অন্ধকার হয়ে গেল। প্রিয়তা হম্বিতম্বি করে মোমবাতি হাতে নিল। সামনে তাকিয়ে দেখল প্রান্তিক তার সামনে দাঁড়িয়ে। নরম গলায় শুধায়,

– কি হলো, বউ?
আমতা আমতা করে জবাব দিল,
– কা…ক.. কারেন্ট চলে গেছে।
প্রান্তিক ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। তাঁর উম্মুক্ত কোমর চেপে কাছে টানল তাকে। প্রিয়তার শরীর বেয়ে তরঙ্গ ছুটে গেল। শিরশির করে উঠলো পুরো দেহ। প্রান্তিক বলে উঠলো,
– ভালোই হলো!

ফু্ঁ দিয়ে আ‘গুন নিভিয়ে দিল। এরপর! এরপর উন্মাদ প্রান্তিক আরো উম্মাদ হয়ে গেল। তাঁর বউ নামের মিষ্টি ফুলের সুবাস নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল সে। নীল রঙের পাতলা শাড়িটা মেঝেতে পড়ে হামাগুড়ি খাচ্ছে। প্রমাণ দিচ্ছে তাদের ভালোবাসার।

কারেন্ট এসেছে কিছুক্ষণ আগে। প্রিয়তা উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। মাথার উপর চলন্ত ফ্যানের শো শো শব্দ। পুরো ঘর আলোকিত তাদের। অথচ চোখ মেলে তাকাতেও তার লজ্জা লাগছে। একবার আড়চোখে ফিরে তাকাল এদিকে। প্রান্তিকের ফর্সা উদাম বুক দেখেই তার বুকের ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেল। মনে হচ্ছে তিনিও এসব শুনতে পারছে। মুখ লুকিয়ে নিল। মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে কেউ। সে এবার চোখ মেলে তাকাল।

প্রান্তিকের মুখটা দেখেই লজ্জায় পুরো শরীরে শি‘হরণ বয়ে গেল। চাদরে নিজের মুখটা ঢেকে দূরত্ব বাড়িয়ে নিল সে। কিন্তু প্রান্তিক মানল না। ধরে বেঁধে কাছে টেনে আনল। এমন উম্মু‘ক্ত শরীর নিয়ে তাঁর গায়ের কাছে ঘেসতেই লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে গেল সে। তার কান দুটো লাল হয়ে উঠেছে। মুখ হয়ে উঠেছে রক্তিম! প্রিয়তা উল্টো দিকে মুখ করে শুয়ে পড়ল।

তবুও শান্তি নেই। তার উম্মুক্ত পিঠে উষ্ণ অধরের ছোঁয়ায় তাকে পাগল করে তুলল প্রান্তিক। পিছনার চাদর খাম‘ছে ধরে অনুরোধের স্বরে বলল,

– আলোটা বন্ধ করুন প্লিজ!
প্রান্তিক তার গা ঘেসে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল,
– কেন?
প্রিয়তা মুখ ফিরিয়ে এদিক তাকাল। প্রিয় পুরুষের মুখখানি দেখেই বুকটা ধক করে উঠলো। বিয়ের বন্ধনের পরেই তো তার সাথে আত্নার সম্পর্ক হয়ে গেল। আজ হলো হৃদয়ের সম্পর্ক। অসহায় কন্ঠে বলল, – লজ্জা লাগছে খুব!

প্রান্তিক যেন ফের উন্মাদ হয়ে উঠেছে। তার উন্মাদ আচরণ প্রিয়তাকে লজ্জায় মিশিয়ে দিচ্ছে। অধর দুটো গাল বেয়ে এবার গলার কাছে ঠেকল। প্রিয়তা অনুভব করল। তার হাত যেন প্রিয়তার কোমরেই আছে। ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে সে। সেই নিঃশ্বাসের শব্দে পুরো ঘর মুখরিত। প্রান্তিক আবার ফিসফিস করছে।

– কিন্তু আলো বন্ধ করতেই তোমার বর আবার নির্ল‘জ্জ হয়ে পড়বে! সামলাতে পারবে তো তখন!

চোখ বন্ধ করে প্রিয়তা তার বুকে আশ্রয় নিলো। যেখানে লজ্জার শুরু সেখানেই যেন শেষ। প্রান্তিকের হাসির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। মুখের উপর থাকা চুলগুলো কানে গুঁজে দিয়ে গভীর স্বরে বলে উঠলো, – বউ! এই বউ! কি হলো? কথা কও! বউ দেখি আমার লজ্জায় কথা বলতেই ভুলে গেল।

কথা তো দূর প্রিয়তা চোখ তুলে তাকাচ্ছে পারছে না। তার বরের গা থেকে তীব্র পারফিউমের ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে। আশ্চর্যজনক ভাবে এই ঘ্রাণ তার শরীর থেকেও পাচ্ছে সে। কি অদ্ভুত ভাবে গায়ের গন্ধ মিশে একাকার হয়ে গেল। তাকে অবাক করে দিয়ে আবারো লোডশেডিং হলো। আজ রাতে বোধহয় এভাবেই জ্বালা‘বে তাদের!

#চলমান