#বড়োজা
#Nadia_Afrin
২৬
ছোট্ট এই জীবনে আমি যা পেয়েছি তা অতুলনীয়।অভাবনীয়।
আমার কঠোর পরিশ্রমে সকলে সন্তুষ্ট ছিল।কমিটির মাঝে আমি ছিলাম মধ্যমণি।আমায় ছাড়া,আমার পরামর্শ ছাড়া কোনো মিটিং ই করতো না তারা।
এই আমি যে এতোটা সম্মান পাবো কখনো ভাবিনি।
শিক্ষকতার মতো মর্যাদাপূর্ন পদটি আমি পেয়েছি নিজ দক্ষতা ও সততার জোরে।
বাচ্চাদের পড়াতে গিয়ে একটা বিষয় খেয়াল করি।
প্রতিটি বাচ্চার মাঝেই আলাদা আলাদা ইচ্ছা ও প্রতিভা লুকিয়ে আছে।
কেউ তা প্রকাশ করছে,কেউ বা করেনা।
আসলে এতিমখানাটি খুব বেশি বড়ো পরিসরে না হওয়ায় পড়াশোনার পাশাপাশি আলাদা সুযোগ ছিল না।
আমি পারভীন আপার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললাম।
বাচ্চাদের জন্য একটা বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তুললে কেমন হয়?
যেখানে ওরা নিজেদের পছন্দসই কাজ করতে পারবে।
পড়াশোনার পাশাপাশি জ্ঞান চর্চা করতে পারবে।
আপা রাজি হন।
আমি একদিন ক্লাস শেষে বাচ্চাদের বলি,” ভবিষ্যতে তোমরা কে কী হতে চাও?মানে তোমাদের ইচ্ছে কী?কোনটা পছন্দ করো?কোন বিষয়টি ভালো লাগে?”
প্রত্যেকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে উত্তর দেয়,কেউ আর্ট করবে,কারো দৌড় খেলা পছন্দ,কেউ বা হাডুডু।
কেউ বা কবিতা তৈরিতে পটু।সামান্য কিছু বাক্য নিয়েই তালে তালে সাজিয়ে সুন্দর কবিতা বানায়।
আপা বললেন,”একটা পরিক্ষা নাও।ওরা বাচ্চা মানুষ।একজনের টা শুনে একজন বলে।”
তাই করলাম।
এক শুক্রবারের পরন্ত বিকেলে বাচ্চাদের নিয়ে বসলাম।নিজেদের পছন্দমতো সব করতে বললাম।
দৌড় ও দড়ি খেলার আয়োজন হলো। দাবা ও হাডুডু খেলার আয়োজন করলাম।
সঙ্গে অঙ্কদৌড়।বড়ো মেয়েদের নিয়ে বিতর্ক অনুষ্ঠান ও করলাম।
বিচারক হিসেবে আমরাই শিক্ষকেরা থাকলাম।উৎসাহ দিতে ছোট-খাটো পুরস্কারের আয়োজন ও খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করলাম।
বাচ্চারা তো ভীষণ খুশি।এমন প্রতিযোগিতা প্রথমবার হচ্ছে এখানে।
কম বেশি সবাই যোগ দিয়েছে।
হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শুরু হলো।যে যার মতো প্রতিভার প্রতিফলন করতে ব্যস্ত।
আমরা সবাইকে উৎসাহ দিচ্ছি।
প্রতিযোগিতা শেষ হলো।
কজন বাচ্চা লম্বা দৌড়ে ভীষণ পারদর্শি।আবার কজন আর্টে।
এতো সুন্দর আর্ট করেছে যে মনে হয় বাস্তব কোনো ছবি দেখছি।
দড়ি খেলায় কজন মেয়েকে পেলাম ভীষণ চতুর।হাডুডু ও দাবাতেও কয়েকজনকে পেলাম।
পুরস্কার দেওয়া শেষ হলে আপার সঙ্গে কথা বলি আমি।
ছোট্ট ছোট্ট গ্রুপ আকারে বাচ্চাদের ভাগ করি।
কিন্তু প্রতিটি গ্রুপের জন্য ট্রেইনার প্রয়োজন।
যারা ওদের প্রতিভাকে আরো উন্নত করতে সাহায্য করবে।
আপা বলেন,”এ বিষয়ে কমিটি কোনো হেল্প করবেনা।যা করার নিজেদেরকেই করতে হবে।
প্রশিক্ষণের জন্য মানুষ আনতে গেলে প্রচুর টাকার প্রয়োজন।
আবার আমরা যেটা ভাবছি সেটা নাও হতে পারে।শুধু আমাদের মুখের কথার ওপর ভরসা করে কমিটি থেকে টাকা দেবেনা।
সুতরাং ছেড়ে দাও এসব।যেমন চলছে তেমনি থাক।সপ্তাহে একদিন আমরা ওদের বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করবো।তাহলেই হবে।”
“ওরা এতিম দেখে কী সুযোগ পাবেনা আপা?ওদের কী কোনো স্বপ্ন থাকতে নেই?
আমিও এতিম ছিলাম।স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার যন্ত্রণা আমি বুঝি।
আমাদের উচিৎ ওদের প্রতিভাকে সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করা।
দেশ এখন কতো উন্নত।বাচ্চারা নিজেদের প্রতিভা দিয়ে ন্যাশনাল পর্যায়ে যাচ্ছে।দেশে বিদেশে নাম কুড়াচ্ছে।
সেখানে ওরা কেন পিছিয়ে থাকবে?শুধু এতিম খানায় কেন বন্দি থাকবে ওদের প্রতিভা।
ওরাও এগিয়ে যাক নিজ ছন্দে।
দেশের বুকে মাথা তুলে দাড়িয়ে বলুক,আমরা পারি।
ওদের যে জিততেই হবে এমনটা না।অভিজ্ঞতা অর্জন হবে।
একসময় ওরাও জিতবে।আমাদের মাথা উচু করবে।এটা আমার বিশ্বাস।চেষ্টা করলে কোনো কাজই অসম্ভব নয়।
যদি বলেন টাকার কথা।টাকার প্রয়োজন জানি।দুনিয়ার কোনো কিছুই ফ্রিতে হয়না।
কিছু পেতে হলে অবশ্যই খরচ করতে হবে।আমরা সৎ পথে খরচ করবো।সফলতা সৃষ্টিকর্তা এনে দেবেন।
ভরসা রাখুন।
কারো কোনো খরচ করতে হবেনা।
এক্ষেত্রে সবটা খরচ আমি করবো আপা।যেহেতু উদ্যোগটা আমিই নিচ্ছি।
আপনি শুধু পাশে থাকুন।
এছাড়াও যা হবে এতিমখানার ভেতরেই হবে।বাহিরে তো কোনো বাচ্চাকে নেওয়া হচ্ছেনা।”
আপা বলেন,”তুমি মেয়ে বড্ড জেদি।তোমার সঙ্গে কথায়,যুক্তিতে পাড়া যাবেনা।
যা করবে করো।
টাকা আমিও দেব।দুজনে মিলে করি কম বেশি দিয়ে।”
আপার সম্মতি পেয়ে আমি লেগে যাই কাজে।
বিভিন্ন একাডেমি ও প্রশিক্ষণ সেন্টার ঘুরে ঘুরে দক্ষ মানুষ খুঁজি বাচ্চাদের প্রশিক্ষণের জন্য।
পেয়েও যাই তেমন।তবে বিপুল পরিমাণের টাকার দাবি করেন।উপায় নেই।রাজি হই তাতেই।
ঘন্টা করে প্রশিক্ষণ দেবে তারা গ্রুপে বিভক্ত বাচ্চাদের।
সেখানে সব ঠিক করে আবার আসি এতিমখানায়।
সিডিউল ঠিক করতে হবে।সময় বের করতে হবে।
অন্যসব টিচারদের নিয়ে মিটিং করে সপ্তাহে তিন দিন তিনভাগে সময় নির্ধারণ করে তাদের জানাই।
প্রচুর মাথা ঘামাতে হয় আমার এখানে।
টাকাও ঢেলেছি।
সবটাই করলাম বাচ্চাদের জন্য।
আমি চাইনা এতিম বলে ওরা পিছিয়ে থাক।
প্রশিক্ষণ পেয়ে প্রতিটি বাচ্চাই আরো দক্ষ হয়ে উঠবে। ভবিষ্যতে কিছু করতে পারবে।
আমার এ পরিকল্পনা সত্যি সত্যিই বাস্তবায়ন হতে লাগে।
ধীরে ধীরে ওরা যেন হিরেতে পরিণত হয়।
নিজ নিজ প্রতিভার ওপর জ্ঞান চর্চা করে আরো অভিজ্ঞ হয়ে ওঠে।
মাত্র তিন মাসেই একেক জন একেক বিষয়ে পারদর্শি হয়ে ওঠে যেন।
দূর-দূরান্তের ছোট খাটো প্রতিযোগিতা গুলোতে আমাদের বাচ্চারা অংশ গ্রহণ করে প্রাইজ আনে।
কিন্তু বিপত্তি বাধে বড়ো কোথাও অংশ গ্রহণ নিয়ে।
আমাদের অফিসিয়াল কোনো কাগজপত্র নেই।শুধু এতিমখানার পরিচয়ে হচ্ছেনা।
বাধ্য হয়ে এবার আমি বিষয়টি কমিটিতে পেশ করি।
তারা আমাদের পাশে দাড়ায়।অফিসিয়াল কাগজ তৈরি করে বিভিন্ন ব্যাক্তিবর্গের সিগনেচার দিয়ে একটা ডকুমেন্ট আকারে আমাদের দেয়।ওদের প্রধান হই আমি।আমার আন্ডার থেকেই বাচ্চারা গিয়ে একটা গ্রুপের নাম নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতো।
এবং সাফল্যের সঙ্গে জয়লাভ ও করেছে।
বেশ কজন বাচ্চা আমাদের এখান থেকে ইন্টারন্যাশনাল পর্যায়ে চলে যায়।
কাজ বাড়ে তখন।
এতিমখানায় খুব কম সময় দিতে পারি।ওদের সঙ্গে থাকতে হয়।বহুদূর জার্নি করতে হয়।
কমিটির প্রতিটি সদস্য তখন আমাদের বিষয়ে অবগত।
তাদের ধারণার বাইরে গিয়ে এই অসাধ্যকে সাধন করেছিলাম আমরা।
এই ছোট্ট এতিমখানা যে এতোদূর যেতে পারে তা তারা ভাবতে পারেনি।
এবার তারাও আমার পাশে দাড়ায়।আমায় সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে।ছুটি মঞ্জুর করে।
আমি ও একটি ম্যাম প্রচন্ড লড়াই করি।
আমাদের বাচ্চাদের পুরো দুনিয়ার বুকে পরিচয় করিতে দিতে চাই।
সফল ও হই।
ঐ দিন ছিল সবচেয়ে খুশির দিন যখন বাচ্চারা বিজয়ী হয়ে আমাকে ট্রফি এনে দেখায়।
ওদের লিডার হিসেবে আমায় পরিচয় দেওয়া হয়।
শত শত মানুষের মাঝে আমায় সম্মাননা দেওয়া হয়।সেদিন খুশিতে কেঁদেছি আমি।
আকাশ পানে তাকিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে অজস্র ধন্যবাদ দিয়েছি।
আমি পেরেছি নিজের পরিচয় তৈরি করতে।নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে।আজ আমায় সারা বিশ্ব চিনছে।
এরপর থেকে শুরু হলো আমার জীবনের এক নতুন মোর।
আমাদের এতিমখানা লোকের চোখে অতুলনীয় হয়ে ধরা দিল।
বিভিন্ন বড়ো বড়ো টিমের লিডার হওয়ার অফার এলো।কেননা আমি দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করেছিলাম নিজ বুদ্ধি ও সৎ চিন্তা ধারা।
দুটো অফার লুফেও নিলাম।
আমাদের এতিমখানায় প্রচুর ফান্ড,ইনভেষ্টার আসতে লাগে।বেশ কটি বাচ্চা নিজেদের প্রতিভার দৌলতে দেশের বাইরে অব্দি পা রাখতে সক্ষম হয়।
ওদের পরিচয় ছিল আমাদের এতিমখানা ও আমি।কতোটা গর্ভের বিষয় ভাবুন!
সারে তিন বছরের ব্যবধানে এতিমখানা পৌঁছে যায় বহু দূরে।
আমার নাম-ডাক হয়।
কমিটিতে আমায় নিয়ে ধন্য ধন্য করে সবাই।
আমার কাজ দেখে আমার স্থান হয় কমিটির একটি বড়ো পদে।
অর্থবিত্তে আর অভাব থাকেনা আমার।
পারভীন আপা যেকে বসে এবার।
‘বাড়ি করো।টাকা পয়সা তো অনেক হলো।এবার একটা সুন্দর বাড়ি করো।
আমিও রাজি হই।সত্যিই আমার একটা বাড়ি দরকার।সবকাজ এতিমখানায় বসে করা যায়না।কারণ আমি এখন বাইরের কাজও করি।
খুবই সাদামাটা করে থাকার মতো একটা বাড়ি করতে চেয়েছিলাম।
আপা বলেন বাড়ি জীবনে একবারই করবে।
ভালো করেই করো।
এমন ব্যবস্থা করো যাতে বুড়ো কালে অসুস্থ হলে শুয়ে-বসে খেতে পারো।
তিন তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে করো।এক তলায় তুমি থাকলে দু-তলা ভাড়া দিয়ে রাখবে।ছেলে-মেয়ে নিয়ে চলে যাবে তোমার।
আমি এতেও সম্মতি দেই।কেন যেন আপার কথা ফেলতে পারতাম না আমি।
বাড়ির কাজ যেদিন শুরু হয় আপাকে নিয়ে কজন গরীব মানুষ খাইয়েছি।শুভ কাজে দান করেছি,দু-মুঠো গরিবের মুখে ভাত তুলে দিয়েছি।
আমি যে শুধু নিজের জন্য করেছি তা কিন্তু নয়।সমানতালে এতিমখানার জন্যও খেটেছি।যতোই হোক,এখান থেকেই সবকিছুর সুত্রপাত।
এতিমখানার দৈর্ঘ্য বেড়েছে এ কয়েক বছরে।
নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা শুরু হয়েছে।
শুধু তাই নয়।
এখানে এসেছি থেকে দেখেছি নিজ নিজ ধর্ম বিষয়ে সবাই ততটাও জ্ঞানী নয়।
সাধারণ ধর্মজ্ঞান দেওয়া হলেও চর্চার জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই।মানে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।করলে করো না করলে নাই।
যেমন নামাজের আলাদা ঘর নেই।সব ঘর তো আর পবিত্র থাকেনা।যেহেতু সারাদিন চলাচল করা হয় সেসব ঘর দিয়ে।আবার বাচ্চাও আছে এতিমখানায়।
তাই আলাদা একটা নির্দিষ্ট নামাজ ঘর থাকলে ভালো হয়।
সকলে মিলে সেই পরিকল্পনা করি।
একটা বড়ো সুন্দর নামাজ ঘর করি।মুসলিম মেয়েদের নামাজ-কোরাআন শেখার জন্য তিনজন মহিলা রাখি।দিনে নির্দিষ্ট একটা সময়ে মুসলিম সব মেয়েরা সেই ঘরে পাক-পবিত্র হয়ে গিয়ে কোরআন শিখতো।নামাজ সহ বিভিন্ন দোয়া-দরুধ শিখতো।
সেই ঘর পরিষ্কার করার জন্য একজন মহিলাও রেখেছি।
আমার এই উদ্যোগ দেখে হিন্দু মেয়েদের জন্য কমিটির সকলে ছোট একটা মন্দির তৈরি করে দেওয়া চেষ্টা করে।ঐ কাজেও আমি সায় দিয়েছি।ধর্ম যার যার হোক।কারো ধর্মে জোর করার অধিকার আমার নেই।যার যার ধর্ম তাদের পালন করতে দিতে হবে।আমি শুধু পারি নিজ ধর্মের দাওয়াত দিতে।জোর করা আমাদের কাজ নয়।সৃষ্টিকর্তা জুলুম পছন্দ করেন না।
তবে মন্দিরটা ভেতরে তৈরি করা যায়নি কিছু কারণে।
এতিমখানা থেকে একটি দূরে একটি মন্দির ছিল পরিত্যক্ত।সম্ভবত আগুন লেগে পরিত্যক্ত ছিল।
সেটির মালিক খুঁজে বের করে নতুন করে মন্দিরে কাজ করার প্রস্তাব দেওয়া হলে তিনি রাজি হন।তবে এখানে কোনো অর্থ খরচ সে করতে পারবেনা।
ধর্মালয় যেহেতু,তাই কমিটি থেকেই ম্যানেজ করা হয়।
সংস্কারকাজ করা হয় ভেতর-বাইরে।
পুরোহিত রাখা হয়। ঝোপ-ঝাড় পরিষ্কার করা হয়।সুন্দর রাস্তা তৈরি করে দেওয়া হয়।
হিন্দু মেয়েরা সেখানে গিয়ে নিজেদের ধর্ম পালন করতো।
দুই ধর্মের মেয়েদের মাঝেই সম্পর্ক ছিল বোনের চেয়েও বেশি।ছোট থেকে তাদের এটা শেখানো হয়েছে,’সবার ওপরে মানুষ সত্য,তাহার ওপরে নাই।’
ধর্ম যাই হোক।আসল পরিচয় সে একজন মানুষ।
সবাই মিলেমিশে থাকতো ওরা।একে-অন্যের সহযোগিতা করতো।
এছাড়াও আমাদের এতিমখানার আশেপাশে কোনো ডাক্তার ছিল না।ঐ পুরো গ্রামটার মাঝেই ছিল না।
কেউ অসুস্থ হলে বাজার অথবা শহরে নিতে হতো।বেশ অসুবিধা হতো এতে।রাতবিরাতে কেউ অসুস্থ হলে ঝামেলা হয়ে যেত।
এইতো সেদিনের কথা,পারভীন আপার প্রচন্ড জ্বর এসেছে।জ্বরের চোটে খিচুনি উঠে গেছে একপ্রকার।
ভয়ে সব কান্নাকাটি অবস্থা।আমি নিজেই ভয়ে কেঁদে ফেলেছি।
অন্যসব শিক্ষকরা মিলে মাথায় পানি দিয়েছে।তেল মালিশ করেছে।তবুও কমার নাম নেই।
অবস্থা বেগতিক।রাত বাজে দুটো।কী করবো বুঝছিলাম না।কোনো পুরুষ মানুষ ছিল না সেসময়।
বাধ্য হয়ে আমরাই বড়ো হাসপাতালে নেওয়ার চিন্তা করি।
ওদিকে রাস্তায় গাড়ি ও নেই।ভাবুন কী একটা বিপদ!
পরে এক চাচি গিয়ে এলাকার এক অটো ড্রাইভারকে ডেকে এনেছে।
তারপর আপাকে নিয়ে হাসপাতালে গেছি আমরা।ভাগ্যিস পথেতে কিছু হয়নি।বেশি দূরে নয় হাসপাতাল।তবুও রাত হলে যাওয়া অসুবিধা।গাড়ি পাওয়া যায়না।
ডাক্তার আপাকে ভর্তি করেন।
জানায়,আর একটু দেরি হলে ভয়ংকর কিছু হয়ে যেত।
ঐদিনই ঠিক করি একটা চিকিৎসা কেন্দ্র করবো আমি।
তখন তো আমি এমনিতেই কমিটির সদস্য।তাই খুব বেশি পরিশ্রম করতে হয়নি।
এতিমখানার পাশেই কিছুটা জায়গা ছিল বাশঝাড় দেওয়া।সেই জায়গাটা কিনে বাশঝাড় পরিষ্কার করে একটি ঔষধের দোকান ও সাধারণ পরিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
একজন ভালো ডাক্তারকে আনা হয় সেখানে।
নিজ খুশিতেই তিনি কাজটি করেন।
অর্ধেক টাকা তিনি ও অর্ধেক টাকা আমরা দিয়ে দোকানটা দাড় করাই।
গ্রামে যেহেতু কোনো ঔষধের দোকান ছিল না তাই সেই দোকান চলে ভালোই।বড়ো একটা গ্রাম।আশপাশ থেকেও মানুষ আসে।রাস্তার পথচারীরাও প্রয়োজনের দোকানে আসে।
উপচে পড়া ভির থাকে সবসময়।
কোনো বাচ্চা অথবা শিক্ষকদের মাঝে কেউ অসুস্থ হলে সেখান থেকেই ঔষধ পত্র নিতাম আমরা।বেশ অভিজ্ঞ ডাক্তার ছিলেন তিনি।গ্রামবাসী ভীষণ সম্মান করতো তাকে।একসময় লোকটা তার পরিবারও নিয়ে আসে এখানে।
ডাক্তার লোকটা সৎ ছিল খুবই।পরবর্তীতে কবছর সময় নিয়ে আমাদের টাকা আমাদের ফিরিয়ে দেন তিনি।
সম্পূর্ণ গল্পটি আমার পেইজে দেওয়া আছে।নাদিয়া আফরিন ইংরেজিতে লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন আমার পেইজ।
ফলো দিয়ে সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ুন।
ফলো না করলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
এগুলো উন্নয়ন মূলক কাজ সবই করা হয়েছে ওপর মহল থেকে।
আমার নিজস্ব কোনো অর্থ এখানে তেমন খরচ করতে হয়নি।
আমাদের এতিমখানা ফুলে-ফেপে উঠেছিল।লোকের নজরে ছিল।বহু ফান্ড ও ইনভেস্টার ছিল।সরকারী সহায়তাও পাওয়া শুরু করেছিলাম।তাই উন্নয়ন মূলক যা ই করতে চাইতাম,প্রচুর সহায়তা পেতাম।
আমার কাজ ছিল পরিকল্পনা দেওয়া ও তা বাস্তবায়নে সাহায্য করা।এতে উল্টে আমিই সম্মানি পেয়েছি।
প্রতিবছর আমাদের গ্রুপ থেকে বাচ্চারা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে জয়লাভ করতো।দেশের বাইরে পা রাখতো।
নতুন আরো বহু উদ্যোগ যোগ হয় সেসময়।
আমাদের গ্রুপের পেছনে বহু ফান্ড অর্থ ব্যয় করতে ইচ্ছুক হয়।
যেহেতু বেশ কটি বাচ্চারা বিদেশ অব্দি পারি দিয়েছিল এই গ্রুপের হয়ে।
তাই সকলের নজরে আসে।গ্রুপকে দেশের ভবিষ্যত হিসাবে চিহ্নিত করা হলে সরকার থেকে প্রচুর সহায়তা পাই আমরা।
বিশেষ করে আমি।
জানেন,এতো পেয়েও আমার মনে কখনো অহংকার আসেনি।
কমিটির বড়ো পদের সদস্য হয়েও এতিমখানার সকল কর্মীদের প্রতি মিশুক থেকেছি।
যেখানে অন্যান্যরা আদেশ করে যেত সেখানে আমি হাসি মুখে অনুরোধ করতাম।
প্রতি সপ্তাহে একদিন করে নিজ হাতে রান্না করতাম সব বাচ্চাদের জন্য।
বিকেলে ওদের নিয়ে আশেপাশে ঘুরতে যেতাম।
খেলাধুলার জন্য পার্ক তৈরি করা হয়েছিল।এতিমখানার পরিধি বারিয়ে গড়ে উঠেছে একটা একাডেমিক ভবন।যেখানে বাচ্চারা নিজেদের প্রতিভার বিকাশে পড়াশোনা করতো।
দূর-দুরান্ত থেকে বাচ্চারা এসেছে এখানে।দুটো এতিমখানা যুক্ত হয়েছিল আমাদের সঙ্গে।
কারণ এখানে সব সুযোগ সুবিধা ছিল।
প্রশিক্ষণের জন্য নামকরা প্রশিক্ষক ছিল আমাদের।
বহু ধনী ঘরের সন্তান আমাদের এখানে আসে গ্রুপে জয়েন হতে।
নিতে চেয়েছিলাম।কিন্তু নিতে দেয়নি কমিটির সদস্যরা।
তাদের ভাষ্যমতে ওরা এতিমবাচ্চাদের প্রতি সদয় নাও হতে পারে।মনে আঘাত দিয়ে কথা বলতে পারে।যেটা আমরা চাইনি।
এখানে শুধু এতিমবাচ্চারাই থাকবে।এতিমদেরই ঘর এটি।
তাই আমিও আর নিতে পারিনি। ওপর পদ থেকে যে কাজ নিষেধ করেছে সেটা করতে চাইনি কখনো।অবশ্যই তারা আমার থেকে ভালো বোঝে।দীর্ঘদিন তারা এ কাজে যুক্ত ছিল।
দুদিন এসে আমি নিশ্চয় সব ভালো বুঝতে পারবোনা।
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেইজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
এছাড়াও আমার লেখা সব গল্প পাবেন আমার পেইজে।
সুখে ভরপুর ছিল আমাদের জীবন।
আমার ছেলে আলিফ গণিতে ভীষণ পটু।
সংখ্যা দিয়েই খেলে দেখি।ছোট ক্লাসের হয়েও বড়ো ক্লাসের অঙ্ক সমাধান করে এক নিমিষেই।
ওর স্বপ্ন বড়ো হয়ে গণিত বিষয়ক শিক্ষক হবে।
ছেলে আমার বুঝদার খুবই।
এইতো এবার ওকে ছেলেদের সেকশনে পাঠিয়ে দেব।ওখান থেকেই বাকি পড়াশোনা করবে।
এতিমখানার রুলস ভঙ্গ করবোনা আমি কিছুতেই।সে যতোই আমি ওপর পদে যাই না কেন!
মেয়েটাও কিন্তু বড়ো হয়ে গেছে।গুটি গুটি পায়ে হাটতে শিখেছে।সুন্দর করে কথা বলে।সকলের চোখের মণি।সারাদিন সবার সঙ্গে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে।দৌড়ঝাপ করে বেড়ায়।
মেয়েকে রাতেও কাছে পাইনা তেমন।সবার কাছে থাকে।আমার অবশ্য ভালোই হয় এতে।অনেক দায়িত্ব আমার কাধে।ভেতর-বাহির দু-দিকই সামলাই আমি।রাত জেগে কাজ করতে হয় প্রায় প্রায়।কাছে বাচ্চা থাকলে তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।এর চেয়ে বরং ওদের কাছেই থাক।
আমি কাজের ফাঁকে ফাঁকে মেয়েকে দেখে আসি।
রাতে দু-তিন পাক দেই সবার ঘরে ঘরে।
কারো কাথা টেনে দিয়ে আসা,কারো মাথা সোজা করে দেওয়া আমার নিত্যরাতের কাজ।
এখানের প্রতিটি বাচ্চা আমার সন্তান।
জন্ম না দিলেও ওদের আমি মানুষ করছি।সেই সুত্রে আমি ওদের মা।
আজো সকলে আমায় তন্নিমা বলেই ডাকে।
জীবনে বহু কিছু অর্জন করেছি আমি।সম্মানের খাতিরে ছোট পদের কর্মীরা আমায় ম্যাডাম বলে ডাকতে চেয়েছে।
আমি নিষেধ করে দিয়েছি প্রথম দিনেই।
ওসব আমার পছন্দ নয়।
পুরোনো দিন,পুরোনো মানুষ,পুরোনো সম্পর্ক আমি ভুলিনি।আগের মতোই ‘আপা’ বলে ডাকতে বলেছি।
এদের সঙ্গে মিলেমিশেই থাকতে চাই আমি।পেশাটা বাইরে থাক।আগে এরা আমার আপনজন।আমার পরিবার।
যে কোনো কাজে এখনো আমি আগে পারভীন আপার কাছে দৌড়ে যাই।কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপার থেকে পরামর্শ নেই।
আপা বলেন,”তুমি নিজেই এখন পটু।আমি যা করেছি তার চেয়ে হাজারগুণ বেশি করেছো তুমি।
তোমার কাজ এখন জগতজ্বোড়া ছড়িয়েছে।
কতো ওপর পদে গিয়েছো তুমি।তবুও কেন আসো আমার থেকে পরামর্শ নিতে?”
আমি বলি,”আপনি আমার গুরু।আজীবন আমার গুরু হয়েই থাকবেন।সে আমি যতোই ওপর পদে যাই না কেন,আপনার শিষ্য হয়ে থাকবো সবসময়।
বড়ো বোন আপনি।আপনার থেকে পরামর্শ না নিলে সাহস পাইনা।
আমি জানি আমি ঠিক।তবুও আপনার মুখ থেকে একটা ‘হ্যা’ শুনলেই আমার শান্তি।মনটা নিশ্চন্ত হয় আপা।
তাই যতোদিন আছেন,আমাকে আপনার গাইড করতেই হবে।”
পুরো এতিমখানাই বলতে গেলে এখন আমার আন্ডারে চলে।পারভীন আপার শরীরে আর পারেনা।শ্বাসকষ্টের পরিমাণ বেড়েছে।একটু জোরে বা দ্রুত কথা বললেই সমস্যা হয়।
সিড়ি ওঠানামা করতে পারেনা।
নিজ দায়িত্বে আপার জন্য একটা নার্স রেখেছি আমি।চব্বিশ ঘন্টা আপার সঙ্গে থাকে সে।খাওয়া,ঔষধ,ঘুম যাবতীয় সব করে দেয়।
আপার পদটা কিন্তু আজও আছে।
আমিই টিকিয়ে রেখেছি বলে কয়ে।
আমি আজও করে দেই ছোট-খাটো সব কাজ।
ঝাড়ু-পোছ,রান্না-বান্না ছাড়তে পারিনা।
লোকে বলে এসব কেন করি আমি?
আলাদা লোক আছে এসব করার।
কিন্তু আমি শুনিনা।জীবনের একটা অংশ সংসারের পেছনে দিয়েছি।তাই সংসারের কাজ ছাড়তে পারিনা কিছুতেই।
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
অন্য কোনো গ্রুপে বা পেইজে আর গল্পটি পাবেন না।সুতরাং সম্পূর্ণ গল্প পড়তে এবং আপডেট পেতে মূল লেখিকাকে ফলো দিয়ে রাখুন।
এতো উন্নতি যে শুধু আমার হয়েছে তা কিন্তু নয়।
আমাদের এতিমখানার সঙ্গে জড়িত প্রতিটি মানুষ সফলতা পেয়েছে।
সরকারি পদে নাম লিখিয়েছে।
ছোট-খাটো যে যে পেশায় ছিল,প্রত্যেকেই উন্নতি করছে।কারো বেতন বেড়েছে,কেউ বা আলাদা সুযোগ পেয়েছে।
কমিটির সদস্যরাও ভীষণ উন্নতি করেছে নিজেদের কর্ম জীবনে।
আমি শিক্ষকতা পেশাটা ধরে রেখেছি।তবে একটা ক্লাসই নিতে পারি।সময়ে কুলায় না।দিনের বেশিরভাগ সময় কাজের পেছনেই পার হয় আমার।
হন্তদন্ত হয়ে বাড়ি ফিরি ঘামার্ত মুখ নিয়ে।
আবারো কাজে লেগে পড়ি।
মেয়েরা খাইয়ে দেয় কাজের ফাঁকে ফাঁকে।
আমি যেমন ওদের মায়ের মতো ট্রিট করি।ওরাও আমায় ওদের মেয়ে বানিয়ে নিয়েছে।কতোগুলো মা পেয়েছি আমি।ভীষণ যত্ন করে আমার।
শাড়ি পড়লে কেউ এসে কুচি ধরে দেবে।কেউ বা চুল বেধে দেবে।
জুতো এনে পায়ে পড়িয়ে দেবে।দূরে গেলে টিফিন গুছিয়ে দেবে।
রাতে বাড়ি ফিরলে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পারিয়ে দেবে।
এতো অর্জন আমার,মনে তবুও দ্বিধা থাকে।
আমি সত্যিই এসবের যোগ্য তো?
এতো কিছুর কী সত্যিই পাওনাদার আমি?
নিজের মনের এই খুতখুত থেকে বিভিন্ন কোর্স করেছি আমি।ইংরেজি ও বাংলা বিষয়ে কোর্স করে সার্টিফিকেট পেয়েছি।ভাষার ওপর কোর্স করেছি।
লোকে এবার খুব সহজেই আমার যোগ্যতার ওপর আঙুল তুলতে পারবেনা।
নানান কাজে শহরের বাইরে যেতে হয় আমার।
আদব-কায়দা রপ্ত করেছি।গুছিয়ে কথা বলাও শিখেছি।
একটা নিজস্ব গাড়ি কিনেছি।ড্রাইভার রেখেছি।
এতিমখানার জন্য একটা অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা আছে।এটা সম্পূর্ণ নিজস্ব না।যেকোনো সময় ফোন দিলেই চলে আসবে এমন ব্যবস্থা করে রেখেছি।যাতে কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে সঙ্গে সঙ্গে বড়ো হাসপাতালে নিতে পারি।
গ্রামের অনেক মানুষ আমাদের থেকে সাহায্য চাইতে আসে।কেউ অসুস্থ হলেই ছুটে আসে আমাদের নিকট।আমরাও সাহায্য করি।
সমাজসেবা মূলক অনেক কিছুই করেছি আমরা।
যেই আমি একসময় একজনের সহকারি হিসেবে কাজে এসেছিলাম,সেই আমারই আজ দুজন সহকারি।যাদের আমি সম্পূর্ণ নিজ টাকায় বহন করি।
ছোট-খাটো এতিম খানায় দান করি।নিজে একটা ফান্ড তৈরি করেছি।যেখানে আমি সহ এতিমখানার সকলেই কমবেশি দান করেন।
সেই দান আমরা ছোট-খাটো এতিমখানায় দিয়ে দেই।আমাদের যথেষ্ট আছে।তাই অন্যদের সহযোগিতায় এগিয়ে যাই।
ইদানিং পারভীন আপা আমার ওপর খুবই অভিমান করে থাকে।
তাকে তেমন সময় দিতে পারছিনা বলে।
আসলে একটা নতুন উদ্যোগের চিন্তা-ভাবনা করছি আমি।তাই ফ্রি সময় একটু কমই হাতে।
এক শুক্রবারে আপার কাছে গেলাম।
পায়ের কাছে গিয়ে বসলাম।আমায় দেখেই মাথা নিচু করলো সে।
আমি উকি দিয়ে বলি,”রাগ করেছেন আপা?দুঃখ পেয়েছেন?”
আপা জবাব দেয়না কোনো।মুখখানা থমথমে।
নিজ ব্যাগ থেকে একটা গোলাপ ফুলের মালা বাহির করে আপাকে পরিয়ে দেই।
আপা মালা পেয়ে ভীষণ খুশি।মুগ্ধ দৃষ্টিতে তার খুশি উপভোগ করলাম।
আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম,”গোলাপ হলো ভালোবাসার প্রতিক।আমায়,আপনাকে তো ভালোবাসার কেউ নেই।তাই নিজেরাই নিজেদের ভালোবেসে গোলাপ দেই।”
আপা বলেন,”ভালোবাসার সুযোগ দিলে অবশ্যই পাবে তেমন মানুষ।
আমি না’হয় বুড়ো হয়ে গেছি।অসুস্থতার ভারে চলাফেরাই দায়।
তুমি কেন একলা একা তন্নি?
তোমার এখন সব আছে।রুপ-সৌন্দর্য আগের থেকে বেড়েছে বলে কমেনি।আগে চিন্তায় চিন্তায় চেহারায় লাবণ্য হারিয়ে গেছিলো।
এখন জীবনে বহু কিছু পেয়েছো।ফিরে এসেছে সব লাবণ্য।
নিজের জমি আছে।বাড়ি হচ্ছে।গাড়ি আছে।
অর্থবিত্তে পরিপূর্ণ।সারাজীবন বসে খাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করে নিয়েছো।
বাচ্চারাও বড়ো হয়েছে।ছেলে দূরেই থাকে।পড়াশোনায় ব্যস্ত সে।মেয়ে নিজ হাতে খাওয়া শিখেছে।
এখন তুমি চাইলেই জীবনকে নতুন করে শুরু করতে পারো।
কম তো প্রস্তাব পেলে না।
কমিটির প্রধান এরশাদ রহমানের মতো মানুষ সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিলেন তোমায়।লোকটা ভালো ছিল।সৎ চরিত্রের বলেই চিনি।স্ত্রী মারা গেছেন বহু আগেই।উনার সঙ্গে তোমার সম্পর্ক হলে খুব মন্দ হতোনা।তাকেও রিজেক্ট করলে।
এক প্রশিক্ষক বিয়ের প্রস্তাব দিলেন।তিনিও নামকরা ব্যক্তিবর্গ।তাকেও নিষেধ করলে।
আরো কতোজন তোমার পেছনে লাইন ধরে আছে তা আমি জানি।
সবাই কিন্তু খারাপ না।তুমি চাইলেই যাচাইবাছাই করে জীবনে কাউকে স্থান দিতেই পারো।
সারাজীবন এভাবে থাকতে পারবে?
কাজ করতে করতে একসময় হাপিয়ে উঠবে।ইচ্ছে হবে অবসর নেওয়ার।
অবসরে একজন সঙ্গীর দরকার পড়বে।যার সঙ্গে সুখ-দুঃখের আলাপ করবে।
ছেলে-মেয়ে নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে।
তুমি কাকে আকড়ে ধরবে?
কে তোমার নিঃসঙ্গ জীবনের সঙ্গী হবে?
সারাকাল আমিও বেঁচে থাকবোনা তোমায় পরামর্শ দিতে।আগলে রাখতে।
দিনশেষে একজনকে প্রয়োজন তন্নি।
এতোকাল নিজের জন্যই কোনো সিদ্ধান্ত নাওনি তুমি তন্নি।এবার তোমার সব আছে।তাই ভেবে দেখো।বয়স কম তোমার।জীবনে বহু কিছু এখনো বাকি আছে।”
“আপা আপনি জানেন কিন্তু আমার অতীত সম্পর্কে।দীর্ঘদিনের সংসার ভেঙেছে আমার।প্রতারিত হয়েছি আমি নিজ ভালোবাসার মানুষটির কাছ থেকে।আমার জন্য সব এতো সহজ নয়।
শেষ বার কী হয়েছিল শোনেন নি?
মিথ্যা ভালোবাসার নাম করে ‘রাশেদ’ নামক অমানুষটা কী করেছিল আমার সঙ্গে!
কলঙ্কের দাগ লাগিয়ে কাঁদা ছুড়ে বস্তি ছাড়া করেছিল আমায়।সব অপমান এতো সহজে কী করে ভুলি আপা?
কাউকে কীভাবে আনবো আমার জীবনে?”
“সবাই কিন্তু রাদেশ বা আকাশ নয়।দুনিয়াতে ভালো মানুষ যেমন আছে খারাপ মানুষ ও আছে।
এটা ঠিক,তুমি হয়ত যে দুজনকে পেয়েছো দুজনই প্রতারক, স্বার্থপর ছিল।
তাই বলে সেই দুজনের জন্য সবাইকে খারাপ ভাবতে পারোনা।
পৃথিবীতে সবাই খারাপ হয়না তন্নি।সবাই খারাপ হলে পৃথিবী টিকে থাকতোনা এখনো।
খারাপ যেমন আছে।ভালোও আছে।ভালোটাকে বেছে নিতে হবে তোমার।
সাধারণ হয়ে এসেছিলে তুমি।অসাধারণ হয়ে ধরা দিয়েছো।তেমনি অসাধারণ কাউকে খুঁজে নাও।সুযোগ দাও নিজেকে।আটকে রেখোনা আর অনুভূতিকে।অনুভূতিহীন মানুষ বাঁচতে পারেনা।”
আপার কথার জবাব না দিয়েই বেরিয়ে এলাম আমি।জানিনা এরপর কী হলো আমার।তার
বলা কথাটাই বারবার ভাবতে লাগলাম।
তবে কী আমার মত বদলাচ্ছে?
চলবে