প্রেমের সমর পর্ব-৮+৯

0
3

#প্রেমের_সমর
#পর্ব_০৮
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি

ল্যাপটপে পুরানো ফোল্ডারে সুহার কয়েকটা রেকর্ড করা গান আছে। বিয়ের আগে সুহাই পাঠিয়েছিল এগুলো। স্বচ্ছ প্রথম দুয়েকবছর মাঝেমাঝেই শুনত সে গান গুলো। কোন এক অজানা কারণেই মেয়েটার গানের গলা স্বচ্ছর ভালো লাগত। আর এখন সে ভালো লাগাটাই বোধহয় দ্বিগুণ হলো। তাই তো স্বচ্ছ সেই গানের রেকর্ড গুলো খুঁজে বের করে শুনতে লাগল সাত সকালে। কানে ইয়ারফোন গুঁজে রাখা। সাদাফ তা দেখে বিরক্ত হয়ে বলল,

“ দেশে আসলাম! এতগুলা দিন গেল, নিজের বাড়ি অব্দি গেলাম না শুধু তোর বউ দেখব বলে। আর এদিকে দেখা তো দূর এখনও খুঁজেই পেলাম না তোর বউকে। আমার কিন্তু এবার ধৈর্য্য শেষ হয়ে যাচ্ছে দোস্ত। ”

স্বচ্ছ এক কানে ইয়ারফোন খুলে। মুখ কুঁচকে বলে উঠল,

” বউ আমার। ধৈর্য্য তোর কেন শেষ হয়ে যাচ্ছে? আশ্চর্য!”

সাদাফ হতাশ স্বরে বলে,

” শেষ হবে না?বন্ধুর বউ দেখাতে ও তো একটা ইন্টারেস্ট থাকে নাকি? তোর বউ সে ইন্টারেস্ট দিনে দিনে আরো বাড়াচ্ছে। ”

স্বচ্ছ ভাব নিয়ে বলল,

“ স্পেশাল বউ কিনা আমার তাই। ”

সাদাফ মুখ বাঁকায়। আবিরের দিকে তাকিয়ে ঠেস মেরে বলে,

“ এই আবির হচ্ছে আরেক গর্দভ। ওর জায়গায় আমি হলে এতক্ষনে ছুটি মেয়েটার সাথে প্রেম জুড়ে দিয়ে ঠিকই পেটের কথা সব বের করে আনতাম। ”

আবির তখনো ঘুমাচ্ছো। ঘুমো ঘুমো চোখে তাকিয়ে বিরক্ত স্বরে বলল,

“তুই কি? পারলে পাঁচজনের মধ্যে থেকে তুই নিজেই তো একটারে পটিয়ে পেটের কথা বের করে আনতে পারিস। ”

সাদাফ সে প্রসঙ্গ বাদে বলল,

“ তোরে কিছুই করতে হবে না, খালি তোর মোবাইলটা দে আমারে । আর ঐ ছুটি মাইয়াটার নাম্বারটা দে। তারপর দেখ স্বচ্ছর বউ এক মিনিটে বের হয়ে আসে নাকি। ”

সাদাফ ততক্ষনে আবিরের পাশ থেকে মোবাইল টেনে নিয়েছে নিজের হাতে। আবির চোখ খুলে উঠে বসে বলল,

“ কি করবি?”

সাদাফ ছুটি মেয়েটার নাম্বার খুঁজতে খুঁজতে বলল,

“ কিছুই না। শুধু জিজ্ঞেস করব। ”

আবিরও বিশ্বাস করল বন্ধুকে। ভাবল কেবলই জিজ্ঞেস করবে। তাই তো বলল,

“ ফোন নাম্বার নেই, ওর আইডি আছে।ম্যাসেঞ্জারে প্রায়সই ম্যাসেজ দিত তাই ”

” যেটাই থাকুক, দে রে বাবাহ!”

আবির ফোন হাতে নিয়ে ছুটির আইডিতে গেল। এখনও ঝুলিয়ে রেখেছে মেয়েটাকে। সে কত কাল আগে ছুটি রিকুয়েস্ট দিয়েছিল। কতগুলো ম্যাসেজও দিয়ছিল। এমনকি প্রায়সই ম্যাসেজ পাঠাত ছুটি। অথচ আবির মেয়েটার থেকে ইচ্ছে করেই এভাবে দূরে দূরে ছিল। একটা ম্যাসেজ রিকুয়েস্টেরও রিপ্লাই দেয় নি সে৷ পাছে যদি নিজের দুর্বলতাটা এই পিচ্চি মেয়ে জেনে যায়? তবে ছুটির আইডিটা পাব্লিকলি থাকাতে সে রোজই স্টক করত। রোজ মেয়েটার সোশ্যাল মিডিয়ায় সব এক্টিভিটি ফলো করত অথচ রিকু এক্সেপ্ট করল না আজও। ম্যাসেজ রিকুয়েস্টে পাঠানো অসংখ্য ম্যাসেজ গুলোও রোজ রোজ পড়ত অথচ রিপ্লাই করত না।আবির মনে মনে হাসে। আইডিটা এনে সাদাফের হাতে দিতেই সাদাফ দ্রুত হাতে কিছু টাইপ টাইপ করতে করতে বলল,

“ হায় হায়! এই মেয়ে তো দেখি ম্যাসেজ রিকুয়েস্টে ঝুলে আছে। কতগুলা ম্যাসেজ দিল রে। কাহিনী কি মামা! ”

আবির একটু ভদ্র ছেলে। সরাসরি বন্ধুদের সামনে ভেতরের ভালোবাসার কথাটা বলতে পারল না। বরং চাপা গলায় বলল,

“ কাহিনী কিছুই না। ”

ততক্ষনে সাদাফ ম্যাসেজ সেন্ট করে দিয়েছে।আবির ঝুঁকে দেখল ম্যাসেজে লেখা আছে,

“ ছুটি? তোকে একটা কথা বলব বলব করে বলা হয়ে উঠেনিরে এতকাল। কিন্তু এতদিন পর তোকে দেখে মনে হচ্ছে বলে দেওয়া উচিত। তুই কি শুনবি কথাটা? ”

আবির চোখ গোলগোল করে তাকায়। দ্রুত বন্ধুর হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নেয়। ততক্ষনে ছুটি রিপ্লায় দিয়েছে,

“ এতদিন পর রিপ্লাই দিলেন আবির ভাই?কতগুলো দিন ঝুলে আছে আমার রিকুয়েস্ট। না পেরে ম্যাসেঞ্জারে এত এত ম্যাসেজ করলাম, আপনি একটারও রিপ্লাই দেন নি।আমি তো ভেবেছিলাম আপনি আমাকে চিনতেই পারেন নি। ”

আবির সঙ্গে সঙ্গেই ম্যাসেজের রিপ্লাই পেয়ে কপাল কুঁচকে তাকাল। লিখল,

“ ম্যাসেজ দেওয়ার সাথে সাথে রিপ্লাই আসল কেন? সারাদিন পড়ালেখা না করে অনলাইনেই পড়ে থাকিস?”

“ না না! পড়ছিলামই। আপনি বলুন, আপনার কথাটা কি? আমি শুনতে খুব আগ্রহী আবির ভাই। তাড়াতাড়ি বলুন! ”

আবির কথা এড়াতে লিখল,

“ কোন কথা না। যা পড়তে যা। ”

ছুটির বোধহয় মন খারাপ হলো। নিরাশ হয়ে ম্যাসেজ পাঠাল,

“ কোন কথাই নয়?”

সাদাফ এতক্ষন আবিরের কান্ড দেখছিল। এভাবে তার তৈরি করা পথ রোধ করে দিতে যাচ্ছে দেখে আবিরের মাথা চাটি মারল৷ মোবাইলটা কেড়ে নিয়ে লিখল,

“ আমি তোকে ভালোবাসি। অনেককাল যাবৎ। কিন্তু বলা হয়নি ছুটি। ”

ছুটি বোধহয় স্তব্ধ হয় চেয়ে থাকল। পরমহুর্তেই পাঠাল,

“ সত্যিই?আবির ভাই? সত্যি বলছেন আপনি? আপনি জানেন? আমি আপনাকে এখনও ভালবাসি আবির ভাই। এখনও আপনার অপেক্ষায় বসে আছি। ”

আবির ততক্ষনে ফোন কেড়ে নিয়েছে ফের। রিপ্লাইটা না দেখেই বন্ধুর নাক বরাবর ঘুষি বসাল এহেন অপকর্ম করার জন্য। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলল,

“ কি করলি এটা? ”

সাদাফ নাকে হাত রেখেই বলল,

“ কি করলাম? দেখলি তো?মেয়ে তুই বলতেই গলে জল? তোকে ভালোবাসে।তোর জন্য পাগল। তার মানে তুই জিজ্ঞেস করার সাথে সাথে সত্যিটা বলে দিত।”

আবির রেগে আছে।রাগে কপাল কুঁচকে বলল,

“ আমি আহাম্মক? ও যে আমায় ভালোবাসে তা আমি আগে থেকে জানি না? বাচ্চা একটা মেয়ে৷ ওর অনুভূতিকে ব্যবহার করব আমি? ”

সাদাফ মুখ কেমন করে বলল,

“ বিপদে পড়লে করতে হয়। পরে বুঝিয়ে বলব নাহয় মেয়েটাকে। ”

আবির বলল,

“ তাও করব না।আমি ওকে কষ্ট দেওয়াতে নেই এরপর থেকে ফোন ধরবি না আর আমার। ”

সাদাফ এবারে রাগ দেখাল। সামান্য একটা মেয়ের জন্য তার বন্ধু এমন আচরণ করবে? মানতে পারল না। রাগে দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলল,

“ হাজার বার ধরব শা’লা। তোর ঐ ছুটিকে তুই সেঁজে পটাব ও। এবং স্বচ্ছর বউকেও বের করব। দেখে নিস! ”

আবির রেগে ফোঁসফোঁস করে। ছুটির বাসা আর তার বাসা পাশাপাশি ছিল।যার দরুণ সবসময় দেখা হতো একটা সময়ে। বাচ্চা একটা মেয়ে। এক কালে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকত তার দিকে। তারপর যখন মেয়েটা কিশোরী কালের অনুভূতি বুঝে উঠল তারপর থেকেই শুরু হয় জ্বালাতন। আবিরকে কত ভাবে বুঝাত যে সে আবিরকে ভালোবাসে। অথচ আবির পাত্তা দিলে তো। এইটুকু মেয়ের অনুভূতিকে বিন্দু পরিমাণ পাত্তা ও না দিয়ে সে স্কলারশিপ নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিল দেশের বাইরে।তারপর মেয়েটার আপডেট পাওয়া যেত কাজিনদের মাধ্যমে। একটা সময় পর মেয়েটা বাসা ছেড়ে আসলে তাও আর হয়ে উঠে না। তখন কেবল সোশ্যাল মিডিয়াতেই মেয়েটাকে দেখত, কার্যকলাপ ফলো করত। এইটুকুই৷!কিন্তু তা বলে মেয়েটার দুর্বলতাকে সে কাজে লাগাবে এতোটাও অভদ্র সে হয়ে উঠে নি এখনো।

.

সুহা ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। সেদিনকার ছবি গুলোই যে গুলো স্বচ্ছ পাঠিয়েছে। নিধি আর স্বচ্ছর! কোনটায় নিধি স্বচ্ছর কাঁধে হাত দিয়ে ছবি তুলেছে, কোনটায় দুইজনে হাত ধরে হাঁটছে। কোনটায় একসাথে কফি খাচ্ছে৷ কোনটায় বরফে ডাকায় রাস্তায় দুইজন হাঁটছে। শেষ ছবিটায় এংগেইমেন্ট টাইপেরই। হাতে জ্বলজ্বল করছে দুটো রিং।সুহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কিছুক্ষন আগেই স্বচ্ছকে ব্যাগপত্র নিয়ে নিধিকে এগিয়ে দিতে দেখেছে বেলকনি দিয়ে৷ হয়তো বাসায় চলে যাচ্ছে নিধি৷ সুহা অনেকটা সময় ছবিগুলো দেখে নিয়ে উঠে দাঁড়াল। ছাদে গিয়ে একটা সাদা আর একটা কালো গোলাপ আনল। তারপর সেগুলো একটা গিফ্ট বক্সে ভালো করে লাগাল। এরপরই কল দিল স্বচ্ছকে। কল তুলতেই মুখে ওড়না গুঁজে বলল,

“ শুনছেন? আপনার গিফ্টটা পাঠিয়ে দিচ্ছি।”

স্বচ্ছ মাত্রই নিধিকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে বাসায় এসেছে৷ প্রথমেই “ শুনছেন” ডাকটা শুনে মুচকি হাসে৷ বলে,

“একদম বউ বউ মনে হচ্ছে! এতকাল পর মনে হচ্ছে আমি সত্যি সত্যিই বিয়ে করেছি সুহাসিনী। ”

স্বচ্ছর এই মিষ্টি কথায় হয়তো আগের সুহা গলে জল হয়ে যেত। প্রেমে হাবুডাবু খেত। কিন্তু এবারে মনে হলো এটা স্বচ্ছর ফ্লার্ট ছাড়া কিছুই নয়।তিক্ত স্বরে জানাল,

“ আপনি অভিনেতা হলেও খুব খারাপ হতো না স্বচ্ছ! ”

স্বচ্ছ সত্যিই মন থেকে বলেছিল কথাটা৷ সত্যিই তার সুহাসিনীর কল পেয়ে খুশি হয়েছিল সে। ডাক শুনে নিজে নিজেই মুখে হাসি ফুটেছিল। স্বচ্ছ নিজেও বুঝতে পারে বোধহয় মেয়েটা তাকে টানে। কোন এক অদৃশ্য আকর্ষণেই মেয়েটা তাকে কাবু করে ফেলছে ক্রমশ। স্বচ্ছ ভ্রু উঁচিয়ে বলে,

“ কেন? এই কথা বললে কেন? ”

সুহা হেসে বলে,

” এই যে মেয়েদের সাথে ফ্লাটিংটা খুব ভালো ভাবে করেন। মেয়েদের মনে জায়গা করে নিতে পারেন খুব সহজেই এমন মিষ্টি কথা বলে বলে। এসব তো অভিনয়ই তাই না? ”

“ আজকাল সত্যি বললেও দোষ আমার সুহাসিনী। ”

সুহা বিরক্ত গলায় বলল,

“ কারণ আপনার অভিনয়টা এখন বিরক্তিকর লাগে অস্বচ্ছ সাহেব। যায় হোক, শুনে রাখুন! অফিসিয়ালি ডিভোর্সের ব্যাপারের ভেবেছেন? ”

স্বচ্ছর রাগ হলো। কিসব বলে যাচ্ছে তার না দেখা বউ! কালও ছাড়াছাড়ির কথা বলল, আজও ডিভোর্সের কথা বলছে। স্বচ্ছর ইচ্ছে হলো মেয়েটাকে এক্ষুনি সামনে টেনে এনে ধমকে কয়েকটা কথা শুনাতে। কিন্তু তা তো সম্ভব নয়। তাই রাগ দমিয়ে চাপা স্বরে বলল,

” ওসব আমি কেন ভাবব? এখনো তো না দেখা বউটাই খুঁজে পেলাম না। ”

সুহা বলে,

“ ডিভোর্স না দিলে বিয়ে করবেন কি করে আপনার গার্লফ্রেন্ডকে? আমি তো বললাই এই খেলায় আপনিই বিজয়ী। তাহলে আর বাঁধা কিসে? ডিভোর্স টা দিয়ে বিয়েটা করে নিন। আপনিও খুশি আর আমিও খুশি।”

স্বচ্ছ ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে,

“ কাকে বিয়ে করব? ”

“ অবশ্যই আপনার গার্লফ্রেন্ডকে যার সাথে এইংগেইজমেন্ট হয়েছে আপনার?সোজা ভাষায় বললে যাকে আজ অতি যত্নে বাসে উঠিয়ে দিয়ে আসলেন?”

স্বচ্ছ বুঝে উঠে না এমন ভঙ্গিতে বলল,

” নিধি? ”

” নাম আমি কিভাবে জানব!আপনিই তো জানবেন ভালো।অথচ এমন ভাব করছেন যেন কিছুই জানেন না। ”

স্বচ্ছ হতাশ স্বরে জানায়,

“ সত্যিই কিছু জানি না সুহাসিনী।শুধু কয়েকটা ছবি পাঠিয়েছি তোমাকে আমার আর নিধির।তার মানে ও আমার গার্লফ্রেন্ড হয়ে গেল? শুধুই জ্বেলাস ফিল করানের জন্য। সত্যি! ”

সুহা তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসে। কি ভালো নাটক বাহ! নিজেই টেক্সট করে জানিয়েছে গার্লফ্রেন্ড হয় মেয়েটা, বিয়ে করবে এইসেই! অথচ না জানার ভান করছে।উপহাস স্বরে বলল,

“আপনিই বলেছিলেন সেদিন সে আপনার গার্লফ্রেন্ড, এইগেংজম্যান্ট এর ছবি দিয়েছিলেন স্বচ্ছ। বলেছিলেন আমার সাথে দেখা হওয়ার পর বিয়েটাও শীঘ্রই করবেন। ভুলে গেলেন নাকি?”

কথাটা বলেই সুহা রিং পরা সে ছবিটা পাঠাল সাথে সেদিনের স্বচ্ছর সাথে কথোপকোতনের স্ক্রিনশটও পাঠাল। স্বচ্ছ তা দেখে দাঁত কিড়মিড় করে। এসব করবে সাদাই বলেছিল। কিন্তু স্বচ্ছ না করেছিল। তাও সাদাফের কথা মতো বউকে জ্বালাতে নিধিসহ কয়েকটা ছবি পাঠিয়েছিল। ব্যস এইটুকুই জানা। কিন্তু সাদাফ যে তার অজান্তে এসবও করেছে তা জানত না৷ রেগে ফোন রাখল সে। রুমে এসেই সজোরে সাদাফের পিঠে ঘুষি বসিয়ে বলল,

“ তুই তো আসল হা’রামি! আমি অতি কষ্টে না দেখা বউটাকে কন্ট্রোলে আনার চেষ্টা করছি আর তুই কিনা উল্টো আমার বউকে রাগিয়ে দিলি! এইজন্যই তো বলি আমার বউ চারদিন হাওয়া হয়ে গেল কেন। ”

সাদাফ তখন নিধির সাথে কথা বলছিল। আচমকা এমন রাগ দেখে বলল,

“ কি করেছি আমি? ”

স্বচ্ছ ছবিটা দেখিয়ে বলে,

“ কি করিস নি?গার্লফ্রেন্ড তোর। অথচ কাহিনী সাঁজিয়েছিস আমায় নিয়ে। হা’রামি!”

সাদাফ হাসিতে ফেঁটে পড়ে এবারে। বলে,

” উফফ! এটা প্ল্যান বন্ধু, প্ল্যান। তোর বউ যাতে জ্বেলাস হয় তোর সামনে আসে তার জন্য। ”

স্বচ্ছ দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

“ আমার বউ জ্বেলাস হয়ে আমায় ডিভোর্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।খুব ভালো না? ”

কথাটা বলেই সাদাফের থেকে কোন উত্তর পাওয়ার আগেই রুমে এল সিয়া। একটা ছোটমতো বক্স এগিয়ে দিয়ে বলে,

“তোমার জন্য একটা বক্স এসেছে ভাইয়া৷ সাথে সাদা-কালো গোলাপ! সুন্দর না? ”

স্বচ্ছ এগিয়ে নিল৷ সত্যিই সুন্দর লাগছে বাঁধাইটা। দ্রুত বাঁধাইটা খুলে নিয়ে গোলাপ দুটো একপাশে রেখে বক্স খুলল। দৃশ্যমান হলো একটা ঘড়ি।সাথে ছোট্ট একটা চিরকুট৷ স্বচ্ছ ভ্রু কুঁচকায়৷ চিরকুটটা মেলে ধরতেই চোখে পড়ল,

“অস্বচ্ছ সাহেব,

আপনার ছন্নছাড়া জীবনে আপনি আমায় কখনো জড়াননি তা আমার জানা কথা। তাই ভেবেছি এই জড়াজড়ি টা ছাড়াছাড়িতে পরিণত করা উচিত আমাদের। আমি আবারও আপনার সেই খেলা খেলা ভালোবাসার খেলনা হতে চাই না স্বচ্ছ। আবারও নিজেকে অনুভূতিতে গুঁড়িয়ে ফেলতে চাই না৷ নিজেকে আর কষ্ট দিতে চাই না স্বচ্ছ। এই ঘড়িটা চার বছর আগের কেনা। আপনার ফ্যাশন সেন্সে হয়তো এটা এখন পুরোনো ঠেকবে। তবে ঘড়িটা আমি অতি যত্নে ভালোবেসে কিনেছিলাম। বিয়ের রাতে আপনাকে উপহার দিব বলে। মেহেরান শাহরিয়ার স্বচ্ছর বউ হবো বলে অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম তখন। এক সমুদ্র অনুভূতি নিয়ে কাঁপা কাঁপা স্বরে কবুল ও বলেছিলাম! ইশশ! কত ছোট্ট ছোট্ট সুখকর অনুভূতি জম্মেছিল আমার। কে জানত আপনি আমায় এভাবে ঠকাবেন? যায় হোক, এই ঘড়িটা দেওয়ার কোন উদ্দেশ্য নেই। শুধু আপনার উদ্দেশ্যেই কেনা হয়েছিল বলে আপনাকে পাঠিয়ে দিয়েছি। আর শুনুন? আপনি মানুষটা বরাবরই ছন্নছাড়া!আমায় নিয়ে কখনো সিরিয়াসলি ভাববেন এই বিষয়টা ভাবাটাই বোকামো আমার।সে কারণে ভাবলাম বিচ্ছেদ টানা উচিত আমাদের। এত এত খোঁজ করবেন না আমার আর। আশা করি বিচ্ছেদের সময় দেখাটা অবশ্যই হবে। ভালো থাকুন।

ইতি,
সুহাসিনী!”

স্বচ্ছ চিঠিটা পড়ল। বারবার একই কথা শুনে তিক্ত অনুভূতি হলো ওর। এতই সহজ বিচ্ছেদ? স্বচ্ছকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়ে, বুকের মধ্যে টলমলে একটা অনুভূতি তৈরি করে, চোখে দেখার এতোটা কৌতুহল তৈরি করে এখন বিচ্ছেদ টানবে? স্বচ্ছ তা হতে দিবে? স্বচ্ছ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। তারপর ঘড়িটা দেখল অনেকটা সময় নিয়ে। বাম হাতে ঘড়িটা পড়ে অনেকটা সময় তাকিয়ে থাকল এক দৃষ্টিতে। বিনা কারণেই তার কাছে ঘড়িটা বেশ সুন্দর মনে হচ্ছে। বিনা কারণেই ঘড়িটা তার হাতে বেশ মানানসইও মনে হলো। ঠোঁট ভিজিয়ে আবির আর সাদাফকে বলল,

” ঘড়িটা কেমন রে? কেমন মানাচ্ছে? ”

সাদাফ দেখল। এক ঝাপটায় ঘড়িটা খুলে নিজে নেওয়ার চেষ্টা করে বলল,

“ এ্যাঁ! কোন মেয়ে আবার খুশিতে তোরে ঘড়ি পাঠাল? এদিক দে, আমার হাতে পরে দেখি। ”

স্বচ্ছ হাত থেকে কেড়ে নিতে দিল না ঘড়িটা৷ বলল,

“ উহ! তোকে দেওয়া যাবে না। এটা খালি আমার। ”

সাদাফ বলল,

“ তোর মানেই তো আমার। ”

স্বচ্ছ সরিয়ে নেয় ঘড়িটা৷ অন্যপাশে হাত সরিয়ে বলে,

“না, আমার মানে এটা কেবল আমারই।বউও কেবল আমার, বউয়ের গিফ্টও কেবল আমার।”

সাদাফ বুঝল ঘড়িটা স্বচ্ছর বউ পাঠিয়েছে। অপমানে ঠোঁট উল্টে বলল,

“ আজ বিবাহিত নই বলে অপমান করলি! ”

#চলবে….

#প্রেমের_সমর
#পর্ব_০৯
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি

স্বচ্ছর পরণে শুভ্র রংয়ের টিশার্ট! চুলগুলো ভেজা এলোমেলো। মাত্রই গোসল সেরেছে সে। তারপর গোসল করে বের হওয়ার সাথে সাথেই আবার হাতে পরে নিল সুহার দেওয়া ঘড়িটা৷ কোন কারণ ছাড়াই তার আনন্দ আনন্দ লাগছে। কিশোর কালে প্রেমে পড়া সদ্য প্রেমিকটা যেমন বুকের ভেতর টিমটিম করা প্রেমানুভূতি টের পায়? স্বচ্ছরও মনে হচ্ছে তার বুকের ভেতর একটা অজানা অনুভূতি বইছে। যা তাকে আনন্দ দেয়, অস্থির করে তুলে, কখনো বা রাগিয়ে দেয়। স্বচ্ছ ঠোঁট গোল করে শ্বাস ছাড়ে।ফোন হাতে নিয়ে বেশ কয়েকবার কল করেও যখন সুহাকে কলে পায় না তখন রাগ জম্মায়। মেয়েটাকে কল দিলে কল ধরে না প্রায়সই। কতোটা অবাধ্য এই মেয়ে? স্বচ্ছর কল ইগ্নোর করে? স্বচ্ছ মনে মনে চাপা রাগ ফুসে। বিড়বিড় করে নিজের বিরক্ত প্রকাশ করে অনেকটাক্ষন। তারপর ম্যাসেজে টাইপ করে,

“ এই মেয়ে সমস্যা কি? তুমি কি ভেবেছো ইগ্নোর করলেই আমি তোমায় ছেড়ে দিব? বিচ্ছেদে রাজি হয়ে যাব? নো ওয়ে! আমাকে ইগ্নোর করার সব ফল তুমি পাবে। শুধু ওয়েট করো। ”

স্বচ্ছ এই ম্যাসেজটা দিয়েও অপেক্ষায় থাকল। তারপর ও যখন সুহা রিপ্লাই করল না তখন আবারও কল দিল। ওপাশ থেকে এবারে কল তোলা হলো। স্বচ্ছ তা দেখে রাগে চাপা স্বরে বলে,

“ এই মেয়ে!গিফ্ট বক্স পাওয়ার পর থেকে বহুবার কল দিয়েছি। কল তুলছো না কেন? সমস্যা কি হু?”

ওপাশ থেকে দ্বিগুণ রাগ নিয়ে সুহা বলল,

“ সমস্যা কিছু না। কল দিচ্ছেন কেন? ”

স্বচ্ছ এতোটা সময় চাপা রাগ নিয়ে বসে থাকলেও এবারে হাসে অল্প। পরপর নিজের হাতে পরে থাকা ঘড়িটা সমেত ছবি তুলল নিজের। তারপরই সুহাকে পাঠাল। বলল,

“ বেশ মানিয়েছে না আমায়? ইশশ!আমার হাতটা কত সুন্দর দেখো সুহাসিনী ! ”

সুহা দেখল। সত্যিই এই মানুষটা সুন্দর। সাদা টিশার্টে, ভেজা চুলে দারুণ লাগছে ছবিতে। ঘড়িটাও তার হাতে সুন্দর দেখাচ্ছে। সুহা কিয়ৎক্ষন তাকিয়েই থাকে। প্রিয় পুরুষের মুখচ্ছবি দেখে হৃদয়ে হিম অনুভূতি বয়ে গেলেও মুখে দাঁত চেপে বলল,

“ ইনডিরেক্টলি কি এটা বুঝালেন যে ঘড়িটা সুন্দর নয়? আপনার হাতের সাথে মানানসই না সেটা বুঝালেন অস্বচ্ছ সাহেব? ”

স্বচ্ছ যতোই নিজের মেজাজকে নিয়ন্ত্রন করে এই মেয়ের সামনে এই মেয়েটাই ঠিক ততোই মেজাজ খারাপ করে দেয়।এত কের বুঝে মেয়েটা? স্বচ্ছ টান টান স্বরে বলে,

“ এমন কেন মনে হলো? ভালো কথা কি আমার মুখ দ্বারা আসতে পারে না সুহাসিনী? নাকি আমার কোন কথাই আর সিরিয়াসলি নেওয়া যায় না?”

সুহা তাচ্ছিল্য টেনে বলে,

“ ঠিক ধরেছেন, আপনার কথা আর সিরিয়াসলি নেওয়া যায় না৷ ”

স্বচ্ছর রাগ হয়। সামনে চেয়ারটায় এক লাথি বসিয়ে আহত স্বরে বলে উঠে,

“ রাগ হয় সুহাসিনী, তোমার উপর আজকাল খুবই রাগ জম্মায়। তবুও রাগ হজম করি কারণ মানুষটা তুমি বলে। ”

সুহা বিস্ময় নিয়ে বলে,

“ রাগ? আমার উপরই?

“ ইয়েস! তোমার উপরই! ”

কথাটা বলেই স্বচ্ছ কল রাখে। মোবাইলটা এক পাশে ছুড়ে রেখে চোখ বুঝে। বার কয়েক শ্বাস ফেলে। মেয়েটা তাকে বিশ্বাস করে না, তার কথাগুলোকে সিরিয়াসলি নিচ্ছে না ভাবলেই তার রাগ হচ্ছে।গা জ্বলছে যেন। রাগে হাঁসফাঁস করে সে। একটা সময়ে বিড়বিড় করে বলে,

“ তুমি আমায় বিশ্বাস করতে পারছো না। ভালোবাসতে পারবে তো সুহাসিনী? আমার কেন জানি না ভয় হচ্ছে। মনে হচ্ছে এই লড়াইটা আমি এবার সত্যিই হারব। সাথে নিজের ভালো থাকাও হারাব। ”

.

রাত তখন প্রায় বারোটা।চারপাশে হালকা হিম অনুভূতি। যদিও এখন গরম পড়তে শুরু করেছে। স্বচ্ছ,সাদাফ, আবির তিনজনই বের হয়ছে রাস্তায় হাঁটার উদ্দেশ্যে। রাতের শহর! সুন্দর দেখতে। তারপর যখন রাত সাড়ে বারোটার দিকে রাস্তা ঘুরে নিজেদের বাসার সামনে এল ঠিক তখনই চোখে পড়ল এক যুবক ছেলেকে। হাতে একগুচ্ছ লাল টকটকে গোলাপ। দৃষ্টি বরাবরই সুহাদের বেলকনিটার দিকেই। স্বচ্ছ,সাদাফ আর আবির তিনজনই অনেকক্ষন যাবৎ এই ছেলের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষন করল। সত্যিই সুহাদের বেলকনির দিকেই তাকাচ্ছে বারবার। তার উপর গোলাপ? স্বচ্ছর ব্যাপার টা সুবিধার লাগল। তার উপর এই বেলকনিটাই তার বউই রাতের দিকে আসে। বসে থাকে, গান গায়। স্বচ্ছর ভ্রু উঁচু হলো। সামনে গিয়ে ছেলেটার কাঁধে হাত দিয়ে বলল,

“ কি ব্রাদার? ওদিকে তাকিয়ে কি দেখছো? বেলকনিতে কেউ আসবে তোমার জন্য? ”

ছেলেটা হেসে মাত্র বলতে লাগল,

“ হ্যাঁ ব্রাদার, আমার হানি এই বাসাতে….”

ব্যস! ছেলেটাকে বাকিটা বলতে না দিয়েই সাদাফ চেঁচিয়ে উঠল। ছেলেটার হাত পর্যবেক্ষন করতে করতেই বলে উঠল চেঁচিয়ে,

“ দোস্ত? এটা তো সেই হাত যেটা তোর বউয়ের হাত ধরে রাখত, চুড়ি পরিয়ে দিত। এটা তো সে ছেলেই! ”

স্বচ্ছর মস্তিষত আচমকা কথাটা নিতে পারল না। ছেলেটার মুখে শোনা “ আমার হানি” আর সাদাফের মুখে বলা কথাগুলো শুনে আচমকাই চড় বসাল ছেলেটার গালে। তারপর শুরু হলো তিনজন ছেলে মিলেই ঐ অপরিচিত ছেলেটিকে নাস্তানাবুদ করা। অথচ বোকা স্বচ্ছ নিজেই সেদিন আন্দাজ করেছিল যে ছবিতে পাঠানো হাতটি তার বউয়ের নয়। বেখেয়ালি স্বচ্ছ তা খেয়ালই করে উঠতে পারল না। মাঝখান দিয়ে সে অপরিচিত ছেলেটাকে মেরে অবস্থা খারাপ করল৷ মুখ চেপে বলল,

“ এরপর অন্যের বউয়ের দিকে যাতে না তাকাতে দেখি ঠিকাছেে।বিশেষ সুহাসিনীর দিকে। ও আমার বউ, ওর উপর অন্য কারোর এক বিন্দু অধিকার মানব না আমি।আর ওর সাথে প্রেম করা মেনে নিব? মে’রে হাড্ডব ভেঙ্গে দিব। ”

অপরিচিত যুবকটি এতক্ষনে বোধহয় কিছু বুঝে উঠল। উরাধুরা মার খেয়ে পকেট থেকে দ্রুত কাউকে কল করে বলল,

” সুহার বাচ্চা সুহা! তোর বর আমারে মেরে হালুয়া বানিয়ে দিয়ে়ছে।”

সুহা আতঙ্কিত হয়ে ছাদের কর্নারে এসে তাকাল। মূলত আজ সুহার বোন রাহার জম্মদিন। যে ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে সে সুহাদের বন্ধু সাদ। রাহাকে পছন্দ করে। বার্থডে উইশ করবে বলেই রাত বারোটার একটু আগে থেকেই এসে এখানে দাঁড়িয়ে আছে। অথচ কে জানত এমন মার খাবে সে? সুহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্বচ্ছকে কল করে। রাগে হাঁসফাঁস করতে করতে বলে,

“ আশ্চর্য! সাদকে মারলেন কেন স্বচ্ছ? তিনজন ছেলে মিলে একটা ছেলেকে নাস্তানাবুদ করাটা কি উচিত হয়েছে আপনার? ”

স্বচ্ছ তখন দ্বিগুণ রেগে গম্ভীর গলায় বলল,

“ হয়েছে! ”

সুহা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“ কোন যুক্তিতে মনে হচ্ছে উচিত হয়েছে?”

“ অন্যের বউয়ের জন্য এসে দাঁড়িয়ে থাকাটা আমার যুক্তিতে ভীষণ খারাপ কাজ৷ তার উপর আবার ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে দেখছিল কেবল বেলকনির দিকে।গোলাপ নিয়ে এসেছিল। আমি জানি, রাতে কেবল বেলকনিতে এসে গান তুমিই গাও সুহাসিনী।”

সুহা বিরক্ত গলায় বলে,

” আমি গাই মানেই বেলকনিতে আর কেউ আসতে পারে না এমন তো নয় তাই না অস্বচ্ছ সাহেব? হতে পারে ছেলেটা অন্য কারোর জন্য এসে দাঁড়িয়ে ছিল? ”

স্বচ্ছ মানল না। বরং বলল,

“ আমার বন্ধুরা বলেছে এটা সে ছেলেই যে ছেলেটার হাতের ছবি দিয়ে এতকাল তুমি আমায় জ্বালিয়েছো। ”

সুহা ছোটশ্বাস টেনে বলে,

“ আপনি নিজেই তো সেদিন আন্দাজ করলেন যে ছবিতে দেওয়া মেয়েলি হাতটা আমার নয়। তাই না? ”

স্বচ্ছর আচমকায় টনক নড়ল। কিছু একটা মনে পড়েছে এমন ভাব করে ছেলেটার দিকে তাকায়। আহারে। চড় ঘুষি খেয়ে মুখের কত জায়গায় লাল হয়ে গিয়েছে ছেলেটার। স্বচ্ছ বলে,

” তার মানে ঐ ছুটি মেয়েটার বয়ফ্রেন্ড? শিট! কি করে ফেললাম বেচারার সাথে। স্যরি, স্যরি সুহাসিনী! সত্যিই স্যরি। ”

কথাটুকু বলেই কল রাখে। সাদ নামের ছেলেটাকে তুলে সুন্দর ভাবে দাঁড় করায়। কলাটা ঠিক করে দিয়ে চুলগুলো ঠিক করে দিতে দিতে বলে,

“ ছোটভাই? ভুল হয়ে গেছে। তুমি আগে কেন বলো নি তোমার গার্লফ্রেন্ড সুহাসিনী নয়? বলো নি কেন বলো? আমরা যদি জানতাম তুমি আমার বউয়ের বয়ফ্রেন্ড না, বরং তার বান্ধবী ছুটির বয়ফ্রেন্ড তাহলে সত্যিই মারতাম না। স্যরি ছোটভাই। ”

ছেলেটা মিনমিন স্বরে বলল,

“ বলার সুযোগ দিলে নাকি ভাই?”

আবির দুইজনের কথোপকোতন শুনে গোলগোল চোখে তাকায়৷ দুইয়ে দুইয়ে চার মেলায়। ভাবে ছবিতে পাঠানো মেয়েলি হাতটা যদি ছুটির হয় আর ছেলের হাতটা যদি এই ছেলের হয়? ওরা দুইজন প্রেমিক প্রেমিকা? আবির বিশ্বাস করতে না পেরে সাদাফকে টেনে জিজ্ঞেস করে,

“ ছুটির বয়ফ্রেন্ড? ছুটির বয়ফ্রেন্ড ও দোস্ত? ”

সাদাফ বিরক্ত হয়ে বলে,

“ তো কি আমার বয়ফ্রেন্ড হবে? ”

আবির দাঁতে দাঁত চেপে বলে এবারে,

“ আর দুইটা মার প্লিজ এই ছেলেরে।”

কথাটা বলেই ছুটির আইডিতে গিয়ে ম্যাসেজ করল,

“ কোথায় তুই? ”

ছুটি ও তখন ছাদে। রাহার বার্থডে কেক কাঁটা হচ্ছিল। অথচ এত ব্যস্ততার মাঝেও আবির ভাইয়ের ম্যাসেজ পাওয়া মাত্রই সে গদগদ হয়ে রিপ্লাই দিল,

“ ছাদে। কেন আবির ভাই?”

আবির লিখল,

“ দরকার আছে। ওখানেই থাক। আমি আসছি৷ ”

এটুকু বলেই যখন পা চালাতে নিবে তখন সাদাফ এসে বলল,

“ ওরে আরো চারটা চড় মেরেছি দোস্ত। তুই কই যাস? ”

“ ছাদে যাচ্ছি। ”

স্বচ্ছ জিজ্ঞেস করল,

“কেন? ”

“ছুটির গালে দুটো চড় বসিয়ে দিয়ে আসতে!”

সাদাফ অবাক হয়ে বলে উঠল,

“ সে কি! মেয়েটা করল কি তোর? ”

“ অনেককিছুই! ”

স্বচ্ছ ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,

“ ভালো টালো বাসিস না তো আমার বউয়ের বান্ধবীকে?”

“ বাসলে বাসলাম। ”

সাদাফ যেন খুব উচ্ছাসিত এমন ভাবে লাফিয়ে উঠল। বলল,

“ তাহলে প্লিজ চল, প্রোপোজটা আজ করে ফেল। আমরা আছি তোর এই বিশেষ মুহুর্ত লাইভ টেলিকাস্ট করার জন্য। ”

আবির কপাল কুঁচকে বলে,

“ মার খাবি? এই দিকে আয়। ”

সাদাফ স্বচ্ছ আর আবিরের সাথে যেতে যেতেই বলল,

“ লাগবে না লাগবে না। তার চেয়ে প্লিজ তিনজনে গিয়ে ছুটি ভাবিকে গিয়ে বার্থডে উইশটা করে আসি। চল চল!”

.

তিন বন্ধু যখন সিঁড়ি বেয়ে ছাদ অব্দি পৌঁছাবে ঠিক তখনই সাদাফ কৌতুহল নিয়ে বলল,

“ দোস্ত? তোর ছুটি এত রাতে ছাদে কেন থাকবে? ”

ছাদ থেকে হালকা আওয়াজ আসছে। আবির বিরক্ত হয়ে বলে,

“ ছাদে কি কিছু চলছে নাকি? এত হৈ হুল্লোড় কেন? আশ্চর্য! ”

স্বচ্ছ বলে,

“ বুঝে উঠছি না তো। ভেতরে চল, দেখা যাক! ”

সিঁড়ির শেষ ধাপে এসেই কানে এল কারো গানের সুর। সাদাফ উচ্ছাস নিয়ে বলল,

“কে জানি গান করছে রে দোস্ত! কি সুন্দর গানের গলা। চল চল, ভেতরে গিয়ে একটু দেখি। ”

স্বচ্ছ চোখ বুঝে। গানের গলাটা তার পরিচিত! বুকের ভেতর অনুভূতি বয়ে যায়। খুব পরিচিত কন্ঠের মালিক যে খুব কাছেই আছে তা বুঝে উঠে অস্থির লাগে তার। বিড়বিড় স্বরে বলে,

“ আমি বোধহয় গলাটা চিনি! গলাটা আমি শুনেছি.. ”

এটুকু বলতেই সাদাফ ছাদের দরজা ঠেলে দাঁড়ায়। চোখ গোলগোল করে তাকিয়ে থাকে গিটার হাতে বসা মেয়েটার দিকে।খোলা চুল গুলো উড়ছে, হাতে গিটার, পরণে লাল রংয়ের কামিজ!দৃশ্যটা সুন্দর! সাদাফ খুশি খুশি গলায় বলে,

“ দোস্ত? এটা ঐদিনের মেয়েটা না? দারুণ লাগছে না মেয়েটাকে আজ? গিটার হাতে, খোলা চুলে ছাদের অল্প আলোয়! ইশশ কি মানিয়েছে! আমি ক্রাশড! ”

স্বচ্ছ মুহুর্তেই বন্ধুর চোখে হাত দেয়। পিঠ বরাবর ঘুষি বসিয়ে তাকায় মেয়েটাে দিকে। এটা সে বেয়াদব মেয়েটায়! অথচ গানের গলা তো সুহাসিনীর মতো। স্বচ্ছ স্থির দৃষ্টিকে তাকিয়ে থাকে। এতগুলো দিনে গিয়ে এই প্রথম সে মেয়েটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। লাল জামা পরিহিত, চুল ছেড়ে দেওয়া যা হালকা বাতাসে উড়ছে অল্প অল্প। আগের মতো রাগ রাগ নেই মুখচাহনি। শান্তশীতল মুখশ্রী! আর এই মুখশ্রীই তার সুহাসিনীর মুখশ্রী তা ভেবে স্বচ্ছর বুকের ভেতর হীম স্রোত বয়ে যায়। সেভাবেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে সাদাফকে দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলল,

“ চোখ বুঝ! ও কেবল আমার। ”

সাদাফ মুহুর্তেই বলল,

“ ও কেবল তোর? কবে থেকে? তোর না বউ আছে? ছিঃ! তোর বউ শুনলে কি হবে বুঝতে পারছিস? না হওয়া ডিভোর্সটাও তোর হলো বলে এবার! ”

স্বচ্ছ আবারও শক্ত স্বরে বলল,

“ হুররর, ও তোর ভাবি হয় শা’লা! অন্য দৃষ্টিতে তাকালেই চোখ উপড়ে নিব। ”

সাদাফ আচমকায় চোখ গোল গোল করে বলে,

“ ভাবি? তার মানে এটাই তোর বউ? ও মাই গড! এই ডেঞ্জারাস মেয়েটাই তোর বউ? দোস্ত! তোর ফিউচার তো শেষ! শেষ…শেষ….!”

#চলবে…

[ রিচ্যাক করা হয়নি। ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমা করবেন]