প্রেমের সমর পর্ব-০২

0
1

#প্রেমের_সমর
#পর্ব_০২
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি

প্রতিশোধ বশত একটা মেয়েকে বিয়ে করে তারপর তাকে একা ফেলে চলে যাওয়াটা মেয়েটার জন্য কতোটা অপমানজনক তা স্বচ্ছ আজও বুঝেই উঠতে পারেনি।বরাবরই একটা বাউন্ডুলে ছেলে স্বচ্ছ! নিজের মর্জিমতো চলে এসেছে সবসময়। সে বাউন্ডুলে স্বচ্ছ নিজের বিয়ে করা বউকে যেখানে কোনদিন দেখেইনি সেখানে না দেখে না চিনে সে না দেখা বউকে খুঁজে বের করতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে এই প্রত্যাশা করাটাই বোধহয় ভুল। স্বচ্ছ নিজের অদেখা বউয়ের উপর একটা চাপা রাগ দমিয়ে রেখেই ছাদে গিয়ে দাঁড়াল। সাথে সাথে আসল নিধি, সাদাফ আর আবিরও।বসার মতো তেমন কিছু না পেয়ে ছাদের দড়িতে শুকোতে দেওয়া একটা বিছানা ছাদর টেনে নিল। অথচ বিছানা ছাদরের মালিক কে তা তাদের কেউই জানে না। অজানা মালিকের সে বিছানা চাদর নিয়ে অনুমতি না নিয়েই ছাদের খসখসে ফ্লোরে বিছিয়ে নিল চারজনে। তারপর বসে পড়ে সেভাবেই বিশ্রাম করল অনেকটা ক্ষন। অবশেষে দুপুর হতেই ক্ষিধের জ্বালায় খাবার অর্ডার করল চারজনে মিলে। খাবার আধঘন্টার মধ্যে চলেও আসল। তারপর খাওয়া শেষে নিধি ছাদ দেখতে দেখতেই চুইংগাম চিবিয়ে বলল,,

“ বাহ বাহ!তোদের ছাদখানা দেখছি ফুলে ফুলে ঝকঝকা করছে দোস্ত। তোর বউয়ের বিয়ের ফুল বোধহয় এখান থেকেই কালেক্ট করা হয়ে যাবে বল? ”

বলতে বলতেই ছাদে লাগানো কালো গোলাপ গাছটা থেকে তিনটা ফুল ছিড়ল নিধি। ফুলগুলোও দেখতে দারুণ লাগছিল। পরপর সেগুলোকে কানে গুঁজে নিল নিধি। স্বচ্ছর ইচ্ছে হলো নিধির মুখটা এক চড়ে ভোতা বানিয়ে দিতে।খাবারের শেষ গ্রাসটা চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,

“ ভাবছি তোর আর সাদাফের বাসরের ফুলগুলোও এখান থেকেই কালেক্ট করব। সুন্দর হবে না বল? ”

নিধি মুখ ভেঙ্গিয়ে বলল,

“ কি আশ্চর্য! এমন ভাবে রেগে যাচ্ছিস কেন? খারাপ কিছু তো বলিনি বল। ”

স্বচ্ছ তখন খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়িয়েছে। ছাদে মেলে দেওয়া কাপড়গুলো থেকে সাদা রংয়ের একটা ওড়না টেনে নিয়ে নিজের হাতটা মুঁছল আয়েশ করে। আর ঠিক তার পরমুহুর্তেই কেউ এসে ওড়নাটা ছোঁ মেরে টেনে নিল। তেজ নিয়ে তার সামনেই বলে উঠল,

“ কি আশ্চর্য! বাসার মালিক বলে কি যার তার কাপড়চোপড়কে নিজের হাত মোঁছার সামগ্রী বানাবেন ভাই? কি করলেন দেখেন তো! সাদা ওড়নাটা আমার! ”

স্বচ্ছ প্রথম দফায় চুপ থাকল। নিজের অজান্তেই ভুলটা করে বসেছে সে৷ ওড়নাটা কার ছিল সেটাও তো সে জানত না। তবে এই মুহুর্তে এই বেয়াদব মেয়ের ওড়নায় হাতের হলুদ হলুদ ছাপ দেখতে খারাপ লাগছে না তার। বরং আনন্দ হচ্ছে। ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,

“ আপনি যে তখন বেয়াদবি করলেন এর জন্য এটাই প্রাপ্য। কাজটা আমি অজান্তে করলেও এটা আপনার ওড়না শুনে এখন খুশি লাগছে। ”

সুহা এই পর্যায়ে ক্ষেপা বাঘিনীর মতো তাকাল যেন একটু হলেই গিলে ফেলবে স্বচ্ছকে। রাগে নাক ফুলে উঠছে মেয়েটার। রাগে কাঁপতে কাঁপতেই বলে উঠল,

“ ওটা আমার পছন্দের ওড়না ছিল! আপনাকে আমার ইচ্ছে করছে ছাদ থেকে ফেলে দিতে এখন! ”

স্বচ্ছ ঠিক সুহার মতো করে রাগ দেখাল না। তবে হেসে হেসেই বলল,

” আমার ও ইচ্ছে হচ্ছে। এদিকে আসুন। কোলে তুলে ছাদ থেকে ফেলে দিই আপনাকে।”

সুহা দ্বিগুণ তেতে গেল। হাত দিয়ে ঘুষি দেখিয়ে বলে উঠল,

“ এতই সহজ? মে’রে মুখ ভেঙ্গে দিব । ”

স্বচ্ছ এবারেও হাসে। দেখতে পাতলা- চিকন এইটুকু মেয়ে কিনা তার মুখ ভেঙ্গে দিবে? হেসেই শুধাল,

“ তাই নাকি?শক্তিতে পারবেন আমার সাথে?”

“ অতোটাও দুর্বল ভাবার কারণ নেই। ক্যারাটে পারি ক্যারাটে! ”

কথাটা বলেই স্বচ্ছর মুখের দিকে ধারালো দৃষ্টিতে তাকিয়েই সজোরে ঘুষি বসাল স্বচ্ছর পেটে। ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠল,

”এবার বলুন? ঘুষিটা কেমন ছিল? ”

স্বচ্ছ না তো ব্যাথায় নাক মুখ কুঁচকাল না তো ব্যাথায় পেট চেপে ধরল। উল্টো সুহার কথা শুনে পেট ফাটা হাসিতে ফেটে পড়ল। সুহা তাকিয়ে দেখে। একটা ছেলে এতোটা সুন্দর হাসে কেন? নাকি তার কাছেই এতোটা সুন্দর বোধ হচ্ছে? সুহার বুক চিনচিন করে। বুকের ভেতর হৃদস্পন্দন আন্দোলিত হয়ে শুধায়, ছেলেটা মারাত্মক হাসে৷ সাথে দৃশ্যমান ছেলেটার ট্যারাবাঁকা ঝকঝকে সাদা দাঁত গুলোও। সুহার বুকে হৃদস্পন্দন বাড়ছে। সামান্য একটা ছেলে তাকে তার সৌন্দর্য দিয়ে কাবু করে ফেলছে, নিজের এহেন অবনতি আর দুর্বলতা দেখে নিজেরই ঘৃণা হলো। পরমুহুর্তেই দাঁত মুখ শক্ত করে নজর সরাতেই কানে এল স্বচ্ছর হাস্যোজ্জল স্বর,

“এই পাটকাঠি ঘুষিতে আমি ভয় পেয়ে যাব মিস? যায় হোক, আপনার ক্যারাটে দেখে আমি বিস্মিত মিস ক্যারাটে পারা ম্যাম!”

সুহা আবারও রাগী চাহনিতে চাইল। হাত চালিয়ে স্বচ্ছর মুখ বরাবর একটা ঘুষি দিতে চাইতেই স্বচ্ছ সরে গেল। চাপা হেসে বলে উঠল,

“ থাক থাক, নিজের এনার্জি খরচ করবেন না ফোঁসফোস করে!আপনি মেয়ে। আমি তো আর মা’রামা’রিতে আপনার সাথে লাগতে যাব না বলুন?তার চেয়ে মনে মনে নিজেকে বিজয়ী ধরে সুখী হন। ”

সুহা ফোঁসফোঁস করছে তখনও ।রাগে নাক ফুলিয়ে নিয়ে স্বচ্ছর দিক থেকে নজর সরাতেই চোখে পড়ল নিধির কানে গোঁজা তিন তিনটে কালো গোলাপ। সুহার চোখ মুহুর্তেই গেল কালো গোলাপ গাছটায়। তার নিজের গাছ! অনুমতি না নিয়ে ফুল ছেড়াতে মেজাজ আরেক দফা খারাপ হলো। নিধির দিকে তেজ নিয়ে চেয়ে থেকে একদম নিধির সামনে গিয়েই দাঁড়াল। কানে গুঁজে থাকা তিন তিনটা গোলাপই এক টানে নিজের হাতে নিয়ে বলে উঠল,

“ এই যে হাসতে হাসতে ফেটে পড়া পাগলের প্রেমিকা, আমার গাছের ফুল ছিড়েছেন কেন? কয়টা ছিড়েছেন? ছেড়ার আগে অনুমতি নিয়েছেন হুহ?”

আচমকা নিধি এই মেয়ের কান্ড দেখে ভড়কে গেল। মনে মনে সুহাকে ভয়ও পেল সে। না জানি তাকেও স্বচ্ছর মতো করে ঘুষি বসিয়ে দেয় যদি? নিধি শুকনো ঢোক গিলল। অনুমতি যে নেয়নি তা না বলে উল্টো বলে বসল,

“ আমি? আমি ছিড়ি নি তো। স্বচ্ছ ছিড়ে দিয়েছে আমায়৷ এটা ওর নিজের বাসা না? তাই ও নিজেই ছিড়ে কানের গুঁজে দিয়েছে আমায়।”

সুহার মেজাজ চরম লেভেলে পৌঁছানোর জন্য বোধহয় এই কয়েকটা কথাই যথেষ্ট। স্বচ্ছর দিকে ক্ষেপা বাঘিনীর মতো এক নজর তাকিয়ে পরবর্তীতে আবার তাকাল নিধির দিকে।টানটান স্বরে বলে উঠল,

“ বাসা উনার হলেও ফুল তো উনার না। ফুল যেহেতু ছিড়েছেন ফুলের দাম দিন আপু। নাহলে ফুল আবার গাছে জোড়া লাগিয়ে দিন। ”

নিধি এবারে অসহায় স্বরেই বলল,

” কি করে লাগাব? ছিড়ে ফেললে লাগানো যায় নাকি?”

“ তাহলে টাকা পরিশোধ করুন। পার পিস পঞ্চাশ টাকা। ”

স্বচ্ছ এগিয়ে এল। কচকচে একটা নোট সুহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে উঠল,

“ তিনটা ফুল ছেড়া হয়েছে। হাজার টাকা দিলাম। আশা করি স্যাটিসফাইড আপনি? ”

স্বচ্ছ ভাবল এই মেয়ে টাকা পেয়ে খুশি হয়ে ভৌ দৌড় দিবে। অথচ হলো না। উল্টো টাকা না নিয়েই বলল,

“ না, খুচরোই একশো পঞ্চাশ টাকা দিবেন। এখানে আপনার বড়লোকি পনা দেখতে দাঁড়িয়ে নেই ভাই। ”

সাদাফের এবারে হাসি আসল বন্ধুর এহেন অপমান আর সুহার হাবভাব দেখে। স্বচ্ছর কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,

“ কি বেয়াদব মেয়ে দোস্ত! তোর একটুও সম্মান দিচ্ছে না দেখ! ”

সাদাফ কথাটা কানে কানে বললেও ঠিক কানে কানেই কথাটা আবদ্ধ থাকল না৷ এসে গেল সুহার কানেও। সুহা কটমট করে সাদাফের দিকে তাকাতেই সাদাফ ভয়ে আমতা আমতা করে বলে উঠল,

“ শুনুন,আমার কাছে খুচরো আছে। দিচ্ছি দাঁড়ান। ”

কথাটুকু বলেই মুহুর্তেই একশো পঞ্চাশ টাকা এগিয়ে দিয়ে বলল,

“ নিন একশত পঞ্চাশ টাকাই আছে।”

সাদাফ এগিয়ে দিল টাকাটা। সুহা নিল। হুশিয়ারি দিয়ে বলে গেল,

“ গুড! নেক্সটবার আমার গাছে হাত দিলেও হাত কেঁটে ফেলব। মাইন্ড ইট! ”

কথাটুকু বলেই বলেই চলে যেতে যাচ্ছিল সুহা। নিধি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বলল,

“ দোস্ত? টাকা নিল। ফুল গুলো দিল না তো!”

স্বচ্ছ গুরুত্ব না দিয়ে বলল,

“ ঐ ফুল এতোটা প্রয়োজনীয় ও না। বাদ দে। ”

সুহা শুনল। পা ঘুরিয়ে এসে স্বচ্ছদের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ওড়নার সাথে সাথে মেঝে থেকে বিছানা চাদরটাও আকড়ে নিল৷ অপর হাতে ফুল গুলো এগিয়ে সাদাফকে, নিধিকে আর আবিরকে একটা করে গোলাপ দিয়ে বলল,

“ আপনাদের ফুল। নিন! টাকা গুলো ফুলের বিনিময়ে নিই নি, ফুল ছেড়ার বিনিময়ে জরিমানা নিয়েছি আপু। আর ফুলগুলো ফ্রি তেই দিলাম। আর হ্যাঁ, ওড়না বিছানা চাদর ময়লা করার শোধা তুলে রাখলাম। সুযোগ বুঝে নিয়ে নিব! ”

কথাগুলে টানটান স্বরে বলেই সুহা চলে গেল। আবির কালো গোলাপটার দিকে চেয়ে থেকেই মিনমিন স্বরে বলল,

“ দোস্ত? কি ডাকাত মেয়ে রে! এই মেয়ে কোন বাপের মেয়ে ? কোথায় থেকে উদয় হলো! বাপ্রে বাপ! ”

পরমুহুর্তেই আবার বলল,

“ তবে ভালো আছে! কি সুন্দর গোলাপ দিয়ে গেল আমাদের! শুধু স্বচ্ছকেই দিল না। একটু আগে অব্দি দেখলাম স্বচ্ছর বউই অবহেলা করছে স্বচ্ছকে, এখন দেখছি অন্য মেয়েরাও স্বচ্ছকে পাত্তা দিচ্ছে না। কাহিনী কি মামা? তোর সৌন্দর্য্য কমে যাচ্ছে নাকি বল তো?”

স্বচ্ছ আবিরের কথাটায় পাত্তা না দিয়েই বিড়বিড়িয়ে বলল,

“ পড়ে আছি এক ঝামেলায়, যোগ হয়েছে আরেক ঝামেলা। এই মেয়ের বিষয় পরে। আগে বাসার লোক আর আমার না দেখা বউ কবে আসবে তা ভাবি! ”

.

বিকাল অব্দি সময়টা স্বচ্ছদের ছাদেই কাঁটল। তারপর যখন শীতল হাওয়ায় চোখ বুঝে বুঝে আসবে ঠিক তখনই ছাদে এল পিনপিনে শরীরের অষ্টাদশী এক মেয়ে।সাদাফ সে মেয়েকে দেখেই স্বচ্ছকে ঠেলে দিল। ইশারায় বুঝাল এই মেয়ে কে?অথচ তার আগেই মেয়েটা তাদের দিকে ঝুঁকে স্বচ্ছকে বলে উঠল,

“ ভাইয়া? কতক্ষন হলো এসেছিস? ভাগ্যিস ভাবি বলল তুমি এসেছো নাহলে তো তোমায় আরো অপেক্ষা করতে হতো!”

স্বচ্ছ ভালো ভাবে তাকাল। মেয়েটা তার ছোটবোন সিয়া।এত বছরে দুইবার দেখেছে সে বোনকে। কাও বোনের জম্মদিনে লুকিয়ে উইশ করেছিল বলে! স্বচ্ছ ছোট বোনকে দেখে আনন্দে উচ্ছাসিত হবে নাকি দুঃখে কপাল চাপড়াবে বুঝে উঠল না।বলল,

“ তোর ভাবি বলেছে? বাহ বাহ! কবে থেকে এত ভালো হলো তোর ভাবি? ”

সিয়া ভাবির পক্ষ নিয়ে বলে উঠল,

“ ভাবি খারাপই বা কবে ছিল ভাইয়া? তুমিই তো রেখে চলে গেলে ভাবিকে! ”

স্বচ্ছ মানল না। অদৃশ্য রাগ নিয়ে বলল,

“ বিয়েতে প্রথম দফায় অপমান করেছিল তোর ভাবিই! একমুহুর্তেই বিয়েটা নাকোচ করে দিয়ে সবার সামনে আমার সম্মানের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিল ঐ মেয়ে! ”

“ সেই জন্য তুমিও তো ভাবির সম্মানের বারোটা বাঁজালে তাই না? শোধবোধ তো হয়েই গেল বলো? ”

“ হয়নি, ঐ মেয়ে এখনও ত্যাড়ামি করে। বেশি ভাব দেখায়!এত ভাব পছন্দ হচ্ছে না আমার। ”

সিয়া হতাশ হয়ে বলে,

“ তোমার পছন্দ হয়ে কি হবে? ভাবি তো অন্য কারোর বউ হয়ে যাবে তাই না? তুমি কেবল এখন ডিভোর্সটা দিবে। ”

স্বচ্ছ তিড়িং করে উঠে দাঁড়াল। বলল,

“ বললেই হলো?”

“ তাহলে কি করবে? ”

“ ঐ মেয়ে যাতে সব এটিটিউড ড্রেনে ফেলে আমার প্রেমে ডুবে মরে সেই ব্যবস্থা করব। কৌশলে! ”

সিয়া সরু শ্বাস টেনে বলে,

“ তারপর আবার ছেড়ে যাবে? ”

স্বচ্ছ রাগে না বোনের উপর। তবে ফোন বের করে কতগুলো হাত ধরাধরি, এই সেই ছবি দেখাল। যেগুলোতে হাতের মালিকদের না দেখা গেলেও বুঝা যাচ্ছে একটা মেয়ের হাত একটা ছেলের হাত। দেখিয়ে বলল,

“ দেখ! তোর অতি ভালো ভাবির কাজকারবার! গত দুই মাস যাবৎ কোন ছেলের হাত ধরে ধরে ছবি পাঠিয়েছে আমায়।কোন ছেলের থেকে ফুলও নিয়েছে। কোন ছেলের সাথে ডেইটে গিয়ে কফি খাচ্ছে সব ছবি পাঠিয়েছে।এসব করে জ্বালানোর মানে কি? বল! ”

“ নিশ্চয় ভাবি তোমাকে ভুলে অন্য কারোর প্রেমে পড়েছে এটা বুঝাচ্ছে! ”

স্বচ্ছ রাগ ফুঁসে বলল,

“ ডিভোর্স দিবে বলেছে ঐ মেয়ে আমাকে। সাহস কত!”

সিয়া বলে,

“ খারাপ কি? তুমি তো আর সংসার করার জন্য বিয়েটা করোনি তখন তাই না? ”

“ তাই বলে আমায় প্রত্যাখান করবে? এত সাহস? ”

সিয়া ভাইয়ের পক্ষ নিল না। বরং উত্তরে বলল,

“ অতোটাও সাহস দেখায়নি ভাইয়া। নেহাৎই তুমি মানতে পারছো না বিষয়টা তাই! এখন বাসায় চলো। এই বিষয়ে আমরা পরে কথা বলব। ”

স্বচ্ছ কৌতুহল নিয়ে বলল,

“ বাসায় কি ঐ মেয়েও আছে? থাকলে আমি এক্ষুনি গিয়ে ঐ মেয়ের গালে চড় বসাব আর ওর সাহসের তারিফ জানাব। ”

“ ভাবি তো আমাদের সাথে একসাথে থাকে না ভাইয়া। ”

“তাহলে কোথায় পাব ঐ মেয়েকে আমি? ”

সিয়া মনে মনে হাসল। আজ তার ভাই-ভাবির সম্পর্কটা অন্য রকম থাকলে সেই সবচাইতে বেশি খুশি হতো। বলল,

“ ভাবির যখন ইচ্ছে হবে নিজেই তোমার সামনে আসবে ভাইয়া। এখন বাসায় চলো। ”

কথাটুকু বলেই আবার স্বচ্ছর বন্ধুদের উদ্দেশ্যে শুধাল,

“আর এই যে ভাইয়ার অপদার্থ বন্ধুরা? আপনারাও চলুন! ”

কথাটুকু বলেই সিয়া পা বাড়াল। পিছু বাকি চারজনও পা বাড়াল। আবির ফিসফিস করে বলল,

“ তোর বোন আমাদের অপদার্থ বলল দোস্ত?এইটুকুন মেয়ে আমাদের অপদার্থ বলল? ”

সিয়া শুনল কথাটা। পিছু ফিরে আবিরের দিকে চেয়ে বলল,

“ আছেনই তো অপদার্থের মতো? কি বলব আর বলুন? পদার্থ হলে তো বন্ধুকে এতদিনে একটু হলেও বুঝাতেন তাই না? ”

বয়সে নিজেদের চাইতে এত ছোট মেয়ের থেকে এমন অপমান জনিত কথা শুনে মুখ চুপসে গেল আবিরের। স্বচ্ছকে বিড়বিড়িয়ে বলে,

“ তোর জন্য আমাদেরও অপদার্থ বলল শা’লা!”

.

রাত প্রায় দুটো! স্বচ্ছ ঘুমোয়নি তখনও। নিজের বাকি দুইজন বন্ধুকে বেঘোরে ঘুমোতে দেখে বেলকনিতে গেল সে। একটা সিগারেটে আগুন ধরিয়ে ঠোঁটে গুঁজতে নিতেই কানে এল মেয়েলি মিহি স্বরে গান! সাথে গিটারের সুর। স্বচ্ছর কেন জানি না সিগারেটের নেশার থেকেও মেয়েলি কন্ঠে সে গানটা শুনতেই ভাল্লাগল। চোখ বুঝে শুনল,

ফুল যে গাছে ধরে সেদিকে তাকিয়ে
বিশাল উচ্চতা ডিঙিয়ে লাফ দিয়ে বল ছিরে
আনো নাহলে যাব ছেড়ে
কোনো সারা ছাড়া দরজার হাতল চেপে
চট করে মুচড়ে দিয়ে আমাকে দেখে বল যাবে?
নাকি নিয়ে যাব “তাকে” সাথে?
খপ করে আমার ঘাড়টা ধরে
নিজের কাছে টেনে নিতে
কি বাধা হয়ে দাড়িয়েছে?
না দেখেশুনে কিছু জানিয়ে
নিজে আড়ালে লুকালে
আমাকে তুমি ডুবালে
আমি কার পিছে
নিজের জন্য যাব খেটে?
তোকে বলেছে যেতে কে?
অন্যের জন্য মোমবাতি পানিতে না দিয়ে শুকাতে….

#চলবে….

[ ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। ধন্যবাদ।]